- বছরের প্রথম সপ্তাহের প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার মামলা
- প্রতিদিন জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা
চলতি বছরের প্রথম সাত দিনে রাজধানীর সড়কে পুলিশ মামলা করেছে ২৬ হাজার ৫৭১টি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার মামলা করেছে পুলিশ। প্রতিদিন জরিমানা আদায় করেছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। উল্টো পথে গাড়ি চালানো, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস লাগানো, গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহারসহ কাগজপত্র ঠিক না রাখার কারণে এসব মামলা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর মধ্যে ঢাকা শহরে গণপরিবহন চলার সময় দরজা বন্ধ রাখা এবং নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা ছিল অন্যতম। বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিআরটিএ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ রাজধানীর শতাধিক স্থানে বাস থামার জায়গা চিহ্নিত করে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যত দিন পর্যন্ত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো দায় নেবে না, তত দিন সড়কের পরিস্থিতি বদলাবে না, বরং আরও খারাপ হবে। সংস্থাগুলো দায় এড়ানোয় নির্দেশনাগুলো কাগজে–কলমেই রয়ে গেল। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে সরকারের কাছ থেকে অনেক আত্মসমালোচনা, সুন্দর সুন্দর কথা শোনা গেল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ হলো না। সড়কের নিরাপত্তার সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টি যুক্ত। এরপরও নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলো না, সেটির উত্তর খুঁজে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে ও নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক সমিতি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয়। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ প্রতিদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়কে পুরোপুরি শৃঙ্খলা আনা গেছে এই দাবি করব না। এখনো যত্রতত্র বাসের যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ করা যায়নি। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে সংস্থাগুলোকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’
বছরের প্রথম দিনেই রাজধানীর সড়কে ঝরে প্রাণ। মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় বাসচাপায় মারা যান দুই নারী। সদরঘাট থেকে গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের বেপরোয়া একটি বাস তাঁদের দুজনকে চাপা দেয়। বাসচালকের শাস্তির দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেট, মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাসচালকেরা যত্রতত্র যাত্রী ওঠাচ্ছেন-নামাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে চলন্ত অবস্থায় বাস থেকে যাত্রীদের নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাসের পাদানিতেও যাত্রীদের ঝুলতে দেখা যায়। মাঝে কিছুদিন বাসের দরজা বন্ধ রাখা হলেও সেটি এখন আর মানা হচ্ছে না।
সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী পথে চলাচলকারী এম এন লাভলী পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী মো. ইলিয়াস বলেন, ‘এখন আর গেট লাগাই না। মাঝে পুলিশ ঝামেলা করত। এখন আর কিছু বলে না। মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) বসলে গেট লাগাই।’
বাসের ভেতরে দৃশ্যমান দুটি জায়গায় চালক ও চালকের সহকারীর ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর এবং মুঠোফোন নম্বর প্রদর্শন করার নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনাটি একেবারেই বাস্তবায়িত হয়নি। গতকাল অন্তত ১০টি বাসে উঠে দেখা যায়, কোনো বাসেই চালকের ছবিসহ লাইসেন্স, মুঠোফোন নম্বর ঝোলানো হয়নি।
পদচারী–সেতুর উভয় পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে সড়ক পারাপার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতকাল শ্যামলী এলাকায় দেখা যায়, পদচারী–সেতুর নিচে সড়ক বিভাজকে কোনো প্রতিবন্ধকতা বসানো হয়নি। পথচারীরা যানবাহনের মাঝ ও সামনে দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছে।
রাজধানীর ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে থাকায় পথচারীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই মূল সড়কে হাঁটে। ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে ক্যান্টনমেন্টের জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত ‘মডেল করিডর’ চালুর কথা জানিয়েছিলেন। এ পথটুকুতে স্বয়ংক্রিয় সংকেতের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করার কথা। গতকাল পর্যন্ত এই পথের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি।
তবে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী দুজনই হেলমেট ব্যবহারের নির্দেশনা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর অধিকাংশ প্রধান সড়কে লেগুনা বা হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ আছে। তবে কিছু পথে এখনো লেগুনা চলাচল করছে।
- কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ৯,২০১৯
No comments:
Post a Comment