— ড. মোর্শেদ হাসান খান
দেশনায়ক তারেক রহমান |
১৯৮৯ সালে বগুড়া জেলা বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে জনাব তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলার শুরু। কালক্রমে তিনি এখন এই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারান্তরীণ দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনি বিগত কয়েকবছর যাবত বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুদূর লন্ডনে থেকেও তিনি দিবানিশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিএনপি’র কার্যক্রমকে সচল রাখছেন। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণ এবং সংগ্রামে জিয়া পরিবার এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি- এর রয়েছে গৌরবোজ্জল ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশে যতবারই সংকট ঘনীভূত হয়েছে, ততবারই আমরা জিয়া পরিবারকে এগিয়ে আসতে দেখেছি। এদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে এ পরিবার জাতির ঘোর সংকটকালে ত্রাতার ভূমিকায় আভির্ভূত হয়েছে। জনাব তারেক রহমান তার চেতনায় সেই উত্তরাধিকারই বহন করছেন।
জার্মান দার্শনিক কার্ল স্মিথ বলেছিলেন, Sovereign is a decision making power specially on exceptional moments, অর্থাৎ ক্রান্তিকালে ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতাই স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম মর্যাদা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী যখন তৎকালীন পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, জিয়া তখন ‘We Revolt’ বলে বিদ্রোহের সূচনা করেন। কেবল তাই নয়; তিনি ২৭শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিশেহারা জাতির সামনে আলোকবর্তিকা হিসেবে আভির্ভূত হন। সাহসী জিয়া জাতির ক্রান্তিলগ্নে ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমাদের ভূখণ্ডের সার্বভৌম মর্যাদা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। একাত্তরের মতই পঁচাত্তরের ৭ই নভেম্বর জাতীয় জীবনের আরেক দুঃসময়ে জিয়া কণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হলেন। জাতীয় সংকটকালীন মূহুর্তে মানুষ যেমন সাহসী উচ্চারণ শুনতে চায়, জিয়া সেই প্রত্যাশা পূরণ করলেন। তিনি সেদিন জাতিকে সকল আধিপত্যবাদি শক্তি ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বেরিয়ে আসার পথ বাতলে দিয়েছলেন। জিয়ার আহবানে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে একটি গণতান্ত্রিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সঙ্গী হতে অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। এভাবেই জিয়া এদেশের মানুষকে সাথে নিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়ার ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়ার জন্য আঘাত হানা হয়। জিয়ার শাহাদাতবরণের মাধ্যমে জাতি হয়ে পড়ে অভিভাবকশুণ্য। নতুন করে সংকটের ঘূর্ণাবর্তে পতিত হয় বাংলাদেশ। কিন্তু জাতির সেই সংকটে আলোর দিশারি হয়ে আবির্ভূত হন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জিয়ার রেখে যাওয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ঝাণ্ডা হাতে তুলে নিলেন, জিয়ার বাতলে যাওয়া পথ ধরেই জাতিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চললেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার সেই সংগ্রাম সাফল্যের মুখ দেখে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারি এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গৃহবধু বেগম খালেদা জিয়া গণমানুষের নেত্রীতে পরিণত হলেন। এদেশের আপামর জনতা ভালবেসে তাকে ভূষিত করলো ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধিতে। কালক্রমে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এই মহীরূহ এদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীকে পরিণত হলেন। মানুষের মাঝে তিনি ‘দেশনেত্রী’, ‘দেশমাতা’, ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামে খ্যাত হলেন। কিন্তু আধিপত্যবাদি শক্তির এদেশীয় দোসররা তাকে বারবারই আঘাত করেছে। আজ তিনি নব্য স্বৈরাচারের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রহসনের শিকার হয়ে কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দি। আর তার সাথে সাথে বন্দি হয়ে গিয়েছে এদেশের মানুষের সার্বভৌম মর্যাদাও। জাতীয় জীবনে পুনর্বার নেমে এসেছে এক ঘোরতর সংকট। মানুষের সর্বপ্রকারের মৌলিক অধিকারসমূহ আজ ভূলুণ্ঠিত। ভোটের অধিকারকে পদদলিত করে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গুম করে দিয়ে জবরদখল করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে আধিপত্যবাদি শক্তির এদেশীয় দোসররা।
কিন্তু জাতীয় জীবনে নেমে আসা এমন ঘোরতর অন্ধকারের মাঝে আবারো কাণ্ডারি হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন জিয়া পরিবারের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, দেশাত্ববোধ এবং দূর্বিনীত জাতীয়তাবাদী চেতনার উত্তরাধিকার বহনকারী জনাব তারেক রহমান। সুদূর লন্ডনে নির্বাসিত থেকেও তিনি দিবানিশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাধনায় রত রয়েছেন। জনাব তারেক রহমান ১৯৮৯ সালে বগুড়া জেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। কালক্রমে তিনি এদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষের নির্ভরতার প্রতীক এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের ধারক ও বাহক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি-এর সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ অলংকৃত করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম জনসমর্থনপুষ্ট এ দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
জনাব তারেক রহমান ‘তারুণ্য ও তৃণমূল’-কে উপজীব্য করে তার রাজনৈতিক পথচলার শুরু করেন। বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে জানার উদ্দেশ্যে তিনি মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন, প্রান্তিক মানুষের কথা শুনেছেন, সমস্যার স্বরূপ জেনেছেন, এবং সমাধানে করনীয় নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শহিদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়ন এবং উৎপাদনের রাজনীতিতেই তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন। তারেক রহমানের ভিশনারি রাজনীতির অন্যতম এক দৃষ্টান্ত হচ্ছে ‘তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন’। ২০০২ সালে তৃণমূল পর্যন্ত শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রাণশক্তিতে রূপান্তরের এক মহাযজ্ঞ নিয়ে তিনি বাংলাদেশের নানা প্রান্ত চষে বেড়ান। তিনি বিশ্বাস করেন, এদেশের তরুণ সমাজের কাছে দেশের সঠিক ইতিহাস, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাংলাদেশবাদি রাজনীতির বার্তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হলে একদিন এদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হবে। তার রাজনৈতিক ভাবনা ও কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যা ব্যাপকতর ভূমিকা রাখছে তা হলো জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। চিন্তাশীল, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জনাব তারেক রহমান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, একটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদের অনল জ্বেলে দিয়ে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা কিংবা উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সর্বপর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যারা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে, তারা তত দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। তাই সমবেত প্রচেষ্টার ধারণা থেকে তিনি আহবান জানালেন, ‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য মঞ্চে থাকুক; মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে নয়’।
তারেক রহমানের জন্ম একটি রাজনৈতিক পরিবারে। রাজনীতি তাই মিশে আছে তার রক্তের সাথে। তথাপি প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসার আগেই তিনি সামাজিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের আওতায় তিনি ‘কমল বীজ প্রকল্প’ ‘ছাগল পালন কর্মসূচি’, ‘অ্যাজমা কেয়ার এন্ড প্রিভেনশন সেন্টার’, ‘বৃত্তি প্রকল্প’, ‘বন্যা পুনর্বাসন কার্যক্রম’, ‘কমল পানি প্রকল্প’, ও ‘সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি’সহ বেশ কিছু কর্মসূচি ও প্রকল্প শুরু করেন। এ ছাড়া জাতীয় ও দলীয় বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করে। ঐ হেলথ ক্যাম্পগুলোয় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাসহ ওষুধ বিতরণ করা হয়। বর্তমানে বিদেশে চিকিৎসারত অবস্থায় থেকেও জনাব তারেক রহমান দেশের মানুষের কল্যাণে তার কর্মযজ্ঞ অব্যহত রাখছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে নিরন্তর উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। করোনা মহামারির সময়গুলোতে ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসামগ্রী, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎসাহী করণার্থে ‘বিজ্ঞান মেলা’- এর মত প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনে উপস্থিত থেকে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। এছাড়াও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আহত, নিহত ও গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এভাবেই জনাব তারেক রহমান রাজনীতিকে সেবায় পরিণত করেন। তার এই সেবামূলক রাজনৈতিক ভাবনা ও কর্মসূচি তাকে দেশব্যপী যতটা না রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত করেছে, তার চেয়ে বেশি পরিচিত করেছে সেবক হিসেবে।
কিন্তু তারেক রহমানের দেশপ্রেম, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান, অন্যের সেবাদাসে পরিণত না হওয়ার মানসিকতা এবং কল্যাণমুখী রাজনীতি আধিপত্যবাদি শক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সহ্য হয় নি। জিয়া পরিবারের বাংলাদেশবাদি রাজনীতি তাদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের এই ধারাকে প্রতিহত করার জন্য তারা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যহত রেখেছে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ধারণার প্রবর্তক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি খড়গহস্ত হয়। তারা বারবার আঘাত করেছে দেশনেত্রীকে, মনোবলে চিড় ধরানোর চেষ্টা করেছে। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গিয়ে আঘাত করতে সচেষ্ট হয়েছে। অবশেষে প্রহসনের মামলায় তাকে কারারুদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছে। চক্রান্তকারীদের এবারের লক্ষ্য তারেক রহমান। তাকে লক্ষ্য করে তাই চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। অবশ্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এ উপাখ্যান নতুন নয়। কায়েমি স্বার্থবাদি বিদেশি প্রভু ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের আশীর্বাদপুষ্ট ১/১১- এর সেনাসমর্থিত, সাংবিধানিকভাবে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নৃশংস প্রতিহিংসার শিকার হন তারেক রহমান। কোন প্রকার মামলা ছাড়াই ২০০৭ এর ৭ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। পর্যায়ক্রমে তারেক রহমানের নামে ১৩টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করার পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ডিটেনশনও দেয়া হয়। তাকে ৬ দফায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক নির্যাতনও চালানো হয়। চাপ প্রয়োগ করা হয় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য, রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি দেশের কথা, দেশের জনগণের কথা ভেবে তাদের কোন প্রস্তাবেই রাজি হন নি। ক্রমাগত নির্যাতনে তার স্বাস্থ্যের আরো অবনতি হতে থাকলে তার নিঃশর্ত মুক্তি লাভ ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে রাজপথে শুরু হয় উত্তাল আন্দোলন। টনক নড়ে ফ্যাসিবাদি সরকারের। তারা তারেক রহমানকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিতে রাজি হয়। কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী ও নির্ভীক তারেক রহমান নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অনড় থাকেন এবং এক পর্যায়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান উন্নত চিকিৎসার জন্য। বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।
এরপর থেকে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জনাব তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসারত রয়েছেন। তবে এ কারণে তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আসেনি। তিনি দেশ থেকে অনেক দূরে থেকেও নিয়মিত দেশ ও দলের খোঁজখবর রাখছেন। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে তিনি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকছেন। কর্মবীর তারেক রহমানের এই কর্মোদ্দীপনা ঠেকাতে প্রতিপক্ষ শক্তি নানারকম অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা নানারূপ মিথ্যা মামলা, প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে তার অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে চায়; তারা তাকে এদেশের জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু তার অফুরান প্রাণশক্তিকে রোধ করা যায় নি। সাম্প্রতিক করোনা মহামারীকালীন সময়ে তিনি ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে থাকছেন। এছাড়াও দেশের নানা সংকটে সুদূর লন্ডন থেকেও তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হচ্ছেন। তারেক রহমান নিজে স্বপ্ন দেখেন এবং দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সকল জুলুমের অবসান ঘটিয়ে এক সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের। গণতন্ত্র হরণকারি শক্তির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার এক দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে তার মাঝে। তাই তো তার কণ্ঠে আমরা দৃঢ় উচ্চারণ শুনি, ‘Take back Bangladesh’।
তারুণ্য আর তৃণমূলকে উপজীব্য করে যে রাজনীতির সূচনা করেছেন তারেক রহমান, সেটা ধ্বংস হবার নয়। কোন অর্বাচীন শক্তির নীল চোখ তাকে রুদ্ধ করতে পারে নি, কোন অপলাপ তার জনপ্রিয়তায় বাঁধ সাধতে পারে নি। তিনি আছেন, থাকবেন; উজ্জ্বল, দেদীপ্যমান, স্বমহিমায় ভাস্বর; লক্ষ-কোটি জাতীয়তাবাদী মনে সাহসের বাতিঘর হয়ে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের বরপুত্র তারেক রহমান আসবেন। সকল অনিশ্চয়তা, কণ্টকাকীর্ণ, বন্ধুর পথের গতিরোধক ভেঙে তিনি আবার মঞ্চে ফিরবেন; এই চিরসবুজ বাংলার প্রান্তরসমূহ আবারো তার পদধ্বনিতে মুখরিত হবেই! সব অন্ধকার, সব কলুষতা, সমস্ত মলীনতার অবসান হবেই।
— লেখক শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহসম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।