Search

Wednesday, July 11, 2018

ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক বিশিষ্টজনদের


বর্তমানে দেশে এক ধরনের বিচারহীন ও জবাবদিহিতা শূন্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্র ও সরকার কঠোর থেকে কঠোরতর আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে রেখেছে। জনগণের সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামকে পুলিশি নির্যাতন ও দলীয় পেটোয়া বাহিনী (গুন্ডাবাহিনী) দিয়ে দমন করে রাজনৈতিক মতামতকে সংকুচিত করে রেখেছে। এর জন্য নাগরিকদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের সংগ্রাম করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের বি‌শিষ্টজনেরা। 

বুধবার, ১১ জুলাই, দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদ ও জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও সরকারের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগের বর্বর হামলা, নির্যাতন, গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, আহতদের চিকিৎসায় সরকারি কর্তৃপক্ষের বাধা দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আলোচকগণ ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা এবং নির্যাতনকারীদের রক্ষা করে তাদের সহায়তা করার তীব্র নিন্দা জানান। 

বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে র‌্যাব-পুলিশ বাহিনী দিয়ে সারা দেশে এ পর্যন্ত ১৬৩ জনকে বিনা বিচারে ও পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এখনও সেটি চলমান রয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের লাগামহীন দুঃশাসন ও লুটপাটের অপরাধকে আড়াল করতে এক ধরনের ত্রাস সঞ্চারের জন্য বিনা বিচারে মানুষ খুন করার এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’ 

বামপন্থি তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বদরুদ্দীন ‍উমর বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্বরোচিত যেসব কাজ হচ্ছে সেগুলো বিশ্বের অন্য কোনও দেশে হচ্ছে না। আজকে যারা ব্যবসায়ী শ্রেণি, যারা লুটপাট করছে তারাই দেশের শাসক শ্রেণি। তারা নিজেদের চুরির টাকা দিয়ে নমিনেশন নিয়ে ভোট লুট করে ক্ষমতায় বসছেন।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটা গুন্ডাবাহিনী। তারা নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো তাদের পেছনে শেখ হাসিনা রয়েছে।’ 

সরকার নির্বাচন কমিশনকে শেষ করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের সরকার পরিবর্তনের কোনও অবস্থা নেই। নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর করে শেষ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। জনগণের ভোটে নয়, আগামী নির্বাচনে জিততে হলে অন্য কিছু করতে হবে। তা না হলে এই সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে। বর্তমানে দেশের মানুষ একটি আগ্নেয়গিরির উপরে আছে, জনগণ এখন শুকনো পাতার মত হয়ে গেছে। তাই সরকারের এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় শয়তান হচ্ছে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সংগীতশিল্পীরা। জনগণ কোনও প্রতিরোধ গড়লে র‌্যাব-পুলিশ পেটায়, ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক শ্রেণির মানুষেরা প্রতিরোধ যেন গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছে। তারা প্রতিরোধের গোড়া মেরে দিচ্ছে। এরা পাকিস্তান আমলেও খেয়েছে, এখনও খাচ্ছে। এরাই আবার আজীবন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর পরে কী হবে তাদের? এরাই দেশের বড় ক্ষতি করছে।’ 

বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘অপরাধের প্রতি জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়ে চিহ্নিত ও প্রমাণিত অপরাধীর সাজা রাষ্ট্রীয়ভাবে মাফ করে তাকে নিরাপদে দেশত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। নজিরবিহীন দুর্নীতি ও লুটপাটকারীদের বিচার না করে এবং মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে সরকার। অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে এই ভণ্ডামিই সরকার জনগণের সামনে তুলে ধরে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।’

দেশের নাগরিকদের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করে তাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তিনি।

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘যে নেক্কারজনক ঘটনা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, তার জন্য শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পচন ধরেছে, আমরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করি। শিক্ষার্থীরা বলছে- হলে থাকতে হলে বড় ভাইদের পা ধরতে হয়। বড় ভাইদের প্রটোকল মেনে চললেও উঠতে-বসতে চড়-থাপ্পড় খেতে হয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানে ছাত্র নেতাদের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার নজিরও রয়েছে। এতে ছাত্র নেতারা মাথায় চড়ে বসছে। কোটার দাবি শুধু চাকরি পাওয়ার দাবি নয়, এটি সংবিধান স্বীকৃতির দাবি। তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘নীরব একটা ষড়যন্ত্র চলছে, আমরা সবাই এর সাথী, মিডিয়াও এর সাথী। যে রাষ্ট্র যত বেশি লাঠিপেটা করবে সেটাই ওই রাষ্ট্রের জনবিচ্ছিন্নতার তত প্রমাণ।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. নূরুন্নবী বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়। তবে দেশে সত্যিকার অর্থে কোনও গণতন্ত্র নেই আজ। একটা দল সংবিধানের কথা বলে বলে অন্য দলকে ঠেকাচ্ছে। অথচ তারা নিজেরাই সংবিধান বিরোধী কাজ করছে। বর্তমান সরকার নিজেই সংবিধান বিরোধী। এখন এলাকার গলির সন্ত্রাসী কর্যাক্রম সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে চলে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এটা লোভ দেখানো, এটা সার্থক হবে না। কারণ যারা মাদকের মূলহোতা সরকার তাদের আইনের আওতায় আনছে না।’ 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে শত শত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। অন্তত ৩৫ হাজার মানুষকে জেলে ভরে রাখা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলন এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় আন্দোলন। কিন্তু এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এটাকে ধরে রাখতে পারছি না। যারা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ভাঙিয়ে চলছে, তারা এটি হতে দিচ্ছে না।’ 

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকরাম হোসেন, মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নেতা বিনায়ন চাকমা প্রমুখ।
  • কার্টসিঃ ব্রেকিং নিউজ বিডি/ জুলাই ১১,২০১৮  

No comments:

Post a Comment