Search

Thursday, October 14, 2021

রামু ট্র্যাজেডির নয় বছর

ড. সুকোমল বড়ুয়া 



রামু ট্র্যাজেডির নয় বছর পূর্ণ হলো। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধদের শুভ মধু পূর্ণিমার আগের রাতে রামু-উখিয়া-পটিয়াবাসীর বৌদ্ধদের ওপর ওই জঘন্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। এ ঘটনায় বিশ্বের নানা স্থানে, নানা রাষ্ট্রে, এমনকি জাতিসংঘের সদর দফতরের সামনে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

দল-মত, জাতি-গোষ্ঠী, সম্প্রদায় এবং নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ সেদিন বৌদ্ধদের পক্ষে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রাস্তায় নেমেছিল। সেদিন দেখেছি বিপন্ন মানবতার পক্ষে মানুষের সহমর্মিতা। সেই স্মৃতি বৌদ্ধরা এখনো ভোলেনি।

উত্তম বড়ুয়া নামে এক যুবকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে রামু ট্র্যাজেডির সূত্রপাত। এটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, যা পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি নানা তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। অথচ এ মিথ্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেদিন শত শত বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, স্থাপনা ও প্যাগোডা আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। আগুনের লেলিহান শিখার ধোঁয়ায় ওই জনপদ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ ও অষ্টধাতু নির্মিত বহু মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি, প্রাচীন পুঁথি-পুস্তক ও পাণ্ডুলিপিসহ বৌদ্ধ কৃষ্টি-সংস্কৃতির বিভিন্ন অমূল্য সম্পদ সেদিন পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। মোট ২১টি গৃহ ভস্মীভূত হয়েছিল, যেখানে ছিল অতিদরিদ্র ও নিঃস্ব বৌদ্ধ পরিবারের বসতি।

অথচ রাত পোহালেই মধু নিয়ে বিহারে যাওয়ার কথা ছিল শত শত শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষের। এর মধ্য দিয়ে মধু দানোৎসবের আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হতো। এ দান সারা দিন চলত, বুদ্ধপূজা হতো, পঞ্চশীল-অষ্টশীল নেওয়া হতো। ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান করা হতো, প্রদীপ জ্বালানো হতো, সমবেত প্রার্থনা করা হতো, আরও কত কিছু করা হতো ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে। কিন্তু পূর্ণিমার রাতেই সব শেষ হয়ে গেল।

সরকার এ ঘটনার বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের সাজা হয়নি আজও। জানা গেছে, সে সময় কক্সবাজার ও নিকটবর্তী অন্যান্য জায়গায় যারা প্রশাসনের উচ্চপদে ছিলেন, বর্তমানে তারা পদোন্নতি নিয়ে আছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। ভস্মীভূত সেই প্রাচীন বৌদ্ধ ঐতিহ্যগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য কত মূল্যবান ও আকর্ষণীয় ছিল, তা বলাই বাহুল্য। পরবর্তী সময়ে সরকার আধুনিক নির্মাণশৈলীতে অনেক কিছু তৈরি করে দিলেও ওই প্রাচীন ঐতিহ্য আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্যও দেশ-বিদেশ থেকে পণ্ডিত-গবেষকরা আর আসবেন না।

বৌদ্ধদের প্রশ্ন-সেই উত্তম বড়ুয়া এখন কোথায়? জীবিত না মৃত? ওই ঘটনার বিচার দৃশ্যমান হলো না কেন? ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি হলো না কেন? প্রশাসনের এত নজরদারি থাকতে সেদিন গানপাউডারসহ এত রাসায়নিক দ্রব্য কীভাবে, কোত্থেকে আনা হয়েছিল? গোটা কক্সবাজারের প্রশাসন সেদিন নীরব ছিল কেন? পরদিন আবার রামু, উখিয়া ও পটিয়ার কয়েকটি বিহারসহ ধর্মীয় স্থাপনা কীভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো? আমরা আর এ রকম বর্বরতা দেখতে চাই না। এ দেশ সবার। এ দেশকে অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করি আমরা। আমাদের প্রার্থনা-সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’-এ নীতি যেন আমরা সবাই পালন করি। আবারও বলতে চাই, হাজার বছরের আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন যেন অটুট থাকে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে-সুখ সঙ্ঘসস সামগ্গি সামগ্গনং তপো সুখো। অর্থাৎ একত্রে বসবাস করা সুখকর, একত্রে মিলন সুখকর এবং একসঙ্গে তপস্যাজনিত সর্বতো কল্যাণসাধনও সুখকর। অতএব চলুন আমরা আজ সবাই এ শিক্ষায় নিজেদের গড়ে তুলি, শান্তি-শৃঙ্খলায় এবং দেশ, সমাজ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একত্রে কাজ করি এবং ঐক্যবদ্ধ হই। সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু-জগতের সব জীব সুখী হোক। জয় হোক মানবতার। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।

লেখক সাবেক চেয়ারম্যান, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশন-বাংলাদেশ চ্যাপ্টার 

skbaruadu@gmail.com

Sunday, October 10, 2021

দামে দিশাহারা ক্রেতা, এখন সংসার চালানোই দায় — ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

সূত্র প্রথম আলো 



দামে দিশাহারা ক্রেতা, এখন সংসার চালানোই দায়। মূল্যস্ফীতি অসহনীয় এবং সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য ডাহা মিথ্যা।

করোনাভাইরাস মহামারি মাঝামাঝি স্তর পার হবার পর থেকেই আমি বলে আসছি বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি। ছবির দুটি তালিকা মিলিয়ে দেখুন, বাৎসরিক হিসেবে মূল্যস্ফীতি সরকার ঘোষিত সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভুত উভয় মূল্যস্ফিতিই ৯% এর উপরে। অর্থাৎ সরকার ও বিবিএস এর মূল্যস্ফীতির (৪,৫% থেকে ৫%) হিসাব মিথ্যা। 

সরকারের অর্থাৎ পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতি বের করার প্রক্রিয়াটা ভয়াবহ জালিয়াতিতে ভরা।

চালের দাম তিন মাসে কেজি প্রতি ১২ থেকে ১৫ টাকা করে বাড়লে, ভোজ্যতেলের দাম লিটার প্রতি ৩০-৪০ টাকা বাড়লে, এলপি গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ১৫০-২০০ টাকা বাড়লে, ঠিক কিভাবে খাদ্য ইনফ্লাশন ৫% এর মধ্যে থাকে? 

বাজার দরের যে অবস্থা, অবশ্যই মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে অবস্থান করছে। এখানে দুটা বিষয়। প্রথমত সরকারের মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের কারিগরি পদ্ধতি ভুল। দ্বিতীয় হচ্ছে, সেকেলে যে পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি নির্ণয় করা হয় তাতে পর্যাপ্ত স্যাম্পল ও পণ্য কোনটাই থাকে না।

মূল্যস্ফীতি পরিমাপের নতুন পুরানো বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। পুরানো-ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) পদ্ধতি থেকে নতুন এভরিডে প্রাইস ইনডেক্স বা ইপিআই পদ্ধতিতে যেতে হবে। এতে গেলে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণের বেশি দেখাবে, যা প্রকৃত বাস্তবতা।

আমি মনে করি পুরানো হলেও খোদ সিপিআই ভিত্তিক হিসাবেই বড় জালিয়াতি করে সরকার ও বিবিএস। পুরানো মূল্যস্ফীতি পরিমাপের বাস্কেটেও অনেক পণ্যই সংযুক্ত করা হয়নি। ভ্যাট নীতিমালায় দেখাবেন প্রায় এগারশত পণ্যকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ এরা সুবিধামত মাত্র কয়েকটা পণ্য দিয়ে সুবিধাজনক সময়ের আগে পরে (যখন দাম কিছুটা সহনীয় থাকে) শহরের আড়তের কাছাকাছি স্থানের কম দামের জায়গায় গিয়ে কয়েকটা মাত্র স্যাম্পল নিয়ে মূল্যস্ফীতি হিসাব করে ফেলে। অথচ একই পণ্যের খুচরা মূল্য পাড়া গ্রামে কিংবা মফস্বল অঞ্চলে বেশি। এরা এমনভাবে সার্ভে করে যাতে মূল্যস্ফীতি ৫% এর আশেপাশে দেখায় (সিলেকসান বায়াস)। এগুলা ডেটা ম্যানিপুলেটেড। যেখানে ডেটা বাড়িয়ে দেখালে সূচক ভালো দেখায় (জিডিপি, বাজেট, মাথাপিছু আয়) সেখানে এক্সেলে ইনপুট বাড়ায়ে দেখানো হয়। আর যেখানে ডেটা কমিয়ে দেখালে সূচক ভালো হয় (জনসংখ্যা, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি) সেখানে তথ্য চুরি করে সূচক জালিয়াতি করা হয়।

এখন আসেন, মূল জালিয়াতিটা কোথায়? মূল জালিয়াতিটা জিডিপির হিসাবে।

নমিনাল জিডিপি থেকে মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে রিয়েল জিডিপি বের করা হয়। মুলত রিয়েল জিডিপি উপর দাঁড়িয়ে অর্থনৈতিক সূচক ক্যালকুলেশান করা হয়। আপনি যদি দেখেন, ক্যাবের হিসাবে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভুত উভয় মূল্যস্ফীতিই এক থেকে দুই শতাংশ বেশি থাকে। কিন্তু অতীতে ক্যাবের সাথে সারকারের মূল্যস্ফীতি হিসাবের কখনো ৩% আবার কখনও বা ৭% পার্থক্য ছিল (২০১১ থেকে ২০১৪)। এখন আমরা যদি এক দশকের গড় বের করি তাইলে দেখবেন এই দশকে গড়ে ২,৫ থেকে ৩% মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখানো আছে। এর মানে হচ্ছে এই দশকে গড়ে জিডিপিও ২,৫ থেকে ৩% বাড়িয়ে দেখানো।

এসব জালিয়াতি নিয়ে দেশের সিনিয়র অর্থনীতিবিদরা কথা বলেন না কেন? উনাদের সমস্যা কোথায়? দুর্বৃত্ত সিস্টেম বুঝায়? নাকি সরকারের হয়রানির ভয়?

এটা বলার সময় হয়ে গেছে যে রেমিটেন্সে দেয়া ২% প্রণোদনা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সাহায্য করছে। প্রনোদনা ১% এ নামিয়ে আনা উচিৎ। আমি আগে বলেছি, হুন্ডিদের বা পাচার কারীদের কারেন্সি কনভার্শন লস যা হয় তার কাছাকাছি থাকতে পারে প্রণোদনা। মূলত রেমিটেন্স আগমন হুন্ডির মত রিয়েল টাইম করতে পারাটাই মূল কাজ। বাংলাদেশের ব্যাংক গুলোর হাই কোর্ট দেখানোও হুন্ডির অন্যতম কারণ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সচল হয়ে পড়ায় হুন্ডি চক্রও সচল হয়ে রেমিটেন্স কমে যেতে শুরু করেছে। রেমিটেন্সে দেয়া প্রণোদনা কত শতাংশ হবে এই বিষয়টা গবেষণার বিষয় হয়ে গেছে।

করোনার পরে ক্যাপিটাল মেশিনারির দাম বাড়তে কিছু বেড়েছে। সে হিসাবে নতুন উৎপাদিত খাদ্য বহির্ভুত পণ্যের দাম কিছু বাড়বে। কিন্তু তাতে সংগতি থাকা চাই। আমদানিহীন দেশীয় পণ্যে আন্তর্জাতিক হারের দ্বিগুণ হারে দাম বাড়ার যুক্তি কি?

সরকারের মনিটারি পলিসি অর্থাৎ বাজারে সস্তায় মুদ্রা সরবারহের নীতি এবং করোনা প্রণোদনা প্যাকেজের নামে নতুন টাকা ছাপানোর অভিযোগ মূল্যস্ফীতির লাগামহীনতার মাধ্যমে প্রমাণিত।

যেহেতু প্রণোদনা প্যাকেজ বিনিয়োগে আসেনি, বরং কম সুদের নতুন ঋণের মাধ্যমে উচ্চ সুদের পুরানো ঋণের অদলবদল হয়েছে (তারল্য বেড়েছে)। নতুন ঋণের একটা অংশও পাচারে পড়েছে তাই ঋণের মাধ্যমে নতুন সম্পদ তৈরি হয়নি। ফলে নিশ্চিত ভাবেই এটা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।

  • লেখক নেদারল্যান্ডসের ভোডাফোনে কর্মরত প্রকৌশলী এবং টেকসই উন্নয়নবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। 

Saturday, October 9, 2021

মাস শেষে আমার আয় বাড়েনা কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে

কামরুল আহসান নোমানী 


বাজারে ফুলকপি দেখে কেনার শখ হলো। দাম জানতে চাইলাম, বললো কেজি একদাম ১৫০ টাকা! আমি ফুলকপির সাইজের সাথে দাম মেলাতে পারলামনা। হতাশ হয়ে শীমের দিকে তাকালাম, দাম জিজ্ঞেস করার সাহস পেলামনা। কাঁচা মরিচের কেজি দুইশো টাকা। তাও ভালো তিনশো বলেনাই, তিনশো টাকা কেজিতেও এই সরকারের আমলে কাঁচা মরিচ কেনার অভিজ্ঞতা আছে। টুকটাক কাঁচা বাজার শেষে বিল আসলো পাঁচশ ত্রিশ টাকা। আমি চোখ বুজে টাকাটা দিয়ে দিলাম।

মাছের বাজারে রীতিমত আগুন। কেজিতে মোটামুটি একশ টাকার ডিফারেন্স। আমি দেড় কেজি সাইজের একটা রুইয়ের দাম জিজ্ঞেস করলাম, দাম চাইলো পাঁচশ টাকা। কাতলের দামও প্রায় কাছাকাছি। চোখের সামনে একটা নাদুস নুদুস রুই মাছ দেখা যাচ্ছে, আড়াই কেজির কম হবেনা, আমি ওটার দাম জিজ্ঞেস করার সাহস পেলামনা। অগত্যা আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্তদের জাতীয় মাছ পাঙ্গাস আর তেলাপিয়ার দিকে মনযোগ দিলাম।

পোলট্রি সাদাটা কেজি একশ নব্বই, সোনালী তিনশ দশ টাকা। সোনালী আমার সাধ্যের বাইরে, নিজেকে বোঝালাম সোনালী আর সাদাতে পার্থ্যক্যই বা এমন কি, পেটে গেলে সবই এক। সাদাটা কিনতে গিয়েই তো দম বেরিয়ে যাচ্ছে।

গরুর মাংসের গলির দিকে তাকালাম এক ঝলক, তারপর ঝট করে চোখ নামিয়ে নিলাম। ওই গলি বড় লোকদের জন্যে।

ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে মুদি দোকানে ঢুকলাম। গিন্নি একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে, আমি ওটার ধারে কাছ দিয়েও গেলামনা। যেটারই দাম জিজ্ঞেস করি সেটাই দেখি গত মাসের তুলনায় কেজিতে বিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। যেগুলো না কিনলেই নয়, আমি সেগুলো দোকানীকে চোথা করতে দিয়ে বের হয়ে আসলাম। নিড সাম ফ্রেশ এয়ার।

আমি একটা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, মাস শেষে আমার আয় বাড়েনা কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে। এই বাড়তি দামের সাথে তাল মিলাতে আমাকে প্রচুর কসরত করতে হয়। ছোটখাটো শখগুলোকে বিসর্জন দিতে দিতে এখন আর কোন শখই অবশিষ্ট নেই। আমার ধারণা আমাদের মত মধ্যবিত্ত সব ফ্যামিলিরই এরকম অবস্থা। মধ্যবিত্তরা বেঁচে আছে, না খেয়ে মরছেনা, সত্য, কিন্তু তাদের বুকচিরে বের হয়ে আসা দীর্ঘ নি:শ্বাসও কেউ শুনতে পাচ্ছেনা। এই দীর্ঘ নি:শ্বাসটুকু একান্তই তাদের নিজের।



Thursday, October 7, 2021

শহিদ আবরার ফাহাদ আধিপত্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে বাংলাদেশের মানুষের জাগরণের প্রতীক

 ফাইজ তাইয়েব আহমেদ


একচেটিয়া সীমান্ত হত্যা, অর্থনৈতিক গোলামী, বন্দর ও পানি আগ্রাসনকে নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করায় আবরারকে ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আজ থেকে দু বছর আগে। একচেটিয়া সামরিক ও রাজনৈতিক গোলামী, নির্বাচনী দুর্বিত্তপনা, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষের জানের নিরাপত্তা, বাংলাদেশের তরুণদের কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো, বিদ্যুৎ বন্দর ও জলসীমার নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সম্পদ ও স্বার্থ লুটের সকল আয়োজনের বিরুদ্ধে আবরারের মৃত্যু একাই এক অতন্দ্র প্রহরীর সমতুল্য। শোষণ ও আধিপত্যবাদের প্রশ্নে আবরার আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের আগত ও অনাগত সংগ্রামের মশাল। আবরার আমাদের নব জাগরণের তাজ।



শহিদ আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চাই। সাথে সাথে চাই, উনি যে আধিপত্যবাদের আগ্রাসনের প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছেন, সে আধিপত্যবাদের আগ্রাসনকে থামানো। চাই আধিপত্যবাদের চূড়ান্ত প্রতিরোধ। ছাত্রলীগের টর্চার সেলে আবরার ভারতীয় নদী ও বন্দর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লিখার জন্য ক্ষমা চেয়ে, ফেইসবুক পোস্ট ডিলিট করে পার পেতে পারতেন। রাজি হননি বলেই দ্বিতীয় দফায় তাঁকে আমৃত্যু পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাফিয়া খুনীরা ক্ষমতা দখল করে আছে বলেই আজকে আবরার হত্যার বিচার প্রক্রিয়াটাকেই আটকে রাখা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।

আবরার বাংলাদেশের উপর একচেটিয়া ভারতীয় অর্থনৈতিক ও নদী-পানি-বন্দর-প্রাণ-পরিবেশ আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছেন, উনার স্বপ্নের আগ্রাসন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথই তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর বুলন্দ  শপথ হোক। আবরারের জন্য ফ্যাসিবাদের সম্মতি উৎপাদনকারী শিক্ষিত দালালদের কোন দরদ, কোন ম্রিয়মাণ মায়াকান্নার প্রয়োজন নেই। 

শহীদ আবরার,

চির উন্নত তব শির!

  • লেখক বিশিষ্ট গ্রন্থ প্রণেতা  


Wednesday, October 6, 2021

বাংলাদেশ না হোক ২০১১ নম্বর কক্ষ

ব্র্যাড অ্যাডামস, এশিয়া পরিচালক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

 


বাংলাদেশ শাসকদলীয় কর্মীরা ফেসবুক পোস্টের পরে একজন ছাত্র হত্যা করেছে। নিহতের নাম আবরার ফাহাদ। তার নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়মুক্তিকে সামনে এনেছে। দিনটি ছিল ৬ই অক্টোবর। ২১ বছরের বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ। তাকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নেয়া হলো ২০১১ নম্বর কক্ষে। এটি ছাত্রদের কাছে একটি টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। এই কক্ষটি পরিচালিত হতো ছাত্রলীগের সদস্যবৃন্দের দ্বারা।

ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে ফাহাদকে মৃত পাওয়া গেছে।

বুয়েট ছাত্রলীগের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিডিয়াকে বলেছেন, ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বিষয়ে ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। ছাত্রশিবির হলো ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। ছাত্রলীগ কর্মীরা দাবি করেছেন যে, ফাহাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং তার সেল ফোন জব্দ করার পর তারা শিবিরের সঙ্গে ফাহাদের সম্পর্কের যোগসূত্রের প্রমাণ পেয়েছেন।

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, ছাত্ররা ফাহাদের অচেতন দেহ মধ্যরাতে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্ট বলেছে, ফাহাদের শরীরে বিপুলসংখ্যক আঘাত করা হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। পুলিশ বলেছে, ২০১১ নম্বর কক্ষে তারা ক্রিকেট খেলার স্টাম্প পেয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ এই স্টাম্প দিয়ে ফাহাদকে পেটানোর ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে।  

এই মরণঘাতী ঘটনায় বিস্ময় নই। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চলছিলেন। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি, নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংস আক্রমণ পরিচালনা এবং এমনকি ২০১৮ সালের ছাত্র প্রতিরোধ আন্দোলন দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগী হিসেবে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

হাজার হাজার ছাত্র ফাহাদ হত্যার দাবিতে প্রতিবাদ করছেন। ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন ফাহাদের বাবা। পুলিশ এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের সদস্য।


কিন্তু ফাহাদ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের অব্যাহত ব্যর্থতার একটা সুগভীর প্রতিফলন। বাংলাদেশে একটি সরকার রয়েছে, যারা নির্যাতন, গুম, নিরাপত্তা কর্মীদের দ্বারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তারকে অবজ্ঞা করছে। আর এসবই এমন একটি সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ‘টর্চার সেল’ পরিচালনা করতে পারে।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষসমূহের উচিত হবে একটি ব্যাপকভিত্তিক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পরিচালনা করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো।

 বাংলাদেশকে অবশ্যই ২০১১ নম্বর কক্ষে পরিণত হতে দেয়া উচিত নয়।


হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইট থেকে। অক্টোবর ১২, ২০১৯, দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত। 

Thursday, September 30, 2021

দেশে ‘পঞ্জি স্কিম’ প্রতারণা

রুমিন ফারহানা

বাংলাদেশের একটি সুবিখ্যাত গাড়ির ব্যাটারি কোম্পানি ভারতে রপ্তানি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। ২০০৪ সালে ভারত অভিযোগ করে সেই ব্যাটারি কোম্পানি নিজেদের উৎপাদন মূল্যের চেয়েও কমমূল্যে পণ্যটি ভারতে রপ্তানি করছে (বাণিজ্যের ভাষায় ডাম্পিং)। এতে ভারতের ব্যাটারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা রোধকল্পে তারা অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। ডাম্পিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের পণ্যকে একচেটিয়া করে ফেলে তারপর সুবিধাজনক সময়ে অনেক চড়া দামে পণ্য বিক্রি করে অনেক বেশি মুনাফা করে সেটা পুষিয়ে ফেলা। এটা বাজারের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত জনস্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে এটা বন্ধের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কথা ওঠে।  

বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ জানায়। সেখানে ওই ব্যাটারি কোম্পানিকে উৎপাদনের যাবতীয় তথ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে যে দামে তারা পণ্যটি বিক্রি করছে তাতে তারা লোকসান দেয়নি, লাভ করছে। এরপর ২০০৬ সালে ওই ব্যাটারি কোম্পানি ডব্লিউটিও থেকে নিজেদের পক্ষে রায় পায়। পাঠক এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ব্যাটারি কোম্পানিটি নিজেদের উৎপাদিত পণ্য অতি কম দামে দিচ্ছে কেবলমাত্র এই কারণেই শুল্কের মুখোমুখি হয়েছিল। এমন নয়, যে তারা মিডিয়া বা মাধ্যম হিসেবে মূল উৎপাদনকারী এবং ক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছিল যেমনটি আমরা দেখেছি ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং এদের মতো আরও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। যেহেতু বিখ্যাত এই ব্যাটারি কোম্পানি প্রমাণ করতে পেরেছিল যে তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে ব্যাটারি বিক্রি করলেও তারা লোকসানে নয়, লাভে আছে, সে কারণেই শেষ পর্যন্ত মামলা জিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল তারা। 

ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ কিংবা তারও আগে যুবক, ইউনিপে-টু-ইউ, ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর শুরু থেকেই ব্যবসা করার ন্যূনতম কোনো ইচ্ছে ছিল না। প্রতারণার মাধ্যমে লাখো মানুষের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎই ছিল এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য। মজা হচ্ছে এই প্রতারণা তারা লুকিয়ে চুরিয়ে রাখঢাক করে করেনি। রীতিমতো বিশাল বিশাল ব্যানার-বিলবোর্ড টানিয়ে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের স্পন্সর হয়ে, বিখ্যাত সব তারকাদের খ্যাতির দ্যুতি ছড়িয়ে, র‍্যাবের তৈরি সিনেমায় আর্থিক সহায়তা করে, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা ঢেলে, ই-ক্যাবের নানা অনুষ্ঠানেরও পৃষ্ঠপোষক হয়ে মাঠে নেমেছিল তারা। মন্ত্রীদের নিয়েও নানান অনুষ্ঠান করে ই-ভ্যালি। সবার চোখের সামনে ওয়েবসাইট খুলে গ্রাহককে বিশাল ছাড়ে পণ্য দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে তারা, বিপুল অংকের টাকা তুলেছে, লেনদেন হয়েছে ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এত বড় পরিসরে নামার পর সাধারণ মানুষের সন্দেহ করার কী কারণই বা থাকতে পারে? আর প্রতারণার জাল তো বিস্তার করা হয়েছে ধীরে ধীরে, শুরুতে ওয়াদা মতো পণ্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়ে। মানুষের অবিশ্বাসের কোনো কারণ তো ছিল না। মানুষ দেখেছে তার পরিচিতজনরা টাকা দিয়েছে, পণ্য পেয়েছে এবং সেই পণ্যও পেয়েছে অর্ধেক বা তারও কম দামে। কিন্তু এই বিশ্বাসের মাশুল গুনেছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। অনেকেই শুনলাম বলছেন, মানুষের লোভের রাশ টানা উচিত, বেশি লোভ করলে এমনই ঘটে, ইত্যাদি ইত্যাদি। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, এই প্রশ্ন কেউ তুলছেন না, কী করে সরকারের এতগুলো সংস্থার নাকের ডগা দিয়ে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর এ ধরনের ব্যবসা চালালেন এই প্রতারকরা। কী করে গত ১৫ বছরে ২৮০টি প্রতিষ্ঠান মিলে মানুষের অন্তত ২১ হাজার ১৭ কোটি টাকা লোপাট করে, কী করে যুবক, ইউনিপে-টু-ইউ, ডেসটিনির তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আবারও ই-অরেঞ্জ, ই-ভ্যালি, ধামাকা, এহসান গ্রুপ ধরনের প্রতারক কোম্পানিগুলো সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে দিনের পর দিন এমন সন্দেহজনক ব্যবসা চালিয়ে গেল। এটি পানির মতো পরিষ্কার যে সরকারের পক্ষ থেকে যদি পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেত তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হয় না।

সংসদে এই বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম আমি। তারপরই দেখলাম সরকারের যেন কিছুটা ঘুম ভাঙল, নড়েচড়ে বসল প্রতিযোগিতা কমিশনও। এই ফাঁকে বলে রাখি, পশ্চিমের ‘অ্যান্টিট্রাস্ট ল’-এর ধারায় বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে ২০১২ সালে। সেই আইনে প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে (৮.১.ক) বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তারকারী অনুশীলনসমূহকে নির্মূল করা, প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা ও বজায় রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এরপর আইনের ১৫ এবং ১৬ ধারায় উল্লেখ আছে বাজারে প্রতিযোগিতা ক্ষুন্ন করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিতে পারবে না। ২১ সেপ্টেম্বর প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান ই-কমার্স ব্যবসার লোকজনের সঙ্গে বসে বলেন, ‘গ্রাহকদের প্রতারিত করার লক্ষ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট দিয়ে পণ্য বিক্রি করেছে। ব্যবসাও করছে গ্রাহকের টাকায়। আগামীতে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করবে।’ এই আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী কমিশন কোনো ব্যবসা জনগণের বড় ক্ষতি করতে পারে এমন সন্দেহ করলে দুই দফায় ৬০ দিন করে মোট ১২০ দিন অর্থাৎ ৪ মাস ব্যবসাটি বন্ধ করে রাখার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। অর্থাৎ এই আইনের অধীনে প্রতিযোগিতা কমিশন এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক আগেই বন্ধ করে দিতে পারত। তাহলে অসংখ্য মানুষ চরম ঝুঁকিতে পড়া থেকে বেঁচে যেত।        

সংসদে এই বিষয় কথা বলতে গিয়ে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলাম এই টাকা জনগণের টাকা এবং এর দায় সরকারকে নিতে হবে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে জনগণের টাকা ফেরত দিতে হবে সরকারকে, পরে পারলে সরকার এই সব প্রতারক কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ আদায় করে নেবে। পরে দেখলাম একই ধরনের কথা বলছেন অর্থমন্ত্রীও। তার  ই-কমার্সের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। যেহেতু এখানে ছাড়পত্র দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তাই প্রাথমিকভাবে তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। আইটির বিষয়ও যেহেতু এখানে জড়িত তাই আইসিটি মন্ত্রণালয়ও দায় এড়াতে পারে না। অর্থাৎ অর্থ, বাণিজ্য, আইসিটি, স্বরাষ্ট্র প্রতিটি মন্ত্রণালয়েরই দায় আছে এই ধরনের ব্যবসা চলতে পারার পেছনে এবং তারা কেউ-ই সে দায় এড়াতে পারে না।

 

বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য দায় নিতে নারাজ। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণে সরকার কিছুই করবে না। তিনি বরং আরেক কাঠি সরেস হয়ে বিষয়টিকে হালকা করে ফেলার চেষ্টা করছেন। অনলাইনে কোরবানির গরু কিনতে গিয়ে তিনি হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে এমনভাবে কথা বলেছেন যেন ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মতো ঘটনা বাংলাদেশের সব ই-কমার্সেই হয়। বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসায় পণ্য কিনতে গিয়ে অর্ডার দেওয়া পণ্যের সঙ্গে প্রাপ্ত পণ্য নিম্নমানের হওয়া, বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে পণ্য বিক্রি, ডেলিভারি পেতে দেরি হওয়ার মতো অভিযোগ ক্রেতাদের দিক থেকে আছে; দেশের ই-কমার্সের ভবিষ্যতের স্বার্থে সেগুলো নিয়ে কাজ করতেই হবে। কিন্তু সেগুলো কোনোটি কি এই আলোচিত ‘পঞ্জি স্কিম’ প্রতারণাগুলোর সঙ্গে তুলনীয় কোনো দিক থেকে? এটা করে তিনি কি সাধারণভাবে ই-কমার্সের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা তৈরি করছেন না?

হালের ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ও এদের মতো কিছু ই-কমার্স সাইট এবং আগের ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপে-টু-ইউ এগুলো কোনোভাবেই ব্যবসা নয়, এগুলো আসলে ‘পঞ্জি স্কিম’। বড় স্কেলে এমন প্রতারণা করা ব্যক্তি চার্লস পঞ্জি’র নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। এটা হচ্ছে এক ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রম, যেখানে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের তুলনায় বিশাল অংকের একটি লভ্যাংশ (ই-কমার্স সাইটগুলোর ক্ষেত্রে অতি অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্য) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যেটা বাজারের প্রচলিত হারের চাইতে অনেক বেশি। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটি মানুষের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে কোনো মূল্য সংযোজন না করে তারা নতুন বিনিয়োগকারীদের থেকে প্রাপ্ত টাকা দ্বারাই পুরনো বিনিয়োগকারীদের কাউকে কাউকে লাভ/পণ্য প্রদান করে। এতে শুরুতে নিজে পেয়ে বা আশপাশের কাউকে লাভ পেতে দেখে অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়ে তাদের টাকা দেয় এবং এক পর্যায়ে অনিবার্যভাবেই দেখা যায় মানুষ প্রতিশ্রুত লাভ/পণ্য আর পাচ্ছে না। তখন এই প্রতারকরা বহু মানুষের টাকা নিয়ে চলে যায়। এই কারণেই সভ্য দেশে ‘পঞ্জি স্কিম’ অল্প সময়ের জন্যও চলতে পারে না, কারণ এটা কোনোভাবেই ব্যবসা নয়, স্রেফ প্রতারণা।

তাহলে টাকা হারানো সাধারণ মানুষের দায় নিয়ে তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে না কেন সরকার? জানি সরকারের টাকা মানেই জনগণের টাকা। জনগণের টাকা দিয়ে কারও প্রতারণার মাশুল সরকার দেবে কেন, এই প্রশ্ন আসতে পারে, আসছেও সেটা। কিন্তু আমি মনে করি জনগণকে প্রকাশ্য প্রতারণার জালে আটকে ফেলে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় সরকারকে যেহেতু কোনো আর্থিক দায় নিতে হয় না, তাই এসব ঘটনা বারবার ঘটার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপও থাকে না। সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং দলের ক্ষমতাবান মানুষ এসব প্রতারকের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয় বলে এসব প্রতারণা ভিন্ন ভিন্ন চেহারা নিয়ে বারবার আসে, আসতেই থাকে। এই কারণেই আমি বিশ্বাস করি এসব প্রকাশ্য প্রতারণার ক্ষেত্রে সরকারকে আইনগতভাবেই আর্থিক দায়ে যুক্ত করার মাধ্যমেই এটা রোধ করা সম্ভব হতে পারে।

  • লেখক আইনজীবী, সংসদ সদস্য ও বিএনপিদলীয় হুইপ 

লেখাটি প্রথমে দৈনিক দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। 

Saturday, September 25, 2021

বিএনপি’র তুলনায় আওয়ামী লীগের সময়ে নিত্যপণ্যের দাম ৩-৬ গুণ বেশী

 মোঃ মিজানুর রহমান




মানুষের জীবন-জীবিকা, শারীরিক সুস্থ্যতা, মানসিক প্রশান্তি আর তেজো-বুদ্ধিদীপ্তে খাদ্যপণ্য অপরিহার্য। প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নিত্য খাদ্য ব্যবস্থা। নিত্য খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষের খাদ্য গ্রহণমাত্রা সঠিক থাকে না বরং কমে যায়। ফলে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। আর পুষ্টিহীনতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সর্বোপরি রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে। তাই প্রতিটি দেশে নিত্য খাদ্য পণ্যের দাম মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়-আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রতি বছরই নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়তে থাকে- যা নিম্নে উল্লেখিত ছক দেখলে অনুমান করা যাবে। 


সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, খিলগাঁও ও শান্তিনগর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি সাদা আলু ২৫ টাকা, লাল আলু ৩০ টাকা, বেগুন, করলা ও পটল ৬০-৭০ টাকা, ঢেরস ৬০ টাকা, শিম ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, লাউ (আকারভেদে) ৬০/৭০/৮০+ টাকা, মিস্টি কুমড়া (আকারভেদে) ৭০/৮০/১০০+ টাকা, আদা ও রসুন ১২০ টাকা, সয়াবিন তেল (প্যাকেটজাত) প্রতি লিটার ১৫৩ টাকা, আটা ৪০ টাকা, ময়দা ৫০ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকা, সরু চাল ৭০ টাকা থেকে বিভিন্ন দামের, হাসের ডিমের হালি ৫৫-৬০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০+ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০+, গরুর গোস্ত ৬০০ টাকা, খাসির গোস্ত ৯০০-৯৫০ টাকা এবং মাছের দাম প্রকারভেদে বিভিন্ন রকম। করোনা মহামারীর কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকুচিত হওয়ায় ও সেই সাথে নিত্য পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় জীবন-যাপনে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই নিত্য পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। বর্তমান আওয়ামী সরকারের সময় ও বিগত বিএনপি সরকারের সময় নিত্য পণ্যের দামের তুলনামূলক চিত্র নিম্নে দেয়া হলো।


ক্রমিক নং

পণ্য

২০০৬ সালে 

বাজারদর 

টাকায় 

২০২১ সালে 

বাজারদর 

টাকায় 

২০০৬ এর তুলনায় 

২০২১ এ

দাম বৃদ্ধি 

মোটা চাল 

(প্রতি কেজি)

গড়ে ১৫ টাকা

৫২ টাকা

সাড়ে 

তিনগুণ

 (প্রায়)

সরু চাল 

(প্রতি কেজি)

২৪.৫০ টাকা

৭০ টাকা +

তিনগুণ

(প্রায়)

আটা 

(প্রতি কেজি)

১৭ টাকা

৪০ টাকা

তিনগুণ

সয়াবিন তেল 

(প্রতি লিটার)

    ৫৫ টাকা

১৫৩ টাকা

তিনগুণ

(প্রায়)

শাক 

(প্রতি আটি)

০২-০৩ টাকা

১৫-২৫ টাকা

৫-১০ গুণ 

(প্রায়)


আলু 

(প্রতি কেজি)

২৫-৩০ টাকা

৬০ টাকা 

পাঁচগুণ 

(প্রায়)


পেঁয়াজ 

(প্রতি কেজি)

০৮-১০ টাকা

৫০-৬০ টাকা

৫-৬ 

গুণ+

 (প্রায়)


চিনি 

(প্রতি কেজি)

৩৬ টাকা

৬০ টাকা +

দ্বিগুণ

 (প্রায়)

হাসের ডিম 

(প্রতি হালি)

১২ টাকা

৫৫-৬০ টাকা

চারগুণ 

(প্রায়)

১০

গরুর গোস্ত 

(প্রতি কেজি)

১৮০ টাকা

৬০০ টাকা

তিনগুণ

 প্রায়

১১

খাসির গোস্ত 

(প্রতি কেজি)

২৮০-৩০০ টাকা

৯০০-৯৫০ টাকা

তিনগুণ

 প্রায়

১২

গ্যাস (প্রতি ২ মুখ চুলা)

২০০ টাকা

৯৭৫ টাকা

চারগুণের 

বেশী


দেখা যায় বিএনপি’র তুলনায় আওয়ামী লীগের সময়ে নিত্য পণ্যের দাম ৩-৬ গুণ বেশী।


বছরে বছরে দাম বৃদ্ধি পেতে পেতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কাট-ছাট করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নিত্যপণ্য কিনতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সহনীয় পর্যায়ে দাম ধরে রাখতে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকার। মানুষ কিছু বলতে পারে না-অজানা আতংকে। অজানা আতংক এই জন্য যে, মানুষ তাদের অধিকার তথা মুক্তমত, মানবাধিকার, ভোটাধিকার বিষয়ে বলতে গেলে বা গণমানুষের পক্ষে কোন সংগঠন বা সংস্থা বলতে গেলে বা লেখতে গেলে হতে হয় নির্যাতিত, নিপীড়িত, হামলা-মামলা, জুলুম, জেল-রিমান্ড; এমনকি গুম বা অপহরণ এর শিকার। অধিকার আদায়ে সোচ্চার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সম্বলিত বহু মানুষ আতংকে বাসায় ঘুমাতে পারে না বা এলাকায় থাকতে পারে না। 

করোনা মহামারীর এ সময়ে অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়ের উৎস অচলাবস্থা। অনেক মানুষ চাকরি বা কর্ম হারিয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ভাসমান মানুষ তাদের পুজি খুঁয়েছে। আনেকে বাসা-বাড়ী ছেড়ে দিয়ে গ্রামে গেছেন। মোবাইল কোম্পানীর দেয়া তথ্যমতে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে  ১ কোাটি ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে বাসা-বাড়ী ছেড়ে দেশে গেছেন। অনেকে পরিবার দেশে বা গ্রামে রেখে শহরে মেসে সিট ভাড়া করে থাকছেন। অনেকের বেতন শতকরা ৪০ ভাগ কমেছে। অসহায়, দরিদ্র্য মানুষের জন্য সরকারের সহায়তার টাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে একই মোবাইল নাম্বার বারবার ব্যবহার করে একই ব্যক্তি একাধিকবার টাকা তুলে নিজেদের পকেটে ভরছে-যা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানা যায়। ফলে অসহায়, দরিদ্র্য মানুষের ক্ষুধা আর কান্না একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে মানবাধিকারের কৃষ্ণ গহ্বরে। এক অসহনীয় অবস্থায় মানুষ বসবাস করছে। ক্ষমতাসীনদের চাল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে ভূর্তুকি বা অন্য কোন পন্থা আবলম্বন করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সহনীয় পর্যায়ে নিত্য পণ্যের দাম ধরে রাখতে বিধি-ব্যবস্থা গ্রহণ অনস্বীকার্য ছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু তারা তা করেননি বরং উন্নয়নের জোয়ারের কথা বললেও মানুষের যাপিত জীবনের আর্থ-সামজিক এই প্রেক্ষাপটে বলা যায় যথার্থ উন্নয়ন হয়নি। কেননা, মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধ্য অনুযায়ী দামের উর্ধ্বগতির কারণে ক্রয় করতে পারছে না। মাসে মাসে বাসা ভাড়া তো আছেই। আয়-ব্যয় হিসেবের কঠিন যাতাকলে আত্ম-মর্যাদায় বেঁচে থাকা যেনো মানুষের দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন গল্পের ছিটে-ফোটা তাদের যাপিত জীবনে দেখা যায় না। সাধরণ মানুষের প্রশ্ন তাহলে উন্নয়ন কি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণীর বাহুডোরে? কেননা, ঘরে ঘরে মানুষের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা আর চাপা কান্না। অথচ প্রতিটি মানুষ চায় অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা; যা ক্ষমতাসীনরা দিতে ব্যর্থ।

১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ আজ সে কথা মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। মোটা চালের দাম পঁঞ্চাশের ঊর্ধ্বে, সরু চালের দাম ৭০ টাকা। ক্ষমতাসীনদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে করোনাভাইরাস মন্দার মধ্যেও গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, পাইজাম চালে দাম বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশী, আটার দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ, ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এছাড়াও ডাল, শিশুদের গুড়াদুধসহ অন্যান্য পণ্যেরও দাম বেড়েছে। 

বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর অর্থাৎ ২০০৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অব্যাহতভাবে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবনে রীতিমতো দুর্যোগ নেমে এসেছে। অথচ মানুষের আয় বাড়ানোর জন্য সেই অর্থে ক্ষমতাসীনদের পদক্ষেপের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর তথ্য মতে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের শতকরা ৬৬ ভাগ আজও বেকার। মানুষ সন্তানদের বেকারত্ব আর দুর্যোগ থেকে মুক্তি চায়। সময়ান্তে এই মানুষগুলো প্রতীক্ষার প্রহরে, মিশে যাবে তারা সেই সংগঠন বা সংস্থা’র সাথে যে সংগঠন বা সংস্থা মানুষের অধিকার তথা মুক্তমত, মানবাধিকার, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছে সফল হওয়ার লক্ষ্যে। 

তথ্য উৎস — জাতীয় সংবাদপত্র ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি 

  • লেখক সাংবাদিক ও কলামিস্ট।