ঢাকঢোল পিটিয়ে বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নিশ্চয়তাপত্র হিসেবে ১০ হাজার টাকার টোকেন মানিও নিয়েছিল। কিন্তু সাততলা বিশিষ্ট বহুল প্রতীক্ষিত সেই ভবন নির্মাণের পর সুর পাল্টেছে চসিক। বস্তিবাসী নয়; চসিক ভবনই যাচ্ছে সেখানে! নতুন নগর ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর চসিকের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে আলোচিত এই ফ্ল্যাট ভবন। এরই মধ্যে সেখানে অস্থায়ীভাবে থাকা চারটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বস্তিবাসীর জন্যই সাততলা ফ্ল্যাট নির্মাণের বিষয় স্বীকার করে সমকালকে বলেন, সাততলা ভবনের কাজ শেষ। এখন কক্ষ বিন্যাস, রঙ লাগানো আর ধোয়ামোছার কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে টাইগারপাসের ওই ভবনে নগর ভবন স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। তবে সেখানে আমরা যাচ্ছি সাময়িকভাবে। আন্দরকিল্লায় নগর ভবনের কাজ শেষ হলে আবার মূল ভবনে ফিরে আসব। বস্তিবাসীর ফ্ল্যাট একসময় তাদেরই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা সর্বমোট ২৫০টি পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।
চসিক সূত্র জানায়, নগরীর টাইগারপাস এলাকার বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত অধিবাসীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে ২০১৩ সালে বস্তিটি উচ্ছেদ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩ জনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি ও হলফনামা নেয় সিটি করপোরেশন। তখন প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয়েছিল ছয় লাখ টাকা। ফ্ল্যাটের জন্য এককালীন টোকেন মানি হিসেবে সিটি করপোরেশন নিয়েছিল ১০ হাজার টাকা। মাসিক আড়াই হাজার টাকা কিস্তিতে এ মূল্য পরিশোধ করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল সে সময় তাদের। পাঁচ বছর শেষে ১২ কাঠা আয়তনের নিজস্ব জায়গার ওপর প্রায় সাত কোটি টাকায় ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাততলা ভবনটিকে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। বস্তিবাসীকে সেখান থেকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে কি-না এ ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে চসিকের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ সেখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে ফ্ল্যাটপ্রত্যাশী ও টাইগারপাস গৃহহীন মাতৃছায়া কমিটির আহ্বায়ক রমজান আলী বলেন, তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। তারা সেই কথায় আশ্বস্ত হয়ে তাদের দীর্ঘদিনের বসবাসের স্থান ছেড়ে চলে আসেন। কিন্তু এখন তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখা হচ্ছে না। ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে চসিক মেয়রের কাছে দাবি জানান তারা।
এদিকে নতুন নগর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই। এর অংশ হিসেবে এ সপ্তাহেই প্রায় ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে। অবশ্য এর আগেও একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অর্থ সংস্থান না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নগর ভবনের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ সপ্তাহেই এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এটা হবে আইকন টাওয়ার। তিনটি বেজমেন্টে ২৫ তলা হবে নগর ভবন। দীর্ঘ মেয়াদি চিন্তা করেই এই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন নগর ভবন নির্মাণে কতদিন সময় প্রয়োজন হতে পারে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এবং প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রার্থিত সময়ে পাওয়া গেলে কম করে হলেও তিন বছর সময় লাগবে।
- সমকাল/ জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
No comments:
Post a Comment