Search

Friday, May 29, 2020

রাষ্ট্র অসুখে, সরকারের ভেতরে অস্থিরতা

মতিউর রহমান চৌধুরী


জীবন আর জীবিকা। এ দু’টার মধ্যে লড়াই আদিকাল থেকেই। আখেরে জীবন জিতেছে। জীবিকা হেরে গেছে। কারণ জীবন না থাকলে জীবিকা অর্থহীন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে কি দেখতে পাচ্ছি? ভয়ঙ্কর ভাইরাসের থাবা যখন তুঙ্গে তখনই আমরা সব দরজা, জানালা খুলে দিচ্ছি। কারণ নাকি একটাই। মানুষ জীবনকে তুচ্ছ করে জীবিকার লড়াই চালিয়ে যেতে চায়।

          মতিউর রহমান চৌধুরী

এটা ঠিক মানুষ আর কতদিন পেটে গামছা বেঁধে থাকবে। সে ঘরে বসে ছটফট করছে। বাঁচার তাগিদে সে দরজা, জানালা খুলে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা নতুন মুসিবত। অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। চারদিকে শুধু আফসোস আর আফসোস। কি হবে, কি হবে রব। মন খারাপের অসুখে পেয়ে গেছে অনেককে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন দীর্ঘদিন বন্দি থাকলে এমনটাই হবে। এর একমাত্র দাওয়াই কি দরজা ভেঙে বের হয়ে যাওয়া! তাই যদি হয় তাহলে রেখে ঢেকে কেন? এক ঘোষণায় বলে দিলেই হয়। বাংলাদেশ চলবে তার মতো করে। এই যুক্তি মন্দ নয়। কিন্তু আমরা যখন সকাল বিকাল সিদ্ধান্তের পরিবর্তন দেখি তখনই মনে হয় রাষ্ট্রকে অসুখে পেয়ে বসেছে। অস্থিরতাও দেখছি সরকারে। ২৪ ঘণ্টায় কতগুলো সিদ্ধান্ত দেখলাম! শিরোনাম এলো আর ছুটি বাড়বে না। বলা হলো সবকিছু স্বাভাবিক হলেও গণপরিবহন চলবে না। দু’ঘণ্টা পর আরেক ফরমান। সীমিত আকারে গণপরিবহনও চলবে। গণপরিবহন চলছে সীমিতভাবে এটা নিশ্চিত করবে কে? এই শক্তি কি আমাদের আছে? হুড়মুড় করে সব পরিবহন রাস্তায় নেমে পড়বে। তখন নিয়ন্ত্রণ করবে কে? বাস্তবে এর বিপরীতটাই ঘটবে। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। ক’দিন আগেই তো আমরা দেখলাম নতুন অ্যাপের জন্ম হচ্ছে। আপনি কোথায় যাবেন, কেন যাবেন তা জানাতে হবে অ্যাপের মাধ্যমে। সে সিদ্ধান্তও নিমিষেই হারিয়ে গেল। ২৪ ঘণ্টায় আরেকটা সিদ্ধান্ত হলো। এখন থেকে সব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা হবে। আচ্ছা বলুনতো কয়টা হাসপাতালে এই সুবিধা রয়েছে? যেখানে শয্যাই নেই সেখানে কোভিড রোগীর চিকিৎসা হবে কীভাবে? করোনা রোগীদের বেশিরভাগের জন্য ভেন্টিলেশন অপরিহার্য। হাসপাতালগুলোর চেহারা আমাদের সামনে ভাসছে। পাঁচ তারকা হাসপাতাল ছেড়ে কেন সিএমএইচ-এ যাওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা? স্বীকার করতেই হবে স্বাস্থ্যসেবা একদম নুইয়ে পড়েছে। পড়ারই কথা। কারণ স্বাস্থ্যসেবা বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত। দুর্নীতি আর লুটপাটে একদম কাহিল। এক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিবার যেভাবে দুর্নীতি করেছে তাতো দেশি বিদেশি মিডিয়ায় এসেছে। কোনো তদন্ত হয়নি। কারণ অজ্ঞাত। কেউ জানার চেষ্টাও করে না। মিডিয়াও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অন্য দেশ খুলে দিয়েছে তাই আমি ঘরে বসে থাকব কেন? এমন যুক্তিও দেখানো হচ্ছে। অন্য দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতো আমাদের মতো নয়। সবাই জানে করোনা ভাইরাস যখন পিকে তখন আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো অতি উন্নত ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছিল। আমাদের এখানে স্ববিরোধিতা ভরপুর। একদিকে আমরা সব ওপেন করে দিচ্ছি।

অন্যদিকে সব হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে পরিণত করছি। তার মানে কি? আমরা কি ধরে নিচ্ছি যা হবার হবে দেখা যাক না! অনেক রাষ্ট্রনায়ক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে গিয়ে অনেক মূল্য দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে ব্রাজিলের কথা বলা যায়। দেশটির প্রেসিডেন্টের একগুয়েমি সিদ্ধান্তের কারণে দু’জন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছে। সংক্রমণের দিক থেকে দেশটির স্থান এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই।  প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একজনও বলেননি এই পিকের সময় দরজা খুলে দিতে। বরং তারা প্রতিদিনই মিডিয়ার সামনে এসে বলছেন কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। তারা কারফিউ দেয়ার পরামর্শও দিয়ে চলেছেন। কে শুনে কার কথা! শুধু শহরে নয়। গ্রামেও পৌঁছেছে অদৃশ্য এই ভাইরাসটি। দলে দলে গ্রামে যাবার মিছিল না থামাতে পারাই কি এর মূল কারণ? যে যাই বলেন মৃত্যুভয় কার নেই! নিজের মাকে যেখানে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না সেখানে আমরা বলছি জীবন তুচ্ছ। জীবিকার লড়াইয়ে শামিল হোন। মানছি আবেগ একটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। তাই মানুষের আবেগ কঠিন বাস্তবকেও শুষে নেয়। অনেকে আমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। এই কঠিন সময়ে বলবো করোনার সংক্রমণের গ্রাফ যেখানে ঊর্ধ্বমুখী সেখানে তাড়াহুড়ো করে সব প্রত্যাহার করে নেয়াটা হবে আত্মঘাতী। সবই যখন প্রত্যাহার হয়ে গেল তখন আর স্বাস্থ্য বুলেটিনের প্রয়োজন কি? এটাও প্রত্যাহার হয়ে যাক। মানুষ আর জানবে না। মনও খারাপ করবে না। যদিও এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই বিস্তর কানাঘুষা। অনেকে এখানে প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদকে স্মরণ করেন। ফয়েজ আহমেদ লিখেছিলেন- সত্যবাবু মারা গেছেন। যাই হোক, সব সত্য যে সত্য নয় এটা আমরা অনেকদিন আগেই রপ্ত করেছি। পবিত্র সুরা আল-বাকারার একটি আয়াত এখানে উদ্ধৃত করে লেখাটা শেষ করতে চাই।

আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না, জেনেশুনে সত্যকে গোপন করো না।’

শেষ কথা: কামনা করছি যেন দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন দিতে না হয়।

  • কার্টসি - মানবজমিন/ মে ২৮, ২০২০

Thursday, May 21, 2020

হতদরিদ্রদের ঈদ উপহারেও কালোথাবা

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় এ দেশের ৫০ লাখ অসচ্ছল মানুষ একটা আশার আলো দেখা শুরু করেছিল। তারা ভেবেছিল, যাক ঈদের আগে আমরা হয়তো আড়াই হাজার টাকা পেতে যাচ্ছি। এই করোনাকালে যখন খেয়ে বেঁচে থাকা দায়, সন্তানের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দেওয়া অনেকের জন্যই অসম্ভব, তখন একসঙ্গে আড়াই হাজার টাকা হাতে পাওয়া তাদের জন্য চাট্টিখানি কথা নয়!

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ
এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাইন ধরে দশ টাকা সের দরে চাল কিনে কোনো মতে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই সাশ্রয়ী দরে চাল কেনার সুযোগটাও তাদের ভাগ্যে সইল না। সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করল সারা দেশে চাল চুরির খবর। দরিদ্র মানুষের প্রাপ্য চাল জায়গা করে নিল সরকারদলীয় নেতাদের গুদামে। মণে মণে, টনে টনে চাল। সরকারপ্রধান কত রকম হুঁশিয়ারি দিলেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ত্রাণের ‘অনিয়মের’ সঙ্গে যারা যুক্ত হবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। র‌্যাব, পুলিশ হানা দিল অবৈধভাবে সরকারি চাল মজুদ করা গুদামে। কাউকে কাউকে গ্রেপ্তারও করা হলো। কিন্তু যে চোর ধর্মের কথাই শোনে না, সে কি আর হুঁশিয়ারিতে ভয় পায়! জনপ্রতিনিধিদের এই চাল চুরির খবর দেশীয় গণমাধ্যম ছাড়িয়ে জায়গা করে নিল আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট লিখে দিল, ‘বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলার টাকা যাচ্ছে দুর্নীতিবাজদের পকেটে।’ করোনাকালের দুর্যোগে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের দেওয়া ত্রাণ মেরে দিচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেল যে ১০ টাকা সের চাল বিক্রিই বন্ধ করে দিতে হলো সরকারকে। বলা হলো, ত্রাণ দেওয়ার নতুন পদ্ধতি খুঁজছেন তারা। এতে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেল যে সরকারের চেয়ে চাল চোরদের জোর বেশি! গরিব মানুষ পড়ল মহাবিপদে। দেশজুড়ে করোনার বিস্তাররোধে চলছে লকডাউন। অনেকেরই কাজ নেই। হাতে টাকা নেই। ত্রাণের দেখা নেই। এমন অনেক নেই-এর সঙ্গে যুক্ত হলো ‘দশ টাকা সের চাল নেই’।

এই দুশ্চিন্তাটা কিছুটা হলেও দূর হলো প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণায়। কিন্তু ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এসে তাদের মাথায় ভর করল আবার দুশ্চিন্তা। তারা জেনে গেলেন, ৫০ লাখের সবাই টাকাটা এখনই পাচ্ছেন না। জানা গেল, তালিকার ৫০ লাখের মধ্যে প্রম দফায় টিকেছে মাত্র সাড়ে সাত লাখ হতদরিদ্রের নাম! নানা অসংগতি থাকায় শুরুতেই ৫০ লাখ থেকে ঝরে পড়েছে ১০ লাখ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, শুধু এই ১০ লাখই নয়, আরও বাতিল হবে। কারণ তাদের নাম, পেশা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রে অসংগতি রয়েছে।

কিন্তু ৫০ লাখের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষের ক্ষেত্রে এই অসংগতিটা কেন হলো? এর যথাযথ উত্তর সংগত কারণেই দেওয়া কঠিন। তবে এর উত্তর মিলতে পারে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু শিরোনাম থেকেই। দুস্থদের থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে (বাংলা ট্রিবিউন, ১৭ মে ২০২০), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনিটরিংয়ে নগদ সহায়তার দুর্নীতি ধরা পড়ে (সময় টিভি, ১৭ মে ২০২০), নগদ টাকায় নয়ছয় (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৭ মে ২০২০), দুস্থের টাকায় সচ্ছলের ভাগ (দেশ রূপান্তর, ১৭ মে ২০২০), প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা তালিকায় অনিয়মের তদন্ত শুরু (দি ডেইলি স্টার, ১৭ মে ২০২০), প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা তালিকায় এক মোবাইল নম্বর ২০০ বার (দি ডেইলি স্টার, ১৬ মে ২০২০), দুস্থদের দেওয়া সরকারি টাকার নামের তালিকায় শিক্ষকের স্ত্রী! (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ১৭ মে ২০২০), ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তা তালিকায় ৪ মোবাইল নম্বর ৩০৬ বার! (যুগান্তর, ১৬ মে ২০২০), ২৫০০ টাকার তালিকায় নাম গরিবের, নম্বর মেম্বারের (সময় টিভি, ১৬ মে ২০২০), ৯৯ নামের পাশে ১ জনের ফোন নম্বর (কালের কণ্ঠ, ১৬ মে ২০২০), কোটিপতিরাও ওএমএসের তালিকায় (দি ডেইলি স্টার, ১৪ মে ২০২০), ৫৩ দুস্থের নামের পাশে ইউপি চেয়ারম্যানের পিএসের মোবাইল নম্বর ( ইত্তেফাক, ১৬ মে ২০২০), ৪০ জনের নামের পাশে এক মেম্বারের মোবাইল নম্বর (কালের কণ্ঠ, ১৫ মে ২০২০)। শিরোনামের আধিক্য দিয়ে আর পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানো ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি, যাকে সরকার বলছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার, তাতে যে কী কা- ঘটেছে আর কেন ৫০ লাখের তালিকা থেকে ১০ লাখের বেশি বাদ দিতে হয়েছে তা বোঝার জন্য এই কয়টা শিরোনামই কি যথেষ্ট নয়?

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎপরতা ও তালিকা থেকে ১০ লাখের বেশি অর্থাৎ ২০ শতাংশের বেশি বাতিল করা দেখে অনুমান করা যায় যে, এ নগদ সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সত্যিই আন্তরিক। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন, চালচুরির যে অপবাদ দলীয় নেতাদের গায়ে লেগেছে সেই একই সিল যেন এবার আর না পড়ে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ম্যাচ না করলে সে নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। ১০ লাখ বাদ যাওয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে, যন্ত্র তার কাজটি ঠিক মতোই করেছে। এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আমাদের বুঝ দিচ্ছেন যে এই নগদ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কেউ অনিয়ম করলে সেটা এভাবেই বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং যা হচ্ছে তা স্বচ্ছতার সঙ্গেই হচ্ছে।

আসলেই কী বিষয়টা এত সরল? একজন জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের লোক তার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে শত শত নাম জুড়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন সেটা সম্ভব হয়নি, মানলাম। কিন্তু যে চেয়ারম্যান, মেম্বার বা প্রশাসনের ব্যক্তিরা এমন ভয়াবহ দুর্যোগকালেও এই জালিয়াতি করতে পারেন তারা যে জঘন্য চোর সেটা তো প্রমাণিত। তাহলে সেই চোরদের দেওয়া বাকি তালিকাটি যে সঠিক হয়েছে তার নিশ্চয়তা কী? ধরা যাক, তারা এই তালিকায় তাদের পরিবারের সদস্য, সচ্ছল আত্মীয়-পরিজন ও দলীয় লোকদের নাম ঢোকালেন যারা এ নগদ অর্থ সহায়তার হকদার নয়। তাদের নাম, মোবাইল নম্বর, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সবই ঠিক আছে। একশ’তে একশ’ ম্যাচ করেছে। এই দুর্নীতি কি ধরতে পারবে কোনো প্রযুক্তি? সংবাদমাধ্যমে তো এমন রিপোর্ট এসেছে যাতে জানা গেছে সরকারি দলের কোটিপতি নেতারাও ওএমএসের তালিকায় আছেন। নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়ার জন্য নাম ঢোকাতে হতদরিদ্রদের থেকে চেয়ারম্যান টাকা নিয়েছেন বলেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই দুর্নীতি কি ধরার সাধ্য আছে কোনো প্রযুক্তির?

এ দুর্নীতি রোধ করতে পারত যে পদ্ধতি তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাম জোট থেকেও অনুরূপ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এরা সবাই দাবি করেছিলেন, করোনা মোকাবিলার জন্য একটা জাতীয় কমিটি গঠনের। কিন্তু সরকার তা নাকচ করে দেয়। সে প্রস্তাব নাকচ না করে যদি সব প্রধান রাজনৈতিক দলের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করা হতো, তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। সে ক্ষেত্রে একটা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ তৈরি হতো। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজমান তাতে কোনো সুবিধা-বণ্টনের তালিকা সরকারি দলের লোকদের করতে দিলে তাতে যে ভিনড়বমতের কোনো মানুষের নাম ঠাঁই পায় না এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেটা জেনেও যখন তালিকা করার দায়িত্বটা সরকারি দলের নেতা ও প্রশাসনের লোকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তখন যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

আগেই বলেছি, নগদ অর্থ সহায়তা দলীয় লোকরা পেলেও তা যেন হতদরিদ্ররা পায় সে ইচ্ছে হয়তো সরকারের ছিল। কিন্তু সে নির্দেশ পালনে সততার পরিচয় দেননি সরকারি দলের তৃণমূলের নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত যে অনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে তার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন রাষ্ট্রকে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে সৃষ্ট সেই জনপ্রতিনিধিরা এখন এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে সরকার প্রধানের কোনো আদেশ, নির্দেশ, ধমকও কানে তোলার প্রয়োজন বোধ করেন না।

  • কার্টসি - দেশ রূপান্তর/ মে ২১, ২০২০ 

Tuesday, May 19, 2020

করোনাভাইরাস কার জন্য আশীর্বাদ

আলী রীয়াজ


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি জরুরি সেবাদানে নতুন নিয়োগ পাওয়া দুই হাজার চিকিৎসকের উদ্দেশে বলেন, কোভিড-১৯ যদি না আসত, তাহলে আপনাদের হয়তো নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হতো না। কাজেই কোভিড আপনাদের জন্য একটি আশীর্বাদ হিসেবেই এসেছে…কোভিডের কারণেই আপনারা এ নিয়োগ পেয়েছেন (বিবিসি বাংলা, ১৩ মে ২০২০)।

সরকারি চাকরি পাওয়া বাংলাদেশে নিশ্চয়ই ভাগ্যের ব্যাপার। প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের হার কমেছে (প্রথম আলো, ৫ মার্চ ২০২০)। ফলে সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তরুণদের জন্য উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে বিসিএস। এ রকম সময়ে সরকারি চাকরি ‘ভাগ্যের বিষয়’। তদুপরি এই চিকিৎসকেরা অনেক দিন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত চাকরি পেয়েছেন। সরকার যেন তাঁদের প্রতি দয়া করেছে, এমন একটা মানসিকতা দেখতে পাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথার মধ্যে। তাঁর কথায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিমুখী বাগাড়ম্বরের অসারতা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের মুখে কেন গোটা জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা এমনভাবে ভেঙে পড়ল, তার উত্তরের খানিকটা এখানেই পাওয়া যায়।

জাহিদ মালেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে না হোক, গণমাধ্যমের ভোক্তা হিসেবে এটা তো জানতেই পারতেন যে সারা বিশ্বে যে তিন লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে মারা গেছেন, যাঁরা এতে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মরণ লড়াই করছেন, যাঁরা এর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচেছেন, তাঁরা বা তাঁদের নিকটজনদের জন্য এই ভাইরাস আশীর্বাদ নয়। দেশের ভেতরের অবস্থা যদি বিবেচনা করেন, তবে সেখানেও একই কথা। প্রকৃতপক্ষে যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মহামারির সময়ে এই পেশায় যোগ দিলেন, তাঁরাই আসলে ভাইরাস-আক্রান্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলেন।

সরকারের বলা উচিত ছিল, এই দুর্দিনে আপনারা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলেন। দেশে দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে, সম্মান জানানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভঙ্গুর জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার দায় তুলে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের কাঁধে। সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের অভাব, সমন্বয়হীনতা—সবকিছুর দায় এখন চিকিৎসকদের কাঁধেই। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে মালিকেরা কী করবেন, সেদিকে তাকিয়ে থেকেছে সরকার। অথচ আইন আছে, যা ব্যবহার করে সরকার এই হাসপাতালগুলোকে রোগীদের সেবাদানে বাধ্য করতে পারত। এগুলো নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মাথাব্যথা নেই।

করোনাভাইরাস অবশ্যই কারও কারও জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। ত্রাণ বিতরণের শুরু থেকেই তাদের আমরা দেখতে পেয়েছি। ত্রাণ চুরিতে মেতে উঠেছিলেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে একসময় সরকার ওএমএসের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। তা আবার চালু হয়েছে, ত্রাণের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। কিন্তু অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে, তা সবার জানা। বলা হয়েছে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, রিকশাচালক, চায়ের দোকানিসহ হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা কোনো সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাঁদের জন্য হচ্ছে বিশেষ ওএমএস সুবিধা। কিন্তু ওএমএস কার্ডের তালিকায় আওয়ামী লীগের ধনীদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে; কিছু ঘটনা জানা গেছে আর অনেক জানা যায়নি বলাই নিরাপদ।

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি নগদ অর্থসহায়তা কর্মসূচির কথা বলা হচ্ছিল। অর্থনীতিবিদ, সামাজিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তরফে বলা হয়েছে যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন বাঁচানো এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পথ হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলে তাতে এর অনুপস্থিতি অনেককেই বিস্মিত করে। বারবার এর তাগিদ দেওয়া হয়। অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘১ কোটি বিত্তহীনের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিন।’ (প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল ২০২০)। সরকার দেরিতে হলেও সেই উদ্যোগ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রী ১৪ মে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

তার পরের দুই দিনের গণমাধ্যমে এ নিয়ে যা খবর বেরিয়েছে, তার কয়েকটি শিরোনামই যথেষ্ট, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার নিতে ৪টি মোবাইল নম্বরে ৩০৬ ব্যক্তির নাম’; (যমুনা টিভি, ১৬ মে ২০২০); ‘সরকারি সহায়তা তালিকায় ২০০ জনের নামের পাশে একটি মোবাইল নম্বর!’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৬ মে ২০২০)। ‘এক মোবাইল নম্বরেই ৯৯ জনের নাম’ (সিলেট টুডে ২৪, ১৬ মে ২০২০)। এই তালিকা অল্প কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। এসব ব্যক্তির জন্য করোনাভাইরাস অবশ্যই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করতে চাই, অর্থনীতির আসন্ন সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বাজেট সহযোগিতা হিসেবে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহ করবে। মাথাপিছু আড়াই হাজার টাকার অর্থ বিতরণে এই অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির পরে এই প্রশ্ন কি অবান্তর, সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহির কী ব্যবস্থা হবে?

ত্রাণ বা নগদ অর্থ লুটপাটের এই ঘটনাই শুধু আশীর্বাদের লক্ষণ নয়; বাংলা প্রবাদ ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’ তো আর এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি। ভালো করে তাকালে দেখা যাবে যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর ক্ষেত্রেও আছে নানা ফাঁকফোকর। একসময় বলা হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চলতি মূলধন হিসাবে বরাদ্দকৃত ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে ঋণখেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান সুবিধা পাবে না। এ–ও বলা হয়েছিল যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ মন্দ হিসেবে শ্রেণিবিন্যস্ত হওয়ার পর ইতিমধ্যে যদি তিনবারের বেশি নবায়ন করা হয়ে থাকে, তবে ওই প্রতিষ্ঠানও এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পাবে না (যুগান্তর, ১৩ এপ্রিল ২০২০)। কিন্তু ১১ মে জানা গেছে, ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় শিল্প খাতের জন্য সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ করেছে, তাতে খেলাপিদের ঋণ দেওয়ার যে বিধিনিষেধ ছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে।’ (বিডিনিউজ২৪, ১১ মে ২০২০)। ঋণখেলাপিদের জন্য করোনাভাইরাস কি আশীর্বাদ হয়ে উঠল? এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ঋণখেলাপিরাই তো প্রণোদনার সব অর্থ খেয়ে ফেলবে। অন্যরা বা ভালো উদ্যোক্তারা কিছুই পাবে না। এতে ব্যাংকগুলো আরও সংকটে পড়বে। তাদের জন্য অশনিসংকেত।’(বিডিনিউজ ২৪, ১১ মে ২০২০)।

এই দুর্দিনে যাঁরা লুণ্ঠন করতে পারছেন শুধু তাঁদের জন্যই নয়, করোনাভাইরাস আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে কিছু কিছু সরকার ও রাষ্ট্রের জন্যও। দেশে দেশে নাগরিক অধিকার সীমিত করা হচ্ছে; এমন আইন তৈরি হচ্ছে যা মানুষের কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা চাপিয়ে দিচ্ছেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ।

বাংলাদেশে এই ধরনের আইন নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে তা নয়, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খড়্গ আগে থেকেই আছে। তার ব্যবহারে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা যে সামান্য পিছপা নন তা সহজেই দৃশ্যমান। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আটক হচ্ছেন, মামলা হচ্ছে; অভিযোগ ‘গুজব’ ছড়ানোর কিংবা ‘ষড়যন্ত্রের’, নিদেনপক্ষে ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ‘মানহানিকর মন্তব্য’ করার। বিচারবহির্ভূত ব্যবস্থা তো আছেই। ভিন্নমত দমন ও সমালোচকদের শায়েস্তার এই চর্চা গত কয়েক বছরের, এখন করোনাভাইরাস হয়ে উঠেছে অজুহাত। নাগরিকদের ওপরে সরকারের নজরদারি বেড়েছে; কিন্তু নাগরিকেরা সরকারের ওপর নজরদারি করলে, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি চাইলেই নেমে আসছে খড়্গ। করোনাভাইরাস কারও কারও জন্য সত্যিই মনে হয় আশীর্বাদ হিসেবে হাজির হয়েছে।

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো

  • কার্টসি - প্রথম আলো/ মে ১৯, ২০২০ 

Saturday, May 16, 2020

সরকারের দ্বিমুখী নীতি

শহীদুল্লাহ ফরায়জী


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একই ধরনের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের নীতি অনুসরণ করছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর মেয়রসহ কাউন্সিলরদের কমপক্ষে ১০০ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। কারণ বিদ্যমান সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ না হলে পরবর্তী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ আইনত নিষিদ্ধ। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এ বলা হয়েছে, কর্পোরেশনের মেয়াদ উহা ঘটিত হইবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হইবার তারিখ হইতে পাঁচ বছর হইবে। ফলে নির্বাচন যখনই হোক কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া ছাড়া দায়িত্ব গ্রহণের কোন আইন নেই।

অনুরুপভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই ধরনের সাংবিধানিক বিধান রয়েছে। কোন একটি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী সংসদ দায়িত্ব নিতে পারবে না। কারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ হ্রাস করার কোন সাংবিধানিক এখতিয়ার সরকারের নেই।

আমাদের সংবিধানে সংসদ ভাঙ্গার দুইটি বিধান রয়েছে

১. রাষ্ট্রপতি সংসদ ভাঙিয়া দিলে, ২. প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবে।
কিন্ত আমাদের নবম সংসদ ও দশম সংসদ কোনটাই রাষ্ট্রপতি ভেঙ্গে দেননি সুতরাং নবম এবং দশম সংসদকে অবশ্যই পাঁচ বছর সম্পন্ন করার কথা। সংসদের মেয়াদ একদিনের জন্যও হ্রাস করা যায়না সাংবিধানিক বিধিনিষেধের কারণে। এটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২(৩) নিশ্চিত করেছে। ৭২(৩)এ বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙ্গিয়া না দিয়ে থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবে:”

আমাদের সংবিধানে সংসদ নির্বাচনের দুটি প্রক্রিয়া অনুসরণের নির্দেশনা আছে। সংবিধানের ১২৩ এর (৩) বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নববই দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপ-দফায় উল্লেখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরুপে কার্যভার ভার গ্রহণ করিবেন না।

নবম এবং দশম সংসদ নির্বাচন ভেঙ্গে যাবার পূর্ববর্তী ৯০দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংবিধান একটি শর্ত যুক্ত করেছে। শর্তটি হচ্ছ কোনক্রমেই মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সংসদের সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন হতে পারবে সাংবিধানিক শর্তে। সুতরাং শর্ত লঙ্ঘনের এখতিয়ার কারো নেই। কিন্তু নবম এবং দশম সংসদের বেলায় সংসদের মেয়াদ থাকা অবস্থায় পরবর্তী সংসদ শপথ নিয়েছে। সংবিধান যেটাকে শর্ত যুক্ত করেছে সরকার সেটাকে করেছে শর্ত শূন্য। এটা সংবিধানের সুষ্পষ্ট লংঘন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর নির্বাচিত মেয়রগণ যদি ১০০ দিন অপেক্ষা করে কার্যভার গ্রহণ করতে হয়,সেখানে জাতীয়ভাবে অধিকতর গুরুত্ব পূর্ণ সংসদ নির্বাচনের পর কী ভাবে নবনির্বাচিত সদস্যগণ পূর্ববর্তী সংসদের মেয়াদপূর্তির পূর্বেই কার্যভার গ্রহণ করেন।

সরকার ক্ষমতা তৃষ্ণার কারণেই সংবিধান লঙ্ঘন করছে। এই প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশন বা অন্য কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান উত্থাপনই করছে না।

এখানে দুই ক্ষেত্রেই বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা থাকায় উভয় ক্ষেত্রে একই ধরনের আচরণ করতে হবে। রাষ্ট্রের আচরণ হবে ন্যায় সঙ্গত, কোনক্রমেই খেয়াল খুশি মতো নয়। একই ধরনের আইনের দুই ধরনের প্রয়োগ করা যায় না। ভুল কখনো বৈধতা সৃষ্টি করতে পারে না।

সংসদ সদস্যদের সংবিধান লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধে আমার প্রস্তাবনা হলো : সংবিধানের ১২৩(৩) সংশোধন করা। মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী আনয়ন করা। তাহলে এক সংসদের মেয়াদ থাকা অবস্থায় অন্য সংসদের শপথ নেয়ার কোনো প্রশ্ন থাকবে না, সরকারের ক্ষমতার তৃষ্ণা দ্রুত পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় থাকবে না।

আমাদের আইনের শাসন, ভোটাধিকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতকিছুইতো গেল, অন্তত চক্ষুলজ্জাটুকু থাক।

  • কার্টসি - মানবজমিন/ মে ১৬, ২০২০ 

এই মৃত্যুর দায় কার

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ


‘বাবার আইসিইউ সাপোর্টটা খুব দরকার ছিল, কিন্তু তা পাওয়া যায়নি।  বাবার চিকিৎসাই হলো না, তিনি মারা গেলেন। আমি ডাক্তার হয়েও কিছু করতে পারলাম না।’ এই আক্ষেপ একজন সন্তানের। একজন চিকিৎসক সন্তান মুমূর্ষু বাবাকে নিয়ে তার চেনাজানা আটটি হাসপাতালে ঘুরেও ব্যর্থ হয়েছেন ভর্তি করাতে। শেষ পর্যন্ত ‘বিশেষ তদবিরে’ কভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেও সেখানে পাননি আইসিইউ সাপোর্ট। সেখানেই মৃত্যু হয় কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ডাক্তার সুস্মিতার বাবা অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারের। আটটি হাসপাতালই কভিড টেস্ট করতে হবে অথবা আইসিইউ নেই জানিয়ে ফেরত দিয়েছে তাকে। এর মধ্যে এমন হাসপাতালও আছে যেখানে আগে চাকরি করেছেন ডাক্তার সুস্মিতা। সে হাসপাতালের পরিচিতজনরাও সদয় হননি তার প্রতি। এমনকি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরে দুদিনেও করা হয়নি তার বাবার সেই কাক্সিক্ষত করোনাভাইরাস শনাক্তের টেস্ট, যা ছিল না বলে আটটি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে। এমনকি মৃত্যুর পরে ডাক্তার সুস্মিতার অনুরোধ সত্ত্বেও করা হয়নি কভিড টেস্ট। সেই আক্ষেপ জানিয়ে সুস্মিতা বলেছেন, ‘আমি আমার বাবাকে নিয়ে সাফার করেছি, এটা নিয়ে আমি কথা বলব। বিশেষ করে নরমাল যারা পেশেন্ট, কভিড-১৯ না, আমার বাবার মতো কিডনি পেশেন্ট, তারা কী করবেন, তাদের জন্য কী করছেন? কারণ আমি যে হাসপাতালেই গিয়েছি সবাই বলেছে, টেস্ট (রিপোর্ট) আনেন। আমি টেস্টটা কোথায় করাব?

               সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

আমি টেস্টটা কোথায় করাব- এই প্রশ্নের সুরাহা এখনো দিতে পারেনি কর্র্তৃপক্ষ। দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ডাক্তার সুস্মিতার মতো অসংখ্য মানুষের এই প্রশ্নের উত্তর এখনো দিতে পারেনি সরকার। এমনিতেই আমাদের আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম টেস্ট হচ্ছে বাংলাদেশে। ১৩ মে পর্যন্ত প্রতি মিলিয়নে (দশ লাখে) ভারতে ১ হাজার ২৭৫, পাকিস্তানে ১ হাজার ৩৮৫, শ্রীলঙ্কায় ১ হাজার ৭৫৯, নেপালে ২ হাজার ৬২৩, ভুটানে ১৫ হাজার ৭৬৩, মালদ্বীপে ২১ হাজার ৭৮৪টি টেস্ট হয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতি মিলিয়নে টেস্ট হয়েছে মাত্র ৮৩০টি। ওই সব দেশ যদি করোনা টেস্টের কিট পেতে পারে তবে বাংলাদেশ কেন পায় না?

করোনা টেস্ট কম হওয়াতে করোনা বিস্তার রোধ করা যেমন দুরূহ হয়ে পড়ছে, তেমনি এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া রোগীরা। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা এর যে কোনো একটি উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাদের পরিণতি যে কী হয় তা স্পষ্ট হয়েছে অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারের আট হাসপাতালে ঘুরে নবম হাসপাতালে গিয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায়। তার মৃত্যুর পরে অনেকেই এই প্রশ্নটি তুলেছেন যে, সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের মতো প্রিভিলেজড বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তির যদি এই রকম পরিস্থিতিতে পড়ে মারা যেতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কী ঘটছে এই দেশে?

অন্যদের কী অবস্থা হয় তার দুয়েকটা রিপোর্টও যে সংবাদমাধ্যমে আসছে না এমন নয়। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষ বলে হয়তো আলোচনায় আসেন কম। কারণ আমরা অসাধারণদের নিয়ে আলোচনা করতেই বেশি ভালোবাসি। ১১ মে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে, ‘তিন ঘণ্টা হাসপাতালে ঘুরে মারা গেল ছেলে, খবর শুনে বাবারও মৃত্যু’। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২৪ বছরের যুবক রিমন সাউদ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাত ৩টায় নিজেদের গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে কেউ ভর্তি না নেওয়ায় পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ভোর ৬টার দিকে সেখানেই মারা যান রিমন। বাড়ির দোতলা থেকে হেঁটে নেমে গাড়িতে উঠে হাসপাতালে আসা ছেলের মৃত্যুর খবরটা সইতে পারেননি বাবা। তাই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বাবাও। এই খবর পড়লে বা শুনলে কার না বুকে ব্যথা হয়! কিন্তু এমন খবর প্রায় প্রতিদিনই শুনতে বা পড়তে হচ্ছে আমাদের।

দৈনিক ভোরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার আসলাম রহমানও করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন বলে আক্ষেপ করেছেন তার সহকর্মীরা। যদিও তার চূড়ান্ত রিপোর্টে জানা যায় তিনি কভিড আক্রান্ত ছিলেন না। যদিও এই ধরনের রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন।

এমন সাসপেক্টেড কভিড বা যাদের কভিডের মতো উপসর্গ আছে তারাই বেশি বিপদগ্রস্ত। মৃত্যুর হারও তাদের মধ্যেই বেশি। সংবাদমাধ্যমে আসা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই ২ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত ১০ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১১৯ জন। এদের মধ্যে মাত্র ১১ জনকে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০৮ জনই করোনা সাসপেক্ট! অর্থাৎ তারা করোনা কি না তা নির্ধারণই করা হয়নি। শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরি করা ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মার্চ থেকে ৯ মে পর্যন্ত সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৯২৯ জন (ঢাকা ট্রিবিউন, ১২ মে ২০২০)।

হাতপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে এই যে মৃত্যু হচ্ছে তাতে অনেকেরই রাগটা গিয়ে পড়ছে চিকিৎসকদের ওপর। তারা হয়তো তলিয়ে দেখেন না যে, এর পেছনে চিকিৎসকদের দায় কতটা আর ব্যবস্থাপনার ঘাটতি কতটা। সরকার যদি ঢাকা মেডিকেলের মতো সব সরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীদের ভর্তির সঙ্গে ভিন্ন ফ্লোরে আলাদা করে কভিড সাসপেক্ট রোগীদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিত আর তা মিডিয়ায় প্রচার চালানো হতো, তাহলে হয়তো কভিড উপসর্গ নিয়ে রোগীরা সব হাসপাতালে ছুটতেন না। তাতে এই সব রোগীর ঝুঁকি কমে যেত অনেক। আর যে টেস্টের জন্য রোগীদের এত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাও কী করে বাড়ানো যায় সে চেষ্টায়ও ব্যাপক ঘাটতি আছে কর্তৃপক্ষের।

একদিকে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ।  মোট জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ২৭ শতাংশ ব্যয় করা হয় আমাদের স্বাস্থ্য খাতে। তার ওপর চুরি-দুর্নীতি তো আছেই। ফলে সেই কম বরাদ্দেরও কতটুকু যে শেষ পর্যন্ত দেশবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় কাজে লাগছে সে এক বড় প্রশ্ন। আমাদের মন্ত্রী, এমপিরা সাধারণ রোগের চিকিৎসা করাতেও জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে বিদেশে চলে যান। যাদের টাকা খরচ করে তারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেন, সেই সাধারণ জনগণের জন্য তারা ভালো মানের চিকিৎসা ব্যবস্থাটা পর্যন্ত গড়ে তুলেননি এই দেশে। এমনকি এমন মাননীয়রা চিকিৎসা নিতে পারেন এমন মানের একটা হাসপাতালও তারা তৈরি করতে পারেননি। তারা হয়তো ভাবেননি যে, এমন দিনও আসতে পারে যখন অনেক টাকা আর ক্ষমতা থাকার পরেও বিদেশে যেতে পারবেন না। এই দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে তাদের।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আজকের এই ভঙ্গুর অবস্থা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল।  একযুগ ধরে টানা ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের যে গল্প করছিল সরকার, সে গল্পের ফানুস ফুটো করে দিয়েছে করোনা। তবে আগের সেই সব কথা বলে এখন আর লাভ নেই। এখন যা আছে তাই দিয়েই সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে আগে। 

সংবাদমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ৬০ দিনে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বাংলাদেশে, সুস্থতার হার সবচেয়ে কম। করোনাভাইরাসের সূচকে এশিয়ার পরবর্তী ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। তার ওপর সরকার পোশাক কারখানা, রেস্তোরাঁ, দোকান, শপিংমল খুলে দিয়ে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। বাড়ছে আক্রান্তের হার।  সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ যারা করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়ছেন তারা। বাড়ছে মৃত্যু। তাই করোনার বিস্তাররোধে বিশেষজ্ঞ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যাপ্ত টেস্ট করাসহ যা যা করণীয় তা সবই করতে হবে সরকারকে। সব নিয়মও মেনে চলতে হবে দেশবাসীকে। আর হাসপাতালগুলোকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে যাতে আর একজন মানুষও বিনা চিকিৎসায় মারা না যান।

  • লেখক - চিকিৎসক ও কলামনিস্ট
  • কার্টসি - দেশ রুপান্তর / মে ১৪, ২০২০ 

Thursday, May 14, 2020

What is Vietnam doing right? And what is Bangladesh doing wrong?

 — By Shama Obaed


“Pandemic is not a word to use lightly or carelessly. It is a word that, if misused, can cause unreasonable fear, or unjustified acceptance that the fight is over, leading to unnecessary suffering and death,” said Tedros Adhanom, director general of the World Health Organization (WHO), in one of his briefings back in March. 

That is a fact, indeed, but the WHO was compelled to declare the Covid-19 outbreak a pandemic once the virus has been detected in more than 200 countries and territories. What started as an epidemic mainly limited to China has now become a truly global pandemic. Unfortunately, the novel coronavirus has its clutch on Bangladesh as well. 

After March 7, when the first cases were disclosed in Bangladesh, the number grew slowly for a period. But now, the country is experiencing an explosion of cases and a fluctuating number of deaths on a daily basis. Experts maintain that the actual number of infected people could be much higher. 

There are cases where patients are dying with corona-like symptoms and these are not being taken in to account as Covid-19 deaths. Unless many more cases are detected through widespread testing, community transmission will continue and the situation will be out of hand. There is one basic confusion that still remains constant in our minds: Is there an official lockdown in Bangladesh or is the country still on holiday? If the lockdown is enforced, then why are transport workers and labourers on the streets demanding to open up modes of transport? 

It seems, if we had utilized our armed forces fully to enforce health regulations and guidelines, and also to distribute food to the poor and the needy, then the situation might have been a little different. 

We often sense a relief in the statements of the health minister and the other government officials, stating that developed countries like the US, UK, Italy, and Spain are experiencing the most widespread outbreak and large number of deaths, and compared to that, Bangladesh is not doing badly combating the Covid-19. When governments and public health experts around the globe are scrambling to understand, track, and contain this new virus, there are some countries that are able to manage and contain it much better than other developed countries. Vietnam is unquestionably one of them.

The case of Vietnam

Vietnam prepared for the epidemic as early as the very first case in China emerged, around middle of December 2019. Despite its border with China, with a relatively low income majority, and a population of 95 million, Vietnam is a definite success story in this pandemic. 

It has 270 confirmed cases of the virus and no deaths. The country is beginning to lift the strict lockdown measures it began imposing in February, reopening restaurants and barber shops. There are arguments that Vietnam is an authoritarian one-party state, so its numbers can’t be trusted. However, Todd Pollack, a professor at Harvard Medical School, who directs the Partnership for Health Advancement in Vietnam in Hanoi, argued: “I see no reason to mistrust the information coming out of the government at this time. Vietnam’s response was swift and decisive. If the epidemic were much larger than is being officially reported, we would see the evidence in increased emergency room visits and hospital admissions -- and we’re not seeing it.” 

Vietnam is cited by global media as having one of the best-organized epidemic control programs in the world, along with Taiwan, South Korea, and Singapore, all of which have had higher infection rates than the former. Despite relatively lesser economic and technological capacities, the country’s response to the outbreak has received acclaim for its immediacy, effectiveness, and transparency. 

The most well-known case of a coronavirus epidemic was Severe Acute Respiratory Syndrome (Sars), which, after first being detected in southern China in 2002, went on to affect 26 countries and resulted in more than 8,000 cases and 774 deaths. At present, many are praising Vietnam’s response to Covid-19, comparing it to the success in 2003 when Vietnam became the first country to be cleared of the Sars outbreak. 

In the case of Covid-19, Vietnam was also on higher alert than most other countries because of its land border with China and the large amount of travel between the two countries.

So, what are the vital reasons behind Vietnam’s coronavirus success? Experts have identified a few key tactics used widely by the government: Early detection and precautions, temperature screening and testing, targeted lockdowns, and constant communication. On January 11, with the first death in Wuhan, Vietnam tightened its border and airport controls. 

Four days later, when there were still only 27 cases in China’s Hubei Province, Vietnamese officials met with the World Health Organization and counterparts from the Centers for Disease Control, and the WHO praised Vietnam for its rapid risk assessment and issuing of protective guidelines. 

As early as on January 29, the Ministry of Health in Vietnam established 40 mobile emergency response teams, on stand-by to assist affected locations, for quarantine, disinfection, and transporting patients or suspecting patients. In the beginning of February, all educational institutions were suspended to avoid the spread of the virus.

There are around eight doctors to every 10,000 people in Vietnam, and with limited clinical resources at its disposal, Vietnam has seemingly managed to get the outbreak under control. Their Ministry of Health, as early as on January 2, issued an urgent dispatch to hospitals and clinics on prevention and control of the acute pneumonia disease outbreak from China. 

The hospitals were instructed to set up measures for early detection and prevention to the disease, and set up rapid reaction teams to confront the high risk of the disease spreading. Moreover, their Finance Ministry declared that people would not be charged for medical fees when they undergo mandatory quarantine at health care centres and other isolation facilities. They would also be transported to isolation wards for free, and receive free drinking water, towels, face masks, hand sanitizers, mouthwash, and other daily necessities. 

If people were confirmed to have caught the virus and needed extra treatment, their treatment and test fees would be covered by the state budget. These kinds of decisions definitely provided the people of Vietnam with hope to fight the virus with courage.

What is significant is the ratio of tests to confirmed cases, and that ratio in Vietnam is almost five times greater than in any other country. Testing was followed by strict contact tracing (including secondary contacts) for anyone known to be infected, immediate isolation followed by quarantining, and the prompt creation of a real-time database and two mobile apps by which people could record their health status and symptoms. 

All this was backed up by the mass mobilization of the country’s military, public security forces, the health care system, and public employees, and an energetic and creative public education campaign that included TV cartoons, social media, and posters that drew on the traditional iconography of official propaganda and heroic doctors with appropriate protection.

But, what are we experiencing in our homes? If we take a glance back at the events that took place in Bangladesh in the last few months, educational institutes were still open till March 17. In the months of February and March, international flights were still coming to Dhaka in full swing from China, Italy, and other European countries with minimal or no screening at the airport. 

On March 15, 142 passengers returned from Italy, who were also taken to the Ashkona Hajj camp but after they complained about the unsanitary conditions there, many of them were allowed to go home with advice to self-isolate.  

Health experts have expressed serious reservations about the action. One cannot help but wonder if this decision has actually contributed to the spread of the virus rather than controlling it.

The Institute of Epidemiology, Disease Control, and Research (IEDCR) has recently been stripped of its task to coordinate Covid-19 tests and sample collections, and from now on, the Directorate General of Health Services (DGHS) will coordinate the Covid-19 tests and sample collections. 

According to different public health experts, the matter of shifting the task of testing from the IEDCR amidst the ongoing coronavirus menace exemplified the government’s poor planning and mismanagement. Again, opening up shopping malls and businesses at the time when the death toll is going up is another detrimental decision. In this case, maintaining the health regulations and social distancing will be next to impossible. These kinds of decisions only create panic, confusion, and distrust among the people. 

As coronavirus cases mount in Bangladesh, the government struggles to keep its front line health care workers free from getting infected, which has further strained the country’s medical facilities. At least 419 doctors, 243 nurses, and 324 other health workers had tested positive for coronavirus as of Thursday, according to the Bangladesh Doctors Foundation (BDF), as the group blamed a lack of personal protective equipment (PPE) and infections from patients for the outbreak among the doctors.

In addition to that, so far, many members of the police force have tested positive. All this paints a grim picture indeed.

Countries like Vietnam, Hong Kong, Singapore, Germany, New Zealand, and South Korea have been using the process of strict contact tracing aggressively to reduce the outbreak. Contact tracing is used to slow down the spread of infectious outbreaks. When someone gets coronavirus, anyone they have been in prolonged contact with will be tracked down and potentially asked to self-isolate. Phoning or emailing the friends and family of coronavirus patients is one way of contact tracing. 

This can be combined with a location-tracking mobile app, to pick up on others who have been in contact. Why not use this method to save the lives of our countrymen? 

The grim reality is that Covid-19 patients and suspects are facing hurdles and barriers on a regular basis. A good number of people are not being able to do the test because of a lack of planning and strategy on part of the health ministry and the health department. 

There are still not enough testing facilities in the country. We are witnessing, every day, a huge number of people queuing up in front of the BSMMU Hospital with no hope or sign of when they will get their tests done. 

There is also doubt on the quality or authenticity of the test kits being used. A banker passed away recently in spite of his first two test results being negative. 

The only way the government of Bangladesh will be able to gain and maintain public confidence is by being transparent and pro-active in communicating with the public. In a Dalia Research survey of 45 countries asking about public opinion of government responses to the Covid-19 pandemic, 62% of Vietnamese participants said the government was doing the “right amount.” One can’t help but wonder what the response of the Bangladeshi people be if the same question was posed before them. 

Citizens of this country have the right to analyze things and hold the government of the day accountable for all its decisions, so that mistakes can be avoided in the future. 

 — The writer is an organizing secretary of Bangladesh Nationalist Party—BNP and  also a member of the party’s Foreign relations committee.  The opinion was first published on Dhaka Tribune, can be accessed on https://bit.ly/3dGOOm3 

Friday, May 8, 2020

করোনাভাইরাস ও ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা


শামা ওবায়েদ



স্মৃতিকে যদি কয়েক মাস পেছনে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং কল্পনা করুন কেউ আপনাকে বলছে যে, কয়েক মাসের মধ্যেই স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, সব জমায়েত বাতিল হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, অন্য যে কোনো কিছুর তুলনায় মানুষ মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনবে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হবে এবং সরকারগুলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেবে। তখন নির্ঘাত ওই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা নিয়ে সন্দেহ হতো। কিন্তু, ভেবে দেখুন। এ মুহূর্তে ঠিক এমনটিই ঘটছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, নভেল করোনাভাইরাস লিঙ্গ, বর্ণ, ভৌগোলিক সীমানা ও রাজনৈতিক বিশ্বাস কিছুই মানে না।

আমাদের জীবনে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে সেই উপলব্ধির অনুভূতি জাগছে মাত্র। যেমন বার্লিন দেয়ালের পতন বা লেহমান ব্রাদার্সের বিপর্যয়। কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বে যে চরম ভয়াবহতা নিয়ে আসছে তা আমরা কল্পনা করতে শুরু করেছি মাত্র। কোনো সন্দেহ নেই এটি পৃথিবীর সব সমাজ, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিশ্বরাজনীতি, মানুষের জীবনযাপন, চিন্তাপদ্ধতি ও জীবিকায় প্রভাব ফেলবে। বিশ্বের মতো বাংলাদেশও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। আইইডিসিআরের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে এরই মধ্যে ৬০ জেলায় করোনার বিস্তার ছড়িয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায়ও কভিড-১৯ রোগী রয়েছে। প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে এবং আমরা প্রিয় মানুষদের হারাচ্ছি।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের উহানে একটি অজ্ঞাত ভাইরাসের কথা জানতে পারে, যে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে অনেকের নিউমোনিয়া হয়েছে। এরপর থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল। চীনের বাইরে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও স্পেনে। বাংলাদেশে আইইডিসিআর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে ৮ মার্চ। ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতি, পর্যালোচনা ও টেকসই পরিকল্পনার জন্য প্রায় তিন মাস সময় পেয়েছে সরকার। কিন্তু এখনকার বাস্তবতায় আমাদের সামনে ভিন্ন চিত্র তুলে আনছে।

ভাইরাসটির সংক্রমণের ফলে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও নাগরিক হিসেবে আমাদের অসহায়ত্ব উঠে এসেছে। দুর্বল পরিকল্পনা এবং বিশৃঙ্খল ও অগোছাল সিদ্ধান্তে অপ্রতুল কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতীয়মাণ হয়েছে, খুব দুর্বল শাসন কাঠামো ও নজরদারি ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, বিচ্ছিন্ন জনসেবা প্রদান, সরকারি সরঞ্জামের বরাদ্দের অপ্রতুলতা, চিকিৎসকদের ৫৮ শতাংশ নিয়োজিত থাকা বেসরকারি খাতে নজরদারির অভাব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের বাজে অবস্থা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা একেবারেই নেই।

কভিড-১৯ মহামারী দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের সামনে তুলে এনেছে। সরকার গত ১২ বছরে দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ও খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাস্থ্য খাত এগুলোর একটি। সরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিরাজ করছে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্টের সততার অভাব। দুর্নীতি দমন কমিশন এক প্রতিবেদনে বড় ধরনের দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছে। এসব দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা, ফার্মেসি কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন নীতি ও সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া। দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার নেপথ্যে এগুলোই বড় কারণ। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিষয়টি পুরো ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জাতি জানতে পেরেছে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্দা কিনতে ব্যয় হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যেই হাসপাতালটির ১৬ ভেনটিলেটরের একটিও কার্যকর নেই। হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, সম্প্রতি সব ভেনটিলেটর যাচাই করা হয়েছে এবং সেগুলো অকার্যকর।

সংবাদমাধ্যমে আরও বেশি কিছু দুর্নীতির কথা সামনে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিম্নমানের সরঞ্জাম কেনা। নিম্নমানের এসব সরঞ্জাম কেনায় ব্যয় হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। রংপুর মেডিকেল কলেজে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় ধরনের সার্জিক্যাল মেশিন কেনা হয়েছে; যা একেবারে অপ্রয়োজনীয়। পিএসিএস সফটওয়্যার-সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনার নামে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা তোলা হয়েছে ভুয়া বিল বানিয়ে, কোনো ক্রয়াদেশ ছাড়াই।

শুধু তাই নয়, সাতক্ষীরার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে ১১ কোটি ৭৪ লাখ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ কোটি, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যার হাসপাতালে ১৯ কোটি ১৪ লাখ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ৬৫ কোটি ৮২ লাখ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ২৫ কোটি ৭১ লাখ ও মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বিভিন্ন মেশিন ও সরঞ্জাম কেনার জন্য। ২০১৯ সালের নভেম্বরের শুরুতে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ কোটি টাকায় একটি এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে। মেশিনটির সত্যিকার দাম ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দুদকের একটি তদন্তে উঠে এসেছে, গত দুই অর্থবছরে অন্তত ২৭টি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন মেশিন ও সরঞ্জাম কেনার নামে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। কভিড-১৯ মোকাবিলার কঠিন সময়ে যখন আমরা প্রস্তুতিহীনতা ও পেশাদারিত্বের অভাব দেখতে পাই তখন আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের এসব অনিয়মের দিকে নজর দিতে বাধ্য।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার জানুয়ারিতেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। যদি সত্যি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভেনটিলেটর ও আইসিইউ বেড নেই? কেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স ও অন্যদের প্রয়োজনীয় পিপিই নেই? কেন এরই মধ্যে ৩২৪ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন? কেন পর্যাপ্তসংখ্যক করোনা পরীক্ষা করা হলো না? কেন এক সপ্তাহ আগেও শুধু আইইডিসিআরেই কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হতো? কেন অন্য রোগের নিয়মিত রোগীরা স্বাস্থ্য জটিলতায় কোথাও চিকিৎসা পাচ্ছে না এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারা যাচ্ছে চিকিৎসা ছাড়াই? এ মুহূর্তে এমন প্রাসঙ্গিক অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমরা দেখেছি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ রোগে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে মারা গেছেন মুক্তিযোদ্ধা আলমাস উদ্দিন। ১৬ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবার তাকে অনেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। শেষে সরকারি একটি হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। গাইবান্ধার একটি সড়কে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এক গর্ভবতী নারী। কারণ কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক তাকে করোনা আতঙ্কে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় এমন দুঃখজনক ঘটনার মর্মান্তিক চিত্র উঠে আসছে।

গত কয়েক মাসের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা যদি আমরা মনে করি তাহলে দেখতে পাব, ১০ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা আসছে তাদের পরীক্ষা করে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সতর্ক।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরিস্থিতি একেবারে উল্টো। আমরা জানতে পেরেছি শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করতে জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা বিমানবন্দরের পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান ১০ মার্চ বলেছেন, ‘এখানে তিনটি স্ক্যানার ছিল। কিন্তু এখন মাত্র দুটি কার্যকর আছে। যাত্রীদের অত্যধিক চাপের কারণে একটি নষ্ট হয়ে পড়েছে।’ বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৪ সালে বিভিন্ন বন্দরে প্রবেশকারী যাত্রীদের পরীক্ষার জন্য সাতটি থারমাল স্ক্যানার কিনেছিল সরকার। এর ছয়টি বিকল হয়ে আছে। এতে প্রমাণিত হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার বুঝতে, শনাক্ত ও ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন চীন, ইতালি ও অন্য ইউরোপীয় দেশ থেকে পূর্ণোদ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আসছিল ঢাকায়। ওই সময় বিমানবন্দরে নামমাত্র কোনো স্ক্রিনিং ছিল না। শুরুতে ইতালি ও চীন থেকে আসা যাত্রীদের আশকোনা হজক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ক্যাম্পে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করেনি এবং পরিবেশ ছিল নোংরা ও মশায় ভর্তি। ১৫ মার্চ ইতালি থেকে আসা ১৪২ জনক আশকোনা হজক্যাম্পে নেওয়া হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের বিষয়ে অভিযোগ করার পর স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্ন থাকার পরামর্শ দিয়ে অনেককেই বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ পদক্ষেপের ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যে কেউ প্রশ্ন করেই বসতে পারেন, এ পদক্ষেপ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ না করে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিনা।

সমন্বয়ের অভাব, বিশৃঙ্খল পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতাহীনতা স্পষ্ট হয় যখন করোনাভাইরাস নিয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই জানান, কভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়নি বা তার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জারি করছে যেগুলো সম্পর্কে তিনি জানেন না। তিনি অবশ্য আরও কিংবদন্তিতুল্য বক্তব্য দেওয়ার জন্য পরিচিত। এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোয় ৫০০ ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭০০ ভেনটিলেটর রয়েছে এবং আরও ৩০০ ভেনটিলেটর ‘পাইপলাইনে’ রয়েছে। যদিও তিনি স্পষ্ট করেননি কভিড-১৯ রোগীদের কতটি ভেনটিলেটর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা যায় উল্টো চিত্র, কভিড-১৯ রোগীদের জন্য মাত্র ৪৫টি ভেনটিলেটর রয়েছে। সরকার যখন তথাকথিত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশের কথা প্রতিদিন জোরেশোরে বলছে, তখন এ পরিস্থিতি নির্মম চিত্র তুলে ধরছে।

এমনকি যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথাকেই সঠিক ধরে নিই তাহলে বাংলাদেশিদের জন্য মাত্র ৫০০ ভেনটিলেটর যথেষ্ট? প্রতি সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি ভেনটিলেটর। এবার আসুন অন্য দেশের দিকে একটু তাকাই। মার্চের শেষ দিকে সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ভারতে প্রতি ৩০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে একটি ভেনটিলেটর। পাকিস্তানে রয়েছে প্রতি ৮৬ হাজার মানুষের জন্য একটি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০ হাজারের জন্য একটি এবং জার্মানিতে প্রতি ৩ হাজার ২০০ জনের জন্য রয়েছে একটি ভেনটিলেটর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের এত ভেনটিলেটর নেই যা বাংলাদেশের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার উচিত আমরা যা জানতে পারছি তার চেয়ে ভালো তথ্য তুলে ধরা। যাতে নাগরিকরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। সন্দেহ নেই, কা-জ্ঞানহীন এসব বক্তব্যে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক, দ্বিধা ও অবিশ্বাস তৈরি করছে।

কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সহজ বার্তা রয়েছে সবার জন্য : টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট, সন্দেহজনক সবাইকে পরীক্ষা। এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা মানুষকে চিহ্নিত ও পরীক্ষা করা সম্ভব। সংস্থাটির স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি কর্মসূচির টেকনিক্যাল প্রধান ড. মারিয়া ভান কারখোভ আরও বলেছেন, দেশগুলোর উচিত ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো, টেস্ট কিটের মজুদ বৃদ্ধি ও পরীক্ষা করার লোকবল বাড়ানো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় উপসর্গ থাকা মানুষের পরীক্ষার সংখ্যা খুব কম। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুসারে, ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটি পরীক্ষার সংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে নিচের দিকে রয়েছে। বিশ্বের কিছু দেশের উদাহরণ পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, কানাডা ৭ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৯টি পরীক্ষা করেছে। প্রতি ১০ লাখে যা ১৯ হাজার ৬২৯। ভারতে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩টি, প্রতি ১০ লাখে যা ৫২০টি। জার্মানিতে এ সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৩৮। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৩৩টি। প্রতি ১০ লাখে মাত্র ৩৩২টি। ফলে উদ্বেগ বাড়ছেই। সফলভাবে করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞরা সরকারকে দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাল্পনিক বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার বিরাট ফারাকের আরেকটি ঘটনা উঠে আসে যখন তিনি মিডিয়াকে বলেন, ‘ঢাকার ভিতরে ও বাইরে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এত কম।’ বাস্তবতা হলো, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা ব্যক্তিরা নিয়মিত হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। অনেক মানুষই পরীক্ষা করাতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কৌশল ও পরিকল্পনার কারণে। অনেকেই অভিযোগ করেছে, তারা আইইডিসিআরের হটলাইনে বারবার যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হচ্ছে। সৌভাগ্যক্রমে কেউ যদি কথা বলার সুযোগ পেয়েও যায় আইইডিসিআর কর্মকর্তারা তাদের বলছেন নমুনা সংগ্রহ করতে তিন থেকে চার দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণের তালিকা অনেক দীর্ঘ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম মারা গেছেন। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ২৩ এপ্রিল তার মৃত্যু হয় করোনায় সংক্রমিত হয়ে। তার পরিবার সহযোগিতার জন্য দ্বারস্থ হলেও কোথাও সাড়া পায়নি। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সারিয়াহ তুল কারিমের বাবা কভিড-১৯-এ মারা গেছেন। তার মায়েরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার বাবার অবস্থার অবনতি হলে এবং করোনা উপসর্গ দেখা দিলে ১২ এপ্রিল আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, তাদের সময় আসতে আসতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া যে কিট দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর মান ও সঠিকতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। মোস্তফা শাহরিয়ার নামের এক ব্যাংকার সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যদিও প্রথম দুটি পরীক্ষার তার দেহে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েনি। যে দেশের সরকার প্রতিটি খাতে ‘উন্নয়নের’ দাবি করছে সে দেশে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

২০১৯ সালে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেশে অনুপস্থিত থাকার কথাও জাতি এখনো ভোলেনি। ওই বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা হয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতেই। ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেশে না থাকা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ ও মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টিকে দায়ী করছেন। যদিও তখন মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, দিনের প্রতি মুহূর্তে ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে সুশাসনে থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্য এটি প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অবশ্যই দৃঢ় ও স্বচ্ছ হওয়া উচিত। কারণ আমরা জানি, প্রাণঘাতী ভাইরাস, অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং অযোগ্য নেতৃত্ব জনগণকে অজানা ও দুর্ভোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।


  • লেখক — সাংগঠিক সম্পাদক, বিএনপি। লেখাটি প্রথম বাংলাদেশে প্রতিদিন এ প্রথম প্রকাশিত হয় । লেখাটির লিঙ্ক — https://bit.ly/2yE0qrd 

Saturday, May 2, 2020

COVID-19 exposes healthcare system vulnerabilities

Shama Obaed 


IF YOU cast your mind back a few months and imagine someone telling you that within a few months, schools will be closed indefinitely, all public gatherings will be cancelled, social distancing will be the norm, people will be buying masks, soap and hand sanitisers more than anything else in the world, hundreds of millions of people around the world will be jobless, hundreds and thousands of people will die within weeks and governments will be throwing together some of the largest economic stimulus packages in history, you would say that someone is out of his or her mind. But, guess what? That is exactly what is happening now and even more. It is proved by now that the novel coronavirus knows no gender, no race, no geographical boundaries and no political beliefs.

The realisation that life is going to change for good while it starts taking hold. Like the fall of the Berlin Wall or the collapse of Lehman Brothers, the COVID-19 pandemic is a world-shattering event whose far-ranging consequences we can only begin to imagine today. It has undoubtedly affected every society on the planet, healthcare systems, global politics, people’s way of life, their thinking process and their livelihood, to say the least. Bangladesh is facing the same situation as the rest of the world. According to IEDCR reports, already 60 districts, which include the capital, have had COVID-19 patients. Every day, the death toll is increasing and we are losing lives.

The World Health Organisation on December 31, 2019 heard the first reports of a previously unknown virus behind a number of pneumonia cases in Wuhan in eastern China. Since then, the disease has been detected in more than 200 countries and territories, with Italy, the United States and Spain experiencing the most widespread outbreaks outside China. The first three known cases of new coronavirus patients in Bangladesh were reported on March 8 by the Institute of Epidemiology, Disease Control and Research. Presumably, the government had almost three months to assess, analyse and develop a sustainable plan to combat this virus but the present reality shows a different image.

This virus exposed our vulnerability and our helplessness as citizen as far as health care is concerned. Poor planning and disorganised array of decisions exposed an overly centralised health system, a very weak governance structure and regulatory framework, weak management and institutional capacity in the health ministry, fragmented public services delivery, an inefficient allocation of public resources, lack of regulation of the private sector which employs 58 per cent of all physicians and poor, and in some cases, zero, maintenance of health facilities and medical equipment.

The COVID-19 outbreak has opened our eyes towards the shattered healthcare system. The government has successfully embedded corruption in most of the institutions and sectors over the past 12 years and unfortunately the health sector is one of them. The public health sector is stuck in mismanagement, corruption and lack of integrity of different stakeholders. The Anti-Corruption Commission in a report identified wide ranges of corrupt practices, including unnecessary procurement of expensive medical equipment, aggressive marketing policy of pharmaceutical companies and complicity of government health officials in corruption as main reasons for poor health services. Health-sector corruption appears to have become an integral part of the system.

In recent times, the nation has witnessed serious corruption when the media have exposed the procurement of curtains costing Tk 37.50 lakh at Faridpur Medical College Hospital. But, sadly, we have to hear in the midst of this crisis that all of the 16 ventilators at the intensive care unit of Faridpur Medical College Hospital are non-functional. The hospital’s director Md Saifur Rahman said that in preparation for the new coronavirus outbreak, they recently checked all the ventilators and found all of them to be inoperable.

The media have also exposed various corruption such as that low-quality equipment was bought for Shaheed Tajuddin Medical College and Hospital in Gazipur where the cost was showed to be Tk 175 crore against the low standards of goods. Heavy surgical machines were bought for Tk 4 crore for Rangpur Medical College Hospital without necessity. Tk 6.6 crore was withdrawn and misappropriated in Satkhira Medical College Hospital in the name of buying PACS software-related equipment by submitting forged bills-vouchers without any requisition.

Not only that, around Tk 11.74 crore in the Institute of Health Technology in Satkhira, Tk 15 crore in Noakhali Medical College Hospital, Tk 19.14 crore in the 300-bed Narayanganj hospital, Tk 21.70 crore in Dhaka Medical College Hospital, Tk 65.82 crore in Shaheed Suhrawardy Medical College, Tk 25.71 crore in Dhaka Dental College and Tk 14 crore in the 250-bed Moulvibazar hospital have been spent on buying several machines and equipment. An MRI machine was bought at Shaheed M Monsur Ali Medical College Hospital in Sirajganj for Tk 9 crore against the actual price of Tk 2.8 crore, as the media reported early November 2019. An Anti-Corruption Commission investigation revealed that at least Tk 1,000 crore has been plundered by some unscrupulous officials in collaboration with relevant contractors in the name of purchasing and supplying various machines for at least 27 hospitals and medical college hospitals in the past two financial years. When we witness a lack of preparedness and professionalism in this tough time of combating COVID-19, we are compelled to look into these irregularities in the heath sector that has become a norm for the past 12 years.

While answering journalists regarding the preparation to tackle the situation in Bangladesh, the heath minister said that the government had started taking preparation since January. If that is the case, then why are there not enough ventilators and ICU beds in hospitals? Why are there not enough PPEs for healthcare workers, including physicians, nurses and others? Why have 324 physicians already been infected with the new coronavirus? Why is not enough COVID-19 testing done? Why was the IEDCR the only facility for COVID-19 tests even a week ago? Why are regular patients with other health concerns hardly getting any treatment anywhere and in some cases dying without treatment? There are too many pertinent questions at the moment that the health minister’s briefings do not answer.

We have seen a freedom fighter, Almas Uddin, a brain haemorrhage patient, dying because he was denied treatment in several places. His family took him around to different hospitals after he had finally died in a public hospital after 16 hours. A pregnant woman gave birth to her child on the street in Gaibandha because no hospital or clinic would admit her over the fear for novel coronavirus. These tragic events depict the gruesome picture of healthcare services in the time of the novel coronavirus.

If we glance at the events of a couple of months, the health minister, Zahid Maleque, on March 10 said that his government was fully ready to tackle the situation. In an interview, he said, ‘Medical teams have been deployed at airports and land ports. Those coming from abroad are undergoing tests. The government is alert to the situation.’ But the reality was unfortunately otherwise. We have heard that Bangladesh is facing a challenge in screening the passengers to know if they have high temperature. The Dhaka airport director AHM Towhid-ul-Ahsan said on March 10, ‘There were three scanners, but only two were functioning. The one in the general passengers’ area broke down due to overflow of passengers.’ According to the airport officials, the government procured seven thermal scanners in 2014 for screening travellers at ports of entry but six of them are out of order now. This shows that the health minister was not aware of the situation.

While public health experts and governments around the world were scrambling to understand, track and contain the spread of the novel coronavirus in February–March, international flights were still coming to Dhaka in full swing from China, Italy and other European countries with minimal or no screening at the airport. Initially, some Bangladeshis who came back from Italy and China were kept at the Ashkona Haji camp although they complained that the authorities were not supplying enough food for them and the environment inside the camp was dirty with mosquito infestation. On March 15, 142 people returned from Italy who were also taken to the Ashkona Hajj camp but after they had complained about the unsanitary condition there, many of them were allowed to go home with advice for self-isolation. But health experts expressed serious reservations about the action. One cannot help but wonder if this decision has actually contributed to the spread of the virus rather than controlling it.

Lack of coordination, disorganised plans and inconsistencies in decision making become prominent when the health minister, who heads the national committee on coronavirus, says that authorities were making various decisions in fighting the COVID-19 crisis without informing him or his ministry of the issues even though he was the chief of the national committee on coronavirus. He is gradually being known for making more legendary statements. In one of his briefings, he said, ‘There are 500 ventilators in government hospitals and 700 ventilators in private hospitals and, moreover, 300 more are in the “pipeline”’ although he did not mention how many ventilators are dedicated for the treatment of COVID-19 patients. On the contrary, the new coronavirus control room at the health services directorate general shows that there are only 45 ventilators for COVID-19 patients. In a time when the government of the day boasts every day of the so-called development and boosting economy, this does paint a grim picture.

Even if we take the health minister’s statement as a fact, how comfortable are Bangladeshis with 500 ventilators? Five hundred ventilators mean one ventilator for every 3.5 lakh people. Now let us take a glance at other countries. India has one ventilator for every 30,000 people. Pakistan has one ventilator for every 86,000 citizen, the United States has one ventilator for every 20,000 citizens and Germany has one ventilator for every 3,200 citizens, as the media reported towards the end of March. The heath minister has, however, stated that many developed countries do not have as much ventilators as we have. In that case, he must have better information than we do and he owes it to the citizens to let them know of it. Undoubtedly, these unscrupulous statements increases fear, confusion and distrust among people.

Regarding combating COVID-19, the World Health Organisation has a simple message for all countries: ‘Test, test, test, every suspected case’. That way, people who have been in close contact with those who test positive can be identified and tested as well. Dr Maria Van Kerkhove, the technical lead for WHO Health Emergencies Programme, added that countries need to increase the number of laboratories, the availability of test kits, and the number of people who can conduct the tests. Unfortunately for the citizens of this country, Bangladesh has tested an alarmingly low number of suspects considering its high population. With a population of more than 160 million, the country has one of the lowest number of tests in the world, according to data compiled by Worldometer. If we study some examples around the world, Canada has so far performed 740,859 tests which is 19,629 tests per 1 million citizens. India has so far run 716,733 tests which is 520 tests per million citizens. Germany has so far performed 2,072,669 tests which is 24,738 tests per million citizens whereas Bangladesh has so far performed 54,733 tests which is 332 per million citizens. So, obviously concerns continue to grow, with experts urging the government to focus on increasing daily tests to ensure a successful fight against the outbreak.

Another instance of the difference between the harsh reality and the health minister’s fictional statement is when he told the media, ‘Hospitals in and outside Dhaka have been prepared, along with safety measures having been taken for the physicians. That is why the number of infected people is so less in the country.’ The reality is that COVID-19 patients and suspects are facing hurdles on a regular basis. A good number of people are not able to have themselves tested for lack of planning and strategy of the health ministry and the health services directorate general. Many complained that they were trying to contact the Institute of Epidemiology, Disease Control and Research through its hotlines but repeatedly failed. When people were lucky to get connected, IEDCR officials told them that it might take three to four days for them to collect samples because of the long queue.

Dhaka South City Corporation waste management official Khandaker Millatul Islam died, as the media reported, with COVID-19 infection on April 23 at his house after his family’s request for help fell on deaf ears. North South University student Sariah Tul Qarim’s father died of COVID-19 and her mother has also tested positive. Her father developed the symptoms and his condition deteriorated and they informed the IEDCR on April 12 and asked for help the following day, but the agency’s officials replied that it would take days before they could come. There is also substantial doubt about the quality or authenticity of the test kits being used. A banker, Mostoba Shahriar, died recently after being affected with the new coronavirus in spite of his first two test results having been negative. These incidents are unacceptable in a country where the government is claiming ‘development’ in every sector.

The nation also did not forget the health minister’s absence and inaction during the worst outbreak of the mosquito-borne disease dengue in 2019 when the number of dengue patients and deaths broke all past records. The dengue outbreak’s severity was underlined by the absence of the health minister, whose whereabouts were the cause of consternation among citizens. Although experts blamed ineffective pesticides and lack of dengue prevention and preparedness for the outbreak, the minister, however, claimed that time that dengue was being tracked every second of the day.

Undoubtedly, there should be good governance in health administration, both in the private and the public sector, for which the political commitment must be solid and transparent because we all know that the combination of a deadly virus, inadequate planning and incompetent leadership can place people on an unknown and worrisome path.

— The writer is an organizing secretary of the Bangladesh Nationalist Party—BNP. The opinion is first published in the New Age and can be accessed on https://bit.ly/3aYcQr9 . 

Tuesday, March 31, 2020

মানুষ মরছে বেশুমার

মতিউর রহমান চৌধুরী

মতিউর রহমান চৌধুরী
হিংসা নেই। বিদ্বেষ নেই। হানাহানিও নেই। বারুদের গন্ধও নেই। কামানের গোলার শব্দও নেই। নেই বোমারু বিমানের অ্যাকশন। তবুও মানুষ মরছে বেশুমার। ঘুম নেই কারও চোখে।

সবাই এখন ক্ষমতাহীন। যাদের ইশারা-ইঙ্গিতে দুনিয়া কাঁপতো তারাও এখন ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করছেন। সবাই বাঁচার তাগিদে। এক অদৃশ্য ভাইরাস দুনিয়াকে বদলে দিয়েছে। কারফিউ’র জায়গা দখল করেছে লকডাউন। নাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতার মসনদকে। ধনী গরীবকে নিয়ে গেছে এক কাতারে। মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছে। শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য করেছে। মানুষ মারার যন্ত্রগুলোকেও স্তব্ধ করে দিয়েছে। চারদিকে শুধু এক আওয়াজ, বাঁচতে চাই, বাঁচাতে হবে। এক সময় মানবতা বিপন্ন হতো শক্তির লড়াইয়ে। আর এখন মানবতা বিপন্ন ভাইরাসে। পৃথিবী এখন জ্বলছে অদৃশ্য শক্তিতে। রিমোর্টটা আসলে কার হাতে? কেউ জানে না। বন্দুকের যেমন কোন দিক নেই, তেমনি এই ভাইরাসেরও নেই কোন দিক। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব দিকই তার নিশানা। বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ। গবেষকরা কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই খবর আসে এই বুঝি ভ্যাকসিন এসে গেলো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই খবর বাসি। দাবি করছেন অন্যকেউ। আখেরে কিছুই হয়নি। বাঁচার তাগিদে মানুষ স্বেচ্ছাবন্দি। ঘরে খাবার নেই। তবুও কেউ বের হচ্ছে না খাবারের সন্ধানে। বোমার মধ্যেও মানবতার ডাকে মানুষ হাজির হয় খাবার নিয়ে। এই ভাইরাস মানবতাকে বিপন্ন করে দিয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে। কাউকে দোষারোপ করে বলছি না। কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। এই ভাইরাস কারও সৃষ্টি নয়। তাই মনে হয় সত্যটা বলতে হবে। মানুষ যদি বাস্তব অবস্থা না জানতে পারে তখন বিপদ হবে আরও বেশি। সত্য গোপনের পরিণতি ভাল হয় না। বগুড়ায় একজন মানুষের দাফন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হল তা বোধ করি খোলাসা করে বলার দরকার নেই। মানুষ এখানে অসহায়। সরকার কি সবকিছু করতে পারবে? সরকার সময়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে এটিই মানুষের চাওয়া। এই মুহুর্তে খালি চোখে বড় সঙ্কট না দেখলেও বড় সঙ্কট কিন্তু সামনে। দেশে দেশে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর বাইরে নই। ঝড়ো হাওয়া আসেনি। দমকা হাওয়ায় অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ছে। এই সময়ে ভুল কৌশল পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।

মানবিকতা দেখাতে গিয়ে  বিদেশ ফেরৎ বাংলাদেশীদের আমরা পর্যবেক্ষণেই রাখিনি। কেউ বলবে না ওদের আসতে দেবো না। নিজ মাতৃভূমিতে তারা আসবে। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ থাকতে আমরা শুরুর দিকে পরামর্শও দেইনি। বরং ভাইরাসমুক্ত সার্টিফিকেট দিয়েছি। এটা ছিল ভুল। এই ভুলের মাসুল যেন আমাদের আর দিতে না হয়।

বলা হচ্ছে সত্য বললে নাকি মানুষ আতঙ্কিত হবে। অঘোষিত লকডাউনে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। ফেরি ঘাটে লাখো মানুষের ভিড় আর আকুতির ছবি আমরা দেখেছি। লকডাউন মানে লকডাউন করতে হবে। হোটেল রেস্তোঁরা খোলা রেখে লকডাউন পৃথিবীর কোথায় আছে? পশ্চিমা দুনিয়ায় মদের দোকানও বন্ধ। যারা খাদ্যের চেয়ে মদকে ভালবাসে বেশি। তাছাড়া হোটেল রেস্তোঁরাগুলো কি করোনা মুক্ত?

অতি মানবিকতা আমাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া রিপোর্টে ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশকে এখান থেকে বার্তা নিতে হবে। জাতিসংঘের অনুমান কতোটা সত্য জানি না। মনে-প্রাণে চাই এটা যেন মিথ্যে হয়। বিদেশি কূটনীতিকদের দলে দলে ঢাকা ছাড়ার খবরে চিন্তার ভাঁজ কপালে। ৪৮ জন আক্রান্তের দেশ ছেড়ে তারা কেন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর দেশে ফিরছেন তা বুঝতে পারি না।

শেষ কথা  — নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিখ্যাত উক্তি ‘দুর্ভিক্ষ থামাতে পারে মুক্ত  সংবাদ মাধ্যম’। দেশে দেশে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

  • লেখক পরিচিত — প্রধান সম্পাদক, দৈনিক মানবজমিন।