Search

Sunday, June 10, 2018

Tax measures to hurt middle class

High- and low-income people to benefit from budget, says CPD, concerned over widening inequality


The proposed budgetary measures for fiscal 2018-19 will benefit the high and low income people, leaving the middle- and lower middle-class, which form the majority of Bangladesh's population, strained, said the Centre for Policy Dialogue yesterday.

“Policymakers do not feel the need to hear the voices of the middle-class and the lower middle income people to the extent they feel necessary to pay attention to the poor for vote and affluent class for election finance,” said Debapriya Bhattacharya, distinguished fellow of the CPD.

Debapriya presented the think-tank's analysis on the proposed budget for fiscal 2018-19 at a discussion in the capital's Lakeshore Hotel.

Finance Minister AMA Muhith unveiled a budget of Tk 464,573 crore for the coming year on Thursday, proposing continuation of the existing tax-free income ceiling and tax rates for individuals and companies.

At the same time, VAT on various goods and services such as flats of up to 1,100-square feet, furniture and clothes have been increased while VAT was imposed for the first time on ride-hailing services and virtual businesses.

TAX BURDEN ON POORER PEOPLE


CPD Distinguished Fellow Mustafizur Rahman said, “The middle- and lower middle-class have a relation with the market. For this reason, the rise in indirect tax by way of VAT will create a burden on the shoulders of these people.”
The speakers, however, appreciated that social safety net programmes were upgraded for the poor.

Corporate tax for banks, financial institutions and insurance companies has been slashed and the perquisite allowance has been raised to Tk 5.50 lakh from Tk 4.75 lakh, both of which will please high income people.

Debapriya said, “We are giving benefits to low income people by increasing the social safety net coverage. At the same time, we are giving benefits to those who provide finance for election.”

He also pointed out that income inequality was on the rise -- a worrying trend conveniently overlooked in the proposed budget.

Between 2010 and 2016, the income of the bottom 5 percent of the population declined by 60 percent and that of the top 5 percent rose by 57 percent.    

“The East-West divide in Bangladesh poverty scenario appears to have resurfaced during this period,” he said, adding that Chittagong, Dhaka and Sylhet were considered east, and Barisal, Khulna and Rajshahi west.

The social safety net coverage has been expanded in the proposed budget. “This will better address the issue of 'inclusivity of growth' in the budget, albeit mostly through short-term measures,” the CPD said.


INCOME INEQUALITY IGNORED

But the medium- to long-term challenges such as inequality of both income and wealth, unplanned urbanisation and the other issues were ignored.

The budget's lack of sensitivity towards the existing and emerging concerns such as the pressure on balance of payment and exchange rate, inflationary expectations as well as scant attention to areas requiring reforms is upsetting.

The widening imbalance in trade and the current account is becoming a matter of grave concern: it is weakening the taka against other currencies and fuelling import-induced inflation.

Under the circumstance, a spike in VAT rates for goods and services, including advance trade VAT at the import and trading stages from 4 percent to 5 percent, will increase prices and thereby inflation, which is already creeping up.

Inflation is likely to rise in the incoming fiscal year and would not be stable at 5.6 percent as projected in the budget, the CPD said.

“The anticipated food and non-food price pressure will fall disproportionately on the low income people and worsen the consumption and income inequality situation.”

A large number of lower middle income people will come under the tax net for the first time next fiscal year as the tax-free income limit has been kept unchanged for the fourth year now -- without considering the added pressure of rising food inflation and decreasing average monthly real wage.

The tax-free income threshold should be increased to Tk 300,000 and the first slab of tax rate should be fixed at 7.5 percent instead of 10 percent to ease the pressure on the lower middle income families, the CPD said.

The civil society organisation opposed the government's move to lower the corporate tax rate for banks, insurance and financial institutions, saying the cuts will give the 'opposite signal' to the sector plagued by loan scams, high default loans, liquidity crunch and a complete lack of good governance.


STOP ANARCHY IN BANKS

“The government should not give such facility to the owners of banks and financial institutions without stopping the anarchy that is going in the banking sector,” Debapriya said.

He went to state that the corporate tax cut is unlikely to improve the liquidity situation and lower the interest rate for lending, both of which would have benefitted the entrepreneurs.

Subsequently, he called for continuation of the existing corporate tax rates for the financial sector: 40 percent for listed banks, non-bank financial institutions and 42.5 percent for the non-listed ones.

Mustafiz cited various measures taken by India to restrict risky lending. “In contrast, no step has been taken to discipline the sector. We are surprised to see this,” he added.

The research organisation said a number of laudable fiscal measures have been taken to strengthen the domestic-oriented industries and enhance revenue earnings.

“However, the budget for fiscal 2018-19 is overall one of maintaining the status quo. The budget statement builds more on a review of the past rather than a focus on future,” the CPD said.

Moderated by CPD Executive Director Fahmida Khatun, Research Director Khondaker Golam Moazzem and Research Fellow Towfiqul Islam Khan also spoke.
  • Courtesy: The Daily Star /June 09, 2018

উপমহাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ও আমরা

এম সাখাওয়াত হোসেন


এ বছরের মাঝামাঝি থেকে আগামী বছরের মাঝামাঝি উপমহাদেশের তিনটি বড় দেশ বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে পাকিস্তানে নির্বাচনের তারিখ হচ্ছে এ বছরের ২৫ জুলাই। বাংলাদেশের নির্বাচনও এ বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়। ভারতে নির্বাচন তো সারা বছরই লেগে থাকে। হয় স্থানীয় না হয় রাজ্য বিধানসভার আর না হয় বিধানসভা ও লোকসভার উপনির্বাচন। এরই মধ্যে আগাম নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। কয়েকটি রাজ্যে ভালো করলেও হালের কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপির জনপ্রিয়তা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

কর্ণাটকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও মিত্রহীন বিজেপি সরকার গঠন করতে পারেনি। রাজ্যপাল সরকার গঠনে গড়িমসি করার কারণে সুপ্রিম কোর্ট মাত্র এক দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা সব সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে যেমন সমুন্নত রেখেছে, তেমনি নির্বাচন কমিশনকে তার কাজে সহযোগিতা করে গেছে। এবং এ কারণেই ভারতীয় নির্বাচন কমিশন আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে স্বাধীন ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টও স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচন কমিশনের কাজকে সহায়তা করে। হালে পাকিস্তানের কোর্ট বলেছেন, রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচন প্রচারণা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। আদেশে আরও বলা হয়েছে যে রাজনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁদের নিজেদেরই (প্রথম আলো, ৭ জুন ২০১৮)। 
এ ধরনের আদেশ নির্বাচন কমিশনের হাতকে শক্তিশালী করে।

উপনিবেশ-উত্তর আফ্রো-এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্বাধীন নির্বাচন কমিশন হিসেবে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী আইনসমূহ অন্তত এই উপমহাদেশের প্রায় সব কটি দেশই অনুসরণ করেছে। সর্বশেষ নেপাল। নেপালের আইন ভারতের অনুসরণে হলেও ওই দেশের আর্থসামাজিক পরিবেশের কারণে কিছুটা তফাত রয়েছে। তবে নেপালের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনও ভারতের অনুসরণে তিনটি ভালো নির্বাচন উপহার দিয়েছে।

২০১৭ সালের নেপালের সংবিধানের প্রথম নির্বাচনটি দেশে-বিদেশে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে শাসক দল নেপালি কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে থাকার কারণে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতে, নেপালের নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচনে যথেষ্ট বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল। নেপালে একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও প্রথমবারের মতো প্রাদেশিক নির্বাচন হয়েছিল।

আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী আইন তৈরি হয়েছিল ভারতের অনুসরণে। একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী আইন আরপিও ১৯৭২-এর বহু ধারা হুবহু ভারতের মতো। অবশ্য পরে আরপিওতে অনেক সংশোধনী হয়েছে। বড় ধরনের সংশোধনী প্রথমে আসে ২০০১-এ এবং সবচেয়ে কার্যকর সংশোধনী আনা হয় ২০০৮ সালে। ওই সময়ে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আচরণবিধি এবং নির্বাচনী আইনের বহু কার্যকর ধারাকে আমাদের দেশের উপযোগী করে সংযোজন করা হয়েছিল। এ ধরনের আদান-প্রদান এবং একে অপরের ‘ভালো দিকগুলো’ গ্রহণ করার প্রথা সমগ্র বিশ্বেই রয়েছে।

ভারতের নির্বাচন এবং নির্বাচনী আইন ও তার প্রয়োগ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয় পাকিস্তানে। পাকিস্তানের আইন বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘পিলদাত’ পাকিস্তানের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কার্যক্ষমতা এবং নির্বাচনী আইন সংস্কার করে প্রায়োগিক ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করে আসছে। অন্যদিকে নির্বাচনের সময় পাকিস্তানের সংসদ অনেকটা বাংলাদেশের বর্তমানে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গ্রহণ করে, যাতে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। অভিজ্ঞতার আলোকে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর রূপ দিতে পাকিস্তানের সংবিধানে ২০১২ সালে ২০তম সংশোধনী আনা হয়। যার মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ২২৪ (এ) সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগের রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা রদ করে সংসদে দেওয়া হয়। অনুচ্ছেদ ২২৪ (বি) সংযুক্ত করা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়োগের প্রক্রিয়া সংবিধানে যুক্ত করা হয়। এই বিধান অনুযায়ী সংসদের নেতা, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদে বিরোধী দলের নেতা মিলে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য চারটি নামের মধ্যে একজনকে সর্বসম্মতিক্রমে নিয়োগের জন্য নির্ধারিত করবেন। যদি মতৈক্য না হয়, তবে সংসদের উভয় পক্ষ থেকে সমসদস্যের সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে এবং তাদের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। সেখানেও যদি মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ওই লিস্ট থেকে একজনকে নিয়োগের জন্য নির্ধারণ করে রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠাবে নিয়োগের জন্য। সংসদীয় কমিটি অথবা দুই বেঞ্চের নেতাদের মতৈক্যে পৌঁছার জন্য তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে নির্ধারণ করতে হলে মোট চার দিনের সময়ের মধ্যেই নিয়োগ দিতে হবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পর সর্বসম্মতিক্রমে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নাসিরুল মূলক তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োজিত হয়েছেন। অনেক আলোচনা, গবেষণা এবং বিতর্কের পর সংবিধানে দুই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাঠামোতে যেমন পরিবর্তন আনা হয়েছে, তেমনি নির্বাচন কমিশনের হাতকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। এককথায়, পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী সময়ের জন্য ‘সুপার ইমপোজড’ সরকারের তদারকির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেমনটা ভারতীয় নির্বাচন কমিশন করে থাকে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ২০১১ সালে এ ধরনের সুপারিশ করেছিল, যা আলোর 
মুখ দেখেনি।

পাকিস্তানের নতুন আইনে সমগ্র নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে আরও আয়ত্তে রাখার জন্য জেলা অথবা সম অঞ্চলে একজন জেলা রিটার্নিং অফিসারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য একজন রিটার্নিং অফিসার এবং একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। জেলা রিটার্নিং অফিসার পদে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা জেলা পর্যায়ের বিচারককে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয় নিজেদের কর্মকর্তা অথবা সরকারি কর্মকর্তা এবং সরকার-নিয়ন্ত্রিত সংস্থা থেকে।

জেলা রিটার্নিং অফিসার সব রিটার্নিং অফিসারের সমন্বয়, পোলিং স্টেশন স্থাপন, প্রিসাইডিং অফিসার ও অন্যান্য অফিসার নিয়োগ এবং তাঁর আওতাধীন নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করেন। রিটার্নিং অফিসার তাঁর অধীনের সংসদীয় আসনের প্রচারণা থেকে ভোট গ্রহণ এবং ফলাফল একত্রীকরণের দায়িত্ব সম্পাদন করেন। এ ব্যবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি আসনের নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেলার অতিরিক্ত দায়রা বিচারককে জেলা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। বাংলাদেশ ছাড়া উপমহাদেশের তিনটি দেশেই অনুরূপভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনেও বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন কমিশন যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা অথবা প্রয়োজনে বিচার বিভাগের জেলার বিচারককে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিচার বিভাগের সঙ্গে আগাম পরামর্শের প্রয়োজন হবে। একই আইনে একটি জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের অবকাশ রয়েছে। প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য আলাদা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রবিধান রয়েছে আরপিওর ধারা ৭ অনুযায়ী।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ভবিষ্যতে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সর্বজনগৃহীত করতে হলে আরপিওর অধিক সংস্কারের প্রয়োজন যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের আইন ও বিধির অনুসরণীয় ধারাগুলোকে খতিয়ে দেখা এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। যদিও সময় কম, তবে নির্বাচন কমিশন বর্তমান আইনের আওতায় এবং আচরণবিধিকে আরও যুগোপযোগী করে কিছু ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু করতে পারলে আমরা পারব না কেন? বর্তমান অবস্থাতেই আইনিভাবে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে প্রয়োজন আরও কিছু সংস্কারের এবং কঠোর ও নির্মোহভাবে আইনের প্রয়োগ।

  • Courtesy: Prothom Alo /June 08, 2018

ব্যাংকমালিকদের জন্য বড় সুবিধা

  • ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী
  • ব্যাংক মালিকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারে নীতিনির্ধারণী পরিবর্তন


বেসরকারি ব্যাংকমালিকদের আরও বড় সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। তাঁদের বেশি মুনাফার জন্য ব্যাংকের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করও একই হারে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক পরিচালকেরা যা চাইছেন, তাই পাচ্ছেন, এমন রীতি চালু হচ্ছে মনে করেন ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞরা।

ব্যাংকমালিকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে বেশ কিছু নীতিনির্ধারণী পরিবর্তন আনতে হয়েছে। পরিবর্তন আনতে হয় আইনেও। সুদের হার কমানোর আশ্বাসে ব্যাংকমালিকদের চাপে এসব সুবিধা দেওয়া হলেও কমেনি সুদ হার। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা কার্যকর হলে বাড়বে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা। এতে ব্যাংকের পরিচালকেরা আগের চেয়ে বেশি মুনাফার ভাগ পাবেন। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নয়টি নতুন ব্যাংক। কারণ এসব ব্যাংক এখনো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। মুনাফা ভাগাভাগি করে নেবেন পরিচালকেরা। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে করপোরেট কর ও নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদ দেওয়ার পরই নিট মুনাফা হিসাব হয়। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৪০ শতাংশ হবে। 

তবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে এভাবে কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী। ২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নতুন নয় ব্যাংক নিট মুনাফা করে ৫৩৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা বৈষম্যমূলক আচরণ। দেশে ব্যাংক কোম্পানি ছাড়া আরও অনেক কোম্পানি আছে। অন্য কাউকে তো এ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়নি। 
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের আমানতে তাদের অংশগ্রহণ মাত্র ১০ শতাংশ। আগেও তাদের অনেক সুবিধা দিতে হয়েছে। তাদের চাপে আইন পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি আমানত বেশি নিয়েছে তারা, নগদ জমার হারও কমিয়েছে। ব্যাংক পরিচালকেরা তো যা চাইছে, সরকার তা-ই দিচ্ছে। এটা ঠিক নয়। 

করহার নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের করহার কিছুটা বেশি হওয়ায় আমি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার আড়াই শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। এতে এ খাত থেকে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীদের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে।’ 

এর আগেও ব্যাংক পরিচালকেরা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চাপ দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা নেয়। সুদহার এক অঙ্কে (১০-এর নিচে) নামিয়ে আনা হবে, এ জন্য এসব সুবিধা প্রয়োজন এমন শর্ত জুড়ে দেয় তারা। তাদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমায়। এ ছাড়া ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সময় আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পাশাপাশি সরকারি তহবিলের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ দেয় সরকার। 
গত ১ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক সভায় এসব সুবিধার সিদ্ধান্ত হলেও কমেনি সুদহার। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে গভর্নর ফজলে কবিরকে সুদহার কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বছরে একবারের বেশি সুদহার বাড়ানো যাবে না। সুদ হার বাড়াতে হলে তিন মাস আগে গ্রাহককে জানাতে হবে। 
যদিও গতকাল অর্থমন্ত্রী জানান, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আমানত ও ঋণের সুদহার মাসে শুধু একবার পরিবর্তন করতে পারবে ব্যাংক। ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। 

করহার কমানো হলে ব্যাংকগুলোতে কী প্রভাব পড়বে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ ও আমানতের সুদহার ৪ শতাংশ নির্ধারণ করায় আমাদের আয় কমে যাবে। করহার কমালে তা সমন্বয় হতে পারে। আমরা মুনাফা না করে সুদহার কিছুটা কমিয়ে দিতে পারব।’ 

এতে কি আসলেই সুদহার কমবে—এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সুদহার নির্ভর করবে আমানতের সুদহারের ওপর। এ ছাড়া ব্যাংকের কর্মীদের মাথাপিছু খরচ ও ঝুঁকি প্রিমিয়ামের ওপরও সুদহার নির্ভর করে। তবে করহার কমানোর প্রভাব সুদহারে কিছুটা তো পড়বেই।’ 

বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠনের ফলে ব্যাংক খাতে কাঠামোগত ব্যর্থতা (সিস্টেমেটিক ফেইলর) বন্ধ করা গেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকটির পুনর্গঠন নিয়ে তিনি বলেছেন, এর ফলে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে। 

অবশ্য বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠন করা হয় সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও আইসিবি মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংককে। সংকটে পড়া এ সরকারি ব্যাংকগুলো বাঁচাতে গত ছয় বছরে সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে দেওয়ার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তা ছাড়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। 

জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, সেই পরিমাণ টাকাই সরকারকে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
  • Courtesy: Prothom Alo /June 08, 2018

Backtracks on banking commission Next govt. to take decision

Finance Minister A M A Muhith backtracked on Friday from his position regarding formation of a banking commission by this month.

Rather, he wanted to pass the responsibility of forming the commission onto the next government.

"No, I am not formulating a banking commission," he told newsmen at a post-budget press conference in the capital.

"The formation of a banking commission will depend on the next government."

Mr Muhith, however, said he has prepared all necessary documents for constituting the commission.

He noted that Bangladesh's banking sector has expanded notably. But until now many people are out of banking facility.

Earlier, the minister on Monday last said a banking commission will be set up by June.

The previous banking commission was formulated in 2004.

  • Courtesy: The Financial Express/ June 09, 2018

Where openness and transparency are not synonymous

The novelty is largely missing in the proposed budget for the incoming fiscal year (FY), 2018-19. Most bits of it -- whether its aggregate size or its resources mobilisation part by way of tinkering with rates, duties as well as in areas, expenditure outlay of both 'recurring' or 'developmental' in nature, the growth target of the country's gross domestic product (GDP) or, any broad fiscal policy-related issue -- have come out in the media, both print and electronic, well before its announcement. This has become the practice, rather than any exception, in recent years in particular. This is much unlike the case here, before, or, in other comparator countries and also most developed economies, as of now.

Now that the proposed Taka 4.65 trillion national budget for the forthcoming fiscal has been unfurled in parliament by Finance Minister (FM) A. M. A. Muhith, one finds not much of any major discrepancy, in its accounting frame, from what an otherwise 'well-seasoned' FM has earlier been stating about, perhaps too elaborately and too candidly, to the media. That is precisely the reason why the absence of novelty in the next fiscal's proposed budget, at the time of its formal disclosure, has been noted at the outset of this leader.

The budgetary accounting frame covers all sorts of revenues and other receipts (including domestic and external borrowings, loans, etc.) on the income side, on one hand, and all kinds of public spending for the 'upkeep and maintenance' of the government outfit, meeting debt servicing obligations, providing subventions and subsidies, keeping afloat the state-owned enterprises and entities irrespective of their respective financial state of affair, extending 'social safety nets' within the anticipated resources envelope and funding public investment programmes mainly through the Annual Development Programme (ADP), on the expenditure side, on the other.

Best Electronics Eid Offer

In this context, lack of novelty has otherwise made the budget-presentation event, lacklustre, for practical purposes. Yet then, it will be unfair not to give Finance Minister Muhith the credit that he undeniably deserves for having the rare privilege, considering the cases with his counterparts elsewhere, of formally unveiling the 12th national budget -- ten during successive two-terms of the current government and two more in the early eighties. And he has been extra-ordinarily active in recent years, in an interrupted sequence, in engagement with various stake-holder groups, in what has come to be known as pre-budget consultations. And this time, the process has rather been of a very elongated nature, taking about four to five months' time in all. Those supportive of such engagement, might endorse its whole process as being demonstrative of 'openness'. This 'openness' might have some positive sides. But it must also be noted here that the 'news worthiness' of the annual budget-presentation event gets then diluted, to a considerable extent, much unlike the case in most other countries. With the 'meat' having already been made available to the media about the 'contents'--'bolts and nuts' -- of the proposed budget well ahead of its formal announcement, there is little left to unfurl on the occasion of its formal presentation, to their readers, viewers and listeners. Last-minute changes -- and those too of not quite substantive nature -- before the finalisation of the budget, do make here hardly any difference.

A momentous occasion like presentation of the national budget has thus tended, of late, to lose its 'gloss' and 'glamour'. Under such circumstances, 'attributes', mostly on subjective lines, will have the propensity to getting the precedence over 'substance'. This has made budget reporting on the day it is presented, a dull and drab job -- mostly 'cycling' and 'recycling' of facts and figures that had earlier been made public. And analysts and commentators do also find it not comfortable enough to vent their views anew on issues, topics and areas they had already done before. Repetitive verbiage on such counts can make unnecessary sound but carries no  new substance.

Meanwhile, it would be pertinent to note here that 'openness', as has been stated before, must not be misinterpreted as 'transparency'. 'Openness' is an important condition for ensuring 'transparency' and 'accountability' that constitute the bedrock of good governance. But this is certainly not the sole condition for promoting and ensuring transparency and accountability. Facts and figures -- and credible ones, of course - are critical for assessing the state of transparency and accountability. And there are also lots of grey areas that are involved in the process. In that context, the national budget must not be considered as merely an annual accounting framework.

Rather, the budget must be viewed as the only government-wide mechanism to control both the quality and direction of all public sector spending and to enhance particularly accountability within the executive branch of the government. From the perspectives of the tax-payers who mostly provide the wherewithal for funding the budget, the value that they or the country's citizens get from various government-supported or-funded programmes, services or authorities as well as the quality of such services, is an issue of import. 

Subjecting all government developments and agencies to regular critical scrutiny is, therefore, a dire need for the purpose. If this need is not fulfilled, it will not be an easy task to ensure tax compliance to the extent that this country needs to achieve, in view of its existing low tax-gross domestic product (GDP) ratio. The budget speech of the Financial Minister, as in every other recent year, does not shed any light on the issue about scrutiny of the works of government agencies/authorities/services, in both quantative and qualitative terms. That is still a grey area but it must not continue to remain so for long, if the nation's aspirations about becoming a mid-middle income country are to be met sooner than later.

The 166-page text of the FY2018-19 budget speech of the Finance Minister is unnecessarily a lengthy one to go through and get any intended new message, out of it. It is rather rigmarole, being, in essence, a rhapsody of successes, achievements, and performances that all concerned are well aware of and those too, not all without any question. 

The verbiage of the arsenal of superlatives could also have been avoided on a number of counts, as the FM has so carefully done while laying out the taxation policy and expenditure outlay for the next fiscal. That would have made the text of the speech easier to sift through, more carefully considering its intents and purposes. Meanwhile, a number of pertinent questions have been left unanswered, in the context of the goals, objectives, numbers, facts and figures of the proposed budget for the forthcoming fiscal. The marked shortfall in the outgoing fiscal's revenue collection  target, the lingering weaknesses of the government's capacity to implement and execute the investment programmes in the public sector, the emerging actual implementation shortfall even in terms of scaled-down revised allocations for the annual development programme etc., are some of such questions. There should be full and substantive debate on these issues while discussing the supplementary budget for the outgoing fiscal. If such problems continue to drag on, the proposed budget for the next fiscal would leave some good reasons for many to questions its 'realism' or 'pragmatism'.

There are also many other areas of proximate concern that the proposed budget has taken only a perfunctioning note. Certainly these issues are of consequence, deserving more serious attention. These relate to the huge burden of non-performing loans (NPLs) and other governance-related problems in the country's financial sector, the long-lingering uncanny situation in the capital market, the growing current account imbalance at a time when export and remittance growth rates have been taming, the volatility of foreign exchange market, looming inflationary threat in tandem with the surge of oil and commodity prices in the global market, the possible disruptions to the multilateral global trading pattern etc. Disconcerting developments on all such fronts will have wide-ranging unsettling effects. In this context, it is imperative to consider the need for providing some budgetary cushions, as far as practicable, to help address any possible adverse shock, related to such issues.


  • Courtesy: The Financial Express Editorial June 09, 2018

Friday, June 8, 2018

ফ্যাসিবাদের বিস্তারে কংগ্রেসের মত বিজেপিও কি হামাগুড়ি দেবে?


শওকত মাহমুদ 


এ কি করল আনন্দবাজার পত্রিকা! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গ সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর একান্ত কথোপকথন নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকাটির রিপোর্ট রীতিমত অপমানজনক। পত্রিকাটি কিভাবে জানল একান্ত কথাবার্তা? শেখ হাসিনা নাকি নরেন্দ্র মোদীর কাছে প্রতিদান প্রার্থনা করেছেন। হোক না আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিনা ভোটের। তাতে কি? এভাবে নিচে নামিয়ে দেয়া কি ‘আনন্দবাজার’ এর ঠিক হল?

এই ঐতিহাসিক পত্রিকাটির দ্বাদশবর্ষে পদার্পনকালে ১৯৩৩ সালের ১২ মার্চ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক আশীর্বাণী দিয়েছিলেন। তাঁর উপদেশটা ছিল এমন — 

  
তোমার লেখনী যেন ন্যায়দণ্ড ধরে
শত্রু মিত্র নির্বিভেদে সকলের পরে
স্বজাতির সিংহাসন উচ্চ করি গড়ো
সেই সঙ্গে মনে রেখো সত্য আরো বড়ো।
স্বদেশের চাও যদি আরো উর্ধ্বে ওঠো
কোরো না দেশের কাছে মানুষের ছোটো।  

দেশকে তুলতে গিয়ে অন্যকে ছোটো” না করার পরামর্শ আনন্দবাজার মানে নি। না মানার ঢের উদাহরণও আছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সংবিধানে, বোধ হয় আর কোন দেশের সংবিধানে নেই, সংবাদপত্র, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রশ্নে কতকগুলো শর্ত আছে। এরমধ্যে একটি হল বৈদেশিক সম্পর্ক সম্বন্ধীয়। এমন কিছু লেখা বা প্রচার করা যাবে না যেন বৈদেশিক বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আঁচড় লাগে। এটা সাংবাদিকেরা সহজে মানেন না, মানলে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বলে কিছু থাকে না। যেমন মিয়ানমারের সঙ্গে সরকার গোপন পীরিত করলেও সাংবাদিকেরা তো অসভ্য মিয়ানমারকে ছেড়ে কথা কইবে না। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এদিক দিয়ে টনটনে। পারলে বিদেশ ভ্রমণরত সাংবাদিকদের নজরদারিতে রাখার জন্য নোটিশ জারি করে বসে। এমনকি প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যেও বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়টি ঢুকিয়ে রেখেছে। শুধুমাত্র ভারতকে মিডিয়া-প্রটেকশন দিতেই হয়তো এমন ব্যবস্থা। সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা করলে আমরা আগেভাগে বলা শুরু করে দেই - ওতো চোরাচালানি ছিল। ভারতে কোথাও দাঙ্গায় মুসলমান খুন হলে আমরা খবরটিকে আড়াল করে ফেলতে চেষ্টা করি। এখন অবশ্য বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক ভারত - প্রেমে এমনিতেই মশগূল।

যাকগে ‘আনন্দবাজার’ এর যে রিপোর্ট নিয়ে আজকের লেখা, এটি সংক্ষেপে পড়ে নিলে ভালো। পত্রিকাটির রিপোর্ট বলছে, “দিয়েছেন অনেক, প্রতিদানে এবার সহযোগিতা চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পর সেখানেই মোদীর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তাঁর সরকার উত্তর পূর্বের জঙ্গীদের দেশছাড়া করছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবারও তাই ভারতের সহযোগিতা চান। ‘আনন্দবাজার’ আরও বলেছে, মোদির সঙ্গে রুদ্ধদ্ধার বৈঠকে তিনি কি বলেছেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা সেরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর দপ্তরের এক সূত্র জানায়, হাসিনার বার্তা, মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পূর্বে দুই দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।”

এই রিপোর্ট মোতাবেক শেখ হাসিনা তিস্তার পানি নিয়ে কথা বলেননি, রোহিঙ্গা সমস্যার কথা চেপে গেছেন। শুধুমাত্র তার প্রধানমন্ত্রীত্বে থেকে যাওয়ার জন্য ভারতের প্রতিদান কামনা করেছেন। ‘আনন্দবাজার’ সঠিক বলে নি বলেই বিশ্বাস করতে চাই। বাংলাদেশের এক সূত্রের উদ্বৃতিতে এমন খবর ছেপে দিয়েছে, তাও একান্ত বৈঠকের সংলাপ নিয়ে। সাধারণত দুই সরকার প্রধানের কথা বার্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে নোট লেখক থাকেন। কিন্তু একান্ত বৈঠকে থাকেন না। সেখানে কি কথা হয়েছে, দু’জন ছাড়া কারও জানার নয়। কিন্তু রিপোর্টটি অবিশ্বাস করার যুক্তিও পাই না। কারণ বাংলাদেশ সরকারের এর প্রতিবাদ করেনি। আর দেখলাম, শেখ হাসিনা তিস্তার ব্যাপারে নীরব, মোদী নির্বাক রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি কোন প্রতিদান চাননি। শুধু ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি ভারতকে কতটুকু দিয়েছেন। কিন্তু কোন আলাপের কারণে শেখ হাসিনাকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হল? এমনি এমনি তো শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের অবদান বলতে যাননি। অবদান স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর মোদী নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করেছেন —  ‘এতনা বাত্ কিও বোলা’. আর আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টের প্রতিবাদও কিন্তু তিনি করেননি। 

এক রসিকজনের পর্যবেক্ষণ হল, শেখ হাসিনা তো বিএনপি’র বলা কথাই মোদীকে বলেছেন। বিএনপি হামেশাই অভিযোগ করছে, শেখ হাসিনা ভারতকে বহু কিছু দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ভারত সে তুলনায় বাংলাদেশকে কিছু দেয়নি। এর জবাব দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ বিএনপি’র ওই অভিযোগকে স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা নিজের মতো করে নরেন্দ্র মোদীকে বলেছে। প্রতিদানে হয়তো বাংলাদেশ নয়, তাঁকে ব্যক্তিগত প্রতিদান দিতে বলেছেন।

একটু পিছিয়ে যদি দেখি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিছুদিন আগে দলীয় এক প্রতিনিধিদল নিয়ে দিল্লি ঘুরে এসেছিলেন। দেশে ফিরেই বললেন যে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত অতীতেও নাক গলায়নি, ভবিষ্যতেও গলাবে না। ওই বক্তব্যে ঝড় উঠল —  আপনি বলার কে? ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না। অথচ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তার বইয়ে (দি কোয়ালিশন ইয়ার্স) বিস্তারিত বলেছেন, কিভাবে সাবেক সেনাপ্রধান কুখ্যাত মঈন উদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জেতাতে তিনি কি কাণ্ড করিয়েছেন। ২০১৪ তে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসে বিতর্কিত ভোটে অংশ নিতে দে দরবার করেছিলেন বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলোকে। তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ তার বইয়ে (দি আদার সাইড অব দ্য মাউন্টেইন) এ কথা উল্লেখ করেছেন। অতএব ভারতের সরকার নির্বাচনে নাক গলায়নি, এটা সত্য নয়। এবারে ভারত সফরের আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেই বসলেন, ভারত চাইলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ কেমন কথা। একটা স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে কেন কথা হবে। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমাদের ভোট নিয়ে ভারত কিছু করতে চায় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন, তার মর্মার্থ হল, ভারত চাইলে আমাদের স্বার্থে নাক গলাতে পারে। আনন্দবাজার এর খবর যদি সঠিক হয়, শেখ হাসিনা নিজে ও তাঁর মন্ত্রীরা ভারতকে বাংলাদেশের নির্বাচনে টেনে আনতে চাইছেন। ভারত ছাড়া আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করছেন? আবার অশান্তির আয়োজন? জনগণের ওপর আস্থা নেই। ভারত কি করবে এবার?

বাংলাদেশে চলমান ফ্যাসিবাদের আরেক প্রস্থ বিস্তারে কংগ্রেসের মত বিজেপি সরকারও কি হামাগুড়ি দেবে?

হঠাও নয়, গরিবি উন্নয়ন চলছে দুর্বার!


সৈয়দ কবির হুসেন  


অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, কল্যাণরাষ্ট্রের পিতা গুনার মিরডাল তাঁর ক্লাসিক রচনা —  ‘এশিয়ান ড্রামা’ গ্রন্থে বলেছেন, সম্পদের সুষম বণ্টন হলো রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্য শর্ত। ঠিক একই যুক্তিতে বলা হয়, দেহের সমস্ত পরিমাণ রক্ত মুখে বা মাথায় জমা হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। ঠিক সে কারণেই উন্নয়ন যদি সুষম না হয় তাহলে তা হলে তা কেবল মাত্র বিপর্যয়ই ডেকে আনতে পারে। তিনি অতি পরিস্কারভাব উল্লেখ করেছেন, সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য দরকার যে বিত্তবানদের ঘরে আনুপাতিক হারে দারিদ্র্য ঢু‌কিয়ে দেওয়া। সেটা হলেই কেবল হতে পারে সম্পদের সুষম বণ্টন। এশিয়ার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির বিষয়ে তাঁর যে অসাধারণ বিশ্লেষণ হয়ে আছে আজও তা বর্ণে বর্ণে সত্যি।

শুধু তাই নয়, সুষম উন্নয়ন ছাড়া অন্য যে কোনো ধরণের উন্নয়ন ক্ষতিকর। অর্থনীতির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য যা করতে হয় তা সাধারণের বোধগম্য পরিভাষায় বলা হয় ভারসাম্যবিধানের কাজ যা বাংলাদেশের মানুষের বেশিরভাগ বোধগম্য পরিভাষা হলো ব্যাল্যান্সিং অ্যাক্ট। সমষ্টি অর্থনীতির যে সব সূচক ম্যানিপুলেট করে ম্যান্ডেটবিহীন সরকার যে তুর্কিনাচন নেচেকুদে চলেছেন তার বিষাদময় ফল অচিরে ভোগ করবেন সাধারণ জনগণ যাদের তথাকথিত ভোটের নামাবলি পরে ক্ষমতার পাট দখল করেছেন। অার জনগণ আজ মাইনাস হয়ে গেছেন। এই লেখক বেগম খালেদা জিয়ার মাইনাস হবার কথা বলছেন না ববং বলছেন দেশের গোটা জনসমষ্টিই মাইনাস হয়েছেন। 

বার্ষিকপ্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক নয়।দেশের সিংহভাগ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাছে, তাও অাসলে উনুৎপাদিত সম্পদ ‌হিসেবে।
এবার আসি আসল কথায়। দেশে গরিবের বহর লম্বা  হচ্ছে। এটা নতুন কোনো কথা নয়। সাধারণত পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ধনীর সংখ্যা যদি অবিশ্বাস্য হাতে বাড়ে তাহলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির রায়ই হলো গরিব বাড়তেই হবে। 

খবরের শিরনাম হলো —  ‘ গরিব মানুষ বাড়ছে’।  সরকার দাবি করছেন মানুষের মাথাপিছু গড় আয় এখন ১৬১০ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় ১লাখ আট চল্লিশ হাজার টাকার মতো। নির্দয় নির্মম ডারউইনীয়  পুঁজিবাদী নিযমে সেটাই হয়। আর যদি কুড়িগ্রাম  ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭১ জনকেই দৈনিক দেড় ডলারে জীবনযাপন করতে হয়, তাহলে সেই উন্নয়নের দরকারটা কি? 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ।দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে আগে ছিল ৩৮ শতাংশ, এখন হয়েছে ৬৪ শতাংশ।কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। আর লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে।বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলায় দারিদ্র্য পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। দারিদ্র্যের হার এখন রংপুরে ৪৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ২৬ দশমিক ৩শতাংশ ও নীলফামারীতে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও দারিদ্র্য অনেক বেড়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে নওগাঁ জেলায় দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।

সরকার প্রচার করছে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় বেড়েছে। গরিবের সংখ্যা কমেছে। বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ সময়ে করাএক জরিপে বলা হয় দেশের দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালে ছিল মোট জাতীয় আয়ের ০.৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ০.২৩ শতাংশ। বিপরীত দিকে ধনী ৫ শতাংশের আয়২০১০ সালে জাতীয় আয়ের ছিল ২৪.৬১ শতাংশ যা ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ২৭.৮৯ শতাংশে। একইভাবে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় ২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায়১.০১ শতাংশ আর ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫.৩৪ শতাংশ থেকে ৩৮.১৬ শতাংশে। আরও উল্লেখ্য বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে শ্রমিক শ্রেণীর প্রকৃত আয় ২০১৬সালে ২০১০ সালের তুলনায় হ্রাস  পায় ৭.৫৮ শতাংশ।

বিবিএসের জাতীয় হিসেবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। আয়ের এইবৃদ্ধির সঙ্গে একই হারে বেড়েছে প্রকৃত মাথাপিছু ভোগ। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীতে এইচআইইএস ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী পারিবারিক পর্যায়ে প্রতিটি ব্যক্তির প্রকৃত আয় কমেছে ২০১০ সালের তুলনায় ২শতাংশ এবং ভোগের জন্য প্রত্যেকের প্রকৃত ব্যয় কমেছে ১ শতাংশ। 

শান্তির সূচকে আবারও বড় অবনতি বাংলাদেশের


(বাংলাদেশি ভয়েসেস ডেস্ক) —   বৈশ্বিক শান্তি সূচকে (জিপিআই) বড় অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। গত বছরের তুলনায় এবার ৯ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার, জুন ৬, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এ বছরের শান্তি সূচক প্রকাশ করা হয়।


অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) এই সূচক তৈরি করেছে। সূচকে ১৬৩টি দেশের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩তম। অথচ গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৪তম। জিপিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে অগ্রগতি হলেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের। 

সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এক বছরে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে বাংলাদেশের। 

Thursday, June 7, 2018

আর্থিক খাতের শৃঙ্খলায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

আর্থিক খাতে এখন বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে না আনতে পারলে বাজেট ফলপ্রসূ হবে না, সাধারণ মানুষ বাজেটের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। তাই বাজেটে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় শৃঙ্খলা ফেরানোর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। বাজেট হতে হবে জন-উন্নয়নের জন্য।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আর্থিক খাতকে সুসংহত করতে হবে। দেশের আর্থিক খাতে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

আমি সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধী। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমালে মানুষ ব্যাংকে যাবে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে— এসব অর্থহীন যুক্তি। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। সঞ্চয়পত্র বিক্রির টাকা সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। সে হিসেবে দেশের টাকা ঘুরে-ফিরে দেশের মানুষের হাতেই আসছে। সে টাকা মানুষ আবার ব্যাংকেই রাখছে। সুতরাং সঞ্চয়পত্র কোনো ক্রমেই ব্যাংকে অর্থ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে না। বরং ব্যাংকগুলোর কেলেঙ্কারির সংবাদই মানুষকে ব্যাংকবিমুখ করছে। এজন্য জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে হবে। সঞ্চয়পত্র সমাজের যে শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য চালু করা হয়েছে, সে মানুষগুলোর জন্য কিছু করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। কোনোভাবেই সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো উচিত হবে না।

শুধু প্রবৃদ্ধি আর উন্নয়ন দিয়ে কোনো দেশ সামনে এগোতে পারে না। দেশের জিডিপি বাড়লেও সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হয়নি। অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। সম্পদের বণ্টনে অসমতা তৈরি হয়েছে। আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এজন্য বাজেট হতে হবে কল্যাণমুখী উন্নয়নের জন্য। আর উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলো স্বচ্ছ হওয়া দরকার। কোনো অযৌক্তিক কিংবা অহেতুক ব্যয়ের জন্য জনগণের ওপর যেন করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়। এজন্য বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। অপচয়, অপব্যয় কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা অর্থের জোগান যেন জনগণকে দিতে না হয়।

অনেক প্রকল্প শুরু থেকেই ঠিক থাকে না। সময় যত গড়ায়, প্রকল্পের ব্যয়ও তত বাড়ে। জনগণকে এর মাশুল গুনতে হয় অতিরিক্ত কর পরিশোধের মাধ্যমে। উৎপাদনমুখী ও জনগণের কল্যাণে আসে, এমন খাতে বাজেটের অর্থ ব্যয় করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাজেট বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে হবে। কেননা দিন দিন এসব প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

  • —ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
  • কার্টেসিঃ বনিক বার্তা/ জুন ৭, ২০১৮ 

গণতন্ত্রমুক্ত বাংলাদেশ!

মিনা ফারাহ

মিনা ফারাহ

নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো ক্রাইসিস বাংলাদেশে নেই। তবে এই একটি ক্রাইসিস থেকেই অসংখ্য ক্রাইসিসের জন্ম। এজন্য দায়ী দেশী-বিদেশী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করাই আজকের লেখাটির উদ্দেশ্য। মোদিমুক্ত ভারত বা কংগ্রেসমুক্ত ভারতের কথা বহু শুনেছি; কিন্তু শান্তিনিকেতনে এক ধরনের গণতন্ত্রমুক্ত হয়ে গেল বাংলাদেশ! বোলপুর থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে যা শোনানো হলো, কাউকেই না জানিয়ে উজাড় করে দেয়ার প্রমাণ। প্রতিদানের ক্ষমতা না রাখলে, পুব-পশ্চিম দুই দিক থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ঘর করার হুমকি মোদিকে। সত্যিই এমন রাজনীতির আগামাথা হিসাব করার বুদ্ধি ১৬ কোটির মধ্যে একজনেরও নেই।

শান্তিনিকেতনে ১ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২০১৮-এর নির্বাচন বেচাকেনার কথা ফাঁস করে আনন্দবাজার প্রথম পৃষ্ঠায় লিখেছে- ‘হাসিনা প্রতিদান চান মোদির কাছে।’ কিসের প্রতিদান? সেটা দিতে হলে ৫ জানুয়ারির মতো আবারো ভোট চুরি করে ক্ষমতার ব্যবস্থা করে দিতে হবে মোদিকেই। এখন আরো সুবিধা, মোদি রাজি না হলে চীন তো হাঁ করে বসে আছে। এভাবেই শান্তিনিকেতনে বুঝি স্বেচ্ছাচার যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। তাহলে কি আসছে আরেকটা সিসি মার্কা নির্বাচন?

সরকার এর নাম দিয়েছে - ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’। মানুষও বিশ্বাস করছে, তাকেই বারবার ক্ষমতায় রাখলে কয়েক দিন পরই দেশটা মালয়েশিয়া হয়ে যাবে। মাহাথির এবং লি কুয়াংরা যা পারেননি, ওমুক সালে ইউরোপকেও হার মানাবেন। স্যাটেলাইট পাঠিয়ে মহাশূন্যের দ্রাঘিমাংশের জমি কেনার গল্প খুব ভালো। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতে মর্ত্যরে রাস্তাঘাটের যে নিদারুণ অবস্থা, মানুষ জানতে চায়- একনেকে বরাদ্দ করে, ঘাটতি বাজেট দেখিয়ে, তারল্য সঙ্কটের কথা শুনিয়ে লাখ লাখ কোটি টাকা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ?

এর সহজ ব্যাখ্যা করেছেন মার্ক টোয়েন- ‘কাউকে ভুল বোঝানো হয়েছে, এটা বিশ্বাস করানোর চেয়ে ভুল বোঝানোই সহজ।’ অর্থাৎ ৫০ জন ছাত্রকে শেরেবাংলার নাম শুনেছে কি না জিজ্ঞেস করলে একটি হাতও উঠবে না। কিন্তু দাউদ ইব্রাহিমের কথা জিজ্ঞেস করলে ১০০টি হাত একসঙ্গে উঠবে।

গণতন্ত্রমুক্ত দেশ কায়েমের জন্য ভারত কি একাই দায়ী?

আমাদের নির্বাচন যাদের হাতে ওয়াশিংটন-টু-দিল্লি, আত্মজীবনীতে ষড়যন্ত্রের কিছুটা লিখেছেন প্রণব। অন্যথায় ৫ জানুয়ারি হতে পারল কেন? বিষয়টি এরকম- ‘স্বৈরাচারী বাশার আল আসাদকে যেভাবে ক্ষমতায় রেখেছে পুঁজিবাদীরা, গণতন্ত্রের মুখোশ পরিয়ে তার চেয়ে বেশি সুবিধা দিচ্ছে হাইকমান্ডকে।’ এ কারণে মুরসি আউট, সিসি ইন। একই কারণে ’৯৬-তে তিন মাসও টিকতে পারেননি খালেদা। এর কারণ, ‘ভারতের নেতৃত্বে এক ব্যক্তিকেই বেছে নিয়েছে পুঁজিবাদীরা।’ গণতন্ত্রমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষ্যে গরিবের ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ‘ডিলিট’ আয়োজন যেন রাজনীতি থেকে খালেদাকে স্থায়ী ডিলিটের বার্তা। 

আমার ধারণা খুব কমই ভুল হয়ে থাকে। ২০১৮-এর নির্বাচন যেন শুধুই শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা না হয়। সক্রেটিস কাদেরের উচিত, মরা বিএনপিকে নিয়ে ঝামেলা করার বদলে শপথ গ্রহণের মোরগ-পোলাও ঠিক করা। পরিমাণমতো লবণ কিনে বাবুর্চিকে দেয়া। কারণ, পদত্যাগ সাপেক্ষে নির্বাচন আর ইসরাইল-ফিলিস্তিন ভাই ভাই- একই কথা। ফিলিস্তিনে ইহজীবনেও শান্তি আসবে না, এ দেশেও ভোট দিতে পারার মতো নির্বাচন হবে না। কারণ, তাহলে লুজার হবে পুঁজিবাদীরাই। এই ঝুঁকি কিছুতেই নেয়া হবে না। অন্যতম দৃষ্টান্ত, আসাদ-সিসি বনাম গাদ্দাফির ভাগ্য।

তাই সিসি মার্কা সাংবিধানিক জটিলতাগুলো এখনই দূর করতে হবে। কারণ, এক দেশে দুই ধরনের রাষ্ট্রনীতি চলতে পারে না। বুদ্ধিমান মুজিব সেজন্যই চতুর্থ সংশোধনী এনেছিলেন।

২.
যেসব কারণে গণতন্ত্রমুক্ত বাংলাদেশ এখন বাস্তব। সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ বিচারপতি সিনহা বলে দিয়েছেন দলটি কেন ভোট চোর এবং সংসদ কেন অবৈধ! লাখ লাখ পোস্টার ছাপিয়ে যে গণতন্ত্রের প্রচার চলছে, ১৬তম সংশোধনীর রায় অনুযায়ী এর কোনো অস্তিত্বই আদালতের কাছে নেই বিধায় এমন প্রতিটি কার্যকলাপই অবৈধ।

বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভারতের নির্বাচনের দিকে তাকাতে হবে। ২০১৯-এর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সব দলের মধ্যে সাজ সাজ রব। এ দেশে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এসব খবর দেখায় না। মোদিকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে একতাবদ্ধ নতুন জোটের কয়েকটা উপনির্বাচনে বিজয় এবং ছোট নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি। আগামী নির্বাচন মোদির জন্য অশনিসঙ্কেত হতে পারে। ভোটের বাক্স নিয়ে লীলাখেলা নেই। ইসির চেহারাও কেউ দেখে না। অবশ্যই তাদের গণতন্ত্রে ভাইরাস আছে; তার পরও লোকসভা ও রাজ্যসভায় গণতন্ত্র¿চর্চা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। পাহাড় সমান দুর্নীতির পরও সংসদে কংগ্রেস।

সামান্য পঞ্চায়েত নির্বাচন কিংবা কর্নাটকে যা ঘটল, এগুলোই মৌলিক গণতন্ত্র। এমনকি কর্নাটকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দিনের মাথায় বিদায় করে শপথ নিলো নতুন জোট। অনেকেরই ধারণা, ২০১৯-এ মোদির বিরুদ্ধে লড়বেন মমতা। এসব বলার কারণ, তারাই আমাদের অগণতান্ত্রিক সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার শুরু করেছিলেন স্বৈরাচারী ইন্দিরা। পরে পশ্চিমা পুঁজিবাদীরা এর অন্যতম বড় সুবিধাভোগী। 

সর্বশেষ প্রমাণ, খালেদাকে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রেখে শেষ করার পরিকল্পনা দেখেও পশ্চিমারা রহস্যজনকভাবে নীরব। ১/১১-এর বেলায় যা ঘটেনি। বরং ওয়াশিংটন, জাতিসঙ্ঘ ও দিল্লিতে হুলস্থুল। কোনো গণতান্ত্রিক দেশের বিরোধী নেতাকে এভাবে আটকে রাখার ঘটনায় পশ্চিমারা নীরব থাকবে, ভাবাই যায় না। অথচ এত দেশের রাষ্ট্রদূত ঢাকায়! রাশিয়া-ভেনিজুয়েলা নির্বাচনের বিরুদ্ধে এরাই হইচই করছেন। কয়েকটা সরকার পরিবর্তনেরও চেষ্টা চলছে ওয়াশিংটনে।

বার্নিকাটরা জানেন, গুয়ানতানামো বের সন্ত্রাসীরাও খালেদার চেয়ে কোনো কোনো দিক দিয়ে ভাগ্যবান। উকিল, মানবাধিকার সংস্থা, চিকিৎসা, খাদ্য, ধর্ম, বিনোদন- সব কিছুতেই অধিকার। কিন্তু একজন বয়স্ক, অসুস্থ, তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে যা করা হচ্ছে, সব জেনেও কোনো প্রশ্ন নেই একজন রাষ্ট্রদূতেরও! বরং অবৈধ সরকারকেই তোষণ। সুতরাং দোষ একা ভারতের নয়; এটাই ভালো করে বুঝতে হবে।

খালেদাকে নির্বাচনের আগে বের করা হবে না বলেই জামিন আটকানোর প্রহসন। যখন জামিন হবে, তত দিনে গণতন্ত্র কথার কথা হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশে। বিএনপি জোট অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কারণ, করপোরেটরা চায়, স্থিতিশীল বাংলাদেশের স্বার্থে ইরাক-মিসরের মতো সিলেকশন। ৫০ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ নিয়ে কথা। এরাই ’৬৯-এর গণতান্ত্রিক দলটিকে বাধ্য করল, ব্রিটিশের ডিভাইড অ্যান্ড রুল শাসনে। এতে লুজার হলো বাংলাদেশ।

৩.
গণতন্ত্রমুক্ত বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল জন্মকালেই। বিষয়টি কখনোই উন্মোচিত না হওয়ার কারণ, যমজের মতো কোমর থেকে জোড়া আওয়ামী লীগ এবং কংগ্রেসের ‘ভাই-ভাই রাজনীতি’। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ইন্দিরার কর্মকাণ্ডে আমার মতো অনেকের সন্দেহগুলো পরে আরো জোরদার হয়েছে। ১৯৭৪-৭৫ সালে পৌঁছে মনে হয়েছে, ভারতের প্রভাবের নিগড়ে রাখার উদ্দেশ্য ছিল। পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার পরই পশ্চিমকে অ্যাটাক করতে গেলে ব্রেজনেভের আপত্তিতে তা হতে পারেনি। কিন্তু তার পরই সিকিমের লেন্দুপ দর্জিকে দিয়ে যা আদায় করা হলো, ইতিহাস সাক্ষী। এর পরই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় গিয়ে ’৭৫-এ যা ঘটালেন প্রিয়দর্শিনী, সেই পাপের বোঝাই টানছে কংগ্রেস। সংসদের ব্যাঘ্র থেকে এখন মুষিকের সিটে। গান্ধী পরিবারটি এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বোঝা হওয়ার বহু প্রমাণও দিয়েছে।
পরে ‘এশিয়ান কিসিঞ্জার’খ্যাত প্রণবের চাণক্য চাতুর্য নিয়ে আমিই লিখছি।

আমাদের ‘নির্বাচনকে কারাগারে পাঠানো’র জন্য দায়ী প্রণবের স্বজনপ্রীতি। তাকে যারা চেনে না, তারাই আশাবাদী হতে পারেন বর্তমান চালচিত্র দেখেও। অবসরে যাওয়ার পর ভারতের গণতন্ত্রে ভেজাল ঢোকানোর চেষ্টা। সন্ত্রাসী ‘আরএসএস’-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হতে চলেছেন বৃদ্ধ প্রণব। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে কাকা-ভাতিজির কুখ্যাত ‘ইলিশ রাজনীতি’ পৌঁছে দিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। ক্ষমতায় কে থাকবেন, মোদিকে প্রণবের পরামর্শই যেন শেষ কথা। এটাই ফাঁস করে দিলো আনন্দবাজার। তার ঢাকা সফরের পরই সব লণ্ডভণ্ড এবং মোদি আরো বেশি বিএনপিবিমুখ। এটা যে একটি দল, মনেই করেন না মোদি। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের টেলিফোন কথোপকথন প্রকাশ পেলে আসল প্রণবের চেহারা জানা যেত।

৪.
কংগ্রেস এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শের গুরুত্বপূর্ণ সাযুজ্য দৃশ্যমান। পারিবারিক শাসনে বিশ্বাসী, তারা অন্য কোনো দলকে জায়গা না দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, কংগ্রেস যা করেছে নেতাজী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে সেটাই করছে আওয়ামী লীগ। মোদির সরকার সিক্রেট ফাইলগুলো অবমুক্ত করলে আসল চেহারা ফাঁস হলো। ইতিহাস থেকে নেতাজীকে মুছে ফেলতে কিছুই বাকি রাখেনি নেহরু পরিবার। সিক্রেট ফাইল প্রকাশের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের যারপরনাই যুদ্ধ। কারণ, ব্রিটিশের ভারত ত্যাগের মূলে নেহরু নন, নেতাজীর প্রভাবই আসল। নেতাজীর বীরত্ব লুকাতেই এসব অপচেষ্টা। সিক্রেট ফাইলগুলোতে প্রমাণ- নেহরু নন, নেতাজী প্রথম প্রধানমন্ত্রী। এসব বলার কারণ, স্বাধীনতার ঘোষক নিয়েও একই ধরনের কারসাজি থেকে বিএনপিমুক্ত বাংলাদেশ শুরু করা হয়েছিল ১৫তম সংশোধনী এনে।

৫.
আরো ১০০ বছর না হয় ক্ষমতায় থাকছে আওয়ামী লীগ। তার পরও যেন কুকুরের মতো মানুষ মারা বন্ধ করে। নির্বাচনের আগে নতুন তামাশা মাদক! রোজার মাসে এমন শুট-আউট কি ফিলিস্তিনিরাও দেখেছে? রমজানে এ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের লাশের সংখ্যা শিউরে ওঠার মতো। জম্মু-কাশ্মিরেও সিজফায়ারের ডাক। অথচ ‘বিশ্বের তৃতীয়-বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ’ হয়েও বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র। এর নাম দিয়েছি বাংলাদেশী দাউদ ইব্রাহিম ফ্যাক্টর। এসব নাটকের উদ্দেশ্য, সিসি মার্কা নির্বাচনের আগে বিরোধীশিবিরে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি। এই কাজে পশ্চিমাদের আপত্তি না থাকার প্রমাণ- রাষ্ট্রদূতদের পিনপতন নীরবতা।

স্কাইপ এবং সিনহার পর তুরিন আফরোজ ঘুষ কেলেঙ্কারি প্রমাণ করল গণতন্ত্রমুক্ত বাংলাদেশ একটি সম্মিলিত আয়োজন। কারণ, ৯২ দিনের আন্দোলনের পরই খালেদাকে কার্যত চার দেয়ালের ভেতরে বন্দী করার দায় ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূতের। ফিরোজায় দেখা করে রাস্তা ছাড়ার হুমকি। না হলে অন্য ব্যবস্থা। এরপর আর কখনোই রাস্তার আন্দোলনে দেখা যায়নি। এর পরই নিভে গেল ‘পল্টনের আলো’। ওই রাস্তায় আর কখনোই লাখ লাখ পোস্টার আর গণতন্ত্রকামীদের সমাগম হয়নি। এভাবেই পরিকল্পিতভাবে সংসদকে অকার্যকর করে অদ্ভুত স্টাইলে চলছে দেশ। 

উন্নয়নের নাম এখন তেল-গ্যাস-সুন্দরবন দখল। ওয়ানবেল্ট ওয়ের ষড়যন্ত্র। ডলারের বিনিময়ে টাকাকে আরো দুর্বল করা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ইয়াবা এবং অস্ত্রের ব্যবসা। গভীর সমুদ্রবন্দর দখলের প্রতিযোগিতা। প্রায় মূল্যহীন শ্রমবাজারে সর্বোচ্চ শোষণ। অসমবাণ্যিজের অভাবনীয় উত্থান। পুঁজিবাজার-ব্যাংক, একনেক- সর্বত্রই দাউদ ইব্রাহিম ফ্যাক্টর। অফশোরে বিনিয়োগের ভূস্বর্গ। প্রবাসে লুটের টাকায় মিলিয়নিয়ারদের উত্থান... করপোরেট পৃথিবীর চেহারা এটা।

‘বিএনপি নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার ক্ষতি হবে না’- বলেছেন সদা সরব কাদের। এবার তার উদ্দেশে একটি কেস হিস্ট্রি, যার জবাব তাকে দিতে হবে। নিউ ইয়র্কে অনির্বাচিত এক মন্ত্রীর পুত্রের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের খবরে তথ্যপ্রমাণসহ হুলস্থুল সোস্যাল ও প্রিন্ট মিডিয়া। ছাত্র হয়ে এত টাকা কোথায় পেল, প্রশ্নটি টক অব দ্য টাউন। আওয়ামীকেন্দ্রিক ফেইক মিডিয়া খবরটি ছাপায়নি। অথচ হাস্যকর মামলায় খালেদার সঙ্গে কিম জংয়ের মতো আচরণ। জানি, এর কোনো জবাব দিতে পারবেন না। যেমন পারবেন না হাইকমান্ডও। যা হোক, ভারতকে উজাড় করে দেয়ার বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি পরিষ্কার। আসল কথা একটাই। সিরিয়ার আসাদের চেয়ে হাইকমান্ডের গদির পজিশন ভালো। গণতন্ত্রের তাবিজ গলায়, নিন্দুকদের রাডারের বাইরে। তিউনিসিয়ার মতো সবাই একসঙ্গে রাস্তায় না নামলে গণতন্ত্রমুক্ত বাংলাদেশই শেষ কথা। 

  • কার্টসি  — নয়াদিগন্ত/ জুন ৭, ২০১৮। (সংক্ষেপিত)।