Search

Monday, December 3, 2018

Another alarm rings over banks' condition

EDITORIAL

Regulators, are you listening?

Bangladesh's banking system has been put on “negative watch” by the global ratings agency, Moody's Investors Service, despite the country's impressive economic performance and strong economy. The downgrading comes in the wake of worsening asset quality, according to one of its analysts, caused by underlying weakness in corporate governance within the banking sector, which led to non-performing loan ratios to increase to 10.4 percent as of June.

Earlier this year, three global rating agencies—Moody's, Standard & Poor's and Fitch—had identified poor governance standards and weak financial health as significant risk factors for the country's banking sector. Something that experts here have been warning the authorities of, along with greater risks to the wider economy as a result, without success. Even after years of mismanagement and corruption in the sector, which saw the government giving around Tk 13,660 crore of taxpayers' money in handouts to the ailing banks between 2011 and 2018, nothing, it seems, has changed.

Meanwhile, as Moody's pointed out, the worsening asset quality will lead to credit costs rising. Meaning that the average person will now have to deal with the double whammy of borrowing at higher costs and have taxpayer money doled out to troubled banks. State-owned banks, moreover, despite the massive bailout money they have been given over the years, will “remain undercapitalised” and “dependent” on capital infusion from the government, all because the regulating authorities have failed for years on end to address the root problems that have plagued the sector.

As repeated in this column, in order to prevent a real disaster in our banking sector, the regulators immediately need to do their job of enforcing banking rules, instead of making “exceptions” for special interests. For that, the government at large needs to depoliticise the sector, as enforcing rules for the rich and the powerful will require the type of political will that we, unfortunately, are yet to see.
  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 03, 2018

নির্বাচনী ইশতেহার - তিন দফা থাকতে হবে

আব্দুল কাইয়ুম

কোন তিন দফা? কত দফাই তো ভেসে গেল, এখন আবার কোন দফা?

জানি, অনেকে এ রকমই ভাববেন। এখন সব দল ও জোট ইশতেহার তৈরি করছে। অনেকের করা শেষ। সেখানে অনেক বড় বড় কথা থাকবে জানি। উন্নয়ন, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি, আয়-আয়ু বৃদ্ধি। দেশে আর গরিব থাকবে না। কত কিছু।

এগুলো তো থাকতে হবেই। তবে অন্তত তিনটি বিষয়ে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়। আপনি যদি ক্রাউড সোর্সিং করেন, আর দেশের অর্ধেক নারীসমাজের মতামত নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন, তাহলে প্রায় শতভাগ বলবে নারী নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। শুধু নারী কেন, শহরের বস্তি, গ্রামের গরিব জনগোষ্ঠী একই কথা বলবে।

ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন চলছে। বাসে নারীদের নির্যাতন, এমনকি হত্যা করা হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্যাতিত নারীদের মামলার মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বিচার ও অপরাধীর শাস্তি হয়। ৯৭ ভাগ মামলার শুনানিই হয় না। এই যদি হয় দেশের অবস্থা, তাহলে উন্নয়ন হবে কীভাবে?

তাই নির্বাচনী ইশতেহারে পরিষ্কার লিখে দিন যে নারী নির্যাতনকারী, বাল্যবিবাহে মদদদানকারী, মাদক ব্যবসায়ী কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেব না। আর ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে থাকলে প্রত্যাহার করে নিন। এখনো সে সময় আছে। নৈতিক স্খলনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীর আবেদন বাতিল করতে পারেন। কিন্তু নৈতিক স্খলনের বিস্তৃত সংজ্ঞা নেই। এটা অবিলম্বে করা দরকার। শুধু দুর্নীতি, ঋণখেলাপ নয়, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বৈষম্য—এসবই নৈতিক স্খলন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ভারতে এটা করা হয়েছে।

নারী নির্যাতনকারীদের আইন প্রণয়নকারী হতে দেওয়া যাবে না। তাঁদের নির্বাচনে আসতে দেওয়া যাবে না। এটাই মূল কথা। এ রকম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পরপর চার দিন প্রথম আলোর উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক হয়ে গেল। আমাদের সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও ছিল। অ্যাকশনএইড, ইকো কো-অপারেশন, আইআইডি, ইউএনএফপিএসহ আরও কিছু সংস্থা। ওরা কাজ করে নারী নির্যাতন রোধে কার্যকর উপায় নিয়ে। প্রবাসী কর্মী ও অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে। খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়েও তারা কাজ করে। তারা মনে করিয়ে দিয়ে গেল, নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়গুলো যেন জোরেশোরে আনা হয়।

বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে সেদিন আইনজীবী তানিয়া আমীরের কথাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিল। একদম ঠিক। প্রভাবশালী কেউ একজন বউ পেটাবেন, যৌতুকবাজি করবেন, আবার নির্বাচনও করবেন? সেটা তো হতে পারে না। প্রার্থীকে হতে হবে ‘ক্লিন পারসন’। এর ওপরে কথা নেই।

যেমন ধরা যাক বিদেশে যাঁরা কাজ করতে যাচ্ছেন তাঁদের কথা। ওরা কেমন আছেন? বিশেষভাবে নারী শ্রমিকদের সমস্যা প্রকট। ওদের মানসম্ভ্রমও খোয়াতে হয়। সেই সব করুণ কাহিনি আমরা জানি। প্রতিকার কী? বেসরকারি সংস্থা আইআইডির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বেশ কিছু প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার আগে প্রত্যেক কর্মী নিজ নিজ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে নাম রেজিস্ট্রি করিয়ে যাবেন। কোথায়, কোন ঠিকানায়, কার মাধ্যমে যাচ্ছেন, তার একটা ডেটাবেইস থাকবে। কেউ প্রতারিত হলে সেই ডেটাবেইস থেকে তথ্য বের করে তাঁকে সরকার সহায়তা দিতে পারবে।

ধারকর্জ করে, জমি বিক্রি করে হয়তো যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষাবঞ্চিত। গ্রামের পরিচিত কারও মাধ্যমে বিদেশে চাকরির ভিসা সংগ্রহ করেছেন। সেই ভিসা কিনতে হয়েছে লাখ লাখ টাকায়। যদিও সরকারের কথা অনুযায়ী সেটা ৩০ বা ৫০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তব হলো, একশ্রেণির দালালের পাল্লায় পড়ে তাঁদের সব খোয়াতে হয়। এর কি প্রতিকার নেই? বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সরকার অবশ্য বলছে বিদেশে কর্মীদের সহায়তার জন্য বিশেষ উদ্যোগের কথা। কিন্তু আসলে তো সব দূতাবাসে জনবলের ঘাটতি একটা বিরাট সমস্যা।

আমরা সব সময় বলি প্রশিক্ষণের কথা। একটু প্রশিক্ষণ থাকলে বিদেশে উন্নত মানের চাকরি করতে পারবে। ভালো বেতন ও মর্যাদা পাবে। এটাই আমাদের সাধারণ ভাবনা। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি, কর্মীরা মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে কোন পদের ভিসায় চাকরি করতে যায়? ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর রাইটস অব বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টসের (ওআরবি) চেয়ারম্যান বললেন, এই সব ভিসা তো সাধারণ লেবারের ভিসা। এই ভিসায় প্রধানত ক্লিনারের কাজই জোটে। সেখানে উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কোন উপকারটা আমরা করতে পারব? চাকরির ভিসা তো ক্লিনারের। তাই দেখা যাচ্ছে গোড়ায় গলদ। আমরা দেখছি না, ভিসা কে আনছে আর কোন ধরনের ভিসা আনা হচ্ছে। আমাদের দরকার উন্নত মানের চাকরির ভিসা। আর তখনই কর্মীদের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ কাজে লাগবে। দেশের মানুষ বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ কাজ পাবে। আর সেটা করার অঙ্গীকার আজ রাজনৈতিক দলগুলোকে করতে হবে। তাদের ইশতেহারে এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রায় দেড় কোটি কর্মী বিদেশে চাকরি করছেন। তাঁদের সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ। ওঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রায় ৮ শতাংশ জোগান দেয়। যদি একটু ভালো প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও উন্নত মানের চাকরিতে তাঁদের পাঠানো হয়, তাহলে রেমিট্যান্স এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ইশতেহারে আরেকটা বিষয় আনতে হবে। খাদ্য অধিকার আইন যেন আগামী সংসদে পাস হয়। আমাদের দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভুক্ত কেউ নেই। কিন্তু অধিকারের প্রশ্ন অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের গোলটেবিল বৈঠকে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, শুধু তিন বেলা ভাত খাওয়াই যথেষ্ট নয়। সুষম খাদ্য ও পুষ্টিও চাই। আর তা ছাড়া আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্য রয়েছি। সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

সেদিন আলোচনায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেছেন, আমাদের সোশ্যাল সেফটি নেট রয়েছে। সেই সহায়তা প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে পৌঁছানোর ডিজিটাল ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এটা সুসংবাদ। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, সরকারের কার্যক্রমগুলোকে একটি
সমন্বিত কর্মসূচির মধ্যে আনতে হবে। যেন কেউ বঞ্চিত না হয়।

আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকার করেছি। এর অনেক বিষয়ের মধ্যে মূল কথাই হলো দারিদ্র্য কমিয়ে আনা। কেউ যেন পেছনে পড়ে না থাকে।

আমাদের কথা হলো, এই তিন দফা যেন পানিতে না পড়ে। এগুলো গণমানুষের দাবি।

  • আব্দুল কাইয়ুম, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮

Sunday, December 2, 2018

সওজের নানা প্রকল্প - ব্যয় আছে, সেবা নেই

শামীম রাহমান

উদ্দেশ্য ছিল আরিচা-নগরবাড়ী ও দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী ফেরিপথের দূরত্ব কমানো। এজন্য ২০০৬ সালের জুলাইয়ে পাবনার বেড়া উপজেলার বাঁধেরহাট-খয়েরচর সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় তিন বছর। কিন্তু ১২ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ শেষ হয় ১০ বছরে। প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয় করেও ফেরিঘাট স্থানান্তর না হওয়ায় কাজে আসছে না সড়কটি।

সুন্দরবনের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ সহজ করতে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার-বগী সড়কটি আঞ্চলিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১০ সালে। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করে সওজ। কিন্তু সড়কটির একটা বড় অংশের প্রস্থ ১৮ ফুটের জায়গায় ১২ ফুট রেখে দেয়ায় আঞ্চলিক সড়কের সুফল মিলছে না। প্রস্থ কম হওয়ায় ওই অংশ দিয়ে একসঙ্গে দুটি বাস চলাচল করতে পারছে না।

বগুড়া শহরের সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (জিয়া মেডিকেল) সংযোগ স্থাপনে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০৩ সালে। যদিও ৮০০ মিটার বানিয়েই শেষ করা হয়েছে কাজ। সড়কটি মিশেছে ধানক্ষেতে গিয়ে। শহর থেকে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে পুরোপুরি সংযোগ স্থাপন না হওয়ায় কাজে আসছে না এ সড়কও।

প্রকল্প পরিদর্শন করে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পর্যবেক্ষণ বলছে, সড়ক নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগছে, যা অস্বাভাবিক। নির্মাণ শেষে সড়কের উদ্দেশ্যও অর্জিত হচ্ছে না। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা।

পরিকল্পনার অভাবকেই এজন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জবাবদিহিতা না থাকাকেও এর আরো একটি কারণ বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পে বিনিয়োগের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষে উদ্দেশ্য অর্জিত না হলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই প্রকল্প গ্রহণের আগে সেটির প্রভাব সম্পর্কে আগেই ভালোভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে।

যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরও আরিচা-নগরবাড়ী ফেরিপথের গুরুত্ব কমেনি। আগে ফেরিপথটির দৈর্ঘ্য ছিল আট কিলোমিটার। তবে যমুনা নদীতে চর পড়ায় তা কাজিরহাটে সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানেও চর পড়ায় প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে আরিচা থেকে কাজিরহাটে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ফেরিপথের দূরত্ব কমাতে পাবনার কাজিরহাট ফেরিঘাটটি খয়েরচরে সরিয়ে নেয়া ও খয়েরচরে যাতায়াতের জন্য ‘বাঁধেরহাট-খয়েরচর’ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণও করা হয়। কিন্তু ফেরিঘাট স্থানান্তর না হওয়ায় কাজে আসছে না সড়কটি। ঢাকা-পাবনা ও পাবনা-রাজবাড়ীর মধ্যে চলাচলকারী সব যানবাহন কাজিরহাট দিয়ে চলাচল করছে। বাঁধেরহাট-খয়েরচর সড়কটি অব্যবহূতই থাকছে।

সড়কটি চালুর দুই বছর পার হলেও এখনো ফেরিঘাট স্থানান্তর না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমি এ জোনে (রাজশাহী) নতুন এসেছি। খোঁজ-খবর নিয়ে ফেরিঘাট স্থানান্তরের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।

মাত্র ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণে ১০ বছর সময় নিয়েছে সওজ। তিন বছরের প্রকল্প ১০ বছরে শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমইডি। তবে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কটি যে জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আগে ফসলি জমির মাঠ ছিল। ভূমি অধিগ্রহণ করে মাটির কাজ করতে হয়েছে। তারপর সড়ক বানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৬-০৭ সালে শুরু হলেও মূল কাজ (সড়ক নির্মাণ) শুরু হয় ২০১১-১২ সালে এসে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খয়েরচরে যমুনার পাড় থেকে শুরু হয়ে বাঁধেরহাট বাজারে গিয়ে ঠেকেছে আঞ্চলিক মানের (২৪ ফুট প্রশস্ত) সড়কটি। আগে এ জায়গায় কোনো সড়ক ছিল না। স্থানভেদে মাটি থেকে ১৫-২০ ফুট উঁচু সড়কটি ফসলি মাঠের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বালি মাটির ওপর নির্মাণ করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সড়কের শোল্ডার ও পেভমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও পুরো পেভমেন্ট উঠে একেবারে কাঁচা রাস্তার আদল পেয়েছে।

বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেলের সঙ্গে শহরের যোগাযোগের জন্য সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ৮০০ মিটার নির্মাণ শেষেই সমাপ্ত করা হয়েছে। আইএমইডির মূল্যায়ন বলছে, ৮০০ মিটার সড়কটি নির্মাণে ১৩ বছর সময় নিয়েছে সওজ। শহর থেকে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে পুরোপুরি যোগাযোগ স্থাপিত না হওয়ায় সড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে বগুড়া শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে জিয়া মেডিকেলের অবস্থান। শহর থেকে হাসপাতালে যাতায়াতের একমাত্র পথ ব্যস্ততম ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। সেটি দিয়ে গেলে ঘুরতে হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে রোগীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে জিয়া মেডিকেল থেকে বগুড়া-শেরপুর সড়কসংলগ্ন মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে কোনো কাজে আসছে না এ সড়কও। বর্তমানে এটি ব্যবহার হচ্ছে ধান ও খড় শুকানোর কাজে।

জানতে চাইলে সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। জমির দাম বেড়ে গেলে প্রকল্পটিতে সংস্থান রাখা অর্থ দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই কাজ হয়েছে। সড়কটির বাকি কাজ শেষ করতে আরেকটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি নির্মাণের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০১০ সালে এসে দেখা যায়, শুধু অবশিষ্ট জমি অধিগ্রহণ করতেই দরকার পড়বে আরো প্রায় ৪২ কোটি টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাটি ফসলের মাঠের যে জায়গায় গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে রাস্তা নির্মাণ হতে পারে, এমন সম্ভাবনায় সড়কটির অ্যালাইনমেন্ট বরাবর অবকাঠামো গড়ে তুলছেন স্থানীয়রা। এতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এ এলাকার জমির দাম। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন পিন্টুর ভাষ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলে ১২-১৫ কোটি টাকার মধ্যে রাস্তাটি হয়ে যেত। এখন বানাতে গেলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লেগে যাবে।

২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ২৪ জন কর্মকর্তা সড়কটি নির্মাণে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ১৭ জন ছিলেন পূর্ণকালীন দায়িত্বে ও সাতজন খণ্ডকালীন। তার পরও সাড়ে চার কিলোমিটারের বদলে ৮০০ মিটার বানিয়েই শেষ করা হয়েছে। এটুকুতেই সময় লেগেছে ১৩ বছর।

সুন্দরবনের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশে যোগাযোগের স্বল্পতম পথ বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী (সুন্দরবন) পর্যন্ত। সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় নয় কিলোমিটার ছিল কাঁচা। এ অঞ্চলের যাতায়াত সহজ করতে ২০১০ সালে সড়কটি আঞ্চলিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় সওজ। কোথাও ১২ ফুট প্রশস্ত আবার কোথাও ১৮ ফুট প্রশস্ত করে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বিভিন্ন অঙ্গ বাদ রেখেই শেষ করা হয় প্রকল্পের কাজ। যদিও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। মূল উদ্দেশ্য ছিল সড়কটি আঞ্চলিক মানে রূপান্তর। কিন্তু সড়কটির একটা বড় অংশে প্রস্থ ১২ ফুটে রেখে দেয়ায় সেগুলো দিয়ে এক সঙ্গে দুটি বাস চলাচল করতে পারছে না। যানবাহন চলছে সড়কের শোল্ডার দিয়ে। প্রস্থ কম হওয়ায় বড় অংকের অর্থ ব্যয় করেও আঞ্চলিক মানের হয়নি সড়কটি।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সড়ক নির্মাণ যে উদ্দেশ্যে করা হয়, সেটি অর্জিত না হলে আমাদের জন্য তা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। যদি কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমরা তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পাবনার নগরবাড়ীর সড়কটি একেবারে নতুন বানানো হয়েছে। শিগগিরই সড়কটির সঙ্গে ফেরিঘাট স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হবে।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হবে, এমন প্রত্যাশা থেকে বাংলাদেশে ১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশীয় পর্যবেক্ষকদেরও অর্থায়ন করবে দেশটি। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হবে— বিরোধী দলগুলোর এমন আশঙ্কা প্রকাশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা আসায় এ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা কী, সে বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এসবের মধ্যে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর ঘোষণা এল যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র । দুই সদস্যের সমন্বয়ে গঠন করা হবে প্রত্যেকটি দল। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার উইলিয়াম মোয়েলার সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছে। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। আর এ অবাধ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমরা পর্যবেক্ষকদের অর্থায়ন করছি।

সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতেও অনেক ভোটার নিরুৎসাহিত হয়ে থাকতে পারে— এমন উদ্বেগ সে সময় তুলে ধরেছি আমরা। তবে একই ধরনের ঘটনা জাতীয় নির্বাচনে দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করছি।

মার্কিন এ কূটনীতিক জানান, ব্যাংককভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। এছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশের প্রায় ১৫ হাজার পর্যবেক্ষককে যৌথভাবে অর্থায়ন করবে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি), ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি) ও সুইস সরকার। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা সারা দেশেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে থাকবেন। তবে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে হয়তো যাওয়া সম্ভব হবে না তাদের।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে লড়ছেন। অন্যদিকে তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। যদিও তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বিএনপির আরো অনেক নেতা-কর্মীও এখনো কারাবন্দি আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভোট সুষ্ঠু হবে না বলে আশঙ্কার কথা বার বার জানান দিয়ে আসছে বিএনপি।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও এবার সে পথে হাঁটছে না বিএনপি। নতুন জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি। যদিও নির্বাচন অবাধ হবে না— এমন আশঙ্কা থেকে আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।

সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের এমন উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে জানিয়েছে ইইউ। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইপি) এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না তারা। এছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী ফলাফল নিয়েও কোনো মন্তব্য করবে না ইইউ।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও ভোট-পূর্ব ও ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দুই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে ইইউ। তারা হলেন ডেভিড নয়েল ওয়ার্ড ও ইরিনি-মারিয়া গোওনারি। এ দুই বিশেষজ্ঞ প্রায় দুই মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবেন। তবে বাংলাদেশে নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো সংবাদ সম্মেলন করবেন না তারা।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক

বদিউল আলম মজুমদার

গত ২৮ নভেম্বর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কাল ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন। বাছাইপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিল করা হবে। তাই বাছাইপ্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।

বাছাইপ্রক্রিয়ায় অনেকগুলো বিষয় খতিয়ে দেখা হয়, যার একটি হলো মনোনয়নপত্রে ভুলত্রুটি। ছোটখাটো ত্রুটির জন্য, যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন করা যায়, মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় না। আরেকটি বিবেচনার বিষয় হলো মনোনয়নপত্রের অসম্পূর্ণতা। যেমন হলফনামা কিংবা আয়কর রিটার্নের কপি সংযুক্ত না থাকলে মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য। এ ছাড়া মনোনয়নপত্রে প্রস্তাব/সমর্থনকারীর যোগ্যতা তাঁরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার কি না এবং মনোনয়নপত্রে প্রার্থী ও প্রস্তাব/সমর্থনকারীর স্বাক্ষর সঠিক কি না। এসব বিষয়, বিশেষত হলফনামায় তথ্য গোপন করা অথবা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে কি না, তা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে।

প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। প্রার্থী অপ্রকৃতিস্থ, দেউলিয়া, দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক হলে সংসদ সদস্য হতে বা থাকতে পারবেন না। আমাদের সংসদ সদস্যদের কারও কারও বিদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়গুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরূপণ করা আবশ্যক।

এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁর মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়, তাহলে তিনিও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নন। অতীতে দণ্ড (কনভিকশন) ও সাজা (সেনটেন্স) স্থগিত না হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আমাদের আদালত সংসদ সদস্য হতে বাধা প্রদান করেননি, যার দুই দৃষ্টান্ত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর। আর নির্বাচন কমিশন কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশ নিতে দিলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেননি, বরং বিষয়টি নির্বাচন–পরবর্তীকালে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সুরাহাযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও  আবদুর রহমান বদির দণ্ডপ্রাপ্তির পর সংসদ সদস্য পদে থেকে যাওয়ার বিষয়ও প্রাসঙ্গিক।

গত ২৮ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল ইসলাম আলমের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ ডা. জাহিদসহ বিএনপির পাঁচ নেতার দুর্নীতির অভিযোগে প্রাপ্ত দণ্ড স্থগিত করার আবেদন খারিজ করার আদেশ দেন। সংবাদমাধ্যমের খবর, তাঁরা সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দেন। আপিল বিভাগ এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তাই এই পাঁচজনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়, যদি না নির্বাচন কমিশন তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, পর্যবেক্ষণ আদালতের নির্দেশ নয়। এটি দিকনির্দেশনামূলক (ডিরেক্টরি), অবশ্যপালনীয় (ম্যান্ডেটরি) আদেশ নয় এবং কমিশনের পক্ষ থেকে এটি গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। উদাহরণস্বরূপ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলায় বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, যা মানা হয়নি।

এই রায়ের সূত্র ধরে দাবি করা হচ্ছে যে বেগম খালেদা জিয়া এবং আরও অনেকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হবেন। তবে আইনজ্ঞদের মতে অন্য যাঁরা এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আছেন, তাঁদেরও আদালতে গিয়ে দণ্ড স্থগিতের আবেদন করার সুযোগ থাকবে। কারণ, কোনো অবস্থাতেই দণ্ড স্থগিত করা যাবে না ডা. জাহিদের মামলায় আপিল বিভাগ তেমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমরা শুনিনি। আর অতীতে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ক্ষেত্রে চেম্বার জজ তাঁর দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তির রায় স্থগিত করেছেন (ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বনাম বাংলাদেশ ৬২ ডিএলআর (এডি)২০১০)।

এ প্রসঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো যে ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. রইসউদ্দিনের একক বেঞ্চ সাবিরা সুলতানার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করেন, যার ফলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য হবেন বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক দণ্ডপ্রাপ্তের দণ্ড স্থগিতের পক্ষে যৌক্তিকতা ভিন্ন। যেমন কেউ কেউ যুক্তি দেন যে একটি দলের প্রধান ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দিলে তাঁর স্থায়ী ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকার [মো. মামুন ওয়ালিদ হাসান বনাম রাষ্ট্র, ২০১৭(২)এলএনজে)] মামলায় রায় দেন যে বিশেষ ক্ষেত্রে অবিচার ও স্থায়ী পরিণতি রোধে হাইকোর্ট একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত করতে পারেন।

এ ছাড়া নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের সংজ্ঞা আমাদের আইনে নেই। তবে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালত তিনটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যথা: মানুষ এর দ্বারা ‘শকড’ বা মর্মাহত হয়েছে কি না; যে কর্মের (যেমন অর্থ আত্মসাৎ) জন্য দণ্ডিত, সে অপরাধ (আত্মসাৎ) করার উদ্দেশ্যেই কর্মটি করা হয়েছে কি না; এবং সমাজ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নীতিবিবর্জিত বলে মনে করে কি না এবং হেয় চোখে দেখে কি না। তাই বেগম জিয়ার দণ্ড নৈতিক স্খলনের আওতায় পড়ে কি না, তা সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বিবেচনায় নিতে হবে।

সংবিধান ছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর ১২ ধারাতেও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। আরপিও-এর ১২(ট) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত থাকলে তিনি সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হবেন। পণ্য সরবরাহ, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, এমনি আইন পরামর্শমূলক সেবা প্রদানও ব্যবসায়িক সম্পর্কের আওতায় পড়েন বলে আইনজ্ঞদের ধারণা।

আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ অতীতে, এমনকি বর্তমানেও সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন অতীতে রাজশাহী-৪ থেকে নির্বাচিত এনামুল হক রাজশাহীর কাটাখালীতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় (প্রথম আলো, ১৩ আগস্ট ২০১১)। এর আগে তাঁর মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজ লিমিটেড ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহীতে বহুতল সিটি সেন্টার নির্মাণের চুক্তি হয়। আশা করি তিনি বর্তমানে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত নন।

সম্প্রতি প্রথম আলোর (২৪ নভেম্বর ২০১৮) এক প্রতিবেদনে ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ আসলামুল হকের সিএলসি নামের ভাড়াভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে অবৈধভাবে ১১ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য হওয়ারই কথা। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া অন্য সাংসদের বিরুদ্ধেও সরকারের কাছে পণ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ [ধারা ১২] অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের কোনে চাকরি থেকে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণকারী ওই পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণের পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সরকার বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন অযোগ্যতা প্রযোজ্য [ধারা ১২]। তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ বিষয়ের দিকেও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোযোগ দিতে হবে।

  • ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ চাই

সম্পাদকীয়

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা


ডিসেম্বর শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচনী মাসে প্রবেশ করল। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ধরনের সহিংস ঘটনার খবর আসছে। যেমন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত, নেত্রকোনায় জেলা কৃষক লীগের এক নেতা খুন, যশোরের বেনাপোলে আওয়ামী লীগের নেতা আমিরুল ইসলাম খুন, খুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ, শেরপুরে বিএনপির অফিসে ভাঙচুর ইত্যাদি। এ ছাড়া স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনসহ আরও নানা ধরনের অপরাধ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটেছে।

নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক বিরোধের কারণে খুনোখুনিসহ নানা ধরনের সহিংস ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ যদি পক্ষপাতহীনভাবে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে এগুলো দমনে সচেষ্ট না হয়, ক্ষমতাসীন পক্ষ যদি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাহলে এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। কারণ, আইন প্রয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর মধ্যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরস্পরকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা জোরালো হতে পারে। তাই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের সহিংস ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করাসহ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, দলনির্বিশেষে নির্বাচনের সব প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী–সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাত কিংবা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অন্যতম মৌলিক দিক এই যে সবার জন্য আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা হবে। অর্থাৎ আইনের শাসনের মৌলিক নীতি থেকে সরে যাওয়া চলবে না।

একটি উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো দেশে যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, যখন রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায়, তখন রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন পেশাদার অপরাধীরা আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠতে পারে। সহিংস অপরাধ সংঘটনে তাদের ব্যবহার করা অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে; অর্থের বিনিময়ে তারা রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। তা ছাড়া, তারা তাদের দৈনন্দিন অপরাধবৃত্তিতেও বাড়তি উৎসাহ–উদ্দীপনা বোধ করতে পারে।

নির্বাচনী সহিংসতার আড়ালে খুনখারাবিসহ গুরুতর অপরাধ করে পার পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ—এই ধারণা থেকে পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশেও পড়বে। তাই নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়াস সব মহলেই থাকা একান্ত জরুরি। সে জন্য বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ভাবনা যদি কারও মনে থেকে থাকে, তবে প্রথমেই তা পরিত্যাগ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যেকোনো সহিংস ঘটনা ঘটামাত্র তার আইনি প্রতিকারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পরিচালিত হয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের দ্বারা, নির্বাচনকালে একটি দলীয় সরকার দেশ পরিচালনা করছে, এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারীদের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করা কতটা বাস্তবসম্মত—এমন হতাশাবাদী প্রশ্ন না তুলে আমরা সরকারকে বলব, আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। নির্বাচনসংক্রান্ত সব অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এ ক্ষেত্রে সরকারের বাধা দেওয়া নয়, বরং সহযোগিতা করাই সাংবিধানিক দায়িত্ব।

নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতায় নির্বাচনকালে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোটার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন?

গোলাম মোর্তোজা

সংসদে যাওয়ার যে পথ, সেই পথের চাবি কার হাতে? টকশোর উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তর ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে দিতে হয়নি। সরল উত্তর ‘জনগণ’। জাতীয় সংসদের এবারের নির্বাচনটি একাদশতম। ১৯৯০ সালের পরের চারটি এবং ৭৩’র (কিছু বিচ্যুতি সত্ত্বেও) নির্বাচন, অর্থাৎ পাঁচটি নির্বাচন ছাড়া ‘জনগণের চাবি’র তোয়াক্কা করা হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে এই পাঁচটি নির্বাচনে জনগণের ভোট নিয়ে সংসদ সদস্যরা সংসদে পৌঁছে ছিলেন। জিয়াউর রহমানের ৭৯’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ৩৯টি আসন দেওয়া হয়েছিল। বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো আরও অনেক আসনে। এরশাদের ৮৬’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আসন দেওয়া হয়েছিল ৭৬টি। আরও শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগ যখন বিজয়ের পথে, তখন ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল টেবিলে।

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮’র নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ অভিযোগ তুললেও তা গুরুত্ব পায়নি। কিছু বিচ্যুতি সত্ত্বেও এই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে এমন নির্বাচনকেই বোঝানো হয়। ‘অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়’-এমন কথা বলার পর, সিইসির আর পদে থাকার যৌক্তিকতা থাকার কথা নয়। ‘শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন পৃথিবীর কোথাও হয় না, বাংলাদেশেও হবে না’-এমন বক্তব্য দেওয়ার পর পদ ছাড়তে না পারাটাও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জন্যে সম্মানজনক নয়।

প্রথমত: ‘শতভাগ সুষ্ঠু’- এমন ইউটোপিয়ান কোনো নির্বাচন বাংলাদেশের কেউ-ই প্রত্যাশা করছেন না।

দ্বিতীয়ত: ইউরোপের অনেক দেশ আছে, সেসব দেশে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে কোনো অভিযোগ পরাজিত পক্ষ তোলেন না। প্রশ্ন আসে তাহলে সেগুলো কতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন? ফলে ‘শতভাগ’ শব্দটি আমদানির ক্ষেত্রে কোনো সৎ উদ্দেশ্য আছে, তা বিশ্বাস করা যায় না।

২.
কোনো ইউটোপিয়ান জগত নিয়ে নয়, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছি। এই নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারবেন কিনা? নিজের ভোট নিজে দেওয়ার অধিকার ফিরে পাবেন কিনা? তর্ক তোলা যেতেই পারে, তাহলে কী এখন মানুষের ভোটের অধিকার নেই? বিগত সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর (নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর বাদে) বিবেচনায় এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হওয়ার সুযোগ নেই। আসন্ন নির্বাচনে ‘হ্যাঁ’ হওয়াটা প্রত্যাশিত। তার জন্যে কিছু কাজ করার আছে নির্বাচন কমিশনের।

প্রথমেই আসে সবার জন্যে ‘সমান সুযোগ’ তৈরির বিষয়। একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায়, প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-এমপিরা পদে বহাল, এমন বাস্তবতায় সবার জন্যে সমান সুযোগ একটি ইউটোপিয়ান প্রত্যাশা। অর্থাৎ, সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা আছে, এমনটা ভাবার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী আচরণবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলেন সিইসি। কিন্তু, পরে আর তেমন কিছু করেনি।

প্রশাসনে রদবদল করার দাবি তোলা হয়েছে, পরবর্তীতে ৯২ জনের একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই দাবি জোরালোভাবে সামনে আনা হচ্ছে কেন? জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপি, তারা কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। তারা খুব ভালো করে জানে যে, ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচনের আগে কীভাবে প্রশাসনে নিজ মতাদর্শের লোকজনদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে রাখা হয়। কারণ কাজটি বিএনপিও করেছিলো।

অতীতে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন প্রশাসনে কিছু রদবদল করে। বলা যায়, এটা নির্বাচন কমিশনের প্রায় নিয়মিত কাজেরই অংশ। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন কিছুটা আস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এবার নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দেওয়ার জন্যে যখন পুলিশসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ডেকে কথা বলেছেন, সেখানে রদবদলের প্রসঙ্গটি এসেছিলো। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ‘বদলির চিন্তা’ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা যায় না। নির্বাচনের আগে যেন বদলি করা না হয়। যদিও একথা কারোরই অজানা নয় যে, সরকারি চাকরিতে বদলি খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। বদলির সঙ্গে স্বাভাবিক কাজ করতে পারা বা না পারার সম্পর্ক থাকার কথা নয়।

নির্বাচন কমিশন কথা দিয়েছে, বদলি করা হবে না। বিরোধীদলের প্রথম দাবির বিষয়ে ইসি বলেছিলো ‘ঢালাও অভিযোগ’ বিবেচনায় নেওয়া হবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে বিবেচনা করে দেখা হবে। সুনির্দিষ্ট তালিকা দেওয়ার পর ইসি বলেছে, বিরোধীদলের বদলির দাবি বিবেচনায় নেওয়া হবে না। ইসি তদন্ত করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বলেনি।

ইসি বলেছে, পুলিশ তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে।

দেখা যাচ্ছে ‘গায়েবি’ মামলাতেও গ্রেপ্তার চলছে। সিইসির বক্তব্য অনুযায়ী, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী-ই তা চলছে?

‘নাশকতার’ বা রাষ্ট্রীয় কাজে ‘বাধা দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় অন্য অনেকের জামিন হলেও, সম্ভাব্য প্রার্থীর জামিন হচ্ছে না। একই রকম ঘটনায় আদালতের দুই রকমের নির্দেশনায় জনমানুষ বিভ্রান্ত। ‘গায়েবি’ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও, মুক্তি মিলছে না। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। পুরনো এবং ‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে না- তা বলা যাচ্ছে না। এসব মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা’ হাজার হাজার আসামী থাকায়, যে কাউকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ থাকবে। সব কিছুই নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশকে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বা হবে, তার উপর। আর সত্যি যদি এখনকার পুলিশি কর্মকাণ্ড ইসির নির্দেশনাতেই চলছে বলে ধরে নেওয়া হয়, তবে ‘সমান সুযোগ’ বিষয়টি কল্পনার চেয়েও বহু দূরে অবস্থান করতে পারে।

৩.
নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে, রাজনীতিতে অভিযোগ, পাল্টা-অভিযোগ ততো জোরালো হবে।

সরকার-পক্ষ উন্নয়নের প্রচারাভিযান আরও জোরদার করবে। পদ্মাসেতু, বিদ্যুৎ, মাথাপিছু আয় বেড়ে দ্বিগুণ- প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নশীল দেশ, রাস্তা, ফ্লাইওভার, নির্মাণাধীন মেট্রোরেল সাফল্যের সঙ্গে গ্রেনেড হামলা, পেট্রোল বোমা সহিংসতার কথাও বলা হবে।

বিরোধী-পক্ষ তুলে ধরবে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে সবচেয়ে নিম্নমানের অবকাঠামো নির্মাণের চিত্র।

দমন-নিপীড়ন, ব্যাংকসহ আর্থিকখাত কেলেঙ্কারি, টাকা পাচার, রিজার্ভ চুরি, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় দুর্নীতি, রেন্টাল-কুইক রেন্টালে দলীয় লোকদের দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া, চালসহ দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ কালাকানুন, গুম-খুন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের হাতুড়ি পেটা-গ্রেপ্তার-জেল-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র সামনে আনবে।

দুই পক্ষ তাদের সুবিধা বিবেচনায় যেভাবেই বিষয়গুলো সামনে আনুক না কেন, ভোটারদের প্রভাবিত কতটা করা যাবে? খুব একটা করা নাও যেতে পারে। কারণ সরকার বা রাজনীতিবিদরা যে কথা যেভাবেই উপস্থাপন করুক না কেন, সবই ভোটাররা দেখেছেন-জেনেছেন-বুঝেছেন। ভোটারদের মনের আনন্দ-বেদনা, স্বস্তি বা ক্ষোভেরই প্রকাশ দেখা যেতে পারে, যদি সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন।

৪.
ব্রিটেনের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্স বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে ‘সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা লেভেল প্লেইং ফিল্ড’র ধারে-কাছেও নেই, এবং বিরোধী দলের উপর দমন-পীড়ন চলছেই’।

মার্কিন কংগ্রেস বলছে, স্থিতিশীলতার জন্যে হুমকি জামায়াত-শিবির এবং হেফাজত। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আগে থেকেই ছিল, হেফাজত নতুন যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এক্ষেত্রে এক ধরণের ‘সমান অবস্থা’ তৈরি হওয়ায়, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের সুযোগ কমে গেছে।

প্রার্থীরা মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় ফিরে যাবেন। দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করবে। কোথাও কোথাও জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত সহযোগী হিসেবে যোগ দিবে। প্রশাসন নিরপেক্ষ বা কোন পক্ষ নিবে? নির্বাচন কমিশনের ‘সব ঠিক আছে’ ভূমিকার পরিবর্তন হবে কিনা?

ধারণা করা খুব কঠিন নয়, আঁচ করা যায় কেমন থাকবে সামগ্রিক মাঠের পরিস্থিতি।

নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের ‘মূর্তি’র রূপ ধারণ করতে বলে দিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, এক কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা যাবে না। কেন্দ্রের ভেতরে তো অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবেই না। যাবে না সরাসরি সম্প্রচার করাও।

বিগত নির্বাচন কমিশন সংবাদকর্মীদের এসব করার সুযোগ দিয়ে বিপদে পড়েছিলো। ইসি দেখাতে চেয়েছিল ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছিলেন। সংবাদকর্মীরা এক কেন্দ্রে ক্যামেরা নিয়ে সারাদিন অবস্থান করে যে চিত্র দেখিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ইসির বক্তব্যের মিল ছিল না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আগে থেকে সজাগ হওয়ার বিষয়টি, অনেক রকমের আশঙ্কা তৈরি করছে।

৫.
একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশনের কাছে। সেই ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান দিয়েছে। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের নৈতিক সততা প্রশ্নবিদ্ধ। সাহস এবং উদ্যোগেও ঘাটতি আছে। ফলে সরকার আন্তরিকভাবে না চাইলে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে, বিশ্বাস করা কঠিন।

নির্বাচনী ইশতেহার লেখার কাজ চলছে। অনেক ভালো ভালো আশা জাগানো কথা থাকবে ইশতেহারে। কতটা বাস্তবায়ন হলো, সেসব নিয়ে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। যে জনগণ বা ভোটারদের উদ্দেশে লেখা হচ্ছে ইশতেহার, সেই ভোটারদের প্রথম অধিকার হলো সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারার অধিকার।

সেই ভোটাররা সুষ্ঠু পরিবেশে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন তো?

মানুষের ভোটের অধিকারের কথা কতটা গুরুত্ব পাবে ইশতেহারে? ভোটার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন? ইশতেহার কী তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে?

  • Courtesy: The Daily Star /Bangla online/ Dec 02, 2018

Critical points raised by House of Commons

EDITORIAL

Serious questions on elections need answers

The report presented in the UK House of Commons recently had a lot to say about the “level playing field” that our Election Commission (EC) keeps touting. Given the way we have treated reports published abroad in the past, the ruling party will surely claim it is a conspiracy, while the party in opposition will hail it as the truth. Our position is that it has a lot of merit.

What we gather from the “research briefing” is that the harassment of political opponents is ongoing in Bangladesh. While the ruling alliance is free to break EC rules, the opposition is finding more and more of its electoral candidates in jail, with cases against some, not to talk about ordinary party activists. There is a massive dearth of trust between the government and the opposition parties about whether the December 30 polls will be free, fair and inclusive.

That questions have been raised about the jail term of former PM and leader of the biggest opposition party Khaleda Zia being extended to 10 years from five as being a ploy to keep her from participating in the election is not going to find favour with the ruling party. The brief goes on to raise alarm about human rights violations in the country, with emphasis on the misuse of criminal charges, unlawful killings and the culture of enforced disappearances. Even more alarming is that the threat of jihadist terrorism is apparently far from being extinguished.

This paper has repeatedly highlighted the dangers of the vacuum created by an opposition-less political arena and how that space is increasingly being filled up by fringe parties espousing religious extremism. It would be wise to take heed of this very real threat and strive towards an inclusive election so that politics in our country remains within the grasp of legitimate parties who answer to the people. At the risk of repetition, we say that in making the election credible and participatory, the ruling party's role and responsibility are far greater than others', save perhaps only that of the EC.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 02, 2018

Moody's sounds alarm on Bangladeshi banks

US ratings agency gives negative outlook


Global credit ratings giant Moody's put Bangladesh's banking system on 'negative watch' despite the country's robust economy, as pressure mounts on the Bangladesh Bank and the government to take drastic actions to fix the sector.

The reason for the negative outlook is the worsening asset quality, said Tengfu Li, a Moody's analyst.

Underlying weaknesses in corporate governance, especially at state-owned banks, has led to nonperforming loan ratios rising to 10.4 percent as of June.

And the growing stock of unclassified rescheduled loans poses further risk to asset quality, said the report 'Banking System Outlook - Bangladeshi banks: High asset risks drive negative outlook despite robust economy'.

At the end of June, the state banks' total NPL stood at 28.24 percent, according to data from the Bangladesh Bank.

In fact, of the total Tk 89,340 crore of NPL of the banking sector, the state banks accounted for Tk 42,852 crore.

The outlook expresses Moody's expectation of how bank creditworthiness will evolve in this system over the next 12 to 18 months.

Moody's outlook is based on six key drivers. Specifically, Moody's assesses the banks' operating environment as stable; asset risk as deteriorating; capital as deteriorating; profitability and efficiency as deteriorating; funding and liquidity as stable; and government support as stable.

Credit costs will increase in tandem with the deterioration in asset quality, said the report, which was unveiled on November 29. Such a situation will lead to an erosion of the banks' profitability, especially when the expansion of net interest margins will also be limited under regulatory pressure.

Capitalisation will moderate because of weaker capital generation despite earnings retention by the private sector banks to meet the higher capital requirements beginning in 2019.

State-owned banks will remain undercapitalised and dependent on capital infusions from the government, the report said.

Banks in Bangladesh though will continue to maintain adequate funding and liquidity.

While financial conditions tightened during the first half of 2018, the situation has stabilised after monetary easing measures were implemented.

The lowering of the ceiling for bank's loan-deposit ratio from March next year will further mitigate funding risks, the report said.

Moody's expects the Bangladesh government to remain supportive of the banking system, given the government's track record of taking pre-emptive measures against banking failures.

“The government also has the capacity -- as reflected in the country's modest general and external debt burden -- to support the banks in times of need.”

In its last credit outlook in March, Moody's gave Bangladesh a stable rating of Ba3, as in the past several years.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 02, 2018 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর ঝুঁকিতে — মুডি’স ইনভেস্টর্স সার্ভিসের রিপোর্ট

খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ অবস্থা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সি-মুডিস। প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) তাদের ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক-বাংলাদেশি ব্যাংকস’ শীর্ষক রিপোর্টে বলেছে, ‘দেশটির অর্থনীতি অনেক ভালো হলেও ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক।’

মুডি’স-এর বিশ্লেষক টেংফু লি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক তৈরি গার্মেন্ট শিল্পের কারণে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া ও রেমিট্যান্সের হার ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় ভোগ/ব্যয়ে সহায়ক হবে।’ তিনি বলেন, ‘তবে বেশ খণ্ড-বিখণ্ডিত ব্যাংকিং খাতে ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’ বা ঋণের মান অবনতিশীল। কর্পোরেট গভর্ন্যান্সে অন্তর্নিহিত দুর্বলতার (বিশেষ করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহে) কারণে খেলাপি ঋণের অনুপাত এ বছরের জুন নাগাদ ১০.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অশ্রেণিভুক্ত পুনঃতফশিলকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকায় তা ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’র ওপর আরো ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।’

মুডি’স-এর এই বিশ্লেষণ সংস্থাটির ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক- বাংলাদেশি ব্যাংকস: হাই অ্যাসেট রিস্কস ড্রাইভ নেগেটিভ আউটলুক ডিসপাইট রোবাস্ট ইকোনমি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

মুডি’স-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পূর্বাভাস মূলত ৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বললে, মুডি’স বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের পরিচালনা পরিবেশকে স্থিতিশীল, বিনিয়োগ ঝুঁকিকে অবনতিশীল, পুঁজি অবনতিশীল, মুনাফা অর্জন ও কার্যক্ষমতা অবনতিশীল, অর্থায়ন ও তারল্য স্থিতিশীল এবং সরকারি সহায়তাকে স্থিতিশীল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অ্যাসেট কোয়ালিটির অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের ব্যয় (ক্রেডিট কস্ট) বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি ব্যাংকগুলোর লাভ করার সক্ষমতা হ্রাস করবে, বিশেষ করে যখন সুদ থেকে প্রাপ্ত আয়ও সীমিত থাকবে।

পুঁজি তৈরির হার দুর্বলতর হওয়ায়, লাভকে পুঁজিতে রূপান্তরের হারও কমবে, যদিও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আগামী বছর পুঁজি বাড়ানোর বাধ্যবাধকতা পূরণে আয় ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর পুঁজি আগের মতোই অপর্যাপ্ত থাকবে। সরকারের পুঁজি-প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে অবশ্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও তারল্য থাকবে। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে আর্থিক পরিস্থিতি চাপের মধ্যে পড়লেও, অর্থ সংক্রান্ত কড়া নিয়মনীতি সহজ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রিম অর্থ জমা রাখার অনুপাত সীমিত হওয়ায় (যা ২০১৯ সালের মার্চ থেকে কার্যকর হবে) অর্থায়নের ঝুঁকি আরো হ্রাস পাবে।

মুডি’স ধারণা করছে, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রতি আগের মতোই সহায়ক থাকবে। ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার রেকর্ড রয়েছে সরকারের। এমনকি প্রয়োজনের সময় ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেয়ার সামর্থ্য সরকারের রয়েছে, যেটা দেশটির তুলনামূলক কম সাধারণ ও বৈদেশিক ঋণের ভার দেখে বোঝা যায়। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/  ০২ ডিসেম্বর ২০১৮