Search

Wednesday, April 25, 2018

A double whammy for natural gas users


Titas gas consumers are set to be troubled by a double whammy. For the last few months, the problem of gas supply shortage worsened in Dhaka and its adjoining areas. All types of consumers - domestic, commercial and industrial - have been suffering. As if to add insult to injury, the government is almost certain to enforce yet another hike in gas prices soon to cover the cost of high-priced LNG (liquefied natural gas) import from a number of sources. Consumers have already been subjected to a total of 222 per cent hike in gas tariff during the last couple of years. The utility provider would show a hundred reasons in support of the hike. But, such a large hike hurts the consumers at all levels. The problem emanating from increase in utility rates is far more serious in the case of industries, particularly the export-oriented ones. The increase does impair their capability to compete in the international market.

On top of short supply and recurrent hike in gas price, consumers are also subjected to hassles of all sorts by a section of unscrupulous officials and employees of the Titas Gas Transmission and Distribution Company Ltd. Leaders of the Bangladesh Textile Mills Association (BTMA) at a view-exchange meeting, held last Monday in Dhaka, presented before the prime minister's energy adviser a long list of irregularities and corruption indulged in by a section of officials and employees of the company.  The government is yet to resume new gas connections to domestic consumers. As of now, such connection facilities are open to commercial and industrial enterprises. But the connections to these consumers are not easy to come by. Nothing moves an inch in the Titas, allegedly, unless the palms of the officials and employees are greased adequately.

The low pressure of gas has emerged as a serious problem for industries in and around Dhaka. Factories concerned cannot operate their boilers and captive power plants for non-availability of adequate gas supplies. The management of these factories cannot switch over to any other alternative fuel to operate their gas-based machines/equipment. Some factory owners tend to blame a section of Titas employees for low gas pressure. However, the energy ministry can hardly evade its responsibility in this connection. It could not ensure setting up of an adequate number of gas compressor stations to help raise gas pressure in the supply pipeline.

In fact, irregularities and corruption in this state entity have been rampant. There are stories galore about households and factories getting illegal connections with the help of Titas employees. Residents of some areas close to the capital city could manage illegal connections in hundreds from the main gas transmission lines. The extent of gas pilferage in the country is not known, but it must be substantial. However, the gas distribution companies do get away with their failures to check pilferage while terming the loss of gas as technical one.

The energy adviser, while listening to the problems and allegations put forward by the business leaders, did reportedly promise to go tough on corrupt elements in Titas. Past records concerning similar promises made by government's decision-makers, however, do hardly make one optimistic about seeing any notable change on the ground. Rather, clients of most government entities complain about the rise in irregularities and graft-taking. The reasons behind deterioration in the situation must be quite a few. Political muscle flexing by a section of employees, surely, should be at the top of those. This phenomenon is nothing new. But it plays a major role in many unwanted developments in operations of state entities. The Titas gas company is no exception.

  • Courtesy: Editorial /The Financial Express /Apr 25, 2018

মালিকানা বদলের পর ১৫ মাসেই ইসলামী ব্যাংক সংকটে

  •  মালিকানা বদল হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতে 
  •  অব্যবস্থাপনা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বে নানা ধরনের সংকট
  •  টাকার অভাবে ঋণ কার্যক্রম ছোট করে এনেছে 
  •  এখন দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি আমানতের পেছনে ছুটছে


দেশে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক এখন তীব্র আর্থিক সংকটে। আর ব্যাংকটি হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। মালিকানা বদলের পর মাত্র ১৫ মাসেই অব্যবস্থাপনা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে ব্যাংকটির এই হাল হয়েছে।

এর আগে সরকারি খাতের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের একই হাল হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের কারণে বর্তমান সরকারের সময়েই ব্যাংকটি তীব্র আর্থিক সংকটে পড়ে আছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা বদলের পর এই প্রথম বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ল ব্যাংকটি। টাকার অভাবে ইসলামী ব্যাংক ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম ছোট করে এনেছে। একসময় আমানতকারীরা ছুটতেন ইসলামী ব্যাংকের পেছনে, এখন দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংক শুধু আমানতের পেছনে ছুটছে।

এরই মধ্যে আবার কয়েক দফায় ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হয়েছে। একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও তিনজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (ডিএমডি) একযোগে পাঁচজনকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এ ছাড়া নিজেদের দ্বন্দ্বে ব্যাংক ছেড়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলম। সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল পদত্যাগ করেছেন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। জানা গেছে, বড় অঙ্কের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন নিয়েও ব্যাংকটির নতুন মালিকদের সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের ১৬ মাসের মাথায় ব্যাংকটির এই সংকট দেশের বিশিষ্ট ব্যাংকার, আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় ফেলেছে। কেননা, দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সংকটে পড়লে এর প্রভাব পড়ে দেশের পুরো আর্থিক খাতে। মূলত, গ্রাহকদের আস্থায় চিড়, অব্যবস্থাপনা, একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের কাছে রাতারাতি পুরো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া এবং কয়েকজন পরিচালকের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকটি এমন দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসার পর থেকে অনেকের কাছে বিষয়টি ধোঁয়াটে মনে হয়েছে। বিনিয়োগ-আমানত অনুপাতটা ৯২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। এটা স্বাভাবিক যে ঋণ দেওয়ায় আগে এত আগ্রাসী হওয়ায় এখন রক্ষণশীল হতেই হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেকোনোভাবেই হোক আমানতকারীদের কাছে এমন একটি বার্তা রয়েছে যে, ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে। এটা দূর করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক যেহেতু দেশের বড় ব্যাংক এবং এর ক্ষতি মানে দেশের ক্ষতি, তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে এর ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। অর্থাৎ পর্ষদ যাতে ঠিক ভূমিকা পালন করে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যাতে না থাকে। 

আমানত কম, ঋণে আগ্রাসী

ইসলামী ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, পরিবর্তনের আগমুহূর্তেও ব্যাংকটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের পর তারা যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে, ঋণ দিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। সংকটের কারণও সেটাই। এমনকি অর্থসংকটে পড়ে সরকারের ইসলামী বিনিয়োগ বন্ডে থাকা টাকাও তুলে নিয়েছে ব্যাংকটি।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে আমানত এসেছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, তবে এ সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে যে পরিমাণ আমানত এসেছে, তার তিন গুণ ঋণ দিতে হয়েছে ব্যাংকটিকে।

ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা ৮৯ শতাংশ অতিক্রম করেছে ব্যাংকটি। ঋণ-আমানত অনুপাতকে ইসলামী ব্যাংক বলে থাকে বিনিয়োগ আমানত অনুপাত (আইডিআর)। এই এডিআর বা আইডিআর এখন ৯২ শতাংশের কাছাকাছি। সীমা ছাড়িয়ে ইসলামী ব্যাংক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ দিয়েছে। এ অনুপাত সীমার মধ্যে আনতে ব্যাংকটিতে ঋণ ফিরিয়ে আনতে হবে, অথবা আমানত বাড়িয়ে অনুপাত সমন্বয় করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারাই বলছেন, আমানত বৃদ্ধির যে হার, তাতে এ সীমা সমন্বয় করা ব্যাংকটির জন্য কঠিনই।

পরিবর্তনের পরে যা হয়েছে 

রাজধানীর র‍্যাডিসন হোটেলে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যাংকটির তখনকার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করেন। পরিবর্তনের কারণ হিসেবে ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। ওই দিন নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক সচিব আরাস্তু খান ও এমডি পদে দায়িত্বে আসেন চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আবদুল হামিদ মিঞা। বাজার থেকে নতুন শেয়ার কিনে ব্যাংকটির এসব পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে এস আলম গ্রুপ।

২০১৭ সালের শুরুতে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা ও ঋণ ৬১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির ইসলামিক বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৫ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের শুরুতে আমানত বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ও ঋণ বেড়ে হয় ৭০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।

এ পর্যন্ত মোটামুটি চললেও চলতি পঞ্জিকা বছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত আমানত বেড়ে হয় ৭৬ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা ও ঋণ বেড়ে হয় ৭৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। আর এ সময়ে ইসলামিক বন্ডে থাকা বিনিয়োগও শূন্য করে ফেলে ব্যাংকটি। ইসলামিক বন্ডে থাকা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে এনে টাকার সংকট মেটায় ব্যাংকটি।

ব্যাংকটির এমডি হিসেবে আবদুল হামিদ মিঞার মেয়াদ শেষ হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৩৯৫ দিন ব্যাংকটির এমডি ছিলাম। এ সময়ে ব্যাংকে কোনো সংকট ছিল না। টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। এই তিন-চার মাসে হঠাৎ এমন কী সংকট হলো, বুঝতে পারছি না।’

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পান মাহবুব-উল-আলম। ব্যাংকটির সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে বক্তব্য জানতে গেলে তাঁর দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনি ব্যস্ত আছেন। আরও জানানো হয়, কথা বলার জন্য ব্যাংকের পর্ষদ গতকাল পর্যন্ত তাঁকে অনুমতি দেয়নি।

আরাস্তু খান পদত্যাগ করার পর ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমুল হাসান। আরাস্তু খান চট্টগ্রামের যে আরমাডা স্পিনিং মিলের প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, নাজমুল হাসানও সেই কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচালক ও চেয়ারম্যান হয়েছেন।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল চেয়ারম্যান ব্যাংকে আসেননি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে গিয়ে তাঁর দেখা মেলে। ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাংকের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে তো বলবই না।’ সার্বিকভাবে ইসলামী ব্যাংক ভালো আছে বলে জানান তিনি। 

বিদেশি মালিকানাও কমেছে

ইসলামী ব্যাংকে শুরু থেকেই বিদেশি মালিকানা ছিল। পটপরিবর্তনের পর তাঁদের অনেকেই ব্যাংকের মালিকানা ছেড়ে দেন। বড় এই পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির ৮ কোটি ৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে উদ্যোক্তা পরিচালক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। আইডিবির ছেড়ে দেওয়া সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং।

আবার কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস বিক্রি করে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইসলামী ব্যাংকের সোয়া ৫ শতাংশ শেয়ার ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক জেপি মরগানের একজন গ্রাহক ২০১৫ সালের শেষ দিকে ইসলামী ব্যাংকের ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েও আবার ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যাংকটির শুরুতে বিদেশিদের অংশ ছিল ৭০ শতাংশের মতো, বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগে ১৯৮৩ সালে গঠিত হয় ইসলামী ব্যাংক। গত সোমবার পর্যন্ত ব্যাংকটির গ্রাহক ৮৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৯ জন। ইসলামী ব্যাংকে এখন সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু মনে হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণটা একটু বেশি হয়ে গেছে এবং গত সপ্তাহে চেয়ারম্যান আরাস্তু খানের পদত্যাগও ওই পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের চাপের কারণেই হয়ে থাকতে পারে।’

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এক বছরেরও আগে থেকে এ ব্যাংকে যে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে ব্যাংকটির অবস্থা ভালো হলে স্বাগত জানানো যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নানা সমস্যা ও অস্থিরতা। কতটুকু ভালো করবে, তাতে সন্দেহ হয়।

ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংকের পর্ষদে দক্ষ ও নীতিনিষ্ঠ লোকদের আসা উচিত উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন একজন চেয়ারম্যান এলেন। দেখা যাক তাঁর প্রতিশ্রুতি কতটুকু। অশুভ চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করছেন কি না, তা-ও দেখার বিষয়।’

  • Courtesy:Prothom Alo/ Apr 25, 2018

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধুর ডায়েরী

মঞ্জুরুল আলম পান্না


জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার সরাসরি কোনো ঘোষণা না দিলেও কোটা বাতিলের পক্ষেই তিনি অভিমত দেন। তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন স্থগতি করে। স্বস্তির নিঃশ্বাস এলো সবার মাঝে। আবেগে আপ্লুত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীতে আখ্যা দিলো ‘মাদার অব এডুকেশন’। কিন্তু এ সম্পর্কিত কোনো প্রজ্ঞাপন সরকারিভাবে জারি না হওয়ায় অনেকে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন এই বলে যে, আন্দোলনে ভাটা সৃষ্টি করতেই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর ওই অস্পষ্ট মন্তব্য। সত্যি সত্যিই দেখা গেল দ্রুত একের পর এক দৃশ্যপট বদলাতে লাগল।

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কিত বার্তা আগেই সম্ভবত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছানোর পরপরই মুখ রক্ষায় তারা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করল- কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের সমর্থন আগে থেকেই রয়েছে। যদিও সেই আন্দোলনে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের মারমুখী ভূমিকা সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। আবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তারা আবার জেগে উঠল আপন মহিমায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের নির্যাতনকারী দল, হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে বরণ করে নেওয়া হলো ফুলের মালায়। শুধু তাই নয়, এবার স্বয়ং প্রাধ্যক্ষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের খুঁজে খুঁজে গভীর রাতে বের করে দিতে লাগলেন। যে পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে এই আন্দোলনের সৃষ্টি তা মোটুমুটি এখন দখলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের। আন্দোলনের তিন নেতাকে গোয়েন্দা পুলিশ তোলে নিয়ে গেলো আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য, কারোর বাবাকেও শাসানো হলো থানায় নিয়ে, ভয়-ভীতি দেখানো হলো কারও কারোর অভিভাবককে। সরকারি দলের নেতারা প্রচার শুরু করতে লাগলেন- ওই আন্দোলন ছিল বিএনপি-জামায়াতের সরকার পতনের ষড়যন্ত্র।

খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে আন্দোলন স্থগিতের পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এই ধরণের হিংসাত্মক আচরণ কেন? আওয়ামী লীগের মতো পোড় খাওয়া একটি ঐতিহ্যবাহী দলের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ কোনোভাবেই কী আমরা আশা করতে পারি? বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ মহান সংসদে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্তে কোনোপ্রকার ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। তিনি ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিতে সাড়া দিয়ে যদি এখন বলেন যে বাতিল নয়, কোটা ব্যবস্থা আসলে সংস্কার করা হবে, তাতেও তিনি দেশবাসীর সাধুবাদ পাবেন নিঃসন্দেহে। কারণ আন্দোলনকারীদের দাবি তো বাতিলের পক্ষে নয়। জনপ্রশাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অভিমতও তেমনটাই।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আন্দোলনে ভাটা সৃষ্টি করে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন। তবে মনে রাখতে হবে এখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক সমাজও রাজপথে নামতে শুরু করেছেন। পৃথিবীর কোনো যৌক্তিক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো বৃথা যায়নি।

ইদানিং অনেক বিষয়েই ঘুরে ফিরে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র সব লেখা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে। ১৯৪৯ সালে লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম লীগ সরকার বিরোধীদের ওপর চলছে নির্যাতনের স্টীম রোলার। বঙ্গবন্ধু তার ডায়েরীতে লিখছেন ‘কোন বিরুদ্ধ দল পাকিস্তানে না থাকায় সরকার গণতন্ত্রের পথ ছেড়ে একনায়কত্বের দিকে চলছিল। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সর্বময় ক্ষমতার মালিক হলেন। তিনি কোন সমালোচনাই সহ্য করতে পারছিলেন না। তখনকার দিনে আমরা কোন সভা বা শোভাযাত্রা করতে গেলে একদল গু-া ভাড়া করে আমাদের মারপিট করা হতো এবং সভা ভাঙার চেষ্টা করা হতো। 

আশ্চর্যের বিষয় সরকারি দল প্রকাশ্যে গু-াদের সাহায্য করত এবং প্রশ্রয় দিত। মাঝে মাঝে জগন্নাথ কলেজ, মিটফোর্ড ও মেডিকেল স্কুলের ছাত্ররা শোভাযাত্রা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা করলেই হঠাৎ আক্রমণ করে মারপিট করত। মুসলিম লীগ নেতারা একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছিল যাতে কেউ সরকারের সমালোচনা করতে না পারে। মুসলিম লীগ নেতারা বুঝতে পারছিলেন না, যে পন্থা তারা অবলম্বন করছিলেন সেই পন্থাই তাদের উপর একদিন ফিরে আসতে বাধ্য। ওনারা ভেবেছিলেন গুা দিয়ে মারপিট করেই জনমত দাবাতে পারবেন। এ পন্থা যে কোনদিন সফল হয় নাই, আর হতে পারে না- এ শিক্ষা তারা ইতিহাস পড়ে শিখতে চেষ্টা করেন নাই।’

  • Courtesy: AmaderShomoy/ Apr 25, 2018

Democratic space shrunken to a dangerous extent


A POLICEMAN grabbing a protester by the belt during a procession that the Bangladesh Nationalist Party, the ruling Awami League’s political arch-rival, brought out in Dhaka on Monday, betrays, on the one hand, how cruelly the police started behaving, or have been made to behave, with the political opponents and, on the other hand, how the government, presided over by the Awami League, has shrunken the democratic space for the people even when they hold programmes that are largely peaceful. As the BNP procession, brought out from the north gate of the National Mosque Baitul Mukarram as part of a seven-day programme demanding ‘unconditional’ release of the party’s chairperson Khaleda Zia who has been in jail since February 8 convicted to five years’ imprisonment in a corruption cases, neared the Dainik Bangla crossing, the police charged at the protesters with truncheons, leaving more than 15 injured. The police also arrested at least 30 leaders and activists although the police claimed that they had arrested only seven people. The police, moreover, attacked journalists, especially of private television channels when they were covering the police attack and picked up two of them, who were later released.

The way the police attacked the BNP procession and a policeman grabbed a protester by the belt, as a photograph that New Age published on Tuesday shows, suggest that the ruling Awami League has started marching down the path of affording no space in the democratic dispensation to any political parties in the opposition camp but itself. The Awami League and its front and associate organisations are bringing out processions almost every other day somewhere across the country, but the administration, mostly the police, is not allowing other political parties to hold any protests, however peaceful. The police are noticed to be coming down heavily on all programmes of the Bangladesh Nationalist Party almost everywhere. When the national elections are to be held by the year-end, such an attitude of the government, reflected through its police force, hardly looks to be anything but to stop political programmes of political parties in the opposition camp, especially the Bangladesh Nationalist Party, from gearing up to the elections. The police are seen to come down heavily even on the media covering police atrocities, which can be construed as efforts to stop the media from covering police misdeeds.

While such an attitude of the incumbents of shrinking the democratic space for political parties in the opposition might harm the political process, especially in the election year, this also contradicts with the Awami League’s position in that it has already embarked on political campaigns yet it has left others with no scope to do so. With Khaleda Zia being in jail and the verdict in the case yet to go through two to three stages more, it is for the court to decide what would happen. But the Awami League and its partners in the government must look inwards and make some course correction to advance the democratic dispensation, and not choke it.

  • Courtesy: Editorial/ NewAge /Apr 25, 2018

স্থান কখনও ‘শূন্য’ থাকে না

গোলাম মোর্তোজা


প্রকৃতি শূন্যতা পছন্দ করে না। না, বিজ্ঞান নিয়ে লিখছি না। তবে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বা রাজনীতি জাতীয় কিছু একটা বলা যেতে পারে। সাধারণ জনমানুষের ধারণা বা প্রত্যাশা ছিল অনেকটা এমন যে, শাসকদের অন্যায়- অনিয়ম বা জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের শুরুটা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার সঙ্গে যোগ দেবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ঢাকা বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেই চরিত্রটা সম্ভবত আর অক্ষুণ্ণ থাকছে না।

গত কিছু বছর ধরে চিত্রটা বেশ দৃশ্যমানভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান জনস্বার্থ পরিপন্থি। জনস্বার্থের পক্ষে অবস্থান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তারা আন্দোলনের ধরনে, দাবি আদায়ের প্রক্রিয়ায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন। ঢাকা বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন সরকার সমর্থক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে, অন্যায়- অনৈতিকতার পক্ষেও অবস্থান নিচ্ছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যায়- অনৈতিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনমানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করছেন। ঢাকা বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকার মানসিকতায় পরিবর্তন হচ্ছে। দু’একটি ঘটনার আলোকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।

১. বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকেই আন্দোলন- সংগ্রামের পথ দেখানো প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঐতিহ্যের ধারক অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও।

অন্যায়- অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত জন্ম দিয়েছে বারবার।

১৯৯০ তো বটেই, সর্বশেষ ২০০৭-এও পথ দেখিয়েছে। প্রতিবাদ- প্রতিরোধে মানুষকে সাহসী হতে শিখিয়েছে।

প্রতিবাদ-প্রতিরোধ এবং সাহসিকতার পরিচয় যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই দেখিয়েছিলেন তা নয়। শিক্ষকরাও সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। বর্তমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা গত কয়েক বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন তার সেই চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণেই বলছি স্থান ‘শূন্য’ না থাকার কথা। কয়েকটি উদাহরণ দেই-

ক. প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা বেতনের দাবি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা শহীদ মিনারে জমায়েত হয়েছিলেন। পুলিশ নির্দয়ভাবে পিটিয়েছিল, পেপার স্প্রে নিক্ষেপ করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা নীরব ছিলেন। এত বড় অন্যায়- অনৈতিকতার প্রতিবাদ করেননি। শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াননি।

খ. পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারীদের নিপীড়ন করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিরোধ-প্রতিবাদের চেষ্টা করেছে। প্রতিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ক্যাম্পাস দখলে রাখা ছাত্রলীগ। শিক্ষকরা নীরব থেকেছেন।

গ. কিছুদিন আগে ছাত্রীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে নাজেহাল করা হয়েছে, যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। কারা করেছে জানা থাকার পরও শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব থেকেছে। চিহ্নিত নিপীড়ক, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঘ. যৌন নিপীড়নকারীদের বিচারের দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে গেছেন। পর পর তিনটি গেটে তিনটি তালা দিয়ে উপাচার্য রুমে বসে থেকেছেন। শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙ্গে উপাচার্যের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন। উপাচার্য ছাত্রলীগ ডেকে শিক্ষার্থীদের পেটানোর ব্যবস্থা করেছেন।

২. এই তালিকা আরও অনেক বাড়ানো যায়। সেদিকে না গিয়ে এর বিপরীত চিত্রটার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার চেষ্টা করি-

ক. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভ্যাট আরোপ করল সরকার। তারা ফেসবুকে পেজ খুলে প্রতিবাদ জানালেন। স্মারকলিপি দিলেন। সমাজের অনেকেই তাদের ‘ফার্মের মুরগি’ বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেন। তাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে সামান্যতম গুরুত্ব দেওয়া হলো না। তাতে প্রতিবাদ থেমে গেল না।

খ. এক পর্যায়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করার মত করেই সরকার পুলিশ দিয়ে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করল। নির্যাতন চালানো হলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা তখন তাদের পাশে দাঁড়ালেন না। এখনকার কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন।

রাজনীতি নাম করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছেন, কিন্তু একটি গাড়ি-মার্কেট বা দোকান ভাঙচুর করেননি। ‘নো ভ্যাট গুলি কর’- শ্লোগান ধারণ করে ন্যায্য দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করেছেন। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অহিংস, কিন্তু কার্যকর আন্দোলন আগে কখনো হয়নি।

গ. উত্তরা ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রীকে বাসে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালায় তুরাগ পরিবহনের হেলপার-ড্রাইভাররা। কৌশলে নিপীড়ন থেকে রক্ষা পান সেই ছাত্রী। ছাত্রীর অভিভাবক থানায় মামলা করেন।

ইউনিভার্সিটি ফিরে সহপাঠীদের জানান। সকল শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। আবদুল্লাহপুরগামী তুরাগ পরিবহনের বাসগুলো উত্তরায় থামান শিক্ষার্থীরা। একে একে আটক করেন তুরাগ পরিবহনের ৩৫টি বাস। ইউনিভার্সিটির পাশের  রাস্তায় নিয়ে বাসগুলো দাঁড় করিয়ে চাবি নিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। বাসের চাবি নিজেদের জিম্মায় নিয়ে বাসগুলো তারা পাহারা দিয়ে রাখেন। যাতে কেউ বাসের ক্ষতি করতে না পারেন।

শিক্ষকসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন। শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দেন আগামী ১৬ ঘণ্টার মধ্যে, যৌন নিপীড়ক ড্রাইভার- হেলপারদের গ্রেফতার করতে হবে। যদি তা করা না হয়, আটক বাসগুলোর ক্ষতি হলে দায়- দায়িত্ব তাদের থাকবে না। ১৬ ঘণ্টা সময় অতিক্রম করার আগেই ড্রাইভারসহ অভিযুক্ত তিন নিপীড়ককে গ্রেফতার করে পুলিশ। উল্লেখ্য উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যতিক্রমী আন্দোলনে পুলিশ সহায়কের ভূমিকা পালন করেছে।

অন্যায়ের প্রতিবাদ, অন্যায়কারীর শাস্তির দাবির এমন অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করে সব মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অর্জন করেছেন বেসরকারি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঘ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন শিক্ষার্থীকে চোখ বেঁধে টেনে হেঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেল ডিবি। এর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষকরা কোনো প্রতিবাদ করলেন না। প্রতিবাদ করলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ছাত্রনেতা- শিক্ষক নেতা, কর্মীরা এর বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের রাবার বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াননি শিক্ষকরা। মানববন্ধন করেছেন ‘ভিসির বাড়ি ভাঙ্গল কেন’র প্রতিবাদে।


একজন ছাত্র বুকে গুলি নিয়ে ঘুরছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার খবরও রাখছেন না। ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের কথা লেখার শুরুতে বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের বাঁচিয়েছে। মাঝরাতে কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে তিনজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ তো দূরের কথা, সমর্থন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো তুলনা চলে না। কিন্তু উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কি কিছুটা লজ্জা দিতে সক্ষম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে?

৩. ক্ষমতাসীনরা বিশেষ করে সামরিক সরকারগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী চরিত্র বদলে দেয়ার চেষ্টা করেছে সব সময়। ভয় দেখিয়ে কখনো তা পারেনি। লোভ দেখিয়ে দু’একজনকে কিনে নিলেও, তাতে কিছু আসে যায়নি। বর্তমান সময়ে সরকারের সকল কাজে সমর্থন দেওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়মিত কাজের অংশ মনে করছেন। অন্যায়-অনিয়ম-অনৈতিক সব কিছুকে তারা সমর্থন করছেন।

ধারণা করা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেখান থেকে যদি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ না হয়, তবে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে। সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, দিচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি রাজনীতি না করা শিক্ষার্থীরা। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন তাদের মতো করে, অত্যন্ত কার্যকর অভিনব পদ্ধতিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাম ছাত্র সংগঠনগুলো সরব-সক্রিয় আছেন। সরব-সক্রিয় আছেন শিক্ষকদের একটা অংশও। তারা সংখ্যায় বেশি না হলেও মনোবলে শক্তিশালী। দেশের মানুষের সমর্থন আছে তাদের প্রতি। ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন সক্রিয় না থাকলেও, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাত্র সমাজের স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নিলেও, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হয়। সেই প্রতিবাদ প্রতিরোধে তাচ্ছিল্য করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অর্জন করে নেন। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে ঘোষিত কর্মসূচি না দিয়েও, ন্যায্যতার প্রশ্নে একসঙ্গে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে পারেন।

নিজেরা অন্যায়ের পক্ষ নেব- প্রতিবাদ করব না, অন্যদের করতেও দেব না, তা আর সম্ভব না।

ছাত্রদল অংশ না নিলে, ছাত্রলীগ প্রতিবাদের প্রতিরোধ-বিরোধিতা করলেও, ন্যায্যতার আন্দোলন সংগঠিত হয়। তাদের জন্যে স্থান শূন্য পড়ে থাকে না, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী। ছাত্রলীগ এবং তাদের সমমনা উপাচার্য-শিক্ষকরা যদি তা বুঝতে পারেন তো ভালো, না বুঝলে দিন দিন শুধু গুরুত্বহীন অশ্রদ্ধার মানুষে পরিণত হতে থাকবেন।

  • Courtesy: The Daily Star /Apr 25,2018

Tuesday, April 24, 2018

মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৭ — বাংলাদেশ সম্পর্কিত বক্তব্যের চুম্বকাংশ


(বিএনপি কমিউনিকেশন) — যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক ব্যুরো শুক্রবার, এপ্রিল ২০, ২০১৮, বিশ্বের ২০০’র অধিক দেশ ও অঞ্চলের বিষয়ে  ‘বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৭’  প্রকাশ করেছে।


রিপোর্টে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার,গণতন্ত্র, শ্রমঅধিকার ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সম্পর্কিত বক্তব্যের উল্লেখ্য নিচে দেয়া হল —

•    বাংলাদেশ  উদার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। 

•    নিরাপত্তা বাহিনীগুলির নির্যাতন, হত্যা বন্ধে কার্যকর কিছু করেনি বাংলাদেশ সরকার। 

•    বাংলাদেশের মানুষ পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে আস্থায় নিতে না পারায় তাদের  অনেকেই সরকারি অাইন-শৃঙখলা বাহিনীর কাছ থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করেন না বা অভিযোগ জানান না।

•    বিচারহীনতার কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছে। 

•    দেশটিতে গুম এবং অপহরণ  বন্ধ হয়নি। গণমাধ্যম, সভ্য সমাজ বলছে, সরকার শুধু সন্দেহভাজন জঙ্গ‌িদের গুম করছে না, একই সঙ্গে গুম করছে সভ্য সমাজ প্রতিনিধি এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরও ।

•    যেসব ঘটনায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তা হচ্ছে সরকারি বাহিনীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, বেআইনি আটক ও গুম । বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) কাজের স্বাধীনতা খর্ব করার মাধ্যমেও গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে।

•    ২০১৭ সনে ১৬২ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ( আইন ও সালিশ কেন্দ্র)।

•    বছরের প্রথম ১০ মাসে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছে ১১৮ জন (অধিকার)।

•    ২০১৭ সনে ৬০ জনকে গুম করা হয়েছে (অধিকার)। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা জানায় যে ২০১৬ সালে ৪০ জনকে গুম করা হয়েছে।

•    বাংলাদেশে বেআইনি গ্রেপ্তার বন্ধ হচ্ছে না। 

•    বাংলাদেশে মত প্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । 

•    খালেদা জিয়ার মত নেত্রীর বিরুদ্ধেও মত প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

•    দেশটিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ বিস্তর । আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বা ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনার  খুব অল্পই আমলে নেয় সরকার। 
•    পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়েছে। আর তাই কোনো সন্ত্রাসীকাণ্ড নিয়ে কোনো অভিযোগও তারা করতে চায় না।

•    দেশটির সংবিধানে জীবনের নিরাপত্তা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এখন সরকার ও সহযোগীরা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত।অসংখ্য প্রতিবেদন রয়েছে যেগুলো এ অভিযোগ প্রমাণ করে ।

•    আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান বা গ্রেপ্ততারকালে সময় সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সরকার এগুলোকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানের সময়সংঘটিত ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বা পাল্টা হামলার ফল উল্লেখ করে তা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করে। মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এগুলোরঅধিকাংশই বিচারবর্হিভূত হত্যা হিসেবে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

শাহরিয়ার আলম এর নাগরিকত্ব জ্ঞান


শামসুল আলম 


এ মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব তারেক রহমান। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। লন্ডন প্রবাসী। বাংলাদেশের বর্তমান বিনাভোটের সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে তাদের প্রায় সব মন্ত্রী-নেতাদের মুখে একটিই শব্দ - তারেক রহমান! তারেক রহমানকে  দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে প্রচার করছে সরকারের মিডিয়া এবং প্রচার যন্ত্র!


সরকারের লোকেরা বলছে - তারেক রহমানকে যেকোনো মূল্যে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে  আনবেন শেখ হাসিনা। এনে দণ্ড কার্যকর করবেন!

বেশ তো! আনতে পারলে আনুন...সেটা না করে খামাখা বাকওয়াজ করছেন কেনো? কেন ওনার রেটিং বাড়িয়ে দিচ্ছেন ?

এর গোমর ফাঁক  হিসাবে অনলাইন সূত্র জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডন গিয়ে বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা সেখানকার বাংলাদেশীদের হাতে এমন নাকানি চোবানি খেয়েছেন, সর্বত্র এমন প্রতিবাদ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন যা আগেকার সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে! কোনো ভেনুতে তিনি সামনের দরজা দিয়ে ঢুকতে পারেননি, সব যায়গায় পেছনের দরজা ব্যবহার করতে হয়েছে! লন্ডন শহরে ভ্রাম্যমান (মোবাইল) বিলবোর্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে খুনি, গণতন্ত্র হত্যাকারী, স্বৈরাচার হিসাবে তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করা হয়েছে। নতুন ধরনের এই প্রতিবাদ দেখে সবাই চমকিত হয়েছে! সম্মেলনে আগত বিদেশীরা এবং লন্ডনবাসীরা বাংলাদেশ এবং হাসিনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছে, আগ্রহী হয়েছেন। এসব কার‌ণে শেখ হাসিনা বিএনপি এবং তারেক রহমানের উপর যারপরনাই বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ  হয়ে বৃটেন সরকারের দ্বারস্থ হন-তারেক রহমানকে ফিরিয়ে দিন। কিন্তু তারেক রহমান সেখানে আইনানুগভাবে ভালোভাবেই আছেন, হাসিনার কথায় তাকে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগনাই জেনে শেখ হাসিনা আরও বিরক্ত হয়ে অন্তত দু’টি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে তারেক রহমানকে বাপ মা তুলে খিস্তি, হুঙ্কার এবং ধরে নিয়ে দণ্ড  কার্যকর করা হবে বলে নিজের ব্যক্তিগত হিংসা উগরে দিলেন। এমনকি লন্ডনে বিএনপির লোকদের উপর আক্রমন করতে তার দলের লোকদের নির্দেশ দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেলেন।

তবে প্রতিবাদের মাত্রা আরও বাড়ে যখন লন্ডন ছাড়ার সময় হোটল থেকে বের হওয়ার মুখে বাংলাদেশীদের ব্যাপকভাবে ডিমবৃষ্টির কবলে পড়েন হাসিনা ও তার দলবল। এমনকি লন্ডন পুলিশের বাধা ভেদ করে ডিম ছোড়ার দৃশ্য দেখা যায়!

অন্যদিকে তখন বিনাভোটের সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার প্রকাশ করেন, তারেক রহমানের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব নেই! সেই সাথে টিভিস্ক্রলে আসতে থাকে, ‘আওয়ামীলীগ বলছে, পারলে তারেক রহমান পাসপোর্ট দেখাক’, আবার বলা হচ্ছে- ‘তারেক রহমান নাকি তাঁর স্ত্রী ও কন্যার পাসপোর্টজমা দিয়েছেন ডাকযোগে! তাই ওনারা আর বাংলাদেশের নাগরিক নন!’ এদের কে বুঝাবে যে - পাসপোর্ট থাকা না থাকার সাথে নাগরিকত্বের কোন সম্পর্ক নাই।পাসপোর্ট হলো ট্রাভেল ডকুমেন্ট - বিদেশে যেতে এটা লাগে। এয়ারপোর্টে দেখাতে হয়। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ লোকের পাসপোর্ট নাই - বানায়নি। তাই বলে কি তাদের নাগরিকত্ব  গায়েব হয়েছে?  গাধাদের জন্য জ্ঞান হচ্ছে, পাসপোর্টের মেয়াদ থাকে, নাগরিকত্বের কোনো মেয়াদ থাকেনা। এটা আমৃত্যু।

ঋণ দিতে পারছে না ইসলামী ব্যাংক


বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক বলে পরিচিত ইসলামী ব্যাংকের পরিস্থিতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। নগদ টাকার সংকটে পড়ে ব্যাংকটি গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, কোনও শাখাই আগের মতো নিজেদের পছন্দের গ্রাহককে ঋণ (বিনিয়োগ) দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, অর্থ ছাড়ের (ডিসবাসমেন্ট) ক্ষেত্রে শাখার কর্মকর্তাদের অথরাইজ করার ক্ষমতাও বাতিল করা হয়েছে। ফলে দেশের কোনও জায়গা থেকে কোনও ধরনের ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকের শাখাগুলো।

এপ্রসঙ্গে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে আগে শাখার ম্যানেজারে বা তার নিচের কর্মকর্তারা অথরাইজ করতো। এখন আর তারা অথরাইজ করতে পারছেন না। অর্থ ছাড় বা ডিসবাসমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সার্ভারে থাকা শাখার কর্মকর্তাদের নাম ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।প্রধান কার্যালয় থেকে এই সার্ভার এখন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘সার্ভারে শাখার অথরাইজ কর্মকর্তার ক্ষমতা এখন প্রধান কার্যালয়ের হাতে রেখে দেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, গত বছর ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকে যে পরিবর্তন শুরু হয়, তা এখনও  অব্যাহত থাকায় ব্যাংকটি নানান সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চেয়ারম্যান পদে আবারও পরিবর্তনের ফলে আস্থার সংকটে পড়েছে এই ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যাংকটিতে নগদ টাকার সংকট সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে এতদিন শাখাগুলোকে মৌখিকভাবে ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা থাকলেও, সম্প্রতি শাখার কর্মকর্তাদের অথরাইজ করার ক্ষমতাও বাতিল করা হয়েছে।

ব্যাংকটির শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরে নতুন কোনও প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে না। আর আগের যেসব গ্রাহক ও প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ অনুমোদিত হয়েছিল, সেগুলোতেও অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতো প্রধান কার্যালয়। রবিবার (২২ এপ্রিল) থেকে শাখার ক্ষমতা একেবারেই তুলে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত বিনিয়োগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে মতিঝিল শাখার এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত আমানত ও বিনিয়োগ হার (আইডিআর) সমন্বয় করার জন্য বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছে।’ 

এপ্রসঙ্গে ব্যাংকটির রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে এককোটির বেশি গ্রাহকের আমানত রয়েছে। নির্বাচনের বছরে সেই আমানত যাতে কোনোভাবে খেয়ানত না হয়, সেজন্য বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বড় ঋণ ছাড় করা হচ্ছে যাচাই-বাছাই করে। নির্বাচনের বছরে ইসলামী ব্যাংকের কোনও টাকা যাতে জঙ্গি অর্থায়ন বা সন্ত্রাসী কাজে বা সরকারবিরোধী কোনও কাজে ব্যবহৃত হতে না পারে, সেজন্য শাখার কর্মকর্তাদের অথরাইজ করার ক্ষমতাও বাতিল করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ইসলামী ব্যাংক এর আগে কখনও তহবিল সংকটে (নগদ টাকা) পড়েনি। গত বছর প্রায় আট হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ হয়েছে। একসময় এই ব্যাংকটি দেশের বিপদে পড়া ১০ থেকে ১৫টি ব্যাংককে আর্থিকভাবে সহায়তা করতো, এখন সেই ব্যাংক নিজেই নগদ টাকার সংকটে পড়েছে। এমন অবস্থায় বেশ কিছু গ্রাহক ব্যাংকটি থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের আমানত ও বিনিয়োগ হার (আইডিআর) ৯২ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত হারের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ৭৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মুদারাবা আমানত ৬৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর বাকিটা খরচ ছাড়া (কস্ট ফ্রি) আমানত। ব্যাংকটির বিনিয়োগ রয়েছে ৭৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগ ৭৪ হাজার ৮৭ কোটি এবং বাকিটা শেয়ার বিনিয়োগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের সংগৃহীত আমানতের ৮৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। তবে সার্বিক আর্থিক সূচক ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা যায়। যদিও সর্বোচ্চ এই হার এক শতাংশ কমিয়ে ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের ঋণ ৮৯ শতাংশের বেশি রয়েছে, তাদেরকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এই সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান হঠাৎ করেই পদত্যাগ করার পর ব্যাংকটিতে নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। এদিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে ভেরিফিকেশন (তদন্ত) করানোর খবরে কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্টে যারা রয়েছেন, তাদের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার তিন শতাধিক কর্মকর্তার বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করা হবে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের বিষয়ে ভেরিফিকেশন (তদন্ত) করবে। ওই পরিচালক আরও বলেন, নতুন করে ভেরিফিকেশন হওয়ার খবরে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড চাপ সৃষ্টি করে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।

গত ৫ এপ্রিল ইসলামী ব্যাংকের (ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্থাপনা থেকে তিন ডিএমডিসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তা বিদায় নেন। অপসারণ করা হয় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. শামসুজ্জামান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এফসিএ, ডিএমডি আবদুস সাদেক ভূঁইয়া, ডিএমডি মোহাম্মদ মোহন মিয়া ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) আমিরুল ইসলামকে। তাদের মধ্যে এসইভিপি (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট) ছাড়া বাকি সবার চুক্তির মেয়াদ ছিল এক বছরের।

এদিকে শাখার কর্মকর্তাদের অথরাইজ করার ক্ষমতা বাতিল করার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের  বেশ কয়েকটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট পরিচালনা করতো সরকারবিরোধীরা, সেসব আউটলেটগুলোর কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১০৫টি আউটলেটের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৯৫টি আউটলেট চালু হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভাতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খান। তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হকও সেদিন পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া, একইদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

Bangla Tribune/ Apr 24,2018

ঢাকায় আ'লীগের সংঘর্ষে নিহত যুবকের শরীরে ৪৮ গুলির ক্ষত

  • দুই পক্ষ একত্রে জমি, মাটি ভরাট ও ঠিকাদারির ব্যবসা করেছে।
  • পরে রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি ব্যবসা নিয়েও দ্বন্দ্ব। 
  • গত রোববার দ্বন্দ্ব গড়ায় খুনোখুনিতে।


ঢাকার বাড্ডায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধটা মাত্র চার মাসের পুরোনো। এর আগ পর্যন্ত দুই পক্ষ একত্রে ওই এলাকায় জমি, মাটি ভরাট ও ঠিকাদারির ব্যবসা করেছে। পরে রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি এসব ব্যবসা নিয়েও দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়, যা গড়িয়েছে খুনোখুনিতে।

দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত রোববার গুলিতে নিহত হয়েছেন বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান ওরফে দুখু মিয়া (৩২)। পুলিশের তৈরি সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত কামরুজ্জামানের শরীরে ৪৮টি গুলির ক্ষত (বুলেট ইনজুরি) পাওয়া গেছে। খুব কাছ থেকে শটগান দিয়ে গুলি করায় ছররা গুলিতে এত বেশি জখমের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা পুলিশের। ছররা গুলি লেগেছে আরও সাতজনের শরীরে।

তবে ঘটনার ২৬ ঘণ্টা পরেও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায়নি বলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল হত্যায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ধরতে কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় ব্যবহৃত কোনো অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি বলে জানান ওসি।

গতকাল দুপুরে কামরুজ্জামানের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বেরাইদে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় দাফন করা হয়।

নিহত কামরুজ্জামানের ভাই চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের অভিযোগ, সাংসদ রহমতুল্লাহ নিজের ছেলেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর করতে চেয়েছিলেন, তাতে তিনি (জাহাঙ্গীর) বাগড়া দেওয়ায় গত জানুয়ারি থেকে তাঁদের বিরোধ শুরু হয়। সেই বিরোধের জেরে জাহাঙ্গীর ও তাঁর পক্ষের লোকজনের ব্যবসাতেও বাধা দেওয়া হচ্ছিল। এসব নিয়ে মামলা এবং জিডিও করেছেন তাঁরা। ১৩ এপ্রিল ব্যবসায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে জিডিও করেছিলেন নিহত কামরুজ্জামান। সাংসদের বিরুদ্ধে বাজারদরের তিনভাগের একভাগ দামে মসজিদের জমি কেনারও অভিযোগ করেন তিনি।

তবে সাংসদ রহমতুল্লাহ জাহাঙ্গীরের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গুলশানে একটি সরকারি বাড়িতে থাকেন। জীবনে চারবার সাংসদ হয়েছেন, একবারও সরকারি প্লটের আবেদন করেননি। জমির প্রতি তাঁর কোনো লোভ নেই। মসজিদের জমি কম টাকায় কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না।

তাঁর ভাগনেদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ঘটনার সময় তো তারা ছিল না। এখন কেউ মামলা দিলে দিতে পারে। নির্বাচনের প্রার্থিতা নির্ধারণের বিরোধ প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, প্রার্থী হিসেবে তিনি তাঁর ছেলে হেদায়েতুল্লাহর পাশাপাশি জাহাঙ্গীরের নামও রেখেছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।

গতকাল বেরাইদ এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, রহমতুল্লাহর ডান হাত হিসেবেই সবাই জাহাঙ্গীরকে চিনতেন। এই এলাকায় একটি আবাসন কোম্পানির জমি কেনায় মধ্যস্থতা করা, বালু ভরাট ইত্যাদি কাজ দুজনে মিলেমিশেই করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে জমি বেচতে জবরদস্তি, চাপ দিয়ে দাম কম দেওয়া ইত্যাদির অভিযোগ বিস্তর। বেরাইদ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ শুরু হয়। সাংসদ রহমতুল্লাহ নিজের ছেলেকে আর জাহাঙ্গীর নিজে কাউন্সিলর হতে চান। তবে সম্পর্কে ফাটল ধরার এত অল্প সময়েই খুনোখুনি হবে তা ভাবেননি স্থানীয় লোকজন।
  • Courtesy: Prothom Alo /Apr 24, 2018

এলএনজির পরও বসে থাকবে চট্টগ্রামে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র

সুজিত সাহা


বহুপ্রত্যাশিত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) দেশে আসছে আজ। আনুষঙ্গিক কাজ শেষে আগামী মাসের শেষ দিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এ গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। যদিও এলএনজি আসার পরও সক্ষমতা অনুযায়ী তা ব্যবহার করতে পারবে না চট্টগ্রামের গ্যাসভিত্তিক সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দুর্বলতায় গ্যাস প্রাপ্যতার পরও বসিয়ে রাখতে হবে বিদ্যুৎকেন্দ্র।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) সূত্র জানায়, গ্যাস সংকটের পরও চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাস প্রাপ্তিতে প্রাধান্য পেয়ে আসছিল এতদিন। তাই এলএনজি আমদানির পর বেসরকারি সাতটি কেন্দ্রে নতুন করে বাড়তি গ্যাসের প্রয়োজন হবে না। তবে রেশনিংয়ের মাধ্যমে এতদিন সরকারি কেন্দ্রগুলোকে গ্যাস দেয়া হলেও এখন চাহিদার শতভাগ গ্যাস দিতে পারবে কেজিডিসিএল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ন্যাশনাল লোড ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাস থাকলেও উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। মাল্টিপল বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরিসাপেক্ষে সারা দেশে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ তৈরি হলে গ্যাসনির্ভর কেন্দ্রগুলো সক্ষমতার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে।

জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের বিতরণ বিভাগের ম্যানেজার মো. হাসান সোহরাব বলেন, বিপিডিবি দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস পাচ্ছে না। তবে এলএনজি আমদানি শুরু হওয়ায় গ্যাসের অভাব থাকবে না। বিপিডিবি চাইলে যত খুশি গ্যাস নিতে পারবে। কিন্তু পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় ও জাতীয় গ্রিডের চাহিদার ওপর নির্ভর করে সব কেন্দ্র একসঙ্গে চালু রাখা যাবে না। ফলে চাহিদার চেয়ে কম গ্যাস কিনবে বিপিডিবি। একসময় চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৫-৫০ কোটি ঘনফুট বলা হলেও এলএনজি আমদানির পর প্রকৃত চাহিদা কত, তা বোঝা যাবে।

চট্টগ্রামে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ১৮ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। চাহিদার শতভাগ গ্যাস সরবরাহ দিলেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিতরণের একাধিক সঞ্চালন লাইন নেই। চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুৎ মূলত চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি জেলায় সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয় বলে দাবি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তাদের।

জানতে চাইলে বিপিডিবির (চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই ডুয়াল ফুয়েল। ফলে বর্তমানে গ্যাস না পেলেও জ্বালানি তেলের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে কেজিডিসিএল গ্যাস সরবরাহ দেবে। ফলে আমরা রেশনিংয়ের মাধ্যমে যথাসম্ভব নতুন প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। এরপর সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা আরো বিস্তৃত হলে সক্ষমতার শতভাগ গ্যাস ব্যবহার সম্ভব হবে।

বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, শুরুতে ১২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়াসাপেক্ষে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চালু রাখা হবে। এ কেন্দ্রে ৩ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রে ৩ কোটি ৭ লাখ ও চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটে (২১০ মেগাওয়াট) ৪ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি ইউনিট (২১০ মেগাওয়াট) ও শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি কার্যত বন্ধ রাখা হবে। গ্যাসনির্ভর কেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও চুক্তির বাধ্যবাধকতায় বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হবে। এমনকি উৎপাদন ব্যয় বেশি হলেও জ্বালানি তেলনির্ভর দোহাজারী ও হাটহাজারী কেন্দ্র চালানো হবে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে।

বিপিডিবি সূত্রমতে, কাপ্তাই ২৩০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ছাড়াই প্রতিদিন ১৫০-১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে দোহাজারী-হাটহাজারী (ফার্নেস অয়েল-২০০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হচ্ছে ৯৩ মেগাওয়াট। বর্তমানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। ফলে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে নির্ধারিত পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে সরকারি কেন্দ্রে দৈনিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে উৎপাদন করা হচ্ছে। রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিটে ১৯০ মেগাওয়াট উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও কমিয়ে রাখা হচ্ছে কেন্দ্রটির উৎপাদন।

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২০ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট। সরকারি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদাই ১৮ কোটি ৩০ লাখ ঘনফুট।

  • Courtesy: Bonikbarta/ Apr 24, 2018