Search

Saturday, October 9, 2021

মাস শেষে আমার আয় বাড়েনা কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে

কামরুল আহসান নোমানী 


বাজারে ফুলকপি দেখে কেনার শখ হলো। দাম জানতে চাইলাম, বললো কেজি একদাম ১৫০ টাকা! আমি ফুলকপির সাইজের সাথে দাম মেলাতে পারলামনা। হতাশ হয়ে শীমের দিকে তাকালাম, দাম জিজ্ঞেস করার সাহস পেলামনা। কাঁচা মরিচের কেজি দুইশো টাকা। তাও ভালো তিনশো বলেনাই, তিনশো টাকা কেজিতেও এই সরকারের আমলে কাঁচা মরিচ কেনার অভিজ্ঞতা আছে। টুকটাক কাঁচা বাজার শেষে বিল আসলো পাঁচশ ত্রিশ টাকা। আমি চোখ বুজে টাকাটা দিয়ে দিলাম।

মাছের বাজারে রীতিমত আগুন। কেজিতে মোটামুটি একশ টাকার ডিফারেন্স। আমি দেড় কেজি সাইজের একটা রুইয়ের দাম জিজ্ঞেস করলাম, দাম চাইলো পাঁচশ টাকা। কাতলের দামও প্রায় কাছাকাছি। চোখের সামনে একটা নাদুস নুদুস রুই মাছ দেখা যাচ্ছে, আড়াই কেজির কম হবেনা, আমি ওটার দাম জিজ্ঞেস করার সাহস পেলামনা। অগত্যা আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্তদের জাতীয় মাছ পাঙ্গাস আর তেলাপিয়ার দিকে মনযোগ দিলাম।

পোলট্রি সাদাটা কেজি একশ নব্বই, সোনালী তিনশ দশ টাকা। সোনালী আমার সাধ্যের বাইরে, নিজেকে বোঝালাম সোনালী আর সাদাতে পার্থ্যক্যই বা এমন কি, পেটে গেলে সবই এক। সাদাটা কিনতে গিয়েই তো দম বেরিয়ে যাচ্ছে।

গরুর মাংসের গলির দিকে তাকালাম এক ঝলক, তারপর ঝট করে চোখ নামিয়ে নিলাম। ওই গলি বড় লোকদের জন্যে।

ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে মুদি দোকানে ঢুকলাম। গিন্নি একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে, আমি ওটার ধারে কাছ দিয়েও গেলামনা। যেটারই দাম জিজ্ঞেস করি সেটাই দেখি গত মাসের তুলনায় কেজিতে বিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। যেগুলো না কিনলেই নয়, আমি সেগুলো দোকানীকে চোথা করতে দিয়ে বের হয়ে আসলাম। নিড সাম ফ্রেশ এয়ার।

আমি একটা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, মাস শেষে আমার আয় বাড়েনা কিন্তু দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে। এই বাড়তি দামের সাথে তাল মিলাতে আমাকে প্রচুর কসরত করতে হয়। ছোটখাটো শখগুলোকে বিসর্জন দিতে দিতে এখন আর কোন শখই অবশিষ্ট নেই। আমার ধারণা আমাদের মত মধ্যবিত্ত সব ফ্যামিলিরই এরকম অবস্থা। মধ্যবিত্তরা বেঁচে আছে, না খেয়ে মরছেনা, সত্য, কিন্তু তাদের বুকচিরে বের হয়ে আসা দীর্ঘ নি:শ্বাসও কেউ শুনতে পাচ্ছেনা। এই দীর্ঘ নি:শ্বাসটুকু একান্তই তাদের নিজের।



No comments:

Post a Comment