Search

Monday, December 3, 2018

স্মার্ট এনআইডি প্রকল্প - বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধে সংকটে ইসি

আব্বাস উদ্দিন নয়ন

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে ২০১১ সালে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্প নেয় সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি নেয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত অর্থ দেয়নি সংস্থাটি। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ফরাসি কোম্পানি ওবারথার টেকনোলজিসের পাওনা পরিশোধে সংকটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতিরও আশঙ্কা করছে ইসি।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ওবারথার টেকনোলজিসকে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে না পারলে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি ভঙ্গ হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হতে পারে। অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো চিঠিতে এসব কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও আইডিইএ প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নয় কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন, মুদ্রণ ও বিতরণ এবং ১০ কোটি লেমিনেটিং আইডি কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণে ২০১১ সালে ওবারথার টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। ১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার এ চুক্তির মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্বব্যাংক। এ কারণে ওবারথার টেকনোলজিসের পুরো পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমতাবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাত থেকে নতুন বরাদ্দ চাওয়া হয়। তবে চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাতের বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা দিতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের কথা বলা হলেও নির্ধারিত সময়ে তা পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।

অর্থ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে ইসি বলেছে, স্মার্ট আইডি কার্ড প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় সৃষ্ট বিরোধ সমাধানে গত ১০ অক্টোবর ওবারথার টেকনোলজিস ও নির্বাচন কমিশন একটি চুক্তি সই করে। চুক্তিতে ফরাসি কোম্পানির বকেয়া পাওনা কমিয়ে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই অর্থের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ১২ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ২২০ কোটি টাকা ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে আইনি জটিলতায় পড়বে নির্বাচন কমিশন।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো রকম তিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে ফরাসি ওই কোম্পানির পাওনা পরিশোধে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি সম্মতি দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর সম্মতির আলোকে পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা জরুরি।

এদিকে অর্থমন্ত্রী সম্মতি দিলেও নতুন করে কোনো খাতে হঠাৎ বরাদ্দ দেয়ার জন্য অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাতের বাজেট না থাকায় তা দিতে পারছে না অর্থ মন্ত্র্রণালয়। এমতাবস্থায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শও দেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। তবে সেখান থেকে বরাদ্দ নিয়ে ওবারথার টেকনোলজিসের পাওনা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, আইডিইএ প্রকল্পটি এখনো চলমান। ফলে প্রস্তাবিত ওই দায় প্রকল্পের আওতায় পরিশোধ হওয়া নিয়মসিদ্ধ। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটের (২০১৮-১৯) অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা খাতের অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে কোনো বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮

মালয়েশিয়ায় গমন - দশ রিক্রুটিং এজেন্সিকে ৭৫০ কোটি টাকা দিয়েও অনিশ্চিত ২৫০০০ কর্মী

মনজুরুল ইসলাম 


মালয়েশিয়ায় কাজের অনুমতিপ্রাপ্তদের দেশটিতে প্রবেশের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। বেঁধে দেয়া এ সময় শেষ হলেও জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে ২৫ হাজার কর্মীকে পাঠাতে পারেনি ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি। এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন এসব বিদেশ গমনেচ্ছু। যদিও তাদের কাছ থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি সংগ্রহ করেছে ৭৫০ কোটি টাকার বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শ্রমিক পাঠাতে না পারলে চাহিদাপত্র বাতিল হওয়ার কথা উঠেছে। এটি হলে অপেক্ষমাণ শ্রমিক, ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীসহ অনেকেই বিপাকে পড়বেন।

‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে গত দেড় বছর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে আসছিল ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট। এ পদ্ধতিতে সিন্ডিকেটটি সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের অতিরিক্ত আদায় করেছে শ্রমিকপ্রতি গড়ে ৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে অনিশ্চয়তায় পড়া ২৫ হাজার বিদেশ গমনেচ্ছুর কাছ থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি আদায় করেছে ৭৫০ কোটি টাকার বেশি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত এ সিন্ডিকেটের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি হলো— ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ।

সিন্ডিকেটভুক্ত একটি রিক্রুটিং এজেন্সির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, এখনো প্রায় ২৫ হাজার কর্মী যাওয়ার অপেক্ষায়। তাদের নামে কলিং ও মেডিকেলসহ সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে। তার পরও যেতে পারছেন না। এ সময়ের মধ্যে ঢাকার মালয়েশিয়ান হাইকমিশন থেকে ঠিকমতো স্ট্যাম্পিং না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নতুন করে যদি মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে নেয়া না যায়, তাহলে এসব কর্মীর যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

তবে চাহিদাপত্র পাওয়া এ কর্মীরা যাতে দ্রুত দেশটিতে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে জরুরি ভিত্তিতে ‘স্পেশাল সেল’ খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। যেসব কর্মীর কলিং ও ভিসা স্ট্যাম্পিং হয়েছে, তারা আসতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে দূতাবাস কাজ করছে।

রিক্রুটিং এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, অপেক্ষমাণ শ্রমিকের বিষয়ে মালয়েশিয়া থেকে একটি মেইল পাঠানো হয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে। তাতে বলা হয়েছে, যেসব শ্রমিকের নামে বৈধ ভিসা ও ডকুমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে, তাদের মালয়েশিয়া আসার (ফ্লাইট) অন্তত তিনদিন আগে সিনারফ্যাক্স অফিসে বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। তবে মালয়েশিয়া সরকারের ভাষ্য নয় এটি।

২০১২ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চুক্তি করে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জিটুজি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে দেশটিতে ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিক যান। আর ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠিয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৯ জন শ্রমিক। ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে গত ১৪ আগস্ট এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে জিটুজি প্লাস থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। মূলত ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত ছিল মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে গড়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বাংলাদেশ অংশে কাজ করেছে এ ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটটি। এ চক্র ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীপ্রতি আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

হঠাৎ করে কর্মী নেয়া বন্ধের সিদ্ধান্তে ১ সেপ্টেম্বরের আগে কাজের অনুমতি পাওয়া ৭০ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়ায় যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল হলেও গত ৩০ আগস্টের আগে যেসব বাংলাদেশী কাজের অনুমতিপত্র পেয়েছেন, তাদের সবাই মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করবে দেশটির সরকার। তবে এখন পর্যন্ত যেতে পারেননি অনুমতিপত্র পাওয়া প্রায় ২৫ হাজার কর্মী।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জিটুজি সমঝোতায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার খরচ নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক অফিস আদেশের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পুরুষ কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় নির্মাণ বা কারখানা শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার ও কৃষি শ্রমিকের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণের জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় আলোচনা করে চূড়ান্ত করার কথা জানানো হয়। যদিও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মালয়েশিয়ায় পুরুষ শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তাই জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নির্ধারিত খরচ এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৫৭৫ টাকাই বহাল রয়েছে।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০ ডিসেম্বর ২০১৮

Little impact on loan rescheduling

NATIONAL ELECTION

Bankers' hopes of making substantial loan recovery in the lead up to the polls did not come about as many sharp-witted election candidates rescheduled their loans earlier in the year to keep their nomination unproblematic.

No loan defaulter is allowed to contest in the national election as per the Representation of the People Order (RPO). As a result, there is a flurry of loan rescheduling in the run up to the submission of nomination papers. To reschedule loans, a down payment of 10 to 30 percent is needed, and banks were hoping a similar pattern would ensue this year too.

But, there was no such rush.

State-owned Sonali, Bangladesh's largest bank, rescheduled loans of 10 defaulters against which it recovered Tk 17 crore. Its fellow state banks Agrani and Rupali rescheduled loans of three and seven defaulters respectively, against which they recovered about Tk 2 crore and Tk 5 crore.

Private banks Prime, Pubali and Dhaka rescheduled loans of about 12 defaulters and recovered Tk 10 crore altogether.

In what was a new headache for banks, many election candidates got stay orders from court instead of seeking rescheduling: their loans were already rescheduled thrice, the maximum allowed by Bangladesh Bank rules.

Between November 8 and November 27, a total of 202 applications were made for loan rescheduling, according to a high official of the Bangladesh Bank.

The central bank also formed a separate team and directed it to give permission for rescheduling if there were no major violations in the applications. Some 42 applications were turned down as they applied too close to the deadline for submission of nomination papers of November 28, leaving the central bank with no time to study their papers.

The RPO this time though allowed candidates to get their loans rescheduled until a day before the submission of nomination papers. The previous cut-off was one week. A total of 3,056 nomination papers were submitted this time, and the scrutiny of the nomination papers was held yesterday.

Most of the candidates were rejected on grounds of default loans.

Agrani, Janata, Rupali and BASIC Banks reported 40 persons to the returning officers as defaulters.

“We made an effort for loan recovery eyeing the election,” said Zaid Bakht, chairman of Agrani Bank. Agrani Bank rescheduled the loans of defaulters who applied following the rules and those who did not fall under the rules were referred to the BB.

But the number of loan defaulters with the bank who sought nomination was small, so its recovery amount was also small, according to Bakht.

Some heavyweight candidates got their loans rescheduled earlier in the year to keep their candidacies unproblematic. For instance, Salman F Rahman, who got a nomination ticket from Awami League, is the vice-chairman of Beximco Group.

Beximco Group is the parent company of Beximco Limited and the majority shareholder of GMG Airlines, and both the companies got their loans with Sonali Bank rescheduled earlier this year.

  • Courtesy: The Daily Star /Business/ Dec 03, 2018

Private credit growth on downward slope


Private sector credit growth remained slow in October as bankers lent cautiously ahead of polls.

In October, credit growth stood at 14.7 percent, which is the same as in the previous month, according to data from the central bank.

Slow business expansion ahead of the national election convinced bankers to reduce lending, said Syed Mahbubur Rahman, managing director of Dhaka Bank. Moreover, the market remained tighter as government borrowing started picking up again ahead of the polls.

The government is likely to borrow about Tk 13,000 crore from banks in December, which will make the money market tighter. Thanks to the rise in borrowing the interest rate of deposits surged to 9 percent in recent months, he said.

On June 21, the Bangladesh Association of Banks, a forum of directors of private banks, decided to lower the interest rates on lending and deposit to 9 percent and 6 percent respectively. The new rates came into effect on July 1.

The average interest rate on deposits stood at 5.25 percent in October, up from 4.89 percent a year earlier, according to the central bank. Slow import growth also helped in keeping the credit growth steady, he added.

Import growth in the first quarter of fiscal 2018-19 stood at 11.48 percent, in contrast to 28.39 percent recorded a year earlier.

Public sector borrowing, which remained negative for long, logged in 2.6 percent growth in October, but it remains well below the 8.60 percent ceiling set for the first half of the fiscal year.

Anis A Khan, managing director of Mutual Trust Bank, echoed the same as Rahman about the cautious stance of bankers ahead of the polls.

“Moreover, the slow deposit growth made bankers coy about lending,” he said, adding that the credit growth will start looking up soon after the polls.

The deposit growth is slow because cash circulation amongst public ramps up ahead of election, according to Khan.

  • Courtesy: The Daily Star /Business/ Dec 03, 2018

Another alarm rings over banks' condition

EDITORIAL

Regulators, are you listening?

Bangladesh's banking system has been put on “negative watch” by the global ratings agency, Moody's Investors Service, despite the country's impressive economic performance and strong economy. The downgrading comes in the wake of worsening asset quality, according to one of its analysts, caused by underlying weakness in corporate governance within the banking sector, which led to non-performing loan ratios to increase to 10.4 percent as of June.

Earlier this year, three global rating agencies—Moody's, Standard & Poor's and Fitch—had identified poor governance standards and weak financial health as significant risk factors for the country's banking sector. Something that experts here have been warning the authorities of, along with greater risks to the wider economy as a result, without success. Even after years of mismanagement and corruption in the sector, which saw the government giving around Tk 13,660 crore of taxpayers' money in handouts to the ailing banks between 2011 and 2018, nothing, it seems, has changed.

Meanwhile, as Moody's pointed out, the worsening asset quality will lead to credit costs rising. Meaning that the average person will now have to deal with the double whammy of borrowing at higher costs and have taxpayer money doled out to troubled banks. State-owned banks, moreover, despite the massive bailout money they have been given over the years, will “remain undercapitalised” and “dependent” on capital infusion from the government, all because the regulating authorities have failed for years on end to address the root problems that have plagued the sector.

As repeated in this column, in order to prevent a real disaster in our banking sector, the regulators immediately need to do their job of enforcing banking rules, instead of making “exceptions” for special interests. For that, the government at large needs to depoliticise the sector, as enforcing rules for the rich and the powerful will require the type of political will that we, unfortunately, are yet to see.
  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 03, 2018

নির্বাচনী ইশতেহার - তিন দফা থাকতে হবে

আব্দুল কাইয়ুম

কোন তিন দফা? কত দফাই তো ভেসে গেল, এখন আবার কোন দফা?

জানি, অনেকে এ রকমই ভাববেন। এখন সব দল ও জোট ইশতেহার তৈরি করছে। অনেকের করা শেষ। সেখানে অনেক বড় বড় কথা থাকবে জানি। উন্নয়ন, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি, আয়-আয়ু বৃদ্ধি। দেশে আর গরিব থাকবে না। কত কিছু।

এগুলো তো থাকতে হবেই। তবে অন্তত তিনটি বিষয়ে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়। আপনি যদি ক্রাউড সোর্সিং করেন, আর দেশের অর্ধেক নারীসমাজের মতামত নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন, তাহলে প্রায় শতভাগ বলবে নারী নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। শুধু নারী কেন, শহরের বস্তি, গ্রামের গরিব জনগোষ্ঠী একই কথা বলবে।

ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন চলছে। বাসে নারীদের নির্যাতন, এমনকি হত্যা করা হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্যাতিত নারীদের মামলার মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বিচার ও অপরাধীর শাস্তি হয়। ৯৭ ভাগ মামলার শুনানিই হয় না। এই যদি হয় দেশের অবস্থা, তাহলে উন্নয়ন হবে কীভাবে?

তাই নির্বাচনী ইশতেহারে পরিষ্কার লিখে দিন যে নারী নির্যাতনকারী, বাল্যবিবাহে মদদদানকারী, মাদক ব্যবসায়ী কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেব না। আর ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে থাকলে প্রত্যাহার করে নিন। এখনো সে সময় আছে। নৈতিক স্খলনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীর আবেদন বাতিল করতে পারেন। কিন্তু নৈতিক স্খলনের বিস্তৃত সংজ্ঞা নেই। এটা অবিলম্বে করা দরকার। শুধু দুর্নীতি, ঋণখেলাপ নয়, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বৈষম্য—এসবই নৈতিক স্খলন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ভারতে এটা করা হয়েছে।

নারী নির্যাতনকারীদের আইন প্রণয়নকারী হতে দেওয়া যাবে না। তাঁদের নির্বাচনে আসতে দেওয়া যাবে না। এটাই মূল কথা। এ রকম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পরপর চার দিন প্রথম আলোর উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক হয়ে গেল। আমাদের সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও ছিল। অ্যাকশনএইড, ইকো কো-অপারেশন, আইআইডি, ইউএনএফপিএসহ আরও কিছু সংস্থা। ওরা কাজ করে নারী নির্যাতন রোধে কার্যকর উপায় নিয়ে। প্রবাসী কর্মী ও অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে। খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়েও তারা কাজ করে। তারা মনে করিয়ে দিয়ে গেল, নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়গুলো যেন জোরেশোরে আনা হয়।

বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে সেদিন আইনজীবী তানিয়া আমীরের কথাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিল। একদম ঠিক। প্রভাবশালী কেউ একজন বউ পেটাবেন, যৌতুকবাজি করবেন, আবার নির্বাচনও করবেন? সেটা তো হতে পারে না। প্রার্থীকে হতে হবে ‘ক্লিন পারসন’। এর ওপরে কথা নেই।

যেমন ধরা যাক বিদেশে যাঁরা কাজ করতে যাচ্ছেন তাঁদের কথা। ওরা কেমন আছেন? বিশেষভাবে নারী শ্রমিকদের সমস্যা প্রকট। ওদের মানসম্ভ্রমও খোয়াতে হয়। সেই সব করুণ কাহিনি আমরা জানি। প্রতিকার কী? বেসরকারি সংস্থা আইআইডির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বেশ কিছু প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার আগে প্রত্যেক কর্মী নিজ নিজ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে নাম রেজিস্ট্রি করিয়ে যাবেন। কোথায়, কোন ঠিকানায়, কার মাধ্যমে যাচ্ছেন, তার একটা ডেটাবেইস থাকবে। কেউ প্রতারিত হলে সেই ডেটাবেইস থেকে তথ্য বের করে তাঁকে সরকার সহায়তা দিতে পারবে।

ধারকর্জ করে, জমি বিক্রি করে হয়তো যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষাবঞ্চিত। গ্রামের পরিচিত কারও মাধ্যমে বিদেশে চাকরির ভিসা সংগ্রহ করেছেন। সেই ভিসা কিনতে হয়েছে লাখ লাখ টাকায়। যদিও সরকারের কথা অনুযায়ী সেটা ৩০ বা ৫০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তব হলো, একশ্রেণির দালালের পাল্লায় পড়ে তাঁদের সব খোয়াতে হয়। এর কি প্রতিকার নেই? বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সরকার অবশ্য বলছে বিদেশে কর্মীদের সহায়তার জন্য বিশেষ উদ্যোগের কথা। কিন্তু আসলে তো সব দূতাবাসে জনবলের ঘাটতি একটা বিরাট সমস্যা।

আমরা সব সময় বলি প্রশিক্ষণের কথা। একটু প্রশিক্ষণ থাকলে বিদেশে উন্নত মানের চাকরি করতে পারবে। ভালো বেতন ও মর্যাদা পাবে। এটাই আমাদের সাধারণ ভাবনা। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি, কর্মীরা মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে কোন পদের ভিসায় চাকরি করতে যায়? ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর রাইটস অব বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টসের (ওআরবি) চেয়ারম্যান বললেন, এই সব ভিসা তো সাধারণ লেবারের ভিসা। এই ভিসায় প্রধানত ক্লিনারের কাজই জোটে। সেখানে উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কোন উপকারটা আমরা করতে পারব? চাকরির ভিসা তো ক্লিনারের। তাই দেখা যাচ্ছে গোড়ায় গলদ। আমরা দেখছি না, ভিসা কে আনছে আর কোন ধরনের ভিসা আনা হচ্ছে। আমাদের দরকার উন্নত মানের চাকরির ভিসা। আর তখনই কর্মীদের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ কাজে লাগবে। দেশের মানুষ বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ কাজ পাবে। আর সেটা করার অঙ্গীকার আজ রাজনৈতিক দলগুলোকে করতে হবে। তাদের ইশতেহারে এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রায় দেড় কোটি কর্মী বিদেশে চাকরি করছেন। তাঁদের সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ। ওঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রায় ৮ শতাংশ জোগান দেয়। যদি একটু ভালো প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও উন্নত মানের চাকরিতে তাঁদের পাঠানো হয়, তাহলে রেমিট্যান্স এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ইশতেহারে আরেকটা বিষয় আনতে হবে। খাদ্য অধিকার আইন যেন আগামী সংসদে পাস হয়। আমাদের দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভুক্ত কেউ নেই। কিন্তু অধিকারের প্রশ্ন অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের গোলটেবিল বৈঠকে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, শুধু তিন বেলা ভাত খাওয়াই যথেষ্ট নয়। সুষম খাদ্য ও পুষ্টিও চাই। আর তা ছাড়া আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্য রয়েছি। সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

সেদিন আলোচনায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেছেন, আমাদের সোশ্যাল সেফটি নেট রয়েছে। সেই সহায়তা প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে পৌঁছানোর ডিজিটাল ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এটা সুসংবাদ। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, সরকারের কার্যক্রমগুলোকে একটি
সমন্বিত কর্মসূচির মধ্যে আনতে হবে। যেন কেউ বঞ্চিত না হয়।

আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকার করেছি। এর অনেক বিষয়ের মধ্যে মূল কথাই হলো দারিদ্র্য কমিয়ে আনা। কেউ যেন পেছনে পড়ে না থাকে।

আমাদের কথা হলো, এই তিন দফা যেন পানিতে না পড়ে। এগুলো গণমানুষের দাবি।

  • আব্দুল কাইয়ুম, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮

Sunday, December 2, 2018

সওজের নানা প্রকল্প - ব্যয় আছে, সেবা নেই

শামীম রাহমান

উদ্দেশ্য ছিল আরিচা-নগরবাড়ী ও দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী ফেরিপথের দূরত্ব কমানো। এজন্য ২০০৬ সালের জুলাইয়ে পাবনার বেড়া উপজেলার বাঁধেরহাট-খয়েরচর সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় তিন বছর। কিন্তু ১২ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ শেষ হয় ১০ বছরে। প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয় করেও ফেরিঘাট স্থানান্তর না হওয়ায় কাজে আসছে না সড়কটি।

সুন্দরবনের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ সহজ করতে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার-বগী সড়কটি আঞ্চলিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১০ সালে। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করে সওজ। কিন্তু সড়কটির একটা বড় অংশের প্রস্থ ১৮ ফুটের জায়গায় ১২ ফুট রেখে দেয়ায় আঞ্চলিক সড়কের সুফল মিলছে না। প্রস্থ কম হওয়ায় ওই অংশ দিয়ে একসঙ্গে দুটি বাস চলাচল করতে পারছে না।

বগুড়া শহরের সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (জিয়া মেডিকেল) সংযোগ স্থাপনে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০৩ সালে। যদিও ৮০০ মিটার বানিয়েই শেষ করা হয়েছে কাজ। সড়কটি মিশেছে ধানক্ষেতে গিয়ে। শহর থেকে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে পুরোপুরি সংযোগ স্থাপন না হওয়ায় কাজে আসছে না এ সড়কও।

প্রকল্প পরিদর্শন করে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পর্যবেক্ষণ বলছে, সড়ক নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগছে, যা অস্বাভাবিক। নির্মাণ শেষে সড়কের উদ্দেশ্যও অর্জিত হচ্ছে না। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা।

পরিকল্পনার অভাবকেই এজন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জবাবদিহিতা না থাকাকেও এর আরো একটি কারণ বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পে বিনিয়োগের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষে উদ্দেশ্য অর্জিত না হলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই প্রকল্প গ্রহণের আগে সেটির প্রভাব সম্পর্কে আগেই ভালোভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে।

যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরও আরিচা-নগরবাড়ী ফেরিপথের গুরুত্ব কমেনি। আগে ফেরিপথটির দৈর্ঘ্য ছিল আট কিলোমিটার। তবে যমুনা নদীতে চর পড়ায় তা কাজিরহাটে সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানেও চর পড়ায় প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে আরিচা থেকে কাজিরহাটে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ফেরিপথের দূরত্ব কমাতে পাবনার কাজিরহাট ফেরিঘাটটি খয়েরচরে সরিয়ে নেয়া ও খয়েরচরে যাতায়াতের জন্য ‘বাঁধেরহাট-খয়েরচর’ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণও করা হয়। কিন্তু ফেরিঘাট স্থানান্তর না হওয়ায় কাজে আসছে না সড়কটি। ঢাকা-পাবনা ও পাবনা-রাজবাড়ীর মধ্যে চলাচলকারী সব যানবাহন কাজিরহাট দিয়ে চলাচল করছে। বাঁধেরহাট-খয়েরচর সড়কটি অব্যবহূতই থাকছে।

সড়কটি চালুর দুই বছর পার হলেও এখনো ফেরিঘাট স্থানান্তর না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমি এ জোনে (রাজশাহী) নতুন এসেছি। খোঁজ-খবর নিয়ে ফেরিঘাট স্থানান্তরের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।

মাত্র ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণে ১০ বছর সময় নিয়েছে সওজ। তিন বছরের প্রকল্প ১০ বছরে শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমইডি। তবে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কটি যে জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আগে ফসলি জমির মাঠ ছিল। ভূমি অধিগ্রহণ করে মাটির কাজ করতে হয়েছে। তারপর সড়ক বানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৬-০৭ সালে শুরু হলেও মূল কাজ (সড়ক নির্মাণ) শুরু হয় ২০১১-১২ সালে এসে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খয়েরচরে যমুনার পাড় থেকে শুরু হয়ে বাঁধেরহাট বাজারে গিয়ে ঠেকেছে আঞ্চলিক মানের (২৪ ফুট প্রশস্ত) সড়কটি। আগে এ জায়গায় কোনো সড়ক ছিল না। স্থানভেদে মাটি থেকে ১৫-২০ ফুট উঁচু সড়কটি ফসলি মাঠের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বালি মাটির ওপর নির্মাণ করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সড়কের শোল্ডার ও পেভমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও পুরো পেভমেন্ট উঠে একেবারে কাঁচা রাস্তার আদল পেয়েছে।

বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেলের সঙ্গে শহরের যোগাযোগের জন্য সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ৮০০ মিটার নির্মাণ শেষেই সমাপ্ত করা হয়েছে। আইএমইডির মূল্যায়ন বলছে, ৮০০ মিটার সড়কটি নির্মাণে ১৩ বছর সময় নিয়েছে সওজ। শহর থেকে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে পুরোপুরি যোগাযোগ স্থাপিত না হওয়ায় সড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে বগুড়া শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে জিয়া মেডিকেলের অবস্থান। শহর থেকে হাসপাতালে যাতায়াতের একমাত্র পথ ব্যস্ততম ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। সেটি দিয়ে গেলে ঘুরতে হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে রোগীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে জিয়া মেডিকেল থেকে বগুড়া-শেরপুর সড়কসংলগ্ন মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে কোনো কাজে আসছে না এ সড়কও। বর্তমানে এটি ব্যবহার হচ্ছে ধান ও খড় শুকানোর কাজে।

জানতে চাইলে সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। জমির দাম বেড়ে গেলে প্রকল্পটিতে সংস্থান রাখা অর্থ দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই কাজ হয়েছে। সড়কটির বাকি কাজ শেষ করতে আরেকটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি নির্মাণের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০১০ সালে এসে দেখা যায়, শুধু অবশিষ্ট জমি অধিগ্রহণ করতেই দরকার পড়বে আরো প্রায় ৪২ কোটি টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাটি ফসলের মাঠের যে জায়গায় গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে রাস্তা নির্মাণ হতে পারে, এমন সম্ভাবনায় সড়কটির অ্যালাইনমেন্ট বরাবর অবকাঠামো গড়ে তুলছেন স্থানীয়রা। এতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এ এলাকার জমির দাম। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন পিন্টুর ভাষ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলে ১২-১৫ কোটি টাকার মধ্যে রাস্তাটি হয়ে যেত। এখন বানাতে গেলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লেগে যাবে।

২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ২৪ জন কর্মকর্তা সড়কটি নির্মাণে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ১৭ জন ছিলেন পূর্ণকালীন দায়িত্বে ও সাতজন খণ্ডকালীন। তার পরও সাড়ে চার কিলোমিটারের বদলে ৮০০ মিটার বানিয়েই শেষ করা হয়েছে। এটুকুতেই সময় লেগেছে ১৩ বছর।

সুন্দরবনের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশে যোগাযোগের স্বল্পতম পথ বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী (সুন্দরবন) পর্যন্ত। সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় নয় কিলোমিটার ছিল কাঁচা। এ অঞ্চলের যাতায়াত সহজ করতে ২০১০ সালে সড়কটি আঞ্চলিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় সওজ। কোথাও ১২ ফুট প্রশস্ত আবার কোথাও ১৮ ফুট প্রশস্ত করে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বিভিন্ন অঙ্গ বাদ রেখেই শেষ করা হয় প্রকল্পের কাজ। যদিও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। মূল উদ্দেশ্য ছিল সড়কটি আঞ্চলিক মানে রূপান্তর। কিন্তু সড়কটির একটা বড় অংশে প্রস্থ ১২ ফুটে রেখে দেয়ায় সেগুলো দিয়ে এক সঙ্গে দুটি বাস চলাচল করতে পারছে না। যানবাহন চলছে সড়কের শোল্ডার দিয়ে। প্রস্থ কম হওয়ায় বড় অংকের অর্থ ব্যয় করেও আঞ্চলিক মানের হয়নি সড়কটি।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সড়ক নির্মাণ যে উদ্দেশ্যে করা হয়, সেটি অর্জিত না হলে আমাদের জন্য তা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। যদি কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমরা তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পাবনার নগরবাড়ীর সড়কটি একেবারে নতুন বানানো হয়েছে। শিগগিরই সড়কটির সঙ্গে ফেরিঘাট স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হবে।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হবে, এমন প্রত্যাশা থেকে বাংলাদেশে ১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় পর্যবেক্ষকদেরও অর্থায়ন করবে দেশটি। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হবে— বিরোধী দলগুলোর এমন আশঙ্কা প্রকাশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা আসায় এ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা কী, সে বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এসবের মধ্যে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর ঘোষণা এল যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র । দুই সদস্যের সমন্বয়ে গঠন করা হবে প্রত্যেকটি দল। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার উইলিয়াম মোয়েলার সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছে। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। আর এ অবাধ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমরা পর্যবেক্ষকদের অর্থায়ন করছি।

সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতেও অনেক ভোটার নিরুৎসাহিত হয়ে থাকতে পারে— এমন উদ্বেগ সে সময় তুলে ধরেছি আমরা। তবে একই ধরনের ঘটনা জাতীয় নির্বাচনে দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করছি।

মার্কিন এ কূটনীতিক জানান, ব্যাংককভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। এছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশের প্রায় ১৫ হাজার পর্যবেক্ষককে যৌথভাবে অর্থায়ন করবে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি), ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি) ও সুইস সরকার। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা সারা দেশেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে থাকবেন। তবে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে হয়তো যাওয়া সম্ভব হবে না তাদের।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে লড়ছেন। অন্যদিকে তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। যদিও তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বিএনপির আরো অনেক নেতা-কর্মীও এখনো কারাবন্দি আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভোট সুষ্ঠু হবে না বলে আশঙ্কার কথা বার বার জানান দিয়ে আসছে বিএনপি।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও এবার সে পথে হাঁটছে না বিএনপি। নতুন জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি। যদিও নির্বাচন অবাধ হবে না— এমন আশঙ্কা থেকে আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।

সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের এমন উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে জানিয়েছে ইইউ। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইপি) এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না তারা। এছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী ফলাফল নিয়েও কোনো মন্তব্য করবে না ইইউ।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও ভোট-পূর্ব ও ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দুই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে ইইউ। তারা হলেন ডেভিড নয়েল ওয়ার্ড ও ইরিনি-মারিয়া গোওনারি। এ দুই বিশেষজ্ঞ প্রায় দুই মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবেন। তবে বাংলাদেশে নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো সংবাদ সম্মেলন করবেন না তারা।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক

বদিউল আলম মজুমদার

গত ২৮ নভেম্বর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কাল ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন। বাছাইপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিল করা হবে। তাই বাছাইপ্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।

বাছাইপ্রক্রিয়ায় অনেকগুলো বিষয় খতিয়ে দেখা হয়, যার একটি হলো মনোনয়নপত্রে ভুলত্রুটি। ছোটখাটো ত্রুটির জন্য, যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন করা যায়, মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় না। আরেকটি বিবেচনার বিষয় হলো মনোনয়নপত্রের অসম্পূর্ণতা। যেমন হলফনামা কিংবা আয়কর রিটার্নের কপি সংযুক্ত না থাকলে মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য। এ ছাড়া মনোনয়নপত্রে প্রস্তাব/সমর্থনকারীর যোগ্যতা তাঁরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার কি না এবং মনোনয়নপত্রে প্রার্থী ও প্রস্তাব/সমর্থনকারীর স্বাক্ষর সঠিক কি না। এসব বিষয়, বিশেষত হলফনামায় তথ্য গোপন করা অথবা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে কি না, তা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে।

প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। প্রার্থী অপ্রকৃতিস্থ, দেউলিয়া, দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক হলে সংসদ সদস্য হতে বা থাকতে পারবেন না। আমাদের সংসদ সদস্যদের কারও কারও বিদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়গুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরূপণ করা আবশ্যক।

এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁর মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়, তাহলে তিনিও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নন। অতীতে দণ্ড (কনভিকশন) ও সাজা (সেনটেন্স) স্থগিত না হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আমাদের আদালত সংসদ সদস্য হতে বাধা প্রদান করেননি, যার দুই দৃষ্টান্ত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর। আর নির্বাচন কমিশন কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশ নিতে দিলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেননি, বরং বিষয়টি নির্বাচন–পরবর্তীকালে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সুরাহাযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও  আবদুর রহমান বদির দণ্ডপ্রাপ্তির পর সংসদ সদস্য পদে থেকে যাওয়ার বিষয়ও প্রাসঙ্গিক।

গত ২৮ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল ইসলাম আলমের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ ডা. জাহিদসহ বিএনপির পাঁচ নেতার দুর্নীতির অভিযোগে প্রাপ্ত দণ্ড স্থগিত করার আবেদন খারিজ করার আদেশ দেন। সংবাদমাধ্যমের খবর, তাঁরা সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দেন। আপিল বিভাগ এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তাই এই পাঁচজনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়, যদি না নির্বাচন কমিশন তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, পর্যবেক্ষণ আদালতের নির্দেশ নয়। এটি দিকনির্দেশনামূলক (ডিরেক্টরি), অবশ্যপালনীয় (ম্যান্ডেটরি) আদেশ নয় এবং কমিশনের পক্ষ থেকে এটি গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। উদাহরণস্বরূপ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলায় বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, যা মানা হয়নি।

এই রায়ের সূত্র ধরে দাবি করা হচ্ছে যে বেগম খালেদা জিয়া এবং আরও অনেকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হবেন। তবে আইনজ্ঞদের মতে অন্য যাঁরা এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আছেন, তাঁদেরও আদালতে গিয়ে দণ্ড স্থগিতের আবেদন করার সুযোগ থাকবে। কারণ, কোনো অবস্থাতেই দণ্ড স্থগিত করা যাবে না ডা. জাহিদের মামলায় আপিল বিভাগ তেমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমরা শুনিনি। আর অতীতে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ক্ষেত্রে চেম্বার জজ তাঁর দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তির রায় স্থগিত করেছেন (ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বনাম বাংলাদেশ ৬২ ডিএলআর (এডি)২০১০)।

এ প্রসঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো যে ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. রইসউদ্দিনের একক বেঞ্চ সাবিরা সুলতানার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করেন, যার ফলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য হবেন বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক দণ্ডপ্রাপ্তের দণ্ড স্থগিতের পক্ষে যৌক্তিকতা ভিন্ন। যেমন কেউ কেউ যুক্তি দেন যে একটি দলের প্রধান ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দিলে তাঁর স্থায়ী ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকার [মো. মামুন ওয়ালিদ হাসান বনাম রাষ্ট্র, ২০১৭(২)এলএনজে)] মামলায় রায় দেন যে বিশেষ ক্ষেত্রে অবিচার ও স্থায়ী পরিণতি রোধে হাইকোর্ট একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত করতে পারেন।

এ ছাড়া নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের সংজ্ঞা আমাদের আইনে নেই। তবে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালত তিনটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যথা: মানুষ এর দ্বারা ‘শকড’ বা মর্মাহত হয়েছে কি না; যে কর্মের (যেমন অর্থ আত্মসাৎ) জন্য দণ্ডিত, সে অপরাধ (আত্মসাৎ) করার উদ্দেশ্যেই কর্মটি করা হয়েছে কি না; এবং সমাজ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নীতিবিবর্জিত বলে মনে করে কি না এবং হেয় চোখে দেখে কি না। তাই বেগম জিয়ার দণ্ড নৈতিক স্খলনের আওতায় পড়ে কি না, তা সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বিবেচনায় নিতে হবে।

সংবিধান ছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর ১২ ধারাতেও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। আরপিও-এর ১২(ট) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত থাকলে তিনি সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হবেন। পণ্য সরবরাহ, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, এমনি আইন পরামর্শমূলক সেবা প্রদানও ব্যবসায়িক সম্পর্কের আওতায় পড়েন বলে আইনজ্ঞদের ধারণা।

আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ অতীতে, এমনকি বর্তমানেও সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন অতীতে রাজশাহী-৪ থেকে নির্বাচিত এনামুল হক রাজশাহীর কাটাখালীতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় (প্রথম আলো, ১৩ আগস্ট ২০১১)। এর আগে তাঁর মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজ লিমিটেড ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহীতে বহুতল সিটি সেন্টার নির্মাণের চুক্তি হয়। আশা করি তিনি বর্তমানে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত নন।

সম্প্রতি প্রথম আলোর (২৪ নভেম্বর ২০১৮) এক প্রতিবেদনে ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ আসলামুল হকের সিএলসি নামের ভাড়াভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে অবৈধভাবে ১১ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হওয়ারই কথা। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া অন্য সাংসদের বিরুদ্ধেও সরকারের কাছে পণ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ [ধারা ১২] অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের কোনে চাকরি থেকে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণকারী ওই পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণের পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সরকার বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন অযোগ্যতা প্রযোজ্য [ধারা ১২]। তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ বিষয়ের দিকেও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোযোগ দিতে হবে।

  • ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ চাই

সম্পাদকীয়

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা


ডিসেম্বর শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচনী মাসে প্রবেশ করল। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ধরনের সহিংস ঘটনার খবর আসছে। যেমন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত, নেত্রকোনায় জেলা কৃষক লীগের এক নেতা খুন, যশোরের বেনাপোলে আওয়ামী লীগের নেতা আমিরুল ইসলাম খুন, খুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ, শেরপুরে বিএনপির অফিসে ভাঙচুর ইত্যাদি। এ ছাড়া স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনসহ আরও নানা ধরনের অপরাধ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটেছে।

নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক বিরোধের কারণে খুনোখুনিসহ নানা ধরনের সহিংস ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ যদি পক্ষপাতহীনভাবে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে এগুলো দমনে সচেষ্ট না হয়, ক্ষমতাসীন পক্ষ যদি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাহলে এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। কারণ, আইন প্রয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর মধ্যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরস্পরকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা জোরালো হতে পারে। তাই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের সহিংস ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করাসহ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, দলনির্বিশেষে নির্বাচনের সব প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাত কিংবা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অন্যতম মৌলিক দিক এই যে সবার জন্য আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা হবে। অর্থাৎ আইনের শাসনের মৌলিক নীতি থেকে সরে যাওয়া চলবে না।

একটি উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো দেশে যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, যখন রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায়, তখন রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন পেশাদার অপরাধীরা আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠতে পারে। সহিংস অপরাধ সংঘটনে তাদের ব্যবহার করা অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে; অর্থের বিনিময়ে তারা রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। তা ছাড়া, তারা তাদের দৈনন্দিন অপরাধবৃত্তিতেও বাড়তি উৎসাহ–উদ্দীপনা বোধ করতে পারে।

নির্বাচনী সহিংসতার আড়ালে খুনখারাবিসহ গুরুতর অপরাধ করে পার পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ—এই ধারণা থেকে পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশেও পড়বে। তাই নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়াস সব মহলেই থাকা একান্ত জরুরি। সে জন্য বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ভাবনা যদি কারও মনে থেকে থাকে, তবে প্রথমেই তা পরিত্যাগ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যেকোনো সহিংস ঘটনা ঘটামাত্র তার আইনি প্রতিকারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পরিচালিত হয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের দ্বারা, নির্বাচনকালে একটি দলীয় সরকার দেশ পরিচালনা করছে, এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারীদের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করা কতটা বাস্তবসম্মত—এমন হতাশাবাদী প্রশ্ন না তুলে আমরা সরকারকে বলব, আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। নির্বাচনসংক্রান্ত সব অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এ ক্ষেত্রে সরকারের বাধা দেওয়া নয়, বরং সহযোগিতা করাই সাংবিধানিক দায়িত্ব।

নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতায় নির্বাচনকালে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮