Search

Monday, July 16, 2018

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর আবার ছাত্রলীগের হামলা

  • শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় 
  • হামলার দায় অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ 
  • শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি প্রক্টরের


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে আবারও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নাজেহাল হন।

ছাত্রলীগ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেছেন, তাঁরা শিক্ষক ও মুরুব্বিদের সম্মান করেন। তবে ‘মীমাংসিত বিষয়’ নিয়ে কেউ যেন ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ আছে।



অন্যদিকে শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেছেন, তদন্ত হবে। তদন্তে শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা বহিরাগত যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার শুরু বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। ছয়-সাত শ শিক্ষার্থীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিপীড়িত শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানার নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ২০ গজ দূরত্বে উল্টো পাশে এসে দাঁড়ান এবং মাইকে চিৎকার করতে থাকেন। তাঁরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করতে থাকেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির বলে গালিগালাজ করতে থাকেন। কখনো আবার বামপন্থী রাজনীতি করার জন্যও গালি দেন। শিক্ষকদের বক্তব্যের মাঝখানে তাঁরা স্লোগান দেন, ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা পাকিস্তানে চলে যা’।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জন্ম নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দীন খানকে উদ্দেশ করে ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, ‘এই শিক্ষকের তো চুল পেকে গেছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি।’ তাঁরা বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করছেন।

একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের মোর্চা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তিনি কথা বলতে শুরু করামাত্রই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘এই মহিলা জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট।’

ছাত্রলীগের হট্টগোল উপেক্ষা করেও শিক্ষকেরা বক্তব্য দেন। তাঁরা নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। বাধার মুখে একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জমায়েত জাতীয় সংগীত গেয়ে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারের সামনেই অবস্থান নেন। ছাত্রলীগ সেখানে গিয়ে তাঁদের ওপর চড়াও হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পরে শহীদ মিনার ছেড়ে মিছিল নিয়ে বের হন। বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের কাছে ছাত্রলীগ তাঁদের আটকে দেয়। তাঁরা রাস্তায় অপেক্ষা করতে শুরু করেন। এমন সময় ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালায়। তারা যেখানে যাকে যেভাবে পেয়েছে সেখানেই চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। তাদের হামলা থেকে মেয়েরাও রেহাই পায়নি। এটিএন নিউজের সাংবাদিক ইমরান সুমনের বুম কেড়ে নেয় এসএম হলের ছাত্রলীগের নেতা সায়েম। মিছিল ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর মোটরসাইকেল মহড়া করে শিক্ষার্থীদের খুঁজে খুঁজে পেটায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

একপর্যায়ে শিক্ষক-ছাত্ররা শহীদ মিনারে ফিরে এলে তাঁদের বেদির কাছে যাওয়ায় বাধা দেন ছাত্রলীগের নেতারা। পরিচয় জানতে চাইলে একজন বলেন, তিনি উৎসুক জনতা। তাঁরা কেন শিক্ষক-ছাত্রদের ঢুকতে দিচ্ছেন না জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের খুবই সম্মান করি। আমরা তাঁদের ইজ্জত পাহারা দিচ্ছি।’

বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যাঁর যাঁর গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, হামলাকারীরা তাঁর পিছু নেয়। একই চিত্র দেখা গেছে মেয়েদের হলে ফেরার পথেও। ছাত্রলীগের ছেলেরা ছাত্রীদের পিছু পিছু তাদের হলে যায়। হামলা ও কটাক্ষ থেকে বাঁচতে তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক আজ যা ঘটেছে তা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মারধর করেনি, কিন্তু যা করেছে তা মারধরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’

ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় অস্বীকার 

ছাত্র-শিক্ষকদের সমাবেশে ছাত্রলীগ যখন হামলা করছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের পক্ষ থেকে দুজন কর্মচারী হ্যান্ডমাইকে সবাইকে পথের দুই পাশ থেকে সরে যার যার গন্তব্যে চলে যেতে বলেন। শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করেন। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘এখানে শিক্ষকেরা দাঁড়িয়েছেন। উল্টোপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে। কী বিশ্ববিদ্যালয় এটা? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন পর্যায়ে আনা হয়েছে? এটা নজিরবিহীন। এই মুহূর্তে সাধারণ ছাত্ররা জেলে আছে। তারা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ওরা ভাড়া করা লোকজন নিয়ে মহড়া দিতে পারে, কিন্তু আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

উল্লেখ্য, রোববারের সমাবেশে ছাত্রলীগের সঙ্গে বেগম বদরুন্নেসা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কলেজ বাসে করে ছাত্রীরা আসে।

সমালোচনার জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘নিজস্বভাবে মূল্যায়ন করে আত্মবিশ্লেষণ করে তারপর আমাদের অভিযুক্ত করতে অনুরোধ করেছি।’ যেসব ছাত্ররা শিক্ষকদের নাজেহাল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, কে কী করছে দেখে ব্যবস্থা নেব। ঘটনা শিক্ষক ঘটাচ্ছে, নাকি শিক্ষার্থীরা ঘটাচ্ছে, না বহিরাগতরা ঘটাচ্ছে—সেটা তদন্তে বের হয়ে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সবার জন্য প্রযোজ্য।


এদিকে ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় মুরুব্বিদের, শিক্ষকদের সম্মান করি। যথোপযুক্ত সম্মান আমরা দিয়ে থাকি। শিক্ষকদের ওপর যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমরা সেটা সমর্থন করি না।’ তিনি বলেন, আমি শুনেছি সেখানে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ও নিপীড়িত শিক্ষার্থীবৃন্দ এই দুই পক্ষের মানববন্ধন ছিল। তাদের মিছিলটি যখন একসঙ্গে হয়ে গিয়েছিল, সেখানে আমাদের ছাত্রলীগের কেউ ছিল না। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কে করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশেই আইন অনুষদ। এই অনুষদে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। হয়তো তাঁদের কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে দুই পক্ষের ছাত্রদের মারামারি থামাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন তাঁদেরই হামলাকারী বলা হচ্ছে। তিনি রোববারের হামলাকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের বিরোধ বলে দাবি করেছেন।

তবে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকবে বলে জানিয়েছেন জাকির। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটি করে দিয়েছেন। একটি ‘মীমাংসিত বিষয়’ নিয়ে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, শান্ত পরিবেশ যেন অশান্ত করতে না পারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সব ক্যাম্পাসে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের ‘ইন্ধনে’ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন হচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

  • Courtesy: Prtothom Alo/ Jul 15, 2018

Sunday, July 15, 2018

DU VC’s decision condemned: Attack on quota reformists reprehensible

EDITORIAL




Over the last six months apolitical students, who have been pressing for their demand for reforms in the existing quota system in government jobs, were attacked by ruling party’s student cadres and activists several times for four consecutive days on the Dhaka University (DU) campus area as well as some other public varsities across the country. The incidents took place when the protesters were about to hold a press briefing to announce their next course of action as three months have passed since Prime Minister Sheikh Hasina unilaterally declared total abolition of the quota system.

Because of their wanton disregard for law, which is attributable to impunity, atrocious activities on campuses of all the public varsities and colleges in this Republic by violent members of the Bangladesh Chhatra League (BCL)—the student wing of the ruling party Awami League—they are the most despised and much dreaded group at present. No student is allowed board and lodging in the public varsity/college dormitories unless and until s/he declares allegiance to the BCL leaders who rule the roost, absolutely. 

Those challenging their boisterous bravado and command are invariably manhandled and beaten up. The victims have no scope to complain against the perpetrators as the heads of the institutions will not utter a word against the malefactors.

Some pro-quota leaders were physically assaulted and—women students were not spared. Family members of Nur, one of the injured leaders of quota reform movement, alleged that authorities of the Anwar Khan Modern Medical College Hospital forcibly released him in the wee hours.

The Dhaka University (DU) authority on April 11, 2018 pledged support to the quota-reform movement that picked up momentum on April 8 and spread across the country. 

DU VC Akhtaruzzaman said, “From my behalf and from the university’s behalf we have expressed solidarity with the movement and have asked the government to take quick measures and give assurance to the students so that they can return to normal life”. “The students have come up with some very logical points against the quota system and they have said that with changing times reform is necessary, the VC said. “From my side, I have very clearly and very strongly told the government that Dhaka University authorities, DU family and teachers are in support of the quota-reform movement,” the VC said. So far so good. But it defies logical comprehension as to why the VC has toed the official line and became a betrayer within a few days.

A faction of Dhaka University teachers staged a demonstration on the Central Shaheed Minar premises in Dhaka on July 8, 2018, demanding a campus free of repression. Condemning the attacks on general students demanding quota reforms, Dr. Serajul Islam Choudhury, professor emeritus of Dhaka University, today said the incidents that had happened are “unfortunate, shameful and unbelievable”. This did not happen during the Pakistan or British period, Bangla daily Prothom Alo reports quoting Prof. Choudhury. The professor made the remarks during a programme arranged by a faction of DU teachers at the Central Shaheed Minar premises this morning, demanding a campus free of repression. “The government was compelled to form a committee owing to the protests. But the protesters were brutally and barbarically attacked. I have never seen such brutal attack with a hammer,” he added.

“The quota-reform movement is fair and logical. For this, boys, girls, guardians and teachers have all extended their support to the quota-reform movement,” Sirajul Islam was quoted as saying according to Prothom Alo. “The government was compelled to form a committee owing to the protests. But the protesters were brutally and barbarically attacked. I have never seen such brutal attack with a hammer,” he added.

“Given the current situation, there is no security of people. Cases are being filed against those who are protesting. With today’s protest, I press my demand for quota reform,” Sirajul Islam said. Teachers under the banner of “Nipiron Birodhi Shikkhokbrindo [Teachers Against Repression]” staged a demonstration.

Cadres of the Bangladesh Chhatra League have earned the dubious distinction owing to involvement of some of them in frequent wrangle, extortion, violent crimes like rape, manslaughter and what have you since long. Even during the incumbency of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, who was then Prime Minister, in internecine fratricide over establishing supremacy one faction of the BCL gunned down seven members of the same party on 4 April 1974 in the Surja Sen Hall dormitory on the Dhaka University (DU) campus for the first time in the varsity’s history.

What is more, with Sheikh Hasina herself as the chief guest at the TSC in DU at the founding anniversary of the BCL on 9 January 1992, BCL activist Moniruzzaman Badal was shot dead. Afterwards until recent times some 65 murders have happened on public university and college campuses across the country.

BCL men have attacked quota reformists at least 13 times in the last three months, injuring around 68 students of four universities. But neither police nor the university authorities took action against any of the attackers. What’s even worse is some of the injured were arrested by police or allegedly driven out of hospitals while the perpetrators roamed freely on the campuses. 

Some central quota reform leaders were picked up by members of Bangladesh Chhatra League and handed over to police. They were shown arrested in different cases and sent to remand. Besides, the authorities of those universities are apparently treating the quota reformists as trouble-makers, leaving them in fear of further assault and arrest.

These hark back to what German philosopher Hegel said: “The only thing we learn from history is that we learn nothing from history.”
  • Courtesy: Holiday/ Jul 15,2018  

What is the use of holding another “controlled” non-inclusive national polls?

Shakhawat Hossain

Now after the conclusion of Khulna and Gazipiur city corporation elections, questions have surfaced in public mind about the necessity of spending huge amount of money from the public exchequer in holding of holding another captive and largely non-inclusive January 5 like elections in Bangladesh where the voters cannot rightfully exercise their franchise and also can not see the reflection of their aspirations in the polls result under the prevailing political culture.

With such a nagging but a realistic and timely question being raised in the mind of the general people of Bangladesh, the voters as approaching towards a national polls by the end of this year. The ruling party and the Election commission has made it6 formal that the e4lection sche4dule would be annmounced in October apparently putting the country’s major opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) in the bay once again.

For a country like Bangladesh, elections are a major indicator of democracy in true sense. Peaceful transition of power through hassle-free election is desirable for strengthening democracy in the country, but it is not always achieved.

Bangladesh has long been stuck in a political impasse. Although the country adopted a multiparty system in 1991, subsequent governments have been repressive and failed to meet the standards of democracy. Now, the upcoming 11th Parliamentary Election may be legal under the 15th Amendment, but its legitimacy remains subject to question. Will the Bangladeshi people - and the opposition alliance - accept the results of an election that fails to represent all groups? 

There are speculations about possible scenarios, including those pertaining to the impartiality of the polls and also violence affecting the polls. Such speculation is not unusual as elections in the country are often turbulent. 

With less than six months left for the parliamentary election in Bangladesh, the country is now drawing lots of attention in South Asia and outside, as both the two arch-rivals, ruling Bangladesh Awami League (BAL) and the major opposition BNP and is still a far away in reaching a national consensus or a national unity through a much awaited dialogue for resolving the crucial issue about the poll-time government though time is running so fast now. 

And, the upcoming elections are getting lots of attention largely because the ‘Opposition’ Bangladesh Nationalists Party (BNP), one of the dominant political players, boycotted the 2014 parliamentary polls, protesting against the abolition of the ‘care-taker government system’, a special poll-time arrangement for overseeing the election, which was institutionalised in 1996. This system was abolished in 2011 with a constitutional amendment by the current government led by Sheik Hasina. 

The government’s policymakers are yet to move to hold talks with the opposition BNP to resolve the political crisis over a polls-time government. Rather, they have been dismissive of the opposition demand for installing a non-partisan government, saying no unelected people will be allowed to run the country during the election. Both the leaders still remain rigid in their stance, raising the spectre of political violence.

Further complicated

To make the situation further complicated, BNP chief and former Prime Minister Begum Khaleda Zia has been serving a five-year jail sentence, in a corruption case, since February this year. The BNP has termed the conviction ‘politically-motivated’ to keep Khaleda Zia out of the electoral race.

The BNP is also facing another problem. Khaleida’s heir and party vice-chairperson Tarique Rahman too has been convicted in the same case, and hence he too cannot fight the upcoming elections. Considering the circumstances, some ambiguity exists about the party’s actual participation in the election. The BNP, however, has not clarified its stand yet. However, some reports in the popular media suggest that the party has been preparing for the election.

Inclusive election

Currently, an inclusive participatory election is at the centre of the current political discourse in the country. But, the elections in Bangladesh have been problematic. The elections are not only been violent with clashes between political rivals but also the impartiality of the system and the process has also been an issue. The system of caretaker government was instituted to ensure free and fair polls. 

It is noted here that the absence of opposition parties in the January 5 election has raised serious concerns about the credibility of the elections. On December 29, 2013 the opposition BNP called for a “March for Democracy”, but its leader Khaleda Zia was put under house arrest by the government. The situation has become so dire that the Asian Human Rights Commission, in an open letter to the UN Secretary General Ban Ki Moon, urged him to act immediately to save supporters of Bangladesh’s political opposition from extra-judicial execution by state agents in the lead up to the general election.

The present political dispensation is regularly being criticised by the Opposition BNP for its alleged failure to create an atmosphere for inclusive politics, where all the political parties could have a level-playing field for conducting their activities and contesting elections. The Opposition has been accusing the government of harassing their cadres, as part of ‘political vendetta’.

“Increasing radicalism in the country is against the idea of a democratic Bangladesh. It is being feared that any turbulence on democracy will give the radicals a chance. For the people of Bangladesh, a Muslim-majority country with a liberal society, elections are a re-assurance to its liberal order,” observed New Delhi based Observer Research Foundation (ORF). 

So, a legitimate election must be representative and that cannot happen without the participation of the major opposition BNP. If all parties and groups do not achieve consensus on electoral rules, Bangladesh may witness a repeat of 1996, 2014 or worse, descend into a state of violence and lawlessness.

“Current ‘political crisis’ deeper than before”

The current ‘political crisis’ Bangladesh is now going through is deeper than that of past 46 years, said an international political analyst on July 6.

“To understand the reason behind the crisis and identify the future pathway of the country’s politics, four things are needed to be looked at — the current face of governance, reaction from the new class of social stratification, influence of Islamists on society and politics; and the role of India,” said Distinguished Professor Ali Riaz.

Prof Riaz, who teaches at the Department of Politics and Government in Illinois State University, USA called the current government a ‘regime’ because he said ‘regime lasts longer than any government’ using formal and informal institutions.

Speaking at the 23rd monthly public lecture titled ‘Future Trends of Politics in Bangladesh’, organised by Reading Club Trust and Gyantapas Abdur Razzaq Foundation, at Sirajul Islam Lecture Hall in Dhaka University, he said a hybrid ‘regime’ is going on in the country where ensuring everyone’s participation and everyone’s right to vote is a ‘matter of big concern’.

“All hybrid regimes are not the same. The most important factor is some of the aspects of such regime look like democratic while some others behave like autocratic,” he said.

Claiming election as the only legal base to be there in power, Ali Riaz said: “After the 2008 election and the 15th amendment to the constitution, a new type of political system has come into the scene where election has been turned into a tool of authority, rather being a tool of democracy.”

After the cancellation of the caretaker government system, now it has become impossible to defeat the ruling party, he said adding that once there was a vibrant civil society in the country which is now missing.

“The benefits of the existing economic growth for the past several decades are being enjoyed by only a few groups of the country. The real income of general people is reducing while resources are getting concentrated by a small group of people,” Ali Riaz observed.

Condemning the current situation in the country’s banking sector and growing unemployment rate, he said, “As per the BBS information, 45 percent of the capable population is unemployed.”

Prof Riaz also described the state-level relationship between Bangladesh and India as ‘sweet and sour’ where Bangladesh is significant for India for geo-political reason. “India is almost playing the role of determinant in Bangladesh politics.”

Is fair polls possible under present EC?

It has been proved once again that a free, fair and acceptable election is not possible under the present Election Commission. Everyone in home and abroad is saying that the recent city corporation elections were a mockery with unprecedented rigging and massive irregularities.
 People’s confidence on the entire electoral system has been smashed due to Election Commission’s inactiveness to address multiple irregularities and vote rigging by the ruling party men in the recently held city corporation polls.

In the Khulna and Gazipur civic polls, the election commission’s weakness was exposed largely. EC swallowed strong criticism for its failures to have control over law enforcement, mass arrest of opposition activists, conducting raids from house to house of opposition activists, ballot stuffing after capture of polling stations during Khulna and Gazipur polls.

The country’s main opposition political party Bangladesh Nationalist Party (BNP) had raised questions about the neutrality of the election commissioners, particularly, chief election commissioner KM Nurul Huda, when the commission was reconstituted in February of 2017. After the Khulna polls, BNP demanded resignation of the election commissioners. 

According to election experts and observers, the election commission (EC) has failed to exert its due constitutional power in ensuring a level-playing field and checking various irregularities in the recently held Gazipur City Corporation (GCC) polls.

They said the EC also failed to ensure its control over the police and the local administration to create an election atmosphere after the announcement of the schedule.

The election observers said the election atmosphere was nice in the morning, but it ‘collapsed’ in the afternoon due to the commission’s lack of strong role and law enforcers’ ‘negligence’.

“The election atmosphere was very good with the presence of huge voters in the morning, but it got destroyed with the passage of time. We’ve seen many irregularities in the afternoon. We’re preparing our statement on the polls analysing our data,” reports UNB quoting Md Abdul Alim, director of Election Working Group (EWG), which monitored the GCC polls.

He said the EC needs to establish its full control over the local administration and police in the election area after the announcement of the schedule. “But, they couldn’t do it for lack of cooperation by different stakeholders, mainly by the government.”

The director of EWG, a non-partisan network of 28 leading civil society organisations, said the commission could ask the police not to arrest or harass anyone after the announcement of the schedule. “But, they did it just a day before the polls.”

Under such a circumstance, the credibility, neutrality, honesty, integrity, sincerity, competency as well as authority of the incumbent Chie Election Commissioner (CEC) are now under a big question, as he has utterly failed to pass the first test while conducting the city corporation polls.

Consequently, another question is also being raised to a large extend as to how a failed CEC will be able to hold any other polls upcoming national polls in a free, fair and neutral manner? Let along the upcoming city corporation polls slated for December, this year.

EC fulfilling government wishes?

The election commission is, for all practical purposes, reportedly fulfilling the wishes of the government now run by Bangladesh Awami League (AL) and the more the national election is nearing the more that is becoming apparent. Election experts said various steps in recent times have called the credibility of this constitutionally independent body into question.

EC officials said during a recent meeting with the election commissioners, a delegation of ruling AL had put forth three demands – allowing MPs to carry out electioneering in city polls, no changes to electoral constituencies and further scrutiny before amending the Representation of People Order 1972.

Following the demand, the election commission amended the rules of electoral code of conduct for city corporation elections allowing the members of parliament to participate in poll campaigns.

Proposed amendments to the RPO have also been sent for further scrutiny while the commission completed the re-demarcation of the constituencies almost in line with the desires of the ruling party.

In response to AL’s objection to the returning officer for the Khulna city polls, the commission appointed a joint secretary as the coordinator for the polls and sent him to the city. 

On the other hand, the commission paid no heed to opposition Bangladesh Nationalist Party’s (BNP) demand for withdrawing Khulna metropolitan police commissioner and Gazipur police superintendent.

The commission also took no steps to address several allegations raised by BNP’s Khulna mayoral candidate.

Various proposals came during commission’s stalks with stakeholders which included troop deployment in national elections, introduction of no-vote, holding general elections in a staggered manner, and voting arrangement for non-resident Bangladeshis.

But the commission took no steps to implement those proposals. It rather is waiting for government decision saying, “These are political affairs.” These steps of the election commission have given birth to a discussion that this constitutional commission is working only to fulfil the desire of the government.

Against such a backdrop, election experts fear that the commission would have to face a big crisis of confidence before the next general elections slated to be held in the yearend if it continues to behave like this. But, the incidents of ballot-stuffing, capture of polling stations and intimidation of voters by ruling party activists have called into EC’s role into question.

US links Bangladesh’s elections to Indo-Pacific stability
US Ambassador Marcia Bernicat has, however, linked free, fair and credible elections in Bangladesh with the stability of the Indo-Pacific region for which the new American administration has adopted a strategy.

“The US and Bangladesh are built on the same democratic principles and foundations. This is what makes both of our countries strong. And a strong Bangladesh is crucial for the stability of the Indo-Pacific region,” Bernicat said while meeting diplomatic correspondents in Dhaka on June 28. 

Before saying that, she highlighted Bangladesh’s democratic process and elections in Khulna and Gazipur, and indicated that stability comes through holding free, fair and credible elections.

“While we commend the Khulna and Gazipur city corporation elections, the US remains concerned by reports of irregularities, including ballot box stuffing and intimidation of political players and polling agents both before and on the day of the vote,” she said. 
  • Holiday/ jul 15,2018

UK lawyer alleges India deported him under Bangladesh pressure

Lord Alex Carlile, a member of the legal team of opposition BNP leader Khaleda Zia, was deported from New Delhi airport.


by David Bergman 


Lord Carlile was deported from New Delhi airport early on Thursday morning  [Courtesy Lord Alex Carlile]

A senior UK lawyer has claimed that the Indian government deported him from the country at the behest of neighbouring Bangladesh government, which wanted to stop him from lobbying on behalf of a jailed opposition leader.

Lord Alex Carlile QC, a member of the legal team of Khaleda Zia, chairperson of the main opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP), who was jailed in February for five years on corruption charges, said that he was "shocked that India should have succumbed supinely to representations by the Bangladesh government".

The BNP leader and five others were accused of embezzling over 21 million taka ($252,000) from foreign donations intended for the Zia Orphanage Trust - a charity named after former President Ziaur Rahman, Zia's husband.

Lord Carlile was deported from New Delhi airport early on Thursday morning.

Zia's lawyer said that "Bangladesh is now a pariah state in rule of law terms" and the Indian government "should be hanging its head in shame" about deporting him following "representations made by Dhaka".

A week ago, Bangladesh newspapers reported that the country's foreign ministry had summoned Dr Adarsh Swaika, India's acting High Commissioner in Dhaka, to discuss its concern over Lord Carlile's impending visit and to deny him a visa.

Al Jazeera contacted Shahidul Haque, the Bangladesh foreign secretary, but he did not respond to a query about the news reports. Attempts to contact the Indian High Commission in Dhaka were also not successful.

Motivation 'a bit suspect'

However, in a statement issued at the time of his deportation, India's Ministry of External Affairs spokesperson Raveesh Kumar made no reference to this meeting, only stating that Carlile was denied entry into India as he had "arrived in New Delhi on July 11, 2018, without having obtained the appropriate Indian visa".

The statement added that "his intended activity in India was incompatible with the purpose of his visit as mentioned in his visa application".

At a press conference later on Thursday, the Indian government spokesperson also argued that Carlile's motivation was "a bit suspect".

Kumar said that it appeared to him that the lawyer's visit "was trying to create some kind of problem between India and Bangladesh, our relationship, and … also to create some kind of misunderstanding between India and the opposition party in Bangladesh".

Lord Carlile told Al Jazeera that he had applied for an "e-visa for business" and that he answered all the questions in the application "correctly".

"The comment made by the external affairs spokesperson is completely inaccurate and unjustified, and I am writing to the Indian High Commissioner asking for an explanation and compensation," he said.

The senior lawyer stated that he had wanted to come to India to brief the international media about the case of the Bangladesh opposition leader. "In Delhi, there is a very large press cohort which has an interest in affairs in South Asia. So, it seemed the right place to go," Carlile added.


"My whole problem about the Zia case is that it is highly political; there is no evidence. She has been convicted totally contrary to rule of law principles and as recent events show there has been a huge amount of political interference in the case. The independence of judiciary does not exist in Bangladesh any more."

He claimed that the offices of the defence lawyers have been raided a number of times, that "hearings are manipulated" and that "procedural irregularities have been used by the prosecution" to deny Zia bail pending her appeal.

'Authentic case' 

Mahbubey Alam, the Bangladesh attorney general, denied these claims. "These comments are not correct. The case against Khaleda Zia is not at all political, as money has been taken from the Zia Orphanage Trust and she is responsible for it. This is a very authentic case, based on facts."

"Khaleda Zia has been granted bail by order of the Supreme Court so how can he say that the courts are not independent".

In May, the Supreme Court granted Zia bail for the embezzlement conviction, but she remains in jail, with three more pending cases against her.

Carlile argued that he wanted to inform journalists that the reason Zia was in jail was to help the Bangladesh government win parliamentary elections that are set for later this year.

The London-based lawyer said that in deporting him, the Bangladesh government's intention may have backfired as the case will get even more international attention.

The BNP's relationship with the Indian government has been fraught due to the party's close relationship with the Islamist Jamaat-e-Islami party, which has since been barred from contesting elections.

Indian security agencies have accused the party of harbouring rebels from India's northeast region when the party was in power between 2001-06.

However, with elections on the horizon, the BNP has sought to improve its relationship with the Indian government.

Imtiaz Ahmed, Professor of International Relations at Dhaka University, said that "there is an impression that New Delhi will play a role in the forthcoming Bangladesh election and the BNP wants to assure India that it can also be a good partner despite in the past having had an anti-Indian image."

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে পেটাল ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী সূর্যসেন হলে গেলে সেখানেও তাঁদের দ্বিতীয় দফায় পেটানো হয়। মারধরে ছাত্রীর পায়ের নখ উঠে গেছে।
এ ঘটনা তদন্তে সূর্যসেন হল প্রশাসন তিন সদস্যের কমিটি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ওই দুই শিক্ষার্থী বিকেলে মল চত্বরে হাত ধরে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছিলেন। এমন সময় সূর্যসেন হলের ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রলীগ কর্মী তাঁদের ঘিরে ধরে পরিচয় জানতে চান। তাঁরা নিজেদের পরিচয়পত্র দেখান। ওই ছাত্র পরিচয় জানতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাঁকে মারধর শুরু করেন। ছাত্রীটি তাঁকে রক্ষা করতে গেলে তিনিও আহত হন।

মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, মারধরের পর হামলাকারীরা সূর্যসেন হলের ভেতরে চলে যান। তাঁরাও পেছন পেছন সেখানে গেলে দ্বিতীয় দফায় তিন-চারজন তাঁদের স্ট্যাম্প, লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটান। পরে হলের অতিথিকক্ষে বসে থেকে তিনি প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষকে মুঠোফোনে অভিযোগ করেন। এ সময় প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী তাঁদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ তাঁর।

তবে প্রক্টর বলেন, এই ছাত্রী রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁকে ফোন দেন। তিনি ঘটনা শুনে ছাত্রীটিকে তাঁর নিজের হল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে বলেন। তিনি নিজেও বিষয়টি সূর্যসেন হল প্রাধ্যক্ষকে জানান। ওই শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি পাঠান।

রাত পৌনে ১০টার দিকে হলের প্রাধ্যক্ষ এ এস এম মাকসুদ কামাল ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি ঘটনার বিবরণ শুনে শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। তাঁদের হলে পৌঁছানো এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আহত ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের কেন মারা হলো—শুধু সেটুকু জানতে চাই। আমরা দুজনই তৃতীয় বর্ষের। বিনা কারণে প্রথম বর্ষের ছাত্ররা আমাদের মারল। আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’

এ বিষয়ে মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, হলের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে হলের আবাসিক শিক্ষক মো. তারিক জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

  • Courtesy: Prothom Alo /Jul 15, 2018

সাতক্ষীরায় বিকেলে গ্রেপ্তার, রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত

সাতক্ষীরার সদর উপজেলায় গতকাল শনিবার দিবাগত গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশ বলছে, এ দুজন আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সদস্য ছিলেন।
নিহত দুজন হলেন কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৪৫) ও সদর উপজেলার বাঁশদাহ গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৪১)।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুফ আহমেদের ভাষ্য, মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ও দেলোয়ার হোসেনকে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বাঁশদাহ এলাকা থেকে দুই কেজি গাঁজা, ১৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়। পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁরা স্বীকার করেন, আন্তর্জাতিক মাদক দলের সঙ্গে তাঁরা জড়িত। ভারত থেকে মাদক নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। গতকাল রাতেই তাঁদের একটি বড় চালান আসার কথা ভারত থেকে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাঁদের নিয়ে সীমান্তসংলগ্ন বাঁশদাহ এলাকায় কয়ারবিল এলাকায় যান। কয়ারবিল সেতুর পাশে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে ওত পেতে থাকা মাদক চক্রের সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। এ সময় গ্রেপ্তার আবুল কালাম আজাদ ও দেলোয়ার হোসেন পালানোর চেষ্টা করেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে মাদক চক্রটি কয়ারবিলের পাটখেত থেকে হাওয়ালখালীর দিকে চলে যায়। পরে পুলিশ এলাকা তল্লাশি করে কয়ারবিলের বেড়িবাঁধের ওপর থেকে আবুল কালাম আজাদ ও দেলোয়ার হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। তাঁদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে তিন কেজি গাঁজা, ২০ বোতল ফেনসিডিল, একটি ওয়ান শুটারগান ও একটি গুলি পাওয়া যায়।

কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবাল মাহমুদ জানান, মৃত অবস্থায় দুজনকে আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। একজনের কপালে ও একজনের গলায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। গুলি বিনিময়কালে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শেখ সুমন হাসান, মাজেদ আলী, কনস্টেবল তুহিন আক্তার, সোহেল মাহমুদ ও মহব্বত হোসেন আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

  • Source: Prothom Alo /Jul 15, 2018

Government primary education management mired in failures

FIVE thousand and thirty-six out of the total 64,122 government primary schools, which accounts for about 7.85 per cent, running with less than 100 students — and 13.44 per cent of them, or 677 schools, running with less than 50 students, as the final draft of the Bangladesh Primary Education Annual Sector Performance Report 2017 says — points to failures of the government in its primary education management. Such a sorry situation of the schools shows that they are faced with poor classroom teaching, inadequate number of teachers and lack of oversight, which together have pushed students to kindergartens.

The highest number of students in a single government primary school, as the primary education performance report draft says, is 3,768 while the lowest number of three students in a single school is in Barisal. While in many of the cases, poor learning in government primary schools has pushed students to kindergartens — as the number of kindergartens increased from 10,537, with more than 1.2 million students, in 2012 to 20,601, with more than 2.23 million students, in 2017 — in many others, what may be the case is that the government has set up schools without assessing the need for the schools in many areas.

Whatever the reasons are for the plight of these schools, the situation now calls out education managers, or the government for that matter, on doing a school mapping so that some of them could be merged, if not closed, to better use the available resources for education. 

There are schools in some areas set up on political considerations, which is echoed in the statement of the director general of the primary education directorate who said that many of the schools have been founded by influential quarters, which makes it tough for the government to merge them. But the government needs to rise above partisan considerations in righting the wrong that has happened in the primary education sector. Against this backdrop, the government planning to set up 1,000 more primary schools, as the finance minister said in his budget speech for the 2019 financial year, would only compound the situation unless the government first does the needs assessment. 

The government, through the Bangladesh Bureau of Educational Information and Statistics, should immediately launch a survey to assess the needs in view of the locations and consider the school-going age population, between six and 14 years, in areas of the locations to better plan the establishment or merger of schools.

When the government has plans to set up 1,000 more schools after it has just finished setting up 1,500 more primary schools, it has become imperative for the government to first look into the needs of the existing schools vis-à-vis locations and school-going age population of the areas. There is no denying that the nation needs more schools, but it needs them where they are needed, and in an improved environment with better facilities, so that people can send their children to government schools. The government must attend to the failures in its primary education management.

  • Courtesy: New Age/ Editorial /Jul 15, 2018

Saturday, July 14, 2018

উন্নয়নের গোপন রহস্য...


রুমীন ফারহানা

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের রাজনীতির ভাষা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে — সরকারি দলের সভা-সমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে শুরু করে পাতিনেতার নির্বাচনি প্রচারণা, টক শো, সরকারি বিজ্ঞাপন, স্থানীয় থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্রই যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তা হলো ‘উন্নয়ন’। বাংলাদেশ নাকি এমনই উন্নতি করেছে যে, বিশ্বের তাবৎ মোড়ল রাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়নের রহস্য জানতে চায়।

গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের পট পরিবর্তনের পরে, উন্নয়নকে সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফেলা হয়েছে। যেন একটি থাকলে অন্যটি না থাকলেও চলে। উন্নয়নের যে তত্ত্ব আওয়ামী লীগ হাজির করেছে তা হলো ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’, ‘সীমিত গণতন্ত্র’ কিংবা ‘বেশি উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র’ ইত্যাদি। এসব অবশ্য আমাদের কমবেশি জানা। কারণ আইয়ুব খান তার সামরিক শাসনের সময়ও এ ধরনের একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন। সেই সামরিক জান্তারও ‘উন্নয়ন’ শব্দ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ছিল। এমনকি উন্নয়নের দশকও পালন করেছিলেন তিনি। যদিও অবশ্য এর পরপরই তার পতন ঘটে।

আরও একটি মজার তত্ত্ব সরকার আবিষ্কার করেছে। উন্নয়নের জন্য নাকি সরকারের ধারাবাহিকতা আবশ্যক। অর্থাৎ উন্নয়ন চাইলে একই সরকারের বারবার ক্ষমতায় থাকা জরুরি, সেটা যে কায়দায়ই হোক না কেন। এর পেছনে কী প্রমাণ আছে তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, উন্নত দেশগুলোতে এমনকি ঘরের পাশে ভারতেও সরকার আসে সরকার যায়। তাতে উন্নয়নে কোনও ব্যাঘাত ঘটে বলে শোনা যায় না। সরকারের মতে, পরিবর্তন মানেই উন্নয়নের পথে হোঁচট খাওয়া। উন্নয়নের এ নতুন তত্ত্ব স্বাভাবিকভাবে কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। যেমন—

১. উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়?
২. গণতন্ত্রের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক কী?
৩. একটি অপরটির বিকল্প হতে পারে কিনা?
৪. গণতন্ত্র ও সুশাসন ছাড়া উন্নয়ন কতটা টেকসই হতে পারে?
৫. উন্নয়নের দোহাই পেড়ে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় যে কোনও উপায় অবলম্বন কতটা যুক্তিযুক্ত?
৬. গণতন্ত্রের বিকল্প কী হতে পারে?
৭. সবচেয়ে জরুরি হলো মানুষ আসলে কী চায়?

গত কয়েক বছরে সরকারের যে প্রচার-প্রচারণা, তাতে মনে হতেই পারে উন্নয়ন মানেই প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি ও কিছু ব্রিজ, ফ্লাইওভার নির্মাণ অর্থাৎ অবকাঠামোগত উন্নয়ন। মজার বিষয় হলো— এর সঙ্গে সুশাসন, মানুষের জীবনযাত্রার মান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইনের শাসন, বৈষম্য বৃদ্ধি, দারিদ্র দূরীকরণের হার কমে আসা, সর্বস্তরে জবাবদিহিতার অভাব, অর্থনৈতিক খাতের চরম নৈরাজ্য, বিচারহীনতার বিষয়গুলো সচেতনভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে আলোচনার বাইরে। যে উন্নয়ন সাধারণ মানুষের জীবন স্পর্শ করে না, সেই উন্নয়ন কোনোভাবেই সার্বিক অর্থে কল্যাণকর হতে পারে না।

‘সাপ্তাহিক’-এর ৪ জানুয়ারি ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর ২০১৭-১৮ সালের অর্থনৈতিক পর্যালোচনা বলছে— যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাবি করা হচ্ছে, তার সঙ্গে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৈষম্য আর কমেছে দারিদ্র্য দূরীকরণের হার। যাকে সহজ ভাষায় বললে দাঁড়ায়— এখানে ধনী আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্র হচ্ছে দরিদ্রতর। যেখানে ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণের হার ছিল গড়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ২ শতাংশে। একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে, অতি দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রেও। যা ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ, সেটাই ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে কমে এসেছে ০ দশমিক ৮ শতাংশে।

গবেষণা বলছে— দেশের দরিদ্রতম ১০ শতাংশ লোক যেখানে ২০১০ সালে মোট জাতীয় আয়ের ২ শতাংশের অধিকারী ছিল, ২০১৬ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০১ শতাংশে। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ লোক ২০১০ সালে মোট জাতীয় আয়ের ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশের মালিক হলেও ২০১৬ সালে তারা ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ আয়ের অধিকারী হয়। আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি বলছে— বাংলাদেশে গত ছয় বছরে জিডিপি বৃদ্ধির দিনগুলোতে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। আর সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে ১ হাজার ৫৮ টাকা।

কথায় কথায় এখন বলা হয় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা। মাথাপিছু আয় আরেক শুভঙ্করের ফাঁকি। এখানে হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার লুটেরা, সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকের বড় বড় ঋণখেলাপির অবিশ্বাস্য অঙ্কের লুটের সঙ্গে গড় করা হয় দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, গার্মেন্ট কর্মী আর রিকশাচালকের আয়। এতে না স্পষ্ট হয় লুটেরা শ্রেণির অবিশ্বাস্য লুট, না বোঝা যায় শ্রমজীবী মানুষের দৈন্যদশা। পুরোপুরি লেজেগোবরে কাণ্ড।

উন্নয়নের এই রাজ্যে বিনিয়োগ থাকে স্থবির হয়ে আর লাফিয়ে বাড়ে বেকারের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ। দেশে তৈরি হয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আর দেশে কাজ না পেয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় ১ কোটির ওপর মানুষ। যাদের কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, যাদের ঘামেভেজা টাকায় আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখি, সেই প্রবাসী শ্রমিক, গার্মেন্ট কর্মী আর কৃষকের জীবনমানের কোনও উন্নতি হয় না।


বলে রাখা ভালো, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরির শীর্ষে আছে বাংলাদেশের নাম। বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে গিয়ে ১৩ বছরে লাশ হয়ে ফিরেছেন ৩৩ হাজার শ্রমিক। প্রতিদিন সংবাদের বড় অংশ জুড়ে থাকে সৌদি আরব থেকে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার খবর। তাদের অনেকে লাশ হয়ে, কেউবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফিরেছেন। রানা প্লাজার বীভৎসতা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কতটা অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করে আমাদের কর্মীরা। সবচেয়ে কম মজুরি আর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কাজ করে বাংলাদেশের শ্রমিক। যেকোনও উৎসবে মালিক যখন প্রমোদভ্রমণে যান, তখনও হয়তো শ্রমিকের তিন মাসের বেতন বাকি। কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না আর সরকার খাদ্য উদ্বৃত্তের গল্প শোনায় মানুষকে। দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের পীঠস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায্য আন্দোলন করতে গিয়ে কৃষকের সন্তান খায় হাতুড়ির বাড়ি, যায় রিমান্ডে, শোনে ৩৮ টাকায় খাবার আর ১৫ টাকায় বাসস্থানের খোটা। সরকারের একবারও মনে পড়ে না এই সাধের বিশ্ববিদ্যালয় চলে আমাদের টাকায় যেখানে মিশে আছে কৃষক, শ্রমিকসহ মেহনতি মানুষের ঘামেভেজা রক্ত জল করে আনা টাকা।

জনগণের টাকায় একদিকে লুটেরা শ্রেণি বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করে আর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে বছরে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠান আমাদের প্রবাসী ভাইরা। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে— গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা, যা আমাদের জাতীয় বাজেটের দুই গুণ। আন্তর্জাতিক ঝুঁকি যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে— বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে। যদিও রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পাচ্ছে ক্ষমতার বলয়ে থাকা মানুষেরা। আইন করে ব্যাংকগুলো তুলে দেওয়া হচ্ছে এক একটি পরিবারের হাতে। মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে ব্যাংক। এখন ব্যাংকের নীতি নির্ধারিত হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) মাধ্যমে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি কার্যকর করে মাত্র। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তো নিজের ভারবহনে সক্ষমতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। নজীরবিহীনভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নাই হয়ে গেছে ৮০০ কোটি টাকা, যার বিচার তো দূরস্থান, তদন্ত রিপোর্ট পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। এদিকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ।

সরকারের লোক কথায় কথায় চীন ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে বলতে চায়, সেখানে তো গণতন্ত্র নেই, কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে মনে রাখা দরকার, সেসব দেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকলেও উন্নয়ন হয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। অন্যদিকে পৃথিবীর বহু দেশ আছে যেখানে গণতন্ত্র ও সুশাসন দুটোরই ঘাটতি ছিল। ফলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেমন ফিলিপাইন কিংবা জিম্বাবুয়ে। সেইসব দেশের মতো বাংলাদেশেও গণতন্ত্র আর সুশাসনের চরম ঘাটতি আছে। প্রশ্ন জাগে, এত উন্নয়নের পরও সরকার কেন বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে পারছে না? এটা প্রমাণিত যে সুশাসনের অভাব মানুষকে নিরাপত্তাহীন করে বিনিয়োগ বিমুখ করে তোলে। গণতন্ত্র আর সুশাসনহীন উন্নয়নের ছোট্ট একটি উদাহরণ হলো— বিশ্বে নজিরবিহীন ব্যয়বহুল রাস্তা নির্মাণ হয় বাংলাদেশে, অথচ সবচেয়ে খারাপ রাস্তার তালিকায় এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ঘরে ঘরে উন্নয়নের খবর পৌঁছে দিতে। বলেছেন, যত উন্নয়ন তিনি করেছেন তাতে মানুষের ভোট না দেওয়ার কোনও কারণ নেই। ভোট না দিলে বুঝতে হবে উন্নয়নের প্রচার সঠিকভাবে হয়নি। প্রকৃত উন্নয়ন যা গণমানুষের জীবনকে উন্নত করে তা প্রচারের জন্য মাইক বা বিলবোর্ড লাগে না। মানুষ আপনাআপনি তার সুফল পায়, মনেও রাখে।

কিন্তু যে উন্নয়ন কেবল গুটিকয়েক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে, যাতে সাধারণ মানুষের প্রতি বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই জোটে না, তেমন উন্নয়নের প্রচার যত জোরেই হোক না কেন তা মানুষকে স্পর্শ করে না। গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন ও ন্যায্যতা ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ না করে যতই দুর্নীতি আর লুটপাট সহযোগী অবকাঠামোগত উন্নয়নের গল্প শোনানো হোক না কেন, মানুষ কিন্তু ঠিকই বোঝে। কিছু মানুষকে হয়তো কিছু সময়ের জন্য বোকা বানানো যায়। কিন্তু সব মানুষকে সবসময় বোকা বানানো অসম্ভব।


  • লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
  • কার্টসি — banglatribune.com 


Wednesday, July 11, 2018

ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক বিশিষ্টজনদের


বর্তমানে দেশে এক ধরনের বিচারহীন ও জবাবদিহিতা শূন্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্র ও সরকার কঠোর থেকে কঠোরতর আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে রেখেছে। জনগণের সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামকে পুলিশি নির্যাতন ও দলীয় পেটোয়া বাহিনী (গুন্ডাবাহিনী) দিয়ে দমন করে রাজনৈতিক মতামতকে সংকুচিত করে রেখেছে। এর জন্য নাগরিকদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের সংগ্রাম করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের বি‌শিষ্টজনেরা। 

বুধবার, ১১ জুলাই, দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদ ও জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সরকারের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগের বর্বর হামলা, নির্যাতন, গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, আহতদের চিকিৎসায় সরকারি কর্তৃপক্ষের বাধা দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আলোচকগণ ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা এবং নির্যাতনকারীদের রক্ষা করে তাদের সহায়তা করার তীব্র নিন্দা জানান। 

বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে র‌্যাব-পুলিশ বাহিনী দিয়ে সারা দেশে এ পর্যন্ত ১৬৩ জনকে বিনা বিচারে ও পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এখনও সেটি চলমান রয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের লাগামহীন দুঃশাসন ও লুটপাটের অপরাধকে আড়াল করতে এক ধরনের ত্রাস সঞ্চারের জন্য বিনা বিচারে মানুষ খুন করার এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’ 

বামপন্থি তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বদরুদ্দীন ‍উমর বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্বরোচিত যেসব কাজ হচ্ছে সেগুলো বিশ্বের অন্য কোনও দেশে হচ্ছে না। আজকে যারা ব্যবসায়ী শ্রেণি, যারা লুটপাট করছে তারাই দেশের শাসক শ্রেণি। তারা নিজেদের চুরির টাকা দিয়ে নমিনেশন নিয়ে ভোট লুট করে ক্ষমতায় বসছেন।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটা গুন্ডাবাহিনী। তারা নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো তাদের পেছনে শেখ হাসিনা রয়েছে।’ 

সরকার নির্বাচন কমিশনকে শেষ করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের সরকার পরিবর্তনের কোনও অবস্থা নেই। নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর করে শেষ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। জনগণের ভোটে নয়, আগামী নির্বাচনে জিততে হলে অন্য কিছু করতে হবে। তা না হলে এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে। বর্তমানে দেশের মানুষ একটি আগ্নেয়গিরির উপরে আছে, জনগণ এখন শুকনো পাতার মত হয়ে গেছে। তাই সরকারের এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় শয়তান হচ্ছে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সংগীতশিল্পীরা। জনগণ কোনও প্রতিরোধ গড়লে র‌্যাব-পুলিশ পেটায়, ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক শ্রেণির মানুষেরা প্রতিরোধ যেন গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছে। তারা প্রতিরোধের গোড়া মেরে দিচ্ছে। এরা পাকিস্তান আমলেও খেয়েছে, এখনও খাচ্ছে। এরাই আবার আজীবন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর পরে কী হবে তাদের? এরাই দেশের বড় ক্ষতি করছে।’ 

বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘অপরাধের প্রতি জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়ে চিহ্নিত ও প্রমাণিত অপরাধীর সাজা রাষ্ট্রীয়ভাবে মাফ করে তাকে নিরাপদে দেশত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। নজিরবিহীন দুর্নীতি ও লুটপাটকারীদের বিচার না করে এবং মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে সরকার। অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এই ভণ্ডামিই সরকার জনগণের সামনে তুলে ধরে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।’

দেশের নাগরিকদের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করে তাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তিনি।

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘যে নেক্কারজনক ঘটনা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, তার জন্য শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পচন ধরেছে, আমরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করি। শিক্ষার্থীরা বলছে- হলে থাকতে হলে বড় ভাইদের পা ধরতে হয়। বড় ভাইদের প্রটোকল মেনে চললেও উঠতে-বসতে চড়-থাপ্পড় খেতে হয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানে ছাত্র নেতাদের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার নজিরও রয়েছে। এতে ছাত্র নেতারা মাথায় চড়ে বসছে। কোটার দাবি শুধু চাকরি পাওয়ার দাবি নয়, এটি সংবিধান স্বীকৃতির দাবি। তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘নীরব একটা ষড়যন্ত্র চলছে, আমরা সবাই এর সাথী, মিডিয়াও এর সাথী। যে রাষ্ট্র যত বেশি লাঠিপেটা করবে সেটাই ওই রাষ্ট্রের জনবিচ্ছিন্নতার তত প্রমাণ।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. নূরুন্নবী বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়। তবে দেশে সত্যিকার অর্থে কোনও গণতন্ত্র নেই আজ। একটা দল সংবিধানের কথা বলে বলে অন্য দলকে ঠেকাচ্ছে। অথচ তারা নিজেরাই সংবিধান বিরোধী কাজ করছে। বর্তমান সরকার নিজেই সংবিধান বিরোধী। এখন এলাকার গলির সন্ত্রাসী কর্যাক্রম সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে চলে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এটা লোভ দেখানো, এটা সার্থক হবে না। কারণ যারা মাদকের মূলহোতা সরকার তাদের আইনের আওতায় আনছে না।’ 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে শত শত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। অন্তত ৩৫ হাজার মানুষকে জেলে ভরে রাখা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলন এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় আন্দোলন। কিন্তু এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এটাকে ধরে রাখতে পারছি না। যারা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ভাঙিয়ে চলছে, তারা এটি হতে দিচ্ছে না।’ 

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকরাম হোসেন, মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নেতা বিনায়ন চাকমা প্রমুখ।
  • কার্টসিঃ ব্রেকিং নিউজ বিডি/ জুলাই ১১,২০১৮  

‘আমার মণিকে তোমরা বাঁচতে দাও, মুক্তি দাও’

রাশেদের মায়ের আর্তনাদ

ছেলের মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রাশেদের মা সালেহা খাতুন। গতকাল শাহবাগে। 

ঝিনাইদহের সালেহা বেগম এর আগে কখনো ঢাকায় আসেননি। এবারই প্রথম। ছেলের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার সুযোগ তাঁর হলো না। এর আগেই চিনতে হলো ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্ট। তিনি এখন ভিক্ষা চান ১০ দিনের জন্য পুলিশি রিমান্ডে থাকা একমাত্র ছেলে রাশেদ খানকে। ছেলেহীন এই শূন্যতার হাহাকার থেকে তিনি মুক্তি চান।

সালেহা বেগমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল গতকাল মঙ্গলবার, শাহবাগের একটি খাবারের দোকানে বসে। শুরুতেই হাত জোড় করে বললেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। ভিক্ষা দাও। আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব। শুধু মুক্তি দাও। সেও বাঁচুক। আমিও বাঁচি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ খানকে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এক ঝলক দেখার জন্য সকাল থেকে সালেহা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিবি অফিসের ফটকে। দেখে মনে হয়েছে, ছেলে ভালো নেই। সর্বস্ব দিয়ে যে ছেলেকে মানুষ করেছেন, তাঁর যে এমন হাল হবে স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তিন-তিনটি মামলার আসামি এখন রাশেদ খান। তিনি কি মুক্তি পাবেন? কখনো কি তাঁর কায়ক্লেশে চলা সংসারের দায়িত্ব একমাত্র এই ছেলেটি বুঝে নেবেন? এমন হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘোরে সালেহার। কূলকিনারা পান না। শুধু চান, ছেলে ফিরে আসুক।


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তৈরি ছাত্রদের মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। বাবা নবাই বিশ্বাস রাজমিস্ত্রি, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাশেদের দুটি বোন। একজন তাঁর বড়, অন্যটি ছোট। শ্রমজীবী দম্পতি দাঁতে দাঁত চেপে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন। রাশেদ খান এতকাল তাঁদের বিমুখ করেননি।

সালেহা বেগম বলছিলেন, ছেলে পঞ্চম, অষ্টম, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে সরকারি ও ব্যাংকের বৃত্তির টাকা পেয়েছেন। আর বাকিটা তাঁরা জুগিয়েছেন ঘাম ঝরিয়ে। ‘এমনও দিন গেছে, রাশেদের আব্বা হয়তো বাজার থেকে পাঁচ কেজি চাল কিনে এনেছে। পরে ছেলে ফোন করে বইখাতা কিনতে টাকা চেয়েছে। চাল ফিরিয়ে দিয়ে তিনি ছেলেকে টাকা পাঠিয়েছেন। শুধু পানি খেয়ে আমরা রাত পার করেছি। এমবিএ ভর্তির সময় ছাগল বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম, পড়াশোনা শেষ। কষ্টের দিনও শেষ। হলো না।’

এখন এই যে তিনি ঢাকায় এলেন, ছেলের জন্য ছোটাছুটির খরচ কী করে চলছে? সালেহা বেগম জানান, ছেলের বাবার কিডনিতে সমস্যা। অস্ত্রোপচারের জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকা ভেঙে ভেঙেই এখন চলছে।

রাশেদ খানের নামে জটিল সব মামলা। মায়ের মাথায় ধরে না। কথার ফাঁকে সালেহা বেগম মামলার কাগজপত্র এগিয়ে দিলেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলা একটি। এর বাইরে পুলিশের অভিযোগ, রাশেদের প্রত্যক্ষ মদদে, পরিকল্পনায় ও নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে হাতে লোহার রড, পাইপ, হ্যামার, লাঠি নিয়ে বেআইনি ‘জনতাবদ্ধে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে অনধিকার প্রবেশ করে ভাঙচুর ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যান। তাঁর নির্দেশেই ভিসির বাসভবনের আসবাব ভাঙচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেন, সিসি ক্যামেরার রেকর্ড সংরক্ষণের যন্ত্র (ডিভিবার) নষ্ট করে ফেলেন। কোনো স্বার্থান্বেষী মহলকে বিশেষ সুবিধা করে দিতে রাশেদ এসব অপকর্ম করেছেন।

সালেহা বেগম গতকাল বলেন, ‘আমার মণি তো কোনো অন্যায় করেনি। সে শুধু একটা চাকরি করতে চেয়েছিল। সে তো সরকারি চাকরিই করতে চেয়েছিল। সরকারকে ফেলতে যাবে কেন?’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১১,২০১৮