Search

Tuesday, January 15, 2019

গণতন্ত্রের মেরামতি

রাষ্ট্র ও সমাজ 

গত বছরের সবচেয়ে চমকপ্রদ উচ্চারণটি কোনো রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন অথবা সুশীল সমাজ করেনি, করেছে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে তারা সেটি কাগজে লিখে সবার চোখের সামনে তুলে ধরেছে ‘রাষ্ট্রের মেরামত চলছে’।

সড়কের অরাজকতাকে যখন রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক নানা ভঙ্গুরতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে শুধু সড়ক ব্যবস্থাপনার নয়, রাষ্ট্রের মেরামতিতে লাগতে চেয়েছে এই তরুণ শিক্ষার্থীরা, তখন বুঝতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ঘুণ ধরেছে, তা তাদের অপাপবিদ্ধ চোখেও ধরা পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে অবশ্য পানি অনেক ঘোলা হলো, তাদের অনেক আশ্বাস দেওয়া হলো, মাথায় হেলমেট পরা কিছু যুবক হামলে পড়ল। কিন্তু এই পাঁচ মাসেও বেহাল ব্যবস্থাপনার সড়কগুলোর হাল আর ফিরল না। সড়কে নিয়মিত প্রাণ ঝরছে। ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক বাতিগুলো চব্বিশ ঘণ্টা লাল-কমলা-সবুজ হচ্ছে, একটা চলমান কৌতুক নাটকের মতো।

তবে রাষ্ট্র তো আর এক সড়ক বিভাগে সীমাবদ্ধ নয়। এর অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, সবগুলোতেই মেরামতি প্রয়োজন। প্রশাসন বাইরে ফিটফাট, কিন্তু ভেতরে? প্রশাসন কি স্বচ্ছ, জনবান্ধব, কার্যকর? আদালতপাড়ায় বিচারের বাণী কি নিভৃতে কেঁদে যায়, নাকি উচ্ছ্বাস নিয়ে ধ্বনিত হয়? গরিব মানুষ বিচার পায়? বিত্ত আর ক্ষমতাশালী অপরাধীদের হাতে হাতকড়া পড়ে? শিক্ষাব্যবস্থা কি আলো ছড়ায়? স্বাস্থ্য খাত কি নিজেই স্বাস্থ্যবান? ব্যাংক লুটে খাওয়া, দুর্নীতিতে, মাদক ব্যবসায়ে বিলিয়নপতি হওয়াদের কি রাহুর গ্রাস চলছে? নাকি তাঁদের বৃহস্পতি ঊর্ধ্বমুখী?

গত ১০ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। প্রত্যাশা এখন সুশাসন, সুবিচারের জন্য। সব প্রতিষ্ঠানের মেরামতির জন্য। যেকোনো তরুণকে জিজ্ঞেস করলে সে মেরামতির দশটা জায়গা দেখিয়ে দেবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এক সন্তান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংকল্প মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল, সেগুলো কেন আমাদের চেতনার আশপাশ দিয়েই শুধু ঘুরে বেড়ায়, কেন্দ্রে স্থান নিতে পারে না? অনেক তরুণ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন রেখেছে, কেন তারা তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারল না? এবার যে নির্বাচন হলো, তাতে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল; কিন্তু তা কি স্বচ্ছ ছিল? নির্বাচন নিয়ে পত্রপত্রিকায়, চায়ের দোকানের আড্ডায়, আলোচনায় মানুষের অসন্তুষ্টি শোনা গেছে। নির্বাচনের নানা অনিয়মের জন্য মহাজোট ঐক্যফ্রন্টকে দুষেছে। ঐক্যফ্রন্টের অবশ্যই দায় ছিল, তারা সমাবেশ ঘটাতে পারেনি, একটা দায়সারা ভাবও ছিল তাদের কর্মকাণ্ডে। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের জন্য নির্বাচনী মাঠটা যে সমান ছিল না, তার দায়টা কে নেবে?

প্রশ্ন অনেক, উত্তরগুলো পেতে হবে। উত্তরগুলো তরুণেরা চায়। আমার বিশ্বাস, তারা পাবেও, কারণ তারা এখন অনেক প্রত্যয়ী। স্কুলের শিশুরা যখন খোদ রাষ্ট্রের মেরামতি হাতে নেয়, এক প্রজন্মে এটি তারা অনেকটাই করতে পারবে। নতুন একটি সরকার এখন ক্ষমতায়। আগামী পাঁচ বছর যদি এই সরকার তরুণদের মেরামতির কাজটাতে হাত দিয়ে এগিয়ে নেয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে এবারের অনিয়ম-অসন্তুষ্টিগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না। উন্নয়ন হবে, গণতন্ত্রও মজবুত হবে। এবং এর ফলে সাম্য প্রতিষ্ঠা না হোক, বৈষম্য কমবে, মানবিক মর্যাদা আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হবে। এই সরকারের মন্ত্রিসভায় নবীনদের প্রাধান্য। এই নবীনেরা যদি দেশের তরুণদের আস্থা অর্জন করতে পারেন, তাহলে মেরামতির কাজটা সহজ হবে। আর যদি সরকার চলে চিরাচরিত পথে, তাহলে অর্থনীতি হয়তো এগোবে, কিন্তু রাষ্ট্রের ভিত্তিতে ঘুণটা ব্যাপক হবে। তরুণেরা হতাশ হবে, বিক্ষুব্ধ হবে।

রাষ্ট্রের ভিত্তিটা গড়ে দেয় গণতন্ত্র। সবার আগে গণতন্ত্রের মেরামতিটাই প্রয়োজন। নতুন সরকার কাজটি হাতে নিলে মানুষ সাড়া দেবে, দলগুলো সাড়া দেবে, তরুণেরা হাত মেলাবে। আমি নিশ্চিত এই মেরামতিকাজে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন সদিচ্ছা এবং শতভাগ নিষ্ঠার।

আমি তরুণদের প্রত্যাশাগুলোর কথাই বলি। তারা চায় দেশে সব দলের জন্য মাঠ সমান হোক। যারা মুক্তিযুদ্ধ মানেনি, মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত অবস্থানে ছিল, তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের প্রাপ্য জায়গা দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কিছু বাম সংগঠনের ছাত্রছাত্রীদের দেখেছি। হামলা-মামলা সয়ে তারা সুন্দর কিছু আদর্শকে এখনো জীবন্ত রেখেছে। আমাদের দেশটা যাঁরা গড়েছেন, গড়ে যাচ্ছেন, সেই কৃষক-শ্রমিকদের জন্য তারা মাঠে নামে, এদের জায়গাটা নিশ্চিত হলে গণতন্ত্র মজবুত হবে, তাতে আদর্শচিন্তা ফিরে আসবে।

জাতীয় সংসদ গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য, এটি সচল হোক। সেখানে দল নয়, দেশ নিয়ে কথা হোক। সংসদীয় কমিটিগুলো সরকারের কাজে সত্যিকার নজরদারি করুক। সরকার আর দলের প্রভেদ সুনির্দিষ্ট এবং অলঙ্ঘনীয় হোক, প্রশাসন ও পুলিশ মানুষের পক্ষে কাজ করুক, আদালতের বিচারকেরা আস্থা রাখুন মানবতায়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাক।

তরুণদের দাবি সুশাসন, সেবাপ্রাপ্তি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহির চর্চা। শিক্ষা এখন ব্যয়বহুল কোচিং-বাণিজ্য আর গাইড বই প্রকাশকদের দখলে। একটা চমৎকার শিক্ষানীতি আছে বটে, কিন্তু তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলমারিতে রাখা আছে। তাতে ধুলা জমছে। এর অবসান হোক। স্বাস্থ্য খাতে গরিবের প্রবেশাধিকার সীমিত, ভালো চিকিৎসা পেতে হলে টাকা ঢালতে হয়। তরুণেরা এসবের সমাপ্তি চায়। তরুণেরা মতপ্রকাশের, মুক্তচিন্তার অধিকার চায়।

এই অধিকার খর্ব হলে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণা করেছে নির্বাচনী ইশতেহারে, তা কার্যকর হবে না। স্বচ্ছ সমাজে দুর্নীতি আশকারা পায় না, কারণ সবাই সে সম্পর্কে জানতে পারে, আইনপ্রয়োগকারীরাও। প্রশাসন স্বচ্ছ হলে দুর্নীতি কমে। স্বচ্ছতার জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিলুপ্ত হোক, প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সাইবার দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য ভিন্ন আইন হোক। কিন্তু ডিজিটাল যুগে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাজে অ্যানালগ যুগের বাধা দূর হোক। তরুণদের জন্য তাদের কথা বলার পরিসরটা বড় হোক, উন্মুক্ত হোক।

গণতন্ত্র মানে সহনশীলতা। সহনশীলতার চর্চা সরকারি দলের কথাবার্তা ও কাজে থাকতে হবে। আমরা প্রশংসার ওপর এত বেশি নির্ভরশীল যে সত্যিকার সমালোচনাকেও নিন্দা ভাবি। এই অভ্যাস থেকে বেরোতে হবে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বিতর্ক সংগঠনটির দায়িত্বে ছিলাম দুই দশকের মতো। আমি দেখেছি কত কঠিন কঠিন বিষয়ে বিতর্ক হয়েছে, পক্ষে-বিপক্ষে অসংখ্য মত এসেছে। দিনের শেষে যাদের যুক্তি ক্ষুরধার, তারা জিতেছে। অথচ আমরা বিতর্ক করি না, কুতর্ক করি। গালিগালাজ করি। কোনো দলের সমালোচনা করে কেউ কিছু লিখলে ভিন্ন দলের অনুসারীরা তাঁকে গালি দেয়। যেখানে স্বাধীন মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ হয়, সেখানে ক্ষোভ তৈরি হয়, ক্ষোভ থেকে গালিও তৈরি হয়। তরুণদের কাছে এ অবস্থা কাম্য হতে পারে না। এটা সরকারকে মনে রাখতে হবে।

এই সরকারের আমলেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদ্‌যাপিত হবে: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী। সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা কি মুক্তকণ্ঠে বলতে পারব, দেশটা সাম্য, ন্যায়বিচার আর মানবিক মর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠার পথে আছে? বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যে স্বচ্ছ রাজনীতির কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে, গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটছে এবং শিক্ষার আদর্শগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হলে বুঝতে হবে আমরা ঘুণে ধরা কোনো স্থাপনাই মেরামত করতে ইচ্ছুক নই। তাই সরকারকে এখনই কাজে নামতে হবে। গণতন্ত্রের মেরামতি একটি সমবায়ী কাজ, তরুণেরা তৈরি। রাষ্ট্র ও সরকার উদ্যোগী হলে জনসাধারণও শরিক হবে। এর বিকল্প নেই।

নতুন বছরের সামনের দিনগুলো যেন অবারিত আর ঝকঝকে হয়। তরুণেরা, সব বয়সের নাগরিকেরা, তা-ই চায়। এটা অনুধাবন করে সরকারকে গণতন্ত্রের মেরামতির কাজে হাত দিতে হবে।

  • সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ১৫, ২০১৯ 

হাসিনা এমন নির্বাচন না করলেও পারতেন - নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়


টানা প্রায় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিস্ময়কর কাজ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশের অন্যতম এ দেশটিতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ১৫০ ভাগ। চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের হার শতকরা ১৯ ভাগ থেকে কমে এসেছে প্রায় ৯ ভাগে। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো- সরাসরি কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে ঝুঁকে যাওয়া ও এমন একটি নির্বাচন, যাতে শেখ হাসিনার দল জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতেই জয় পেয়েছে। শতকরা ৯৬ ভাগ জয় পাওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। এসব তার অর্জনকে খর্ব করেছে। 

৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের কয়েক মাস ও সপ্তাহ আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলো বিরোধী দলগুলোকে ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের গ্রেপ্তার, তাদের সমর্থকদের ওপর নজরদারি ও বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্ঠুর ব্যবহার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ‘আগ্রাসী অথবা ভীতিকর’ কোনো উপাদান পোস্ট করা হলে জেলের বিধান রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার এক রিপোর্টে বর্ণনা করেছে বিচার ব্যবস্থা (ইনটিমিডেটেড জুডিশিয়ারি) অথবা নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ নেই এমন ‘একটি আতঙ্কের পরিবেশ নিয়ে। এমন আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজমান সমাজের উচ্চকিত কণ্ঠ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত’।  

ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত সর্বত্র স্বৈরতন্ত্রের বিভ্রান্তি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন, একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ হলো একটি প্রান্তিক (পেরিফেরাল) বিষয়। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারি সেটাই হলো মানবাধিকার। বিরোধীরা বা নাগরিক সমাজ অথবা আপনার এনজিওরা যা বলছে তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি আমার দেশকে জানি এবং আমি জানি কিভাবে আমার দেশের উন্নতি করতে হয়’। 

শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭১ বছর। তিনি তার দেশকে জানেন- এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাকে ১৯৭৫ সালে যখন হত্যা করা হয় তখন হাসিনা ছিলেন দেশের বাইরে। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে। তারপর থেকে তিনি এর নেতৃত্বেই আছেন। তার দল এবং আরেকজন শক্তিধর নারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এর ফলে শেখ হাসিনাকে একটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন ক্ষমতার মেয়াদ দেয়া হয়। গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে জেল দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। শেখ হাসিনা আরো এক দফায় ক্ষমতায় ফিরেছেন, যা এরই মধ্যে কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে প্রস্তত তারা। 

কিন্তু কেন? যখন জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিয়েছিল, সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনা ভালোভাবে বিজয়ী হবেন তাহলে কেন অপ্রয়োজনীয় নির্বাচনী ফল তৈরি করা হলো? এখন শেখ হাসিনার কতৃত্ববাদী পদ্ধতি (অথরিটারিয়ান মেথড) ও নিস্পেষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কলঙ্কিত করবে তার প্রতিটি অর্জনকে। তার সমালোচক, যারা নির্বাসনে গেছেন অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে গেছেন, তারা শুধু আরো বেশি কঠোর হয়ে উঠবেন। তার বিদেশি সমর্থক যারা আছেন তারাও আরো সতর্ক হবেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল-কান্ট্রি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রচারণার সময় হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রতি। যেসব সহিংসতা ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রচারণা ও ভোটকে কলঙ্কিত করেছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য একই রকমভাবে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। 

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত গতিবিধি বলে দেয়, এমন মৃদু ভর্ৎসনায় তিনি পাল্টে যাবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের নেতারা ব্যবসা করছেন এবং এ দেশে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের জন্য উল্লসিত, শেখ হাসিনাকেও তার মিত্রদের তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত, মানবাধিকার বহির্জাগতিক কোনো আরোপিত সংস্কৃতি নয়। এটা হলো উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ১৫,২০১৯  

বস্তিবাসীর ফ্ল্যাটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভবন!


ঢাকঢোল পিটিয়ে বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নিশ্চয়তাপত্র হিসেবে ১০ হাজার টাকার টোকেন মানিও নিয়েছিল। কিন্তু সাততলা বিশিষ্ট বহুল প্রতীক্ষিত সেই ভবন নির্মাণের পর সুর পাল্টেছে চসিক। বস্তিবাসী নয়; চসিক ভবনই যাচ্ছে সেখানে! নতুন নগর ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর চসিকের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে আলোচিত এই ফ্ল্যাট ভবন। এরই মধ্যে সেখানে অস্থায়ীভাবে থাকা চারটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বস্তিবাসীর জন্যই সাততলা ফ্ল্যাট নির্মাণের বিষয় স্বীকার করে সমকালকে বলেন, সাততলা ভবনের কাজ শেষ। এখন কক্ষ বিন্যাস, রঙ লাগানো আর ধোয়ামোছার কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে টাইগারপাসের ওই ভবনে নগর ভবন স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। তবে সেখানে আমরা যাচ্ছি সাময়িকভাবে। আন্দরকিল্লায় নগর ভবনের কাজ শেষ হলে আবার মূল ভবনে ফিরে আসব। বস্তিবাসীর ফ্ল্যাট একসময় তাদেরই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা সর্বমোট ২৫০টি পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।

চসিক সূত্র জানায়, নগরীর টাইগারপাস এলাকার বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত অধিবাসীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে ২০১৩ সালে বস্তিটি উচ্ছেদ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩ জনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি ও হলফনামা নেয় সিটি করপোরেশন। তখন প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয়েছিল ছয় লাখ টাকা। ফ্ল্যাটের জন্য এককালীন টোকেন মানি হিসেবে সিটি করপোরেশন নিয়েছিল ১০ হাজার টাকা। মাসিক আড়াই হাজার টাকা কিস্তিতে এ মূল্য পরিশোধ করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল সে সময় তাদের। পাঁচ বছর শেষে ১২ কাঠা আয়তনের নিজস্ব জায়গার ওপর প্রায় সাত কোটি টাকায় ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। 

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাততলা ভবনটিকে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। বস্তিবাসীকে সেখান থেকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে কি-না এ ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

তবে চসিকের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ সেখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে ফ্ল্যাটপ্রত্যাশী ও টাইগারপাস গৃহহীন মাতৃছায়া কমিটির আহ্বায়ক রমজান আলী বলেন, তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। তারা সেই কথায় আশ্বস্ত হয়ে তাদের দীর্ঘদিনের বসবাসের স্থান ছেড়ে চলে আসেন। কিন্তু এখন তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখা হচ্ছে না। ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে চসিক মেয়রের কাছে দাবি জানান তারা।

এদিকে নতুন নগর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই। এর অংশ হিসেবে এ সপ্তাহেই প্রায় ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে। অবশ্য এর আগেও একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অর্থ সংস্থান না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নগর ভবনের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ সপ্তাহেই এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এটা হবে আইকন টাওয়ার। তিনটি বেজমেন্টে ২৫ তলা হবে নগর ভবন। দীর্ঘ মেয়াদি চিন্তা করেই এই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন নগর ভবন নির্মাণে কতদিন সময় প্রয়োজন হতে পারে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এবং প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রার্থিত সময়ে পাওয়া গেলে কম করে হলেও তিন বছর সময় লাগবে।
  • সমকাল/ জানুয়ারি ১৪, ২০১৯ 

ইয়াবাসহ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রেফতার

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান মোল্লাকে পিস্তল ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার, জানুয়ারি ১৪, রাত ১০টার দিকে ভাঙ্গা বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার গাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি এবং ২শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। লুৎফর রহমান মোল্লা উপজেলার কাপুড়িয়া সদরদী গ্রামের মৃত্যু গিয়াস মউরীর ছেলে।

ভাঙ্গা থানার ওসি কাজী শাহিদুর রহমান বলেন, লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় মাদক মামলা রয়েছে। এর আগেও তাকে র‌্যাব আটক করেছিল।

ডিবি পুলিশের ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে লুৎফর রহমান মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। 
  • সমকাল/ জানুয়ারি ১৪, ২০১৯ 

একাদশ সংসদ নির্বাচন - এমপিদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট


সংবিধান অনুসারে দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে না দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে নেওয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। 

সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ রিট দায়ের করেন। আদালত সূত্রে এতথ্য জানা গেছে। 

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি সংবিধান অনুসারে দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে না দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেওয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

ওই নোটিশে বলা হয়, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সে অনুচ্ছেদ প্রতিপালন না করে পুনরায় সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ায় বর্তমানে দু’টি সংসদ বহাল রয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থী।

কিন্তু সেই নোটিশের কোনও জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। 

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করান।
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ১৫, ২০১৯ 

স্বৈরাচারদের নির্বাচনী রঙ্গ


দারুণ সব নির্বাচনী ফলাফল উপহার দেওয়ার এক বিশেষ প্রতিভা রয়েছে স্বৈরাচারী শাসকদের। ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরাচার সুহারতো নিজের লড়া সর্বশেষ নির্বাচনে মোট ভোটের ৭৫ শতাংশ পেয়েছিলেন। মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক পেয়েছিলেন ৮৯ শতাংশ ভোট। রোমানিয়ার কম্যুনিস্ট নেতা নিকোলে সিউজেসকু পেয়েছিলেন ৯৮ শতাংশ ভোট! রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের নেতৃত্বস্থানীয় বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা ও আমার বন্ধু বরিস ভিশনেভস্কি ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর অবদি ৯৯ শতাংশ জনসমর্থন ভোগ করছিলেন! এর এক সপ্তাহ পরই তার বিচার হয়। এই সব ‘বিজয়ী’রা শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন যে, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় কারসাজির ‘নির্বাচন’ প্রকৃত জনমত বোঝার ক্ষেত্রে খুবই বাজে সূচক।

রাশিয়ায় যে প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচন’ হলো তাতে নিয়মমাফিক ‘ভোটগ্রহণের পদ্ধতি’ দেখা গেছে। ওপেন রাশিয়া, গোলোস ও অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থার করা পর্যবেক্ষণে নানা ধরণের অনিয়ম উঠে আসে। গণহারে ব্যালট ঢুকানো, মৃত মানুষের ভোটপ্রদান, স্ফীত ভোটার তালিকা, জোরাজুরি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক বহিষ্কার, জালভোট - সবই দেখা গেছে। এই নির্বাচনে কার্যত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনের চতুর্থ মেয়াদের পথ খুলে দেয়।

তিনি আনুষ্ঠানিক হিসাবে মোট ভোটের ৭৭ শতাংশ পেয়েছেন!
শেষ পর্যন্ত, ভোটাভুটির দিনে কতটা সহিংসতা হয়েছে, সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। এই নির্বাচনে প্রথম ভোট পড়ার বহু আগে থেকেই এটি পাতানো ছিল। রাশিয়ার ২০১৮ সালের নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য ছিল যে, এটি এমন এক নির্বাচন ছিল, যেখানে কোনো বিকল্প ছিল না। যে দুই প্রথিতযশা বিরোধী প্রার্থী পুতিনের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিলেন তাদের নাম রোববার ব্যালটে ছিল না। ২০১৫ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিনের সামনে একটি সেতুতে গুলি করে হত্যা করা হয় সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও পিপল’স ফ্রিডম পার্টির নেতা বরিস নেমতসভকে। প্রখ্যাত দুর্নীতিবিরোধী প্রচারক অ্যালেক্সেই নাভালনিকে নির্বাচনে লড়তে দেয়া হয়নি। এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার আদালতের একটি দ-াদেশ। এই রায়কে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত ‘বাছবিচারহীন’ হিসেবে আখ্যা দেয়। যখন আপনার প্রতিপক্ষের নামই ব্যালট পেপারে থাকবে না, জেতাটা খুব কঠিন নয়।


‘সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতা ছাড়া যদি কাউকে বিকল্প হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয় তারা আসলে প্রকৃত বিকল্প নন, যেমনটা এখানে দেখা গেছে,’ বলছিলেন অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপের পর্যবেক্ষক মিশনের প্রধান মাইকেল জর্জ লিঙ্ক। এছাড়া সভা সমাবেশ, সংগঠন করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রার্থী নিবন্ধনের সুযোগ, ইত্যাদি মৌলিক অধিকারের ওপর কড়াকড়ি আরোপের কারণে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি।

এই যখন পরিস্থিতি, যেসব বিদেশী নেতা পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন তাদের তালিকার দিকে একবার চোখ বুলানো যাক: বাশার আল আসাদ, নিকোলাস মাদুরো, শি জিনপিং, রাউল ক্যাস্ত্রো, নুর সুলতান নাজারবায়েভ ও আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো। নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তাদেরও জানাশোনা কম নয়।

ক্রেমলিন-বিরোধী ও ওপেন রাশিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা মিখাইল খোদরকোভস্কি বলেন, ‘এই ক্ষমতা ব্যবস্থা আর ৬-১০ বছরের জন্য থাকবে। পুতিনের স্বাস্থ্য আর দেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা কোনোটিই এর বেশি টিকবে না। সুতরাং, এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন অনিবার্য। কিন্তু এর সঙ্গে যেন পুরো দেশই ধ্বংসের কবলে না পড়ে সেজন্য আমাদের অনেক কাজ করা বাকি।’ তার এই সংগঠন রাশিয়ায় নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে সমর্থন দেওয়া, রাজনৈতিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন করা ও নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী প্রার্থীদেরকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে।

প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়নি এমন নির্বাচনে সরকারি পরিসংখ্যান দেখে কারও বিভ্রান্ত হওয়া উচিৎ নয়। এই পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য লুকানো যাবে না যে, রাশিয়ান নাগরিকরা যখনই প্রকৃত সুযোগ পেয়েছে তখন তারা বিরোধী প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে জয়ী করেছে। ইয়ারোভলে আঞ্চলিক পার্লামেন্টে জয় পেয়েছেন নেমতসভ। মস্কোর মেয়র পদে লড়ার সময় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন নাভালনি। ইয়েকাতেরিংবার্গে জিতেছেন ইয়েভজেনি রইজম্যান, পসকভে জিতেছেন লেভ শ্লোসবার্গ। মস্কোর পৌরসভায় প্রায় ৩০০ বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতা রয়েছেন।

এই পরিসংখ্যানের কারণেই ক্রেমলিন নির্বাচনের আগে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হতে দিতে চায় না। যেই সরকার রাজপথের আন্দোলনকে এত ভয় পায় তারা ব্যালটের মাধ্যমেও জনগণকে নিজের ভিন্নমত প্রকাশ করতে দিতে চায় না। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে!
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ১৫,২০১৯ 

Monday, January 14, 2019

RMG worker assaulted, Dhaka-Aricha highway blocked for 4hrs


The Dhaka-Aricha Highway was blocked for four hours after a Dhaka North City Corporation staff assaulted a readymade garments worker following an altercation this morning.

Owing to the blockade, a 10-kilometre tailback formed on both sides of the highway.

The RMG worker of Bando Apparels is being treated at Shaheed Suhrwardy Medical Hospital, reports our Savar correspondent quoting Abdul Awal, officer-in-charge of Savar Model Police Station.

“A female worker of Bando Apparels was assaulted by a city corporation worker in the morning,” said Milton Kazi, manager (compliance) of Bando Apparels Ltd.

The incident occurred when a vehicle carrying the factory workers and a city corporation vehicle slightly hit each other in Gabtoli area leading to an altercation.

At one point, a city corporation worker hit the RMG worker and this lead the RMG workers to block the Dhaka-Aricha highway from 8:30am.

Police officials managed to free the highway around four hours later, said Abdul Awal.

  • The Daily Star/ Jan 14, 2019 

RMG workers reject raise, continue agitation


Garment industry workers are continuing agitation in rejection of the revised pay structure.

Several thousand workers continued demonstration on the Dhaka-Tangail highway this morning since 9:00am and tried to put up a blockade, our Savar correspondent reports.

As reported, there were workers of at least 10 factories in the agitation. Industrial police had removed them from the road during initial attempts.


Police chasing off agitating garments workers in Ashulia. Photo: Star

The workers were saying that their basic salary was not raised as expected.

THE LATEST POLICY DEVELOPMENT

Yesterday, after nearly one and half months of protests, the government revised the pay structure for the garments industry workers giving a raise between Tk 15 to Tk 786.

This revision was the raise from the new wage board put into effect from December 2018.

Meanwhile, apparel industry workers have threatened the workers to shut down the factories if they do not return to work from today (Monday).
  • The Daily Star/ Jan 14, 2019 

নতুন বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান, বিক্ষোভ চলছে


সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

১৪ জানুয়ারি ২০১৯, সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন তৈরি-পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। সেসময় তারা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখার চেষ্টা করে।

অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছিলেন। পরে শিল্প পুলিশ তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

এদিকে, শ্রমিকরা বলছেন যে তারা সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
  • The Daily Star/ Jan 14,2019

এজেন্ডা না জেনে সংলাপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নয় — মির্জা আলমগীর

এজেন্ডা না জানা পর্যন্ত সংলাপ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার, জানুয়ারি ১৪, বেলা সাড়ে ১২ টায়র দিকে  হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের পর সাংবাদিকের তিনি একথা জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সংলাপ যদি গতবারের মতো হয় তাহলে সংলাপ অর্থবহ হবে না। উনি যে সংলাপ করতে চাচ্ছেন সেই সংলাপের এজেন্ডা কি? কোন বিষয়ে উনি সংলাপ করতে চাচ্ছেন? আমাদের এজেন্ডা একটাই। এই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে। 

তিনি বলেন, সংলাপের চিঠি পাওয়ার পর এজেন্ডা জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এজেন্ডা না জেনে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেবে না বিএনপি। নির্বাচন কেন্দ্রীক এজেন্ডা থাকলেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপে যাবে।


মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন বাতিল করতে হবে। অযোগ্য এ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট অটুট আছে, কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

সিলেটে সফরকারী দলে আরও রয়েছেন, গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মহাসচিব হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক।