--------------------------------------------
অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি
--------------------------------------------
স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে শক্ত ভীত রচনা করে গেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে অভিষিক্ত হয়েই তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁর গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে কৃষির আধুনিকায়ন ও উন্ন্য়নকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারা থেকে দেশকে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। তার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহনকালীণ সময়ে এদেশের অর্র্থনীতি ছিল লুটেরাদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত, বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর। তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অত্যন্ত সাহসী, বাস্তব ভিত্তিক উন্নয়নমূলক নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহন করেন- যা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জপূর্ন । জিয়ার গৃহীত নীতি পরিকল্পনা ও কর্মসূচি কিভাবে দেশের কৃষি উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে তা খুব সংক্ষেপে বিশ্লেষন করছি।
জাতীয় বীজ অধ্যাদেশ (Seed Ordinance) প্রণয়ন
সকল ফসলের মূল ও প্রধান উপকরণ হল বীজ। ভাল বীজ মানে ভাল ফসল- রাষ্ট্রপতি জিয়া একজন বিজ্ঞানীর মতই এ কথা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন । তাই ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী কর্মসূচী হাতে নেন । বীজ অধ্যাদেশ এর মূল লক্ষ্য ছিল কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে কিভাবে খাদ্য ঘাটতি ও দারিদ্র্য দূর করা যায়। ফসলের মূল উপাদান বীজকে মানসম্পন্ন অবস্থায় কিভাবে কৃষকের দোর গোড়ায় পৌঁছানো যায় সে উদ্দেশ্য সফল করার জন্য বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়। বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে বীজ আমদানী, বীজ উৎপাদন থেকে শুরু করে বীজের বাজারজাতকরণ ও বিতরণের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যক্তিখাতকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন ফলে ব্যক্তিখাতে বীজ শিল্পের উন্নয়নের সূচনা হয়। বীজ অধ্যাদেশ এর উল্লেখ যোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- কৃষকরা বাজার থেকে বীজ কিনে যেন প্রতারিত না হয় তার ব্যবস্থা অর্থাৎ কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষন করা। বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে কৃষকের মানসম্মত ভাল বীজ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বীজ শিল্প একটি বিকশিত ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং কৃষকের চাহিদা মেটাতে সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিখাতও সমান ভাবে কাজ করছে । প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রনীত সেই বীজ অধ্যাদেশই আজ বে-সরকারী খাতে বাংলাদেশের বীজ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করছে।
কৃষি সংস্কার কর্মসূচী
প্রেসিডেন্ট জিয়া কৃষির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য কৃষকের হাতে উন্নতি প্রযুক্তি দ্রুত পৌঁছানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কৃষিতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহন করেন । তিনি কৃষি উপকরন বিতরন ব্যবস্থা সংস্কার, কৃষি উপকরন ব্যবসা উদারীকরন নীতি প্রনয়ন করেন । বীজের পরে ফসল উৎপাদনের প্রধান উপকরন হল- রাসায়নিক সার, সেচ ও সেচ যন্ত্র (এল,এল,পি, স্যালো টিউবওয়েল, ডিপ টিউবওয়েল), আধুনিক চাষ যন্ত্র (পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, রিপার, হার্ভেস্টার) ইত্যাদি । পূর্বে এ সকল উপকরন সংগ্রহ ও বিতরন বা সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতো সরকারী প্রতিষ্ঠান যথা- পানি উন্নয়ন বোর্ড, বি,এ,ডি,সি ও বি,কে,বির (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে। এই সংস্কার কর্মসূচি গ্রহনের মাধ্যমে জিয়া ক্ষুদ্র সেচ যন্ত্র, চাষ যন্ত্র, এবং সার বিতরন ব্যাবস্থায় আমুল পরিবর্তন নিয়ে আসেন । তিনি এই সংস্কার কর্মসুচির মাধ্যমে বেসরকারী খাতকে উৎসাহিত করে কৃষি উপকরন ব্যবসা এবং উপকরন সরবরাহ ব্যবস্থায় সংযুক্ত করেন যেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা এর সুফল পায়। এই সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সারা দেশে কৃষকদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ধান উৎপাদন ৭৪-৭৫ সালে ১১.১১ মিলিয়ন টন থেকে ১৯৮০-৮১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দŧাড়ায় ১৩.৬৬ মিলিয়ন টন। বর্তমানে কৃষকরা এই সংস্কার কর্মসুচির সুফল ভোগ করছে। (সুত্র ঃ বিবিএস, ২০১৮)
খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করন কর্মসূচী
দেশের দরিদ্র জনগোষ্টীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্যের আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। এ কারনে তিনি নতুন খাদ্য গুদাম তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করেন যেন অতিরিক্ত উৎপাদিত ফসল গুদামজাত করে আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলা যায় এবং প্রয়োজনের সময় খাদ্য বিতরন ব্যবস্থার (Public food distribution system) মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ করে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। কৃষদের শস্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে তিনি ভাল দামে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহন করেন। জিয়ার শাসনামলে (৮০-৮১) অর্থ বছরে ধান/চাল সংগ্রহ অভিযানে রেকর্ড পরিমান (১.০৩ মিলিয়ন টন) চাল সংগ্রহ করা হয় (শাহাব উদ্দিন ও ইসলাম, ১৯৯১)। তাঁর শাসনামলেই ধানের বাম্পার ফলনের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রথম চাল রপ্তানি করা হয়।
খাল খনন কর্মসূচী
ষাট এর দশকের কৃষিতে যে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয় তার গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হল সেচ । এই সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সহজলভ্য এবং টেকসই করার জন্য তিনি একটি যুগান্তকারী কমসূচী গ্রহণ করেন। শহীদ জিয়ার এই জনপ্রিয় কর্মসূচী হল খাল খনন কর্মসূচী। শুকনো মৌসুমে কৃষক যেন নদীনালা ও খালের পানি দিয়ে তার জমিতে প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা করে ফসলের নিবীড়তা বাড়িয়ে এবং বর্ষা মৌসুমে ফসলকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ম্ভর করতে পারে- এই মূল লক্ষ্য নিয়ে তিনি খাল খনন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। সমগ্র দেশে সে¦চ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে এই খাল খনন কর্মসূচীতে জনগণের সাথে তিনি নিজেও অনেক জায়গায় অংশ নিয়েছেন। কোদাল হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়া খাল কাটছেন এ ছবি এখনও মানুষের দৃশ্যপটে ভেসে আছে। দেড় বছরে সারা দেশে ১৫০০ এর বেশী খাল খনন ও পূনঃর্খনন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই বৈপ্লবীক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই খাদ্য উৎপাদনে স¦য়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক ব্যবহার নিয়ে তিনি একজন বিজ্ঞানীর মত চিন্তা করতেন। ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেটিও ছিল জিয়ার খাল খনন কর্মসূচীর অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমানে কৃষি ব্যবস্থায় সেচের জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয় তার ৮১% এর বেশী আসে ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে, আর প্রায় ১৯% আসে নদীনালা, খাল-বিল ও বৃষ্টির পানি থেকে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির স্তর আমাদের দেশে অনেক নিচে নেমে গেছে এবং অনেক স্থানেই Shallow Tube Well দিয়ে পানি উত্তোলন করা যায় না, Deep Tube Well দিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত আহরণের ফলে বাংলাদেশের বিশাল এলাকার পানি ও মাটিতে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। ভবিষ্যতে সেচের পানির অভাবে কৃষি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। জিয়ার খাল খনন কর্মসূচী ছিল এদেশের কৃষকের জন্য বড় আশির্বাদ।
শস্য গুদাম ঋণ কর্মসূচী
দেশের মানুষ তথা দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে উনি বিশেষ কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। শস্য সংগ্রহের সময় শস্যের দাম সাধারণতঃ কম থাকে আবার একই শস্য কিছু দিন পরে বেশী দামে কৃষককে কিনে খেতে হয়। কৃষক যেন শস্য সংগ্রহের সময় তার ফসল বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য তিনি ১৯৭৮ সালে শস্য গুদাম ঋণ কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এই কর্মসূচির আওতায় কৃষকরা উৎপাদিত খাদ্য শস্য গুদামে মজুদ রেখে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহন করতে পারে তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য। আবার মৌসুম শেষে বেশী দামে গুদাম জাত কৃত শস্য বিক্রি করে কৃষক তার ঋণ শোধ করতে পারে- এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়।
বিশেষ কৃষি ঋণ কর্মসূচী (Special Agricultural Credit Program- SACP)
উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তি অধিক পুজি নির্ভর যা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে বিনিযোগ করা কঠিন। সেজন্য কৃষকদের অধিক সুদে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে মূলধন সংগ্রহ করতে হতো । কৃষকদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ কৃষি ঋণ কর্মসূচী প্রনয়ণ করেন যা বাংলাদেশের কৃষি ঋণ প্রবাহে নতুনমাত্রা যোগ করে। এই কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ছিল কোন ধরনের জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক যেন সহজেই কৃষিকাজের জন্য ঋণ সুবিধা পায় এবং দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে ।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচী
আধুনিক বিশ্বে বিদ্যুতকে উন্নয়ন ও সভ্যতার একটি বড় নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে তিনি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বা REB প্রতিষ্ঠা করেন যার দায়িত্ব হল গ্রাম অঞ্চলকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা। এই কর্মসূচীর উদ্দেশ্য হল- বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রামীন এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সম্প্রসারনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা যেন পল্লী এলাকার জনগণের জীবনমানের উন্নতি হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় ডিজেল আমদানী করে সেচ পাম্প না চলিয়ে বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিলে সেচ খরচ কমে যায়। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে ৯৮% গ্রাম এবং ৫.০৮ মিলিয়ন কৃষি পরিবার বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর প্রতিষ্ঠা ও এর উন্নয়ন তৃতীয় বিশ্বের জন্য অন্যতম একটি সফল ঘটনা।
আত্মকর্মসংস্থান, ব্যক্তিগত উদ্যেক্তা তৈরী এবং বেকার সমস্যা সমাধানে যুব উন্নয়ন কর্মসুচী
দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুব সমাজকে যেন উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায় তার জন্য রাষ্ট্রপতি জিয়া গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হাতে নেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে যুব মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা ও ১৯৮১ সালে যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য বেকার যুবসমাজকে হাস মুরগী, গরু ছাগল লালন পালনের উন্নত কলা কৌশল, দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য গাভী পালন, ডোবা, পুকুর, জলাশয়ে মৎস্য চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে আতœকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র বিমোচন তথা দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। বর্তমানে দেশের আনাচে কানাচে দুগ্ধ খামার, পোল্ট্রি খামার, মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে যেখানে বেকার যুবকরা কাজ করছে, দেশের ক্রমবর্দ্ধমান জনগোষ্ঠির পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অবদান রাখছে। রাষ্ট্রপতি জিয়ার গৃহিত এই কর্মসূচি দেশে আতœকর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যাক্তিগত উদ্যোক্তা তৈরী ও বেকার সমস্যা সমাধানের মধ্যে দিয়ে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলেছে।
বিসিআইসি (Bangladesh Chemical Industries Corporation) প্রতিষ্ঠা ও সার কারখানা নির্মাণ
বাংলাদেশের তিনটি সেক্টর কর্পোরেশনকে একিভূত করে তিনি ১৯৭৬ সালে বিসিআইসি প্রতিষ্ঠা করেন । বাংলাদেশের সার কারখানা, কাগজ কারখানা-এর অন্তর্ভুক্ত। কৃষি বিপ্লবের ফলে দেশে সারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য জিয়াউর রহমান নতুন সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮১ সালে তিনি আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫,২৮,০০০ মেট্রিক টন। আরও কয়েকটি সার কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা তিনি দেখে যেতে পারেননি।
চিনি শিল্পের উন্নয়নে নীতিমালা প্রণয়ন
দেশে চিনি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উপজাত ভিত্তিক পন্য উৎপাদন করা এবং আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের চিনি শিল্পকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য গুরুত্বপূর্ন নীতিমালা গ্রহন করেন। ১ জুলাই ১৯৭৬ সালে বাংলাদশে সুগার মলিস্ করপোরশেন ও বাংলাদশে ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রজি করপোরশেনকে একীভূত করে বাংলাদশে সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রজি করপোরশেন গঠন করেন।
কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব ও স্বায়ত্বশাসন
ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অনান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নতুন শাখা, বিভাগ ও কেন্দ্র খোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তিনি গমের আমদানী নির্ভরতা কমেিয় দেশেই গমের উৎপান বৃদ্ধির লক্ষে গম গবেষণার উপর গুরত্ব প্রদান করেন। জিয়ার সাশন আমলে ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে নশিপুর, দিনাজপুরে গম গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে বহুফসল নিয়ে গবেষণা করে এ রকম একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, যেটি গাজীপুরে অবস্থিত। এটি পূর্বে Agriculture Directorate (Research & Education) এর অধীনে ছিল। তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৬ সালে Presidential Order No. LXII-এর বলে Bangladesh Agricultural Research Institute হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ, স্বতন্ত্র গবেষণা, বিভিন্ন ফসলের জাত উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, দেশের বিভিন্ন আবহাওয়া ও পরিবেশ অঞ্চলে খাপ খাওয়ানো উপযোগী জাত ও প্রযুক্তি উদভাবন ও উন্ন্য়ন, কৃষক প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য ম্যানডেট নিয়ে এই স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে স¦ায়ত্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে চলছে।
জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্তি ছিল একটি সময়োচিত দৃঢ় পদক্ষেপ। তাঁর গৃহিত কর্মসূচী ও নীতিমালার সুফল মাত্র দুবছরের মধ্যেই দেশের মানুষ পেতে শুরু করে- যা দেশের সবুজ বিপ্লবকে ত্বরানিত করেছে। তাঁর উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে খাদ্য ঘাটতির দেশ পরিণত হয় খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে। তলা বিহীন ঝুড়ি খ্যাত দেশ এই রাখাল প্রেসিডেন্টের যাদুর হাতের স্পর্শে পরিণত হয় স্বনির্ভর বাংলাদেশে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও রাজনীতিকদের মধ্যে তিনিই অগ্রদূত যিনি দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে, মাঠে-ঘাটে, পায়ে হেঁটে ছুটে বেড়িয়েছেন কখনও লাঙ্গল হাতে, কখনও কাস্তে হাতে আবার কখনও কোদাল হাতে। রাখাল প্রেসিডেন্ট জিয়া কৃষকের মাঠে গিয়ে কৃষকের সাথে কথা বলেছেন, সমস্যা জেনেছেন, কৃষকের সাথে কাজে অংশ নিয়েছেন, কৃষকদের অনুপ্রাণিত ও জাগ্রত করেছেন। অত্যন্ত সৎ, নির্লোভ ও দূরদর্শী এই রাষ্ট্রনায়কের ডাকে জনগন সাড়া দিয়েছিল ব্যপকভাবে। এ দেশের জনগণ তাঁকে প্রচন্ড ভালবাসত তার প্রমাণ আমরা পাই, ওনাকে সমাধিস্থ করার দিনে লক্ষ লক্ষ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন ও উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে, রাষ্ট্রপতি জিয়া যে ভিত এবং সোপান রচনা করেছেন সেকারনে তিনি দেশের কৃষক, কৃষিবিদ এবং আপমর জনগণের কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবেন ।
- লেখক শিক্ষক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এবং যুগ্ন আহবায়ক, এগ্রিকালচারিষ্ট আ্যসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এ্যাব)।