— আজিজুল বারী হেলাল
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ইতিহাসের এক অনিবার্য পরিণতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে সমগ্র দেশবাসীর সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটান। শুরু হয় সদ্য স্বাধীন বাংলাদশকে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার এক অভুতপূর্ব রাজনৈতিক স্বপ্নযাত্রা।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র বছর কয়েক অতিক্রান্ত না হতেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্টীর দুঃশাসন, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি’র মহামারীতে স্বাধীন দেশের মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। পঞ্চান্ন হাজার একশত ছাব্বিশ বর্গমাইল আয়তনের ভূখন্ডে বসবাসরত জনগনের সম্মিলিত জাতিগত পরিচয়ের সংকট ও রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সংকট তীব্রভাবে দেখা দেয়। রাষ্ট্র ক্ষমতা একদলীয় শাসন ব্যাবস্থার কবলে পড়ে গণতন্ত্রের অকাল মৃত্যু ঘটে। একটি দল ব্যাতিত সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ফলে দেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও চরমপন্থা’র এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। দেশের মানুষ পতিত হয় চরম নিরাপত্তাহীনতা’য়। একদলীয় লুটেরাদের দৌরাত্মে দেশের নবীন অর্থনীতি মূখ থুবড়ে পড়ে। দেশে দেখা দেয় ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়া দুর্ভিক্ষ। দেশের মানুষ অপুষ্টি অনাহারে ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করেন।
দেশের এই হতাশাজনক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীতে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা এবং অবৈধ উপায়ে ক্ষমতার পালা বদলের ষড়যন্ত্রে সংগঠিত হয় ক্যূ এবং পাল্টা ক্যূ’ । মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্যূ’দেতা’দের হাতে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী হন। ফলে রাষ্ট্রক্ষমতায় রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা ধীরে ধীরে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে থাকে। এমনই এক বিপন্ন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সিপাহি জনতার অভূতপূর্ব সংহতি’তে একটি নতুন যুগের সৃষ্টি হয়। দেশপ্রেমিক সিপাহীরা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বন্দী তাদের প্রিয় সেনাপ্রধান ও ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযাদ্ধা জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে মুক্ত করেন । সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অথচ তাৎপর্যপূর্ণ বিপ্লব । ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলেশনে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যেমন বিপ্লবের সন্তান হিসাবে ফ্রেঞ্চ জনগণের কাছে মুক্তিদাতা হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন। তেমনি জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সংগঠিত বিপ্লবের সন্তান হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্নপুরণে রাষ্ট্রক্ষমতায় ও রাজনীতিতে আবির্ভুত হন।
সুতরাং ইতিহাসের এক অনিবার্য পরিস্থিতিতে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা’র প্রতিফলন ঘটাতে রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি’র জন্ম এবং বিকাশ ঘটে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীন এই ভূখণ্ডে পাহাড়ে কিংবা সমতলে বসবাসরত সকল নৃ-গোষ্ঠীর মানুষকে, সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে, সকল ভাষা-ভাষী’র মানুষকে একই সূত্রে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তার মহান দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন। বাংলাদেশী জাতি হিসাবে স্বাধীন এই ভূখন্ডে বসবাসরত মানুষকে একটি একক আত্মপরিচয় প্রদান করে আমাদের সম্মিলিত আত্মপরিচয়ের সংকট ঘোচান এবং ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করেন। রাষ্ট্রগঠনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মহান আল্লাহর প্রতি আস্হা ও বিশ্বাস, অর্থনৈতিক সুষম বন্টনে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সংবিধানের চার মূলনীতিতে সংযুক্ত করে বাংলাদেশে মূলধারার রাজনীতির সূচনা করেন। তিনি দেশের জনগণের আশা আকাংখা বাস্তবায়নে স্বনির্ভর আন্দোলনের ডাক দেন। যে আন্দোলনকে তিনি শান্তিপূর্ণ বিপ্লব হিসাবে অভিহিত করেন। উৎপাদনের রাজনীতি আর জনগণকে আত্বনির্ভরশীল ও আত্মকর্ম সংস্হানে বলিয়ান করতে ১৯ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাঠামোর বাতাবরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পিত পথে এগিয়ে নিতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথী ও অর্থনৈতিক স্বপ্নদ্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আর বাংলাদেশ প্রবেশ করে বহুদলীয় রাজনীতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালিত জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের নতুন রাজনৈতিক উন্মুক্ত যুগে।
প্রতিষ্ঠার ৪২ তম বছরের আজকের এই পবিত্র দিনে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের জনক এবং মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বপ্নদ্রষ্টা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।
শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বরণের পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান হিসাবে দলকে সুসংগঠিত করেন। ৯০’র দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া’র আপোষহীন ভূমিকায় স্বৈরাচারের পতন হয় । অবিসংবাদিতভাবে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন “দেশনেত্রী” হিসেবে । নিপীড়িত নির্যাতিত ও অসহায় মানুষের শেষ ভরসাস্থল আজীবন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার আন্দোলনে নিরন্তর পথচলা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে। “দেশনেত্রী” থেকে “মাদার অব ডেমোক্রেসি” হিসেবে এদেশের মানুষের হৃদয়পটে অধিষ্ঠান তারই চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমাদের নেত্রী, আফ্রো-এশীয় ল্যাটিন আমেরিকার নির্যাতিত কোটি কোটি গণমানুষের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
২০০৭ সালে অভিশপ্ত ১/১১’এ সংগঠিত রাজনৈতিক ক্যূ’র ফলে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি ক্ষমতাচ্যুত হয় । বিএনপি’র ভবিষ্যত কান্ডারি, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মের গর্বিত পথনির্দেশক জননেতা তারেক রহমানকে বাধ্য করা হয় বিদেশ-বিভূইয়ে নির্বাসন যাপনে । যদিও নির্বাসিত জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত চলমান সকল অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিষ্ট বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে তিনি এদেশের জনগণকে নিয়ত অনুপ্ররণা যোগাচ্ছেন। নব্য স্বৈরাচার ও বর্তমান একনায়ক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আত্মিকভাবে লড়াই করে চলেছেন এদেশের লাখ লাখ জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকের সাথে।
জননেতা তারেক রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সূর্য সৈনিক হিসাবে তেমনি আমাদের দেশের অপশক্তি’র বিরুদ্ধে লড়ছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’তে তরুণ প্রজন্মের অহংকার, বিএনপি’র আগামী নেতৃত্ব, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসুরী বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রধান কান্ডারি এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ জননেতা তারেক রহমানকে সালাম শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সকল নারী ও পুরুষের আশা ও প্রত্যাশার একমাত্র বাতিঘর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’র এই দিনে আমাদের অঙ্গিকার, শহীদ জিয়া’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রুঁখবো সকল স্বৈরাচার।
শহীদ জিয়া অমর হোক!
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ!
জননেতা তারেক রহমান জিন্দাবাদ!!
বিএনপি জিন্দাবাদ।।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।।
No comments:
Post a Comment