Search

Saturday, December 30, 2017

State must act to solve mysteries of disappearances

Shakhawat Hossain



Over the last few days, two missing persons—University teacher Mubashar Hasan and Journalist Utpal Das—fortunately returned home but were unable to tell who their abductors were. However, Kalyan Party leader Aminur Rahman who too had been missing for nearly four months was allegedly discovered in Gulshan and shown arrested by the police on the next day.

It is surprising that the government also does not know who are responsible for secret killings and enforced disappearances although these incidences are, after all, putting a clear blemish on the government’s reputation at home and abroad.

Such mysterious disappearance and reappearance of individuals from various walks of life, and the government’s apathy in investigating their cases as well as the contradictory explanations , only increase a feeling of insecurity among citizens.

There is no reason to believe that the missing people have returned because of the law enforcers’ active and efficient operations, since not only on a single occasion the police could rescue at least one from their respective abductors. On the contrary, Home Minister Assaduzzaman Khan Kamal has only to say that the government is not responsible and the matter is being investigated. Depending on the amount of information provided by the missing persons returned our police and intelligence agencies have yet not been able to show any success in catching the culprits. This cannot be unless the law-enforcing agencies are thoroughly incompetent which we cannot accept. Another possibility is that those who are responsible for secret disappearances and secret killings enjoy protection of highest order. Motive may be to create panic and cause silence about the wrongs of the government. The trend is dangerous for organising a civilised country for safety and security of life.

NHRC to bring the matter to President!

The National Human Rights Commission [NHRC] has finally and reportedly decided to bring the matter to President’s attention after being failed to get apparently ‘no response’ from the Home Ministry about specific allegations against law enforcement agency members regarding increasing incidents of human rights violation,
According to information available, the NHRC has sent letters to the Home Ministry seeking reports on human rights violation on 185 incidents — particularly abduction, force disappearance and extra-judicial killing. But it has not got any response.

 “We’ll inform the matter to the President. The NHRC is a State organization. We’ve got the right to seek report from Home Ministry on human violations. The government service holders are accountable to the people. If they fail to accomplish their duty, stern action should be taken against them,” Chairman of NHRC Kazi Reazul Hoque told a daily on Sundaynight.

The NHRC Chief said, “As the President is the Head of the state, he can taken decision about what action will be taken. If the President thinks, he can send the matter in the Parliament.”

Despite increasing incidents of human rights violations, including abduction, force disappearance and extra-judicial killing; the NHRC has allegedly failed to take any effective steps to deal with the matter.

Although the NHRC Chief has expressed anxiety at the increasing number of human rights violation incidents across the country, in fact the commission was able to investigate four incidents only in the ongoing year.

Interestingly, the NHRC tried to shift blame on the shoulders of the law enforcement agencies, especially the Home Ministry, alleging that they do not bother several letters sent to the Home Ministry. In most cases, the Ministry did not even feel it necessary to respond.
In this backdrop, the NHRC has taken further initiatives to prepare another list of allegations with update information in a bid to send to the Home Ministry and police headquarters. 

Expressing annoyance, the NHRC Chairman said, “It is a total failure of Home Ministry. It seems, the Home Ministry doesn’t do any work. Whereas, they are bound to give report to the NHRC.”
 “If we seek any report about specific allegations against any member of police and other law enforcement agencies, the Home Ministry doesn’t pay any heed. In this regard, they are violating the country’s existing law. Now, the state will have to act accordingly,” he said.

How much Police interested in investigating into disappearances?
According to a Bangladeshi human rights organization, more than 400 people have been missing since January 2009 till November this year. Three of those disappeared have surfaced in the last few days.

After being missing for almost four months, police said that they have the arrest the Secretary General of Bangladesh Kalyan Party MM Aminur Rahman. Missing journalist Utpal Das was also found in Narayanganj after more than two months of disappearance.

On the other hand, missing university teacher Mubashar Hasan Cesar also came back home after around a month and a half. These two cases have been almost identical. But the question is how much police have investigated into those incidents of disappearances? While talking to BBC, Bangla service, human rights activist Nur Khan Liton alleged that that police is found to be remained inactive or not serious in the investigation into such abduction cases. 

Against such panicky situation, we must question the government about its lack of interest when it comes to investigating these incidents. If the criminal gangs that are carrying out these heinous disappearances then why isn’t the government trying harder to apprehend them? What is the government gaining by not getting to the deep of these phenomenon? Isn’t it, in fact, self-defeating?
  • Author is a freelance writer.
  • Courtesy : Holiday

Friday, December 29, 2017

অসুস্থ ব্যাংকিং খাত নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে



ধীরাজ কুমার নাথ 





সাম্প্রতিককালে ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে প্রচুর বিপর্যয়ের দুঃসংবাদ, দুর্নীতির উদাহরণ, অব্যবস্থাপনা ও অসুস্থ পরিচালনা এবং নতুন আইন প্রণয়ন নিয়ে বিভিন্ন খবরাখবর জনগণের মনে নানা সংশয় ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়া বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ব্যাপারে আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবর রহমানকে ৬ ডিসেম্বর ব্যাংলাদেশ ব্যাংক পদচ্যুত করেছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ আদেশে মুজিবর রহমানকে দুই বছর অন্য কোনো ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। আরো উদাহরণ হচ্ছে, অগ্রণী ব্যাংকের সিইও বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদচ্যুত করা হয়েছে বেসিক ব্যাংকের এমডি কাজী ফকরুল ইসলামকে। আরো খবর হচ্ছে, তদন্তে ধরা পড়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসান, যিনি কোম্পানি আইন ভঙ্গ করে প্রায় ৪৪ কোটি টাকার সুবিধা গ্রহণ করেছেন ব্যাংকের দুজন স্পন্সর পরিচালকের কাছ থেকে।

মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন সাহেব এবার বিদায় নিয়েছেন বা বাধ্য হয়েছেন চলে যেতে। আরো অনেক কাহিনী আছে, যা বলে শেষ করা যাবে না অথবা জনগণের দৃষ্টির আড়ালে সংঘটিত হচ্ছে। সহজ কথায় বলা যায়, ব্যাংকিং খাত ভয়াবহ জন্ডিজে আক্রান্ত, চরমভাবে অসুস্থ, জরুরিভাবে এর চিকিত্সা আবশ্যক।


মাসুক হেলাল/প্রথম আলো


বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সরিয়ে ফেলার কাহিনী এবং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন দুর্বলতা দেশবাসীকে হতাশ করেছে এবং সরকারকে করেছে বিব্রত। তেমনি সোনালী ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট জনগণ সহজভাবে মেনে নেয়নি, প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেনি সত্যি, কিন্তু অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে বিচরণকারীরা কোনো দিন ভুলবে না। এসবের জন্য কারা দায়ী, হয়তোবা বিবিধ কারণে প্রকাশ্যে আসবে না; কিন্তু জনগণের জিজ্ঞাসা বা উৎকণ্ঠা কি কোনো দিন নিরসন হবে?

এমনসব খবর দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে এবং দেশের সাধারণ জনগণ সর্বত্র এমন সংবাদ নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা করছে। সারা দেশে এমনকি গ্রামগঞ্জে, হাটবাজারে প্রকাশ্যে আলোচনা করছে বিভিন্ন স্তরের লোকজন। নতুন প্রজন্ম তাদের ফেসবুকে এসব খবর নানাভাবে পরিবেশন করে সারা দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কল্পকাহিনী রচনা করছে, যা সুস্থ অর্থনীতির জন্য অনভিপ্রেত। জনগণের বিশ্বাসে ও আস্থায় ফাটল ধরলে তা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না।

সততা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে জাতীয় পর্যায়ে ভয়াবহ দুর্বলতার চিত্র দেখে দেশের সুশীল সমাজ আতঙ্কিত হচ্ছে, অসুস্থ ব্যাংকিং খাত বা অর্থনৈতিক অঙ্গন নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছে দেশবাসী। অনেকের প্রশ্ন, শুদ্ধাচারের সংকটে মুহ্যমান এ অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল বাংলাদেশকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে পরিণত করতে পারবে কীভাবে?
অথবা এমন পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন কীভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে?

দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৭টি ব্যাংক আছে, যার মধ্যে ৯টি বিদেশী। এছাড়া আছে ৩৫টি নন-ব্যাকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন— ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন ইত্যাদি। শোনা যায়, আরো প্রায় তিনটি তফসিলি ব্যাংক এবং কয়েকটি লিজিং কোম্পানি নতুনভাবে আসছে সরকারের অনুমোদন নিয়ে। অনেকের ভাবনা, এত অধিকসংখ্যক ব্যাংক বিরাজমান দুর্বল আর্থিক পরিমণ্ডলে আরো বেশি বিপর্যয়ের সূচনা করতে পারে।

বেশির ভাগ মানুষ, যারা অর্থনীতি নিয়ে ভাবে বা অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে বিচরণ করে, তাদের অভিমত হলো— অনেক হয়েছে, আর নয়। কারণ দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলো এখনো ভালোভাবে দাঁড়াতে পারেনি। গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের দুয়ারে ব্যাংকিং সেবাকে এখনো নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ মফস্বল এলাকায় ব্যাংকের ব্রাঞ্চ স্থাপন ও সেবা প্রদান অলাভজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ লক্ষ্য হচ্ছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দেশের সব জনগণকে পর্যায়ক্রমে নিয়ে আসা। বর্তমানে দেশে এলাকাভেদে ঊর্ধ্বে মাত্র ৩০-৩৫ শতাংশ লোক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আছে। সারা দেশে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের পরিমণ্ডল রচনা করতে হবে এবং অনুরূপ সমাজ ও ভাবনার উত্তরণ ঘটাতে হবে। প্রতিটি লেনদেনের সুস্পষ্টতা থাকবে এবং তা দৃশ্যমান হতে হবে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্থ পাচার বা হুন্ডি ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ নিয়ে জনগণের মনে একটা বিরাট সন্দেহ বিরাজ করছে, যা উপশম হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া কিছু ব্যাংক আছে, যারা বাংলাদেশেই জঙ্গিবাদকে অর্থায়ন করে বলে অনেকের বিশ্বাস। তার কারণ হলো, হলি আর্টিজানে যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল, সেখানে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল এবং তা কোনো এক ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে এবং তার প্রমাণও মিলেছে বলে শোনা যায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ মনে করে, অসুস্থ ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা বিরাজমান থাকা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এর উত্তরণ ঘটাতে হবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে।

অনেকে মনে করেন, এমন অব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানত দায়ী ব্যাংকের পরিচালকমণ্ডলী। অথচ বলির পাঁঠা হচ্ছেন সিইও বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালকমণ্ডলীর মধ্যে খুব কমসংখ্যকের ব্যাংক পরিচালনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে। মুনাফা অর্জন তাদের মুখ্য বিষয়, ব্যাংকের সুনাম ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে তারা অসতর্ক। লোক নিয়োগে তারা যেমন প্রভাব বিস্তার করে, তেমনিভাবে ঋণ প্রদানেও কোলেটারেল সিকিউরিটি ছাড়াই ঋণ ও অগ্রিম দেয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে, যা অনেক ক্ষেত্রে এমডি এবং অন্যান্য কর্মকর্তা প্রতিবাদ করার সাহস পান না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নীরবে সম্মতি দিয়ে দেন এবং এখানেই শুরু হয় ব্যাংকের তারল্য সংকট, ঋণ আদায়ে
অপারগতা, ঋণখেলাপির  সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ক্রমাগত। সমস্যা ও সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প পন্থা হিসেবে দুর্বৃত্তায়নের আশ্রয় নেন এসব কর্মকর্তা। তাই পরিচালকদের যোগ্যতা, মেয়াদকাল এবং একই পরিবারের সদস্যদের পরিচালক পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা ও দীর্ঘদিন চলতে দেয়ার বিরুদ্ধে জনগণ সোচ্চার।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রয়োজন দারিদ্র্য বিমোচন, সবার জন্য এবং সব বয়সের লোকের জন্য স্বাস্থ্য, নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে দৃশ্যমান অর্জন। মোট ১৭টি লক্ষ্য ও ১৬৯টি টার্গেট অর্জনের সব পর্যায়ে প্রয়োজন অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা। শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা বিধান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে নিয়োজিত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাই আর্থিক শৃঙ্খলা এবং প্রত্যেক লেনদেনের জবাবদিহিতা। এ দায়িত্ব পালন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অত্যন্ত কঠোরভাবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে সব ব্যাংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনে অধিকতর নিষ্ঠাবান হতে হবে। তাই প্রয়োজন হবে নিবিড় তদারক ব্যবস্থার আরো অধিক উন্নতি সাধন এবং ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ, আর্থিক বিধিবিধানের অধিকতর সংস্কার।

লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকেই ঋণখেলাপির আনুপাতিক হার বেশি বা অনাদায়কৃত ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পুনর্নির্ধারণ করার প্রবণতা অধিক। এর অর্থ, এখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে। যে কারণে ঋণগ্রহণকারী রাজনৈতিক প্রভাববলয় বিস্তার করে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতাকে আমলে নিচ্ছেন না, জেল-জরিমানার ভয় করছেন না।

ব্যাংকিং খাতে একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা হচ্ছে, ব্যাংক ডাকাতি বা ব্যাংকের ভল্ট  ভেঙে আমানতকারীদের অর্থ লুটপাট করা। বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন ব্যাংকে বহুবার কিন্তু কঠোর শাস্তি প্রদানের উদাহরণ বিরল। অনেকের ধারণা, এর সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকা অসম্ভব কিছু নয়। প্রত্যেক ব্যাংকে বিষয়টির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।

পরিশেষে বলতে হয়, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা বিধান প্রগতিশীল দেশের প্রধান শর্ত। এ খাতে শুদ্ধাচার প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে দেশের অগ্রগতি অবশ্যই বিপদসংকুল হতে বাধ্য। এছাড়া জনগণের পবিত্র আমানত ও অগাধ বিশ্বাসের ক্ষেত্র হচ্ছে ব্যাংক এবং অন্যান্য অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংকট দৃশ্যমান হতে বাধ্য এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

হায় হায় ব্যাংকের দায় কার?



কামাল আহমেদ 






ফারমার্স ব্যাংকের মরণদশার দায় কার? এ ব্যাংকটিসহ কথিত চতুর্থ প্রজন্মের নয়টি ব্যাংকের অনুমোদনের সময় (আওয়ামী লীগের আগের মেয়াদে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক আতিউর রহমান। রাষ্ট্রীয় মুদ্রাভাণ্ডারের প্রায় শতকোটি ডলার খোয়ানোর কৃতিত্বের অধিকারী এই সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ২০ ডিসেম্বর বলেছেন, ব্যাংকটিকে বাঁচাতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে (ফারমার্স ব্যাংক বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে, প্রথম আলো, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭)। কী চমত্কার দায়িত্ববোধ! শুধু রাজনৈতিক নির্দেশনায় প্রচলিত নিয়মনীতিগুলোর বেশির ভাগ উপেক্ষা করে জনসাধারণের কষ্টের আমানত লুটে নেয়ার লাইসেন্স দেয়ার জন্য তার মধ্যে ন্যূনতম কোনো অনুশোচনা নেই। কোনো ধরনের দুঃখপ্রকাশ ছাড়াই তিনি সেই মৃত্যুপথযাত্রী ব্যাংককে বাঁচানোর জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। যার মানে হলো, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জনগণের করের টাকা ব্যয় করা, যে টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোটায়।




ফারমার্স ব্যাংকের এ অধঃপতনের জন্য অনেকেই দায়ী করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। আদর্শ গণতন্ত্রে নিশ্চয়ই অর্থমন্ত্রীকে এ কেলেঙ্কারির দায় নিতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বর্তমান দুর্দশায় তার ওপর এককভাবে এর দায় দেয়া হলে তা যথার্থ হবে না। এখানে আমাদের স্মরণে রাখা দরকার যে, ব্যাংকিং খাতে এসব অনিয়মের জন্য তিনি সংসদেই তার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেছিলেন। বেসরকারি খাতে নতুন নতুন ব্যাংক অনুমোদনের প্রশ্নেও তার সরল স্বীকারোক্তি রয়েছে। ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয়ার কথা তিনি একাধিকবার বলেছেন। বেসরকারি খাতে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি বলে ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় নতুন ব্যাংকের চাহিদা এখনো আছে এমন ঠুনকো যুক্তিও তার মুখ থেকে আমরা শুনেছি। আরেকটি বহুল আলোচিত ব্যাংক লুটের ঘটনা— বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কাগজে-কলমে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, রাজনৈতিক কারণেই কিছু করা যাচ্ছে না।

ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শিরোমণি ছিলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর, যদিও ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এর প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস কিংবা তার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের নামগন্ধও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্য ফারমার্স বা কৃষককুল রীতিমতো একটি সৌভাগ্যের বিষয়। হয়তো সে কারণেই গ্রামীণ এবং কৃষি খাতকেন্দ্রিক ব্যাংক না হলেও তার ব্যাংকের নাম ফারমার্স ব্যাংক। সাবেক প্রেসিডেন্ট  জিয়ার আমলে যশোরের শার্শা এলাকায় কৃষকদের সেচের সংকট মোকাবেলায় খাল কাটা কর্মসূচিতে তার ভূমিকাই তাকে প্রথম আলোচনায় তুলে আনে।

দ্বিতীয়বার তিনি আলোচনায় আসেন খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের সময় জনতার মঞ্চে অংশ নিয়ে। তার নেতৃত্বেই সরকারি কর্মকর্তারা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়, যা দেশের আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে।

তৃতীয় দফায় তিনি আলোচিত হন জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার রায় সুপ্রিম কোর্টে বহাল থাকায়। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তার আসন শূন্য ঘোষিত হলেও একটি রিভিউ আবেদন দায়ের করে তিনি তার সংসদীয় মেয়াদ পূরণ করেন। সে সময়ে তিনি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী শিল্প দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের বিষয়ে তিনি বিরোধী দল বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কিতে স্থানীয় যুবলীগ নেতার ভবনটির ভিত দুর্বল হয়ে পড়ার কথা বলে সমালোচিত হন।

২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের কাঁথা থেকে প্রাচুর্যে উত্তরণের কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, মহীউদ্দীন খান আলমগীর নির্বাচন কমিশনে তার সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটিরও বেশি নগদ টাকা থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি ফারমার্স ব্যাংকের অনুমতি পান ২০১৩ সালে এবং ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে ২০১৪ সালে। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ঋণ দেয়ায় অনিয়মের বোঝা অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং ব্যাংকটি আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেয়ার সামর্থ্য হারায়। এখন ব্যাংকটি তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেও অক্ষম হয়ে পড়েছে। বছরখানেক ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর্যুপরি তদন্ত, জরিমানা ও পর্যবেক্ষক নিয়োগেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে
উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হতে থাকলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বভাবসুলভ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা অস্বীকার করে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন, পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ নিয়ে এবং বাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিজেদের রক্ষায় জোর তদবির চালান। কিন্তু তার সীমাহীন অর্থলিপ্সার কারণে এবার আর কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা মেলেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক অটল থাকতে পেরেছে। ফলে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন। আর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শামীমকে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র সাতদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদ থেকে অপসারণ করে।

ফারমার্স ব্যাংক ঘিরে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে আরো দুটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রথমত. তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান একটি অংশ, সরকারি হিসাবসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে যখন তার ফারমার্স ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছিল, তখন তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম তদন্তের উদ্যোগ নেন। স্পষ্টতই সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত সত্ত্বেও তিনি এ উদ্যোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তটস্থ রাখতে চেয়েছিলেন।
বাংলাদেশে অবশ্য স্বার্থের সংঘাত বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত. ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর তিনি ব্যাংকে তার অংশীদারিত্ব বাড়ানোর চেষ্টায় আরো শেয়ার কিনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। এখানেও তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তিনি জানেন যে, সরকার ব্যাংকটিকে রক্ষা করবে। এতে ভবিষ্যতে তার সম্পদ ও নিয়ন্ত্রণ আবারো বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে। তার এ চেষ্টার আরেকটি তাত্পর্য হচ্ছে, তিনি মোটামুটি আশ্বস্তবোধ করছেন যে এ ব্যাংক কেলেঙ্কারির কারণে তাকে জেলে যেতে হবে না।

বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যাংকিং আইনে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা জনসেবক বা পাবলিক সারভেন্ট। পাবলিক সারভেন্ট হিসেবে অনৈতিক কাজের জন্য যেসব শাস্তির বিধান আছে, সেগুলো তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ার কথা। সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কারো কারো এরই মধ্যে আশ্রয় হয়েছে জেলে, নয়তো তারা পলাতক। তাহলে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? তার দলও এ বিষয়ে নিশ্চুপ। সংসদের ওই অতীব গুরুত্বর্পূণ ও ক্ষমতাধর কমিটি থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলে আসছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়ও রাজনৈতিক আনুগত্য বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকরা বাণিজ্যিক যৌক্তিকতার চেয়ে দলীয় ও গোষ্ঠীস্বার্থে ঋণ বিতরণ করেই অভ্যস্ত। ফলে সেগুলোও সংকটের ঘূর্ণাবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে একাধিকবার পূরণ করা হয়েছে মূলধনের ঘাটতি। বেসরকারি খাতের
ব্যাংকও এখন আর অনিয়মের পাল্লায় পিছিয়ে নেই। ফারমার্স ব্যাংক একা নয়, এ ধারায় আছে রাজনৈতিক কারণে প্রতিষ্ঠা পাওয়া অন্য ব্যাংকও। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে অনুমোদন পাওয়া উদ্যোক্তাদের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকও পরিচালনা পর্ষদ রদবদল ঘটাতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু কেলেঙ্কারির মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। এসব হায় হায় ব্যাংকের দায় কার?

  • [কামাল আহমেদ-এর ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত নিবন্ধ]



মুক্তিযুদ্ধ - ‘সংখ্যা বাড়ছে পাটীগণিতে, সম্মান কমছে জ্যামিতিতে'


বিএনপি কমিউনিকেশন  




কিছুদিন আগে দৈনিক প্রথম আলো’র প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান সংবাদ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে জামালপুরের মেলান্দহের মুক্তিযোদ্ধা আাবুল হোসেন ইউএনও-র কাছে লিখিত আবেদন জানান এই বলে যে তাঁর নামের আগে যেনো ‘বীর’ মুক্তিযোদ্ধা  আর যেন না লেখা হয় আর তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রয়োজন নেই। তাঁর মোদ্দা কথা তিনি ভেজালদের অন্তর্ভূক্ত থাকতে চান না। আর আরেকজনের অনুরোধ, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের পর ভুমিষ্ঠ হয়েছেন , সে জন্য তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে সরানো হোক।

খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা  আবুল হোসেন  মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের জাল-জালিয়াতির প্রতিবাদ জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অমৃত-গরল মিলেমিশে একাকার হওয়ার আশঙ্কা তাঁর। যে দেশ কিনেছিলেন তাঁরা জীবনের বাজি রেখে কিংবা রক্তের বিনিময়ে পণ্যের মূল্যে এখন সেটা টাকায় বিকিয়ে যাচ্ছে। এটা কোন চেতনা? এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ  টাকা দিয়ে অনেকেই কিনেছেন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট।

একথাও নিখাদ সত্য সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনীতির পণ্য করে তুলেছেন। এই তিক্ত সত্যও  অস্বীকার করার উপায় নেই অনেকেই এরকম ‘পণ্য’ হতে পেরে ধন্য। সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখায় বাংলা ভিশনের বার্তা সম্পাদক  গোলাম মোস্তফা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সব সরকারই ‘গণিত উৎসব’ করেছেন। এসব উৎসব উৎপাদিত ও এর কারণে উৎসাহিত হয়েছে সুযোগ সন্ধানীরা। তারা নানা কৌশল বের করেছে। কেইবা ম্লেচ্ছ ইতর থাকতে চাইবে? স্বাভাবিক কারণেই তারা ব্রাহ্মণ হবার উপায় বাগিয়েছে রাজনীতিকদের হাত ধরেই।  কেন?  রাজনীতিকরা শহীদদের বরাবরই দূর থেকে তাদরেকে খুরে নমস্কার করেছেন। তবে তাদের সংখ্যার ওপর জরিপ চালাতে সচেতনভাবেই বাধাও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে বলে?  কিন্তু এই সব কর্তৃপক্ষই আবার জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারেই অতিমাত্রায় উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। আর বারংবার সেসব উৎসবের মধ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার বহর বেড়েছে। কিন্ত কি জন্য এই স্ফীতি সে কথা ঘেঁটে বলেননি। এর আদত কারণটি হলো মৃতদের রাজনৈতিক পণ্য হবার সাধ্য নেই। পণ্য হবার সাধ্যও নেই। তাই রাজনীতিকরাই ‘পণ্য’ সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন আর কেউ নয়।

একটি প্রবণতা দৃষ্টিকটুভাবে খুবই লক্ষ্যণীয়। যখনই চলতি সরকারের গলদ উল্লেখ না করে পারা যায় না তখনই বিএনপি সরকারের দোষ টেনে আনার  ব্যালান্সিং-এর প্রবণতা। বিএনপি সরকারও এ দোষ করে থাকতেই পারে। কিন্তু কাপুরুষ মানসিকতাই কেবল পান্তাভাতে ঘি ঢেলে মূল কথাটাকে ডাইলিউট করে। পেছনে যদি যেতেই হয় তাহলে আরেকটু এগোলেই তো বিষয়টার ঝাঁপি ‘হাট’ করে খুলে যায়। আমরা সবাই চোখে যা দেখছি সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি পেছনে কি তাকাই না। আমরা দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের কি করে একে একে ধ্বংস করা হয়েছে। গেছেন ওসমানী, খালেদ মোশাররফ-হায়দার, কোনমতে বেঁচে আছেন ভাইস মার্শাল একে খোন্দকার, সেক্টর কম্যন্ডার আবু ওসমান চৌধুরি ও আরও অনেকে। যখনই যাকে দরকার হচ্ছে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফেলে দেওয়া হচ্ছে হাতের টিস্যু পেপারের মতো নিতান্ত অবহেলায়। অবলীলায়।  কেন? রোজ রোজই তরুণ রক্ত দরকার হচ্ছে জরাগ্রস্ত মনোলিথকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

আর এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জনগণের অতন্দ্র প্রহরী মুক্তিযোদ্ধাদের। এই মুক্তিযোদ্ধাদের কাজেও লাগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জিয়া গোড়ায় দেশ গঠনে। পাকিস্তান ফেরত হাজী, এখন সরকারের বিশেষ দূত ও বিশিষ্ট বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রধান ও স্বৈরাচার বলে গণউপাধি প্রাপ্ত এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সোনার খনির সন্ধান পেয়েছেন। তাঁর মতো স্বাধীনতা বিরোধীর পক্ষে শোভা পেয়েছে  এই খেতাব দেওয়া যে ‘মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’। তিনি আবিস্কার করেন যে ৯ বছরের ছেলের পক্ষেও মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সম্ভব। এর ‘যুক্তিগ্রাহ্য’, মনগড়া ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তার আমলে প্রথম নিখাদ মেকি মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। আর কয়েক লাখ টাকা করে মাথাপিছু ঘুষ নেওয়া হয়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধারা এর প্রবল প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদ এমনকি হাইকোর্টেও হালে পানি পায়নি। এজন্যই সম্ভবত বলা হয়ে থাকে তিনি বাংলাদেশের জন্য সবচেযে উপযুক্ত রাষ্ট্রপতি। এর পরে বিরোধী বিএনপি এমপিদের টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার কথা আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ‘গোলাম হুজুরের’ দোয়া নিয়ে  ক্ষমতায় আসে বাকশাল নয় আওয়ামী লীগ। মেয়াদ শেষে ক্ষমতায় আসে বিএনপি জোট। বিএনপি জোট গড়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

এ ক্ষেত্রে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী  ইলা মিত্রের বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি বাংলাদেশের এসেছিলেন ৭০-এর দশকেই। সেদিন ‘নাচোলের রাণী’ বলেছিলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা, ভারতকে স্বাধীন করেছি। এজন্য আমাদেরকে ভারত সরকার বছরে একবার ডাকেন। তখন আমাদেরকে ৫০ রুপি করে সম্মানী দেওয়া হয়। ভারতবাসী সুখে আছে আমরা তাতেই খুশি। আর কিছুই চাই না আমরা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাও যুদ্ধে গিয়েছিলেন কোনো বৈষয়িক প্রাপ্তির আশা না নিয়েই  বরং দেশ ও দশের জন্য আত্নদানের’ শপথ নিয়ে।

বলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা জনগণের অতন্দ্র প্রহরী। সেটা কাজে দেখা যায় না। দেখা মেলে কেবল সাইনবোর্ডে। তাদের কোনো ভালো কাজে লাগানো হয়নি উল্টো  হাত পাতা সম্মান আর সম্মানি নিতে তাদেরকে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। এই উসকানির পথ বেয়ে একে একে আসছে নতুন নতুন বায়না। নাতি-নাতনিদেরকেও গ্রহীতার মিসকিনসুলভ কাতারে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করছে। কে? ক্ষমতার রাজনীতি। 

আমরা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেখতে পাচ্ছি, বড়জোর তিন লাখ। আর এদেশের মানুষ শহীদ হয়েছে অফিসিয়াল হিসেবে ৩০ লাখ। আর কোটিরও বেশি লোক ভারতে শরণার্থী হলেও দেশে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছে বাকি ৬ কোটি মানুষ প্রাণের শঙ্কা নিয়ে মাতৃভূমির মাটিতেই। তবে তারা কি মুক্তিযুদ্ধের জন্য কিছুই করনেনি? যার মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে থাকেননি তাদের পক্ষেই এমন কল্পনার খোঁয়ারি সম্ভব। দেশের মানুষের সহযোগিতা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ কী এতোই সহজ হতে পারতো।  রাজাকার-আল-বদর-পাকিস্তানি দোসরদেরও একটা হিসেবে আছে। তারা নগণ্য। তাহলে যে আতরাফের পক্ষে সংগ্রাম ছিল নেতাদের তারা কেন দেশকে এভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করছেন। কেন এই আতরাফদেরকেও কেন সম্মান সম্মানী দিচ্ছেন না। জবাব সহজ ও নির্মম।  ভাগ না করলে শাসনও করা যায় না। সেটাই যদি করা হয় তাহলে উপনিবেশ ও স্বাধীনতার মধ্যে তফাৎ কোথায়? 

অবৈধভাবে ক্ষমতায় পাকিস্তান ফেৃরতা মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী চতুর এরশাদ বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কানে এরশাদের অমৃত বচন  কী বিষ হয়েছে তারই প্রতিফলন আমারা দেখলাম মেলান্দহের খাঁটি মুক্তিযোদ্ধার  মর্মে বিঁধে যাওয়া কথায়। এরশাদই নকল নাবালক ও সাবালক মুক্তিযোদ্ধা ঢুকিয়েছেন সিন্ডিকেট করে মোটা ঘুষ নিয়ে। ক্যানভাস করতে দেখেছি :  সার্টিফিকেট একটা নিয়ে নিন। ভবিষ্যতে ভালো চাইলে একদিন কাজে দেবে। আসলেও তাই দেখছেন মোস্তফা।

ঢাকঢোল পিটিয়ে এভাবেই গাণিতিক হারে বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধা। সম্মানীও। আর সম্মানের পতন ঘটছে জ্যামিতিক হারে তলানি অভিমুখে। কেননা অমৃতে গরল ঢালা হচ্ছে। কাজটা করছে বেহায়া রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নিয়েও তার নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদ। নকল মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আর আসল যুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন - এই খবর ও ছবি প্রকাশিত হবার পরেও নকলের দাপট দেখে দেশের আমজনতা হাড়ে হাড়ে টের পেযেছে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’দের ছবি রাজনীতির রংতুলিতে কেমন করে আঁকা হচ্ছে।

Thursday, December 28, 2017

Soaring prices sapped consumers


Shakhawat Hossain /newagebd.net 




Abnormal price hike of daily essentials, from rice to garlic and salt to onion, remained a matter of worry for the consumers throughout the outgoing year, with traders and importers making whatever they could out of the situation amid allegations of lapses in monitoring by the government agencies concerned.

Rights activists and market experts summed up 2017 as a ‘horrible one’ from the point of view of consumers, especially the fixed and low income groups, because of 30 per cent hike in price of rice and over 200 per cent increase in price of onion in one year in addition to seasonal price hike of salt, spices, garlic, edible oils and government regulated gas and power prices. 

The upshot of price volatility in local commodities market left over 50 per cent of the country’s population living on less than $3 dollar income to struggle most part the year for buying food items that accounts 70 per cent of their daily income.

At least 5.2 lakh people have fallen into poverty because of rice price hike which has also caused a rise in head count poverty rate by 0.32 percentage points in the past few months in the country, according to a study of South Asian Network on Economic Modelling released on December 23. 

Consumers Association of Bangladesh general secretary Humayun Kabir Bhuiyan said that the state-owned monitoring agencies could not fulfil the expectation of the consumers in checking the price hike of essentials, often caused by market manipulation by vested quarters.

‘Consumers were simply frustrated and hapless as market did not function properly,’ he told New Age while making a brief assessment of the outgoing year.

Volatility in price of essentials, first time since the previous food price shock during the military-backed caretaker administration in 2007-08, was created basically in absence of proper monitoring by state-owned agencies, he said.

Lack of proper monitoring enabled many traders to make windfall profits during the passing year at the cost of consumers.

Commerce minister Tofail Ahmed, who is facing severe criticisms following price hike of essential commodities, said on December 21 that 14 state-owned agencies were monitoring the local markets.
Tightening monitoring on buying and selling price of imported products might lead to adverse situation, he claimed while talking to reporters on price hike at his secretariat office.

He explained that traders’ associations were very powerful and might stop selling products.

According to state-run Trading Cooperation of Bangladesh, onion was selling at Tk 120 a kilogram in December, marking 206.67 per cent increase from a year ago.

The price of imported garlic recorded a 64.29 per cent rise to Tk 360 from Tk 220 during June, but more than 30 per cent rise in price of rice since August because of supply shortage amid losses of crop to prolonged floods was most tormenting for three quarters of the population.

Tawfiqul Islam Khan, a researcher at Centre for Policy Dialogue, said that the low-income and fixed income groups spending bulk of their income on food items were main victims of food price shocks in the outgoing year.

The groups have to compromise with expenses on medical and education to make up the higher cost of foods, he noted. 

He criticised as belated moves the steps of importing 15 lakh tonnes of rice by the Ministry of Food against the backdrop of falling food reserve in the public depots.

Besides, reduction of import duty on rice from 28 per cent to only two per cent by the revenue board could not save the consumers from the exorbitant rice price hike that pushed up the monthly inflation in September to 6.12 per cent that according to the Bangladesh Bureau of Statistic was 23 months high, compared to 6.19 per cent in October 2015.

Former executive director of Bangladesh Institute of Development Studies MK Mujeri observed that consumers’ suffering would continue if the state-owned monitoring agencies failed to function properly.

He said the consumers did not see any activities from the Competition Commission that was established in 2016.

Amid demand from many quarters the government passed a bill in parliament in 2012 and established the Competition Commission to ensure fair trade practices and check artificial price hike of commodities, a common phenomenon in a country like Bangladesh where traders and businessmen crowd the leading political parties.
The presence of businessmen-turned-politicians in parliament almost doubled to 64 per cent in 2008 from 34 per cent in 1979, according to findings of Transparency International of Bangladesh in 2014.

The commerce ministry officials alleged that bureaucratic exercise in providing manpower was the main obstacle for Competition Commission to start full-fledge operation.

Experts are doubtful stability will come to the volatile commodities market in coming months against the backdrop of poor monitoring by the state-owned agencies.

They note that keeping price of essentials at a tolerable level for majority of population will be the challenge for the government in the new-year.

Where did the benefits of economic growth disappear?






M A Taslim





There is some disquiet among economists about the quality of data provided by Bangladesh Bureau of Statistics (BBS). No less a person than the Economic Adviser to the Prime Minister has expressed his dissatisfaction about the qualifications of the BBS staff and the quality of their work. These are very long standing problems, and yet, very little has been done to improve the quality of the services provided by BBS.



The government is perhaps more worried about the embarrassment an efficient BBS can do to its image with correct data than the harm an inefficient BBS can inflict on policy making and, the economy with incorrect data.

The current feeling of consternation originates largely from the fact that macroeconomic data, such as economic growth rate, is frequently not consistent with other data, such as credit, export and import etc. with which they are supposed to be correlated.

Significantly, the latter is not provided by BBS, but by other government organisations such as Bangladesh Bank, National Board of Revenue and Export Promotion Bureau.

Inflating the data!

They provide high frequency data on a monthly basis with a short lag, which is more reliable. Reassuringly, most of the data can be crosschecked easily. For example, bank credit data provided by Bangladesh Bank can be cross checked against credit data of all individual banks. Any large unexplained discrepancy will be quickly discovered and corrected.

Forecasts of economic growth are made by local and foreign experts on the basis of available information on a host of variables, including international trends and current data on domestic production and expenditure as well as high frequency data as mentioned above.

Curiously, these forecasts have been always significantly lower than the final BBS estimates during the last several years. This pattern of non-random errors in the forecasts has led to the suspicion of inaccuracies, or worse, wilful manipulations of the national accounts data.

In the absence of a robust explanation as to why these experts could be mistaken, the suspicion has grown to almost a conviction. This is an unnecessary and avoidable situation that adversely affects the quality of analyses and evidence-based policymaking.

It has escaped notice that the national accounts estimates are also not consistent with some micro level data that provide a very good insight into the economic well-being of the ordinary people of the country.  The BBS does an extensive and thorough survey of income and expenditure of households about every five years. The final report of the Household Income and Expenditure Survey done in 2016 (HIES2016) was released recently. It provides micro level data on numerous household attributes such as size, education, health, income and expenditure etc.

Since the household sector comprises the entire population, these data are more relevant to the living standards of the ordinary people of the country than the national accounts data which provide aggregate measures on a few variables only.

HIES are a rich source of both time series and cross section data that can be used to seek answers to a variety of research questions.

Household income: behind the rosy facade

Household income and consumption as estimated by HIES2016 are given below in Table 1. The nominal income and consumption both increased by about two-fifths since the last HIES was done in 2010. These were highlighted when the survey results were released. However, there is no definable relationship between household nominal income and its purchasing power. The latter is captured by real income. Similarly, the actual volume of consumption is expressed by real consumption. Real income and consumption are derived by deflating the nominal amount by the consumer price index (CPI).

Economic growth of a country is represented by the growth of real income or output. The estimated real values of household income and consumption are shown in column 5 and 6. It is immediately apparent that the real magnitudes suggest a very different pattern of change than that by the nominal amounts; the household real income has actually declined by 11 percent between 2010 and 2016. Real consumption also declined by about the same proportion during these years.

But according to BBS national accounts statistics, the real national income of the country has risen by more than 42 percent between 2009-10 and 2015-16 while the real per capita income has risen by 31 percent.  In other words, at the national level, each individual member of the total population, on average, has contributed to 31 percent increase in real income during these 6 years. This increase in income was accompanied by a similar increase in real consumption per capita.

In stark contrast, according to HIES2016, each person at the household level actually received an income (household income divided by household size) that was 2 percent less than what they had received in 2010 and the real spending for consumption of each decreased by about 1 percent.

The changes in per capita income and consumption that can be gleaned from the national accounts data are thus opposite to the information provided by HIES2016. The differences between the HIES and the national accounts data are rather too large to be ignored as statistical errors or due to different methods of calculation.

Note that there was no large discrepancy for the period 2005 to 2010. The HIES2016 data clearly indicates that the household sector comprising the entire population has missed out entirely on the growth dividend of the period 2010 to 2016 that should have normally been accrued to them. The share of government revenue in national income also did not increase during this period.

Where did the benefits of economic growth disappear? The Planning Ministry (which oversees BBS) owes an explanation to the nation about the sources of this anomalous finding.

The calorie quotient

The reduction in per capita real income is given some support by the nutrition data of HIES2016. Globally, there is a strong correlation between income and calorie consumption. People in the richer countries consume more calories than those in the poorer countries. The data of earlier HIES also suggest that richer people of the country consume more calories than the poorer people.  An alarming finding of HIES2016 is that the average calorie intake per person has declined by 5 percent from 2318 Kcal in 2010 to 2210 Kcal in 2016 alongside a reduction in real income.  A joint FAO and WHO study mentioned that the average calorie intake should be 2430 Kcal (Country Nutrition Paper 2014). The daily intake of calorie in 2010 was already 5 percent below the recommended amount, but a further reduction to 9 percent in 2016 raises the real prospect of stunting and wasting of children as well as a generally poor health of the population. This does not augur well for the country: its population does not appear to be in a fit state to fully utilise the opportunity for demographic dividend.

Falling income is also hinted by another comprehensive study of BBS, Revision and Rebasing of Wage Index (WRI) from 1969-70 to 2010-11. Its findings indicate that the real wage of the ordinary workers in the informal sector, who constitute about 85 percent of the labour force, fell by more than 7.5 percent between 2010-11 and 2014-15. Such a reduction must have exerted a strong downward pressure on household income since wages are a large part of household income.

Gini Coefficient

Another alarming finding reported by HIES2016 is a substantial increase in the Gini coefficient. The income distribution has moved against the poor including the wage labourers very markedly. The poorest one-fifth of the household population received 2.78 percent of the total income in 2010, but by 2016 their share has declined to a measly 1.24 percent.

On the other hand, the top 5 percent households have increased their share from 24.6 percent to 27.9 percent during the same period. Enriching the richest at the expense of the hapless poorest has apparently gained momentum during the last 6 years. This has reversed the trend of the previous 5 year period.

The Gini coefficient had declined from 0.467 in 2005 to 0.458 in 2010 heralding the prospect of a progress toward a more egalitarian society. But the hope has been nipped in the bud with the Gini coefficient shooting up considerably to attain its highest ever level of 0.483 in 2016. This puts Bangladesh in the company of the least egalitarian countries of the world.

It is surprising that with real per capita income at the household level not rising at all between 2010 and 2016 and the Gini coefficient worsening, the head count poverty rate declined so markedly from 31.5 to 24.3 percent during these years.

The national accounts data of BBS paint a glowing picture of Bangladesh as a stable high performing dynamic economy. But the HIES2016 findings suggest a stagnant lacklustre economy where the household sector (comprising the entire population) have completely missed out on the benefits of the high economic growth with both their average income and consumption falling. These contradictory findings from the data of two of the most widely used BBS sources are likely to deepen the suspicion regarding BBS data quality and further erode its credibility unless some satisfactory explanations are offered.


Table: Household income and consumption

YearPer householdCPIPer householdPer capita
Nominal IncomeNominal consumption 2005-06=100Real incomeReal consumptionHousehold real incomeHousehold calorie intakeReal gross national income
201615,94515,4202207,2527,0141,7862,2104,840
201011,47911,0031418,1307,7921,8072,3183,700
200572035964100720359641,3912,2392,660

- Source: BBS, Household income and expenditure survey 2016; FAO and WHO, Country Nutrition Paper: Bangladesh 2014; Bangladesh Bank, Monthly Economic Trends.




ব্যাংক খাতে রাজনীতি টেনে আনার ফল



২০১৭ সালে ব্যাংক খাত ছিল কেলেঙ্কারির বছর। ব্যাংক দখল থেকে শুরু করে গ্রাহকের আমানত ফিরে না পাওয়া—সবই ঘটেছে বছরটিতে। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। 

প্রথম আলো: প্রতিষ্ঠার চার বছরের মধ্যে গ্রাহকদের বিশ্বাসে চিড় ধরাল ফারমার্স ব্যাংক। গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি। একই সময়ে যাত্রা করা এনআরবি কমার্শিয়ালের অবস্থাও খারাপ। নতুন ব্যাংকের এই অবস্থা হলো কেন?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: যখন নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, আমরা তখনই আপত্তি তুলেছিলাম। ব্রিটিশ ব্যাংকিং অনুসরণ করে আমরা ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর নীতিতে চলি। এখানে ব্যাংকের সংখ্যা কম থাকবে, শাখা হবে অনেক। ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার আগে অনেক যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলে দিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিকে রাজনৈতিকভাবে পরিচালনা করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এটা ব্যাংক খাতে রাজনীতি টেনে আনারই ফল। রাজনীতিবিদদের তো ব্যাংক দেওয়া উচিত না। যখন দেখা গেল, ফারমার্স ব্যাংক উল্টাপাল্টা কাজ করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল তখনই ব্যবস্থা নেওয়া। তারা নোটিশ দিয়ে বসে রইল, অগ্রসর হতে পারল না। শোনা যায়, ওপর থেকে চাপ এসেছিল, তাই খুব বেশি এগোতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। ওপরের নির্দেশ না মেনে গভর্নরের উচিত ছিল, যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। এসব দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চাকরি হারালেও সম্মানের সঙ্গে থাকা যায়। এসব অবস্থার জন্য দায়ী ভুল ব্যক্তিকে ব্যাংক দেওয়া এবং যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়া। ব্যাংকটি শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিল। অবস্থা এমন যে রোগী মরে যাওয়ার পর চিকিৎসক আসিল। একই কারণে এনআরবি কমার্শিয়ালও খারাপ করেছে।
প্রথম আলো: বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে তো দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করল। তাহলে কি বিচার হবে?

ইব্রাহিম খালেদ: যখন আইনের শাসন থাকে না, তখন এমনই হয়, বিচার বিঘ্নিত হয়। বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি আবদুল হাই বাচ্চুকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বেসিক ব্যাংকের নিজেদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, তা-ও পারেনি। দুদকও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। উচ্চ আদালতের আদেশের পর তারা বাধ্য হয়ে বাচ্চুকে ডাকল। এটা কি লোক দেখানো, নাকি সত্যি? এটা বুঝতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাকে সত্যিই বিচারের আওতায় আনা হবে কি না, এটা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে। দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে, আশা করি তিনি বিচারের ব্যবস্থা করে তা প্রমাণ করবেন।
প্রথম আলো: নতুন ব্যাংকগুলো খারাপ করছে। এরপরও নতুন ব্যাংক দিতে তৎপরতা চলছে।

ইব্রাহিম খালেদ: আইনে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে, সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের না। অর্থ মন্ত্রণালয় সুপারিশ পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা খর্ব করেছে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংককে চাপ দিয়ে ব্যাংক দিতে বাধ্য করছে সরকার, যা আইনের অপব্যবহার। এত ব্যাংক থাকতে কেন নতুন ব্যাংক দেবে সরকার? বর্তমানে কার্যক্রমে থাকা ব্যাংকগুলোই গ্রামে শাখা দিতে পারে। নতুন ব্যাংক দেওয়া মানে আবার কিছু রাজনীতিবিদকে সহায়তা করা। রাজনীতিকে অর্থনীতির মধ্যে টেনে আনা উচিত হবে না। অনেকে বলে থাকেন, কাউকে পদ না দিতে পারায় ব্যাংক দিতে হচ্ছে। এটা তো ভুল সিদ্ধান্ত, তাঁকে ঠিকাদারি কাজ দিয়ে সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম আলো: ইসলামী ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় হঠাৎ পরিবর্তন হলো। এটিকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

ইব্রাহিম খালেদ: চট্টগ্রামভিত্তিক গ্রুপটি যখন ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিল, তখন জনগণ ভালোভাবেই নিয়েছিল। জামায়াতের আগ্রাসন থেকে ব্যাংকটি বাঁচল। এখন দেখা যাচ্ছে, তারা আরও ব্যাংক অধিগ্রহণ করছে। এটা আইনি প্রক্রিয়াতেই হচ্ছে, তবে ন্যায়ের ব্যত্যয় ঘটছে। এভাবে তারা একের পর এক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিলে পুরো খাতের ওপর একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে; যা দেশ, সরকার, অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। সময় থাকতে এসব কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে। একটি গোষ্ঠী কী পরিমাণ শেয়ার ধারণ করতে পারবে, আইন সংশোধন করে তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

সহনীয় ঘুষ-ঘুষি : মাননীয়দের বাচনে বচন


মোস্তফা কামাল


ঘুষ নিয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কাস্টমস ও পুলিশ সহনীয় মাত্রায় ঘুষাঘুষি করলে ভাঙচুরসহ এত কাণ্ডকীর্তি হয় না। গড়াত না এমন ফ্যাসাদে। ইমিগ্রেশন ওসি ওমর শরীফকেও বদলি হতে হয় না। সহনীয়তার গুরুত্ব না বোঝায় এখন তাদের সবার দুর্গতি। গণমাধ্যমগুলোও রসালো খবরের আইটেম পেত না। এ সময়টাতেই নিজ মন্ত্রণালয়ের লোকজনদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু ঘুষ বিষয়ে তার সহনীয় মাত্রার থিউরি মানতে নারাজ দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ঘুষ ঘুষই। এটা দুর্নীতি। তা সহনীয়, অসহনীয়, দুঃসহ যা-ই হোক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ঘুষ-দুর্নীতি নম্বর ওয়ান প্রতিবন্ধকতা হলেও ব্যাপকতার তোড়ে শিক্ষামন্ত্রীর একে সহনীয় পর্যায়ে করার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতেই দুদক চেয়ারম্যানের এই প্রতিক্রিয়া।

দেশের বিদ্যমান আইনে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটোই দুর্নীতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোডে অন্তর্ভুক্ত।  যদিও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়েও দিন কয়েক সরস আলোচনা ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয় না। কোনো সমাধানও মেলে না। কারণ, মাননীয়দের এ ধরনের মন্তব্যে মানুষের কাতুকুতু ছাড়া আর কোনো প্রাপ্তি নেই। বরং ঘুষ, ঘুষি, দুর্নীতি, লেনদেন, বিনিময়, হাদিয়া, নজরানা, স্পিডমানি, গিফটের ঝাপটাঝাপটি ও গতি আরও বাড়ে। অফিস-আদালতে ঘুষের আলগা কামাই, মহার্ঘ্য (মহা+অর্ঘ্য), উপরি, ইনাম ইত্যাদি সোহাগি নামও রয়েছে। 

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদসহ আমাদের কারও কারও স্মৃতিভ্রম না ঘটে থাকলে জানার কথা শিক্ষামন্ত্রীর আরও অনেক আগেই ঘুষকে বৈধতার ফতোয়া দিয়েছেন আরও পাওয়ারফুল মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর অনেক চড়া-কড়া বচনের সঙ্গে রয়েছে বাচনও। ঘুষকে তিনি স্পিডমানি নামে ডাকতে বলেছেন। ঘুষ নিয়ে মাতামাতির সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘স্পিড মানি বৈধ। গিফটও অবৈধ নয়। কারও কাজ দ্রুত করে কিছু নিলে সেটা হবে উপহার। সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়েও তত্ত্ব রয়েছে তার। বলেছেন, এটা পাচার নয়, লেনদেন। আর এত লেনদেন মানে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। মানুষের হাতে অনেক টাকাই মানুষের আয় বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত। এ পর্যায়ে এসে সহনীয়তা বিষয়েও কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে কিঞ্চিত ভিন্নতা শিক্ষামন্ত্রীর তত্ত্বের সঙ্গে। তত্ত্বের তরজমায় বলেছেন, চালের দাম অসহনীয়। সরকারই চেয়েছিল চালের দাম একটু বাড়ুক। 

কী বোঝালেন? কী বার্তাই বা দিলেন এই মহোদয়। অর্থ ও শিক্ষামন্ত্রীর আগে-পরে আরেক হেভিওয়েট মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সহনশীলতার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি সহনশীলতার পরামর্শ দিয়েছেন ছাত্রলীগকে। তাদের স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের কাজে মানা করেছেন। বলেছেন, শিশুদের পিঠে এমনিতেই বইয়ের বোঝা। তার  ওপর লীগের ভার তারা সইতে পারবে না। তাই এখন তা না করাই ভালো বলে পরামর্শ ওবায়দুল কাদেরের। সহনশীলতার শিক্ষাটি একেবারে আচমকা বা অপ্রাসঙ্গিকভাবে মাঠে আসেনি। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী তত্ত্বটি দিয়েছেন প্রক্ষিত দৃষ্টেই। তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেছেন, ঘুষ খান। কিন্তু সহনীয় মাত্রায় খান। শুধু অফিসাররা চোর নয়। মন্ত্রীরাও চোর। আমি নিজেও চোর।
এ কথার সঙ্গে আরও কিছু কথাও বলেছেন নাহিদ। ঘুষের সমালোচনা করে বলেছেন, এ অবস্থা পাল্টাতে হবে। অনেকটা আত্মসমর্পণের মতোই বলেন- অনুরোধ করছি, আপনারা ঘুষ খান। কিন্তু সহনশীল হয়ে খান। কেননা আমার সাহস নেই বলার, ঘুষ খাবেন না। তা হবে অর্থহীন। শিক্ষাভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন। বলেন, আপনারা স্কুলে যান খাম রেডি থাকে। সেটি নিয়ে আসেন আর পজিটিভ রিপোর্ট দেন। কিছুদিন আগে একজন কর্মকর্তাকে দুদক দিয়ে ধরিয়েছি। কারণ থানা-পুলিশ দিয়ে ধরালে ঘুষ খেয়ে তারাও ছেড়ে দেবে। তাই দুদক দিয়ে ধরাতে হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ওই কর্মকর্তার তথ্য সংগ্রহ করে দেখলাম তিনি পাঁচটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবার এক মাসের বেতন দিতে বলেছেন। সে অনুযায়ী শিক্ষকরা টাকা রেডি করে। অনেক কষ্টে তাকে ধরতে হয়েছে। ঢাকায় আটককালে তার সঙ্গে পাওয়া গেছে ক্যাশ আড়াই লাখ  টাকা। ওই দফতরে চাকরি করে একজন ঢাকায় ১৩টি বাড়ি করেছেন এমন তথ্যও জানান শিক্ষামন্ত্রী। 

গণমাধ্যমে তার সব কথা আসেনি। সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার সবকটিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে বিষয়টি শুধু সমালোচনার আইটেমই হয়েছে। যে যা পারছেন বলছেন। মন্তব্যের ইয়ত্তা নেই। কেউ জানতে চান, ঘুষের সহনীয়তার মাত্রা কত? কত টাকা দেওয়া-নেওয়া করলে মাত্রা মতো হবে? আবার কারও প্রশ্ন— অনৈতিক বিষয়ে উৎসাহিত করা বাবদ তিনি কত ইনাম পেয়েছেন? ঘুষকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষমতা কি জনগণ কিংবা সরকার তাকে দিয়েছে? এমনতর প্রশ্নের শেষ নেই। রসিকতা করে কেউ কেউ ঘুষের সহনীয় মাত্রার সংজ্ঞা-ব্যাখ্যাও ঠিক করেছেন। এক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে পরিমাণ টাকার বান্ডিল দাতার পকেট থেকে বের হতে এবং গ্রহীতার পকেটে ঢুকতে অসুবিধা হয় না সেটাই সহনীয় মাত্রা।

মাস কয়েক আগে দুর্নীতি আর হরিলুট বিষয়ে আপডেট তত্ত্ব জানিয়েছেন আরেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বলেছেন, দুর্নীতি আর হরিলুটের মধ্যে তফাত রয়েছে। দেশে কোনো হরিলুট হচ্ছে না। যা হচ্ছে সেটা টুকটাক লুটপাট। অর্থাৎ হরিলুট নাজায়েজ। লুটপাট জায়েজ। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংলাপে এ পানিসম্পদমন্ত্রী পানির মতো বুঝিয়ে দিলেন দুর্নীতি আর লুট, হরিলুট, লুটপাটের ব্যাপারটা। 

এ মাননীয়রা ঘুষ, দুর্নীতি, চুরির স্বীকারোক্তি ও বৈধতা দিয়ে এখন যা বলছেন তার আভাস জীবদ্দশার শেষদিকে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মূসা। তিনি বলেছিলেন, ‘লোকজন একদিন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীদের দেখলে বলবে তুই চোর। একসময় যেমন স্বাধীনতাবিরোধীদের বলত তুই রাজাকার। ক্ষমতাসীনদের অনেকে এতে তার ওপর নাখোশ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের খাস লোক হয়েও লোকটা কেন উল্টা কথা বললেন, এর নানা ব্যাখ্যা প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেকটা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে এবিএম মূসার কথা। এখন লোকজন কষ্ট করে মাননীয়দের চোর বলে না। এটা তাদের গা সহা হয়ে উঠেছে। তবে, মান্যগণ্যরা নিজেই নিজেদের চোরের শিরোপা দিচ্ছেন। প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি-দুর্নীতির জানান দিয়ে বাহাদুরি দেখানোর ঘটনাও বাদ যাচ্ছে না। মাননীয় নৌপরিবহনমন্ত্রী গর্বভরে বলেছেন, তিনি এরশাদ ও মাইনুদ্দিন খান বাদলের সুপারিশে দুজনকে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি দিয়েছেন। কী জানালেন-বোঝালেন তিনি? সারা দেশে কোটি কোটি বেকারের জন্য যে এরশাদ-বাদল সাহেব নেই তারা কী করবে? এ গর্বের জানান দেওয়া কোন নীতি? এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা বলেছিলেন, ছাত্রলীগ কর্মীরা শুধু ভাইভা কার্ড পেলেই হবে। তিনি চাকরির ব্যবস্থা করবেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জোস সামলাতে না পেরে বলেছেন, ছাত্রলীগ করা মানেই তার বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি। এ নিয়ে প্রশ্ন বা জবাবদিহির কিছু নেই।

  • লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।
  • কার্টেসি - bd-pratidin.com


Wednesday, December 27, 2017

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করছে ক্ষমতা-ফ্যাক্টর!


আফসান চৌধুরী/ southasianmonitor.com 



বাংলাদেশ যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে এবং ২০১৮-১৯ সময়কালের নির্ধারিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ভোটে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে?

শীর্ষ স্থানীয় অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ তাসলিম উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ ইক্যুইটির উপকারিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। ‘হয়্যার ডিড দি বেনিফিটস অব ইকোনমিক গ্রোথ ডিস-এপেয়ার?’ (বিডিনিউজ২৪, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি কেবল সমৃদ্ধির দাবিই চ্যালেঞ্জ করেননি, সরকারি উপাত্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

পারিবারিক আয় ও ব্যয় সমীক্ষা তথ্য ব্যবহার করে অধ্যাপক তাসলিম দেখিয়েছেন, ‘২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পারিবারিক আয় সত্যিকার অর্থে ১১ ভাগ কমেছে। এই সময়কালে সত্যিকারের ভোগও একই অনুপাতে কমেছে।’

‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দেখলে বুঝা যাবে, ২০০৯-১০ এবং ২০১৫-১৬ সময়কালে প্রকৃত জাতীয় আয় বেড়েছে ৪২ ভাগ, অথচ প্রকৃত মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ ভাগ। অন্য কথায়, এই ছয় বছরে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিটি পরিবার সদস্যের গড়ে প্রকৃত আয় বেড়েছে ৩১ ভাগ। এই আয় মাথাপিছু প্রকৃত ভোগেও বেড়েছে।’

কিন্তু পারিবারিক তথ্যে দেখা যায়, ২০১০ সালের তুলনায় পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সত্যিকারের আয় দুই ভাগ কমে গেছে। ‘প্রত্যেকের ভোগব্যয় কমেছে ১ শতাংশ করে।’

তিনি বলেন, এইচআইইএস এবং জাতীয় তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য এত বেশি যে তা পরিসংখ্যানগত ভুল কিংবা পদ্ধতিগত বা হিসাবগত ভুল হিসেবে এড়ানোর উপায় নেই। অধ্যাপক তাসলিমের যুক্তি হলো, প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেনি।

তিনি বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়কার প্রবৃদ্ধি থেকে পুরো জনসংখ্যা বাদ পড়েছে। অথচ তাদের কাছেও তা যাওয়ার কথা ছিল। এই সময়কালে জাতীয় আয়ে সরকারি রাজস্বের অংশও বাড়েনি।

রাজনৈতিক কোনো ভ্রান্তি কি আছে?

সরকারি দাবির সাথে সাংঘর্ষিক দাবির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের জন্য তা কি রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক বিবেচিত হবে না? এক দশক ধরে শাসন করার পর দলটি স্বাভাবিকভাবেই আগের মতো জনপ্রিয় নয়। এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা যেকোনো দলের ক্ষেত্রেই এমনটি হতে পারে এবং আওয়ামী লীগ ভিন্ন কিছু নয়। কিন্তু এটি কি এমন কোনো নির্বাচনী সমস্যা, যার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত?

সদ্য অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে ক্ষমতাসীন দলকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন দলটির প্রধান মিত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী। জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ রংপুরের লোক হওয়ায় ওই এলাকায় জাতীয় পার্টি শক্তিশালী। কিন্তু ২০১২ সালের নির্বাচনে সেখানে আওয়ামী লীগ জিতেছিল।

২০১২ সালের জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী চলতি বছর এক লাখ ছয় হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গেছে। চলতি বছর তিনি ভোট পেয়েছেন ৬০ হাজারের কিছু বেশি ভোট, আগেরবারের চেয়ে তা ৫০ হাজার বা অর্ধেকেরও কম।

এই বছর বিজয়ী এম আর মোস্তফা পেয়েছেন এক লাখ ৬০ হাজার ভোট, ২০১২ সালে পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার।

আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি গতবার পেয়েছিলো ২১ হাজার, এবার ৩৫ হাজার।

জয়ের চেয়েও বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সম্ভবত আওয়ামী লীগ মোট ভোটের ৩৫ ভাগেরও কম পেয়েছে। ভোট ব্যাংকের হিসাবটি বিবেচনা করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগের মূল ভোটে টান পড়েছে, আর বিএনপির বেড়েছে।

অন্যান্য স্থানের মতো ক্ষমতাসীনবিরোধী ভোট যায় সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীর বাক্সে এবং রংপুরেও ভিন্ন কিছু হয়নি।

আওয়ামী লীগ কি উদ্বিগ্ন?

মিত্রের জয়ে সাধারণত বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। অবশ্য দলটি বলেছে, তারা তদন্ত করবে। তবে দলটি যে সমস্যায় পড়েছে, তা স্পষ্ট। কিছু ‘সম্পদ’ হাসিলের আশায় এক দশক আগে যারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিতে লাইন ধরেছিলেন, তাদের অন্তঃদ্বন্দ্ব এখন একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটি এ যাবতকালের অন্যতম শক্তিশালী নেতার নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও এখন দলটিকে ২০০৮ সালের চেয়েও কম শক্তিশালী দল মনে হচ্ছে। দলটিকে দারুণ দেখালেও দলটির স্বাস্থ্য আসলে তত ভালো নয়।

অর্থাৎ অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত হয়তো আসলেই কোনো ব্যাপার, কিংবা কোনো ব্যাপারই নয়। কারণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মতো রাজনীতির প্রতিও জনসাধারণের প্রত্যাশা খুবই কম। পুঁজির সাথে সম্পর্কিত ক্ষমতাসীন শ্রেণির অংশটিই হয়তো ভোট কমা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কেউ ভালো নেই বলে অধ্যাপক তাসলিমের যুক্তি সত্ত্বেও এ নিয়ে এখনো কেউ উদ্বিগ্ন নয়।

Tuesday, December 26, 2017

বাংলাদেশে গুম একটি ‘গভীর উদ্বেগের বিষয়’





গত মাসে ঢাকার একটি ব্যস্ত সড়ক থেকে অপহরণ করা হয়েছিল একজন শিক্ষাবিদকে। তিনি এক মাসেরও বেশি সময় পরে বাসায় ফিরেছেন। বলেছেন, ‘অজ্ঞাত অপহরণকারীরা’ তুলে নিয়ে যায় তাকে। তিনি মোবাশ্বার হোসেন। ঢাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী প্রফেসর। তাকে অপহরণ করা হয়েছিল ৭ই নভেম্বর।

শুক্রবার তাকে ঢাকার কাছে একটি মহাসড়কে একটি মাইক্রোবাস থেকে ফেলে যাওয়া হয়। এ সময় তারা তাকে বলা হয়, ‘পিছনে ফিরে তাকালে আপনাকে গুলি করবো আমরা’। তিনি বলেছেন, অন্ধকার একটি রুমে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল ৪৪ দিন। তারপর তার চোখ বেঁধে টানতে টানতে মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। 

মুক্তি পাওয়ার ১২ ঘণ্টারও কম সময় পরে শুক্রবার সকালে তার বাসার বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মোবাশ্বার হাসান। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পরে প্রথমবারের মতো আমি দিনের আলো দেখতে পাচ্ছি’। 

তার অপহরণের ঘটনাটি এর আগের আরেকটি ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। হাসান বাসায় ফেরার মাত্র দু’দিন আগে ঢাকাভিত্তিক সাংবাদিক উৎপল দাসকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাকে আটকে রাখা হয়েছিল ৭১ দিন। 

উৎপল দাসও বলেছেন, ঢাকা থেকে তাকে অপহরণ করে চার থেকে পাঁচ ‘অজ্ঞাত অপহরণকারী’। এই অপহরণকারীরা এই দু’ব্যক্তিকেই প্রকাশ্যে দিনের আলোয় তাদের গাড়িতে তুলে নিয়েছিল। উৎপল দাস আরো বলেছেন, তাকেও চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। এরপর তাকে ফেলে যাওয়া হয় একটি মহাসড়কে। 

হাসান বলেছেন, তার অপহরণকারীদের একজন তার চোখের ভিতর কিছু একটা ঘষে দেয়। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। উৎপল দাস বলেছেন, কালো কাপড় দিয়ে তার কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। 

তবে তাদের দু’জনের কেউই অপহরণকারীদের শনাক্ত করতে বা চিনতে পারেননি। 

তাদেরকে এমন একটি সময়ে মুক্তি দেয়া হয়েছে যখন বাংলাদেশে মারুফ জামানসহ সুপরিচিত অনেক মানুষ গুমের ধারাবাহিক ঘটনা ঘটেছে। মারুফ জামান ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ছিলেন। 

এ বছরের শুরুর দিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘২০১৩ সাল থেকে কয়েক শ’ মানুষকে অবৈধভাবে আটক করেছে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ’। শুধু গত বছরেই ‘জোরপূর্বক গুমের শিকার’ হয়েছেন  ৯০ জন। ওই রিপোর্ট প্রকাশের সময় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গুমের ঘটনাগুলো প্রমাণিত এবং এসব বিষয়ে রিপোর্ট হয়েছে। কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে সরকার এই চর্চা অব্যাহত রেখেছে। দেখে মনে হচ্ছে লোকজনকে আটকে মুক্ত স্বাধীন অধিকার ভোগ করছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তারা অপরাধী হবে নাকি নিরপরাধী হবেন সে সিদ্ধান্তও তারা নিচ্ছেন। তাদের শাস্তি দেয়ার বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করছেন। এমনকি তারা বেঁচে থাকার অধিকার পাবেন কিনা তাও তারা নির্ধারণ করছে’। 

ঢাকা ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত চার মাসে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে মোবাশ্বার হাসান ও উৎপল দাসসহ এখন পর্যন্ত বাসায় ফিরেছেন পাঁচজন। স্থানীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন রয়েছেন নিখোঁজ। মারুফ জামানসহ অন্যদের কি পরিণতি হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। 

মিডিয়া ও মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর সমালোচনার মুখে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সম্প্রতি বলেছেন, নিখোঁজ সবাইকেই পাওয়া যাবে। 

অনিশ্চিত কারণ

মোবাশ্বার হাসান ও মারুফ জামান উভয়েই সম্ভ্রান্ত, মধ্যবিত্তের ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত মানুষ। বাংলাদেশি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তারা সম্পদশালী ছিলেন না। আল জাজিরার সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাদের কাছে কোনো মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি। অন্যদিকে উৎপল দাসের পিতা চিত্তরঞ্জন দাস বলেছেন, তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি মুক্তিপণ চেয়ে ফোনকল পেয়েছেন। তিনি মাসে প্রায় ১৯৫ ডলার আয় করেন। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। বসবাস করেন ঢাকার বাইরে একটি ভাড়া টিনশেড বাড়িতে। চিত্ত রঞ্জন দাস বলেন, অজ্ঞাতন ফোনকলকারী তার কাছে ছেলের মুক্তির জন্য ১২৫০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছিল। তিনি তার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু তাকে সেই সুবিধা দেয়া হয় না। এরপর তাকে আর কলব্যাকও করা হয়নি। 

ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শাহদীন মালিক। তিনি সুপ্রিম কোর্টেরও একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। তিনি বলেছেন, তিনি মনে করেন না চলমান এই অপহরণের ঘটনাগুলো শুধুই অর্থ আদায়ের উদ্দেশে। এর পরিবর্তে যাকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি মনে করা হবে তাকে এর মাধ্যমে একটি গায়ে শিহরণ লাগানো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য এ কাজ করে থাকতে পারে। শাহদিন মালিক আল জাজিরাকে বলেন, আমার মনে হয় যারা সরকারের সমালোচক তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে (আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো)’। 

মোবাশ্বার হাসান রাজনীতিতে ইসলাম এবং জঙ্গি ইস্যুতে বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। অন্যদিকে উৎপল দাস বাংলাদেশের একটি বাহিনীকে নিয়ে খবর লিখেছেন। সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচক ছিলেন। ফেসবুকে সরকারবিরোধী অন্যদের পোস্ট শেয়ার দিতেন তিনি। শাহদিন মালিক বলেন, মোবাশ্বার হাসান ও মারুফ জামানের মতো ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কর্মকা-ে জড়িত বলে সন্দেহ হতে পারে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর। এর ফলে তাদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে থাকতে পারে। শাহদিন মালিক বলেন, ‘এই (প্রবণতা) ভুল এবং মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন’। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, মাঝে মাঝেই আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এসব গ্রেপ্তারের খবর অস্বীকার করে। সরকারের কিছু কর্মকর্তা বলে থাকেন নিখোঁজ ব্যক্তিরা ‘স্বেচ্ছায় আত্মগোপন’ করে আছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদদ্যের আনা  অপহরণের এসব অভিযোগ পুলিশ গ্রহণ করে না। 

রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের বেসামরিক অভিজাত বাহিনী র‌্যাব। এর মিডিয়া ও আইন বিষয়ক শাখার পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদ খান আল জাজিরাকে বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ হন তাহলে এ বিষয়ক মামলাটি পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের ওপর, যে এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বসবাস করেন। 

খিলগাঁও পুলিশ স্টেশনের তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির খান। ওই পুলিশ স্টেশনে খান সাহেবের পরিবার একটি নিখোঁজ বিষয়ক অভিযোগ করেছিল। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, তাকে অপহরণকারীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। বলা হয়েছে, দেশের দ-বিধির অধীনে একটি নতুন মামলা দায়ের করতে পারে ওই পরিবারটি। তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা দাবি করতে পারেন যে, অপহরণ করা হয়েছে। 

আল জাজিরাকে খান সাহেবের বোনো তামান্না তাসনিম বলেছেন, জাহাঙ্গীর কবিরকে ফিরে পেয়ে তাদের পরিবার খুশি। তাই অপহরণের কোনো মামলা করার পরিকল্পনা নেই আমাদের। 

মারুফ জামানের ঘটনায় যোগাযোগ করা হলে ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে এখনও ক্লু উদ্ধারের জন্য কাজ করছে পুলিশ’। এই ধানমন্ডি থেকেই নিখোঁজ হয়েছিলেন মারুফ জামান। তার বড় মেয়ে শবনম জামান বলেছেন, তিনি কোথায় আছেন এ বিষয়ে তাদের পরিবার কোনোই তথ্য পায়নি। গত ৫ই ডিসেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি এলাকায় তার গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শবনম বলেছেন, ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহিল কাফির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি তাদেরকে বলেছেন, ‘পুলিশ এখনও তদন্ত করছে’। 

শবনম বলেন, ‘এখনও এই অবস্থায় আমরা আশাবাদী তাকে মুক্তি দেয়া হবে’। 

আল জাজিরাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, জাঙ্গাঙ্গীর খান ও উৎপল দাসসহ যেসব ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছেন তাদের পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার ভাষায় ‘তাদের অপহরণের বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো’। 

গভীর উদ্বেগ

কর্তৃপক্ষ কি এসব ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারবিষয়ক কর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার আফসান চৌধুরী আল জাজিরাকে বলেছেন, গুম দেশে একটি গ্রহণযোগ্য বিষয় হিসেবে মেনে নেয়া হয়েছে। ‘এখন সমস্যাটা এর মধ্যেই রয়েছে’। 

শীর্ষ স্থানীয় মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ আইন ও সালিম কেন্দ্রের মানবাধিকারবিষয়ক কর্মী ও পরিচালক নূর খান লিটন আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর কাছে জানতে চান তারা কেন এসব অজানা মানুষকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে না, যাদের দৃশ্যত রয়েছে অনেক ক্ষমতা। 

নুর খান লিটন বলেছেন, ‘মোবাশ্বার হাসান অথবা উৎপল দাস পরিষ্কার করে বলেছেন, তাদেরকে তুলে নিয়েছিল অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তাদের প্রকাশ্য দিনের আলোতে কাউকে তুলে নেয়ার ক্ষমতা আছে, তুলে নিয়ে দীর্ঘ সময় অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখার এবং সেখান থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার ক্ষমতা আছে’। তাই অপহরণকারীদের খুঁজে বের করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়’। 

  • অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখার অনুবাদ। মানবজমিন।