Search

Sunday, October 17, 2021

প্রাসঙ্গিকতা

শায়রুল কবির খান

 


প্রাসঙ্গিকতা একটি চিন্তাশীল প্রশ্ন। সবকিছু প্রবাহিত হয় এবং পরিবর্তিত হয়। সবকিছু অবিচ্ছিন্নভাবে প্রায় চলমান। স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বছর ২০২১ সাল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সূদুর প্রসারী চিন্তার ফলেই তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তার বাস্তবতা ভারত ও বাংলাদেশের সকল চিন্তাশীল ব্যক্তি স্বীকার করেন।

তবে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সাহায্য এবং সমর্থন জানিয়ে ছিলেন। এর ঐতিহাসিক ও মনস্তাত্ত্বিক একটা কারণও ছিল। বাঙালির মনে মনে একধরনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা ছিল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলার মুসলমানদের অবদান সবচেয়ে অগ্রগামী ছিল। এই অহঙ্কার বোধটা দুই অঞ্চলের বাংলা ভাষাভাষীদের ভাবনার মধ্যে ছিল।

স্বাধীন বাংলাদেশের সুচনালগ্নেই এই সামগ্রিক স্রোতধারায় বিচ্যুতি ঘটল, যার রেশ আজ অবধি বয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা একটা কুয়াশাচ্ছন্ন কাব্যিক দৃষ্টিতে দেখছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তীকালে অনেকের মনোভাবের একটা গুণগত পরিবর্তন হয়। যারা মনে করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এখানে একটা কল্পস্বর্গ প্রতিষ্ঠা হবে। নদীতে মধুর দুধ বইবে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্র নবীনকালের রবিন্দ্রনাথ, নজরুল ও জগদীশ চন্দ্র বসুরা জন্ম গ্রহণ করতে আরম্ভ করবে। কিন্তু এর কিছুই হলো না।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। তাদের প্রত্যাশিত কিছুই ঘটেনি। অধিকন্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় মানবেতর সঙ্কট সর্বত্রই। প্রতিহিংসা পারায়ণ খুনোখুনি, অভাব, দুর্ভিক্ষ, দুর্নীতি- এসবই একটার পর একটা বেড়েই চলছে। এই আকাঙ্ক্ষা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে রূপায়িত ছিল না।

তাদের জীবন রূপায়িত ছিল সুন্দর স্বাভাবিক একটা সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র থাকবে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়।

স্বাধীন বাংলাদেশের হালহকিকত দেখে পশ্চিমবঙ্গের সেই নাগরিকদের একটা অংশ আশাহত হয়েছেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি পশ্চিমবাংলার শিক্ষত নাগরিকদের একটা অংশ যুগপৎ বিতৃষ্ণা ও ভালোবাসা দু’টিই পোষণ করেন। বাংলাদেশে যদি বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটে, তারা গলা উঁচিয়ে ঘোষণা করেন ওপার বাংলার আমার ভাইয়েো এটা করেছে, ওটা করেছে। আর যদি খারাপ কিছু হয়, তখন তারা বলতে দ্বিধা করেন না, আর কি করবে! ওরা তো সারা যুগ ধরে তাই করে আসছে। অন্য রকম কোনো একটা করবে কী করে?

নাগরিকদের যুগপৎ বিতৃষ্ণা আর ভালোবাসার মধ্যে বাংলাদেশ যদি জনগণের সপক্ষে অর্থপূর্ণ কোনো কর্মসূচি সংযোজিত হয়, তার প্রভাব ফেলবেই বিস্তৃতভাবে।

বাংলাদেশের মানুষ মনস্তাত্ত্বিকভাবেই স্বাধীনচেতা, উদার মনোভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এই চেতনার চিন্তা শক্তি থেকেই প্রতিবেশীদের প্রতি সবসময় সহনশীল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যের পরাজয়। 

স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার।

যুদ্ধ পরবর্তীকালে নির্বাচনে ভারতের প্রায় সবগুলো রাজ্য শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়।

কংগ্রেস বামপন্থী রাজনীতির প্রসার ঠেকিয়ে নিজেদের আসন ও শাসন অটুট রাখার জন্য প্রতিবেশী দেশে অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল মূল লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগ সরকারের একনায়কতন্ত্র দখলদারিত্বে বাংলাদেশে বামপন্থী ও ইসলামী অনুশাসনের রীতি মেনে যে রাজনীতির চর্চা আছে তার কোনো জায়গায় শক্তিশালী সংগঠন নেই। আছে একধরনের আত্মঘাতী কলহ, বঞ্চনা ও বিভক্ততা।

তার মাঝেও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীর লক্ষ্যকে স্থির রেখে রাজনৈতিক সাংগঠনিক শক্তিগুলো একটা সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্য বদ্ধ হবে, তেমন আশা করা কি অন্যায় হবে?

সকল রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশকে সামনে রেখে জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিবেচনায় সুস্পষ্ট রাজনৈতিক দর্শন ও সুনির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো উপদলসমূহ ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে অচিরেই জনগণকে জাগ্রত করে তোলা সম্ভব হবে।

সময় নষ্ট হলে এই সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে যাবে। কথায় বলে ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’।

  • লেখক সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী   

No comments:

Post a Comment