Search

Friday, May 28, 2021

বেগম খালেদা জিয়া — হৃদয়ে প্রোথিত নাম

------------------------------------

 —  রুমিন ফারহানা 

------------------------------------

গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ায়


বেগম খালেদা জিয়া —  কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি বাংলাদেশের হৃৎস্পন্দন, ১৭ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক ও বাহক, গণতন্ত্রের আরেক নাম। ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচার বিরোধী এক দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে অবিসংবাদী নেতায় পরিণত হন বেগম খালেদা জিয়া। তার গৃহবধূ থেকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়ে ওঠার পথটি খুব মসৃণ ছিল না। তিনি ছিলেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বীর উত্তম, সাবেক সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি এবং আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যোগ্য সহধর্মিনী। চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে বহুবার রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, গৃহবন্দী হয়েছেন তিনি। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র নেতা যিনি কোনও নির্বাচনে কোনও দিন কোনও আসন থেকে পরাজিত হননি। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত তার নাম।

আমরা প্রায়ই বলি ‘পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়’। প্রায় সব ক্ষেত্রে কথাটা সত্যিও। তারপরও কিছু কিছু মানুষের কীর্তি এমনভাবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় যে ‘কেউ অপরিহার্য নয়’এর সীমা ছাড়িয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়া তাদেরই একজন। একটার পর একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করা কর্তৃত্ববাদী চরিত্রের এই সরকার তার ক্ষমতা প্রলম্বিত করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেছিল দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের এই প্রধানকে। আর সেই কারণেই এক এগারোর সময়ে যে নেতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ছিল ৪ টি, গত এক যুগে এই সরকারের আমলে তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ টিতে। এমনকি ২০১৮ সালে বর্ষীয়ান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাবরণও করতে হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ এক কালো অধ্যায়।

কীভাবে মিথ্যা অভিযোগে বেগম জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, সেটার খুঁটিনাটি তথ্য এই দেশের মানুষ জানে। সেই বিষয়ে তাই আর বিস্তারিত আলোচনা অপ্রয়োজনীয়। শুধু এটুকু বলি, একজন আইনজীবী হিসেবে আমি নিজে দুদকের মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তদের মামলায় কাজ করেছি এবং আপিল গ্রহণকালেই জামিন পেতে দেখেছি। স্থায়ী জামিন নিয়ে তাদের অনেকেই এখন বিদেশেও আছেন। এটা যদি হয় একজন সাধারণ অভিযুক্তের ক্ষেত্রে, তাহলে বেগম জিয়ার মতো একজন মানুষের ক্ষেত্রে কী হওয়ার কথা ছিল?

জামিন লাভের ক্ষেত্রে প্রধান যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়, তার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো—ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং সামাজিক অবস্থান। আর যে বিষয় আদালত দেখে তা হলো—অভিযুক্তের পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা এবং সাক্ষীকে ভয়ভীতি দেখানো বা আলামত নষ্ট করার ভয় আছে কিনা। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আদালত যেকোনও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক জামিন দিতে পারেন। এই আশঙ্কাগুলোর কোনটি বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে সত্য, সেটা বিচারের ভার আমি পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। পরবর্তীতে নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি মিললেও কার্যত গৃহবন্দীই ছিলেন তিনি। কোনও ক্রমেই যেন রাজনীতি তার কাছ ঘেঁষতে না পারে তা নিশ্চিত করেছিল সরকার।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতির তথ্য কমবেশি দেশের প্রতিটা মানুষের কাছেই আছে। এর মধ্যে ১১ এপ্রিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করোনা ধরা পড়ে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য গত ২৭ এপ্রিল তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে সিসিইউ তে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর বিদেশে চিকিৎসার সুপারিশ করলে দেশনেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার আবেদন জানানো হয়।  

আবেদনটির ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যে শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই। আইনগতভাবে এই ব্যাখ্যা সঠিক নয়, কারণ ফৌজদারী কার্যবিধি , ১৮৯৮ এর ৪০১ ধারায় সরকারকে ক্ষমতায় দেওয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর বিষয়ে শর্তহীন কিংবা শর্তযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার । ৪০১ (১) এবং ৪০১(৪ক) ধারা ভালো করে পড়লে দেখা যায়, আদালত যদি বিদেশ যেতে নিষেধ করে কোন আদেশও দেয় তাহলেও সরকার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। অর্থাৎ ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার চাইলে যে কোন সময়, যে কোনও দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া।

401.(1) When any person has    been sentenced to punishment for an offence, the Government may at any time without conditions or upon any conditions which the person sentenced accepts, suspend the execution of his sentence or remit the whole or any part of the punishment to which he has been sentenced.

(4A) The provision of the above sub-sections shall also apply to any order passed by a Criminal Court under any section of this Code or of any other law, which restricts the liberty of any person or impose any liability upon him or his property.”

৪০১(৪ক) ধারা পড়লে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, কোন আইনে যদি কোন আদালত কোন ব্যক্তির (সাজাপ্রাপ্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত নয়) চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করে কোন আদেশ দেন সেক্ষেত্রেও সরকার তা স্থগিত করে তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে । এই ক্ষমতা সরকারের সহজাত। দুদক আইন, ২০০৪ এ সরকারের এই ব্যাপক সহজাত ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়নি । ফলে, দুদকেরও এখানে বলার কিছু নেই। অতীতের নজির বলে এরকম অবস্থায় বহু রাজনীতিবিদই বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কেবল তিন বারের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ, জনপ্রিয়তম দল বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দলের প্রধান। করোনা মহামারীতে পুরো বিশ্ব যখন কাঁপছে, প্রতিদিন আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যাকে ছাপিয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে তখন সরকার ৭৬ বছরের অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ন্যুনতম মানবিকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ আশা করেছিল অন্তত এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করবে না সরকার। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী আবারও শিকার হলেন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহংসার। বিষয়টি দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। কর্তৃত্বপরায়ন সরকারের অমানবিকতার আরও একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে এই ঘটনাটি।


  • লেখক জাতীয় সংসদ সদস্য ও আইনজীবী  

Wednesday, May 26, 2021

বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য — ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

--------------------------------------

তারিক চয়ন/মানবজমিন 

--------------------------------------


ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান

‘ইসরাইল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’- বাংলাদেশের পাসপোর্টে এই লেখাটি থেকে ‘ইসরাইল ব্যতীত’- কথাটি বাদ পড়ার খবর সমপ্রতি গণমাধ্যমে আসে। 

সবমিলিয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে। এমন পরিস্থিতিতে মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনির রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান।. 

মানবজমিন: বাংলাদেশের পাসপোর্টে পরিবর্তনের বিষয়টিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলতে আপনি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন?

রাষ্ট্রদূত: হ্যাঁ, আমি বিষয়টা পরিষ্কার করতে চাই। সবার এটা জানা উচিত যে বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের সম্পর্ক বেশ মজবুত।

৫০ বছর ধরেই এটা মজবুত এবং সারাজীবন সম্পর্কটা এমনই থাকবে। কেউ এই সম্পর্ক নষ্ট বা এই সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারবে না। এই সম্পর্ক কিছু নীতির উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে আর সেকারণেই সম্পর্কটা মজবুত। নতুন ই-পাসপোর্ট ইস্যু নিয়ে আমি বলবো, সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রয়েছে যা বাংলাদেশের জনগণের লাভের কথা চিন্তা করেই গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি হিসেবে আমি আমার জনগণের পক্ষেই বলবো। এর মানে এই নয় যে আমরা দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নষ্ট করছি। বাংলাদেশের জনগণ যতোভাবে সম্ভব ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের সমর্থন দেখিয়েছে। আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি এবং আমরা সেটা কখনোই ভুলবো না। সবসময় আমাদের তা স্মরণে থাকবে। তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এটা আমাদের একেবারেই ‘অপ্রত্যাশিত’ ছিল। আবারও বলছি এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। সেজন্য আমি কষ্ট পেয়েছি, অবাক হয়েছি, হতাশ হয়েছি। আমি মনে করি আমাদের জনগণের অনুভূতি প্রকাশের অধিকার আমার রয়েছে।

বাংলাদেশিরা আমাদের ভাই, প্রকৃতই তারা আমাদের ভাই। বাংলাদেশিরা আমাদের সবসময় সমর্থন জানিয়ে এসেছে। কিন্তু পাসপোর্ট ইস্যুটি এমন একটা সময় সামনে এসেছে যা ইসরাইলকে একটি ভুল বার্তা দিয়েছে। মাত্রই সারা বিশ্বের চোখের সামনে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের উপর চরম নৃশংসতা চালিয়েছে, নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। ইসরাইলিরা এটাকে একটা পুরস্কার হিসেবে নিয়েছে। এটা যদিও কোনো পুরস্কার নয়, কিন্তু তারা সেটাই ধরে নিয়েছে এবং সেভাবেই এটাকে ব্যবহার করেছে। আর এটা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকেও ইসরাইলের ভেতরে আরো জনপ্রিয়তা অর্জনে সাহায্য করবে যিনি শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিপক্ষে কাজ করছেন, ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আর এসব কারণেই আমি হতাশ হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি এবং কেউ এই অনুভূতি পরিবর্তন করতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য। আমি মনে করি বাংলাদেশের বেশিরভাগ ভাই-বোনদের অনুভূতিও আমার মতোই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ করে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যার বিষয়ে আমি বলবো, আমি তার বক্তব্যকে সুস্বাগত জানাই। এই ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই ফিলিস্তিনকে সবসময় পূর্ণ সমর্থন দেয়ার জন্য। আশা করি আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করেছি। এটা নিয়ে আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না।

মানবজমিন: এখন বাংলাদেশের কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করেন?

রাষ্ট্রদূত: বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য। সেটা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য একটা বড় সমর্থন হবে। আশা করি বাংলাদেশের পাসপোর্টে সবসময় 

‘ইসরাইল ব্যতীত’ কথাটি উল্লেখ থাকবে। এটা ফিলিস্তিন, ইসরাইল তথা গোটা বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশ অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশগুলোর (যাদের পাসপোর্টে

‘ইসরাইল ব্যতীত’ কথাটি উল্লেখ আছে) মতো তার নীতি, তার অবস্থান ধরে রেখেছে। এটা আমার আন্তরিক অনুরোধ। আমি বিষয়টা বাংলাদেশের শীর্ষনেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।


মে ১৫, ২০২১, ফিলিস্তিনির গাজায় ইসরাইলি আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া একটি শিশু


মানবজমিন: সমপ্রতি কিছু মুসলিম দেশতো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করেছে। এ ব্যাপারে কি বলবেন?

রাষ্ট্রদূত: এটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এটাকে ‘পেছনে ফিরে’ যাওয়া হিসেবে ধরে নিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়টা ভিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়বিচারের প্রশ্নে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে আসছে। নানাভাবে তারা এটা বুঝিয়েছে। বাংলাদেশিরা এমনকি আমাদের হয়ে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছে। অনেকে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। ওইসব আরব দেশগুলোতো এসব করেনি। সুতরাং পার্থক্যটা পরিষ্কার। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে সরকার জনগণের কথা শুনে। আর জনগণের ভাষা হলো ফিলিস্তিনকে সমর্থন করতে হবে। আশা করি বাংলাদেশের সরকার তার জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

মানবজমিন: আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান বলে জানিয়েছিলেন...

রাষ্ট্রদূত: তিনি খুব ব্যস্ত মানুষ। তার সাক্ষাৎ প্রাপ্তির অপেক্ষা করছি।

মানবজমিন: সাক্ষাৎ পেলে তাকে আপনি কি বলতে চান?

রাষ্ট্রদূত: আমি পাসপোর্ট ইস্যুটি তার কাছে তুলবো। পরিবেশের উপর নির্ভর করবে কি আলোচনা হবে।

মানবজমিন: অনেকেইতো বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে যদি যোগাযোগই না থাকে তাহলে কীভাবে কোনো দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে তার সঙ্গে কথা বলতে পারবে অথবা দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখতে পারবে...

রাষ্ট্রদূত: ওসব অযৌক্তিক কথা। ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। এটা ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়, ভালোর সঙ্গে খারাপ, সত্যের সঙ্গে মিথ্যার প্রশ্ন। কেউ এখানে মাঝামাঝি অবস্থান নিতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থান ভালো-খারাপের মাঝামাঝি হতে পারে না। সুদীর্ঘ ৫১ বছর ধরে বাংলাদেশ সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে রয়েছে।

মানবজমিন: ইসরাইল ফিলিস্তিনের মধ্যে মধ্যস্ততা করার জন্য কারা ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি প্রত্যাশা করেন?

রাষ্ট্রদূত: যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, জাতিসংঘ গত ২৬ বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র দ্বিমুখী নীতি পালন করছে, শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশতো এক্ষেত্রে কিছুই করতে পারবে না।

মানবজমিন: ইদানীং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সুর কিছুটা পাল্টেছেন বলা হচ্ছে...

রাষ্ট্রদূত: যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবসময়ই ইসরাইলের পক্ষে। ইসরাইলের জন্মের পর থেকেই। অন্যদিকে আমাদের রয়েছে মুসলিম ভাইদের সমর্থন। সেজন্যই বলছি, দ্বিমুখী নীতি অন্য কারো কাছ থেকে এলে সেটা কষ্টের নয়। কিন্তু বাংলাদেশি ভাইদের কাছ থেকে এলে সেটা অপ্রত্যাশিত আর কষ্টের।

মানবজমিন: অনেক ফিলিস্তিনি এবং তাদের সমর্থক বলছেন, এবারের যুদ্ধে ফিলিস্তিন জয়ী হয়েছে। সত্যিই কি তাই?

রাষ্ট্রদূত: এ ব্যাপারে বাস্তবতা অনুধাবন করা প্রয়োজন। এই ইস্যুতে সত্যিকারে একমাত্র ‘শয়তান’ জয়ী হয়েছে। আমাদের ৬৯ টি শিশু মারা গেছে। আমরা বহু মা-বোন-স্ত্রী, বৃদ্ধ-তরুণকে হারিয়েছি। আমরা কীভাবে নিজেদের বিজয়ী বলতে পারি! আমরা কোনো ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারিনি, নতুন করে কোনো ভূমি জয়ও করতে পারিনি। আমাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার নিজ স্বার্থের জন্য, সরকার গঠনের জন্য, ইসরাইলের ভেতরে জনপ্রিয়তা লাভের জন্য এটা করেছিলেন। নিজের জনগণকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, তিনিই তাদের সেরা প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি-ই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেননি। এটাই একমাত্র আমাদের বিজয়। তিনি কিছুই অর্জন করতে পারেননি। তিনি তার জনগণকে রক্ষা করতে পারেননি। তাই তিনি হেরে গেছেন। তিনি পরাজিত। আমরা তাই বলবো, আমরা জয়ী হয়নি কিন্তু তিনি হেরে গেছেন।

মানবজমিন: ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের ‘অর্থ সংগ্রহ’ করা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন...

রাষ্ট্রদূত: আমরা কোন অর্থ সংগ্রহ করতে চাইনি। ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে প্রায় ২১ হাজার ই-মেইল, ফোন কল ইত্যাদি এসেছে অর্থ সাহায্য করার জন্য। তারা জোর অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা তাদের চিনিও না। এক সময় তারা দূতাবাসে আসা শুরু করে। করোনার জন্য আমরা তাদের দূরত্ব বজায় রাখতে বলি। আমরা বিকাশ নাম্বার দিই, ব্যাংক একাউন্ট খুলি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ, তারা বেশ সাহায্য করেছেন। অনেকে ঔষধ দিতে চান। আমরা তাদেরকে বলি আমাদের ঔষধের প্রয়োজন নেই। আমাদের মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন।

মানবজমিন: পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

রাষ্ট্রদূত: বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনাদের ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। কে কতো দিলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এতো মানুষ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমি ৫ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ বা ২০০ টাকা সাহায্য করা লোকদের বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই। অনেকের কাছে হয়তো এটা সামান্য পরিমাণ, কিন্তু তাদের কাছে এটাই অনেক কিছু। তাদের সন্তানের জন্য খরচ না করে তারা সেটা আমাদের দিয়েছে। তাদের এই সাহায্য আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তাদের অনেকে জানায়- এর বেশি আমার আর করার নেই, প্লিজ মাফ করবেন। তাদেরকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।


Friday, May 21, 2021

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’

-----------------------------------------------

মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি

-----------------------------------------------


দেশে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, হয়রানি ও মামলার ঘটনায় সরকার দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিচ্ছে। এ ঘটনায় স্পষ্ট যে বর্তমানে আমলাদের কাছে সবাই জিম্মি হয়ে আছে।

‘বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে সংবাদমাধ্যম ও বাক্স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক ওয়েবনিয়ারে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি  বুধবার, মে ১৯, ২০২১, দুপুরে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

শাহদীন মালিক

আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, হয়রানি ও মামলার প্রতিবাদে দেশে সব পেশাজীবীই প্রতিবাদ করছেন। এ থেকে সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। মন্ত্রীদের এমন বক্তব্য আসলে ভাঁওতাবাজি।

দেশের আইন সরকারের গতিতে চলে—এমন মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, কেনাকাটার দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণেই রোজিনা ইসলামের সঙ্গে এমনটি হয়েছে। সরকার যেটাকে দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থের কথা বলে, সেটি আসলে সরকারের নিরাপত্তা ও স্বার্থের বিষয়। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চায় সবাই রোবট বা পুতুল হয়ে থাকুক। সরকার আমাদের নীরব করতে চায়। এ সময় সামষ্টিকভাবে সরব হয়ে সবাইকে প্রতিরোধ করতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ

রোজিনা ইসলামের হেনস্তার ঘটনায় তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এই ঘটনায় তথ্যমন্ত্রীকে কোনো দায়িত্বে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের ঢোল পেটানো ছাড়া তাঁর আর কোনো কাজ নেই।’

 

সরকার দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামকে আটক, হেনস্তা ও মামলা দেওয়ার মাধ্যমে সরকার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিচ্ছে। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তথ্য জানার মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সরকারের কাছে যে তথ্য আছে, নাগরিকের সে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার আছে। এটি নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।

 

আসিফ নজরুল

রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, মামলার ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তারা ‘ক্ষমতা’ দেখিয়েছেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। অথচ তাঁরা নিজেদের জনগণের প্রভু ভাবেন। রোজিনা ইসলামের হেনস্তার ঘটনায় এটাই দেখা গেছে। রোজিনার গলা চেপে ধরা ওই হাত সারা দেশের মানুষের ওপর হাত।

 

রিজওয়ানা হাসান
রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের গঠিত কমিটি দিয়ে নয়, নিরপেক্ষ ন্যায়পাল নিয়োগ করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। যে নিপীড়নের বার্তা দেওয়া হলো, ভবিষ্যতে যেন এমন আর না ঘটে, সেটিই সবার চাওয়া।

 

সারা হোসেন

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আইনি কাঠামো ও বাস্তবতার মধ্যে ফারাক আছে। সেটি রোজিনা ইসলামের ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে। তাঁকে যে আটক ও হয়রানি করা হলো, এর জন্য দায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রোজিনা ইসলামের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা যা করেছেন, তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।

বাংলাদেশে স্পষ্টত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করেন মতপ্রকাশ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল ১৯-এর আঞ্চলিক প্রধান ফারুখ ফয়সাল। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কী এমন তথ্য ছিল যেটিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। এ ঘটনায় সারা বিশ্বে দেশের সম্মান নষ্ট হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো বক্তব্য দেননি।

ফারুখ ফয়সাল আরও বলেন, রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে তাঁর গায়ে হাত তোলা হয়েছে। তাঁর ব্যাগে যে কর্মকর্তারা কাগজ ঢুকিয়ে দেননি, তার কী প্রমাণ আছে। তাঁকে আটকে রাখা, হেনস্তা করার ক্ষমতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কে দিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এটা করেছেন।

দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে—এই মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সাংবাদিকের কাজই তথ্য বের করে আনা। সেটাই রোজিনা ইসলাম করেছেন। অথচ ঔপনিবেশিক আইন দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর সব সরকার মিথ্যা বলে, সরকার তথ্য লুকাতে চায়। তিনি বলেন, রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। এ কারণেই তিনি আক্রোশের শিকার হয়েছেন।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন মানবাধিকারকর্মী শাহনাজ হুদা।


Bangladesh: Arrest Of Leading Crime Reporter Raises Issue Of Media Freedom

May 21, 2021 / EurasiaReview

By P. K. Balachandran

 

Journalist Rozina Islam

Government dithers as Foreign Minister says he is embarrassed by foreign diplomats’ queries

Journalists in Bangladesh are up in arms against the arrest, under the Official Secrets Act, of a leading investigative journalist Rozina Islam on the charge of “stealing” documents from the Health Ministry.

In an unusual reaction, Rozina’s journalistic fraternity has sought to join her in custody. Editors and international rights watchdogs like Human Rights Watch and Amnesty International have condemned the arrest.

Their concern is heightened by the fact that Bangladesh is ranked 152 nd., out of 180 countries in the 2021 World Press Freedom Index compiled by Reporters Without Borders (RSF).

The adverse reaction to the arrest both at home and abroad has embarrassed the Sheikh Hasina government. Even as detectives were telling the media that they would not be able to get to the bottom of the “espionage” before July, and the Dhaka Metropolitan Magistrate was dragging his feet on granting Rozina bail, an embarrassed government transferred the official who filed the case against her.

Foreign Minister A.K.Abdul Momen said: “This is a regrettable and unexpected incident for the government. As the Foreign Ministry, we face questions over this. Such incidents occurred only because of a few government employees, and it should not be repeated. Journalists are a very helpful force for the government as they unearth corruption and inform both the people and the authorities. Corruption would not be revealed without journalists.”

Rozina, who had exposed high corruption in the Health Ministry, especially during the pandemic in the Bengali daily Prothom Alo, had gone to the Health Ministry on May 17 for news gathering at the invitation of her source, a Deputy Secretary Shibbir Ahmad. But she was detained at the office of Md Saiful Islam Bhuiyan, an aide to Health Services Secretary Lokman Hossain Miah, for five hours. She was then taken to Shahbagh Police Station around 8:30 pm and Deputy Secretary of Health Services Shibbir Ahmed filed a case against her under the Official Secrets Act. According to senior Dhaka journalists, it was a sting operation.

Writing in The Daily Star Deputy Editor Syed Abraful Haque said: ” A journalist was being hounded like a criminal over her attempt to collect information. Any attempt by journalists to get hold of information is not a crime but an act of courageous journalism. The sole purpose behind this courageous effort is to inform the people and their representatives in public offices. And, journalists’ dig at information is made lawful by Article 39 of the constitution. Having been safeguarded by the constitution, they use this freedom of expression to help fight corruption and injustices, and reveal what those in corridors of power want to hide. So, it’s not reporters but their harassers who should be put in the dock.”

Haque further said: “The intention of the government machinery is quite apparent: suppress the flow of information to media outlets, at any cost. The Official Secrets Act of 1923 and the Digital Security Act of 2018 are ready to be used against journalists to stem the flow of information. In addition to the laws, the government order on public servants “say nothing to media” is also in full force. If the flow of public interest information is choked, it’s only natural for journalists to try desperate methods. Possibly, that’s the case with Rozina.”

The Committee to Protect Journalists has called on Bangladeshi authorities to immediately release journalist Rozina, withdraw the investigation into her, and stop arresting journalists under the Official Secrets Act. “We are deeply alarmed that Bangladesh officials detained a journalist and filed a complaint under a draconian colonial-era law that carries ridiculously harsh penalties,” said Aliya Iftikhar, CPJ’s senior Asia researcher. “Bangladesh police and authorities should recognize that Rozina Islam is a journalist whose work is a public service and should immediately drop the case against her and allow her to go free,” Iftikhar added.

Legal experts point out that the Official Secrets Act contradicts the Bangladesh constitution. Questions have also been asked about whether the Official Secrets Act is applicable to journalists. Supreme Court lawyer, Tanzim Al Islam, said that the Official Secrets Act is contradictory to the Public-Interest Information Disclosure Act (Provide Protection) of 2011 because the latter guarantees the protection of the people who disclose the information and in some cases stipulates rewards for them. Bangladesh journalists can use the Public-Interest Information Disclosure Act passed a decade ago, but they do not, pointed out lawyer Jyotrimoy Barua.

Nine Bangladeshi nongovernmental organizations said in a letter to Michelle Bachelet, the United Nations High Commissioner for Human Rights, that UN experts should publicly and vigorously express concerns over continuing attacks on the media including arbitrary arrests, torture, and extrajudicial killings, and use all possible means to urge the Bangladeshi authorities to protect and respect freedom of expression.

According to Human Rights Watch, at least 247 journalists were reportedly subjected to attacks, harassment, and intimidation by state officials and others affiliated with the Bangladesh government in 2020. More than 900 cases were filed under the draconian Digital Security Act with nearly 1,000 people charged and 353 detained – many of them journalists.

“Bangladeshi journalists are risking arbitrary arrest, torture, and their lives just to do their jobs,” said Angelita Baeyens, Vice President of International Advocacy and Litigation at Robert F. Kennedy Human Rights. “The UN and concerned governments should stand with journalists and make clear to the Bangladesh government that freedom of expression is essential to democracy.”

In recent months, a number of Bangladeshi journalists have been targeted for exposing government corruption or for expressing dissent. At least 17 journalists, a majority of them photographers, were injured covering protests over the visit by Indian Prime Minister Narendra Modi in March this year. Demonstrators and police officers hit journalists with pistol butts, sticks, iron rods, stones, and bricks. Journalists shot by rubber bullets sustained bruises, swelling, bleeding, broken bones, a dislocated shoulder, and a cracked skull.

Media critical of the ruling Awami League party is frequently censored. The Bangladesh government has allegedly targeted websites and YouTube channels of Bangladeshi dissidents abroad, media reports said. In March, for instance, the Indian news website Scroll.in was inaccessible in Bangladesh, after publishing an article by a Bangladeshi writer criticizing Gowher Rizvi, a top adviser of Prime Minister Sheikh Hasina.

Self-Censorship

The HRW went on to say that “with widespread repression of the media and the harassment of editors who publish reports critical of the government, journalists have taken to self-censoring at unprecedented levels given the risks of imprisonment or closure of media outlets.”

“The authorities continue to use the Digital Security Act (DSA) to harass and indefinitely detain journalists, activists, and others critical of the government, resulting in a chilling effect on expression of dissent. Bangladesh authorities are poised to undertake even more prosecutions of DSA cases, as the Law Ministry has approved a proposal to expand the number of special tribunals specifically for these types of cyber crimes.”

“The UN and donors should continue to take every opportunity to call on the government to repeal the Digital Security Act and release all those detained under it,” said Brad Adams, Asia director at HRW.


[P. K. Balachandran is a senior Indian journalist working in Sri Lanka for local and
international media and has been writing on South Asian issues for the past 21 years.]


Thursday, May 20, 2021

চুরি-দুর্নীতি সমস্যা নয়, প্রকাশ করলে সমস্যা


-----------------------------

গোলাম মোর্তোজা

-----------------------------




 

একজন সাংবাদিক রোজিনার উপর যে নিপীড়ন চলছে, প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় তা থেকে আমরা কিছু শিখব না। ওই যে ইতিহাসের সেই নির্মম সত্য, অতীত বা চলমান ঘটনা থেকে আমরা কিছু শিখি না। লেখার পরিধি বহু বিস্তৃত করব না। মূলত সংবাদ মাধ্যম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং রোজিনা ইসলামের এক-দেড় বছরের সাংবাদিকতার মধ্যে সীমিত থাকার চেষ্টা করব।

১. রোজিনা আসলে কী করেছেন? কিছু ভিডিও ফুটেজ থেকে ধারণা পাওয়া যায়। যে ভিডিও করা হয়েছে রোজিনাকে আটকে রাখার প্রথম পর্যায়ে। ভিডিও তারাই করেছেন যারা রোজিনাকে আটকে রেখেছিলেন। যা দেখে বোঝা যায়, ভিডিও ধারণের আগেই রোজিনার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আরও মোবাইল ফোন আছে কি না, তা সন্ধান করতে দেখা যায় অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুননেছাকে। তখন রোজিনার ব্যাগে কোনো কাগজ পাওয়া গেছে, এমন চিত্র দেখা যায়নি। তাদের কথাতেও বোঝা যায়নি। মোবাইলে ছবি তুলেছেন বলে সন্দেহ করছেন, সেটাই বোঝা গেছে।

২. আরেকটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে দেখা যায় অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুননেছা সাংবাদিক রোজিনার বুক-গলা চেপে ধরছেন। ভয়ার্ত রোজিনা কিছু একটা বলছেন, জেবুননেছা হুংকার দিয়ে বলছেন ‘অবশ্যই’।

৩. তারপর রোজিনাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে মামলা সাজানো হয়েছে, ৬২ পৃষ্ঠার সরকারি গোপনীয় কাগজ রোজিনা চুরি করেছেন। প্রথম পর্যায়ের ভিডিও চিত্রে যার ইঙ্গিত ছিল না। তার ব্যাগে ৬২ পৃষ্ঠার ফাইল আছে, তা মনেও হয়নি। যদি ব্যাগে এত মোটা ফাইল থাকত, অতিরিক্ত সচিব জেবুননেছা যখন তার মোবাইল খুঁজছিলেন তখনই ফাইলটি ব্যাগ থেকে বের করতেন। তা তাকে করতে দেখা যায়নি।

৪. তাহলে ৬ ঘণ্টা আটকে রাখার তাৎপর্য এই যে, এই সময়ে ফাইলের নাটক সাজানো হয়েছে? ভিডিও করা হয়েছে? রোজিনা বাধা দিয়েছেন বলে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে? এ কারণেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন? রোজিনা শাহবাগ থানায় তার বোনকে যা বলেছেন, তা থেকে এমনটা আমরা ধারণা করতে পারি। পুরোটা জানা যাবে যখন রোজিনা মুক্ত হবেন, তখন।

৫. ধারণা করি রোজিনা কোনো ফাইলের ছবি তুলেছিলেন। ‘কেন ছবি তুললেন’ এই প্রশ্নের আগের প্রশ্ন এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কী ছিল সেই ফাইলে? বলা হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য ছিল। আসলেই কি গোপনীয় তথ্য ছিল না বড় কোনো দুর্নীতির তথ্য ছিল? যে ৬২ পৃষ্ঠার ‘ফাইল চুরি’র অভিযোগ আনা হয়েছে, রোজিনা সেই ফাইলের ছবি তুলেছিলেন? না দুর্নীতি সংক্রান্ত অন্য ফাইলের ছবি তুলেছিলেন? তা প্রমাণ হবে কীভাবে? রোজিনার মোবাইলে তোলা ছবির সঙ্গে ফাইল মিলিয়ে দেখলে সত্য জানা যাবে। রোজিনার মোবাইল কেড়ে নিয়ে নিশ্চয় সেসব ছবি ডিলিট করে দেওয়া হয়নি।

৬. গত এক বছর ধরে রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছেন, সেই তথ্যগুলো কোনো না কোনো কৌশলে সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাস্থ্য সচিব বা তার সহকারী নিশ্চয় স্বপ্রণোদিত হয়ে রোজিনাকে তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করেননি। পৃথিবীর সব অনুসন্ধানী সাংবাদিককে তথ্য নানা রকম কৌশলেই সংগ্রহ করতে হয়। বেসিক ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, ফার্মাস ব্যাংক, পিপলস লিজিং...হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি-দুর্নীতির তথ্য নানা কৌশলেই সংগ্রহ করা হয়েছিল।

এই তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে ‘তথ্য চুরি’ বলে না। তারাই ‘তথ্য চুরি’ বলে যারা এসব চুরি-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গত এক-দেড় বছর ধরে রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছেন।

রোজিনাকে কারাগারে পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছে।

৭. এবার সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে দুএকটি কথা। আজ রোজিনা নির্যাতিত হচ্ছেন, অতীতে আরও অনেকে নির্যাতিত হয়েছেন। উন্নত বিশ্ব বা ভারতও নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কম কেন? কেন সাংবাদিকরা এখানে এতটা নিপীড়ন, এমন কি হত্যার শিকার হন? একটু ভূমিকার অবতারণা করে প্রশ্নের উত্তরে আসছি।

সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের অন্তর্দৃষ্টি বহুবিস্তৃত থাকে বা থাকতে হয়, এমনটাই আমাদের শেখানো হয়েছে-জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক বা সংবাদ মাধ্যমের দেখার সীমা অত্যন্ত সংকুচিত। এই সংকুচিত করার একটা দৃশ্যমান প্রক্রিয়া চলমান। সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের একটা বড় অংশ যে সেই সংকোচন প্রক্রিয়ার অংশীজন, তাও অদৃশ্য কিছু নয়। সেকারণে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনাটিকে আমরা শুধু সচিবালয়ের একটি রুম, সচিব, সচিবের সহকারী, কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবলের মধ্যে সীমিত করে আলোচনা করছি। এসব ক্ষেত্রে যে বহু বিস্তৃত সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনই প্রধান বিষয়, তা আমরা দেখছি না বা দেখতে চাইছি না। সেকারণে পুরো বিষয়টিকে আমরা কয়েকজন আমলা বা আমলাতন্ত্রের মধ্যে সীমিত করে ফেলছি।

৮. আমলাতন্ত্র কখনো এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যদি না রাজনৈতিক সরকারের সম্মতি থাকে। আর যদি করেও ফেলে, তাৎক্ষণিকভাবে সম্মতি নিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে রোজিনার ঘটনাটি নিয়ে কেউ কেউ যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ শুরুতেই সমাধানের জন্যে আমলাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমলারা সেসব রাজনীতিবিদের কথা বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। সরকার নানা কারণে প্রায় সম্পূর্ণরূপে আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে। কারণগুলো কমবেশি আমরা সবাই জানি, আজ আর সেই আলোচনা করছি না।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করে, রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে নয়। করোনাকালেও জেলাগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের, রাজনীতিবিদ বা এমপিদের নয়।

ফলে আমলাতন্ত্র সেই সব রাজনীতিবিদদের কথা ধর্তব্যের মধ্যে আনে না, যাদেরকে দৃশ্যমানভাবে আমরা ‘প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ’ মনে করি। আমলাতন্ত্র জানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে এসব রাজনীতিবিদের চেয়ে তাদের গুরুত্ব বহুগুণ বেশি। রাজনীতিবিদরা নীতি-নির্ধারণের অংশ নয়, আমলারা নীতি-নির্ধারণের অংশ। আমলারা যা করে, রোজিনার সঙ্গে যা করেছে, আরও অনেক সংবাদকর্মীদের সঙ্গে যা করেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্মতি-জ্ঞাতসারেই করেছে।

৯. বিগত জাতীয় নির্বাচন ও বিরোধী রাজনীতি-মত দমন ইস্যুতে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বড় অংশটি স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আমলাতন্ত্র-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় দেখতে চায়। ব্যতিক্রমী রোজিনা ইসলামদের তারা দেখতে চায় না।

১০. রোজিনাদের নিপীড়ন করা হয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, রোজিনাদের সংখ্যা খুব কম। তাদের ভয় দেখাতে পারলে, অবাধ দুর্নীতির তথ্য আর প্রকাশ হবে না। এতে দুর্নীতির সাম্রাজ্য বিস্তৃত করা সহজ হবে।

দ্বিতীয়ত, রোজিনাদের নিপীড়ন করলেও স্বেচ্ছাসেবক সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা জোরালো কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ করবেন না। এটা খুব ভালো করে জানে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব-আমলাতন্ত্র-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১১. বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক নিপীড়ন বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে লেখা শেষ করি। বিষয়টি আসলে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আইনের শাসনহীনতায় ঘটে দুর্নীতির বিস্তৃতি।

ভারতে বহু সমস্যা আছে, গণতন্ত্রও আছে। ভারতীয়রা ভোট দেন, দিনের ভোট দিনে দেন। জনগণের ভোটে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় আসে-যায়। শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এমন কি নেপালেও জনগণ দিনের ভোট দিনে দিয়ে সরকার ক্ষমতায় আনে, বিদায় করে। জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে। কিছুটা হলেও কার্যকর আছে আইনের শাসন।

বাংলাদেশের সঙ্গে সেসব দেশের নির্বাচন ও আইনের শাসনের চিত্র মেলালেই মিলবে প্রশ্নের উত্তর।


লেখন সাংবাদিক। তাঁর ইমেইল একাউন্ট s.mortoza@gmail.com 


আইনটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত

------------------------------------- 

রিয়াজউদ্দিন আহমেদ 

-------------------------------------

 সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং
 অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে তাকে আটক করা

অবশেষে আমাদের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইংরেজ শাসনামলে যে আইন করা হয়েছিল সত্য গোপন করার জন্য, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭৩ সালে এই আইনটি বাতিল করতে সাংবাদিকদের দাবির সঙ্গে সরকার একমত হয়। অবাধ তথ্য প্রবাহ আইন করার সময় এই অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হয় এবং সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয় আপাত এই আইনের কার্যকারিতা থাকবে না। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এ এই সত্য গোপনের আইন জুড়ে দেয়া হয়।

করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতির খবর প্রকাশ হতে থাকে।

দুর্নীতিতে নিমজ্জিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল। আর এর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে তাকে আটক করা হয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এ ধরনের আইন অনেকদিন প্রয়োগ হয়নি। আমরা যখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সংশোধনীর জন্য আন্দোলন করি তখন সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে এই আইনটির সংশোধনের আশ্বাস দিয়েও পালন করা হয়নি। এই আইন সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুন ধারা সংযোজিত করেছে।

অতি সম্প্রতি বার্মার সামরিক জান্তা এই আইনটি ব্যবহার করে রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়। ফলে বার্মার সামরিক জান্তা সারা বিশ্বে নিন্দিত হয়। গণতন্ত্রের উচ্চকণ্ঠ বাংলাদেশও কি শেষ পর্যন্ত বার্মার কাতারে চলে গেল?  এটা সত্যি দুঃখজনক। একথা বলতে হবে, গোপন কথাটি রবে না গোপনে। যে দুর্নীতি গোপন করতে চেয়েছিল ইংরেজরা, যে দুর্নীতি গোপন করার জন্য আমরাও উঠেপড়ে লেগেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার মনে হয়, এই আইনটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত এবং এই আইনের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টও বাতিল হওয়া উচিত। কারণ এই আইন যতদিন থাকবে ততদিন সাংবাদিক নির্যাতন চলবে। রোজিনা ইসলাম আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট একটি ঘুমন্ত বাঘ। কিন্তু বাঘ এখন জেগে উঠেছে। বাঘ যখন জেগে উঠে তখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই বাঘকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমি খুশি হয়েছি সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার ফোরাম তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়ায়। এটাই সঠিক পথ। এটাকে আরো শানিত করতে হবে। এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি সত্য উদ্‌ঘাটনের জন্য সাংবাদিকতা করতে হয়, যদি সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য সাংবাদিকতা করতে হয় তবে কেউ তা করতে দেবে না, বাধা দেবে। বাধা উপেক্ষা করে রোজিনার মতো সাহস নিয়ে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে আরো সোচ্চার হতে হবে। এটাই সুযোগ ডিজিটালি সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার। কারণ এই কথা সরকারকে বুঝতে হবে যে, কথা গোপন করার জন্য যে আইন করা হয়েছিল, সেই গোপন কথাটি রবে না গোপনে। জনসমক্ষে বেরিয়ে আসবেই।


  • লেখক জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও খ্যাতিমান সম্পাদক 


Saturday, May 15, 2021

করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারি কালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়িত্বহীনতা

-------------------------------------

— মাকসুদুর রহমান

-------------------------------------

কোভিড নাইনটিন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার খোলনলচে চূড়ান্তভাবে উন্মোচিত করেছে। অথচ এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশের সামনের সারির গণমাধ্যমসমূহ নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো কিংবা মেট্রোরেলের বগি আমদানির রঙচঙে দৃশ্য তুলে ধরতে। ভাবখানা এমন বাংলাদেশে পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অথচ তারা বছরখানেক যাবৎ করোনাভাইরাস মহামারিকালে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে কি কি অব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং তা দূরীকরণে জরুরী ভিত্তিতে যেসকল ব্যবস্থা নেয়া অবশ্যম্ভাবী তা নিয়ে লাগাতারভাবে অনুসন্ধানি রিপোর্ট ও তার ফলোআপ করেনি।


করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারির ফলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি ও টিকা সঙ্কট বিষয়ে মিডিয়া এক্টিভিজম জরুরি। 


গণমাধ্যমসমূহ সেই অর্থে প্রকাশ করেনি দেশের জেলা  শহর গুলোতে আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন, টেস্টের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও সঙ্কট নিরসনে অগ্রগতি সম্পর্কে। বাংলাদেশের প্রধান ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ প্রবীণ সাংবাদিকরা পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে সরকারের  উন্নয়নের প্রশংসা প্রকাশে  যেভাবে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন, তার ভগ্নাংশ মাত্র আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনসহ স্বাস্থ্যপরিষেবার অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে জনগণের মৌলিক বিষয়সমূহ উপস্থাপন থেকে সুচতুরভাবে নিজেদের এড়িয়ে যাওয়ার শামিল। প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টারসহ সামনের সারির গণমাধ্যমসমূহ ও নেতৃত্ব প্রদানকারী সাংবাদিকরা কোভিড-১৯ টিকা সংগ্রহে সরকারের অবস্থান, অব্যবস্থাপনা, লুকোচুরি ইত্যাদি বিষয়ে শক্তভাবে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেনি। অথচ জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের প্রতি মনস্তাত্ত্বিক  চাপ সৃষ্টির এটা ছিল গণমাধ্যমসমূহের নৈতিক দায়িত্ব। যে দায়িত্ব পালনে তারা কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টার, চ্যানেল আই, এনটিভি, ৭১ টভি’র মতো গণমাধ্যম টিকা সংগ্রহে সরকারের নানা কার্যক্রম সম্পর্কে লাগাতারভাবে ওয়াচডগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি।

গণমাধ্যমসমূহ ‘সংবাদপত্র করোনা ভাইরাস ছড়ায় না’ এই বিজ্ঞাপন প্রদানে যতটা  স্পেস দিয়েছে তার অনেকাংশে কম প্রশ্ন সরকারের সামনে তুলে ধরেছে টিকা সংগ্রহ, বিতরণ নিয়ে। অথচ এটা গণমাধ্যমের দায়িত্ব ছিলো। কারণ সংবাদপত্রের কাজই হচ্ছে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে লাগাতারভাবে তুলে ধরে সরকারকে চাপের মধ্যে রাখা। 

এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণে এদেশের মানুষের ভোট ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরে এদেশের গণমাধ্যমসমূহ অনেকটা দায়সারাভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছে।  যার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক  শাসনব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক যবনিকাপাত। মূলত গণমাধ্যমসমূহের নির্লিপ্ততায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীন সংস্কৃতি গড়ে ওঠায় এর অনেকটা দায় বর্তমান গণবিরোধী সরকারের নিরব  সহযোগী হিসেবে তাদের উপরও বর্তায়। 

গণমাধ্যমের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে সত্য তুলে ধরা। বলা হয়ে থাকে গণমাধ্যম হচ্ছে জনগণের সংসদ। বাংলাদেশ করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারির দ্বিতীয়বর্ষ অতিক্রম করছে। অকালে বেঘোরে মারা যাচ্ছে সব বয়সের মানুষ। অকাতরে আক্রান্ত হচ্ছে লাখো মানুষ। অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়েছে। দেশ এক অনিশ্চিত পথে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে সরকার যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা গণমাধ্যমের বর্তমানে প্রধান দায়িত্ব। স্বাস্থ্যসেবার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরা এবং টিকা সঙ্কটকে অব্যাহতভাবে হাইলাইট করা গণমাধ্যের কাজ। 

কিন্তু গণমাধ্যম এই মহামারির ভয়াবহতা বিষয়ে একেবারে উদাসীনতা দেখিয়ে চলেছে গণমাধ্যম। একদিনে অবৈধ সরকারের উদাসীনতা, অন্যদিকে গণমাধ্যমের নির্লিপ্ততা, ফলে দেশ মহাবিপদে।    

গণমাধ্যমের মনে রাখতে হবে তাদের সংবাদসেবার ইউজার হচ্ছে জনগণ। জনগণের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকলে, এর খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে না গণমাধ্যম। আর এই বিশ্বমহামারির সঠিক চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থতার কথা ইতিহাসে কিন্তু লেখা থাকবে। 




লেখক গবেষক।  


Wednesday, May 12, 2021

প্রতারকদের হাতে এখন দেশ

---------------------------------

মারুফ কামাল খান 

---------------------------------

রাষ্ট্রপরিচালনা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা এগুলো অনেক বড় মাপের মহৎ কাজ। খুব ছোট ও নিকৃষ্ট মনের মানুষদের এসব কাজ সাজে না। খুব ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছি। মাথায় ঘুরছে এক জ্বলন্ত প্রশ্ন: রুচি, শোভনীয়তা সবই কি শেষ হয়ে গেলো এদেশ থেকে?

আসল রিপোর্ট 


খালেদা জিয়া কে তা বিস্তারিত বলবার দরকার নেই। তাঁর মতন একজন প্রবীণ মানুষ গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার আবেদন আইনের মিথ্যে অজুহাতে এবং রেওয়াজ নেই বলে ভুল তথ্য দিয়ে খারিজ করা হয়েছে। অথচ অনৈতিক এই সরকারের পদস্থ লোকদের অনুকূল বিবেচনার আশ্বাস পেয়েই এ দরখাস্ত করা হয়েছিল বলেই জেনেছি। দরখাস্ত হাতে পেয়ে বিশ্বাসভঙ্গ করে উলটো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। বলার কিছু নেই। যারা যে স্ট্যান্ডার্ডের লোক তাদের কাছ থেকে তেমন সিদ্ধান্তই আসা স্বাভাবিক।

আরো জানলাম, দরখাস্তের সঙ্গে চিকিৎসাধীন ম্যাডাম খালেদা জিয়ার যে ছবিগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল সেই ছবিগুলো এখন ফেসবুকে ঘুরছে। পাব্লিক ডোমেইনে এমন ছবি দেয়া অনুচিত। অথচ তারা সে ছবিগুলো সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। রুচিহীন, সংকীর্ণ ও মানবিক মূল্যবোধ বর্জিত লোক ছাড়া আর কেউ এমন করতে পারেনা।



এডিটেড ফেইক রিপোর্ট
আর সব শেষে ওরা এই পবিত্র রমজান মাসে গুরুতর অসুস্থ মানুষকে হেয় করতে যে জঘণ্য জালিয়াতি করে কুৎসিত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে তার নিন্দে করার ভাষা নেই। তৃতীয় দফায় বেগম জিয়ার কোভিড নাইনটিন টেস্টের ল্যাব রিপোর্ট এডিট করে সেখানে জন্মতারিখ পালটে দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও চরম অমানবিক এই জালিয়াতির প্রচারণায় সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও সাংবাদিক নামধারী ওদের দলীয় প্রচারবিদেরাও নেমে পড়েছে। অথচ এ রিপোর্ট কেবল রোগ-নির্ণয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য কেবলই চিকিৎসকদের জন্য। সেটিকে বিকৃত করে মিথ্যাপ্রচারের উপকরণে পরিণত করা হয়েছে। এডিট করা ফেইক রিপোর্ট ও অরিজিন্যাল রিপোর্ট পাশপাশি দিয়েছি। দেখে মিলিয়ে নিন। বুঝুন কত ঘৃণিত মানুষ এরা!

এদেরকে ধিক্কার জানাতেও ঘৃণা হয়। কিন্তু বেদনার সঙ্গে বলতে হয়, এই স্ট্যান্ডার্ডের প্রতারক লোকদের হাতে এখন দেশ! এ জাতির ললাটে আরো অনেক দুর্ভোগ আছে নিঃসন্দেহে! 

 

  • লেখক সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও বিএনপির চেয়ারপার্সন এর সাবেক প্রেস সেক্রেটারি।  


নিজের দেশের সবটুকু জানার মধ্যে গর্ব আছে — খালেদা জিয়া

-----------------------------------  

সৈয়দ আবদাল আহমদ  

-----------------------------------  


বাংলাদেশের নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভালো নেই। দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ এই রাজনীতিক গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। দুইবার তার হাঁটুতে অপারেশন হয়েছে। তার চোখেও অপারেশন করতে হয়েছে। এমন শারীরিক অবস্থায়ও তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দু’বছরের বেশি সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেয়ায় গত বছরের ২৫ মার্চ তাকে জেল থেকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেয়া হয়। শর্ত দেয়া হয়  — তাকে বাসাতেই থাকতে হবে, বিদেশে যেতে পারবেন না।

এরই মধ্যে এপ্রিল ১১, ২০২১ তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। কিছু দিন পর সিটিস্ক্যান করে দেখা যায়, তার ফুসফুসে ৫ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী ছিলেন বাসাতেই চিকিৎসা নিয়ে তিনি সেরে ওঠবেন। কিন্তু ২৭ এপ্রিল অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় মে ৩, ২০২১ খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছে, তার করোনা পরবর্তী বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, ফুসফুসে তরল জমা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকা এবং কিডনিতে বিষাক্ত রক্ত জমা। এ পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ৫ মে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে একটি আবেদন করেন।

সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছিল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক খবর হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। যদিও খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পাসপোর্ট নবায়ন করা, ভিসার জন্য যোগাযোগ করা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি লাভ ও হাসপাতালের সাথে কথা বলা হচ্ছিল। তাকে লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুরে নেয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছিল।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। গত শুক্রবার জুমাতুল বিদার নামাজে তার রোগমুক্তি কামনায় দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে দোয়া করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার অগণিত ভক্ত, বিএনপির নেতাকর্মী এবং দেশের মানুষ সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ছিল। সরকারের নেতিবাচক সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ হতাশ হয়েছে।

কারাভোগের বেশির ভাগ সময়ই তাকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্যাঁতস্যাঁতে কক্ষে থাকতে হয়েছে। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। আজ তার অবস্থা এমন হয়েছে যে, হাসপাতালে তিনি জীবনের কঠিন সময় পার করছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য, সাহসী নাম খালেদা জিয়া। দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। তাদের কাছে তিনি ‘দেশনেত্রী’। খালেদা জিয়াও দেশকে ভালোবাসেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে বন্দিশিবিরে ছিলেন। স্বামী মুক্তিযোদ্ধা বীরোত্তম জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর জনগণের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে আসেন। অবতীর্ণ হন এক সংগ্রামী জীবনে। ৯ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এরপর ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। যমুনা সেতুর মতো বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি পরিচালনা করেছেন। আজ দেশে নারীর জাগরণ হয়েছে। লাখ লাখ মেয়ে শিক্ষায় এগিয়ে এসেছে। এতে তার অবদান রয়েছে। মেয়েদের জন্য তিনিই প্রথম উপবৃত্তি চালু করেন। প্রথমে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত, পরে এসএসসি পর্যন্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার একটি পা গুরুতর অসুস্থ। আপামর জনসাধারণ চাচ্ছে তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অধিকার থেকে খালেদা জিয়া আপনি বঞ্চিত হয়েছেন। মহান আল্লাহই আপনার ভরসা। আপনার করোনা নেগেটিভ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবেন।

খালেদা জিয়ার জননী, জন্মভূমি!

১৯৯১ সালের ১৩ জুলাই তারিখটি কখনোই ভুলব না। এ দিনটিতেই সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। এর আগে বহুবার তার সাক্ষাৎকার আমি নেই। তবে এই সাক্ষাৎকারটি একান্তই ছিল খালেদা জিয়ার ‘দেশ ভাবনা’ নিয়ে। একসময় তিনি ছিলেন একজন সাদামাটা গৃহিণী। এরপর এলেন রাজনীতিতে। অল্পদিনের মধ্যে হলেন জননন্দিত নেত্রী, যাকে জনগণ ‘দেশনেত্রী’ উপাধিতে ভূষিত করে।

স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে আপসহীন থাকার জন্য তার উপাধি হয় ‘আপসহীন নেত্রী’। স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে হন প্রধানমন্ত্রী। দেশের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এই দেশকে নিয়ে তার আছে অনেক স্বপ্ন। সে কথা জানতেই সে দিন প্রবেশ করি প্রধামন্ত্রীর কক্ষে।

আমার সাথে একান্তে কথা বলার আগে খালেদা জিয়া কথা বলছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের সাথে। পাশের সোফায় বসে আমি নিয়াজ মোর্শেদের সাথে তার আলাপচারিতা শুনছিলাম। নিয়াজের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গৌরব কেমন করে বাড়ানো যায়। নিয়াজ তাকে জানালেন, খেলাধুলায় আমরা সহজেই ভালো করতে পারি। দাবা ও সাঁতারে রয়েছে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা। দাবায় জিয়া ও রিফাতের মতো কয়েকজন তরুণ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার যোগ্যতা রাখে। দেশে ওদের আর খেলাধুলার কিছুই নেই। ওদের এখন বিদেশে খেলতে হবে। কিন্তু ওরা বিদেশে খেলতে পারছে না। মুহূর্তেই দেখলাম বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন খালেদা জিয়া, কেন? নিয়াজ বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এরশাদ শাসনামলে দাবাকে অবহেলা করা হয়েছে। এখনো দাবা অবহেলিত। অবাক হলেন খালেদা জিয়া। বললেন, এ ঘটনা তো আমি জানি না। ঠিক আছে এখন আর অসুবিধা হবে না। অলিম্পিক দাবা থেকে তুমি ফিরে এলে আমরা একসাথে বসব। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী খোকাকেও ডাকব। সব ঠিক হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সম্মান বাড়াতেই হবে।

তার স্বপ্ন তখনই জানা হয়ে গেল। দেশের সুনাম কিভাবে আসবে, কিভাবে আসবে সমৃদ্ধি- বুঝতে পারলাম এটাই চান খালেদা জিয়া।

নিয়াজের পর মুখোমুখি হলাম খালেদা জিয়ার। দীর্ঘদিন নিরলস সংগ্রামের পর অবিস্মরণীয় বিজয়ের জন্য প্রথমেই তাকে অভিনন্দন জানালাম। তিনি জানালেন ধন্যবাদ। এরপর বললেন, আপনারা তো এই ৯ বছরে অনেক ইন্টারভিউ নিয়েছেন। আর কিছু বলার আছে! তাকে বললাম, একজন ব্যক্তি খালেদা জিয়ার ইন্টারভিউ নেইনি। আমরা এবার তার কথা জানতে এসেছি। জানতে এসেছি তার স্বপ্নের কথা। হো হো করে হেসে উঠলেন। বিনয়ের সাথে বললেন, আমাকে মাফ করুন। আমি অপারগ। আপনারা আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন।

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের একজন সাধারণ গৃহবধূর মতোই রীতিনীতি অনুসরণ করেন খালেদা জিয়া। মাথায় কাপড়। গায়ে জড়ানো ওড়না। রঙে দুয়ের মধ্যে চমৎকার মিল। চোখে চশমা। মুখে অফুরন্ত হাসি। সব মিলে এক মধুর ব্যক্তিত্ব। ‘তোমার কাজের চেয়ে তুমি মহান- এরকম কিছু বলা যায়’।

প্রথমেই জানতে চাইলাম তার স্বপ্নের কথা। বললেন, ‘স্বপ্ন ছাড়া কি মানুষ আছে। প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন এই মানুষের চেয়ে আলাদা নয়। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এই বাংলাদেশের সর্বত্র আমি ঘুরেছি। দেখেছি মানুষের সমস্যা। দেখেছি ভাঙা সেতু, ভাঙা রাস্তা। মানুষের সাথে কথা বলে জেনেছি তাদের স্বপ্নের কথা। তারা শান্তি চায়, মঙ্গল চায়। চায় সাধারণভাবেই বেঁচে থাকতে। এই দেশ, এই মাটি, এই মানুষ আমার খুব প্রিয়। যেদিন দেখব, এই দেশের উন্নতি হয়েছে, মানুষগুলো সুখী হয়েছে, সে দিন ওদের স্বপ্নের সাথে অংশীদার হতে পারব আমি। আমার স্বপ্ন এদের চেয়ে বিচ্ছিন্ন নয়।’

জানতে চেয়েছিলাম তার নিজের সম্পর্কে, তার পছন্দ অপছন্দের কথা। বললেন, "গত ৯ বছর রাজপথে ছিলাম। তবে এখন আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি সেই আমার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছি না এবং মনেও করছি না। একজন মা, একজন বোন হিসেবে সাধারণ পরিচিতি আমার বেশি পছন্দ। জনগণের সাথে থাকতে, জনগণের বন্ধু হয়ে থাকতে আমার বেশি পছন্দ। কেননা, মানুষের জীবন আর জীবনের ঘটনাই যে আমাকে বেশি আকর্ষণ করে।"

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আন্দোলনের বিজয়কে তিনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন। বললেন, “আমি যখন জনগণের হয়ে রাজপথে নেমেছি, তখন থেকেই আমি এ কথাই বলেছিলাম, অন্যায় এবং যেকোনো অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আমার বিশ্বাস ছিল, এ দেশের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং অন্যায়কে সবসময় প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই সে জন্য আমরা জনগণকে সাথে পেয়েছিলাম এবং তাদের সহযোগিতায় বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আগামী দিনে আমরা নিশ্চয়ই জনগণের সে আশা-আকাঙ্খা অর্থাৎ গণতন্ত্র, যে গণতন্ত্র ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ছিনিয়ে নিয়েছিল, যা আমরা পুনরুদ্ধার করেছি এবং ইনশাআল্লাহ আমরা আশা রাখি এ দেশ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারব।”

এরশাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই বললেন, “জানেন। আমরা ধ্বংস্তূপ থেকে শুরু করেছি। এরশাদ সব ছারখার করে দিয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশ ঘুষ আর দুর্নীতি ছড়িয়ে দিয়েছিল এরশাদশাহী। বাংলাদেশে উৎপাদনের নামে বিদেশী ঋণ-এনে সেগুলোকে দেশের কাজে না লাগিয়ে ব্যয় করেছিল দলীয় ও ব্যক্তিগত কাজে। বাংলাদেশের মানুষকে করেছে ঋণগ্রস্ত আর নিজেরা হয়েছিল টাকার মালিক, কোটিপতি। তার সময় ব্যাংকগুলোতে লুটপাট হয়েছে। আর্থিক অনিয়ম চরম আকার ধারণ করেছে। দেশ ভরে গিয়েছিল চোরাকারবারিতে। বিচার বিভাগ, শিক্ষাসহ এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মানুষের আজন্ম লালিত মূল্যবোধ। এই ছিল এরশাদশাহীর রাজত্ব।”

একজন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। হেসে বললেন, “আমার জনপ্রিয়তা দলের নেত্রী হিসেবেই এবং দল আছে বলেই। আন্দোলনের দীর্ঘ আট বছর এবং নির্বাচনের সময় হাজার হাজার জনসভা করেছি। রাত ৩টা-৪টা পর্যন্ত বক্তৃতা করেছি। শুধু আমরা জনপ্রিয়তার জোরে নয়, সংগঠনের কর্মীরা লোকজন ধরে রাখতে পেরেছে বলেই।” 

দেশ গঠনে আপনার কর্মসূচি কী? খালেদা জিয়া বললেন, “আমরা শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েছি। জিয়ার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। আমরা বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছি। চালু করেছি অবাধ বাজার অর্থনীতি। বেসরকারি খাতে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে আমরা কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের শিল্পনীতি ইতোমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। দুর্নীতি নির্মূলে আমাদের নীতি সুস্পষ্ট। পররাষ্ট্র নীতিতে আমরা বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। সবচেয়ে বড় কথা, এ দেশের মানুষের কল্যাণে আসে এমন কাজই আমরা করতে চাই। এ জন্য আমরা আবার চাইব জনগণের সহযোগিতা। যে সহযোগিতা তারা আমাদের আন্দোলনের সময় করেছেন, নির্বাচনের সময় করেছেন।” 

একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেমন লাগছে? মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন খালেদা জিয়া। বললেন, “প্রধানমন্ত্রী পুরুষ হলে তাকে কি আপনারা পুরুষ প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করেন?’ আমি লজ্জিত হয়ে পড়লাম। তিনি তা বুঝতে পেরে আবার হেসে বললেন, দেখুন- প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীই। সেখানে মহিলা বা পুরুষ বলে কোনো কিছু নেই। মহিলা এবং পুরুষ মিলেই এই দেশ। এই দেশের উন্নতির জন্য মহিলা-পুরুষ একজন আরেকজনের পরিপূরক। আমি মহিলাদের যেমন প্রধানমন্ত্রী তেমনি পুরুষদেরও। মহিলা-পুরুষ নিয়েই এই দেশটাকে নির্মাণ করতে হবে।” 

শহীদ জিয়াউর রহমানের কথা কি আপনার মনে পড়ে? মুহূর্তের মধ্যেই দেখলাম খালেদা জিয়া আনমনা হয়ে গেলেন। দীর্ঘ ২১ বছর জিয়ার সাথে কাটিয়েছেন। তাকে মনে পড়বে না? কত ঝড়-ঝঞ্ঝা গেছে দু’জনের ওপর। একজন আরেকজনকে আগলে রেখে মোকাবেলা করেছেন এগুলো। সেই জিয়াকে মনে পড়বে না? একজন সৈনিক জিয়ার স্মৃতি, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি, একজন রাষ্ট্রনায়ক জিয়ার স্মৃতি, সর্বোপরি একজন উদার মনের স্বামীর স্মৃতি কি ভোলা যায়? না, কোনো দিন ভোলা যায় না। জিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া প্রায়ই ছুটে গেছেন জিয়ার মাজারে। যখনই কোনো বিপদে পড়েছেন, চলে গেছেন জিয়ার মাজারে। খুশির খবর এসেছে, চলে গেছেন জিয়ার মাজারে। গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর তিনি জিয়ার মাজারে গিয়ে মোনাজাত করেছেন, ফুল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গিয়েছেন জিয়ার মাজারে। নির্বাচনের বিজয়ের পরও তিনি গিয়েছিলেন জিয়ার মাজারে। সেই জিয়ার কথা মনে পড়বে না? 

খালেদা জিয়া বললেন, “শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে তার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য কাজ করছি। দোয়া করবেন।” 

প্রিয় বাংলাদেশ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, “নিজের দেশের সবটুকু জানার মধ্যে গর্ব আছে। আছে অনাবিল আনন্দ। আমাদের পাহাড়ের চূড়ায় আছে স্বচ্ছ পানির সরোবর আর চোখ জুড়ানো হ্রদ। সুন্দরবনের মতো বিরল অরণ্য। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। কুয়াকাটা সৈকতে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য। আর আমরা সমৃদ্ধ নিজস্ব সংস্কৃতিতে। এসব কিছু মিলিয়ে অপরূপ আমাদের বাংলাদেশ।”

দেশকে নিয়ে যার এমন গর্ব তার পক্ষেই এ দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব।





লেখক  — সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘুম সমস্যা... এবং বাংলাদেশের টিকা সঙ্কট

 -----------------------------------------------

— মাকসুদুর রহমান

-----------------------------------------------

ভাবছেন এটা  আবার কেমন কথা! কেন বলছি দেখুন তবে...

সংবাদ এক 

"আমরা চীনের কাছ থেকে প্রথমেই টিকা পেতে চাইনি। কারণ, চীনের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত ছিল না এবং আমাদের কিছু নীতিমালা আছে। ডব্লিউএইচওর অনুমোদন ছাড়া আমরা টিকা ব্যবহার করি না। এই নীতিমালা নতুন নয়। ফলে, আমরা দেরি করেছি।"

– পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, মে ১২, ২০২১

সংবাদ দুই 

"আমরা ভারত থেকে যে টিকা নিতাম, সেটা এখন বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। এ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তারই অংশ হিসেবে চীনকে টিকা সরবরাহ করার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা এ জন্য আমাদের সঙ্গে কাজ করবে।"

 – পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, এপ্রিল ২৭, ২০২১

সংবাদ তিন 

চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ সরকার। 

এপ্রিল ৩০, ২০২১

সংবাদ চার 

চীনের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

মে ৭, ২০২১


এবার একটু প্রথম  উপস্থাপিত সংবাদের  দিকে চোখ ফেরাই, সেখানে তিনি বলেছেন,  “আমরা চীনের কাছ থেকে প্রথমেই টিকা পেতে চাইনি। কারণ, চীনের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত ছিল না।"  এই কথা আজকে  মে ১২, ২০২১, চীনের টিকা উপহার গ্রহণ করা অনুষ্ঠানে বলেছেন। 

খুব ভালো কথা! চলুন, এবার গত এপ্রিল ২৭, ২০২১ (২) কী বলেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আমরা ভারত থেকে যে টিকা নিতাম, সেটা এখন বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। এ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তারই অংশ হিসেবে চীনকে টিকা সরবরাহ করার অনুরোধ জানিয়েছি।

এপ্রিল ২৭, ২০২১, তিনি যখন এই কথা বলেছেন তখন কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা চীনের টিকার অনুমোদন দেয়নি। এমনকি বাংলাদেশও দেয়নি। বাংলাদেশ চীনের টিকার অনুমোদন দিয়েছে ৩০ এপ্রিল । অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা চীনের টিকার অনুমোদন দিয়েছে  আরো সপ্তাহখানেক পর মে ৭, ২০২১ । শুধু তাই না , চীন ও রাশিয়ার টিকার অনুমোদন দেয়ার জন্য বাংলাদেশের টিকা অনুমোদনের সংশোধনী পর্যন্ত আনতে হয়েছে কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরো ৭টি দেশ বা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিলে শুধু সেই  টিকারই অনুমোদন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হতো! যেহেতু চীন ও রাশিয়ার টিকার ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে তাই নীতিমালার সংশোধন করতে হয়েছে। 

অথচ, আজকে এসে মাত্র গত দুই সপ্তাহের তারই বলা বা টিকা সংক্রান্ত  বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশের কথা পরাষ্ট্রমন্ত্রী বেমালুম ভুলে গেলেন! 

এটা কিন্তু চিন্তার কথা! বাংলাদেশের কুটনৈতিক অঙ্গনের প্রধান নির্বাহী যদি এভাবে তথ্য ভুলে যান তাহলে এর একটা নিশ্চিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে ! 

অন্যথায়, এটাও হতে পারে উনি হয়ত ভাবছেন আমরা নিজেরাই এসব তথ্য মনে রাখি না। কিংবা উনি হয়ত ভাবছেন তিনি যা বলবেন সেটাই আমাদের মেনে নিতে হবে! কেউ ভাবছেন, ধুর উনি না হয় বলেছেন তাতে কী আসে যায়! 

প্লিজ ধুর বলবেন না! আসে যায় ! ওনার কথায় আসে যায়! ওনাদের একটা ভুল কিংবা তাচ্ছিল্যভরা কথায় কোটি কোটি মানুষের জীবনের সংশয় হয়! এই যে আজকে বাংলাদেশ টিকা সংকটের সামনে পড়ল, সেটাতো ওনাদের সবকিছুকে তাচ্ছিল্যের সাথে দেখার ফলেই! কারণ, ওনারা সবসময় 'ওয়ান ওয়ে' টিকা ডিপ্লোমেসিতে ব্যস্ত ছিলেন আর এখন যা খুশি বলে চলেছেন সেটা নিঃসন্দেহে জাতিকে ভুল তথ্য দিয়ে আফিম খাওয়ানোর অপচেষ্টা! 

আচ্ছা, আপনি হয়ত একটু সফটলি বিষয়টা দেখার চেষ্টা করছেন, আচ্ছা ঠিক আছে!  আপনার সাথে  একমত! চলুন তাহলে ওনার বক্তব্যের পেছনে সফট সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি! আর সেটা হলো, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুম সমস্যায় ভুগছেন!

— 

লেখক গবেষক।