সম্পাদকীয়
তৈরি পোশাক, চা কিংবা চামড়াজাত পণ্যের সমান্তরাল রফতানি পণ্য হয়ে উঠছে দেশে উৎপাদিত ওষুধ। ৯৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ১৪৪টি দেশে এখন রফতানি হচ্ছে। ওষুধ উৎপাদন ও রফতানিতে সাফল্য থাকলেও এ খাতের বড় চ্যালেঞ্জ, কাঁচামালের (এপিআই) দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থা। কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে পারলে ওষুধ শিল্পের দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানি পণ্য খাত হয়ে ওঠা কঠিন হবে না। এক্ষেত্রে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এপিআই শিল্প পার্ক বাস্তবায়নের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এদিকে নারায়ণগঞ্জে স্থাপিত এপিআই শিল্প পার্কে চলছে নানা ঝামেলা। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে কারখানা স্থাপনকারী নয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে দেয়া কর অবকাশ সুবিধা আটকে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। উল্লেখ্য, ওষুধ শিল্প মালিকদের আরেকটি সংগঠন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল করা হয় সম্প্রতি কর অবকাশ সুবিধা চাওয়া বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমেডিয়ারিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন বাতিল করায় আপাতত কর সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। বিরোধ নিরসন করে একক সংগঠনের অধীনে আবেদন করা হলে বাণিজ্য বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আলোকে ফের কর অবকাশ সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কাজেই শিল্পের সার্বিক উন্নতি বেগবান করতে দ্রুত ব্যবসায়ীদের দুই শিবিরের বিরোধ নিরসন জরুরি।
লক্ষণীয়, সম্ভাবনা অনুযায়ী এখনো আমাদের ওষুধ শিল্পের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ হয়নি; কাঁচামাল উৎপাদনে তৈরি হয়নি স্বয়ংসম্পূর্ণতা। সুখবর হলো, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড় আমাদের জন্য ভীষণ দরকার ছিল। এটা না হলে বর্তমান বাজারে ওষুধের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যেত। এমনটি হলে দরিদ্র শ্রেণীর জন্য ওষুধ কেনা কষ্টসাধ্য ছিল। উন্নত দেশে ওষুধের দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ সেখানে পেটেন্টধারী কোম্পানিকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় উৎপাদক কোম্পানিকে। উল্লিখিত সময় পর্যন্ত মেধাস্বত্বে ছাড়ের কারণে আমাদের এ বাবদ বিপুল অর্থ বেঁচে যাবে। সুতরাং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের ওষুধ শিল্পকে কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিল্প পার্ক সচলে যেভাবে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত হতাশাজনক। দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি মূল্য সংযোজনের স্বার্থেই এক্ষেত্রে গতি আনা দরকার।
বাংলাদেশের ওষুধ মানের দিক থেকে এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়া মোটেই সহজ হয়নি। ইউরোপ ও আমেরিকায় ওষুধের মতো স্পর্শকাতর পণ্য বাজারে যায় যথাযথ মান যাচাইয়ের পর। তাদের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়ার ওপর সবাই আস্থাশীল। সেই মান যাচাইয়ের পরীক্ষায় পাস করেই আমাদের ওষুধ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এটি কম প্রাপ্তি নয়। সুতরাং কেবল বিদেশ নয়, দেশের অভ্যন্তরেও কম মূল্যে মানসম্মত ওষুধ সরবরাহের কাজ আরো বেগবান করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা কাম্য।
Courtesy: Banikbarta Jan 09, 2019
No comments:
Post a Comment