Search

Sunday, November 11, 2018

জাতিসংঘের অগ্রাধিকার স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতির ওপর নজরদারি রয়েছে তাদের। শুক্রবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর  উপ-মুখপাত্র ফারহান হক। তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হলো বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাই আমরা বাংলাদেশের এসব ব্যবস্থাপনা নিয়ে অব্যাহতভাবে ‘স্টাডি’ করছি। লক্ষ্য রাখছি এসব অগ্রাধিকার সমুন্নত রাখা হচ্ছে কি না। আমরা এ বিষয়টিই দেখতে চাই। মনে করছি, এটা উপযুক্ত সময়ে হতে পারে।

ব্রিফিংয়ে তাকে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রেক্ষিত নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল এমন- ধন্যবাদ ফারহান আপনাকে। বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য। বড়দিনের সামান্য আগে ২৩শে ডিসেম্বর আগামী নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সংলাপে রয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু কোনো উপসংহারে পৌঁছা যায়নি অথবা বিরোধীদের কোনো দাবি মেনে নেয়া হয়নি। 

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করে দিয়েছেন। প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এখনও জেলে। এরই মধ্যে একপেশে নির্বাচনী শিডিউলের বিরোধিতা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে তারা সবার জন্য সমান ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবস্থান কী? মহাসচিব কি এ বিষয়ে জানেন? কারণ, জাতিসংঘ যেকোনো উপায়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে- তার এ প্রশ্নের জবাবে ফারহান হক ওই মন্তব্য করেন। 

‘সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি’


সম্প্রতি পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কিছু বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা দু’দিনের কর্মবিরতির সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ চালক ও যাত্রীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়া এবং মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ছিল সবচেয়ে ঘৃণিত ও আপত্তিকর কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরও এখন পর্যন্ত এই ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দেখা যায়নি। সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি এতটাই নমনীয় আচরণ প্রদর্শন করে যে এতে মনে হয় সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের কাছে একধরনের জিম্মি হয়ে আছে। গতকাল বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, আইন মানতে হবে। আইন না মানার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে।

পথচারীদের মাঝেও আমরা দেখছি কানে হেডফোন লাগিয়ে এবং মোবাইলে কথা বলতে বলতে অসতর্কভাবে রাস্তায় চলাচল করতে। এতে করে প্রতিবছর অনেক সাধারণ মানুষসহ অনেক স্বপ্নময় তরুণের অকাল মৃত্যু ঘটছে। যা থেকে পরিত্রাণের জন্যে আইন পালনের পাশাপাশি সচেতনতাও তৈরি করতে হবে। 

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ফলে দুর্ঘটনার কারণে বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয়ভাবে বাংলাদেশের নানা অর্জন থাকলেও সড়কের নিরাপত্তা বিধানে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। 

সেবার পরিবর্তে সড়ক পরিবহন সেক্টরে প্রতিনিয়ত চরম নৈরাজ্য ও প্রতিহিংসা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ কয়েকদিন পূর্বে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের সময়ে গাড়িচালক ও যাত্রীদের মুখে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয়ার দৃশ্য সবাইকে বিস্মিত না করে পারেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও এই ঘটনার দৃশ্যমান কোনো বিচার কিংবা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দেখতে পাইনি। দুর্বল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত রাস্তা, মহাসড়কে হাটবাজার বসা, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক আইন না মানা, ভুয়া লাইসেন্সধারী ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রম, বিআরটিএর ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামছে না। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। পথচারীদের মধ্যে জেব্রাক্রসিং-ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে বেপরোয়াভাবে চলাচল সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি করছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নগরে আপভিত্তিক যে রাইড শেয়ার চালু হয়েছে তার চালকদের সক্ষমতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস আগে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন পথ দেখালেও আমরা এখনো সচেতন হয়নি। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করা হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান কিরণ। তবে, এই আইনের কিছু বিষয় নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তারও অবসান হওয়া প্রয়োজন। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ১১, ২০১৮ 

Saturday, November 10, 2018

জনরায়ের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে


জনরায়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে জনগণের রায়ের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। গতকাল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, এই রাজশাহীবাসী অত্যন্ত লড়াকু মানুষ। বহুকাল ধরে আপনারা লড়াই সংগ্রাম করছেন।

মনে আছে, গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই রাজশাহীর কত ভাই জীবন দিয়েছে? তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান? এ সময় নেতাকর্মীরা হাত উঁচিয়ে স্লোগানের মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা জানি আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। প্রতিদিন গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সহ্য করছেন। একটা মাত্র কারণ- আপনারা গণতন্ত্র চান। আপনাদের অধিকারটুকু ফিরে পেতে চান। সেজন্যই আজকে মামলা মোকদ্দমা দিতে দিতে সারা দেশের মানুষকে অস্থির করে তুলেছে সরকার।

এটা ছাড়া ওদের আর কোনো অস্ত্র নেই। এই অস্ত্র দিয়ে তারা বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে চায়। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আজকের এই জনসভা তার প্রমাণ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করেছে এই সরকার। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। আজকের এই মঞ্চে একজনও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। 


রাজশাহীর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ কারাগারে রয়েছে। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের যত রাজবন্দি রয়েছে, সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। তবেই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের যে আলোচনা হয়েছে সেটা ফলপ্রসূ হবে। তবেই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, কথা খুব পরিষ্কার- নির্বাচনে সবার জন্য সমান মাঠ তৈরি করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরো কঠিন। আজকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- আমাদের স্বাধীনতা থাকবে কী থাকবে না। আমাদের সংগঠন করার অধিকার থাকবে কী থাকবে না। তিনি বলেন, এর আগে এই মাঠে রোডমার্চ করতে এসেছিলাম। তখন দেশনেত্রী আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি আজ কারাগারে। প্রচণ্ড অসুস্থ। অথচ ৭৩ বছর বয়সী এই মানুষটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে ১০ বাই ২০ ফুটের একটি ছোট্ট ঘরে বিচারালয় স্থাপন করা হয়েছে। এই সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারের অন্ধকারে তিলে তিলে হত্যা করছে। যা বৃটিশ আমলে হয়নি, পাকিস্তান আমলে হয়নি। অথচ এই সরকার সেটাই করছে। 

২ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে সরকার: ড. কামাল

রাজশাহীর জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের অংশ নেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে পারেননি। তবে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। রাজশাহীর জনসভাকে ঘিরে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই তফসিলের মাধ্যমে সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা জনগণের স্বার্থের বিরোধী, সংবিধান বিরোধী ও গণতন্ত্র বিরোধী কাজ। 

ক্ষমতা ছাড়লে আওয়ামী লীগ লোক পাবে না: অলি 

এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, যে পার্লামেন্ট ব্যবস্থা দেখছেন তা খালেদা জিয়ার দেয়া। বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার ঘোষণা শুনে তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে জীবন দিতে গিয়েছিলাম। আজ ব্যাংকে টাকা নেই। দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আমি এর আগেও রাজশাহীতে জনসভায় এসেছি। আজকের মতো এত বড় জনসভা কোনো দিন দেখিনি। আপনারা ক্ষমতা থেকে গেলে এতগুলো লোক চোখে দেখবেন না। কর্নেল (অব.) অলি বলেন, নির্বাচন হবে কি না, নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো কি না এখনো সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে আমাদের বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তরুণদের প্রতি বলব, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেভাবে জান দিতে গিয়েছিলাম আপনাদেরকে সেই জান দেয়ার কথা বলব না। কিন্তু রাস্তায় তো সকলে দাঁড়াতে পারেন বেগম জিয়ার জন্য। একটু হাত তুলে প্রশাসনকে দেখান, প্রধানমন্ত্রী দেখুক- কতগুলো হাত, কতগুলো লোক। আপনারা ক্ষমতা থেকে গেলে এতগুলো লোক আসবে না। একটু জোরে তালি বাজান সরকার শুনক। 

আন্দোলনকে গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে: রব

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিলাম। দেশকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, নির্বাচনে আসতে দিন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করুন। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করুন। আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নিন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এই ৯০ শতাংশ মানুষের কথা না শুনে নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করব। এই আন্দোলনের জন্য মরতে হলে মরব, কিন্তু দাবি ছাড়ব না। রব বলেন, আমাদের দাবি ছিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন না। কিন্তু সেটা করেছেন। এখন নির্বাচন যদি না পেছান তাহলে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা হবে। বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ হবে। লংমার্চ হবে। এগুলো চলতে থাকবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। তা না হলে জনতার আদালতে বিচার হবে আপনাদের। দাবি আদায়ে রাস্তায় নামব। কী করবেন? জেলে নেবেন? আমি ৬ বার মারা গেছি। ১০ বছর এই রাজশাহীর জেলে ছিলাম। এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনকে গ্রামে-গঞ্জে, কৃষক-কামারসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। তিনি বলেন, জেগেছে জনতা। সরকারকে বলব, দেখে যান রাজশাহীর মাদরাসা মাঠ। পুলিশ দিয়ে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন তারপরও মাদরাসা মাঠে জায়গা নেই। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবির চলমান আন্দোলন সারাদেশে ‘গ্রামে-গঞ্জে’ ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

পুলিশকে ১০ লাখ টাকা করে ফেরত দেয়া হবে: কাদের সিদ্দিকী 

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে থাকবো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমান নিয়ে দ্বন্দ্ব করে যারা লুটে পুটে খাচ্ছে, আল্লাহ যদি আমাকে সময় দেয়, তাহলে সেই দ্বন্দ্ব আমি মিটিয়ে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া লাগাতার হরতাল দিয়েছিলেন, আমি উনাকে হরতাল প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি প্রত্যাহার করতে পারেননি। শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেননি। এত দিন পরে এবার আলোচনায় বসেছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেদিন প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনারা জিতে গেছেন। খালেদা জিয়া যেদিন কারাগারে যান, সেদিন তিনি বলেছিলেন- আমি যদি মারাও যাই তাহলেও তোমরা হরতাল দেবে না। তার এই অনুরোধ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের কোনো কারাগারে তাকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। 

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনারা যদি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চান তাহলে ঐক্যফ্রন্টকে অটুট রাখতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য ছটফট করতে হবে না। তাহলে আপনাদের লড়তে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকের জনসভায় খালেদা জিয়ার মুক্তি স্লোগান উঠেছে। কিন্তু একবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ফ্রন্টের নেতাদের পক্ষে স্লোগান ওঠেনি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি নাকি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। কথাটা সত্য নয়। শেখ হাসিনাই প্রথম রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকের এই জনসভায় আসতে আমাকে কয়েকবার বাধা দেয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় শেখ হাসিনার ‘মাইট্টা’ পুলিশ বাধা দিয়েছে। অথচ এই পুলিশের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সংসদে আমি কাদের সিদ্দিকী ৬০ বার কথা বলেছি। শেখ হাসিনার কথা না, আমি কাদের সিদ্দিকীর কিছু কথাও শুনতে হবে। এই সমাবেশ থেকে আমি বলছি- যে পুলিশ ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন, তাদের ঘুষের টাকা ফেরত দেব। আওয়ামী লীগের আমলে যারা পুলিশের চাকরি নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ফেরত দেব। কারণ মন্ত্রী, তার চ্যালা-চামুন্ডা, আওয়ামী লীগের হাফ নেতা ও পাতি নেতা মিলে ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছে। তাদের এই টাকা ফেরত দেয়া হবে।

শীত বারবার আসে, মাঘও বারবার আসে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২৩শে ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছেন। তাদের কাছে গিয়ে আমরা বলেছি- আমরা কথা বলতে চাই। আমাদের সমস্যা আছে। এগুলোর সমাধান হবে তার পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু তিনি তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। মান্না বলেন, আমি রাজশাহী এয়ারপোর্ট থেকে নেমে এই জনসভা পর্যন্ত আসতে ২ বার গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি একেবারে অপরিচিত নই। আমার গাড়ি কেন আটকাবে? তারা ভেবেছে সবাইকে বাধা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে। এটা ভেবে থাকলে তাদের আশায় গুড়েবালি। মান্না বলেন, খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই। মিথ্যা কথা বলবেন না। এক বনে দুই রাজা থাকতে পারে না। তেমনি এক দেশে দুই সংসদও থাকতে পারে না। আপনিও প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। পদত্যাগ করুন, নির্বাচন দিন। পদত্যাগ না করে ক্ষমতার ডান্ডা নিয়ে আমাদের পিঠে চড়বেন তা হতে পারে না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে যদি শেখ হাসিনা মনে করেন, এক মাঘে শীত কেটে যায়। ভুল করছেন। শীত বারবার আসে। মাঘও বারবার আসে। এক শীত খালেদা জিয়া কাটাবেন তো মনে রাখবেন আপনাকে কারাগারে ১০ শীত কাটাতে হবে। মান্না বলেন, আমরা কোনো হিংসা চাই না। 

ভোটের মতো ভোট করেন, আমরা ভোট করতে চাই। পারবেন না সবাই। সবাই মিলে নৌকা যাতে জিততে না পারে তার জন্য ভোট দেবেন না, ঐক্যবদ্ধ হবেন না, ঘর থেকে বেরুবেন না, ওই নৌকার পতন ঘটিয়ে তবেই ছাড়বো সেই পথে আমাদের যেতে হবে। তিনি বলেন, তফসিলের মাধ্যমে আপনারা এমন একটা ফাঁদ পেতেছেন যাতে আমরা নির্বাচনে যেতে না পারি। ওই ফাঁদ, ওই বেড়াজাল, ওই অত্যচার ছিন্নভিন্ন করে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। 

সরকার পালাবার পথ খুঁজছে: ডা. জাফরুল্লাহ 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের ভীত হলো পুলিশ, দুর্নীতি, অনাচার ও ঘুষ, গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার। এর বাইরে কিছু নেই। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে, বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও সব কিছু উপেক্ষা করে এত লোক এসেছেন। চিন্তা করে দেখুন- সরকার বাধা না দিলে আজ কি অবস্থা হতো। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এত লোককে কি গ্রেপ্তার করা যাবে? গ্রেপ্তার করা সম্ভব? সম্ভব না। সরকার যতই চালাকি করুক। তাদের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। আসুন, আপনারা মাঠ ছাড়বেন না। 

হাসিনার বাক্স থেকে নির্বাচনকে বের করতে হবে: মোশাররফ 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে পারে না। গত ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচনে যাননি বলে কোনো নির্বাচন হয়নি। এই সরকার জনগণের ভোটের অধিকারকে ভয় পায়। তারা প্রহসন করে আজ ক্ষমতায়। তারা রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। এই নির্বাচনকে হাসিনার বাক্স থেকে বের করে আনতে হবে। 

জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে: মওদুদ 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বর্তমান সরকার ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এবার আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে পার হতে দেব না। আমরা যদি মাঠে নামি জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে। এদেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গত ১০ বছরে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। সমানভাবে বিচার পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে। এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। মওদুদ বলেন, সন্ত্রাস ও সংকট এড়ানোর জন্য আমরা সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গত দশ বছরে হারানো গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন ফিরে পেতে দুই দফা সংলাপে বসেছি। প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও রাখেননি। বলেছিলেন সভা সমাবেশ ঠিকমতো করতে দেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে কথার বরখেলাপ করেছেন। একদিনে আমাদের ২২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের নেত্রীর ভালো চিকিৎসার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, এই কমিশন চোখেও দেখে না। কানেও শোনে না। আমরা তাদের তফসিল পেছানোর অনুরোধ করেছিলাম। তারা তা করেনি। এই নির্বাচন কমিশন সরকারের তল্পিবাহক। নির্বাচন কমিশন নাকি আজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা মিথ্যা কথা। মওদুদ বলেন, আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছিলাম কিন্তু সংলাপ সফল হয়নি। কারণ এই সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। 

যত বাধা দেয়া হোক কাজ হবে না: আব্বাস 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তারেক জিয়ার মুক্তি চাই। এই মুক্তি কার কাছে চান? আমরা কি তাদের মুক্তি দিতে পারি? পারি না। যখন এই শহরে আসি তখন দেখি কোনো লোক নেই জন নেই। যেন কারফিউ চলছে। জনসভায় কোনো লোককে আসতে দেবে না সরকার। তাই গাড়ি নেই। এর আগে বিভিন্ন শহরে যখন সমাবেশ করেছি। তখনও একই রকম কারফিউ জারি করা হয়েছে। এর পরও আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে দিয়ে বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ আসছে। এই মানুষ আসবেই। জোয়ার বন্ধ করা যাবে না। যত বাধা দেয়া হোক। কোনো কাজ হবে না। 

সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে জনগণ ক্ষমা করবে না: গয়েশ্বর 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন চিন্তা ধারার মানুষ কেন এক মঞ্চে। দেশের ঘটনা কি, আজকে গণতন্ত্র নিখোঁজ। আপনারা কি বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আজকে আপসহীন নেত্রী কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। সাত দফা না মানলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? বর্তমান নির্বাচন কমিশন কে এম নূরুল হুদা এবং শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক রহমান আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। 

আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে: মঈন 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের অধীনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কোনো মানুষ যায়নি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর-বিড়াল ঘুরেছে, তা আপনারা দেখেছেন। আর একতরফা নির্বাচন দেশের মানুষ হতে দেবে না। বিরোধী দলের ওপর হাজার হাজার মামলা ও হামলা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিনু বলেন, জাতীয় সব আন্দোলন রাজশাহী থেকে শুরু হয়েছে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনার থেকে শুরু। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার রক্তের ওপর রাজশাহী থেকে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সামনে অঙ্গীকার করেন- ’৫২-র, ’৬২-র, ’৬৯-এর, ’৭১-এর ও ’৯০-এর স্বৈরাচার বিদায়ের মতো কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, দেশমাতাকে মুক্ত করতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। 

চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন- গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি এমএ গোফরান, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম প্রতীক, নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, অধ্যাপক শাহজাহান আলী মিঞা, আমিনুল হক, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, কেন্দ্রীয় নেতা নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির রাজশাহী মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (একাংশের) শাহ আহমেদ বাদল, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া ও গণফোরামের রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পেয়ারা বক্তব্য দেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মন্টু প্রমুখ। জনসভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) আহ্বায়ক রিটা রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার তার দল ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয়। জনসভায় বিএনপি নেতা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মমিন তালুকদার খোকন, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলালুজ্জামান লালু, আবদুল লতিফ খান, আবদুল মান্নান তালুকদার, সিরাজুল হক, মাহমুদা হাবিবা, আবদুল মমিন তালুকদার খোকা, আকবর আলী, সেলিম রেজা হাবিব, নজরুল ইসলাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ ?উলফাত, হাসান জাফির তুহিন, ভিপি সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, রফিকুল করিম খান পাপ্পু, ফয়সাল আলিম, মজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন বুলু, পারভেজ আরিফিন সিদ্দিকী, জন গোমেজ, দেবাশীষ রায় মধু, খায়রুন্নাহারসহ কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগীয় নেতারা অংশ নেন। জনসভা উপলক্ষে মাদরাসা মাঠের চার পাশে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। 

পথে পথে বাধা, যানবাহন সংকট; তবু লোকে লোকারণ্য 

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা উপলক্ষে রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক পথের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটে সব ধরনের বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোনো রোডের বাস। পরিবহন নেতারা বলছেন, নাটোরে বাস শ্রমিকের ওপর হামলার ঘটনায় বাস বন্ধ আছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করেই আকস্মিকভাবে বাস চলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যানবাহন সংকট ও পথে পথে বাধা দেয়ার পরও দুপুর ১টার দিকেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জিরো পয়েন্ট, আলুপট্টি মোড়, রানী বাজার মোড়, জাদুঘর মোড়, সোনাদীঘি মোড় ও সাহেব বাজারসহ পুরো শহরে জনতার ঢল নামে। জনসভাটি ৭ দফা দাবিতে হলেও নেতা-কর্মীদের অনেকে হাতে দেখা গেছে বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের ছড়া ও জাতীয় পতাকা। জনসভায় বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে নেতাকর্মীরা মুহুমুর্হ স্লোগান দেয়। মাঠের দুপাশের দেয়ালে টানানো হয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছবি সংবলিত ব্যানার। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ০৯,২০১৮ 


Thursday, November 8, 2018

শয়ে শয়ে গ্রেপ্তারের কারণ কী?


ঢাকার আদালতে ইয়ারুন বিবি ছবি: আসাদুজ্জামান

বৃদ্ধ ইয়ারুন বেগম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রধান ফটকের কাছে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুপচাপ বসে ছিলেন। বেলা দুইটার দিকে ইয়ারুন বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাতি নাসির কোনো রাজনীতি করেন না। তেজগাঁও থানার পুলিশ তাঁকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। থানায় গেলেও নাতির সঙ্গে দেখা হয়নি। এ জন্য আদালতে এসেছেন দেখা করতে।

ঢাকার আদালতে গতকাল বুধবার ৪৩১ জনকে হাজির করা হয়। গত মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোসহ নাশকতা ঘটানো এবং নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। 

৪৩টি মামলায় গ্রেপ্তার ৪৩৪ আসামির মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালত পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে ইয়ারুন বেগমের নাতি নাসিরও রয়েছেন।

রিমান্ড আবেদন না থাকায় নাসিরকে আর আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাস কক্ষে তোলা হয়নি। নাসিরের দেখা পাননি নানি ইয়ারুন। সন্ধ্যার আগে ইয়ারুন সজল চোখে বলেন, বিনা দোষে নাসিরকে ধরা হয়েছে।

অবশ্য মামলার কাগজপত্র বলছে, নাসিরকে তেজগাঁও থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই মামলায় গ্রেপ্তার ৪১ জনকে ঢাকার আদালতে হাজির করার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, গ্রেপ্তার করা আসামিরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা দিয়েছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার জন্য তাঁরা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত।


গ্রেপ্তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার সিএমএম আদালতে এসেছেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীপা বেগম। ছবি: আসাদুজ্জামান

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আইনজীবীরা আদালতে দেওয়া আরজিতে উল্লেখ করেন, হয়রানি করার জন্য নিরীহ লোকদের ধরে এনেছে পুলিশ। নাশকতার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন।

ঢাকার আদালতে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের আত্মীয়স্বজন আদালতে ভিড় করতে শুরু করেন। প্রিজনভ্যানে করে যখন আসামিদের আদালতের সামনে দিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন স্বজনেরা আসামিদের দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পারভেজ থাকেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। শ্যামপুর এলাকার একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। মঙ্গলবার পারভেজ শ্যামপুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

স্বামীকে একনজর দেখার জন্য ঢাকার আদালতে দুপুরের দিকে আসেন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীপা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে, তাঁর স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শ্যামপুরের একটি ডেকোরেটর দোকানে চাকরি করেন। রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।

একই থানায় গ্রেপ্তার হায়াতের স্ত্রী জাহানারা বেগম স্বামীকে দেখার জন্য আদালতে আসেন। তিনি বলেন, গরিব মানুষ। স্বামীর আয়ে সংসার চলে। কোনো রাজনীতি করেন না। রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।

নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের আত্মীয়স্বজন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কোনো রাজনীতির সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। বিভিন্ন পেশায় জড়িত।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একজনের আইনজীবী আরফান উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হয়রানি করার জন্য পুলিশ নিরীহ মানুষদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করছে। এগুলো অন্যায়, ঠিক না।’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ০৮,২০১৮ 

Tuesday, November 6, 2018

টার্নিং পয়েন্টে রাজনীতি

এতদিন যারা সিট বেল্ট বেঁধে ছিলেন তাদের অপেক্ষার শেষ হয়েছে। উত্তেজনাময়, শ্বাসরুদ্ধকর এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। এটা একেবারে অভিনব কোনো দৃশ্যপট নয়। অতীতের সঙ্গে মিল আছে, আবার নেইও। প্রতিটি মুহূর্তই ঘটনাবহুল। কিছু না কিছু ঘটছে। প্রকাশ্যে, পর্দার আড়ালে। একদিকে সমঝোতার চেষ্টা।

অন্যদিকে, সংঘাতের শঙ্কা। কেমন হবে সামনের দিনগুলো? আগামী ৪৮ ঘণ্টাতেই বহুকিছু পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে।

আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের শোডাউনের চেষ্টা করছে ঐক্যফ্রন্ট। কে না জানে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে হলেও জনসমাগমের বিষয়টি বিএনপির ওপরই নির্ভর করছে। এ সমাবেশ থেকে   সরকার এবং তৃণমূলের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত বার্তা দেবেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। পরদিন বুধবার সকালে গণভবনে ফের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসবে ঐক্যফ্রন্ট। ছোট পরিসরের ওই সংলাপে চূড়ান্ত ফয়সালার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি রূপরেখা হাজির করা হতে পারে। 

সংসদ ভেঙে দেয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প প্রস্তাব থাকতে পারে রূপরেখায়। ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এ জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে দেয়ার বিকল্প নেই। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মত দিয়েছেন, সংবিধানের অন্তত ১০ জায়গায় সংসদ ভেঙে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। 

এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, এ নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা আছে। তবে গতকাল তিনি বলেছেন, বিএনপি কি প্যারোলে মুক্তি চেয়েছে? আপনারা কেন প্রশ্ন করছেন? প্যারোলে কি ইলেকশন করা যায়? স্বল্প সময়ের জন্য যেমন আত্মীয় মারা গেলে বা দেশে না হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সে ধরনের দাবি তো বিএনপি করেনি। আমরা গায়ে পড়ে কেন প্যারোলে মুক্তি দেয়ার কথা বলবো? একটি সূত্র অবশ্য বলছে, পর্দার আড়ালে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে একধরনের আলোচনা হয়েছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন এ বিষয়ে সায় দেননি।

বাংলাদেশে সংলাপের ইতিহাস সুখকর নয়। অতীতে কোনো সংলাপই সফল হয়নি। তবে এবারের সংলাপ নানা কারণেই ব্যতিক্রম। এবারই প্রথম বিরোধী পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়। আর সরকার পক্ষ এতে সাড়া দেয় খুবই দ্রুত। দ্বিতীয়ত, শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমবারের মতো সংলাপে অংশ নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বরফ এরই মধ্যে গলতে শুরু করেছে। তবে কতটুকু গলবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই শঙ্কা আছে। আশার কথা হচ্ছে, দুই পক্ষই এরই মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। শুরুতে সরকার পক্ষ বলেছিল, সাত দফার এক দফাও মানা হবে না। কিন্তু এখন তারাই বলছেন, কিছু কিছু দাবি এরই মধ্যে আংশিক মানা হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টও সাত দফায় ছাড় দিতে পারে। সংসদ ভেঙে দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় বিরোধী দল বা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দেয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তি, মামলা, ধরপাকড় বন্ধের মতো দাবিগুলো মেনে নিলে ঐক্যফ্রন্ট সমঝোতায় যেতে পারে।

সে যাই হোক সরকার ও বিরোধীপক্ষ  এক সপ্তাহের মধ্যে দুইবার বৈঠকে বসাও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে বন্দি থাকলেও এটা অস্বীকার করার জো নেই, তার অনুমতিতে বিএনপি সংলাপে অংশ নিচ্ছে। আর ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নিয়ামক শক্তি যে বিএনপি সে কথা আগেই একবার বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই পক্ষ কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিলেও ক্ষমতার প্রশ্নে এখনো তারা অনড়। আর এ বিষয়টিই বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টকে বিকল্প চিন্তার পথেও নিয়ে যাচ্ছে। এমনিতে রাজনীতিতে এখনো সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণ একশ’ ভাগ। ভোটের জোয়ারে পোস্টারে ঢেকে গেছে রাজধানীর দেয়াল। কিন্তু সেখানে সবই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছবি।

বিরোধীদের কোনো ছবি দেখা যায় না। দেশের চলমান রাজনীতির এটি একটি প্রতীকী চিত্রও বটে। এই অবস্থায় বিকল্প চিন্তাও রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। তাদের কেউ কেউ বলছেন, সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা করে দেয় তবে কঠোর আন্দোলনে নামা ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো বিকল্প থাকবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের ফল জানাবেন। কিন্তু সংলাপের ফল কী হবে তার দৃশ্যপট আসলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমনকি বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতির দৃশ্যপটও। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই- এ কথাটিও শেষ কথা নয়। নাটকীয়ভাবে উভয়পক্ষ যদি সমঝোতায় পৌঁছায় তবে নির্বাচনী ট্রেনে উঠে যাবে বাংলাদেশ। আবার তৈরি হবে ভোট উৎসবের পরিবেশ। যে উৎসবে অপেক্ষায় বহুদিন ধরে মানুষ। আর সমঝোতা না হলে পুরনো দিনের রাজনীতি হয়তো আবার ফিরে আসবে। যা আসলে জনগণের জন্য সুখকর নয়। 

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ০৬ ২০১৮ 

রাজস্ব আহরণে ঘাটতি - উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণের পরিণতি

সম্পাদকীয়

সরকারের পক্ষ থেকে সাফল্যের কথা বলা হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রকৃত আদায় বিবেচনা ছাড়াই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও ভ্যাটে অনলাইন পদ্ধতি কার্যকর করতে না পারা, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের করছাড় ও আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। প্রথম তিন মাসে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রায় সব পণ্য আমদানিই আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। হ্রাস পেয়েছে রফতানিও। ব্যাংকিং খাতে করপোরেট কর কমানো ও ব্যাংকের নিজস্ব আয় কমে যাওয়ায় রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। ধনবান শ্রেণীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এখন মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের তালিকায়। দামি বাড়ি-ফ্ল্যাটে বিপুলসংখ্যক নাগরিকের বসবাস। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটছে। বিলাসদ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় কি রাজস্ব আদায় বাড়ছে? যথেষ্ট আয় ও বিলাসী জীবনযাপন করেন কিন্তু আয়কর দেন না কিংবা নামমাত্র কর দেন, এমন নাগরিকের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, আয়কর বিভাগ কোমর বেঁধে নামলে বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য অর্জন চোখে পড়বে।

বর্তমানে বিনিয়োগের হার মাত্র ২৮ শতাংশ। আগামী তিন বছরে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখন আমরা যদি এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সার্বিক আয়োজন নিয়ে বিশ্লেষণ করি তাহলে প্রথমেই যে বিষয়গুলো আসবে তা হলো করবান্ধব পরিবেশ, রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিতকরণ, আইনকানুন সময়োপযোগী করা। এ বিষয়গুলো নিরসনে স্বল্পমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা নেই। তথ্য বলছে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে টিনধারী করদাতার সংখ্যা ৩৩ লাখ এবং তাদের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমাদানকারী করদাতার সংখ্যা মাত্র ১৩ থেকে ১৫ লাখ। কেন বাকিরা আয়কর রিটার্ন জমা দেন না বা কেন সরকার আয়কর আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না, এ প্রশ্নগুলো বারবার ঘুরেফিরে আসে। এতে বোঝা যায়, আয়কর আইন সময়োপযোগী নয়। সার্বিকভাবে অর্থনীতি যদি গতিশীল হয়, তবে কর আহরণের পরিমাণ বাড়বে সত্যি, কিন্তু যাদের আয় প্রচুর কিন্তু দিতেই যত অনীহা, তাদের ব্যাপারে কী করা হবে? কিছু পেশাজীবী এখনো আয়করের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। গ্রামে অনেক ব্যবসায়ী ও জোতদার কৃষক রয়েছেন, যাদের আয় শহরের যেকোনো চাকরিজীবীর চেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে কীভাবে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তার পথ অনুসন্ধানও জরুরি। এ বিষয়গুলোয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সক্রিয় না হলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। আবার কেউ কেউ বলছেন, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। তবে দেশ যে হারে অগ্রগতির দিকে যাচ্ছে, সে হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এ অবস্থায় সবচেয়ে জরুরি রাজস্ব ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করা। পাশাপাশি দেশী ও বহুজাতিক কোম্পানিসহ যাদের কাছে অধিক হারে রাজস্ব পাওনা রয়ে গেছে, তা আদায়ে উদ্যোগ নেয়া। একই সঙ্গে রাজস্ব ফাঁকির উৎস বন্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

২০২১ সালে আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। এজন্য অপরিহার্য শর্ত— জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। আর রাজস্ব আয় বাড়াতে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। বিদ্যমান ব্যবস্থায় পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।

Courtesy: Banikbarta Nov 06, 2018

The rich getting richer

EDITORIAL

Income inequality disrupts progress


There is no doubt that Bangladesh has made tremendous progress in economic growth in the last few decades. But there is also the inescapable fact that income inequality in the country has gone up sharply. It's the wealthy and the powerful who have captured most of the benefits of economic growth in recent years, as studies carried out by research organisations have repeatedly shown. And more problematic is the fact that very little is being done to reduce this gap between the rich and poor, as reflected in our ranking (148th among 157 countries) in Oxfam's Commitment to Reducing Inequality (CRI) Index 2018.

Needless to say, unequal distribution of income is a major threat to the country's economic and social progress. The national income share of the poorest 10 percent of the household population decreased from two percent in 2010 to 1.01 percent in 2016 whereas it increased for the richest 10 percent from 35.84 percent in 2010 to 38.16 percent in 2016. Along with this, lack of equal access to education and healthcare for all, limited employment opportunities, and rising youth unemployment, among other factors, are further fuelling inequality in our society.

There is an urgent need for increased public spending in the sectors of education, healthcare and social protection. But that is not all. State and other institutions have to be rescued from the grip of the rich and a system of transparency and accountability needs to be restored. The anarchy in the financial sector with loan defaulters escaping unscathed and taxpayers ultimately paying the price is a good example of the immense influence wielded by the wealthy in the country. The progress we have made as a country would not be possible without the contribution of the population as a whole. So why should the rich get most of the economic pie?

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 06, 2018

Helping BKB, RAKUB to get out of the wood

EDITORIAL

If the situation with state-owned commercial banks (SoCBs) is described as bad or worse, the same in the case of the two government-owned specialised banks (SBs) --  the Bangladesh Krishi Unnayan Bank (BKB) and the Rajshahi Krishi Unnayan Bank (RAKUB) --  is terrible. All attention is focused on SoCBs since they mainly operate in urban areas and deal with clients engaged in trading, manufacturing and in other professions. But the state of affairs with the SBs is hardly taken into notice with the required amount of seriousness either by the policymakers or the relevant authorities.

The policymakers have, apparently, made a foregone conclusion that SBs would be loss-making entities since they disburse low-interest bearing loans among farmers and others engaged in farm-related activities. The SBs, as directed by the government, do not fix market-based lending rates that are usually higher. 

The government is supposed to compensate by providing subsidy to the SBs on account of low-interest bearing farm loans. The government's failure to make available the required volume of subsidy coupled with inefficiency on the part of the management has almost brought the two SBs to their knees. The state of their financial health says it all. The aggregate capital shortfall of the SBs in question, according to a report published in this paper last Monday, reached a staggering Tk.86.54 billion until June last. In fact, the need for capital replenishment of these banks has been rising constantly despite periodic disbursement of government doles.

The rise in the volume of soured loans has much to do with the ever-expanding capital shortfall. The aggregate volume of non-performing loans (NPLs) of these two SBs stood at Tk.52.41 billion as of June 30 last. There is no denying that the clientele of these SBs are entirely different from that of the conventional banks. The former mainly disburse farm loans in small amounts, in most cases, without any collateral. Moreover, in the case of default, the SBs usually do not resort to harsh measures for understandable reasons. 

A section of unscrupulous clients tend to take advantage of such relaxed attitude to secure loans with an ulterior motive of not paying the same back. Some dishonest officials are found ready to extend all possible cooperation to such clients. The truth is that borrowers of farm loans are the needy people and a good number of them use the borrowed funds for consumption or purposes other than farming. Many such borrowers also default on repayment. Thus, the very purposes of lending --  helping the farmers in need and boosting farm production at the same time --  remain unmet.

The Bangladesh Bank (BB), as the regulatory body, being worried about the financial health of the state-owned SBs has signed separate memorandums of understanding with the SBs asking the latter to improve their conditions. That they have failed to meet the objectives of the MoUs does not require any explanation. But such a deplorable situation should not continue anymore. The government as owner and the BB as regulator must help these banks to get out of the wood.

  • Courtesy: The Financial Express /Nov 06, 2018

Underwater valve damage halts LNG supply

  • Consumers stand to suffer as repair to take 10 days 
  • Dhaka households also affected as supplies across country suffer setback


Re-gasification in the country's first floating liquefied natural gas (LNG) import terminal has remained suspended since Saturday evening owing to the damage of an underwater hydraulic valve.

The 'actuator valve' in between the FSRU (floating, storage, re-gasification unit) and subsea pipeline started leaking at 7.0 pm on Saturday, resulting in total halt of the re-gasification at the Excelerate Energy's terminal, a senior official of state-run Gas Transmission Company Ltd (GTCL) said.

Gas supply across the country has been facing an acute setback since then.

The sufferings of households mounted while production squeezed in industrial units.

The authorities had to shut several gas-fired power plants and a fertiliser factory in the aftermath of the supply halt.

"It would take around 10 days to fix the problem. Spare parts and special divers will need to be brought from abroad," he said.

Gas crisis in Chattogram remains acute as clients of the port city have been consuming re-gasified LNG alone since the initiation of its commercial supply on August 18, 2018.

The Karnaphuli Gas Distribution Company Ltd (KGDCL), dedicated to the Chattogram region, is receiving 170 million cubic feet per day (mmcfd) less gas than it would get before the termination of re-gasification at the LNG import terminal, a senior company official said.

In the pre-termination period, the KGDCL was getting around 390 mmcfd of gas - around 320 mmcfd as re-gasified LNG and the rest from the national gas grid, he said.

But due to the damage of the valve, the state-run company is now receiving around 220 mmcfd of gas from national gas grid, the official added.

Electricity generation from three gas-fired power plants - Rauzan and two units of Shikalbaha -has been halted and the Chittagong Urea Fertiliser Ltd (CUFL) has been shut to cope with the short supply of natural gas.

Meanwhile, production in industries was disrupted.

Cooking in households in different areas in the capital hampered due to gas supply shortfall coupled with low pressure as Dhaka and its adjoining areas are getting less gas.

"We had to buy breakfast from the restaurant this morning as we failed to prepare it at home due to gas crisis," said a Khilgaon resident.

Residents of Mirpur, Shahbag, Kalabagan, Paribag, Uttara, Bashabo, and Jatrabari were the worst sufferers.

Motorised vehicles were seen in long queue in front of different CNG (compressed natural gas) filling stations to get CNG filled in.

Officials said Excelerate Energy's vessel Excellence arrived at Moheshkhali terminal carrying the country's first LNG on April 24.

But it connected to the subsea pipeline network on August 05 and commenced injecting the first regasified gas on August 12.

Technical issues and rough seas during the June-August south-western monsoon kept it stranded off the south coast of Chittagong for months.

Excelerate Energy claimed 'force majeure,' while Petrobangla claimed liquidated damage (LD) over the issue, which is still pending for disposal.

Petrobangla, however, has been counting 'capacity payment' as it failed to fully utilise the terminal from the day one.

The state-run corporation has so far utilised around 65 per cent capacity of the Excelerate's FSRU in maximum by re-gasifying around 320mmcfd of gas, a senior official said.

While 35 per cent capacity of the US company's vessel remains unused, the state-run oil, gas and mineral corporation would have to pay its full capacity, he added.

The daily payment the Petrobangla owes to Excelerate Energy is around US$ 232,000 (Tk 19.72 million), no matter it re-gasifies less or the entire capacity of the FSRU, according to the deal.

Excelerate's FSRU- Excellence-has the capacity to re-gasify around 500 mmcfd equivalent of LNG, the Petrobangla official said.

  • Courtesy: The Financial Express/ Nov 06, 2018

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ...

মহিউদ্দিন আহমদ


প্রতিহিংসার শিকার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

জীবনের চলার পথে কিছু কিছু দৃশ্য, ঘটনা ও ব্যক্তি নজর কাড়ে। স্মৃতিতে থেকে যায় অনেক দিন। যদি কখনো শুনি তাজমহল ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাহলে খুব কষ্ট পাব মনে। কেউ যদি বলে, এ দেশটা এমনি এমনি স্বাধীন হয়ে গেছে, সেটাও শুনতে ভালো লাগবে না। কেননা, আরও অগুনতি মানুষের মতো আমারও তো এই মহাযজ্ঞে সচেতন অংশগ্রহণ ছিল। নির্মলেন্দু গুণের কথা ধার করে বলতে চাই, গুলিটা লাগতে পারত আমার বুকেও। তেমনি কিছু কিছু মানুষকে মনে ধরে যায়। তাঁদের অর্জনগুলোর কথা স্মরণ করে আনন্দ পাই। তাঁদের ক্ষতি হলে বেদনায় ভারাক্রান্ত হই।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জানি চার দশক ধরে। মনে আছে, হঠাৎ একদিন সকালে আহমদ ছফা আমাকে পাকড়াও করে বললেন, ‘চলো সাভার যাই।’ দেখলাম গাড়ি নিয়ে হাজির তাঁর প্রিয়ভাজন সাবেক মন্ত্রী মফিজ চৌধুরী। তিনি বাইসাইকেল তৈরির একটা কারখানা বানাতে চান। সে জন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কোনো সাহায্য বা পরামর্শ পাওয়া যায় কি না, সেই ভাবনা তাঁর।

সেই প্রথম আমি গেলাম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ওষুধ কারখানাটি তখন সবেমাত্র তৈরি হয়েছে। এর বিপণন ব্যবস্থাপক হলেন ফরহাদ মজহার। আহমদ ছফার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি। কিছুদিন আগে মার্কিন মুলুকের পাট চুকিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এখানেই থিতু হওয়ার চেষ্টা করছেন। জুতো খুলে পায়ে কাপড়ের পট্টি লাগিয়ে ওষুধ কারখানার ল্যাবরেটরি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন তিনি। আমাকে বলা হলো, বাংলাদেশে এটাই কোনো ওষুধ কোম্পানির মানসম্পন্ন আধুনিক ল্যাবরেটরি।

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো এযাবৎ এ দেশকে কামধেনুর মতো দোহন করে গেছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাতে বাগড়া দিলেন। সরকারের ওষুধনীতি তৈরির পেছনে তিনিই ছিলেন প্রধান অনুঘটক। এই নীতির ওপর ভিত্তি করে দেশীয় ওষুধশিল্পের জাগরণ ঘটল। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন এর পথিকৃৎ।

গণস্বাস্থ্যের আঙিনায় কেটেছিল সারাটা দিন। এক জায়গায় দেখলাম অনেকগুলো মেয়ে হাসপাতালের খাট তৈরি করছেন। তাঁদের বয়স বিশের কোঠায়। হাতে ওয়েল্ডিংয়ের যন্ত্রপাতি। পরনে নীল পায়জামা-শার্ট। সকালে তাঁরা আশপাশের গ্রাম থেকে আসেন। শাড়ি বদলে শার্ট-পায়জামা পরে সারা দিন লোহালক্কড় নিয়ে কাজ করেন। সন্ধ্যায় যাঁর যাঁর বাড়িতে ফিরে যান। একজনমাত্র পুরুষ কর্মী দেখলাম। তিনি তাঁদের সুপারভাইজার। মনে হলো, পুরো হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে গ্রামের অল্পশিক্ষিত মেয়েদের শ্রমে-ঘামে। এ তো আরেক তাজমহল, যার পেছনে রয়েছে অন্য রকমের ভালোবাসা, গ্রামের গরিব চাষাভুষাদের বিনা মূল্যে কিংবা অল্প খরচে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্রত।

এরপর কেটে গেছে আরও কয়েকটি বছর। এটা ১৯৮৮ সালের কথা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশসহ সাতটি দেশে একটি সমীক্ষা চালাবে। বিষয় হলো কৃষি ও পল্লি উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে এনজিওদের সহযোগিতার খাতগুলো চিহ্নিত করা। সমীক্ষায় বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মনোনীত হলাম। আমি ম্যানিলায় এডিবির কয়েকটি কর্মশালায় যোগ দিয়ে ঢাকায় এসে শুরু করলাম কাজ। এ জন্য এ দেশের এনজিও সেক্টরের প্রধান ও গুরুস্থানীয় নেতাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার দরকার হলো। এর ধারাবাহিকতায় ওয়ান টু ওয়ান আলাপ হলো ফজলে হাসান আবেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কাজী ফারুক আহমেদ, জেফরি পেরেরা, রাহাত উদ্দিন আহমেদ প্রমুখের সঙ্গে। 

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঢাকা অফিসে। ওই সময় তাঁর উন্নয়নভাবনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। তখন অধিকাংশ এনজিও নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। তবে প্রবণতাটি ছিল ক্ষুদ্রঋণের দিকে। আমার কাজ ছিল সরকারের সঙ্গে সহযোগী হয়ে কাজ করার ইচ্ছা ও সক্ষমতা আছে, এমন কিছু এনজিওর নাম সুপারিশ করা। আমি ২৫টি ‘জাতীয়’ ও ১৫টি ‘আঞ্চলিক’ এনজিওর নাম প্রস্তাব করেছিলাম। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম ছিল ৫টি জাতীয় সংস্থার অন্যতম। সমীক্ষাটি ১৯৮৯ সালের আগস্টে এডিবি থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে অনেকেই অনেক লিখেছেন, দেশে ও বিদেশে। বাংলাদেশের জনগণের উদ্যোগ, দেশজ অর্জন ও লাগসই প্রযুক্তি নিয়ে ১৯৮০ ও ’৯০-এর দশকে আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে যেসব সংগঠনের উদাহরণ দেওয়া হতো, সেগুলোর মধ্যে অবধারিতভাবেই উঠে আসত ব্র্যাক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম। অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমানের একটি লেখায় পেয়েছিলাম, ওই সময় দেশে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে সাক্ষরতা প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল তার অন্যতম অংশীজন। তখন তাদের একটি স্লোগান ছিল: ‘টিপসই—ছি ছি’।

সমসাময়িক দুনিয়ায় মানবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্টকহোম থেকে দেওয়া হয় ‘রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’। ১৯৮০ সালে এর যাত্রা শুরু। অনেকেই এটিকে বিকল্প নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করেন। এই পুরস্কার দেওয়া হয় ওই সব ব্যক্তি ও সংগঠনকে, যারা আমজনতার স্বার্থ ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এ অঞ্চলে এই পুরস্কার যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন লোকায়ন (ভারত, ১৯৮৫), চিপকো আন্দোলন (ভারত, ১৯৮৭), মেধা পাটকার এবং বাবা আমতে (নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, ভারত, ১৯৯১), জাফরুল্লাহ চৌধুরী (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ, ১৯৯২), বন্দনা শিবা (ভারত, ১৯৯৩), আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার (ভারত, ২০০৪), গ্রামীণ শক্তি (বাংলাদেশ, ২০০৭), আসমা জাহাঙ্গীর (পাকিস্তান, ২০১৪)।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিপাকে পড়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে একটি অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি সমালোচিত হন। এ ধরনের কথা বলা তাঁর উচিত হয়নি। এর কৈফিয়ত দিতে গিয়েও তিনি গোলমাল করে ফেলেন। এরপর আমরা দেখলাম তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর ছেড়ে দিলেই ভালো হতো। কিন্তু তা হয়নি। এখন শুধু তিনি নন, তাঁর প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখ আটকে দিয়েছে। ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেছে, হোস্টেলে ঢুকে মেয়েদের অপমান করেছে, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এক পা-হারা লিমনকে ঠেঙিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, জাফরুল্লাহ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। অপরাধ হয়ে থাকলে আইনের আওতায় এনে তাঁকে শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু এখন যা হয়েছে বা হচ্ছে, তা মোটেও কাম্য নয়।

জাফরুল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল। তাঁর সব মতের সঙ্গে আমি একমত নই। তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন আছে। কিন্তু তাই বলে তাঁর সাজানো প্রতিষ্ঠান তছনছ করে দিতে হবে, এটা কেমন কথা?

কেউ কেউ বলে থাকেন, রাজাকার সব সময়ই রাজাকার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সব সময়ই মুক্তিযোদ্ধা নন। আমি দেশের মানুষকে মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করি। মুক্তিযোদ্ধা, অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার। তো, কোনো এক অমুক্তিযোদ্ধা এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারেন। এখন তো বীর উত্তমদেরও রাজাকার বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনো হয়তো শুনব, জাফরুল্লাহ চৌধুরীও রাজাকার, লন্ডন থেকে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে একাত্তরে এখানে এসে হাসপাতাল খুলেছিলেন।

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান জামালউদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগে ঘড়ি চুরির মামলা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছিল চামচ চুরির মামলা। এই দেশে সবই সম্ভব। জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে নাকি ফল আর মাছ চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে।

এ দেশে অতি উৎসাহীরা অনেক কিছুই বলেন, করেন। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপ ফাঁস হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঘোষণা দিয়ে তাঁর ডিগ্রি বাতিল করল। ওই সময় সমিতির যিনি সভাপতি ছিলেন, তিনি আমার বন্ধু। তাঁকে ফোন করে বললাম, মান্নার তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রি নেই। তিনি বললেন, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমি বললাম, আপনাদের সমিতি কীভাবে ডিগ্রি বাতিল করে? আপনারা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র গোলাম আযম কিংবা কাদের মোল্লার ডিগ্রি বাতিল করেননি। মান্না এমন কী অপরাধ করলেন?

১৯৭৪ সালে ছাত্রলীগের অতি উৎসাহী নেতা-কর্মীদের মুখে একটা স্লোগান শুনতাম—বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু, কঠোর হও, কঠোর হও। ১৫ আগস্ট সকালে তাদের টিকিটিরও দেখা পাওয়া যায়নি। এই সব মোসাহেব-চাটুকার সব যুগেই আছে। তাদের পোষা হয়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ফল চুরির ব্যাপারটা কিছুতেই হজম করতে পারছি না। তিনি অসুস্থ। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করেন। অসম্ভব মনের জোর। দেশের মানুষের জন্য জীবনটা এমন করে বিলিয়ে দিয়ে শেষমেশ ‘চোর’ তকমা জুটল তাঁর কপালে! রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ থেকে শেষ দুটি লাইন উদ্ধৃত করে বলতে ইচ্ছা করে:

আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে—

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!

  • মহিউদ্দিন আহমদ : লেখক ও গবেষক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ০৬,২০১৮