Search

Saturday, November 10, 2018

জনরায়ের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে


জনরায়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে জনগণের রায়ের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। গতকাল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, এই রাজশাহীবাসী অত্যন্ত লড়াকু মানুষ। বহুকাল ধরে আপনারা লড়াই সংগ্রাম করছেন।

মনে আছে, গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই রাজশাহীর কত ভাই জীবন দিয়েছে? তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান? এ সময় নেতাকর্মীরা হাত উঁচিয়ে স্লোগানের মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা জানি আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। প্রতিদিন গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সহ্য করছেন। একটা মাত্র কারণ- আপনারা গণতন্ত্র চান। আপনাদের অধিকারটুকু ফিরে পেতে চান। সেজন্যই আজকে মামলা মোকদ্দমা দিতে দিতে সারা দেশের মানুষকে অস্থির করে তুলেছে সরকার।

এটা ছাড়া ওদের আর কোনো অস্ত্র নেই। এই অস্ত্র দিয়ে তারা বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে চায়। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আজকের এই জনসভা তার প্রমাণ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করেছে এই সরকার। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। আজকের এই মঞ্চে একজনও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। 


রাজশাহীর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ কারাগারে রয়েছে। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের যত রাজবন্দি রয়েছে, সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। তবেই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের যে আলোচনা হয়েছে সেটা ফলপ্রসূ হবে। তবেই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, কথা খুব পরিষ্কার- নির্বাচনে সবার জন্য সমান মাঠ তৈরি করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরো কঠিন। আজকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- আমাদের স্বাধীনতা থাকবে কী থাকবে না। আমাদের সংগঠন করার অধিকার থাকবে কী থাকবে না। তিনি বলেন, এর আগে এই মাঠে রোডমার্চ করতে এসেছিলাম। তখন দেশনেত্রী আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি আজ কারাগারে। প্রচণ্ড অসুস্থ। অথচ ৭৩ বছর বয়সী এই মানুষটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে ১০ বাই ২০ ফুটের একটি ছোট্ট ঘরে বিচারালয় স্থাপন করা হয়েছে। এই সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারের অন্ধকারে তিলে তিলে হত্যা করছে। যা বৃটিশ আমলে হয়নি, পাকিস্তান আমলে হয়নি। অথচ এই সরকার সেটাই করছে। 

২ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে সরকার: ড. কামাল

রাজশাহীর জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের অংশ নেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে পারেননি। তবে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। রাজশাহীর জনসভাকে ঘিরে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই তফসিলের মাধ্যমে সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা জনগণের স্বার্থের বিরোধী, সংবিধান বিরোধী ও গণতন্ত্র বিরোধী কাজ। 

ক্ষমতা ছাড়লে আওয়ামী লীগ লোক পাবে না: অলি 

এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, যে পার্লামেন্ট ব্যবস্থা দেখছেন তা খালেদা জিয়ার দেয়া। বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার ঘোষণা শুনে তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে জীবন দিতে গিয়েছিলাম। আজ ব্যাংকে টাকা নেই। দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আমি এর আগেও রাজশাহীতে জনসভায় এসেছি। আজকের মতো এত বড় জনসভা কোনো দিন দেখিনি। আপনারা ক্ষমতা থেকে গেলে এতগুলো লোক চোখে দেখবেন না। কর্নেল (অব.) অলি বলেন, নির্বাচন হবে কি না, নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো কি না এখনো সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে আমাদের বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তরুণদের প্রতি বলব, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেভাবে জান দিতে গিয়েছিলাম আপনাদেরকে সেই জান দেয়ার কথা বলব না। কিন্তু রাস্তায় তো সকলে দাঁড়াতে পারেন বেগম জিয়ার জন্য। একটু হাত তুলে প্রশাসনকে দেখান, প্রধানমন্ত্রী দেখুক- কতগুলো হাত, কতগুলো লোক। আপনারা ক্ষমতা থেকে গেলে এতগুলো লোক আসবে না। একটু জোরে তালি বাজান সরকার শুনক। 

আন্দোলনকে গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে: রব

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিলাম। দেশকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, নির্বাচনে আসতে দিন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করুন। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করুন। আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নিন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এই ৯০ শতাংশ মানুষের কথা না শুনে নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করব। এই আন্দোলনের জন্য মরতে হলে মরব, কিন্তু দাবি ছাড়ব না। রব বলেন, আমাদের দাবি ছিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন না। কিন্তু সেটা করেছেন। এখন নির্বাচন যদি না পেছান তাহলে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা হবে। বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ হবে। লংমার্চ হবে। এগুলো চলতে থাকবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। তা না হলে জনতার আদালতে বিচার হবে আপনাদের। দাবি আদায়ে রাস্তায় নামব। কী করবেন? জেলে নেবেন? আমি ৬ বার মারা গেছি। ১০ বছর এই রাজশাহীর জেলে ছিলাম। এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনকে গ্রামে-গঞ্জে, কৃষক-কামারসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। তিনি বলেন, জেগেছে জনতা। সরকারকে বলব, দেখে যান রাজশাহীর মাদরাসা মাঠ। পুলিশ দিয়ে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন তারপরও মাদরাসা মাঠে জায়গা নেই। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবির চলমান আন্দোলন সারাদেশে ‘গ্রামে-গঞ্জে’ ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

পুলিশকে ১০ লাখ টাকা করে ফেরত দেয়া হবে: কাদের সিদ্দিকী 

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে থাকবো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমান নিয়ে দ্বন্দ্ব করে যারা লুটে পুটে খাচ্ছে, আল্লাহ যদি আমাকে সময় দেয়, তাহলে সেই দ্বন্দ্ব আমি মিটিয়ে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া লাগাতার হরতাল দিয়েছিলেন, আমি উনাকে হরতাল প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি প্রত্যাহার করতে পারেননি। শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেননি। এত দিন পরে এবার আলোচনায় বসেছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেদিন প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনারা জিতে গেছেন। খালেদা জিয়া যেদিন কারাগারে যান, সেদিন তিনি বলেছিলেন- আমি যদি মারাও যাই তাহলেও তোমরা হরতাল দেবে না। তার এই অনুরোধ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের কোনো কারাগারে তাকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। 

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনারা যদি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চান তাহলে ঐক্যফ্রন্টকে অটুট রাখতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য ছটফট করতে হবে না। তাহলে আপনাদের লড়তে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকের জনসভায় খালেদা জিয়ার মুক্তি স্লোগান উঠেছে। কিন্তু একবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ফ্রন্টের নেতাদের পক্ষে স্লোগান ওঠেনি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি নাকি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। কথাটা সত্য নয়। শেখ হাসিনাই প্রথম রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকের এই জনসভায় আসতে আমাকে কয়েকবার বাধা দেয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় শেখ হাসিনার ‘মাইট্টা’ পুলিশ বাধা দিয়েছে। অথচ এই পুলিশের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সংসদে আমি কাদের সিদ্দিকী ৬০ বার কথা বলেছি। শেখ হাসিনার কথা না, আমি কাদের সিদ্দিকীর কিছু কথাও শুনতে হবে। এই সমাবেশ থেকে আমি বলছি- যে পুলিশ ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন, তাদের ঘুষের টাকা ফেরত দেব। আওয়ামী লীগের আমলে যারা পুলিশের চাকরি নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ফেরত দেব। কারণ মন্ত্রী, তার চ্যালা-চামুন্ডা, আওয়ামী লীগের হাফ নেতা ও পাতি নেতা মিলে ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছে। তাদের এই টাকা ফেরত দেয়া হবে।

শীত বারবার আসে, মাঘও বারবার আসে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২৩শে ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছেন। তাদের কাছে গিয়ে আমরা বলেছি- আমরা কথা বলতে চাই। আমাদের সমস্যা আছে। এগুলোর সমাধান হবে তার পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু তিনি তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। মান্না বলেন, আমি রাজশাহী এয়ারপোর্ট থেকে নেমে এই জনসভা পর্যন্ত আসতে ২ বার গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি একেবারে অপরিচিত নই। আমার গাড়ি কেন আটকাবে? তারা ভেবেছে সবাইকে বাধা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে। এটা ভেবে থাকলে তাদের আশায় গুড়েবালি। মান্না বলেন, খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই। মিথ্যা কথা বলবেন না। এক বনে দুই রাজা থাকতে পারে না। তেমনি এক দেশে দুই সংসদও থাকতে পারে না। আপনিও প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। পদত্যাগ করুন, নির্বাচন দিন। পদত্যাগ না করে ক্ষমতার ডান্ডা নিয়ে আমাদের পিঠে চড়বেন তা হতে পারে না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে যদি শেখ হাসিনা মনে করেন, এক মাঘে শীত কেটে যায়। ভুল করছেন। শীত বারবার আসে। মাঘও বারবার আসে। এক শীত খালেদা জিয়া কাটাবেন তো মনে রাখবেন আপনাকে কারাগারে ১০ শীত কাটাতে হবে। মান্না বলেন, আমরা কোনো হিংসা চাই না। 

ভোটের মতো ভোট করেন, আমরা ভোট করতে চাই। পারবেন না সবাই। সবাই মিলে নৌকা যাতে জিততে না পারে তার জন্য ভোট দেবেন না, ঐক্যবদ্ধ হবেন না, ঘর থেকে বেরুবেন না, ওই নৌকার পতন ঘটিয়ে তবেই ছাড়বো সেই পথে আমাদের যেতে হবে। তিনি বলেন, তফসিলের মাধ্যমে আপনারা এমন একটা ফাঁদ পেতেছেন যাতে আমরা নির্বাচনে যেতে না পারি। ওই ফাঁদ, ওই বেড়াজাল, ওই অত্যচার ছিন্নভিন্ন করে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। 

সরকার পালাবার পথ খুঁজছে: ডা. জাফরুল্লাহ 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের ভীত হলো পুলিশ, দুর্নীতি, অনাচার ও ঘুষ, গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার। এর বাইরে কিছু নেই। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে, বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও সব কিছু উপেক্ষা করে এত লোক এসেছেন। চিন্তা করে দেখুন- সরকার বাধা না দিলে আজ কি অবস্থা হতো। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এত লোককে কি গ্রেপ্তার করা যাবে? গ্রেপ্তার করা সম্ভব? সম্ভব না। সরকার যতই চালাকি করুক। তাদের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। আসুন, আপনারা মাঠ ছাড়বেন না। 

হাসিনার বাক্স থেকে নির্বাচনকে বের করতে হবে: মোশাররফ 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে পারে না। গত ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচনে যাননি বলে কোনো নির্বাচন হয়নি। এই সরকার জনগণের ভোটের অধিকারকে ভয় পায়। তারা প্রহসন করে আজ ক্ষমতায়। তারা রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। এই নির্বাচনকে হাসিনার বাক্স থেকে বের করে আনতে হবে। 

জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে: মওদুদ 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বর্তমান সরকার ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এবার আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে পার হতে দেব না। আমরা যদি মাঠে নামি জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে। এদেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গত ১০ বছরে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। সমানভাবে বিচার পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে। এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। মওদুদ বলেন, সন্ত্রাস ও সংকট এড়ানোর জন্য আমরা সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গত দশ বছরে হারানো গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন ফিরে পেতে দুই দফা সংলাপে বসেছি। প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও রাখেননি। বলেছিলেন সভা সমাবেশ ঠিকমতো করতে দেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে কথার বরখেলাপ করেছেন। একদিনে আমাদের ২২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের নেত্রীর ভালো চিকিৎসার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, এই কমিশন চোখেও দেখে না। কানেও শোনে না। আমরা তাদের তফসিল পেছানোর অনুরোধ করেছিলাম। তারা তা করেনি। এই নির্বাচন কমিশন সরকারের তল্পিবাহক। নির্বাচন কমিশন নাকি আজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা মিথ্যা কথা। মওদুদ বলেন, আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছিলাম কিন্তু সংলাপ সফল হয়নি। কারণ এই সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। 

যত বাধা দেয়া হোক কাজ হবে না: আব্বাস 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তারেক জিয়ার মুক্তি চাই। এই মুক্তি কার কাছে চান? আমরা কি তাদের মুক্তি দিতে পারি? পারি না। যখন এই শহরে আসি তখন দেখি কোনো লোক নেই জন নেই। যেন কারফিউ চলছে। জনসভায় কোনো লোককে আসতে দেবে না সরকার। তাই গাড়ি নেই। এর আগে বিভিন্ন শহরে যখন সমাবেশ করেছি। তখনও একই রকম কারফিউ জারি করা হয়েছে। এর পরও আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে দিয়ে বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ আসছে। এই মানুষ আসবেই। জোয়ার বন্ধ করা যাবে না। যত বাধা দেয়া হোক। কোনো কাজ হবে না। 

সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে জনগণ ক্ষমা করবে না: গয়েশ্বর 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন চিন্তা ধারার মানুষ কেন এক মঞ্চে। দেশের ঘটনা কি, আজকে গণতন্ত্র নিখোঁজ। আপনারা কি বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আজকে আপসহীন নেত্রী কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। সাত দফা না মানলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? বর্তমান নির্বাচন কমিশন কে এম নূরুল হুদা এবং শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক রহমান আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। 

আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে: মঈন 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের অধীনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কোনো মানুষ যায়নি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর-বিড়াল ঘুরেছে, তা আপনারা দেখেছেন। আর একতরফা নির্বাচন দেশের মানুষ হতে দেবে না। বিরোধী দলের ওপর হাজার হাজার মামলা ও হামলা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিনু বলেন, জাতীয় সব আন্দোলন রাজশাহী থেকে শুরু হয়েছে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনার থেকে শুরু। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার রক্তের ওপর রাজশাহী থেকে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সামনে অঙ্গীকার করেন- ’৫২-র, ’৬২-র, ’৬৯-এর, ’৭১-এর ও ’৯০-এর স্বৈরাচার বিদায়ের মতো কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, দেশমাতাকে মুক্ত করতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। 

চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন- গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি এমএ গোফরান, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম প্রতীক, নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, অধ্যাপক শাহজাহান আলী মিঞা, আমিনুল হক, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, কেন্দ্রীয় নেতা নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির রাজশাহী মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (একাংশের) শাহ আহমেদ বাদল, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া ও গণফোরামের রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পেয়ারা বক্তব্য দেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মন্টু প্রমুখ। জনসভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) আহ্বায়ক রিটা রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার তার দল ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয়। জনসভায় বিএনপি নেতা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মমিন তালুকদার খোকন, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলালুজ্জামান লালু, আবদুল লতিফ খান, আবদুল মান্নান তালুকদার, সিরাজুল হক, মাহমুদা হাবিবা, আবদুল মমিন তালুকদার খোকা, আকবর আলী, সেলিম রেজা হাবিব, নজরুল ইসলাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ ?উলফাত, হাসান জাফির তুহিন, ভিপি সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, রফিকুল করিম খান পাপ্পু, ফয়সাল আলিম, মজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন বুলু, পারভেজ আরিফিন সিদ্দিকী, জন গোমেজ, দেবাশীষ রায় মধু, খায়রুন্নাহারসহ কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগীয় নেতারা অংশ নেন। জনসভা উপলক্ষে মাদরাসা মাঠের চার পাশে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। 

পথে পথে বাধা, যানবাহন সংকট; তবু লোকে লোকারণ্য 

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা উপলক্ষে রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক পথের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটে সব ধরনের বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোনো রোডের বাস। পরিবহন নেতারা বলছেন, নাটোরে বাস শ্রমিকের ওপর হামলার ঘটনায় বাস বন্ধ আছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করেই আকস্মিকভাবে বাস চলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যানবাহন সংকট ও পথে পথে বাধা দেয়ার পরও দুপুর ১টার দিকেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জিরো পয়েন্ট, আলুপট্টি মোড়, রানী বাজার মোড়, জাদুঘর মোড়, সোনাদীঘি মোড় ও সাহেব বাজারসহ পুরো শহরে জনতার ঢল নামে। জনসভাটি ৭ দফা দাবিতে হলেও নেতা-কর্মীদের অনেকে হাতে দেখা গেছে বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের ছড়া ও জাতীয় পতাকা। জনসভায় বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে নেতাকর্মীরা মুহুমুর্হ স্লোগান দেয়। মাঠের দুপাশের দেয়ালে টানানো হয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছবি সংবলিত ব্যানার। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ০৯,২০১৮ 


No comments:

Post a Comment