Search

Wednesday, January 9, 2019

আটকে গেল এপিআই শিল্প পার্কের কর অবকাশ সুবিধা - শিল্পের স্বার্থেই দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি জরুরি

সম্পাদকীয়

তৈরি পোশাক, চা কিংবা চামড়াজাত পণ্যের সমান্তরাল রফতানি পণ্য হয়ে উঠছে দেশে উৎপাদিত ওষুধ। ৯৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ১৪৪টি দেশে এখন রফতানি হচ্ছে। ওষুধ উৎপাদন ও রফতানিতে সাফল্য থাকলেও এ খাতের বড় চ্যালেঞ্জ, কাঁচামালের (এপিআই) দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থা। কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে পারলে ওষুধ শিল্পের দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানি পণ্য খাত হয়ে ওঠা কঠিন হবে না। এক্ষেত্রে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এপিআই শিল্প পার্ক বাস্তবায়নের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এদিকে নারায়ণগঞ্জে স্থাপিত এপিআই শিল্প পার্কে চলছে নানা ঝামেলা। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে কারখানা স্থাপনকারী নয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে দেয়া কর অবকাশ সুবিধা আটকে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। উল্লেখ্য, ওষুধ শিল্প মালিকদের আরেকটি সংগঠন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল করা হয় সম্প্রতি কর অবকাশ সুবিধা চাওয়া বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমেডিয়ারিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন বাতিল করায় আপাতত কর সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। বিরোধ নিরসন করে একক সংগঠনের অধীনে আবেদন করা হলে বাণিজ্য বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আলোকে ফের কর অবকাশ সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কাজেই শিল্পের সার্বিক উন্নতি বেগবান করতে দ্রুত ব্যবসায়ীদের দুই শিবিরের বিরোধ নিরসন জরুরি।



লক্ষণীয়, সম্ভাবনা অনুযায়ী এখনো আমাদের ওষুধ শিল্পের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ হয়নি; কাঁচামাল উৎপাদনে তৈরি হয়নি স্বয়ংসম্পূর্ণতা। সুখবর হলো, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড় আমাদের জন্য ভীষণ দরকার ছিল। এটা না হলে বর্তমান বাজারে ওষুধের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যেত। এমনটি হলে দরিদ্র শ্রেণীর জন্য ওষুধ কেনা কষ্টসাধ্য ছিল। উন্নত দেশে ওষুধের দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ সেখানে পেটেন্টধারী কোম্পানিকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় উৎপাদক কোম্পানিকে। উল্লিখিত সময় পর্যন্ত মেধাস্বত্বে ছাড়ের কারণে আমাদের এ বাবদ বিপুল অর্থ বেঁচে যাবে। সুতরাং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের ওষুধ শিল্পকে কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিল্প পার্ক সচলে যেভাবে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত হতাশাজনক। দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি মূল্য সংযোজনের স্বার্থেই এক্ষেত্রে গতি আনা দরকার।



বাংলাদেশের ওষুধ মানের দিক থেকে এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়া মোটেই সহজ হয়নি। ইউরোপ ও আমেরিকায় ওষুধের মতো স্পর্শকাতর পণ্য বাজারে যায় যথাযথ মান যাচাইয়ের পর। তাদের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়ার ওপর সবাই আস্থাশীল। সেই মান যাচাইয়ের পরীক্ষায় পাস করেই আমাদের ওষুধ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এটি কম প্রাপ্তি নয়। সুতরাং কেবল বিদেশ নয়, দেশের অভ্যন্তরেও কম মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সরবরাহের কাজ আরো বেগবান করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা কাম্য।

Courtesy: Banikbarta Jan 09, 2019

সড়কে বিশৃঙ্খলা - মামলাতেই সমাধান খুঁজছে পুলিশ


  • বছরের প্রথম সপ্তাহের প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার মামলা
  • প্রতিদিন জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা


চলতি বছরের প্রথম সাত দিনে রাজধানীর সড়কে পুলিশ মামলা করেছে ২৬ হাজার ৫৭১টি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার মামলা করেছে পুলিশ। প্রতিদিন জরিমানা আদায় করেছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। উল্টো পথে গাড়ি চালানো, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস লাগানো, গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহারসহ কাগজপত্র ঠিক না রাখার কারণে এসব মামলা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর মধ্যে ঢাকা শহরে গণপরিবহন চলার সময় দরজা বন্ধ রাখা এবং নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা ছিল অন্যতম। বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিআরটিএ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ রাজধানীর শতাধিক স্থানে বাস থামার জায়গা চিহ্নিত করে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যত দিন পর্যন্ত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো দায় নেবে না, তত দিন সড়কের পরিস্থিতি বদলাবে না, বরং আরও খারাপ হবে। সংস্থাগুলো দায় এড়ানোয় নির্দেশনাগুলো কাগজে–কলমেই রয়ে গেল। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে সরকারের কাছ থেকে অনেক আত্মসমালোচনা, সুন্দর সুন্দর কথা শোনা গেল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ হলো না। সড়কের নিরাপত্তার সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টি যুক্ত। এরপরও নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলো না, সেটির উত্তর খুঁজে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে ও নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক সমিতি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয়। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ প্রতিদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়কে পুরোপুরি শৃঙ্খলা আনা গেছে এই দাবি করব না। এখনো যত্রতত্র বাসের যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ করা যায়নি। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে সংস্থাগুলোকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’

বছরের প্রথম দিনেই রাজধানীর সড়কে ঝরে প্রাণ। মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় বাসচাপায় মারা যান দুই নারী। সদরঘাট থেকে গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের বেপরোয়া একটি বাস তাঁদের দুজনকে চাপা দেয়। বাসচালকের শাস্তির দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেট, মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাসচালকেরা যত্রতত্র যাত্রী ওঠাচ্ছেন-নামাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে চলন্ত অবস্থায় বাস থেকে যাত্রীদের নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাসের পাদানিতেও যাত্রীদের ঝুলতে দেখা যায়। মাঝে কিছুদিন বাসের দরজা বন্ধ রাখা হলেও সেটি এখন আর মানা হচ্ছে না।

সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী পথে চলাচলকারী এম এন লাভলী পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী মো. ইলিয়াস বলেন, ‘এখন আর গেট লাগাই না। মাঝে পুলিশ ঝামেলা করত। এখন আর কিছু বলে না। মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) বসলে গেট লাগাই।’

বাসের ভেতরে দৃশ্যমান দুটি জায়গায় চালক ও চালকের সহকারীর ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর এবং মুঠোফোন নম্বর প্রদর্শন করার নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনাটি একেবারেই বাস্তবায়িত হয়নি। গতকাল অন্তত ১০টি বাসে উঠে দেখা যায়, কোনো বাসেই চালকের ছবিসহ লাইসেন্স, মুঠোফোন নম্বর ঝোলানো হয়নি।

পদচারী–সেতুর উভয় পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে সড়ক পারাপার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতকাল শ্যামলী এলাকায় দেখা যায়, পদচারী–সেতুর নিচে সড়ক বিভাজকে কোনো প্রতিবন্ধকতা বসানো হয়নি। পথচারীরা যানবাহনের মাঝ ও সামনে দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছে।

রাজধানীর ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে থাকায় পথচারীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই মূল সড়কে হাঁটে। ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে ক্যান্টনমেন্টের জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত ‘মডেল করিডর’ চালুর কথা জানিয়েছিলেন। এ পথটুকুতে স্বয়ংক্রিয় সংকেতের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করার কথা। গতকাল পর্যন্ত এই পথের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি।

তবে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী দুজনই হেলমেট ব্যবহারের নির্দেশনা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর অধিকাংশ প্রধান সড়কে লেগুনা বা হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ আছে। তবে কিছু পথে এখনো লেগুনা চলাচল করছে।


  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ৯,২০১৯ 

চালের বাজার অস্থির কেন?

গওহার নঈম ওয়ারা  
ভোটের পরপরই চালের ‘জ্বর’ বাড়তে শুরু করেছে। প্রথমে মনে হয়েছিল ভোটের তালে রাস্তা রুখে দেওয়ায় ট্রাক পরিবহন সাময়িক বন্ধ ছিল, এ কারণে সরবরাহের শিকলে টান পড়েছে। এখন ভোট শেষ। সবকিছু কবজায়। কিন্তু চালের দাম বাড়ছে। ভোটের হাওয়া বইবার আগে আমন ধানে বাজার সয়লাব হয়েছিল। আবহাওয়া বিরূপ না থাকায় বাম্পার ফলন ছিল। কিন্তু চাষি ধানের দাম পাননি। হাটে হাটে ঘুরেও চালান ওঠেনি তাঁর।

বগুড়ার আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রামের হাটে গত ২০ নভেম্বর ধানচাষি কদম সরকার গিয়েছিলেন ধান বেচতে। তাঁকে সেদিন বাধ্য হয়ে এক মণ ধান ৬৫০ টাকায় বেচতে হয়েছিল। তাঁর মতো প্রায় সব চাষিকেই তখন কম দামে ধান বেচতে হয়েছে। তখন দেশের নানা হাটবাজারে নতুন আমন ধান বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৬৯০ টাকায়। অথচ ২০১৭ সালের একই সময় আমন ধান বিক্রি হয়েছিল ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সেটাও কিন্তু তেমন লাভজনক ছিল না। এক মণ ধান ফলাতে কৃষকের কমবেশি ৮০০ টাকা খরচ হয়।

ধানের বাজার মন্দা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংবাদকর্মীরা দেশের অন্যতম ধান উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এলাকা নওগাঁর ধান ও চাল পাইকার সমিতির সভাপতি নীরদ বরণ সাহার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি সেদিন জানিয়েছিলেন ধানের অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। আড়তে–গোলায় ধান রাখার জায়গা নেই। তাই পাইকারেরা আর কিনছেন না। তা ছাড়া সরকার রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ৩৮ লাখ ৯২ হাজার টন চাল আমদানি করে সব গুদাম–আড়ত ভরে ফেলেছে। এখন ক্রেতা নেই, তাই দাম নেই। অর্থনীতির সহজ পাঠ—সরবরাহ বেশি, চাহিদা কম— তাই দাম কম। এতে পাইকারদের কী করার আছে? তাঁরা পুতুলমাত্র, বাজারের দাস। নীরদ বরণ সাদামাটা ভাষায় সেটাই বলেছিলেন।

বাজার অর্থনীতিতে বাজার চলে বাজারের গতিতে। যেমন ‘আইন চলে আইনের গতিতে’। দুষ্ট লোকেরা যদিও বলেন, এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে আইন চলে পুলিশের হাত ধরে, যেমন পুঁজিবাদী বাজার চলে পুঁজির হাত ধরে। আমাদের ধান–চালের পুঁজির মালিক আড়তদার, পাইকার আর তাঁদের রাজনৈতিক দোসররা। ফলে তাঁদের হাতেই বাজার।

আমনের আগে আউশ, বোরো দুটোর ফলনই ভালো ছিল ২০১৮ সালে। আগের বছরের (২০১৭) হাওর ট্র্যাজেডির ধকল দেশ কাটিয়ে ওঠে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা প্রান্তিক কৃষক আর ভাগচাষিদের পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায়। প্রকৃত উৎপাদক তঁারাই। বলা বাহুল্য, কথিত বাজার অর্থনীতির উৎপাত সামলানোর কোমরের জোর তাঁদের নেই। মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ধান বেচতে না পারলে তাঁদের ভাত জোটে না। যে ধারদেনা করে তাঁরা জমি বর্গা রাখেন, সার নেন, বীজ, কলের লাঙল, পানি, নিড়ানি কীটনাশকের দাম মেটান; তা সুদে-আসলে শোধ করতে হয় ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। এই সহজ হিসাবটা ধানের মূল ক্রেতা আড়তদার-পাইকারেরা জানেন বলেই ধান উঠলে তাঁরা হাত গুটিয়ে নেন। চাষি বাধ্য হন কম দামে ধান ছেড়ে দিতে। লোকসানি দামে না বেচে হাট থেকে ধান বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো গাড়িভাড়াও তাঁর থাকে না। তাঁকে আড়তদারের হাওলায় রেখে যেতে হয় রক্ত-ঘামে ভেজা ধান।

এসব কি শুধুই ভবিতব্য ভাগ্যের লিখন, না এর মধ্যে কোনো কারসাজি আছে? লোকসানি দামে ধান বেচে বেশি দামে চাল কিনতে হবে কেন কৃষককে? দেশের সব প্রান্তে একই সঙ্গে একইভাবে হঠাৎ কেন দাম বাড়বে চালের? ঢাকার পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, নির্বাচনের তিন দিন আগে পরিবহনব্যবস্থায় কড়াকড়ির কথা বলে চাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলেন মিলাররা। নির্বাচনের পর চাল সরবরাহ শুরু হলেও মিলগুলো থেকেই প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দুই ধাপে ১০০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। কারওয়ান বাজার, মিরপুর ১, উত্তর বাড্ডা, সাতারকুল পাইকারি বাজার, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, বরগুনা সব জায়গায় একই কাহিনি। পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি দুই টাকা বাড়ায় খুচরা ক্রেতাকে কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

তিন তিনটা ভালো ফসলের রেকর্ড আর যথেষ্ট আমদানি মজুত থাকার পরও এবার দাম বাড়া শুরু হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এক খুচরা বিক্রেতা জানালেন, আড়তদার, পাইকার বলেছেন ıধরে ধরে বেচতে, বাজারে টান আছে। তার মানে দাম আরও বাড়বে। কৃষিতে ভর্তুকির কথা বেতার, তার, কাগজে, টিভিতে আর বাজেট বক্তৃতায় হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু এর কতটুকু আসল চাষির কাছে পৌঁছায় তার হিসাব কেউ দিতে পারবে কি? বেচার সময় দাম না পাওয়া চাষি চাল কেনার সময় কোনো ভর্তুকি পান কি?

আসল চাষির তো বলতে গেলে জমিই নেই। তিনি জমি নেন নগদ টাকায় সনভিত্তিক বরাদ্দ। জমির মালিকের হাতে আগাম টাকা না দিলে জমি তিনি পান না। তেভাগার দিন এখন জাদুঘরে। ফসল হোক না হোক, জমির মালিকের হক তাঁকে আগাম আদায় করতে হয়। আবার ভর্তুকি, সহজ শর্তের ঋণ, সার, বীজ, অনুদান সহযোগিতা সবই যায় জমির মালিকের কাছে। যাঁর জমি নেই কিন্তু হাড়ভাঙা পরিশ্রমে চাষ করেন, তাঁকে দেখার কোনো চশমা নেই সিদ্ধান্তের মালিকদের কাছে।

এখনো দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৬ ভাগ কৃষিতেই যুক্ত, তারপরও আনুপাতিক হারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রতিবছর ধাপে ধাপে কমছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ২ দশমিক ২ শতাংশ ছিল এই মন্ত্রণালয়টির জন্য। ২০১৭-১৮–তে বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ১২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের জন্য।

অন্যদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কৃষির জন্য বরাদ্দ মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। আমাদের পেঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল, চালের ঘাটতি হলে আমরা যে বন্ধুর দিকে হাত বাড়াই, সেই ভারতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লি উন্নয়নের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। নতুন মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নিশ্চয় একবার চেষ্টা করবেন কৃষির আসল চালিকাশক্তি প্রান্তিক চাষির মুক্তির জন্য কম দামে ধান বেচে বেশি দামে চাল কেনার দুষ্ট চক্র ভাঙতে।

  • গওহার নঈম ওয়ারা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ৯,২০১৯ 

‘বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে আছে সরকার’ — রুহুল কবির রিজভী


বুধবার, জানুয়ারি ০৯, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা পাবার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পরে গতকাল নিকটাত্মীয়রা দেখা করার অনুমতি পায়। এখনও বেগম জিয়া অসুস্থ। সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হতেই তাঁকে বিএসএমএমইউ থেকে কয়েকদিন পরেই কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা পাবার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। এভাবেই মানসিক নিপীড়নের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে সরকার। দেশনেত্রীকে নির্যাতন করে প্রতিহিংসার যেন শেষ হচ্ছে না। বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে এক গভীর চক্রান্তে মেতে আছে সরকার।’


সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল 

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পরে গতকাল নিকটাত্মীয়রা দেখা করার অনুমতি পায়। এখনও বেগম জিয়া অসুস্থ। সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হতেই তাঁকে বিএসএমএমইউ থেকে কয়েকদিন পরেই কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা পাবার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। এভাবেই মানসিক নিপীড়ণের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে সরকার। দেশনেত্রীকে নির্যাতন করে প্রতিহিংসার যেন শেষ হচ্ছে না। বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে এক গভীর চক্রান্তে মেতে আছে সরকার।  
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বারবার বাধাগ্রস্ত করছে সরকার। যে মিথ্যা মামলায় ইতোপূর্বে অনেকেই জামিন পেয়েছেন, অথচ সেই মামলাগুলোতেই আদালতকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে। কুমিল্লার মিথ্যা নাশকতার মামলায় বারবার তারিখ পিছিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। আদালতে ন্যায় বিচার পেলে কুমিল্লায় দায়ের করা মিথ্যা নাশকতা মামলায় বিচারিক আদালতেই বেগম জিয়া জামিন পেতেন। আদালত জামিনও দিচ্ছে না আবার জামিন নামঞ্জুরও করছে না। ফলে বেগম জিয়াকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পথও রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের নির্দেশেই নিন্ম আদালত বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে। শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়াকে হয়রানী করার জন্যই তা করা হচ্ছে। আওয়ামী সরকার জুলুমের যতো পথ-পদ্ধতি আছে সবই প্রয়োগ করছে বেগম জিয়ার ওপর।   
সাংবাদিক বন্ধুরা,শাসকশক্তির পৃষ্ঠপোষণার দ্বারা মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর এখন সারাদেশে ব্যাপক নির্বাচনী সহিংসতা চালাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের দমন করে  বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, খুন, ধর্ষণ, হামলা থেকে শুরু করে এখন নেতা-কর্মীদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করছে। ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার অপরাধে গ্রামের মানুষজনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ত্ব নিশ্চিত করতে একতরফা নির্বাচনের জন্য প্রচার মাধ্যমগুলোকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে, যাতে সত্য ঘটনা প্রকাশ হতে না পারে। একদিকে হামলা-মামলা ও আটক করা অন্যদিকে নিজেদের প্রচারের আতিশয্য বজায় রেখে প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে বিষোদগার বেগবান করা হয়েছে। নির্বাচনোত্তর সহিংস সন্ত্রাসের প্রকোপে জনজীবন গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের মধ্যে পতিত হয়েছে। 
বিরামহীন সন্ত্রাসের প্রসারে দেশজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অবৈধ শাসনের শৃঙ্খল থেকে মানুষের মুক্তির আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। নিপীড়ণ-অত্যাচারের সংবাদও গণমাধ্যম যাতে প্রকাশ না করে সেজন্য ভয়ংকর সেন্সরশীপ চালানো হচ্ছে। টিভি টকশো, সংবাদপত্রের নিবন্ধ, ফেসবুক ইত্যাদি যাতে সরকারের পক্ষে থাকে তারজন্য আগেভাগেই গণবিরোধী আইনে-বেআইনের সব কালো পথ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার একটি। আবার একইসাথে স্বৈরশাসনের অংশীদার কিছু মিডিয়ার পক্ষপাতিত্বও সবার কাছে পীড়াদায়ক। বন্ধুরা, এদেশে গণতন্ত্রের ভীত সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে, নিষ্ঠুর দমনে গণতন্ত্র এখন পীড়িত।  
বন্ধুরা,দেশজুড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানি ও মামলা হামলার পর দুদককে দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে আবারও মামলা দায়ের করেছে দুদক। গত দশ বছরে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে নিলেও, সমস্ত ব্যাংক লুট হয়ে গেলেও দুদক চোখ বন্ধ করে বসে আছে। গণমাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সাগর চুরির খবর প্রকাশ করলেও খোদ সংসদে দাঁিড়য়ে সরকারের মন্ত্রীরা সাগর চুরির কথা বললেও দুদক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত হয়রানী করছে দুদক। মূলত: দুদক বিরোধী দল নির্যাতনের যাঁতাকল হিসেবে কাজ করছে। আমি মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। 
সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ , * শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে ঢাকা-হাতিয়া ও ঢাকা-চরফ্যাশন নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযান এমভি তাসরিফ-১, ২, ৩ ও ৪ লঞ্চের ক্যান্টিন, পানের দোকান ও চায়ের দোকানগুলো ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জোর করে দখল করে নিয়েছে পুরান ঢাকার ছোটন কমিশনার ও তার সহযোগী যুবলীগ ক্যাডার বাবু। উল্লেখ্য, প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীদের সুবিধার্থে ক্যান্টিন, পানের দোকান ও চায়ের দোকানের ব্যবস্থা থাকে। আর এজন্য ফেয়ারী শিপিং লাইন্স লিমিটেড এর মালিক পক্ষ এমভি তাসরিফের লঞ্চগুলোর ক্যান্টিনের অগ্রিম বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ, পানের দোকানের অগ্রিম বাবদ দশ লক্ষ ও চায়ের দোকানের অগ্রিম বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা জমা নিয়ে চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদেরকে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। এমভি তাসরিফ এর লঞ্চগুলোর ক্যান্টিন, পান ও চায়ের দোকানগুলো গায়ের জোরে দখলকারিদের কবল থেকে মুক্ত করে যথাযথ ব্যবসায়ীদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর আহবান জানাচ্ছি। 
* পিরোজপুর জেলাধীন মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী রুহুল আমিন দুলালসহ ২২ জন নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় গতকাল পিরোজপুর কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন পূর্বসময়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, পিরোজপুর জেলা বিএনপি’র দফতর সম্পাদক তোহিদুল করিম এবং নাজিরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক লাহেল মাহমুদসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। 
* পাবনার চাটমোহরে বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার ভোর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বাঙ্গাল্লা গ্রামে ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের দেয়া আগুনে তার বসত ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র, জমির দলিলপত্রসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে অল্পের জন্য পরিবারের সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পেলেও প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কতটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর হলে এমন পৈশাচিক ঘটনা ঘটাতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

ডাকসু নির্বাচন - এখানেও মাঠ সমতল করাই চ্যালেঞ্জ

সম্পাদকীয়

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনের ওপর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়া একটি ভালো অগ্রগতি। সেই হিসাবে আগামী মার্চের মধ্যে এই নির্বাচন হতে হবে বলেই ধরা যায়।  

কিন্তু সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন থেকে আজকের প্রেক্ষাপটের তুলনা করলে মানতে হবে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। বিশেষ করে সেই পরিবর্তনের প্রভাবে ক্যাম্পাসের চিরচেনা ‘ছাত্ররাজনীতি’ আমূল পাল্টে গেছে। নব্বইয়ের গণ–আন্দোলনে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ছাত্ররাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা জরুরি মনে করা হলেও এর সংজ্ঞায় পরিবর্তনের দাবি উঠেছিল। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে নির্বাচনী আইনে প্রধান দলগুলো এই বিধান অন্তত কাগজে-কলমে মেনেছে যে ছাত্রসংগঠনগুলো এখন আর ‘অঙ্গ’ নয়, ‘সহযোগী’ সংগঠন। তবে বাস্তবে এই পরিবর্তনের কোনো প্রভাব দেখা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনগুলোকে আগের মতোই মূল দলের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে অথবা ছাত্রসংগঠনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে গায়েবি মামলায় দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি যেভাবে জাতীয় রাজনীতিতে জেরবার, সেভাবেই বিরোধী দল সমর্থিত ছাত্রসংগঠনগুলোও ক্যাম্পাসে কোণঠাসা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং মহাজোটের শরিক দলের সমর্থিত ছাত্রসংগঠনগুলো ছাড়া ছাত্রদল এবং অধিকাংশ বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ও পরিবেশ ডাকসু নির্বাচনের জন্য অনুকূল আছে বলে মনে করে না। নব্বই সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এই নির্বাচনটি ঝুলে ছিল। এর সপক্ষে বহু দাবিদাওয়া জানানো হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর এখন এই নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনকে অর্থপূর্ণ করার অন্যতম শর্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধির অংশগ্রহণ। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করে চলেছি যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বায়ত্তশাসনের ধারণায় ব্যাপক ধস নেমেছে। সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচন নিয়েও নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সুতরাং বহুপ্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা উদ্বেগজনক যে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো অব্যাহতভাবে বলছে যে ডাকসু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই। এর সপক্ষে তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে সবগুলো আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে। সেখানে আর কারও কিছু করার সুযোগ নেই। তাদের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের কে কোন কক্ষে থাকবে, সেটি পর্যন্ত ছাত্রলীগ নির্ধারণ করে দেয়।

এমন অভিযোগ ছাত্রলীগ অস্বীকার করলেও বাস্তবতা এটাই যে ছাত্রদল সমর্থিত নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি খুবই কম। এবং তাদের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। এমনকি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ছাত্রদল ও তার সমর্থকেরা ক্যাম্পাসে চা খেতে এসেও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।

জাতীয় রাজনীতিতে নির্বাচনের আগে যেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না, এ ক্ষেত্রেও সেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা অব্যাহতভাবে নির্বাচনের মাঠ সমতল কারার কথা বলে এসেছি। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখেও আমরা সেই একই দাবি জানাতে চাই। সব ছাত্রসংগঠন যাতে ক্যাম্পাসে সমভাবে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করব দীর্ঘ বিরতির পর যে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা উৎসবমুখর পরিবেশে সবার অংশগ্রহণে ও কোনো রকম অনিয়ম ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আল/জানু ৯, ২০১৯ 

কক্ষ দখল নিয়ে ঢাবিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ওই হল শাখার অনুসারী নেতা-কর্মীদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ সংঘর্ষ হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।

হলের প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্র বলেন, গতকাল মধ্যরাতে সূর্য সেন হলের ২০৭ নম্বর কক্ষটি নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। কক্ষটি এত দিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হকের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ওই কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের হল শাখার অনুসারীরা তাঁদের কর্মীদের ওঠানোর চেষ্টা করলে এ নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরে সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরা হলের অতিথিকক্ষে আর রেজওয়ানুল হকের অনুসারীরা দোকানের সামনে জড়ো হন। জড়ো হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পরস্পরের ওপর চড়াও হন। আধা ঘণ্টা ধরে এই সংঘর্ষ চলে। পরে রেজওয়ানুল হক ও সাদ্দাম হোসেনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, সূর্য সেন হলে সাদ্দাম হোসেনের অনুসারীরা হল শাখা ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক সিয়াম রহমান এবং রেজওয়ানুল হকের অনুসারীরা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খ. ম. মুহতাসিম মাহমুদ হাসিবের সঙ্গে রাজনীতি করেন। এই দুই পক্ষের মধ্যেই গতকাল রাতে কথা-কাটাকাটি ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের কেউ হতাহত হননি।

ঘটনার বিষয়ে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমিও ছিলাম। ঘটনা তদন্তে হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছি। যারা বিবাদে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের ডেকে নিয়ে তাদের বক্তব্য শুনছি। কমিটি আজ প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

ঘটনার পর গতকাল রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, তিনি এখনো ঘটনাটি ভালোভাবে জানেন না। আজ বুধবার সকালে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সংঘর্ষের এই ঘটনায় গ্রুপিংয়ের কোনো ব্যাপার নেই দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সূর্য সেন হলে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের একটা সংঘবদ্ধ অশুভ চক্র আছে। তারা হলের পরিবেশ অশান্ত করার জন্য রুম দখলের পাঁয়তারা করছিল। হল শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে।’

দুই পক্ষই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কারও আশীর্বাদপুষ্ট হলেই কেউ ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে যায় না। দেখতে হবে সে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কমিটিতে আছে কি না। কমিটিতে না থেকেও তারা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই, হলের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাক। ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ৯,২০১৯ 

রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ বন্ধ হচ্ছে

দীন ইসলাম 

রাজনৈতিক বিবেচনায় সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। ক্যাডার সার্ভিস বা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এপিএস নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা তাদের পছন্দমতো একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ দিতে পারবেন না। সরকারের তৈরি করা প্যানেল তালিকা থেকে পিএস নিয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। 

সারসংক্ষেপ অনুমোদনের আগে কাউকে পিএস বা এপিএস নিয়োগ দেয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল একাধিক মন্ত্রী তাদের পছন্দসই কর্মকর্তাকে (সিনিয়র সহকারী সচিব/উপসচিব) একান্ত সচিব পদে নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) পাঠান।

এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য জনপ্রশাসন সচিবকে ফোন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানানো হয়, পিএস পদে নিয়োগ দিতে একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানোর কথা রয়েছে। এতে পিএস বা এপিএস পদে নিয়োগ দেয়া যায় এমন কর্মকর্তাদের নাম থাকবে। 

ওই তালিকায় কারও নাম না থাকলে পিএস বা এপিএস করা যাবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতায় সরকার দেখেছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থাকায় স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিবার থেকে পিএস বা এপিএস পদে অনেকেই নিয়োগ পান। ভবিষ্যতে পোস্টিং, পদোন্নতি বা নানা সুবিধার জন্যই এসব কর্মকর্তা পিএস বা এপিএস হয়ে থাকেন। এমন চিন্তা মাথায় রেখেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, স্বচ্ছ ইমেজ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তা ছাড়া কাউকেই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) বা সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদে নিয়োগ করা যাবে না।

এজন্য বিভিন্ন ধরনের যাচাই বাছাই শেষে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় ক্যাডার সার্ভিসের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। এদিকে গত সোমবার শপথের পরই পিএস/এপিএস হতে আগ্রহী বিভিন্ন ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তারা নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে চেষ্টা তদবির শুরু করেন। গতকাল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই পিএস ও এপিএস পদে নিয়োগ দিতে বেশ কয়েকটি ডিও লেটার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে যায়। তবে আপাতত এসব ডিও লেটারের বিপরীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না।   
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৯, ২০১৯  

শ্রমিক বিক্ষোভ সংঘর্ষ, ভোগান্তি

পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনায় কমিটি


নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও বেতন বৈষম্য রোধের দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শিল্প শ্রমিকরা। রাজধানীর কালশি, উত্তরা, সাভার এবং গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাভারে গুলিতে সুমন মিয়া নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্দোলনকারীরা। মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল ও থানা পুলিশ নিশ্চিত করলেও কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল উত্তরার আজমপুর ও সাভার এলাকায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় বিমানবন্দর সড়ক থেকে উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড়, আজমপুর রেলক্রসিং এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে মিরপুরের পল্লবীর কালশিতে। এ সময় এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গতকাল বিকালে জরুরি বৈঠকে ডাকে সরকার। ওই বৈঠকের বিষয়টি শ্রমিকদের অবগত করার পর তারা রাস্তা থেকে সরে যায়। বৈঠক শেষে জানানো হয় মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধান করারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। 

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ  করছেন গত চার দিন ধরে। গতকালও একই দাবিতে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন শ্রমিকরা। ওই এলাকার নীপা গার্মেন্ট, চৈতি গার্মেন্ট, ফ্লোরা ফ্যাশন, অ্যাপারেলস গার্মেন্টসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা এতে অংশ নেন।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গার্মেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা বিমানবন্দর সড়কের দিকে এগিয়ে যায়। আগে থেকেই সেখানে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিলো। এমনকি আশেপাশে ছিলো সাঁজোয়া যান। বিমানবন্দর সড়ক অবরোধকালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে জসিম উদ্দিন মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের একাংশ জড়ো হয় আজমপুরে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এ সময় সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও শ্রমিকরা অবস্থানে অটুট থাকে। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। দুপুরের পর আবারো তারা জড়ো হতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে।

ওদিকে মিরপুরের পল্লবীতে জড়ো হয়ে দাবি আদায়ের জন্য নানা স্লোগান দেন পোশাক শ্রমিকরা। সকাল ৯টার পর থেকে তারা কালশি সড়কে অবস্থান নেন।  এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে ২২ তলা গার্মেন্ট এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের কারণে সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। একপর্যায়ের শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। পল্লবী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) জানান, সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সাভারে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, নিহত ১: সাভার-আশুলিয়ায় বেতন বৈষম্যের অভিযোগ এনে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা  ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মিয়া (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় মো. মকুল নামে আরো এক শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, পুলিশ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা যায়। পরে সাভার মডেল থানার ওসি আবদুল আউয়াল স্বাক্ষর করে নিহতের মৃতদেহটি নিয়ে যায়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, মো. সুমন মিয়া এক শ্রমিককে তার সহকর্মী রিপন মিয়া ও পুলিশ বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নিয়ে আসে। তার বুকের বাম পাশে গোল চিহ্ন রয়েছে তা গুলি কিনা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। এ ছাড়া মো. মকুল নামে আরো এক শ্রমিকের বাম উরুর পেছনে গুলি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহতের খবর শুনেছি। তবে ওই কারখানায় আমাদের কোনো লোক না থাকায় বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি। আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা শামিনুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে আমাদের সঙ্গে ওই কারখানার শ্রমিকদের কোনো সংঘর্ষ কিংবা গুলির ঘটনা ঘটেনি।

সকালে সাভারের হেমায়েতপুরে পদ্মার মোড় বাগবাড়ি এলাকায় এই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সকাল ৮টা থেকে দুপুর  পর্যন্ত চলে। এ সময় ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় যানচলাচলসহ সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, হেমায়েতপুরের পদ্মার মোড় বাগবাড়ি এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শামস স্টাইল ওয়্যারস লিমিটেডের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে পার্শবর্তী দীপ্ত অ্যাপারেলস কারখানাসহ আরো বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও আন্দোলনে যোগ দেন। পরে তারা হেমায়েতপুর-শ্যামপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে অবরোধ করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

সংঘর্ষে এ সময় পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে শ্রমিক পুলিশের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুরো এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন শাখা সড়ক ও গলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে শ্রমিকদের প্রতিহত করে। শ্রমিকরা জানায়, আমাদের ন্যূনতম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন গত ডিসেম্বরে জারি হয়েছে।

কিন্তু সেখানে আমাদের সব দাবি-দাওয়া উত্থাপন হয়নি। অপারেটর ও হেলপারের বেতনের মধ্যে অনেক বৈষম্য ও ব্যবধান রয়েছে। আমরা এগুলো দূর করার কথা বলছি। কিন্তু মালিকপক্ষ আমাদের দাবিতে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। অন্যদিকে সাভার পৌর এলাকার দক্ষিণ দরিয়াপুর মহল্লার জেকে গ্রুপের তনিমা নিট কম্পোজিট, উলাইল, আশুলিয়ার কাঠগড়া ও চারাবাগ এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা একই দাবিতে কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ করেছে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক মাহববুর রহমান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো ঝামেলা এড়াতে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যূূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য গত তিনদিন ধরে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, বেতন ভাতার বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। অবরোধ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, বিকালে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার একটি গার্মেন্ট কারখানা শ্রমিকরা বেতন ভাতার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে, কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই দাবিতে সকালে চক্রবর্তী এলাকায় দুটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা চন্দ্রা নবীনগর মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে। পুলিশ কাঁদানি গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। অন্যদিকে বিকালে কোনাবাড়ি এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।

মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি: তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেড় মাস আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মতিঝিলের শ্রমভবনে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ নেতা আবদুুস সালাম মুর্শেদী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মালিক পক্ষের ৫ জন, শ্রমিক পক্ষের ৫ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে মোট ১২ সদস্যের কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।

তিনি বলেন, মজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা না করে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানান নতুন এ বাণিজ্যমন্ত্রী। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা তিন দিন ঢাকার রাস্তায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকে ডাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। 

জানুয়ারি মাসে কোনো শ্রমিককে কম বেতন দেয়া হবে না। কোনো গ্রেডে কারও যদি বেতন কমে যায়, তবে সেটা হিসাব করে সমন্বয় করা হবে। বকেয়া আকারে শ্রমিকরা সেই বেতন পেয়ে যাবেন বলে জানান টিপু মুনশি।

বর্তমান শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে শিল্পের বাইরের লোকের ইন্ধন আছে বলেও নিজের সন্দেহের কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শ্রমিকরা যাতে কোনো রকম গুজব কিংবা উস্কানিতে পা না দেন আমরা সেই অনুরোধ করছি। এরপর থেকে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে তারা শ্রমিক না। তারা এ ট্রেডের বন্ধু না। তাদের কঠোর হাতে দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক একটা বাইসাইকেলের দুই চাকা। তাদের একসঙ্গেই এগোতে হবে। কোথায় কোনো ইরেগুলারিটি থাকলে সেটা দেখা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। 

তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইম শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন রকম প্রচারপত্র লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে অনলাইনে। আমরা বরাবর দেখেছি, প্রত্যেক ঘটনার ক্ষেত্রে এ ধরনের অপকর্ম ঘটছে। এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত শ্রমিকবান্ধব। তিনি নিজেই সুপারিশ করে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। এখন নতুন মজুরি কাঠামোর কোথাও কোনো অসুবিধা থাকলে আলোচনা করে তা ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই আর কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে একই কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন।

এদিকে পোশাক শ্রমিকদের সব গ্রেডে সমান হারে মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি বকেয়া বেতন পরিশোধ, ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। গতকাল বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবুর যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে তারা বলেন, পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও সব গ্রেডে সমান হারে মজুরি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উত্তরা, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক ছাঁটাই, টার্গেট চাপ বাড়ানো এবং শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, সমপ্রতি শ্রমিক আন্দোলন বিভিন্ন গ্রেডে মজুরি সমান হারে বৃদ্ধি না পাওয়ারই কারণ। এ ছাড়া বেতন বকেয়া, ছাঁটাই-নির্যাতন, টার্গেট চাপ ইত্যাদির ক্ষোভ রয়েছে।

বিবৃতিতে সরকার ও মালিক পক্ষকে পোশাক কারখানার ৩য়, ৪র্থ, ৫ম গ্রেডের শ্রমিকদের মূল মজুরি অন্যান্য গ্রেডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বাড়িয়ে শিল্পের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, অপারেটররাই গার্মেন্ট শিল্পের প্রাণ, প্রধান চালিকা শক্তি, সংখ্যার দিক থেকেও এরাই বেশি। শ্রমিকদের এ অংশকে বঞ্চিত করে, অংকের মার-প্যাঁচে ফেলে বেসিক কমিয়ে দিলে শেষ পর্যন্ত শিল্পের মঙ্গল আসবে না এ কথা মালিকদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে। পুলিশ ও মাস্তান দিয়ে নির্যাতন করে, মামলা ও গ্রেপ্তার করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না। ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের গন্ধ খুঁজলে সমাধানের পথ পাওয়া যাবে না, বরং যে হারে ৭ম গ্রেডের মূল মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মূল মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করার আহ্বান জানানো হয়। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৯, ২০১৯  

মজুরি বৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন

  • গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত
  • ১০ কারখানা ভাঙচুর, পুলিশের টিয়ারশেল, আহত ১০


সরকারি মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি, বাস্তবায়ন ও সাভারে নিহত শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবিতে চতুর্থদিনের মতো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নেমেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ১০ কারখানায় ভাঙচুর চালিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে প্রায় শতাধিক পোশাক কারখানা। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।  

বুধবার, ০৯ জানুয়ারি, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মিরপুরের কালশীর ২২ তলা ভবনের সামনে ও সাড়ে ৯টা থেকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন  গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এতে সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। 

জানা যায়, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, উত্তরা ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

পুলিশের পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক করিম জানান, মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে তারা মূল সড়কে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। গত তিনদিন ধরে একই দাবিতে বিমানবন্দর, উত্তরা, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরে সড়কে অবস্থান নেয় গার্মেন্টস কর্মীরা। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৯, ২০১৯  

মামলা, সংলাপ ও সফর তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের


ভোটে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের অনিয়ম তুলে ধরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের, জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পর্যায়ক্রমে সফর। এজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেট সফরে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যাতে তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।

নিজেদের কর্মসূচি নির্ধারণে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওই বৈঠক শেষে এসব কথা জানান জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতি পড়ে শোনান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, জনগণের জন্য জনগণের শাসন; অর্থাৎ জনগণ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া পদ্ধতি। সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ক্ষমতা ও দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।

কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশের মালিক জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অপব্যবহার করে এবং সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকাকে নিষ্ক্রিয় করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নীল নকশা অনুযায়ী ভোটের পূর্ব রাতে নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে, সরকারি সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যালট পেপারে নৌকা ও লাঙল মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখতে সাহায্য করেছে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ফলে জনগণ নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার তথ্য-সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইউ.এন কনভেনশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের মতে, শুধু সাংবিধানিক অধিকার নয় বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের মানবাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব বেআইনি কর্মকাণ্ড গুরুতর অপরাধ।

নির্বাচন কমিশনের নিকট আমাদের জোর দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। জনগণ যেন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের অনুলিপি পাওয়ার পর তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার।