Search

Wednesday, December 19, 2018

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

সরকারের নৈতিক বৈধতা

গত রোববার বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) ঢাকায় ‘গুণগত মান ও মর্যাদা নিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ: বাংলাদেশের অ্যাজেন্ডা’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপের আয়োজন করেছিল। সেখানে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এবারের ভোটের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তার নৈতিক বৈধতার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরুরি।

আমরা তাঁর এ বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করি। এমন বক্তব্য এসেছে সম্ভবত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনের হতাশাব্যঞ্জক অভিজ্ঞতার স্মৃতি থেকে, যে নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টিতেই সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কারণ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। অর্থাৎ নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হয়নি, এবং সেই কারণে ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারকে আইনত বৈধ বলা হলেও তার গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি খোদ সরকারি মহলেও অনুভূত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছিল। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচন আসছে, তখন সবাই চাইছেন নির্বাচন যেন পূর্ণমাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হয়।

প্রাথমিকভাবে সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে: আসন্ন নির্বাচনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপিসহ প্রায় সব দলই অংশ নিতে যাচ্ছে। এই সর্বজনীন অংশগ্রহণ ভোট গ্রহণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সুনিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এই দায়িত্ব প্রধানত নির্বাচন কমিশনের। প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন মোটের ওপর সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে, অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে সংঘাত–সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, যেভাবে বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীরা এবং তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা হামলার শিকার হচ্ছেন, এতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। এসব হামলার আইনি প্রতিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের জন্ম দিয়েছে।

গতকালের এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে আমরা উল্লেখ করেছি, বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের প্রচারকাজে বাধা দেওয়া এবং স্বয়ং প্রার্থীদের ওপর হামলা চালানোর ফলে নির্বাচনে সব প্রার্থীর সুযোগের সমতার নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই গুরুতর নির্বাচনী অপরাধের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি হামলার অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া নির্বাচন কমিশনের জরুরি দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা আসন্ন নির্বাচনের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের ওপর হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করছেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে পরিপূর্ণ সততা ও পক্ষপাতহীনতার সঙ্গে প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করতে হবে।

আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিতব্য সরকারের আইনগত বৈধতার তাগিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বক্তব্যে ঊহ্য থেকে গেছে, তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন আগামী সরকারের নৈতিক বৈধতার ওপর। এ বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে কোনো সরকারের আইনগত বৈধতাই যথেষ্ট নয়, তার নৈতিক বৈধতাও অত্যাবশ্যক। আমরা মনে করি, কোনো সরকারের আইনগত বৈধতা নৈতিক বৈধতা ছাড়া পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। পরবর্তী সরকারের নৈতিক বৈধতা নির্ভর করছে আসন্ন নির্বাচনের সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার ওপর। নির্বাচন শুধু তখনই সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে, যখন তা সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়। 

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/  ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত - শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন

অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার। বলা হয়েছে, ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণমানুষের ইচ্ছার  প্রতিফলন দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সোমবার মার্কিন দূতের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। 

এ বিষয়ে বিলম্বে প্রচারিত মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক বার্তায় জানানো হয়েছে- সেই সাক্ষাৎ-বৈঠকে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেছেন, সারা দেশে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের সমর্থন  দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল বা সেন্টিমেন্ট যাই হোক না কেন, প্রতিজন মানুষকে শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। সবাইকে সহিংসতা এড়িয়ে এর নিন্দা জানাতেও উদ্বুদ্ধ করছে দেশটি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত উভয়ে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধন আরো শক্তিশালী ও টেকসই করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার বিষয়েও আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। 

  • Ourtesy: Manabzamin /Dec 19, 2018

নির্বাচন নিয়ে জনমনে অজানা ভয় ফুটে উঠেছে

দিনের সাক্ষাৎকার

আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সার্বিক জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন গুড গভর্নেন্স ফোরাম এর স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী। বলেন, অনেক বছর পর একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে ধারণা করছি। যেখানে শক্তিশালী বিরোধীদল এবং সরকারীদল অংশগ্রহণ করবে। তবে এর মধ্যে নানা ধরনের শঙ্কা রয়েছে। ভয় রয়েছে। যে কোন ধরনের সহিংসতা হতে পারে, এরকম একটি অজানা ভয় সাধারণ মানুষ এবং অংশগ্রহণকারীদের মনে ফুটে ওঠেছে। যদি এটাকে এড়ানো যায় তবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। 

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে সরকারের হাতে।সরকারি দল যদি এটা সঠিকভাবে করতে পারে, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে যাবে। বিশিষ্ট এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন,  বিরোধীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারছে না, এটা অত্যন্ত দু:খজনক ব্যাপার। এর ফলে নির্বাচন সর্বজনগ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কারণ বিষয়টি এতই অনাকাঙ্খিত যে, এটাকে যেকোন মূল্যে পরিহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন এবং যারা ক্ষমতায় আছেন উভয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। 

কেমন হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন? এমন প্রশ্নের জবাবে কলামনিস্ট ড. শেলী বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সন্দেহ, কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে আশাও। আশা এ জন্য যে, নির্বাচনটা খুব কাছে। আর ক’টি দিন ধৈর্য্য ধরে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে এবং সুবিচারের পথে অগ্রসর হতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং সুন্দর হবে। সারা দুনিয়ার কাছে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। 

বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ইশতেহার প্রসঙ্গে এই বুদ্ধিজীবী বলেন, তাদের ইশতেহারকে ভালোই মনে করতাম, যদি না ব্র্যাকের জরিপটি দেখতাম। ব্র্যাকের এক জরিপে বলা হয়েছে, শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ বা ভোটার নির্বাচনের এই ইশতেহার পড়েন না, অনেকে পড়লেও বোঝেন না। সুতরাং এটা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিচারের একটি মাপকাঠি বলা হলেও এবারের নির্বাচনে তা নিয়ামক হবে না। 

  • Courtesy: Manabzamin /Dec 19, 2018

Banking sector under threat from conglomerate

EDITORIAL

Why weren't steps taken to contain it?


The finance minister has a track record of revealing the truth from time to time, no matter how unpalatable the truth may be. We commend his remarks about a certain Chattogram-based business conglomerate having grown all too powerful in the financial sector. That this conglomerate now owns multiple banks and has been taking loans out from them to conduct its operations has been an open secret for some time now. Unfortunately, these revelations by the finance minister bounce back on him, in the sense that the unprecedented rise of this business house took place during his 10 years in office as finance minister.

Hence the question: why is Mr Muhith coming out with the facts now, at the tail end of the government's present tenure? Why could he not take steps to curtail the ominous growth of the group as it gobbled up one bank after another? Not only that, when the finance minister talks about banks failing to rein in on default loans, why did he allow for the passage of an amendment to the Bank Company Act that paved the way for four members of the same family to be on the board of the bank? This single act has been touted by banking experts as counterproductive for good governance in the financial sector.

While the finance minister sees only glory of achievement upon achievement, he fails to see that nonperforming loans have reached record highs in the last decade. The facts speak for themselves about the state of governance in the financial sector and merely hinting about a certain business group having grown too powerful is not going to cover up the failure to stop the contagion that seems to have spread far and wide across our banking system.

Courtesy: The Daily Star Dec 19, 2018

TIB airs concern over attacks on opposition candidates

Criticises EC for self-contradictory stance


Transparency International, Bangladesh (TIB) expressed its grave concern over 'rampant attacks on and harassment of' the opposition party candidates, contesting in the 11th general election due on December 30. The organisation, in a statement on Tuesday, also criticised Election Commission (EC) for its inaction to this effect.

TIB also drew EC's attention towards the opposition candidates facing 'various barriers and repression' in conducting their electoral campaigns, and filing of cases against them ahead of the general election.

The independent watchdog also expressed worry over the 'self-contradictory' stance of EC in barring live media streaming from election centres and use of cell-phone there.

TIB observed that these steps would further decrease people's confidence on the country's election conducting body.

It urged EC to take steps in accordance with the country's constitution, and play its due role with self respect and courage to hold a credible election.

"Since the beginning of election campaigning, opposition candidates are being attacked, sued, intimidated and harassed," TIB Executive Director Dr. Iftekharuzzaman mentioned in the statement.

EC's inaction and indifference in dealing with the situation is raising worries, he further said.

"The opposition candidates are not only being harassed and oppressed by the ruling party members, but policemen are also playing a discriminatory role against the opposition candidates."

Instead of taking strong steps in controlling these incidents, EC is maintaining silence, which is shameful and unexpected from such a constitutional institution.

EC is yet to be successful in ensuring a level-playing field for all, he added.

TIB also urged EC to ensure a congenial environment for media personnel, so that they can work independently and uninterruptedly during the election.

In order to ensure it, TIB urged EC to provide a guideline for media by taking suggestions from the authorities concerned.

  • Courtesy: The Financial Express/ Dec 19, 2018

Imbroglio over LNG supply

Editorial

That the government agencies are incapable of delivering designated services due to their incompetence and lack of coordination has again been proved in the case of an important energy sector operation---import of liquefied natural gas (LNG) and supply of the same to the transmission pipeline through re-gasification at a floating terminal. Their incapability is responsible for a couple of negative outcomes--- the consumers are not getting sufficient gas and the government is counting financial loss in the form of 'capacity payment'. The entire LNG operation is dependent on external sources. The LNG is an imported energy item and its re-gasification is done at a floating terminal under contract with a US-based company at a substantial cost. Projects of this type do demand meticulous planning and efficient operations. But those are the areas where the state enterprises have been faltering. Things have not been in right order since the beginning. The government struck deals with external supplier of LNG and commissioned FSRU (floating, storage and regasification unit), but could not make available gas to the consumers since the transmission line was not in place.

Another state-agency, the Gas Transmission Company Limited (GTCL) could not complete the construction of the transmission line.  The Petrobangla had to count a large amount as capacity payment on daily basis for its failure to use the capacity of the FSRU for nearly three and a half months. Now the situation is altogether reverse. The long-awaited Anwara_Fouzdarhat section of gas transmission line is fully functional, but it is receiving a very small quantity of gas from the FSRU for scarcity of imported LNG.  And the Petrobangla is now making capacity payment to the FSRU since it does not have enough LNG for regasification.

The Petrobangla, to be honest, has been in a difficult situation since it started its LNG operation. The delay in laying the transmission line made things difficult for it. The corporation had made deals with external LNG supplier/s and floating terminal contractor as per the schedule given by the GTCL. When the latter failed to complete the laying of the transmission line, the Petrobangla got into troubles. Now the transmission line is ready, but there is scarcity of LNG. The import of a fresh LNG consignment takes at least three months.

The government has gone for LNG import to help consumers suffering badly due to poor supply of this cheap and clean energy. But the lack of coordination among relevant state agencies has largely defeated the very purpose of the move. Rather, anomalies of all sorts have been subjecting the national exchequer to unnecessary compensation payments. In this case, it would have been better for the Petrobangla to wait for completion of the transmission line before going for deals with external agencies. The delayed execution of projects has emerged as a serious national problem in recent years. It is taking a heavy toll on the national economy, in terms of cost overruns, in addition to creating other problems. Allegations have it that the delay is often caused deliberately. However, the government instead of addressing the problem has taken a lenient approach to it. Issues like the failure to supply gas in adequate volume would continue to crop up in greater numbers in the future if the government is not serious about dealing with the problem of delayed implementation of projects and programmes.

  • Courtesy: The Financial Express /Dec 19, 2018

Tuesday, December 18, 2018

আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন রোধে ইসি’র নিস্ক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন টিআইবি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে উপর্যুপরি বাধাদান, হামলা-মামলার মাধ্যমে হয়রানি, ভীতিপ্রদর্শনসহ বিভিন্নভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান নিস্ক্রিয়তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়া নির্বাচনী কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে উল্লেখ করে নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে গণমাধ্যমের সরাসরি সম্প্রচার না করার অনুরোধ এবং ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কমিশনের স্ববিরোধী অবস্থান জনমনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থার সংকট আরো বাড়াবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। নির্বাচনী মাঠে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ও পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হয়ে আত্মসম্মানবোধ ও সৎসাহসের সাথে নিরপেক্ষভাবে তৎপর ও দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

আজ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, বহুল প্রতীক্ষিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে উপর্যুপরি মামলা-হামলার মাধ্যমে বাধাদান, হয়রানি, ভীতিপ্রদর্শন মোকাবেলায় নির্বাচন কমিশনের ক্রমাগত ব্যর্থতা এমনকি আত্মমর্যাদাশীল উদাসীনতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা শুধু ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হাতেই লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হচ্ছেন না; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে, এমনকি ঘোষণা দিয়ে আইন-শৃংখলা বিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশকে কলুষিত করার হীন প্রচেষ্টা কঠোর হস্তে দমনের উদ্যোগের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্তভাব যেন নিজেকে পাথরের মূর্তিতে পরিণত করেছে, যেমনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রত্যাশিত ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইসি থেকে বলা হয়েছিল। 

নির্বাচন কমিশনের মত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকরতার এ ধরনের দৃষ্টান্ত লজ্জাজনক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’ তফসিল ঘোষণার পর থেকে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিধায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে তাদের ব্যর্থতার দায় কমিশনের উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কিছু ফাঁকা বুলি ছাড়া কোন প্রকার ইতিবাচক দৃষ্টান্ত এখনো কমিশন স্থাপন করতে পারেনি, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্যদিকে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও আমরা আহ্বান জানাই নিজেদের পেশাগত দায়দায়িত্বের ওপর শ্রদ্ধাবোধে সচেতন হয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়াস করার জন্য।’

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে গণমাধ্যমের সরাসরি সংবাদ প্রচার না করার অনুরোধ সম্পর্কে ড. জামান বলেন, ‘বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে এ প্রথা চালু থাকলেও নির্বাচনী কার্যক্রমে বিঘœ ঘটাবে উল্লেখ করে এ ধরণের পরামর্শের পিছনে যুক্তি বোধগম্য নয়। ভোটকেন্দ্রে ফোন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কমিশনের স্ববিরোধী অবস্থান কমিশনের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।

ফোন ব্যবহার করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে এই যুক্তিতে ফোনের ব্যবহার বন্ধ করা মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার সমতুল্য। তদুপরি ফোন ব্যবহার বন্ধ করা বাস্তবে কোন বিশেষ মহলের কার্যক্রম বিশেষ করে কারচুপি ও সহিংসতামূলক তৎপরতাকে সুরক্ষা প্রদানের নামান্তর কিনা এ প্রশ্ন উঠাও স্বাভাবিক।’ পাশাপাশি, নির্বাচনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীন ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রণয়নে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান ড. জামান।

অব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন জটিলতায় হাই-টেক পার্ক - উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে

সম্পাদকীয়

সারা দেশে ২৮টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দাবি করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে এসব হাই-টেক পার্কের কাজ শেষ হলে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখ উপকারভোগী হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু সেগুলোয় আশাতীতভাবে কর্মচাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সম্প্রতি বণিক বার্তার প্রতিনিধি যশোর থেকে ঘুরে এসে লেখা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের সুষম বিকাশ ও উন্নয়নে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রকল্পটি অনুমোদন হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। একই বছরের সেপ্টেম্বরে এটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ২৫৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় একই বছরের জুন পর্যন্ত। বাস্তবায়ন শেষে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়। যদিও অব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। ১৯৯৯ সাল থেকে হাই-টেক পার্ক সম্পর্কিত আলোচনা চললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উন্নতি চোখে পড়ছে না কারো। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও এ খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়েনি।

হাই-টেক পার্ক থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অব্যবস্থাপনার কথা বলা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, কোম্পানির অব্যবস্থাপনার কারণে শুরু থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা। সেই সঙ্গে সরকার ঘোষিত সুবিধাদি না পেয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা। বিশেষায়িত এ পার্কে প্রাণ সঞ্চার করতে দক্ষ জনবল পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। যে কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন পুরনো ও নতুন উদ্যোক্তারা। ঠিক একই কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। আইটি খাতের অগ্রগতির সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারতের আইটি খাতে অগ্রগতির পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আইটি খাত উন্নয়নে দেশটি প্রথমেই সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য বাজার উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলে। পরবর্তী ধাপে তাদের কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তোলে আইটি পার্ক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টোপথে, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল তৈরি না করেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হাই-টেক পার্ক গড়ে তুলতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর মধ্যে যে কয়েকটি পার্ক চালু হয়েছে, তার অধিকাংশই দক্ষ জনবল সংকটের কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। যশোর হাই-টেক পার্কে প্রথম দফায় লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলে শিক্ষিত বেকারদের রীতিমতো ঢল নামে। কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই এ খাত সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তাই সরকারকে সর্বাগ্রে এসব হাই-টেক পার্কের জন্য দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রমেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।

দক্ষ জনবল ছাড়াও অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে হাই-টেক পার্কে। হাই-টেক পার্কগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া হাই-টেক পার্কের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যশোর হাই-টেক পার্ক সম্পন্ন হলেও জায়গা বরাদ্দের কাজই শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বিপুল জায়গা অব্যবহূত রয়ে গেছে। শুধু হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করলেই হবে না, পাশাপাশি থাকা-খাওয়া-বিনোদন-শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার জন্য মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে হবে। নতুবা দক্ষ জনবল সেখানে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ঢাকা থেকে কাউকে সেখানে কাজে রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে। হাই-টেক পার্ক একটি সমন্বিত প্রকল্প। একে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসবে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে উদ্যোগ সামনে রেখে সরকার আইটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিপুল বিনিয়োগ করছে, তা থেকে বাস্তব ফল লাভে পরিকল্পনার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকাও আবশ্যক। শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তব রূপও দিতে হবে এসবের। হাই-টেক পার্কে বিদ্যমান সমস্যা দ্রুত চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণের কারণে বিনিয়োগ হারিয়ে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারেন। তখন হাই-টেক পার্কগুলো ভবনসর্বস্ব হয়েই থাকবে, অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব থাকবে না।
কার্টসিঃ বনিক বার্তা/  ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

TIB alleges rampant electoral violation today


Independent watchdog Transparency International Bangladesh (TIB) in its latest report  today alleged rampant violation of electoral code in the country ahead of the election.

It conveyed grave concerns over Election Commission’s inaction over the violation, attacks, intimidation and harassment on opposition activists in a statement.

TIB said the commission might lose its trust if it moves to curb live cast from voting centres, mobile phone and restrict the media in carrying out its responsibilities.

It called upon the commission to be active in upholding its constitutional duty and carry it with the virtues of self-respect and righteousness.

“Since the start of electioneering, opposition activists have been attacked, sued, intimidated and harassed,” TIB Executive Director Iftekharuzzaman said.

“The commission’s lax in addressing these issues are concerning. Not only the opposition activists are facing challenges from the ruling party, but also the police,” he said.

“Media reports indicate that opposition men are facing discrimination from police,” he said.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 18, 2018

কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার কাজে

সমন্বয়হীনতায় রাজধানীর উন্নয়ন প্রকল্প 


রাজধানীর তেজগাঁও থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আগামী বছরের জুনে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতাকে এ ধীরগতির কারণ বলছেন ডিএনসিসি কর্মকর্তারা। কারণ প্রকল্পের জন্য যে জমি দরকার, তার পুরোটাই সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার। এ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে সময়মতো জমি পায়নি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

ঢাকার শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়ায় সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০১৭ সালে ৭৭৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। ধীরগতির কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকা সদ্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা আগে ইউনিয়ন ছিল। ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ায় বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতিই ধীরগতিতে রেখেছে প্রকল্পটিকে।

রাজধানীজুড়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ১৪টি বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কোনোটির অগ্রগতিই কাঙ্ক্ষিত মানের নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই এর কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, শহরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান ও সাতটি মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই আবার একে অন্যের ওপর প্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে মনে করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে ফ্লাইওভার কিংবা মেট্রোরেল প্রকল্পের কথা বলা যায়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট থাকছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও দৃশ্যমান। রাজধানীর রাস্তার বাতি পরিবর্তনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হলেও বাতির খুঁটি স্থাপন কিংবা সেগুলো স্থানান্তরের ক্ষমতা নেই তাদের হাতে। সব মিলিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের অভাবে নগরীতে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়নাধীন পাঁচটি প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া এলাকায় সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৭৭৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি এর মধ্যে অন্যতম। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড উন্নয়নের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। ঢাকা দক্ষিণের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুনে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। ডেমরা, মাণ্ডা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি প্রকল্প শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। মেয়াদ ধরা আছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজে টেন্ডার আহ্বান ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দেয়া রয়েছে ১ হাজার ২১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যার মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে হলে বাকি ৪৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে পরবর্তী নয় মাসে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন ধরনের নয়টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত মানের নেই। ফলে সংশয় রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে এসব প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে।

ভৌত অগ্রগতিতে আরো নাজুক অবস্থায় আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়কবাতি, সিসিটিভি কন্ট্রোল সেন্টার সরবরাহ ও স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প। চলমান এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকায় ৪০ হাজারটি আধুনিক এলইডি সড়কবাতি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।

২০১৬ সালের জুনে নেয়া ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণের একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পেরও ভৌত অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।

৭৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি ডিএনসিসি অংশ) প্রকল্পের কাজ চলছে, যার মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি ইমার্জেন্সি অপারেটিং সেন্টার ও কয়েকটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস স্থাপন করার কথা রয়েছে। বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

২৭৯ দশমিক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানগুলোর উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা ২০১৯ সালের জুনে শেষ হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠ উন্নয়ন, ১৫টি ফুটওভার ব্রিজ উন্নয়ন ও সৌন্দর্যকরণ, ৭৩টি স্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং চারটি কবরস্থানের উন্নয়নকাজ করা হবে। এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮ শতাংশ।

৬১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলমান আছে, যার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ৮৪৪ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা ও মহাখালীর মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণ হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ।

২৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়নকাজের জন্য অ্যাসফল্ট প্লান্ট-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় গাবতলীতে একটি অত্যাধুনিক অ্যাসফল্ট প্লান্ট স্থাপন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ১০ শতাংশ।

১৭৭ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে গাবতলী সিটি পল্লীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্লিনারদের জন্য বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। ২০১৭ সালের জুনে নেয়া প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্লিনার কর্মীদের জন্য চারটি ১৫ তলা আবাসিক ভবন ও একটি স্কুল নির্মাণের কথা রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মো. মাহবুব হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, কোনো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে সাধারণত সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অবশ্যই যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। কেস টু কেস ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারলে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কেন কাজ সম্পন্ন হয়নি, প্রকল্প পরিচালকই তা ভালো বলতে পারবেন।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮