আব্বাস উদ্দিন নয়ন
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে ২০১১ সালে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্প নেয় সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি নেয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত অর্থ দেয়নি সংস্থাটি। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ফরাসি কোম্পানি ওবারথার টেকনোলজিসের পাওনা পরিশোধে সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতিরও আশঙ্কা করছে ইসি।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ওবারথার টেকনোলজিসকে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে না পারলে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি ভঙ্গ হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হতে পারে। অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো চিঠিতে এসব কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও আইডিইএ প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নয় কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণ এবং ১০ কোটি লেমিনেটিং আইডি কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণে ২০১১ সালে ওবারথার টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। ১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার এ চুক্তির মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্বব্যাংক। এ কারণে ওবারথার টেকনোলজিসের পুরো পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমতাবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাত থেকে নতুন বরাদ্দ চাওয়া হয়। তবে চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাতের বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা দিতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের কথা বলা হলেও নির্ধারিত সময়ে তা পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।
অর্থ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে ইসি বলেছে, স্মার্ট আইডি কার্ড প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় সৃষ্ট বিরোধ সমাধানে গত ১০ অক্টোবর ওবারথার টেকনোলজিস ও নির্বাচন কমিশন একটি চুক্তি সই করে। চুক্তিতে ফরাসি কোম্পানির বকেয়া পাওনা কমিয়ে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই অর্থের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ১২ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ২২০ কোটি টাকা ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে আইনি জটিলতায় পড়বে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো রকম তিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে ফরাসি ওই কোম্পানির পাওনা পরিশোধে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি সম্মতি দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর সম্মতির আলোকে পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা জরুরি।
এদিকে অর্থমন্ত্রী সম্মতি দিলেও নতুন করে কোনো খাতে হঠাৎ বরাদ্দ দেয়ার জন্য অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাতের বাজেট না থাকায় তা দিতে পারছে না অর্থ মন্ত্র্রণালয়। এমতাবস্থায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শও দেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। তবে সেখান থেকে বরাদ্দ নিয়ে ওবারথার টেকনোলজিসের পাওনা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, আইডিইএ প্রকল্পটি এখনো চলমান। ফলে প্রস্তাবিত ওই দায় প্রকল্পের আওতায় পরিশোধ হওয়া নিয়মসিদ্ধ। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটের (২০১৮-১৯) অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাতের অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে কোনো বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
- কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮