Search

Sunday, November 11, 2018

AL ignores RPO, its charter

GRASSROOTS' ROLE IN NOMINATION


The ruling Awami League appears to have ignored the electoral law and its own charter in the nomination process for parliamentary candidates in the next national election as the party didn't allow its grassroots leaders to make preliminary selection of contenders.

Section 90B (iv) of the Representation of the People Order (RPO) empowers the grassroots of all registered political parties, including the AL, to play a role in choosing parliamentary candidates.

According to the RPO section, the grassroots will send a list of prospective candidates from each constituency to the party's central parliamentary board, which will finalise the nomination of candidates, taking the list into consideration.

The provision introduced before the 2008 national polls made it mandatory for the parliamentary board of a political party to finalise nomination from the lists.

It was introduced to curb alleged nomination trade and strengthen democratic practice in selecting parliamentary contenders of the political parties.

But the provision was later relaxed through an amendment, leaving the issue of picking candidates from the lists to the discretion of the political parties.   

In line with the RPO section, the AL included a provision in its constitution in 2008, empowering the grassroots to send lists of prospective candidates from each constituency to the central parliamentary board, which will finalise nominations from the lists, according to section 27 of the AL charter.

In fact, inclusion of such provision in the party charter is one of the criteria for getting registered with the Election Commission. Registration of a political party may be cancelled for violating the provision.

The AL largely followed the newly introduced provision in nominating its parliamentary candidates for the 2008 national polls. It had asked its grassroots committees to send lists of a maximum of five possible candidates from each constituency. But this time, the situation is different.

A number of AL grassroots leaders told this newspaper that they were not asked by the party to prepare any lists of parliamentary aspirants in their areas for sending those to the party's parliamentary board.

A day after the ruling AL started selling nomination forms among aspiring candidates, The Daily Star yesterday talked to more than a dozen grassroots leaders of the party in Rajshahi, Dinajpur, Comilla, Khulna, Jessore, and Chattogram.

“In the previous election [in 2008], the party central committee directed us to draw up a list of nomination seekers, so we prepared a list and forwarded it to the central committee," said AL lawmaker from Pabna-5 Golam Faruk Khandaker, also general secretary of the district AL unit.

Advocate Shakhawat Hossain, president of Chatmohor upazila AL unit, Mokhlesur Rahman, secretary of Ishwardi upazila AL unit and Al Mahamud Delwar, president of Santhia upazila AL unit, also confirmed that they didn't get any instruction to prepare lists of prospective candidates.

“We didn't hold any meeting to select possible candidates. We have confidence in the prime minister's decision on selection of our parliamentary candidate,” said Sahinuzzaman Shahin, general secretary of Sujanagar upazila AL unit in Pabna.

Talukder Abdul Khaleq, president of Khulna city AL, and Panchanon Biswas, president of Khulna district AL, also said the party high-ups didn't instruct them to make any list of prospective candidates.

M Salam, general secretary of Chattogram [north] district unit AL, said they had been directed to send a list of prospective candidates in the last local government polls. But they didn't get such an instruction for the next national polls.

Layeb Uddin Lablu, joint general secretary of Rajshahi district unit AL, said, "A few months ago, our party chief told us that she has employed different mechanisms to conduct surveys. She will nominate candidates on the basis of the survey findings."

Talking to this newspaper, former election commissioner Sohul Hussain said the EC should look into whether political parties are following the RPO provision.

Contacted, Rafiqul Islam, an election commissioner, said that if the EC intervenes in this matter, political parties would use different means to show that they have selected their candidates as per the grassroots' recommendations.

“Besides, the Election Commission does not have powers to take action against a political party if it violates the RPO provision,” he claimed.

Asked about the RPO provision, AL Presidium Member Abdul Matin Khashru said party President Sheikh Hasina is the chief of the party's nomination board, and she knows all about the grassroots leaders.

“She knows who have the possibility of winning the election as she keeps all information about the grassroots leaders throughout the year. She has all the details

“The party chief knows better than anyone about who are the party's prospective candidates in the next election ... This is our policy for selecting the prospective candidates,” he mentioned. 

Seeking anonymity, several grassroots leaders said the party high-ups didn't ask them to send lists possibly because it could intensify intra-party conflicts.

Now in each constituency, at least five to six AL leaders are in the race to obtain party nomination for contesting the national polls.

Over the last two days, around 3,200 AL leaders collected the forms, and 460 of them already submitted those to the party's election steering office in the capital's Dhanmondi area. 

The AL parliamentary board sits today to discuss how to scrutinise the forms of a big number of nomination seekers. 

“Tomorrow [today] we will set a modality to scrutinise the nomination forms and select the right candidates. Besides, we will decide whether to take interviews of the prospective candidates individually or group-wise,” AL Joint General Secretary Mahabubul Alam Hanif told this newspaper. 

[Our correspondents in Rajshahi, Pabna, Chittagong and Comilla contributed to this report.]

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 11, 2018

প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করলেন

ডক্টর তুহিন মালিক

পদত্যাগপত্র জমা দেয়া চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মিডিয়াকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। সকালে পদত্যাগের পরও একজন মন্ত্রী হিসেবেই একটি অনুষ্ঠানে যোগও দিয়েছেন। অথচ গণমাধ্যমে পুরো দেশবাসী দেখেছে চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ করেছেন।

আমাদের সংবিধানে ৫৮(১) নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।’ এখানে সংবিধানের ব্যাখ্যা অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়া মাত্রই মন্ত্রীদের পদ সংবিধান অনুযায়ী শূন্য হয়ে যাবে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা বা শর্ত প্রয়োগ করা হয়নি। অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজনের কথাও বলা হয়নি। এই অনুচ্ছেদে কোনো ‘যদি’ বা ‘তবে’ বা কোনো ফর্মালিটির উল্লেখ করা হয়নি। মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পৌঁছামাত্রই তাদের পদ শূন্য হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শুধু পোস্টবক্স হিসেবে কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়ার সাথে সাথে সাংবিধানিকভাবে চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের সবার পদ শূন্য হয়ে গেছে। এখন তারা আর কোনো ধরনের বেতন-ভাতা, বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার ও অন্যান্য সুবিধার কোনোটারই অধিকার রাখেন না। সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পদত্যাগ করার পর পদত্যাগী কোনো মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব পেতে হলে তাকে আবার সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের আওতায় নতুন করে আবার শপথ নিতে হবে ও শপথে স্বাক্ষর দিতে হবে।

আমাদের সংবিধান খুব পরিষ্কারভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও অন্যান্য মন্ত্রীর পদত্যাগকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে দেখিয়েছে। খেয়াল করার বিষয় হলো- সংবিধানের ৫৭(১)(ক) অনুচ্ছেদ মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হয় রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করলে। অপরপক্ষে মন্ত্রীদের পদ শূন্য হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করলে।

প্রশ্ন জাগতে পারে- এ দুই ক্ষেত্রে ভিন্নতা কেন? জবাব হলো- সংবিধান মতে, রাষ্ট্রপতি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেন। আর প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে ও বর্ণিত প্রক্রিয়ায় তিনি যেরূপ স্থির করবেন, সেরূপ মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন বিষয়। তাই সংবিধান প্রণেতারা প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ এই ক্ষমতা প্রয়োগের রক্ষাকবচের জন্যই মন্ত্রীদের পদ শূন্যের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক বলে রক্ষাকবচ দিয়েছেন। কেননা মন্ত্রীদের পদশূন্যতা যদি রাষ্ট্রপতির মর্জির ওপর শর্তযুক্ত থাকে, তা হলে সংসদীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আসলে অহরহ সংবিধানের দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করলেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন, মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলেও তারা নিয়মিত বেতনভাতা পাবেন, অফিস করবেন এবং ফাইলেও যথারীতি স্বাক্ষর করবেন। এটা কেমন হুকুম! যেখানে পদত্যাগ করার পর মন্ত্রীদের প্রত্যেকের পদ সংবিধান মতে শূন্য ঘোষিত হলো, সেখানে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে মন্ত্রীরা যদি অফিস করেন এবং ফাইলে স্বাক্ষর দিতে থাকেন, তা হলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধানের চরম লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন। কেননা পদত্যাগী মন্ত্রীরা সম্পূর্ণ অবৈধ বিধায় তাদের কেউ আর কোনো বেতনভাতা, বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার, অফিস করা, ফাইলে স্বাক্ষর করা ও অন্যান্য সুবিধার কোনোটাই করার অধিকার রাখেন না। 

সংবিধানের ৮৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সরকারি অর্থের রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ সংসদ দ্বারা প্রণীত আইনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হবে। এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করে পদত্যাগী মন্ত্রীদের ভরণ-পোষণের কোনো বিধান অদ্যাবধি তৈরি করেনি। তাই পদত্যাগী মন্ত্রীদের দেয়া সব বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অবৈধ। তাদের নীতিনির্ধারণী, ফাইলে স্বাক্ষর ও নোটিংসহ সব কাজকর্ম অবৈধ।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, প্রধানমন্ত্রী এক দিকে সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাতকে দিনে রূপান্তরিত করছেন, অন্য দিকে ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করেই চলেছেন।

  • লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ ১১ নভেম্বর ২০১৮

Largest wildlife sanctuary under threat

EDITORIAL

Is there no alternative to constructing a road through a government-declared wildlife sanctuary? The very idea of the R&H Department building a road through one of the largest secondary forests in the country—a sanctuary for a variety of flora and fauna—is extremely illogical and incongruous considering the relevant government policy. A good part of more than 900 acres of Hazarikhil Wildlife Sanctuary in Chattogram, which hosts 200 species of birds and animals and shelters 250 different varieties of trees, stands to be completely destroyed if the plan comes to fruition.

We understand that the project to link Fatikchhari Upazila with the main Chattogram Highway has been passed by the ECNEC. But how that could be so when there are clear instructions for obtaining the clearance of the Department of Environment (DoE) and the Forest Department (before such a project can be implemented) is beyond comprehension. As it stands, the project does not have the clearance of the DoE or the forest department, and no environmental impact study has been done either.

We wonder why one of the oldest sanctuaries in the country has to be defiled to build a link road when there is already an existing one. And why can't the existing one be developed further to take on increased volume of traffic? Shorter routes may have long-term consequences, as this project certainly will, if given the green signal; a complete destruction of the forest will be a matter of time only. As it is, forested land in our country is dismally below the ideal ratio, and depleting rapidly. The only rational thing for the government to do is to put down the errant plan firmly.

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 11, 2018

এ কেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?

সম্পাদকীয় 

‘বিচ্ছিন্ন’ রাজশাহী

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা জনগণের জানমাল হেফাজত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সেই জানমাল রক্ষার দোহাই দিয়ে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের চলাচলে বাধা দিতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু রাজশাহীতে শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করেছে, সেটি যেমন আইনবিরুদ্ধ, তেমনি নাগরিক অধিকার হরণের শামিল।

সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, জনসমাবেশে আগত লোকজনকে তারা পদে পদে হয়রানি করেছে, তল্লাশির নামে গন্তব্যে যেতে বাধা দিয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যেসব খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এর আগে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একই কাজ করেছে।

তবে রাজশাহীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই বাড়াবাড়ির পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরা কথিত ধর্মঘটের নামে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে রাজশাহীকে দুই দিন প্রায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বাইরে থেকে যেন শহরে কেউ আসতে না পারে। প্রথমে তাঁরা নাটোরে এক বাসচালককে মারধর করার অজুহাত দেখিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে মারধর বা লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ধর্মঘট নিয়ে পরিবহনশ্রমিক ও মালিকেরা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে এক অরাজক অবস্থা তৈরি হয়। এতে কেবল সমাবেশে আগত লোকজনই বাধাগ্রস্ত হয়নি, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

এত দিন গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তারের ঘটনার কথা আমরা শুনে এসেছি। এবার গায়েবি মারধরের দোহাই দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হলো। সরকার–সমর্থক পরিবহনশ্রমিক সংগঠনই ধর্মঘটের নামে রাজশাহীর জনজীবন অচল করে দিয়েছে, যেই সংগঠনের প্রধান হলেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। এর আগে সড়ক নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে তাঁর নেতৃত্বাধীন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করেছিল। এত বড় বেআইনি কর্মকাণ্ডের পরও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সরকার কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

আর ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিক সংগঠন এসব বেআইনি ও জবরদস্তি কর্মকাণ্ড এমন সময় ঘটিয়েছে, যখন সংলাপে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে কোনো ধরনের বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে সব দল সমান সুযোগ পাবে। এটাই কি সেই সমান সুযোগের নমুনা? সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক তফসিল ঘোষণার পর সমাবেশকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। সমাবেশ যদি অবৈধই হয়, তাহলে সরকার সেটি বন্ধের জন্য নির্দেশনা জারি করল না কেন? আর তফসিলের পর এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের; মন্ত্রী বা সরকারি দলের কোনো নেতার নয়।

যখন সরকার সমাবেশ করার অনুমতিই দিয়েছে, তখন সেই সমাবেশে আগত লোকজনকে বাধা দেওয়া বেআইনি এবং ধর্মঘটের নামে জনজীবন অচল করা সংঘবদ্ধ মাস্তানি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পুলিশের বাধা, তথাকথিত শ্রমিক সংগঠনের বল প্রয়োগ ও নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়ার পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাদের কর্মী ও সমর্থকেরা ট্রেন, ভ্যান, মাইক্রোবাস এমনকি দীর্ঘ পথ হেঁটেও সেখানে এসেছেন।

তাহলে সরকার কেন এই অপকৌশল নিল? কেন বারবার পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলা? একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইলে এমন অপকৌশল থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/  ১১ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচন অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সুজন


গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা সব দাবি এবং প্রত্যাশা পূরণ না হলেও বিরোধীদের নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, বিএনপি ইভিএমের বিরোধিতাসহ বেশকিছু দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এসব দাবি পূরণ না করলেও দলটির নির্বাচন বয়কট করা ঠিক হবে না

তিনি বলেন, সংসদ বয়কট, নির্বাচন বয়কটের মতো ঘটনা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চাঙ্গা করার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দাবি আদায় না হলেও মাঠে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই সঠিক কাজ হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে, গ্রহণযোগ্য দাবি আদায় না হলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করে কমিশন ও সরকারের বিরোধিতা করা যায়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও বা জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না বলেও মত দেন সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিতর্ক ও বিরোধিতা সত্ত্বেও নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমের ব্যবহারে কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তিনি।

ইভিএমের ব্যবহার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে বাধা হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সুজন সভাপতি ও ত্বত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২৩শে ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা বেশ তড়িঘড়ি হয়েছে। ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত একটি সংসদ বলবৎ থাকবে, সেখানে নির্বাচনের দু’একদিনের মধ্যেই আরেকটি সংসদ তৈরি হয়ে যাবে। প্রায় এক মাস সময়ে দুটি সংসদ বলবৎ থাকার এমন জটিল সমীকরণ এড়াতে নির্বাচন কমিশন আরো দেরিতে তফসিল ঘোষণা করতে পারতো বলেও তিনি জানান। 

হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার, আটক বন্ধ করতে হবে। সার্বিকভাবে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ছবি তোলা ও কেন্দ্রে প্রবেশসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করলে গণমাধ্যম তার সঠিক কাজটি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা’র নির্বাহী সভাপতি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগের নির্বাচনগুলো  থেকে দেখা যায়, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেউই জনগণের ম্যান্ডেটকে গুরুত্ব দেননি। ইতিবাচকভাবে ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়াকেও তারা সেভাবে গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেকোনোভাবে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আদালত জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দেবে- এটাই নিয়ম। কিন্তু সাংবিধানিক দোহাই দিয়ে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা ঠিক হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিসর ও মূল্যবোধ সংকুচিত হয়, এমন কোনো বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। আদালতের কাজ হলো দিকনির্দেশনা দেয়া।’ 

সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে তার কাজে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নির্বাচনের আগে ইভিএমের মতো বিতর্কিত বিষয়ে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প কাদের স্বার্থে করা হয়েছে- এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। অলিম্পিয়াডে সরকার, নির্বাচন ও রাজনীতি বিষয়ে লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন সারা দেশ থেকে আসা তরুণরা। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১১ নভেম্বর ২০১৮

জাতিসংঘের অগ্রাধিকার স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতির ওপর নজরদারি রয়েছে তাদের। শুক্রবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর  উপ-মুখপাত্র ফারহান হক। তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হলো বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাই আমরা বাংলাদেশের এসব ব্যবস্থাপনা নিয়ে অব্যাহতভাবে ‘স্টাডি’ করছি। লক্ষ্য রাখছি এসব অগ্রাধিকার সমুন্নত রাখা হচ্ছে কি না। আমরা এ বিষয়টিই দেখতে চাই। মনে করছি, এটা উপযুক্ত সময়ে হতে পারে।

ব্রিফিংয়ে তাকে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রেক্ষিত নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল এমন- ধন্যবাদ ফারহান আপনাকে। বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য। বড়দিনের সামান্য আগে ২৩শে ডিসেম্বর আগামী নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সংলাপে রয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু কোনো উপসংহারে পৌঁছা যায়নি অথবা বিরোধীদের কোনো দাবি মেনে নেয়া হয়নি। 

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করে দিয়েছেন। প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এখনও জেলে। এরই মধ্যে একপেশে নির্বাচনী শিডিউলের বিরোধিতা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে তারা সবার জন্য সমান ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবস্থান কী? মহাসচিব কি এ বিষয়ে জানেন? কারণ, জাতিসংঘ যেকোনো উপায়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে- তার এ প্রশ্নের জবাবে ফারহান হক ওই মন্তব্য করেন। 

‘সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি’


সম্প্রতি পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কিছু বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন আগে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা দু’দিনের কর্মবিরতির সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ চালক ও যাত্রীদের শরীরে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়া এবং মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ছিল সবচেয়ে ঘৃণিত ও আপত্তিকর কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরও এখন পর্যন্ত এই ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দেখা যায়নি। সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি এতটাই নমনীয় আচরণ প্রদর্শন করে যে এতে মনে হয় সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের কাছে একধরনের জিম্মি হয়ে আছে। গতকাল বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, আইন মানতে হবে। আইন না মানার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে।

পথচারীদের মাঝেও আমরা দেখছি কানে হেডফোন লাগিয়ে এবং মোবাইলে কথা বলতে বলতে অসতর্কভাবে রাস্তায় চলাচল করতে। এতে করে প্রতিবছর অনেক সাধারণ মানুষসহ অনেক স্বপ্নময় তরুণের অকাল মৃত্যু ঘটছে। যা থেকে পরিত্রাণের জন্যে আইন পালনের পাশাপাশি সচেতনতাও তৈরি করতে হবে। 

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ফলে দুর্ঘটনার কারণে বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতীয়ভাবে বাংলাদেশের নানা অর্জন থাকলেও সড়কের নিরাপত্তা বিধানে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। 

সেবার পরিবর্তে সড়ক পরিবহন সেক্টরে প্রতিনিয়ত চরম নৈরাজ্য ও প্রতিহিংসা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ কয়েকদিন পূর্বে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের সময়ে গাড়িচালক ও যাত্রীদের মুখে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয়ার দৃশ্য সবাইকে বিস্মিত না করে পারেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও এই ঘটনার দৃশ্যমান কোনো বিচার কিংবা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দেখতে পাইনি। দুর্বল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত রাস্তা, মহাসড়কে হাটবাজার বসা, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক আইন না মানা, ভুয়া লাইসেন্সধারী ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রম, বিআরটিএর ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামছে না। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। পথচারীদের মধ্যে জেব্রাক্রসিং-ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে বেপরোয়াভাবে চলাচল সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি করছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নগরে আপভিত্তিক যে রাইড শেয়ার চালু হয়েছে তার চালকদের সক্ষমতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস আগে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন পথ দেখালেও আমরা এখনো সচেতন হয়নি। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করা হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান কিরণ। তবে, এই আইনের কিছু বিষয় নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তারও অবসান হওয়া প্রয়োজন। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ১১, ২০১৮ 

Saturday, November 10, 2018

জনরায়ের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে


জনরায়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে জনগণের রায়ের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। গতকাল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, এই রাজশাহীবাসী অত্যন্ত লড়াকু মানুষ। বহুকাল ধরে আপনারা লড়াই সংগ্রাম করছেন।

মনে আছে, গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই রাজশাহীর কত ভাই জীবন দিয়েছে? তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের শপথ নিতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান? এ সময় নেতাকর্মীরা হাত উঁচিয়ে স্লোগানের মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা জানি আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। প্রতিদিন গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সহ্য করছেন। একটা মাত্র কারণ- আপনারা গণতন্ত্র চান। আপনাদের অধিকারটুকু ফিরে পেতে চান। সেজন্যই আজকে মামলা মোকদ্দমা দিতে দিতে সারা দেশের মানুষকে অস্থির করে তুলেছে সরকার।

এটা ছাড়া ওদের আর কোনো অস্ত্র নেই। এই অস্ত্র দিয়ে তারা বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে চায়। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। আজকের এই জনসভা তার প্রমাণ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করেছে এই সরকার। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। আজকের এই মঞ্চে একজনও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। 


রাজশাহীর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ কারাগারে রয়েছে। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের যত রাজবন্দি রয়েছে, সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। তবেই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের যে আলোচনা হয়েছে সেটা ফলপ্রসূ হবে। তবেই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, কথা খুব পরিষ্কার- নির্বাচনে সবার জন্য সমান মাঠ তৈরি করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরো কঠিন। আজকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- আমাদের স্বাধীনতা থাকবে কী থাকবে না। আমাদের সংগঠন করার অধিকার থাকবে কী থাকবে না। তিনি বলেন, এর আগে এই মাঠে রোডমার্চ করতে এসেছিলাম। তখন দেশনেত্রী আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি আজ কারাগারে। প্রচণ্ড অসুস্থ। অথচ ৭৩ বছর বয়সী এই মানুষটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তার জন্য কারাগারের অভ্যন্তরে ১০ বাই ২০ ফুটের একটি ছোট্ট ঘরে বিচারালয় স্থাপন করা হয়েছে। এই সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারের অন্ধকারে তিলে তিলে হত্যা করছে। যা বৃটিশ আমলে হয়নি, পাকিস্তান আমলে হয়নি। অথচ এই সরকার সেটাই করছে। 

২ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে সরকার: ড. কামাল

রাজশাহীর জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের অংশ নেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে পারেননি। তবে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। রাজশাহীর জনসভাকে ঘিরে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই তফসিলের মাধ্যমে সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা জনগণের স্বার্থের বিরোধী, সংবিধান বিরোধী ও গণতন্ত্র বিরোধী কাজ। 

ক্ষমতা ছাড়লে আওয়ামী লীগ লোক পাবে না: অলি 

এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, যে পার্লামেন্ট ব্যবস্থা দেখছেন তা খালেদা জিয়ার দেয়া। বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার ঘোষণা শুনে তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে জীবন দিতে গিয়েছিলাম। আজ ব্যাংকে টাকা নেই। দেশের মানুষ শান্তিতে নেই। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। আমি এর আগেও রাজশাহীতে জনসভায় এসেছি। আজকের মতো এত বড় জনসভা কোনো দিন দেখিনি। আপনারা ক্ষমতা থেকে গেলে এতগুলো লোক চোখে দেখবেন না। কর্নেল (অব.) অলি বলেন, নির্বাচন হবে কি না, নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো কি না এখনো সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে আমাদের বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তরুণদের প্রতি বলব, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেভাবে জান দিতে গিয়েছিলাম আপনাদেরকে সেই জান দেয়ার কথা বলব না। কিন্তু রাস্তায় তো সকলে দাঁড়াতে পারেন বেগম জিয়ার জন্য। একটু হাত তুলে প্রশাসনকে দেখান, প্রধানমন্ত্রী দেখুক- কতগুলো হাত, কতগুলো লোক। আপনারা ক্ষমতা থেকে গেলে এতগুলো লোক আসবে না। একটু জোরে তালি বাজান সরকার শুনক। 

আন্দোলনকে গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে: রব

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিলাম। দেশকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, নির্বাচনে আসতে দিন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করুন। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করুন। আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নিন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এই ৯০ শতাংশ মানুষের কথা না শুনে নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করব। এই আন্দোলনের জন্য মরতে হলে মরব, কিন্তু দাবি ছাড়ব না। রব বলেন, আমাদের দাবি ছিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন না। কিন্তু সেটা করেছেন। এখন নির্বাচন যদি না পেছান তাহলে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা হবে। বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ হবে। লংমার্চ হবে। এগুলো চলতে থাকবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। তা না হলে জনতার আদালতে বিচার হবে আপনাদের। দাবি আদায়ে রাস্তায় নামব। কী করবেন? জেলে নেবেন? আমি ৬ বার মারা গেছি। ১০ বছর এই রাজশাহীর জেলে ছিলাম। এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনকে গ্রামে-গঞ্জে, কৃষক-কামারসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। তিনি বলেন, জেগেছে জনতা। সরকারকে বলব, দেখে যান রাজশাহীর মাদরাসা মাঠ। পুলিশ দিয়ে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন তারপরও মাদরাসা মাঠে জায়গা নেই। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবির চলমান আন্দোলন সারাদেশে ‘গ্রামে-গঞ্জে’ ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

পুলিশকে ১০ লাখ টাকা করে ফেরত দেয়া হবে: কাদের সিদ্দিকী 

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবো বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে থাকবো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমান নিয়ে দ্বন্দ্ব করে যারা লুটে পুটে খাচ্ছে, আল্লাহ যদি আমাকে সময় দেয়, তাহলে সেই দ্বন্দ্ব আমি মিটিয়ে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া লাগাতার হরতাল দিয়েছিলেন, আমি উনাকে হরতাল প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি প্রত্যাহার করতে পারেননি। শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেননি। এত দিন পরে এবার আলোচনায় বসেছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেদিন প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনারা জিতে গেছেন। খালেদা জিয়া যেদিন কারাগারে যান, সেদিন তিনি বলেছিলেন- আমি যদি মারাও যাই তাহলেও তোমরা হরতাল দেবে না। তার এই অনুরোধ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের কোনো কারাগারে তাকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। 

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনারা যদি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চান তাহলে ঐক্যফ্রন্টকে অটুট রাখতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য ছটফট করতে হবে না। তাহলে আপনাদের লড়তে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজকের জনসভায় খালেদা জিয়ার মুক্তি স্লোগান উঠেছে। কিন্তু একবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ফ্রন্টের নেতাদের পক্ষে স্লোগান ওঠেনি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি নাকি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। কথাটা সত্য নয়। শেখ হাসিনাই প্রথম রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকের এই জনসভায় আসতে আমাকে কয়েকবার বাধা দেয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় শেখ হাসিনার ‘মাইট্টা’ পুলিশ বাধা দিয়েছে। অথচ এই পুলিশের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সংসদে আমি কাদের সিদ্দিকী ৬০ বার কথা বলেছি। শেখ হাসিনার কথা না, আমি কাদের সিদ্দিকীর কিছু কথাও শুনতে হবে। এই সমাবেশ থেকে আমি বলছি- যে পুলিশ ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন, তাদের ঘুষের টাকা ফেরত দেব। আওয়ামী লীগের আমলে যারা পুলিশের চাকরি নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ফেরত দেব। কারণ মন্ত্রী, তার চ্যালা-চামুন্ডা, আওয়ামী লীগের হাফ নেতা ও পাতি নেতা মিলে ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছে। তাদের এই টাকা ফেরত দেয়া হবে।

শীত বারবার আসে, মাঘও বারবার আসে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২৩শে ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছেন। তাদের কাছে গিয়ে আমরা বলেছি- আমরা কথা বলতে চাই। আমাদের সমস্যা আছে। এগুলোর সমাধান হবে তার পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু তিনি তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। মান্না বলেন, আমি রাজশাহী এয়ারপোর্ট থেকে নেমে এই জনসভা পর্যন্ত আসতে ২ বার গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি একেবারে অপরিচিত নই। আমার গাড়ি কেন আটকাবে? তারা ভেবেছে সবাইকে বাধা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে। এটা ভেবে থাকলে তাদের আশায় গুড়েবালি। মান্না বলেন, খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই। মিথ্যা কথা বলবেন না। এক বনে দুই রাজা থাকতে পারে না। তেমনি এক দেশে দুই সংসদও থাকতে পারে না। আপনিও প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। পদত্যাগ করুন, নির্বাচন দিন। পদত্যাগ না করে ক্ষমতার ডান্ডা নিয়ে আমাদের পিঠে চড়বেন তা হতে পারে না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে যদি শেখ হাসিনা মনে করেন, এক মাঘে শীত কেটে যায়। ভুল করছেন। শীত বারবার আসে। মাঘও বারবার আসে। এক শীত খালেদা জিয়া কাটাবেন তো মনে রাখবেন আপনাকে কারাগারে ১০ শীত কাটাতে হবে। মান্না বলেন, আমরা কোনো হিংসা চাই না। 

ভোটের মতো ভোট করেন, আমরা ভোট করতে চাই। পারবেন না সবাই। সবাই মিলে নৌকা যাতে জিততে না পারে তার জন্য ভোট দেবেন না, ঐক্যবদ্ধ হবেন না, ঘর থেকে বেরুবেন না, ওই নৌকার পতন ঘটিয়ে তবেই ছাড়বো সেই পথে আমাদের যেতে হবে। তিনি বলেন, তফসিলের মাধ্যমে আপনারা এমন একটা ফাঁদ পেতেছেন যাতে আমরা নির্বাচনে যেতে না পারি। ওই ফাঁদ, ওই বেড়াজাল, ওই অত্যচার ছিন্নভিন্ন করে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। 

সরকার পালাবার পথ খুঁজছে: ডা. জাফরুল্লাহ 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকারের ভীত হলো পুলিশ, দুর্নীতি, অনাচার ও ঘুষ, গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার। এর বাইরে কিছু নেই। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে, বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও সব কিছু উপেক্ষা করে এত লোক এসেছেন। চিন্তা করে দেখুন- সরকার বাধা না দিলে আজ কি অবস্থা হতো। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এত লোককে কি গ্রেপ্তার করা যাবে? গ্রেপ্তার করা সম্ভব? সম্ভব না। সরকার যতই চালাকি করুক। তাদের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। আসুন, আপনারা মাঠ ছাড়বেন না। 

হাসিনার বাক্স থেকে নির্বাচনকে বের করতে হবে: মোশাররফ 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে পারে না। গত ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচনে যাননি বলে কোনো নির্বাচন হয়নি। এই সরকার জনগণের ভোটের অধিকারকে ভয় পায়। তারা প্রহসন করে আজ ক্ষমতায়। তারা রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। এই নির্বাচনকে হাসিনার বাক্স থেকে বের করে আনতে হবে। 

জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে: মওদুদ 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বর্তমান সরকার ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এবার আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে পার হতে দেব না। আমরা যদি মাঠে নামি জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে। এদেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গত ১০ বছরে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। সমানভাবে বিচার পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে। এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। মওদুদ বলেন, সন্ত্রাস ও সংকট এড়ানোর জন্য আমরা সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গত দশ বছরে হারানো গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন ফিরে পেতে দুই দফা সংলাপে বসেছি। প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও রাখেননি। বলেছিলেন সভা সমাবেশ ঠিকমতো করতে দেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে কথার বরখেলাপ করেছেন। একদিনে আমাদের ২২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের নেত্রীর ভালো চিকিৎসার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, এই কমিশন চোখেও দেখে না। কানেও শোনে না। আমরা তাদের তফসিল পেছানোর অনুরোধ করেছিলাম। তারা তা করেনি। এই নির্বাচন কমিশন সরকারের তল্পিবাহক। নির্বাচন কমিশন নাকি আজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা মিথ্যা কথা। মওদুদ বলেন, আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছিলাম কিন্তু সংলাপ সফল হয়নি। কারণ এই সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। 

যত বাধা দেয়া হোক কাজ হবে না: আব্বাস 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তারেক জিয়ার মুক্তি চাই। এই মুক্তি কার কাছে চান? আমরা কি তাদের মুক্তি দিতে পারি? পারি না। যখন এই শহরে আসি তখন দেখি কোনো লোক নেই জন নেই। যেন কারফিউ চলছে। জনসভায় কোনো লোককে আসতে দেবে না সরকার। তাই গাড়ি নেই। এর আগে বিভিন্ন শহরে যখন সমাবেশ করেছি। তখনও একই রকম কারফিউ জারি করা হয়েছে। এর পরও আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে দিয়ে বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ আসছে। এই মানুষ আসবেই। জোয়ার বন্ধ করা যাবে না। যত বাধা দেয়া হোক। কোনো কাজ হবে না। 

সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে জনগণ ক্ষমা করবে না: গয়েশ্বর 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন চিন্তা ধারার মানুষ কেন এক মঞ্চে। দেশের ঘটনা কি, আজকে গণতন্ত্র নিখোঁজ। আপনারা কি বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আজকে আপসহীন নেত্রী কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। সাত দফা না মানলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? বর্তমান নির্বাচন কমিশন কে এম নূরুল হুদা এবং শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক রহমান আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। 

আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে: মঈন 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের অধীনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কোনো মানুষ যায়নি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর-বিড়াল ঘুরেছে, তা আপনারা দেখেছেন। আর একতরফা নির্বাচন দেশের মানুষ হতে দেবে না। বিরোধী দলের ওপর হাজার হাজার মামলা ও হামলা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিনু বলেন, জাতীয় সব আন্দোলন রাজশাহী থেকে শুরু হয়েছে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনার থেকে শুরু। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার রক্তের ওপর রাজশাহী থেকে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সামনে অঙ্গীকার করেন- ’৫২-র, ’৬২-র, ’৬৯-এর, ’৭১-এর ও ’৯০-এর স্বৈরাচার বিদায়ের মতো কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, দেশমাতাকে মুক্ত করতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। 

চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন- গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি এমএ গোফরান, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম প্রতীক, নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, অধ্যাপক শাহজাহান আলী মিঞা, আমিনুল হক, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, কেন্দ্রীয় নেতা নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির রাজশাহী মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (একাংশের) শাহ আহমেদ বাদল, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া ও গণফোরামের রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পেয়ারা বক্তব্য দেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মন্টু প্রমুখ। জনসভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) আহ্বায়ক রিটা রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার তার দল ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয়। জনসভায় বিএনপি নেতা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মমিন তালুকদার খোকন, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলালুজ্জামান লালু, আবদুল লতিফ খান, আবদুল মান্নান তালুকদার, সিরাজুল হক, মাহমুদা হাবিবা, আবদুল মমিন তালুকদার খোকা, আকবর আলী, সেলিম রেজা হাবিব, নজরুল ইসলাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ ?উলফাত, হাসান জাফির তুহিন, ভিপি সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, রফিকুল করিম খান পাপ্পু, ফয়সাল আলিম, মজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন বুলু, পারভেজ আরিফিন সিদ্দিকী, জন গোমেজ, দেবাশীষ রায় মধু, খায়রুন্নাহারসহ কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগীয় নেতারা অংশ নেন। জনসভা উপলক্ষে মাদরাসা মাঠের চার পাশে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। 

পথে পথে বাধা, যানবাহন সংকট; তবু লোকে লোকারণ্য 

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা উপলক্ষে রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক পথের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটে সব ধরনের বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোনো রোডের বাস। পরিবহন নেতারা বলছেন, নাটোরে বাস শ্রমিকের ওপর হামলার ঘটনায় বাস বন্ধ আছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করেই আকস্মিকভাবে বাস চলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যানবাহন সংকট ও পথে পথে বাধা দেয়ার পরও দুপুর ১টার দিকেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জিরো পয়েন্ট, আলুপট্টি মোড়, রানী বাজার মোড়, জাদুঘর মোড়, সোনাদীঘি মোড় ও সাহেব বাজারসহ পুরো শহরে জনতার ঢল নামে। জনসভাটি ৭ দফা দাবিতে হলেও নেতা-কর্মীদের অনেকে হাতে দেখা গেছে বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের ছড়া ও জাতীয় পতাকা। জনসভায় বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে নেতাকর্মীরা মুহুমুর্হ স্লোগান দেয়। মাঠের দুপাশের দেয়ালে টানানো হয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছবি সংবলিত ব্যানার। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ০৯,২০১৮ 


Thursday, November 8, 2018

শয়ে শয়ে গ্রেপ্তারের কারণ কী?


ঢাকার আদালতে ইয়ারুন বিবি ছবি: আসাদুজ্জামান

বৃদ্ধ ইয়ারুন বেগম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রধান ফটকের কাছে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুপচাপ বসে ছিলেন। বেলা দুইটার দিকে ইয়ারুন বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাতি নাসির কোনো রাজনীতি করেন না। তেজগাঁও থানার পুলিশ তাঁকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। থানায় গেলেও নাতির সঙ্গে দেখা হয়নি। এ জন্য আদালতে এসেছেন দেখা করতে।

ঢাকার আদালতে গতকাল বুধবার ৪৩১ জনকে হাজির করা হয়। গত মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোসহ নাশকতা ঘটানো এবং নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। 

৪৩টি মামলায় গ্রেপ্তার ৪৩৪ আসামির মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালত পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে ইয়ারুন বেগমের নাতি নাসিরও রয়েছেন।

রিমান্ড আবেদন না থাকায় নাসিরকে আর আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাস কক্ষে তোলা হয়নি। নাসিরের দেখা পাননি নানি ইয়ারুন। সন্ধ্যার আগে ইয়ারুন সজল চোখে বলেন, বিনা দোষে নাসিরকে ধরা হয়েছে।

অবশ্য মামলার কাগজপত্র বলছে, নাসিরকে তেজগাঁও থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই মামলায় গ্রেপ্তার ৪১ জনকে ঢাকার আদালতে হাজির করার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, গ্রেপ্তার করা আসামিরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা দিয়েছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার জন্য তাঁরা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত।


গ্রেপ্তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার সিএমএম আদালতে এসেছেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীপা বেগম। ছবি: আসাদুজ্জামান

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আইনজীবীরা আদালতে দেওয়া আরজিতে উল্লেখ করেন, হয়রানি করার জন্য নিরীহ লোকদের ধরে এনেছে পুলিশ। নাশকতার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন।

ঢাকার আদালতে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের আত্মীয়স্বজন আদালতে ভিড় করতে শুরু করেন। প্রিজনভ্যানে করে যখন আসামিদের আদালতের সামনে দিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন স্বজনেরা আসামিদের দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পারভেজ থাকেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। শ্যামপুর এলাকার একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। মঙ্গলবার পারভেজ শ্যামপুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

স্বামীকে একনজর দেখার জন্য ঢাকার আদালতে দুপুরের দিকে আসেন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীপা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে, তাঁর স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শ্যামপুরের একটি ডেকোরেটর দোকানে চাকরি করেন। রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।

একই থানায় গ্রেপ্তার হায়াতের স্ত্রী জাহানারা বেগম স্বামীকে দেখার জন্য আদালতে আসেন। তিনি বলেন, গরিব মানুষ। স্বামীর আয়ে সংসার চলে। কোনো রাজনীতি করেন না। রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।

নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের আত্মীয়স্বজন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কোনো রাজনীতির সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। বিভিন্ন পেশায় জড়িত।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একজনের আইনজীবী আরফান উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হয়রানি করার জন্য পুলিশ নিরীহ মানুষদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করছে। এগুলো অন্যায়, ঠিক না।’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ০৮,২০১৮ 

Tuesday, November 6, 2018

টার্নিং পয়েন্টে রাজনীতি

এতদিন যারা সিট বেল্ট বেঁধে ছিলেন তাদের অপেক্ষার শেষ হয়েছে। উত্তেজনাময়, শ্বাসরুদ্ধকর এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। এটা একেবারে অভিনব কোনো দৃশ্যপট নয়। অতীতের সঙ্গে মিল আছে, আবার নেইও। প্রতিটি মুহূর্তই ঘটনাবহুল। কিছু না কিছু ঘটছে। প্রকাশ্যে, পর্দার আড়ালে। একদিকে সমঝোতার চেষ্টা।

অন্যদিকে, সংঘাতের শঙ্কা। কেমন হবে সামনের দিনগুলো? আগামী ৪৮ ঘণ্টাতেই বহুকিছু পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে।

আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের শোডাউনের চেষ্টা করছে ঐক্যফ্রন্ট। কে না জানে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে হলেও জনসমাগমের বিষয়টি বিএনপির ওপরই নির্ভর করছে। এ সমাবেশ থেকে   সরকার এবং তৃণমূলের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত বার্তা দেবেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। পরদিন বুধবার সকালে গণভবনে ফের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসবে ঐক্যফ্রন্ট। ছোট পরিসরের ওই সংলাপে চূড়ান্ত ফয়সালার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি রূপরেখা হাজির করা হতে পারে। 

সংসদ ভেঙে দেয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প প্রস্তাব থাকতে পারে রূপরেখায়। ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এ জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে দেয়ার বিকল্প নেই। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মত দিয়েছেন, সংবিধানের অন্তত ১০ জায়গায় সংসদ ভেঙে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। 

এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, এ নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা আছে। তবে গতকাল তিনি বলেছেন, বিএনপি কি প্যারোলে মুক্তি চেয়েছে? আপনারা কেন প্রশ্ন করছেন? প্যারোলে কি ইলেকশন করা যায়? স্বল্প সময়ের জন্য যেমন আত্মীয় মারা গেলে বা দেশে না হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সে ধরনের দাবি তো বিএনপি করেনি। আমরা গায়ে পড়ে কেন প্যারোলে মুক্তি দেয়ার কথা বলবো? একটি সূত্র অবশ্য বলছে, পর্দার আড়ালে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে একধরনের আলোচনা হয়েছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন এ বিষয়ে সায় দেননি।

বাংলাদেশে সংলাপের ইতিহাস সুখকর নয়। অতীতে কোনো সংলাপই সফল হয়নি। তবে এবারের সংলাপ নানা কারণেই ব্যতিক্রম। এবারই প্রথম বিরোধী পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়। আর সরকার পক্ষ এতে সাড়া দেয় খুবই দ্রুত। দ্বিতীয়ত, শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমবারের মতো সংলাপে অংশ নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বরফ এরই মধ্যে গলতে শুরু করেছে। তবে কতটুকু গলবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই শঙ্কা আছে। আশার কথা হচ্ছে, দুই পক্ষই এরই মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। শুরুতে সরকার পক্ষ বলেছিল, সাত দফার এক দফাও মানা হবে না। কিন্তু এখন তারাই বলছেন, কিছু কিছু দাবি এরই মধ্যে আংশিক মানা হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টও সাত দফায় ছাড় দিতে পারে। সংসদ ভেঙে দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় বিরোধী দল বা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দেয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তি, মামলা, ধরপাকড় বন্ধের মতো দাবিগুলো মেনে নিলে ঐক্যফ্রন্ট সমঝোতায় যেতে পারে।

সে যাই হোক সরকার ও বিরোধীপক্ষ  এক সপ্তাহের মধ্যে দুইবার বৈঠকে বসাও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে বন্দি থাকলেও এটা অস্বীকার করার জো নেই, তার অনুমতিতে বিএনপি সংলাপে অংশ নিচ্ছে। আর ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নিয়ামক শক্তি যে বিএনপি সে কথা আগেই একবার বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই পক্ষ কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিলেও ক্ষমতার প্রশ্নে এখনো তারা অনড়। আর এ বিষয়টিই বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টকে বিকল্প চিন্তার পথেও নিয়ে যাচ্ছে। এমনিতে রাজনীতিতে এখনো সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণ একশ’ ভাগ। ভোটের জোয়ারে পোস্টারে ঢেকে গেছে রাজধানীর দেয়াল। কিন্তু সেখানে সবই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছবি।

বিরোধীদের কোনো ছবি দেখা যায় না। দেশের চলমান রাজনীতির এটি একটি প্রতীকী চিত্রও বটে। এই অবস্থায় বিকল্প চিন্তাও রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। তাদের কেউ কেউ বলছেন, সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা করে দেয় তবে কঠোর আন্দোলনে নামা ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো বিকল্প থাকবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের ফল জানাবেন। কিন্তু সংলাপের ফল কী হবে তার দৃশ্যপট আসলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমনকি বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতির দৃশ্যপটও। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই- এ কথাটিও শেষ কথা নয়। নাটকীয়ভাবে উভয়পক্ষ যদি সমঝোতায় পৌঁছায় তবে নির্বাচনী ট্রেনে উঠে যাবে বাংলাদেশ। আবার তৈরি হবে ভোট উৎসবের পরিবেশ। যে উৎসবে অপেক্ষায় বহুদিন ধরে মানুষ। আর সমঝোতা না হলে পুরনো দিনের রাজনীতি হয়তো আবার ফিরে আসবে। যা আসলে জনগণের জন্য সুখকর নয়। 

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/নভেম্বর ০৬ ২০১৮