সম্প্রতি পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কিছু বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা দু’দিনের কর্মবিরতির সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ চালক ও যাত্রীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়া এবং মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ছিল সবচেয়ে ঘৃণিত ও আপত্তিকর কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরও এখন পর্যন্ত এই ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দেখা যায়নি। সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি এতটাই নমনীয় আচরণ প্রদর্শন করে যে এতে মনে হয় সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের কাছে একধরনের জিম্মি হয়ে আছে। গতকাল বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, আইন মানতে হবে। আইন না মানার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে।
পথচারীদের মাঝেও আমরা দেখছি কানে হেডফোন লাগিয়ে এবং মোবাইলে কথা বলতে বলতে অসতর্কভাবে রাস্তায় চলাচল করতে। এতে করে প্রতিবছর অনেক সাধারণ মানুষসহ অনেক স্বপ্নময় তরুণের অকাল মৃত্যু ঘটছে। যা থেকে পরিত্রাণের জন্যে আইন পালনের পাশাপাশি সচেতনতাও তৈরি করতে হবে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ফলে দুর্ঘটনার কারণে বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয়ভাবে বাংলাদেশের নানা অর্জন থাকলেও সড়কের নিরাপত্তা বিধানে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি।
সেবার পরিবর্তে সড়ক পরিবহন সেক্টরে প্রতিনিয়ত চরম নৈরাজ্য ও প্রতিহিংসা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ কয়েকদিন পূর্বে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের সময়ে গাড়িচালক ও যাত্রীদের মুখে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয়ার দৃশ্য সবাইকে বিস্মিত না করে পারেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও এই ঘটনার দৃশ্যমান কোনো বিচার কিংবা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দেখতে পাইনি। দুর্বল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত রাস্তা, মহাসড়কে হাটবাজার বসা, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক আইন না মানা, ভুয়া লাইসেন্সধারী ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রম, বিআরটিএর ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামছে না। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। পথচারীদের মধ্যে জেব্রাক্রসিং-ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে বেপরোয়াভাবে চলাচল সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি করছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নগরে আপভিত্তিক যে রাইড শেয়ার চালু হয়েছে তার চালকদের সক্ষমতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস আগে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন পথ দেখালেও আমরা এখনো সচেতন হয়নি। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করা হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান কিরণ। তবে, এই আইনের কিছু বিষয় নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তারও অবসান হওয়া প্রয়োজন।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ১১, ২০১৮
No comments:
Post a Comment