Search

Wednesday, January 9, 2019

‘বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে আছে সরকার’ — রুহুল কবির রিজভী


বুধবার, জানুয়ারি ০৯, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা পাবার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পরে গতকাল নিকটাত্মীয়রা দেখা করার অনুমতি পায়। এখনও বেগম জিয়া অসুস্থ। সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হতেই তাঁকে বিএসএমএমইউ থেকে কয়েকদিন পরেই কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা পাবার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। এভাবেই মানসিক নিপীড়নের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে সরকার। দেশনেত্রীকে নির্যাতন করে প্রতিহিংসার যেন শেষ হচ্ছে না। বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে এক গভীর চক্রান্তে মেতে আছে সরকার।’


সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল 

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পরে গতকাল নিকটাত্মীয়রা দেখা করার অনুমতি পায়। এখনও বেগম জিয়া অসুস্থ। সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হতেই তাঁকে বিএসএমএমইউ থেকে কয়েকদিন পরেই কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা পাবার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। এভাবেই মানসিক নিপীড়ণের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে সরকার। দেশনেত্রীকে নির্যাতন করে প্রতিহিংসার যেন শেষ হচ্ছে না। বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে এক গভীর চক্রান্তে মেতে আছে সরকার।  
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বারবার বাধাগ্রস্ত করছে সরকার। যে মিথ্যা মামলায় ইতোপূর্বে অনেকেই জামিন পেয়েছেন, অথচ সেই মামলাগুলোতেই আদালতকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে। কুমিল্লার মিথ্যা নাশকতার মামলায় বারবার তারিখ পিছিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। আদালতে ন্যায় বিচার পেলে কুমিল্লায় দায়ের করা মিথ্যা নাশকতা মামলায় বিচারিক আদালতেই বেগম জিয়া জামিন পেতেন। আদালত জামিনও দিচ্ছে না আবার জামিন নামঞ্জুরও করছে না। ফলে বেগম জিয়াকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পথও রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের নির্দেশেই নিন্ম আদালত বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে। শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়াকে হয়রানী করার জন্যই তা করা হচ্ছে। আওয়ামী সরকার জুলুমের যতো পথ-পদ্ধতি আছে সবই প্রয়োগ করছে বেগম জিয়ার ওপর।   
সাংবাদিক বন্ধুরা,শাসকশক্তির পৃষ্ঠপোষণার দ্বারা মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর এখন সারাদেশে ব্যাপক নির্বাচনী সহিংসতা চালাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের দমন করে  বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, খুন, ধর্ষণ, হামলা থেকে শুরু করে এখন নেতা-কর্মীদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করছে। ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার অপরাধে গ্রামের মানুষজনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ত্ব নিশ্চিত করতে একতরফা নির্বাচনের জন্য প্রচার মাধ্যমগুলোকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে, যাতে সত্য ঘটনা প্রকাশ হতে না পারে। একদিকে হামলা-মামলা ও আটক করা অন্যদিকে নিজেদের প্রচারের আতিশয্য বজায় রেখে প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে বিষোদগার বেগবান করা হয়েছে। নির্বাচনোত্তর সহিংস সন্ত্রাসের প্রকোপে জনজীবন গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের মধ্যে পতিত হয়েছে। 
বিরামহীন সন্ত্রাসের প্রসারে দেশজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অবৈধ শাসনের শৃঙ্খল থেকে মানুষের মুক্তির আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। নিপীড়ণ-অত্যাচারের সংবাদও গণমাধ্যম যাতে প্রকাশ না করে সেজন্য ভয়ংকর সেন্সরশীপ চালানো হচ্ছে। টিভি টকশো, সংবাদপত্রের নিবন্ধ, ফেসবুক ইত্যাদি যাতে সরকারের পক্ষে থাকে তারজন্য আগেভাগেই গণবিরোধী আইনে-বেআইনের সব কালো পথ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার একটি। আবার একইসাথে স্বৈরশাসনের অংশীদার কিছু মিডিয়ার পক্ষপাতিত্বও সবার কাছে পীড়াদায়ক। বন্ধুরা, এদেশে গণতন্ত্রের ভীত সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে, নিষ্ঠুর দমনে গণতন্ত্র এখন পীড়িত।  
বন্ধুরা,দেশজুড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানি ও মামলা হামলার পর দুদককে দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে আবারও মামলা দায়ের করেছে দুদক। গত দশ বছরে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে নিলেও, সমস্ত ব্যাংক লুট হয়ে গেলেও দুদক চোখ বন্ধ করে বসে আছে। গণমাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সাগর চুরির খবর প্রকাশ করলেও খোদ সংসদে দাঁিড়য়ে সরকারের মন্ত্রীরা সাগর চুরির কথা বললেও দুদক কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত হয়রানী করছে দুদক। মূলত: দুদক বিরোধী দল নির্যাতনের যাঁতাকল হিসেবে কাজ করছে। আমি মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। 
সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ , * শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে ঢাকা-হাতিয়া ও ঢাকা-চরফ্যাশন নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযান এমভি তাসরিফ-১, ২, ৩ ও ৪ লঞ্চের ক্যান্টিন, পানের দোকান ও চায়ের দোকানগুলো ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জোর করে দখল করে নিয়েছে পুরান ঢাকার ছোটন কমিশনার ও তার সহযোগী যুবলীগ ক্যাডার বাবু। উল্লেখ্য, প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীদের সুবিধার্থে ক্যান্টিন, পানের দোকান ও চায়ের দোকানের ব্যবস্থা থাকে। আর এজন্য ফেয়ারী শিপিং লাইন্স লিমিটেড এর মালিক পক্ষ এমভি তাসরিফের লঞ্চগুলোর ক্যান্টিনের অগ্রিম বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ, পানের দোকানের অগ্রিম বাবদ দশ লক্ষ ও চায়ের দোকানের অগ্রিম বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা জমা নিয়ে চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদেরকে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। এমভি তাসরিফ এর লঞ্চগুলোর ক্যান্টিন, পান ও চায়ের দোকানগুলো গায়ের জোরে দখলকারিদের কবল থেকে মুক্ত করে যথাযথ ব্যবসায়ীদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর আহবান জানাচ্ছি। 
* পিরোজপুর জেলাধীন মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী রুহুল আমিন দুলালসহ ২২ জন নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় গতকাল পিরোজপুর কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন পূর্বসময়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, পিরোজপুর জেলা বিএনপি’র দফতর সম্পাদক তোহিদুল করিম এবং নাজিরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক লাহেল মাহমুদসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। 
* পাবনার চাটমোহরে বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার ভোর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বাঙ্গাল্লা গ্রামে ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের দেয়া আগুনে তার বসত ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র, জমির দলিলপত্রসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে অল্পের জন্য পরিবারের সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পেলেও প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কতটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর হলে এমন পৈশাচিক ঘটনা ঘটাতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

No comments:

Post a Comment