Search

Friday, May 8, 2020

করোনাভাইরাস ও ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা


শামা ওবায়েদ



স্মৃতিকে যদি কয়েক মাস পেছনে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং কল্পনা করুন কেউ আপনাকে বলছে যে, কয়েক মাসের মধ্যেই স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, সব জমায়েত বাতিল হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, অন্য যে কোনো কিছুর তুলনায় মানুষ মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনবে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হবে এবং সরকারগুলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেবে। তখন নির্ঘাত ওই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা নিয়ে সন্দেহ হতো। কিন্তু, ভেবে দেখুন। এ মুহূর্তে ঠিক এমনটিই ঘটছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, নভেল করোনাভাইরাস লিঙ্গ, বর্ণ, ভৌগোলিক সীমানা ও রাজনৈতিক বিশ্বাস কিছুই মানে না।

আমাদের জীবনে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে সেই উপলব্ধির অনুভূতি জাগছে মাত্র। যেমন বার্লিন দেয়ালের পতন বা লেহমান ব্রাদার্সের বিপর্যয়। কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বে যে চরম ভয়াবহতা নিয়ে আসছে তা আমরা কল্পনা করতে শুরু করেছি মাত্র। কোনো সন্দেহ নেই এটি পৃথিবীর সব সমাজ, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিশ্বরাজনীতি, মানুষের জীবনযাপন, চিন্তাপদ্ধতি ও জীবিকায় প্রভাব ফেলবে। বিশ্বের মতো বাংলাদেশও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। আইইডিসিআরের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে এরই মধ্যে ৬০ জেলায় করোনার বিস্তার ছড়িয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায়ও কভিড-১৯ রোগী রয়েছে। প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে এবং আমরা প্রিয় মানুষদের হারাচ্ছি।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের উহানে একটি অজ্ঞাত ভাইরাসের কথা জানতে পারে, যে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে অনেকের নিউমোনিয়া হয়েছে। এরপর থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল। চীনের বাইরে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও স্পেনে। বাংলাদেশে আইইডিসিআর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করে ৮ মার্চ। ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতি, পর্যালোচনা ও টেকসই পরিকল্পনার জন্য প্রায় তিন মাস সময় পেয়েছে সরকার। কিন্তু এখনকার বাস্তবতায় আমাদের সামনে ভিন্ন চিত্র তুলে আনছে।

ভাইরাসটির সংক্রমণের ফলে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও নাগরিক হিসেবে আমাদের অসহায়ত্ব উঠে এসেছে। দুর্বল পরিকল্পনা এবং বিশৃঙ্খল ও অগোছাল সিদ্ধান্তে অপ্রতুল কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতীয়মাণ হয়েছে, খুব দুর্বল শাসন কাঠামো ও নজরদারি ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, বিচ্ছিন্ন জনসেবা প্রদান, সরকারি সরঞ্জামের বরাদ্দের অপ্রতুলতা, চিকিৎসকদের ৫৮ শতাংশ নিয়োজিত থাকা বেসরকারি খাতে নজরদারির অভাব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের বাজে অবস্থা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা একেবারেই নেই।

কভিড-১৯ মহামারী দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের সামনে তুলে এনেছে। সরকার গত ১২ বছরে দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ও খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাস্থ্য খাত এগুলোর একটি। সরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিরাজ করছে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্টের সততার অভাব। দুর্নীতি দমন কমিশন এক প্রতিবেদনে বড় ধরনের দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছে। এসব দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা, ফার্মেসি কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন নীতি ও সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া। দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার নেপথ্যে এগুলোই বড় কারণ। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিষয়টি পুরো ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জাতি জানতে পেরেছে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্দা কিনতে ব্যয় হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যেই হাসপাতালটির ১৬ ভেনটিলেটরের একটিও কার্যকর নেই। হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, সম্প্রতি সব ভেনটিলেটর যাচাই করা হয়েছে এবং সেগুলো অকার্যকর।

সংবাদমাধ্যমে আরও বেশি কিছু দুর্নীতির কথা সামনে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিম্নমানের সরঞ্জাম কেনা। নিম্নমানের এসব সরঞ্জাম কেনায় ব্যয় হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। রংপুর মেডিকেল কলেজে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় ধরনের সার্জিক্যাল মেশিন কেনা হয়েছে; যা একেবারে অপ্রয়োজনীয়। পিএসিএস সফটওয়্যার-সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনার নামে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা তোলা হয়েছে ভুয়া বিল বানিয়ে, কোনো ক্রয়াদেশ ছাড়াই।

শুধু তাই নয়, সাতক্ষীরার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে ১১ কোটি ৭৪ লাখ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ কোটি, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যার হাসপাতালে ১৯ কোটি ১৪ লাখ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ৬৫ কোটি ৮২ লাখ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ২৫ কোটি ৭১ লাখ ও মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বিভিন্ন মেশিন ও সরঞ্জাম কেনার জন্য। ২০১৯ সালের নভেম্বরের শুরুতে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ কোটি টাকায় একটি এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে। মেশিনটির সত্যিকার দাম ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দুদকের একটি তদন্তে উঠে এসেছে, গত দুই অর্থবছরে অন্তত ২৭টি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন মেশিন ও সরঞ্জাম কেনার নামে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। কভিড-১৯ মোকাবিলার কঠিন সময়ে যখন আমরা প্রস্তুতিহীনতা ও পেশাদারিত্বের অভাব দেখতে পাই তখন আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের এসব অনিয়মের দিকে নজর দিতে বাধ্য।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার জানুয়ারিতেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। যদি সত্যি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভেনটিলেটর ও আইসিইউ বেড নেই? কেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স ও অন্যদের প্রয়োজনীয় পিপিই নেই? কেন এরই মধ্যে ৩২৪ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন? কেন পর্যাপ্তসংখ্যক করোনা পরীক্ষা করা হলো না? কেন এক সপ্তাহ আগেও শুধু আইইডিসিআরেই কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হতো? কেন অন্য রোগের নিয়মিত রোগীরা স্বাস্থ্য জটিলতায় কোথাও চিকিৎসা পাচ্ছে না এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারা যাচ্ছে চিকিৎসা ছাড়াই? এ মুহূর্তে এমন প্রাসঙ্গিক অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমরা দেখেছি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ রোগে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে মারা গেছেন মুক্তিযোদ্ধা আলমাস উদ্দিন। ১৬ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবার তাকে অনেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। শেষে সরকারি একটি হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। গাইবান্ধার একটি সড়কে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এক গর্ভবতী নারী। কারণ কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক তাকে করোনা আতঙ্কে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় এমন দুঃখজনক ঘটনার মর্মান্তিক চিত্র উঠে আসছে।

গত কয়েক মাসের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা যদি আমরা মনে করি তাহলে দেখতে পাব, ১০ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা আসছে তাদের পরীক্ষা করে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সতর্ক।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরিস্থিতি একেবারে উল্টো। আমরা জানতে পেরেছি শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করতে জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা বিমানবন্দরের পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান ১০ মার্চ বলেছেন, ‘এখানে তিনটি স্ক্যানার ছিল। কিন্তু এখন মাত্র দুটি কার্যকর আছে। যাত্রীদের অত্যধিক চাপের কারণে একটি নষ্ট হয়ে পড়েছে।’ বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৪ সালে বিভিন্ন বন্দরে প্রবেশকারী যাত্রীদের পরীক্ষার জন্য সাতটি থারমাল স্ক্যানার কিনেছিল সরকার। এর ছয়টি বিকল হয়ে আছে। এতে প্রমাণিত হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার বুঝতে, শনাক্ত ও ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন চীন, ইতালি ও অন্য ইউরোপীয় দেশ থেকে পূর্ণোদ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আসছিল ঢাকায়। ওই সময় বিমানবন্দরে নামমাত্র কোনো স্ক্রিনিং ছিল না। শুরুতে ইতালি ও চীন থেকে আসা যাত্রীদের আশকোনা হজক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ক্যাম্পে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করেনি এবং পরিবেশ ছিল নোংরা ও মশায় ভর্তি। ১৫ মার্চ ইতালি থেকে আসা ১৪২ জনক আশকোনা হজক্যাম্পে নেওয়া হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের বিষয়ে অভিযোগ করার পর স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্ন থাকার পরামর্শ দিয়ে অনেককেই বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ পদক্ষেপের ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যে কেউ প্রশ্ন করেই বসতে পারেন, এ পদক্ষেপ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ না করে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিনা।

সমন্বয়ের অভাব, বিশৃঙ্খল পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতাহীনতা স্পষ্ট হয় যখন করোনাভাইরাস নিয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই জানান, কভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়নি বা তার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জারি করছে যেগুলো সম্পর্কে তিনি জানেন না। তিনি অবশ্য আরও কিংবদন্তিতুল্য বক্তব্য দেওয়ার জন্য পরিচিত। এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোয় ৫০০ ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭০০ ভেনটিলেটর রয়েছে এবং আরও ৩০০ ভেনটিলেটর ‘পাইপলাইনে’ রয়েছে। যদিও তিনি স্পষ্ট করেননি কভিড-১৯ রোগীদের কতটি ভেনটিলেটর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা যায় উল্টো চিত্র, কভিড-১৯ রোগীদের জন্য মাত্র ৪৫টি ভেনটিলেটর রয়েছে। সরকার যখন তথাকথিত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশের কথা প্রতিদিন জোরেশোরে বলছে, তখন এ পরিস্থিতি নির্মম চিত্র তুলে ধরছে।

এমনকি যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথাকেই সঠিক ধরে নিই তাহলে বাংলাদেশিদের জন্য মাত্র ৫০০ ভেনটিলেটর যথেষ্ট? প্রতি সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি ভেনটিলেটর। এবার আসুন অন্য দেশের দিকে একটু তাকাই। মার্চের শেষ দিকে সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ভারতে প্রতি ৩০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে একটি ভেনটিলেটর। পাকিস্তানে রয়েছে প্রতি ৮৬ হাজার মানুষের জন্য একটি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০ হাজারের জন্য একটি এবং জার্মানিতে প্রতি ৩ হাজার ২০০ জনের জন্য রয়েছে একটি ভেনটিলেটর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের এত ভেনটিলেটর নেই যা বাংলাদেশের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার উচিত আমরা যা জানতে পারছি তার চেয়ে ভালো তথ্য তুলে ধরা। যাতে নাগরিকরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। সন্দেহ নেই, কা-জ্ঞানহীন এসব বক্তব্যে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক, দ্বিধা ও অবিশ্বাস তৈরি করছে।

কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সহজ বার্তা রয়েছে সবার জন্য : টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট, সন্দেহজনক সবাইকে পরীক্ষা। এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা মানুষকে চিহ্নিত ও পরীক্ষা করা সম্ভব। সংস্থাটির স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি কর্মসূচির টেকনিক্যাল প্রধান ড. মারিয়া ভান কারখোভ আরও বলেছেন, দেশগুলোর উচিত ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো, টেস্ট কিটের মজুদ বৃদ্ধি ও পরীক্ষা করার লোকবল বাড়ানো। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় উপসর্গ থাকা মানুষের পরীক্ষার সংখ্যা খুব কম। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুসারে, ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটি পরীক্ষার সংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে নিচের দিকে রয়েছে। বিশ্বের কিছু দেশের উদাহরণ পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, কানাডা ৭ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৯টি পরীক্ষা করেছে। প্রতি ১০ লাখে যা ১৯ হাজার ৬২৯। ভারতে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩টি, প্রতি ১০ লাখে যা ৫২০টি। জার্মানিতে এ সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৩৮। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৩৩টি। প্রতি ১০ লাখে মাত্র ৩৩২টি। ফলে উদ্বেগ বাড়ছেই। সফলভাবে করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞরা সরকারকে দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাল্পনিক বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার বিরাট ফারাকের আরেকটি ঘটনা উঠে আসে যখন তিনি মিডিয়াকে বলেন, ‘ঢাকার ভিতরে ও বাইরে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এত কম।’ বাস্তবতা হলো, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা ব্যক্তিরা নিয়মিত হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। অনেক মানুষই পরীক্ষা করাতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কৌশল ও পরিকল্পনার কারণে। অনেকেই অভিযোগ করেছে, তারা আইইডিসিআরের হটলাইনে বারবার যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হচ্ছে। সৌভাগ্যক্রমে কেউ যদি কথা বলার সুযোগ পেয়েও যায় আইইডিসিআর কর্মকর্তারা তাদের বলছেন নমুনা সংগ্রহ করতে তিন থেকে চার দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণের তালিকা অনেক দীর্ঘ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম মারা গেছেন। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ২৩ এপ্রিল তার মৃত্যু হয় করোনায় সংক্রমিত হয়ে। তার পরিবার সহযোগিতার জন্য দ্বারস্থ হলেও কোথাও সাড়া পায়নি। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সারিয়াহ তুল কারিমের বাবা কভিড-১৯-এ মারা গেছেন। তার মায়েরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার বাবার অবস্থার অবনতি হলে এবং করোনা উপসর্গ দেখা দিলে ১২ এপ্রিল আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, তাদের সময় আসতে আসতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া যে কিট দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর মান ও সঠিকতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। মোস্তফা শাহরিয়ার নামের এক ব্যাংকার সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যদিও প্রথম দুটি পরীক্ষার তার দেহে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েনি। যে দেশের সরকার প্রতিটি খাতে ‘উন্নয়নের’ দাবি করছে সে দেশে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

২০১৯ সালে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেশে অনুপস্থিত থাকার কথাও জাতি এখনো ভোলেনি। ওই বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা হয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতেই। ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেশে না থাকা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ ও মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টিকে দায়ী করছেন। যদিও তখন মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, দিনের প্রতি মুহূর্তে ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে সুশাসনে থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্য এটি প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অবশ্যই দৃঢ় ও স্বচ্ছ হওয়া উচিত। কারণ আমরা জানি, প্রাণঘাতী ভাইরাস, অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং অযোগ্য নেতৃত্ব জনগণকে অজানা ও দুর্ভোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।


  • লেখক — সাংগঠিক সম্পাদক, বিএনপি। লেখাটি প্রথম বাংলাদেশে প্রতিদিন এ প্রথম প্রকাশিত হয় । লেখাটির লিঙ্ক — https://bit.ly/2yE0qrd 

Saturday, May 2, 2020

COVID-19 exposes healthcare system vulnerabilities

Shama Obaed 


IF YOU cast your mind back a few months and imagine someone telling you that within a few months, schools will be closed indefinitely, all public gatherings will be cancelled, social distancing will be the norm, people will be buying masks, soap and hand sanitisers more than anything else in the world, hundreds of millions of people around the world will be jobless, hundreds and thousands of people will die within weeks and governments will be throwing together some of the largest economic stimulus packages in history, you would say that someone is out of his or her mind. But, guess what? That is exactly what is happening now and even more. It is proved by now that the novel coronavirus knows no gender, no race, no geographical boundaries and no political beliefs.

The realisation that life is going to change for good while it starts taking hold. Like the fall of the Berlin Wall or the collapse of Lehman Brothers, the COVID-19 pandemic is a world-shattering event whose far-ranging consequences we can only begin to imagine today. It has undoubtedly affected every society on the planet, healthcare systems, global politics, people’s way of life, their thinking process and their livelihood, to say the least. Bangladesh is facing the same situation as the rest of the world. According to IEDCR reports, already 60 districts, which include the capital, have had COVID-19 patients. Every day, the death toll is increasing and we are losing lives.

The World Health Organisation on December 31, 2019 heard the first reports of a previously unknown virus behind a number of pneumonia cases in Wuhan in eastern China. Since then, the disease has been detected in more than 200 countries and territories, with Italy, the United States and Spain experiencing the most widespread outbreaks outside China. The first three known cases of new coronavirus patients in Bangladesh were reported on March 8 by the Institute of Epidemiology, Disease Control and Research. Presumably, the government had almost three months to assess, analyse and develop a sustainable plan to combat this virus but the present reality shows a different image.

This virus exposed our vulnerability and our helplessness as citizen as far as health care is concerned. Poor planning and disorganised array of decisions exposed an overly centralised health system, a very weak governance structure and regulatory framework, weak management and institutional capacity in the health ministry, fragmented public services delivery, an inefficient allocation of public resources, lack of regulation of the private sector which employs 58 per cent of all physicians and poor, and in some cases, zero, maintenance of health facilities and medical equipment.

The COVID-19 outbreak has opened our eyes towards the shattered healthcare system. The government has successfully embedded corruption in most of the institutions and sectors over the past 12 years and unfortunately the health sector is one of them. The public health sector is stuck in mismanagement, corruption and lack of integrity of different stakeholders. The Anti-Corruption Commission in a report identified wide ranges of corrupt practices, including unnecessary procurement of expensive medical equipment, aggressive marketing policy of pharmaceutical companies and complicity of government health officials in corruption as main reasons for poor health services. Health-sector corruption appears to have become an integral part of the system.

In recent times, the nation has witnessed serious corruption when the media have exposed the procurement of curtains costing Tk 37.50 lakh at Faridpur Medical College Hospital. But, sadly, we have to hear in the midst of this crisis that all of the 16 ventilators at the intensive care unit of Faridpur Medical College Hospital are non-functional. The hospital’s director Md Saifur Rahman said that in preparation for the new coronavirus outbreak, they recently checked all the ventilators and found all of them to be inoperable.

The media have also exposed various corruption such as that low-quality equipment was bought for Shaheed Tajuddin Medical College and Hospital in Gazipur where the cost was showed to be Tk 175 crore against the low standards of goods. Heavy surgical machines were bought for Tk 4 crore for Rangpur Medical College Hospital without necessity. Tk 6.6 crore was withdrawn and misappropriated in Satkhira Medical College Hospital in the name of buying PACS software-related equipment by submitting forged bills-vouchers without any requisition.

Not only that, around Tk 11.74 crore in the Institute of Health Technology in Satkhira, Tk 15 crore in Noakhali Medical College Hospital, Tk 19.14 crore in the 300-bed Narayanganj hospital, Tk 21.70 crore in Dhaka Medical College Hospital, Tk 65.82 crore in Shaheed Suhrawardy Medical College, Tk 25.71 crore in Dhaka Dental College and Tk 14 crore in the 250-bed Moulvibazar hospital have been spent on buying several machines and equipment. An MRI machine was bought at Shaheed M Monsur Ali Medical College Hospital in Sirajganj for Tk 9 crore against the actual price of Tk 2.8 crore, as the media reported early November 2019. An Anti-Corruption Commission investigation revealed that at least Tk 1,000 crore has been plundered by some unscrupulous officials in collaboration with relevant contractors in the name of purchasing and supplying various machines for at least 27 hospitals and medical college hospitals in the past two financial years. When we witness a lack of preparedness and professionalism in this tough time of combating COVID-19, we are compelled to look into these irregularities in the heath sector that has become a norm for the past 12 years.

While answering journalists regarding the preparation to tackle the situation in Bangladesh, the heath minister said that the government had started taking preparation since January. If that is the case, then why are there not enough ventilators and ICU beds in hospitals? Why are there not enough PPEs for healthcare workers, including physicians, nurses and others? Why have 324 physicians already been infected with the new coronavirus? Why is not enough COVID-19 testing done? Why was the IEDCR the only facility for COVID-19 tests even a week ago? Why are regular patients with other health concerns hardly getting any treatment anywhere and in some cases dying without treatment? There are too many pertinent questions at the moment that the health minister’s briefings do not answer.

We have seen a freedom fighter, Almas Uddin, a brain haemorrhage patient, dying because he was denied treatment in several places. His family took him around to different hospitals after he had finally died in a public hospital after 16 hours. A pregnant woman gave birth to her child on the street in Gaibandha because no hospital or clinic would admit her over the fear for novel coronavirus. These tragic events depict the gruesome picture of healthcare services in the time of the novel coronavirus.

If we glance at the events of a couple of months, the health minister, Zahid Maleque, on March 10 said that his government was fully ready to tackle the situation. In an interview, he said, ‘Medical teams have been deployed at airports and land ports. Those coming from abroad are undergoing tests. The government is alert to the situation.’ But the reality was unfortunately otherwise. We have heard that Bangladesh is facing a challenge in screening the passengers to know if they have high temperature. The Dhaka airport director AHM Towhid-ul-Ahsan said on March 10, ‘There were three scanners, but only two were functioning. The one in the general passengers’ area broke down due to overflow of passengers.’ According to the airport officials, the government procured seven thermal scanners in 2014 for screening travellers at ports of entry but six of them are out of order now. This shows that the health minister was not aware of the situation.

While public health experts and governments around the world were scrambling to understand, track and contain the spread of the novel coronavirus in February–March, international flights were still coming to Dhaka in full swing from China, Italy and other European countries with minimal or no screening at the airport. Initially, some Bangladeshis who came back from Italy and China were kept at the Ashkona Haji camp although they complained that the authorities were not supplying enough food for them and the environment inside the camp was dirty with mosquito infestation. On March 15, 142 people returned from Italy who were also taken to the Ashkona Hajj camp but after they had complained about the unsanitary condition there, many of them were allowed to go home with advice for self-isolation. But health experts expressed serious reservations about the action. One cannot help but wonder if this decision has actually contributed to the spread of the virus rather than controlling it.

Lack of coordination, disorganised plans and inconsistencies in decision making become prominent when the health minister, who heads the national committee on coronavirus, says that authorities were making various decisions in fighting the COVID-19 crisis without informing him or his ministry of the issues even though he was the chief of the national committee on coronavirus. He is gradually being known for making more legendary statements. In one of his briefings, he said, ‘There are 500 ventilators in government hospitals and 700 ventilators in private hospitals and, moreover, 300 more are in the “pipeline”’ although he did not mention how many ventilators are dedicated for the treatment of COVID-19 patients. On the contrary, the new coronavirus control room at the health services directorate general shows that there are only 45 ventilators for COVID-19 patients. In a time when the government of the day boasts every day of the so-called development and boosting economy, this does paint a grim picture.

Even if we take the health minister’s statement as a fact, how comfortable are Bangladeshis with 500 ventilators? Five hundred ventilators mean one ventilator for every 3.5 lakh people. Now let us take a glance at other countries. India has one ventilator for every 30,000 people. Pakistan has one ventilator for every 86,000 citizen, the United States has one ventilator for every 20,000 citizens and Germany has one ventilator for every 3,200 citizens, as the media reported towards the end of March. The heath minister has, however, stated that many developed countries do not have as much ventilators as we have. In that case, he must have better information than we do and he owes it to the citizens to let them know of it. Undoubtedly, these unscrupulous statements increases fear, confusion and distrust among people.

Regarding combating COVID-19, the World Health Organisation has a simple message for all countries: ‘Test, test, test, every suspected case’. That way, people who have been in close contact with those who test positive can be identified and tested as well. Dr Maria Van Kerkhove, the technical lead for WHO Health Emergencies Programme, added that countries need to increase the number of laboratories, the availability of test kits, and the number of people who can conduct the tests. Unfortunately for the citizens of this country, Bangladesh has tested an alarmingly low number of suspects considering its high population. With a population of more than 160 million, the country has one of the lowest number of tests in the world, according to data compiled by Worldometer. If we study some examples around the world, Canada has so far performed 740,859 tests which is 19,629 tests per 1 million citizens. India has so far run 716,733 tests which is 520 tests per million citizens. Germany has so far performed 2,072,669 tests which is 24,738 tests per million citizens whereas Bangladesh has so far performed 54,733 tests which is 332 per million citizens. So, obviously concerns continue to grow, with experts urging the government to focus on increasing daily tests to ensure a successful fight against the outbreak.

Another instance of the difference between the harsh reality and the health minister’s fictional statement is when he told the media, ‘Hospitals in and outside Dhaka have been prepared, along with safety measures having been taken for the physicians. That is why the number of infected people is so less in the country.’ The reality is that COVID-19 patients and suspects are facing hurdles on a regular basis. A good number of people are not able to have themselves tested for lack of planning and strategy of the health ministry and the health services directorate general. Many complained that they were trying to contact the Institute of Epidemiology, Disease Control and Research through its hotlines but repeatedly failed. When people were lucky to get connected, IEDCR officials told them that it might take three to four days for them to collect samples because of the long queue.

Dhaka South City Corporation waste management official Khandaker Millatul Islam died, as the media reported, with COVID-19 infection on April 23 at his house after his family’s request for help fell on deaf ears. North South University student Sariah Tul Qarim’s father died of COVID-19 and her mother has also tested positive. Her father developed the symptoms and his condition deteriorated and they informed the IEDCR on April 12 and asked for help the following day, but the agency’s officials replied that it would take days before they could come. There is also substantial doubt about the quality or authenticity of the test kits being used. A banker, Mostoba Shahriar, died recently after being affected with the new coronavirus in spite of his first two test results having been negative. These incidents are unacceptable in a country where the government is claiming ‘development’ in every sector.

The nation also did not forget the health minister’s absence and inaction during the worst outbreak of the mosquito-borne disease dengue in 2019 when the number of dengue patients and deaths broke all past records. The dengue outbreak’s severity was underlined by the absence of the health minister, whose whereabouts were the cause of consternation among citizens. Although experts blamed ineffective pesticides and lack of dengue prevention and preparedness for the outbreak, the minister, however, claimed that time that dengue was being tracked every second of the day.

Undoubtedly, there should be good governance in health administration, both in the private and the public sector, for which the political commitment must be solid and transparent because we all know that the combination of a deadly virus, inadequate planning and incompetent leadership can place people on an unknown and worrisome path.

— The writer is an organizing secretary of the Bangladesh Nationalist Party—BNP. The opinion is first published in the New Age and can be accessed on https://bit.ly/3aYcQr9 . 

Tuesday, March 31, 2020

মানুষ মরছে বেশুমার

মতিউর রহমান চৌধুরী

মতিউর রহমান চৌধুরী
হিংসা নেই। বিদ্বেষ নেই। হানাহানিও নেই। বারুদের গন্ধও নেই। কামানের গোলার শব্দও নেই। নেই বোমারু বিমানের অ্যাকশন। তবুও মানুষ মরছে বেশুমার। ঘুম নেই কারও চোখে।

সবাই এখন ক্ষমতাহীন। যাদের ইশারা-ইঙ্গিতে দুনিয়া কাঁপতো তারাও এখন ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করছেন। সবাই বাঁচার তাগিদে। এক অদৃশ্য ভাইরাস দুনিয়াকে বদলে দিয়েছে। কারফিউ’র জায়গা দখল করেছে লকডাউন। নাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতার মসনদকে। ধনী গরীবকে নিয়ে গেছে এক কাতারে। মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছে। শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য করেছে। মানুষ মারার যন্ত্রগুলোকেও স্তব্ধ করে দিয়েছে। চারদিকে শুধু এক আওয়াজ, বাঁচতে চাই, বাঁচাতে হবে। এক সময় মানবতা বিপন্ন হতো শক্তির লড়াইয়ে। আর এখন মানবতা বিপন্ন ভাইরাসে। পৃথিবী এখন জ্বলছে অদৃশ্য শক্তিতে। রিমোর্টটা আসলে কার হাতে? কেউ জানে না। বন্দুকের যেমন কোন দিক নেই, তেমনি এই ভাইরাসেরও নেই কোন দিক। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব দিকই তার নিশানা। বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ। গবেষকরা কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই খবর আসে এই বুঝি ভ্যাকসিন এসে গেলো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই খবর বাসি। দাবি করছেন অন্যকেউ। আখেরে কিছুই হয়নি। বাঁচার তাগিদে মানুষ স্বেচ্ছাবন্দি। ঘরে খাবার নেই। তবুও কেউ বের হচ্ছে না খাবারের সন্ধানে। বোমার মধ্যেও মানবতার ডাকে মানুষ হাজির হয় খাবার নিয়ে। এই ভাইরাস মানবতাকে বিপন্ন করে দিয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে। কাউকে দোষারোপ করে বলছি না। কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। এই ভাইরাস কারও সৃষ্টি নয়। তাই মনে হয় সত্যটা বলতে হবে। মানুষ যদি বাস্তব অবস্থা না জানতে পারে তখন বিপদ হবে আরও বেশি। সত্য গোপনের পরিণতি ভাল হয় না। বগুড়ায় একজন মানুষের দাফন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হল তা বোধ করি খোলাসা করে বলার দরকার নেই। মানুষ এখানে অসহায়। সরকার কি সবকিছু করতে পারবে? সরকার সময়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে এটিই মানুষের চাওয়া। এই মুহুর্তে খালি চোখে বড় সঙ্কট না দেখলেও বড় সঙ্কট কিন্তু সামনে। দেশে দেশে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর বাইরে নই। ঝড়ো হাওয়া আসেনি। দমকা হাওয়ায় অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ছে। এই সময়ে ভুল কৌশল পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।

মানবিকতা দেখাতে গিয়ে  বিদেশ ফেরৎ বাংলাদেশীদের আমরা পর্যবেক্ষণেই রাখিনি। কেউ বলবে না ওদের আসতে দেবো না। নিজ মাতৃভূমিতে তারা আসবে। কিন্তু ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ থাকতে আমরা শুরুর দিকে পরামর্শও দেইনি। বরং ভাইরাসমুক্ত সার্টিফিকেট দিয়েছি। এটা ছিল ভুল। এই ভুলের মাসুল যেন আমাদের আর দিতে না হয়।

বলা হচ্ছে সত্য বললে নাকি মানুষ আতঙ্কিত হবে। অঘোষিত লকডাউনে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। ফেরি ঘাটে লাখো মানুষের ভিড় আর আকুতির ছবি আমরা দেখেছি। লকডাউন মানে লকডাউন করতে হবে। হোটেল রেস্তোঁরা খোলা রেখে লকডাউন পৃথিবীর কোথায় আছে? পশ্চিমা দুনিয়ায় মদের দোকানও বন্ধ। যারা খাদ্যের চেয়ে মদকে ভালবাসে বেশি। তাছাড়া হোটেল রেস্তোঁরাগুলো কি করোনা মুক্ত?

অতি মানবিকতা আমাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া রিপোর্টে ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশকে এখান থেকে বার্তা নিতে হবে। জাতিসংঘের অনুমান কতোটা সত্য জানি না। মনে-প্রাণে চাই এটা যেন মিথ্যে হয়। বিদেশি কূটনীতিকদের দলে দলে ঢাকা ছাড়ার খবরে চিন্তার ভাঁজ কপালে। ৪৮ জন আক্রান্তের দেশ ছেড়ে তারা কেন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর দেশে ফিরছেন তা বুঝতে পারি না।

শেষ কথা  — নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিখ্যাত উক্তি ‘দুর্ভিক্ষ থামাতে পারে মুক্ত  সংবাদ মাধ্যম’। দেশে দেশে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

  • লেখক পরিচিত — প্রধান সম্পাদক, দৈনিক মানবজমিন।   



অশ্রুতে লেখা নুরুর অক্ষয় স্মৃতি

কাদের গণি চৌধুরী 

কাদের গণি চৌধুরী 
আবারো ফিরে এলো সেই ভয়াল ৩০ মার্চ। 

ছাত্রদল নেতা ও কমিউনিটি সংগঠক নুরুল আলম নুরু হত্যা দিবস। 

মার্চের রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের শেষে মধ্যরাত ফেরিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগর হয়ে ভেসে আসা, পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ঠাণ্ডা বাতাসের ছোঁয়ায় গভীর ঘুমে নাগরিকেরা তখন। এই বিশ্বে শুরু হলো আরেকটি দিনের ক্ষণ  গণনা, বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০১৭। শহরের চন্দনপুরার বাসায় সদ্যজাত শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন নুরুল আলম নুরুও। এই সময়ে দরজায় কড়া নাড়ে আগুন্তক দলেবলে খুনিচক্র। ঘরে ঢুকেই নুরুর বুক থেকে হেঁচকা টানে কেড়ে নেয় শিশু সন্তানকে।  পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয় নুরুকে।


সেদিন শহর থেকে প্রায় ৭০ কিমি পূর্বে কর্ণফুলী নদীর তীরে তাঁর মৃতদেহ যখন পাওয়া যায় তখন হাত ছিল দড়ি দিয়ে শক্তভাবে বাঁধা। চোখ ও মুখ বাঁধা ছিল শার্ট দিয়ে। পুরো শরীরে ছিল রক্তাক্ত জখমের কালো চিহ্ন। মুখের ভিতর ঢুকানো ছিল কালো রংয়ের জর্জেটের ওড়না। শরীরের বিভিন্নস্থানে চামড়া তুলে নেয়া হয়েছিল। লোহার রডের আঘাতে ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল জখমের চিহ্ন। অত্যন্ত কাছ থেকে মাথায় করা হয়েছিল তিন তিনটি গুলি।

লাশের সুরুতহাল দেখে চিকিৎসকদের ধারণা একটানা তিন ঘন্টা তিলে তিলে অমানবিক নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় তিন তিনটি গুলি করা হয়েছিল। নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখে মনে হয় খুনিদের প্রচণ্ড আক্রোশ ছিল নুরুর ওপর।

এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড দুনিয়ার ইতিহাসে খুব কমই দেখা যায়। কি অমানবিক! কি বর্বরতা!! কি পৈশাচিকতা!!!

নুরুর ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে সে দিন কঠিন পাথর হৃদয়ও কেঁপে ওঠেছিল। চোখের পানি চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারেনি কেউ। 

এখনও বছর শেষে এদিনটি যখন ফিরে আসে হৃদয়টা যেন কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সে নৃশংসতার ছবি। অগোচরে মুখমণ্ডল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে বেদনার নোনা অশ্রুধারা।

নুরুল আলম নুরু'র মৃতদেহের ওপড়ে আচড়ে পড়েছেন তাঁর শোকার্ত স্ত্রী। 

নুরু ছিল আমার সুপরিচিত। মার্চ ২৫, ২০১৭, জাতীয়তাবাদী হেল্পসেলের আয়োজনে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে ছিল গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন প্রধান অতিথি আর আমি ছিলাম বিশেষ অতিথি। অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারি ও মতবিনিয় সভার সঞ্চালক ছিলেন নুরুল আলম নুরু। অনুষ্ঠান শেষ করে নুরু আমার সাথে আমার বাসায় আসে। দুপুরে আমার বাসায় এক সাথে খাবার গ্রহণ করি। এরপর আমরা এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিই। বিকেলের ফ্লাইটে চট্টগ্রাম আসি এবং বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেই। সারা রাত একসাথেই ছিলাম। পরদিন দুপুরে ফটিকছড়ির গুম হওয়া শহিদুল আলম সিরাজের পরিবারের খোঁজ নিতে ওনাদের বাসায় যাই নুরুসহ আরো কয়েকজন। কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে রাতে যখন হোটেলে আসি এরই মধ্যে খবর আসে ফটিকছড়ি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য সচিব আল মামুন ও সাইমুনুল করিম মোটর সাইকেল এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়েছেন। নুরু ও আমি ছুটে যাই চট্টগ্রাম মেডিকেলে। তখন রাত দুইটা। আমি ঘন্টা খানেক থেকে হোটেলে ফিরে আসি। নুরু সারা রাত হসপিটালে কাটিয়ে দেয় আহত ছাত্রনেতাদের শয্যা পাশে। পর দিন ২৭ তারিখ সকালে একসাথে নাস্তা করি নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহদাত হোসের বাসায়। সেখান থেকে হযরত আমানত শাহ'র (রঃ) মাজারে গিয়ে নামাজ পড়ি এবং কবর জিয়ারত করি এক সাথে। আমাদে সাথে ছিল ছাত্রদল নেতা মোরশদ হাজারী, হাটহাজারীর গিয়াস চেয়ারম্যান, নগর বিএনপি নেতা আলমগীর নুর, ফটিকছড়ি ছাত্রদলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, তারেক, জিয়াউর রহমান জিয়া, মহসিন কলেজের সিফাত ও শফি, ওসমান তাহের সম্রাট ইঞ্জিনিয়ার মুন্না, একরামুল হক চৌধুরীসহ অনেকেই। সারা দিন একসাথেই ছিলাম। সন্ধ্যায় আমাকে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে নুরু ফিরে যায় চট্টগ্রামের বাসায়।

সদ্যজাত শিশু সন্তান কোলে নিয়ে নুরুল আলম নুরু
আমার সাথেই ঢাকায় ফিরে আসার কথা ছিল নুরুর। সেভাবে টিকেটও করা ছিল। আসার দিন হঠাৎ নুরু আমাকে জানায়, ভাই আপনার একটা ভাতিজা হয়েছে। আপনি যদি বলেন দুই দিন ওদের সাথে থেকে যাই। প্রিয় সন্তানের কাছে থাকতে চায়, বাধা দেই কিভাবে? আমি বললাম ঠিক আছে থাক। তবে সাবধানে থেকো। নুরু জানাল ভাই, সব মামলায় জামিন হয়ে গেছে আশা করি আর সমস্যা হবে না।

আমি ফিরে আসি ঢাকায়। বাসায় ফেরার পর প্রথম ফোনটিই নুরুর। ভাই বাসায় কি পৌঁচেছেন। আমি বল্লাম বাসায় এসে মাত্র ফ্রেশ হলাম। আমি জানতে চাইলাম তুমি কোথায়, বাসায় গিয়েছ? বললো না ভাই এখনো বাইরে আছি, কামরুল (নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক) ভাইদের সাথে। বরাবরের মতো আবারো বললাম সাবধানে থেকো। ফোনটা যখন রাখতে গেলাম তখন হঠাৎ বলে উঠলো ভাই আরেকটা কথা ছিল। আপনিতো পেশাজীবি সমাবেশ যোগদিতে শুক্রবারে আবার চট্টগ্রামে আসবেন, আমি আপনার সাথে ঢাকায় ফিরে যাব। আমার জন্য একসাথে ফেরার টিকেট করবেন। আর মাহমুদ ভাইয়ের (আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান) সাথে আমাকে ভালভাবে পরিচয় করিয়ে দেবেন। আমি বললাম ঠিক আছে। আমি টিকেট করে রাখবো। আর সমাবেশটা যাতে ভালভাবে হয় সেদিকে খেয়াল রেখো। বললো কাল বিকেলে শাহদাত ভাই পেশাজীবী সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি সভা ডেকেছেন। চিন্তা করবেন না, ভালো প্রোগ্রাম হবে ইনশাআল্লাহ। এটিই ছিল শেষ কথা। পরের দিন আমার সাথে আর কথা হয়নি।

২৯ মার্চ গভীর রাত। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। বার বার ফোন বাজছিল। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ফোন ধরি। কে? জানতে চাইলে ওপাশ থেকে জবাব আসে মামা আমি নুরুর ভাগিনা রাশেদ। রাশেদ কেমন আছ? এতো রাতে ফোন। সে বললো, নুরু মামাকে পুলিশ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। পুলিশের আচরণ খুব রুঢ় ছিল। ভাল ঠেকছে না। মামা কিছু করেন। সারা রাত আর ঘুমাতে পারি নি। টিভি চ্যানেল গুলোকে খবর দিলাম। কয়েকটি টিভি স্ক্রলে নিউজও করেছে। আমাদের ধারণা ছিল যেহেতু পুলিশ তুলে নিয়েছে এবং টিভিতে নিউজ এসে গেছে হয়তো গুম, খুন করবে না। এরেস্ট দেখাবে। কিন্তু না, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের পুলিশ তা করেনি।

সারা রাত ধরে কথা হয় ভাগিনা রাশেদ, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ও গিয়াস কাদের চৌধুরীর সাথে। সকাল ৯টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী আমাকে ফোন দেন। কন্ঠ প্রচণ্ডভারি।

গনি তুমি কই?
আমি বললাম ভাইজান মাত্র প্রেসক্লাবে আসলাম।
তিনি বললেন, নুরু মনে হয় নেই। ওকে মেরে ফেলেছে।
আমি বললাম কিভাবে বুঝলেন?
তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর তীরে তাঁর লাশ পড়ে আছে।
আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন এটি নুরুর লাশ?
আমি লোক পাঠিয়েছিলাম, তাদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী আমি নব্বই ভাগ নিশ্চিত এটা নুরুর লাশ। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবো। আমি বললাম আপনি কি বাসায়, আমি আসতেছি।

তখন আমার দু'চোখ পানিতে ভেসে যাচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা শাওনকে নিয়ে ছুটে গেলাম গিয়াস ভাইয়ের বাসায়। আমাকে পেয়ে গিয়াস ভাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। পুরোদিন গিয়াস ভাইয়ের বাসায় ছিলাম। সেখান থেকে বার বার কথা হয় ডাঃ শাহদাত ভাই ও ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত ভাইয়ের সাথে। লাশ উদ্ধারের আয়োজন করা হয়। পুলিশকে জানানোর পরও লাশ উদ্ধারে কোনো আগ্রহ তাদের ছিল না। দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে বিকেল ৪টার দিকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউজান থানার ওসি নুরুর পরিচয় দিল সন্ত্রাসী নুরুইয়্যা বলে।

গিয়াস ভাই পরের দিন ফাস্ট ফ্লাইটে চলে যান চট্টগ্রামে। আমি, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হাসিন আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার সবুজ, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার চুন্নুসহ পেশাজীবী নেতারাও ভোরে রওনা দেই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। দুপুরে জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে জানাজায় অংশ নিই এবং মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে নুরুর পরিবারের সাথে দেখা করি। মাহমুদুর রহমান নুরুর সন্তানদের লেখা পড়ার ভার নিজ কাঁধে তুলে নেন। নুরুর ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে অঝোর ধারায় কেঁসেছিলেন মাহমুদুর রহমান।

নুরুর স্ত্রী জানালো, ২৯ মার্চ বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নুরু তার ছোট শিশুকে বুকে নিয়ে শুয়েছিল৷ এমন সময় পুলিশ এসে দরজার কড়া নাড়ে। নুরুর ভাগিনা দরজা খুলতেই ১০ জন হৈ-হুল্লোড় করে বাসায় ঢুকে যায়। এদের মধ্যে-আট জন সিভিল পোশাকে ছিল আর দু-তিনজন ছিল পুলিশের পোশাকে৷ তাদের হাতে ছিল শট গান এবং চাইনিজ বন্দুক৷ তারা ঘরের ভিতরে ঢুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছোট ছেলেটিকে নুরুর বুক থেকে টেনে আমার কাছে দিয়ে দেয়। এরপর নুরুকে জামার কলার ধরে টেনে খাট থেকে নামায়৷ ধাক্কাতে ধাক্কাতে মাইক্রোবাসে তোলে। স্যান্ডল পর্যন্ত পড়তে দেয় নি। গাড়িতে তুলেই হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয়। জামা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। আমার বুক তখন ধড়ফড় ধড়ফড় করে কাঁপছিল। আমি ছুটে গিয়ে বলি, ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমাকে সরিয়ে দিয়ে গাড়ি দ্রুত চলে যায়।

তিনি বলেন, ‘‘এরপরই আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি, থানার ওসিকে জানাই৷ কিন্তু পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করে৷ তারা জানায়, পুলিশের কেউ তাঁকে তুলে নিয়ে যায়নি৷ সারারাত পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি। ওরা আমাদের কোনো সহযোগিতাই করলোনা। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তাঁর লাশ পরে থাকার খবর পাই আমরা৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘নুরুর মাথায় তিনটি গুলির চিহ্ন আছে আর কাধে আছে জখমের চিহ্ন ৷ তাঁর হাত-পা দড়ি দিয়ে বাধা ছিল, মুখ ও চোখ বাধা ছিল ওড়না এবং জামা দিয়ে৷''

৩০ মার্চ বাংলাদেশের সংবাদপত্রে গুরুত্বসহ ছাপা হয় এ নিউজ। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নিজ বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

ওই দিন ছিল বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০২০। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে ২ ঘন্টা শলাপরামর্শ করে বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামের খেলাঘাট এলাকায় উপুড় হয়ে ছিল তার মরদেহ।

নুরুর বাড়ি রাউজান উপজেলার গুজরা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের কমলার দিঘীর পাড় এলাকায়।

রাউজান থানার ওসি মো.কেফায়েত উল্লাহ গনমাধ্যমকে বলেন," আমরা একটা লাশ উদ্ধার করেছি।মাথায় গুলির চিহ্ন আছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা।তার পরণে আছে লুঙ্গি।শার্ট দিয়ে চোখ বাঁধা। মুখের ভেতর ওড়না ঢোকানো পাওয়া গেছে।"

ওসি বলেন, "পরিচয়ও আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সে বিএনপির ক্যাডার নুরুল আলম নুরু প্রকাশ নুরাইয়া। তার বিরুদ্ধে রাউজান থানায় দুইটি হত্যা, একটি বিস্ফোরকসহ চারটি মামলা আছে। এছাড়া ‌আরও বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।"

নুরুকে হত্যার পর তাঁর পরিবারের উপর আসতে থাকে নানান হুমকি। আত্নগোপন চলে যেতে হয় প্রত্যক্ষদর্শী নুরুর ভাগিনা রাশেদকে। যার কারণে ঘটনায় ১৩ দিন পর এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজের আদালতে এই অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় করা এই অভিযোগে এক পুলিশসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শেখ মোহাম্মদ জাবেদ, বাবুল মেম্বার, খালেক মেম্বার, জসিম, সেকান্দর, নাসের ওরঢে টাইগার নাসের, এমরান, মো. হাসান, নুরুল ইসলাম, লিটন, মেহেদি, ভূপেষ বড়ুয়া ও রব্বান।

নুরুর ওপর ফ্যাসিবাদী সরকারের আক্রোশের মূলকারণ ছিল সে ছিল জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সমন্বয়কারী। যেখানেই গুম খুনের ঘটনা ঘটতো, নুরু সেখানেই গিয়ে হাজির হতো। হেল্প সেলের ব্যানারে নিয়মিত সভা,সমাবেশ ও সেমিনারের মাধ্যমে সংবিধান ও মানবতা বিরোধী এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন জোরালো ভাবেই। মে মাসে সারা দেশের গুম পরিবারকে নিয়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একটি সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। ওই সমাবেশের সমন্বয়ক ছিলেন নুরু।

নুরু হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ওইদিনই বিবৃতি দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

ক্ষমতাসীনদের নির্দেশেই আইনশৃংখলা বাহিনী নুরুকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হবে, সেদিন আর বেশি দূরে নয়।

বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন,এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বর্তমান সরকার রেহাই দিলেও সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতার দাপটে জনগণকে ভয় পাইয়ে দেয়ার অপকৌশল করে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, আমি আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা নির্মমভাবে নিহত নুরুল আলম নুরুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকে কাতর পরিবারবর্গ ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, নুরুল আলম নুরুকে পুলিশ আটক করেও অস্বীকার করে। পরে তাকে হত্যা করে লাশ চট্টগামের রাউজান উপজেলার দাগুয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীরে খেলাঘাট কৈয়াপাড়া এলাকায় ফেলে রাখা হয় এ মর্মন্তুদ ও পৈশাচিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

বিবৃতিতে খালেদা বলেন, বাংলাদেশকে গোরস্থানে পরিণত করাই যেন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য। দেশের শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মৃত্যু বিভীষিকা ওঁৎ পেতে আছে। দেশের মানুষ আজ রক্তহিম করা ভীতি এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছে। চারিদিকে সংশয়-ভয়জনিত আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, রক্তাক্ত সহিংসতা আওয়ামী দুঃশাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ সরকারের ক্রোধের প্রধান টার্গেট হচ্ছে যুবক ও তরুণরা। ফ্যাসিস্টদের ভয়াবহ ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে প্রতিবাদী তরুণরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আর সেজন্যই দেশবিরোধী নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে তারুণ্যের দ্রোহকে নির্মূল করার জন্যই আওয়ামী সরকার জাতীয়তাবাদী শক্তির ছাত্র ও যুবকদের হত্যা করছে। সরকারের এ ধারাবাহিক প্রাণঘাতী নৃশংসতার করুণ শিকার হয়েছে নুরুল আলম নুরু।

খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্রনেতা নুরুল আলম নুরু হারানো গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। এজন্যই তাকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে সরকার বাক, চিন্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে, সেই সরকার নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে হত্যা করতে দ্বিধা করে না। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার নিজেই দুর্বিনীত অনাচার সৃষ্টি করে দেশকে এক মহাদুর্যোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তবে রক্তাক্ত পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে লাশের স্তূপ বানিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। ক্ষমতাসীনরা টের পাচ্ছে না যে, তাদের অপকীর্তি ও অনাচারের জন্য তাদের দিকে মহাদুর্দিন এগিয়ে আসছে। বর্তমান আওয়ামী সরকারের অপশাসনে দেশের সামগ্রিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এখন কুৎসিত রূপ ধারণ করেছে।

মনে বাজছে সেই বিখ্যাত দেশাত্নবোধক গানের কয়েকট লাইন — 


কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙাতাঁরা কি ফিরিবে আজ সুপ্রভাতেযত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে৷


  • লেখক পরিচিত — সভাপতি, ডিইউজে। 

Sunday, March 29, 2020

সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন


মুঈদ রহমান



সারা বিশ্বে চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে; চীন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরান, স্পেনসহ অবকাঠামো ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নত অনেক দেশকেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে।

বাদবাকি দেশগুলোর মানুষের মননে বুনে দিয়েছে ‘অবধারিত’ মৃত্যুভয়। এর আগে যত ধরনের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সংকট এসেছে তাতে পৃথিবীর একটি বা কয়েকটি অংশ হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; কিন্তু করোনাভাইরাসের মতো বিশ্বের সব মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলেনি।

আক্রান্ত দেশের সংখ্যা প্রায় ২০০। বাংলাদেশে সরকারি ভাষ্যমতে, মৃত্যুহার কিংবা আক্রান্তের পরিসংখ্যান হয়তো ওই অর্থে বিভীষিকাময় নয়, তবে ১৭ কোটি মানুষ আতঙ্কিত।

সরকারের তরফ থেকে বারবারই ‘আতঙ্কিত না হওয়ার’ আহ্বান জানানো হলেও বিশ্ব পরিস্থিতি মানুষকে মরমে মেরে ফেলছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে যখন আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন আর্থিক ঝুঁকি অনবরত দরজায় কড়া নাড়ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ধারণা করছে, আজকের অবস্থা বিবেচনা করেই বাংলাদেশ ৩০২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের (এক ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরলে দেশি মুদ্রায় তা হবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অঙ্কটা ৫০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা) কম নয়। ইতিমধ্যে পোশাক খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি অধিকতর ভয়াবহ হলে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।

আগামী এক বছরে এ দেশের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারে। সরকারি হিসাবমতে, বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ। কিন্তু গবেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের প্রতি দুটি পরিবার বা খানার (Household) তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একজন বেকার।

আমাদের দেশে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ পরিবার আছে। সে হিসাবে বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এই ৯০ লাখ। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যে একটি অসহনীয় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও এর আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।

রোগের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রতিদিন একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে সর্বশেষ অবস্থাটি অবগত করার চেষ্টা করছে।

প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রতিনিয়তই আপডেট প্রকাশ করছে। সেক্ষেত্রে অন্তত এ বিষয়ে বাড়তি কিছু বলাটা বাতুলতার বেশি কিছু হবে না; আমি সচেতনভাবেই সেদিকে এগোব না।

এ মহাবিপর্যয়ে আমাদের বেশকিছু দুর্বল দিক উন্মোচিত হয়েছে, যা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশে এ করোনাভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটেছে আক্রান্ত দেশের প্রবাসীদের দ্বারা। কিন্তু এর জন্য প্রবাসীদের দায়ী করা যাবে না।

কারও অজান্তেই এর বিস্তার ঘটতে পারে। আমাদের উচিত ছিল প্রবাসীদের বিষয়ে একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া। এর বিপরীতে আমরা তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছি যেন তারা অনেকটাই অচ্ছুৎ, মহা অপরাধী।

কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি; কিন্তু যেখানে তারা বাস করবেন তা ছিল অস্বাস্থ্যকর আর অব্যস্থাপনায় ভরপুর। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গাদাগাদি করে রাখার ব্যবস্থা করেছি। ফলে ৪০০ জনের মধ্যে যদি একজনও ভাইরাস বহন করে থাকত তাহলে মুহূর্তেই তার দ্বারা সবাই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

আমরা বিদেশফেরতদের কতটা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেছি তার প্রমাণ মেলে সরকারের এক মন্ত্রীর তিরস্কারের ভেতর ‘প্রবাসীরা বাংলাদেশে এলে নবাবজাদা হয়ে যায়।’ এটি অত্যন্ত আপত্তিকর। একটি সত্য ভুলে গেলে চলবে না ২০১৯ সালে প্রবাসীদের কাছ থেকে আমরা রেমিটেন্স হিসেবে পেয়েছি প্রায় ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।

এ পরিমাণ টাকা আমাদের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ এবং চলতি বাজেটের প্রায় ৩০ শতাংশের সমান এবং আরও বলা যায়, এ রেমিটেন্স দিন দিন বাড়ছে। ২০১৮ সালে তা ছিল ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন। এ এক বছরে রেমিটেন্স বেড়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সুতরাং আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো বাঞ্ছনীয়। আমরা তাদের আপন ভেবে বোঝাতে অক্ষম ছিলাম যে, ‘আপনারা পরিবারের জন্য, দেশের জন্য বিদেশবিভুঁইয়ে রাতদিন পরিশ্রম করছেন, তা আপনারই কারণে চিরতরে মিলিয়ে যেতে পারে।’ আমরা অনুনয় না করে জবরদস্তি করেছি, বিমাতাসুলভ আচরণ করেছি। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা, গতিপ্রকৃতি তাদের বোঝাতে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি।

উল্টোদিকে একথাও ঠিক যে, প্রবাসীদের কেউ কেউ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। তারা করোনাভাইরাসের মতো একটি বিপর্যয়কে আমলে নিচ্ছেন না। যার যার বাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করছেন।

সমগ্র এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত করে ফেলছেন। এক ভদ্রলোকের কথা শুনলাম। তিনি কোয়ারেন্টিনের রীতিনীতি ভঙ্গ করে পুকুরে গোসল করেছেন, যার ফলে সমগ্র এলাকার কোনো মানুষই আর সে পুকুরে নামছেন না। এটি খুবই বিব্রতকর।

এর দ্বারা আমাদের অজ্ঞতা, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা প্রকাশ পায়। চিকিৎসক সম্প্রদায়ও ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত। এরই মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পেয়েছি।

এমনিতেই আমাদের দেশে চিকিৎসকের অভাব। প্রতি ১৮৫০ জনে মাত্র একজন ডাক্তার। নার্স আছে প্রতি ১০ হাজারে দুইজনেরও কম। সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার ডাক্তার আর ৩৫ হাজার নার্সের এ সীমিত আয়োজন।

ডাক্তাররা যথার্থই তাদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। আমরা অনেকেই তা উসকানির চোখে দেখেছি। কিন্তু ডাক্তারদের নিরাপত্তার কথাটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। করোনাভাইরাস ডাক্তার আর সাধারণ মানুষে তফাৎ করবে না।

ডাক্তাররা অবশ্যই পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) দাবি করতে পারেন। করোনাভাইরাসের বয়স ৩ মাস অতিক্রম করে গেছে। অথচ আমরা ডাক্তারদের নিরাপত্তার কথাটা মাথায়ই নেইনি। এটি একটি বড় ধরনের দুর্বলতা।

তবে আশার কথা, ‘পে ইট ফরওয়ার্ড’ এবং ‘মানুষ মানুষের জন্য’ নামের দুটি সংগঠন এরই মধ্যে ৪ লাখ পিপিই হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থের জোগান দেবে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ট্যাক্সেশান অ্যাসোসিয়েশন এবং ঢাকা রোটারি ক্লাব নর্থ-ওয়েস্ট।

আশা করা যাচ্ছে, এ সপ্তাহেই সরবরাহের কাজ শুরু হবে। কিন্তু কথা হল, সরকারি তরফ থেকে দু’মাস আগেই তো কাজটি সারা যেত। এটি এক ধরনের অদূরদর্শিতা। চিকিৎসকদের জীবন বিপন্ন করে সেবা প্রত্যাশা করাটা অবিবেচনাপ্রসূত।

সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সামনে দুটি উদাহরণ হল চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া।

জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশে যখন মাত্র দুই হাজারের মতো ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে, তখনই চীন সরকার রোগটি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপে চলে গিয়েছিল। এক মাসের মধ্যে চীন সরকার হুবেই প্রদেশ সফলভাবে লকডাউন করেছিল।

আর চীনের অন্যত্র মানুষ স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে চলে গিয়েছিল। নতুন চন্দ্র বছর উপলক্ষে যারা গ্রামে পরিবারের কাছে গিয়েছিল, তারা আর এর মধ্যে বেইজিং ও সাংহাইয়ে ফিরে যায়নি। এছাড়া বাববার মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। বহু মানুষ এক মাসের মধ্যে তাদের ফ্ল্যাট থেকে বের হয়নি।

চীনের পরই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়। করোনা মোকাবেলায় এ দেশটির সাফল্যও অনুকরণীয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন ১০ হাজার লোকের করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং তা বিনামূল্যে। আর আমাদের? এখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাটাই অত্যন্ত সীমিত, চিকিৎসা তো পরের বিষয়। করোনা প্রতিরোধে আমাদেরও চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পথে হাঁটতে হবে। আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যেই অনেক দেরি করে ফেলেছি। আর বিলম্ব হলে এর মাশুল দিতে হবে আমাদের।
অন্যদিকে মাস্ক ব্যবসায়ীরা যে কাজটি করেছেন তা অতিশয় নির্মম। পুঁজিবাদে মুনাফা হল বিনিয়োগের প্রাণ। তাই বলে ২০ টাকার মাস্ক ১০০ টাকা? আমরা জানি যে, চাহিদা অতিরিক্ত হলে পণ্যের দাম বাড়ে। কারণ অতিরিক্ত সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎপাদনের প্রান্তিক খরচ বেড়ে যায়। উৎপাদনের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ।

কিন্তু কাপড়ের দাম তো বাড়েনি, যদি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তা ‘ওভার টাইমের’ জন্য মজুরি বাড়তে পারে। সব বাস্তবতা আমলে নিলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ৫ থেকে ৭ শতাংশের বেশি হতে পারে না।

সেক্ষেত্রে একটি ২০ টাকার মাস্ক সর্বোচ্চ ২১ টাকায় বিক্রি হতে পারে, ১০০-১৫০ টাকা হয় কী করে? আমরা কি আতশবাজি কিনছি? মানুষের জীবন নিয়ে, সুযোগ বুঝে আকাশচুম্বী মুনাফা করে প্রমাণ করলাম যে আমাদের মনন জগতে ‘বুর্জোয়া মানবতার’ সামান্যটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।

এ ব্যাপারে অনেকেই সরকারের ‘ক্লোজ মনিটরিংয়ের’ অভাবকে দায়ী করছেন। কিন্তু আমি মনে করি তা সর্বাংশে সঠিক নয়। অতীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে, বিশেষ করে বন্যা মোকাবেলায় আমরা সাধারণ মানুষ সরকারের পাশাপাশি সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী আমাদের অতীত গৌরবকে ম্লান করে দিয়েছে।

ওপর মহলের অনেকের আচরণ ও বক্তব্য করোনার ভয়াবহতার প্রতি হেয়ালি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এক সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র লন্ডন থেকে ফিরে সরাসরি আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন।

অথচ তার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের চেয়ে আওয়ামী লীগ অধিকতর শক্তিশালী।’ কথাবার্তা, আচার-আচরণে আমাদের আরও সতর্ক থাকা জরুরি। তা না হলে করোনাভাইরাসের যথাযথ ভয়াবহতা সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারবেন না।

এ তো গেল আমাদের দুর্বল দিকগুলো। আগামীতে আমাদের ভাবনাগুলো কী হওয়া উচিত? সরকার এক ঘোষণায় প্রয়োজনের তাগিদেই সব প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। করোনা রোধে এর কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু প্রশ্ন হল, কাজ হারানো মানুষের পেটের জোগান দেবে কে? ইকো-বিজনেস ২০১৮ সালে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, অনানুষ্ঠানিক খাতে গ্লোবাল কর্মজীবী মানুষের গড়হার ৬১ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের মোট কর্মজীবী মানুষের ৭৩ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

যে কোনো দুর্যোগেই আমাদের নজর থাকে পুঁজিপতিদের দিকে। অথচ আমরা ভুলে যাই যে, এ দেশের একজন ভিক্ষুকও সরকারকে বছরে প্রায় আড়াই হাজার টাকা পরোক্ষ কর দেয়। ভিক্ষুকের ভোগকৃত পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করে সরকার তা আদায় করে। সুতরাং বিপদের দিনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মঙ্গলের দিকটি মাথায় রাখতে হবে।

সবশেষে বলতে চাই, করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীকে একটি মেসেজ দিয়েছে। সেটা হল, মানববিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির পেছনে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় না করে তা মানবের কল্যাণে, মানবের অস্তিত্বের জন্য স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করাটা জরুরি।


  • লেখক — অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  • কার্টসি — যুগান্তর/ মার্চ ২৮, ২০২০ 



কোভিড-১৯ বৃত্তান্ত — জানুন, বাঁচুন

ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম

ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম

বিশ্বব্যাপী নতুন ভয়ঙ্কর নোবল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকজনের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রায় ৩০ হাজার এবং রোগ থেকে সেরে উঠেছে প্রায় ১ লাখের বেশি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত মানুষের হিসাবে চীন ও ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনে আক্রান্ত মানুষের মোট সংখ্যা ৮১৭২৮ এবং ইতালিতে ৮৬৪৯৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১০১৭২৫ মানুষের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। সংখ্যা বেশি হলেও এই দুই দেশের চেয়ে এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্রে কম । চীনে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ৩২২১, ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ৯১৩৪ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৫৮৯ জন। ইতালির পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ, প্রতিদিনই সেখানে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ইতালির পর প্রাণহানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। সব মিলিয়ে দেশটিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৩৮ জনে। 

ডিসেম্বর, ২০১৯’র মাঝামাঝি সময়ে মধ্য চীনের হুপেই প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী উহান নগরীর কর্তৃপক্ষ এই নতুন ধরনের করোনাভাইরাসটি শনাক্ত করেন। সেসময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৪১ জন চীনা ব্যক্তির গুরুতর ফুসফুস প্রদাহ রোগ নিউমোনিয়া হয়েছিল এবং প্রথমদিকে তাদের রোগের কোনও পরিষ্কার কারণ বের করা যায়নি কিংবা প্রচলিত ভাইরাস নিরোধক চিকিৎসাদিয়ে তাদের সারিয়ে তোলা যায়নি। উহান নগরীর হুয়ানান সামুদ্রিক খাদ্যের পাইকারি বাজারে বিক্রিত কোনও প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে বাজারের দোকানদার ও ক্রেতাদের মধ্যে প্রথম ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীতে চীনা বিজ্ঞানীরা এই নতুন প্রকারের করোনাভাইরাসটি পরীক্ষাগারে ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে আলাদা করে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। করোনাভাইরাস প্রথমে প্রাণীথেকে মানুষে সংক্রমিত হলেও বর্তমানে এটি বিবর্তিত হয়ে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে সক্ষম। ইতিমধ্যে চীন ছাড়াও সাউথ কোরিয়া, ইরান, জাপান, সিঙ্গাপুর, স্পেন, বৃটেন, কুয়েত, কানাডা, ইতালী, জার্মানি, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সসহ ১৮৮ দেশে ভয়াবহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং মহামারী আকার ধারন করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাসটির সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ভাইরাসটি দেহে সংক্রমিত হবার পরে ২ থেকে ১৪ দিন সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে এবং এ সময় বাহকের অগোচরে এটি অপর কোনও ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসটির সংক্রমণের ফলে যে ব্যাধিটি হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার নাম দিয়েছে ২০১৯ সালের করোনাভাইরাস ঘটিত ব্যাধি- কোভিড-১৯ (coronavirus disease 2019- COVID-19)। এই ব্যাধির উপসর্গ গুলির মধ্যে আছে জ্বর, শুকনো কাশি, ডায়রিয়া, পেশীতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও অবসাদগ্রস্ততা। সঠিক সময়ে সেবা-শুশ্রুষা না পেলে ব্যাধিটি জটিল আকার ধারণ করে, যার ফলে ফুসফুস প্রদাহ রোগ নিউমোনিয়া, তীব্র শ্বাসকষ্ট জনিত উপসর্গসমষ্টি, রক্তে জীবাণুদূষণরোধী তীব্র অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া (সেপসিস) ও জীবাণুদূষণ জনিত অভ্যাঘাত (সেপটিক শক) হতে পারে এবং পরিশেষে মৃত্যুও হতে পারে। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত কোভিড-১৯ ব্যাধির কোনও ডেফিনেটিভ প্রতিরোধক টিকা কিংবা কার্যকরী প্রতিষেধক চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নাই। হাসপাতালে মূলত রোগীদের উপসর্গ উপশম করার চেষ্টা করা হয়। তাই করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ঘনঘন সাবান-পানি, ৭০% অ্যালকোহল মিশ্রিত মিশ্রণ বা হ্যান্ডসেনিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে বা পরিষ্কার করতে হবে, যাতে হাতে লেগে থাকা ভাইরাস বিনষ্ট হয়। কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় অস্থায়ী কাগজের রুমাল বা টিস্যুপেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং সাথে সাথে সেই রুমাল বর্জ্যে ফেলে দিতে হবে ও হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে, যাতে ভাইরাস একব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে না ছড়ায়। যেসব ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি হচ্ছে, তাদের থেকে ন্যূনতম ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাতে বাতাসে ভাসমান ভাইরাস কণা শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ না করে। চোখ, নাক ও মুখে হাত দিয়ে স্পর্শ করা পরিহার করতে হবে, কেননা হাতে পরিবেশে উপস্থিত ভাইরাস স্পর্শের মাধ্যমে লেগে থাকতে পারে এবং নাক, মুখ, চোখের উন্মুক্ত স্থান দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে। রাস্তায় ও যত্রতত্র থুতু ফেলা যাবে না, কেননা থুতু থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। রাস্তায় বা অন্যত্র অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে, কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত খাবারের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। রান্না না করা মাছ-মাংস-ডিম খাবেন না।

চীনা বিজ্ঞানীরা পিসিআর (PCR) টেস্টের মাধ্যমে প্রথম উহান নগরীর বাজারের সাথে সরাসরি জড়িত অনেক ব্যক্তির দেহে এবং বাজারের সাথে জড়িত নয়, এমন ব্যক্তিদের দেহেও ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষেসংক্রমণ হতে পারে, এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে এবং বিশ্বের প্রায় ২০০টি  দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই নতুন করোনাভাইরাসটি ফ্লু বা অন্য সার্স ভাইরাসের তুলনায় কতটা মারাত্মক এখনও তার কোন পরিষ্কার ধারনা নাই। এই ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, অবসাদ, পেশীতেব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালীর রোগ - তথা ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়া হয়। কদাচিৎ মাথাব্যথা বা কফসহ কাশি হতে পারে। রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে এই ভাইরাসের কারণে তাদের শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা হ্রাস পায়। এছাড়া যকৃৎ ও বৃক্কের (কিডনি) ক্ষতি হয়। সাধারণত এক সপ্তাহের আগ পর্যন্ত উপসর্গগুলি ডাক্তার দেখানোর মত জটিল রূপ ধারণ করে না। কিন্তু ২য় সপ্তাহে এসে ব্যক্তি ভেদে অবস্থার দ্রুত ও গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে। যেমন ফুসফুসের ক্ষতি বৃদ্ধির সাথে সাথে ধমনীর রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা (হাইপক্সেমিয়া) দেখা দেয় এবং রোগীকে অক্সিজেন চিকিৎসা দিতে হয়। এছাড়া তীব্র শ্বাসকষ্ট জনিত উপসর্গসমষ্টি (ARDS বা acute respiratory distress syndrome) পরিলক্ষিত হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ রোগী চিকিৎসা ছাড়ায় ভাল হয়ে যায় শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আক্রান্ত রোগীর সিম্টোমেটিক চিকিৎসা দরকার হয় এবং প্রায় ১০ শতাংশ রোগী র নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (intensive care unit বা ICU) রেখে যান্ত্রিক ভাবে শ্বাস গ্রহণ করাতে হয় এবং কখনও কখনও কৃত্রিম ফুসফুসের ভেতরে রক্ত পরিচালনার মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন যোগ করতে হয়। এছাড়া ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতি হবার কারণে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ২য় একটি নিউমোনিয়া হবার বড় সম্ভাবনা থাকে এবং নিবিড় পরিচর্যাধীন রোগীদের ১০% ক্ষেত্রে এটি হয়। করোনা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণের মত উপসর্গ হলেও ফ্লুয়ের ঔষধে কোনও কাজ হয় না। এ পর্যন্ত রোগটির জন্য কোনও ঔষধ বা টিকা উদ্ভাবিত না হওয়ায় হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসা ছাড়া রোগ থেকে সেরে ওঠার উপায় নেই। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে থেকেই কম, তাদের নিউমোনিয়া হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এখন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ ভাইরাসটির সংক্রামণ প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদের মধ্যে বেশি করে, বাচ্চাদের করে শুধুমাত্র ২%। সাধারণত সংক্রামণ গ্রুপের মধ্যে বৃদ্ধরা সবথেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে, বৃদ্ধদের মধ্যে ভাইরাসটির ক্ষতিকর প্রভাব বেশি দেখা গেছে এবং এই গ্রুপের লোকদের মৃত্যুর হার সবথেকে বেশি। তাই আমেরিকা, ইটালী, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসারা এই মরনঘাতী ভাইরাসের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার দ্রুত নতুন থেরাপি আবিষ্কারের জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেটে করোনা ভ্যাকসিন ফেজ-১ (phase-1) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।করোনা প্রতিরোধ ট্রাস্টফোর্স কমিটির সদস্য ডা. ফাউসি মতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে বাজারে আনতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। এই অবস্থায়, আমেরিকার এনআইএইচ করোনার সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের চিকিৎসায় ‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’ ড্রাগেরক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে। আসলে ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এই দুই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি এই দুইটি ওষুধ ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে কাজ করে। ইতিমধ্যে ক্লোরোকুইন ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ইন-ভিট্র টেষ্ট টিউবে করোনাভাইরাসকে কিল করতে পারে এটা প্রমানিত। তাই, ক্লোরোকুইন ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চায়না, ইটালী ও কোরিয়াসহ কিছু দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে, চিকিৎসায় ও পরবর্তী পরিণতি প্রতিরোধে। জাপানিজ এন্টি-ভাইরাল ওষুধ ফেভিপিরাভির এবং একসাথে ক্লোরোকুইন বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’ পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস সংক্রামণ থেকে সেরে ওঠা স্বেচ্ছাসেবীদের প্লাজমা কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটা একেবারে অবশ্য নতুন পদ্ধতি নয়। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটা এ ক্ষেত্রেও কাজ করেছে। এসব উদ্যোগ করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় মানুষের মধ্যে আশার আলো জাগাচ্ছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী চার মাসে করোনাভাইরাস শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কেড়ে নিতে পারে ৮১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল আগামী জুন মাস পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিন-এর এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে এনডিটিভিঅনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশে করোনায় কি হতে পারে- ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডনের মডেল অনুযায়ী প্রজেকশন রিপোর্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনা মহামারীতে মোট আট কোটি একানব্বই লক্ষ (৮৯, ১২০,১৬১) ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে, যার মাঝে তেত্রিশ লক্ষ (৩,৩০৭,৩৯৩) জন রোগীর হসপিটাল ট্রিটমেন্ট লাগতে পারে, প্রায় সাত লক্ষ (৬৯৬,৫৯৫) জন রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগতে পারে এবং পাচ লক্ষ (৫০৭,৪৪২) জন রোগীর মৃত্যু হতে পারে। ব্র‍্যাকের গবেষণার মডেল অনুসারে করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে পাচ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। এটা কতটা ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ এবং বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষযটাকে গুরত্ব না দিয়ে শাসকদলের নেতা ও মন্ত্রীরা লাগামহীন ও কান্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা ও বক্তব্য দিচ্ছেন যেমন- করোনার চেয়েও আওয়ামী লীগের শক্তি বেশি - ওবায়দুল কাদের; করোনা মারাত্মক নয়, ছোঁয়াচে - জাহিদ মালেক স্বপন; শেখ হাসিনারমত নেত্রী পেয়েছি বলেই করোনা প্রতিরোধ করতে পারছি - মোহাম্মদ নাসিম; আমরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি - হাছান মাহমুদ; করোনা প্রতিরোধে ঢাকা বিমানাবন্দরের মত ব্যবস্থা উন্নত দেশগুলোতেও নেই - শাহরিয়ার আলম; করোনা নিয়ন্ত্রণেআমেরিকা-ইতালির চেয়েও বেশি সফল বাংলাদেশ - জাহিদ মালেক স্বপন; করোনা মোকাবেলায় চীনের মত হাসপাতাল বানানো হবে - মুস্তফা কামাল; করোনা মারাত্মক রোগ নয়, এটা সর্দি-জ্বরের মত - আব্দুল মোমেন; করোনা নিয়ে বিএনপি জনগনকে আতঙ্কিত করছে - হাছান মাহমুদ। এসব লাগামহীন ও কান্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা ও বক্তব্য জনমনে আরও আতঙ্কে সৃষ্টি করছে। তাই বাংলাদেশের মত অনুন্নত বা গরীব দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখনই জুরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

শুরুতে মনে করা হত করোনার মৃত্যুর হার ফ্লু’র চেয়ে কম, বর্তমান তথ্য মতে করোনার মৃত্যুর হার ফ্লু’র চেয়ে ১০-১৫ গুন বেশি। করোনাভাইরাসে মহামারির প্রকোপ কমিয়ে আনতে সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষা পরীক্ষা পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্যকরেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একই সঙ্গে সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আতঙ্কিত। সিম্টোমেটিক চিকিৎসা ছাড়া করোনা ভাইরাসআক্রান্ত রোগীর কোন চিকিৎসা নাই। তাই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কিভাবে প্রতিরোধ করা যাবে এবং কিভাবে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হবে? আর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় কারা ফাস্ট লাইন ডিফেন্স হিসেবে কাজ করবে? এসব নিয়ে সবাই চিন্তিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ভয়াঙ্কর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ফাস্ট লাইন ডিফেন্স হিসেবে পেশাগত স্বাস্থ্যকর্মীরা (চিকিৎসক, নার্স, এ্যাসিস্টেন্ট) মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত ২৪/৭ কাজ করছে। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, দোকান-পাট, রেস্টুরেন্ট, বারসহ বন্ধ কিন্তু হাসপাতাল খোলা রোগীর চিকিৎসার জন্য।হাসপাতাল খোলা থাকবে আর পেশাগত স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে এটাই চিরাচরিত নিয়ম।

ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনো এর কোনও টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, এমনকি তেমন কোনও চিকিৎসাও নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ইতোমধ্যে মানুষকে নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা, ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরেথাকা, ইমার্জেন্সী ছাড়া ট্রাভেল না করা, কোন গ্যাদারিং-এ না যাওয়া, পানি বা জুস বেশি করে খান, লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথেডাক্তারের দেখানোর, লক্ষণ অনুযায়ী ঔষুধ খান, আক্রান্ত হলে মুখোশ পরা এবং স্ত্রী-সন্তান-আত্মীয়স্বজনসহ কোন লোকের সাথে হাগনা করা বা চুমু না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আতঙ্কিত না হওয়ার ও আতঙ্ক না ছড়ানোর পাশাপাশি প্রতিরোধের নিয়ম মানুন এবং সুস্থ থাকুন।

  •  লেখক পরিচিত — সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ। 



Thursday, March 19, 2020

করোনা, কোয়ারেন্টাইন ও প্রবাসীর কষ্ট

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত দুটি আতঙ্কজনক শব্দ করোনা, কোয়ারেন্টাইন। ধারণা করা যায়, ২০২০ সালে এর চেয়ে আতঙ্কজনক আর কোনো শব্দ হয়তো বিশ্বকে এতটা নাড়া দেবে না। চায়নার উহানে শুরু হয়ে করোনা আতঙ্ক গ্রাস করেছে সারা পৃথিবীকে।

চায়নার পর ইতালি হয়ে ওঠে করোনার সবচেয়ে বড় টার্গেট। আক্রান্ত ও মৃত্যু বিবেচনায় এ দুটি দেশই এখনো শীর্ষে। মহাপরাক্রমশালী আমেরিকাও করোনার থাবায় কাবু হওয়ার পথে। পুরো ইউরোপই করোনার আঘাতে লন্ডভন্ড অবস্থা। এই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে আশ্রয় করে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। এ দেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করেন, বিশেষ কারণে এত দিন শনাক্ত না করা হলেও অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়েছেন অনেকে।

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ
ইউরোপ-আমেরিকার করোনা ক্রাইসিস শুধু সেখানকার অধিবাসীদেরই আতঙ্কিত করেনি। সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা, তা বাংলাদেশে বসবাসরত তাদের স্বজনদেরও উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেকে দেশে ফিরতে চেয়েও পড়ছেন বিড়ম্বনায়। ইতিমধ্যে যেসব দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্লাইট বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। লন্ডন ছাড়া ইউরোপের সব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ। এই সিদ্ধান্ত অতিমাত্রায় ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনা ঠেকাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে।

কিন্তু যাদের স্বজনরা প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্ক নিয়ে ইতালি, সুইডেন, স্পেনের মতো দেশে আছেন, তাদের তো চিন্তায় ঘুম হারাম। প্রবাসীদের সেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা ও ঝুঁকির ক্ষততে নতুন করে লবণের ছিটা দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি প্রবাসীদের তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘যেসব দেশে করোনাভাইরাস অস্বাভাবিক মাত্রায় ছড়িয়েছে, সেসব দেশ থেকে যিনি আসবেন তাকে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে, এটাই সরকারি সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমাদের প্রবাসীরা যখন আসেন, তারা এ ব্যবস্থায় খুবই অসন্তুষ্ট হন। দেশে এলেই সবাই নবাবজাদা হয়ে যান। ফাইভস্টার হোটেল না হলে তারা অপছন্দ করেন। কিন্তু বুঝতে হবে এটা তো একটা বিশেষ অবস্থা।’


এ কথা বলার সময় মন্ত্রী মনে রাখেননি, ওই প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনেক বড় ভূমিকা রাখছেন। তাদের মধ্যে অনেক উচ্চশিক্ষিতও প্রবাসে বড় পদে অধিষ্ঠিত বা বড় ব্যবসায়ীও আছেন। আর তা না হয়ে খুব সাধারণ শ্রমিক হলেও তার পাঠানো টাকা দিয়ে দেশ চলে। তাদের সঙ্গে এই ব্যবহার কি করতে পারেন একজন মন্ত্রী?

ইতালি থেকে দেশে আসা ব্যক্তিরা কোয়ারেন্টাইনে যেতে অনীহা দেখানোতে এই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন মন্ত্রী। কিন্তু তারা কেন সেখানে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি সে কথাও বলেছেন মন্ত্রী নিজেই, ‘যারা দেশে এসেছেন, তারা কোয়ারেন্টাইনে যেতে চাননি। দেশে আসছেন, সুতরাং সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে যাবেন, এই আগ্রহ তাদের ছিল। তারপরও জনস্বাস্থ্যের বৃহত্তর স্বার্থে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়, যেখানে আগেও ৩১২ জনকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারা এসে সে জায়গা পছন্দ করেননি। যেমন বাংলাদেশে ফ্ল্যাট বাথরুম ব্যবহার করা হয়, তারা কমোড বাথরুম ব্যবহার করেন। সুতরাং তাদের অসুবিধা হয়েছে। আমরা পর্যটন করপোরেশন থেকে খাবার দিয়েছি, তারা মনে করেন, ফাইভস্টার থেকে খাবার দেওয়া উচিত। আমরা সেটা দিতে পারিনি। সেজন্য তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল। পাঁচ ফুট দূরে দূরে বেড রাখা হয়েছে, তারা এগুলো পছন্দ করেননি। তারা চাচ্ছিলেন ভালো বেড-টেড।’

কিন্তু ফেরত আসা প্রবাসীদের এই চাওয়া কি খুবই অযৌক্তিক ও বাড়াবাড়ি? তাদের পাঠানো টাকায় দেশ চালাবেন, আর তারা এটুকুও চাইতে পারবে না? তাদের সব চাওয়া এই বিশেষ সময়ে হয়তো পূরণ করা সম্ভব নয়। যতটুকু সম্ভব সেটা করলে আর একটু সহানুভূতির সঙ্গে বুঝিয়ে বললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত মন্ত্রী মহোদয়ের? আসলে বিনাভোটে ও রাতের ভোটের সরকার হলে যা হয়। কারও প্রতিই কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না তাদের। যাকে-তাকে যা খুশি বলা যায়।

আমাদের রাষ্ট্র পরিচালকদের কথা তো শুনছেন। এবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কথা শুনুন। তিনি তার দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে বলেছেন, চলমান কভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) প্রাদুর্ভাবের কারণে তার সরকার কানাডিয়ানদের অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে দেবে না। নিজের স্বাস্থ্য, পরিবারের স্বাস্থ্য, চাকরি, বাড়িভাড়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। সব সরকার দেখবে। করোনার কারণে বাড়িভাড়া, মুদি কেনাকাটা বা শিশুদের অতিরিক্ত সেবায় অর্থ খরচ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। আমরা কানাডিয়ানদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করব। আপনারা নিজের স্বাস্থ্য, পরিবারের স্বাস্থ্য, চাকরি, সঞ্চয়, বাড়িভাড়া, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে চিন্তিত আছেন। আমি জানি, (করোনার কারণে) বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে আপনারা অনিশ্চয়তায় আছেন। আপনাদের নিরাপদ রাখতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তাতে দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে। তবে এটা সত্য, আমরা অর্থনৈতিকভাবে এখন যে অবস্থানে আছি, তা আপনাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে যথেষ্ট।

এই হলো একজন স্টেটসম্যানের স্টেমেন্ট! আর আমরা কোথায় আছি! বাংলাদেশ সরকার তার দেশের নাগরিকদের, এমনকি যারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন, তাদের পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে মানবেতর অবস্থায় রাখছেন। তা পছন্দ না হওয়ায় প্রতিবাদ করেছেন কিছু প্রবাসী। ব্যাস। অমনি খেপে গেলেন আবদুল মোমেন। শুরু করে দিলেন প্রবাসীদের নিয়ে মর্যাদাহানিকর কটাক্ষ!

১৯৯৮ সাল। ভোরের কাগজ থেকে বিশাল কর্মীবাহিনী যখন সম্পাদক মতিউর রহমানের ডাকে প্রথম আলোর দিকে পা বাড়ায়, তখন লেখক আবু সুফিয়ানের সঙ্গী হয়ে আমরা কয়েকজন যোগ দিই যায়যায়দিনে। ‘যায়যায়দিন প্রতিদিন’ নামে দৈনিক বের করার আগে শফিক রেহমান কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু সাংবাদিক নিয়োগ দিয়ে ট্রেনিং করাচ্ছিলেন। প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি নিজে ও তার স্ত্রী ডেমোক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান ছাড়াও দেশি-বিদেশি অনেকেই ছিলেন। ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদও।

তখনই সাংবাদিক শফিক রেহমানের একটা কথা মনে ধরেছিল। তিনি বলেছিলেন, সব সময় সতর্ক থাকবে, যাতে তোমাদের লেখায় কেউ বিনা দোষে আঘাত না পায়। আর অন্তত তিনটা শ্রেণির ব্যাপারে মমতা নিয়ে লিখবে। সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি, সমুদ্রের জেলে ও প্রবাসী বাংলাদেশি। এরা সবাই বাঁচার জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য ঝুঁকি ও কষ্টের জীবনযাপন বেছে নিতে বাধ্য হয়। অনেকে পরিবার থেকে দূরে থাকে।

সেই থেকে মাথায় ঢুকে আছে এই তিন শ্রেণির মানুষের প্রতি অগাধ মমতা।

ভাবুন তো, নিজের দেশ, পরিবার-পরিজন রেখে, জমিজমা বিক্রি করে, কত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ছেলেরা পাড়ি দেয় বিদেশবিভুঁইয়ে। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি। কেন যায়? যায় এজন্য যে, তারা এই দেশে মোটামুটি সম্মানজনকভাবে খেয়ে-পরে থাকার মতো কোনো কাজের নিশ্চয়তা পান না। পাশাপাশি দেখে, পরিচিত কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠিয়ে তার পরিবারের অসচ্ছল অবস্থা কাটিয়েছেন।

যদি তারা নিজের বাড়িতে বা দেশে থেকেই আয়-রোজগার করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারতেন, তবে কি আর এত কষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদেশে যেতেন?

বিদেশে আয়-রোজগার করে সেই টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন বলেই আমাদের সরকারের লোকজন এত ফুটানি দেখাতে পারছে। রিজার্ভের যে তৃপ্তিটা দেখাতে পারছে সরকার, তার পেছনেও এই প্রবাসীরাই মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। প্রায় এক কোটি প্রবাসী বছরে দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। দেশের জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। অথচ সেই প্রবাসীদেরই এত তাচ্ছিল্য! প্রবাসীদের এভাবে ছোট করার, কটাক্ষ করার ঔদ্ধত্য ও রুচি দেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বড় ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিশ্চয়ই মনে মনে বলছেন, রাবিশ।

  • সায়ন্থ সাখাওয়াৎ-লেখক, চিকিৎসক ও কলামিস্ট
  • কার্টসি - দেশ রুপান্তর