নতুন এক ধারার সূচনা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। জামায়াত বাদে নানা মত আর পথের রাজনৈতিক দল শামিল হয়েছে এ প্রক্রিয়ায়। ডান-বাম-মধ্যপন্থি-ইসলামপন্থি সব ধারার দলের নেতাদেরই দেখা গেছে গতকাল মহানগর নাট্যমঞ্চে। নির্বাচন আর রাজবন্দিদের মুক্তির ইস্যুতে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সমাবেশ থেকে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় দিয়ে বলা হয়েছে এর অন্যথা হলে ১লা অক্টোবর থেকে সারা দেশে ঐক্য প্রক্রিয়া সভা-সমাবেশের কর্মসূচিতে যাবে। ন্যায় বিচার প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিএনপি ও ২০ দলের অন্যান্য শরিক দল, যুক্ত ফ্রন্ট, গণফোরামের নেতারা ছাড়া আরো কয়েকটি দলের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। ২০ দলের শরিক জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এ সমাবেশে। সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অংশীদার গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষনেতা জোনায়েদ সাকিও সমাবেশে বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে ঘোষণাপত্রও উপস্থাপন করেন বাম সমর্থিত তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মো. মনসুর আহমেদও যোগ দেন সমাবেশে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বি. চৌধুরী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে কড়া বক্তব্য রেখেছেন জাতীয় ঐক্যের পক্ষে। সমাবেশ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন অন্য নেতারাও। আয়োজকরা জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বৃহত্তর ঐক্য গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে নাট্যমঞ্চের সমাবেশের মাধ্যমে এর ভিত রচিত হলো। সামনে এ প্রক্রিয়া বৃহত্তর ঐক্যে রূপ নেবে।
সভা, করবো, অনুমতির তোয়াক্কা করবো না
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন এ স্বাধীন দেশে মায়েরা-বোনেরা আতঙ্কে থাকে দিনে রাতে, ঘুমোতে পারে না। কেন বৃদ্ধ মা-বাবা শঙ্কিত থাকে তার সন্তান কি ঘরে ফিরবে কিনা? কেন এ হত্যা, গুম, সন্ত্রাস? কেন, কেন, কেন? সারা দেশে অধিকার হারা ও লুণ্ঠিত জনগণের এ অভিযোগ আজ সরকারের কাছে। তারা আজ রুখে দাঁড়াবে। স্বাধীন বাংলাদেশে কেন মায়েরা নির্যাতিত হবে, কেন শিশুদের ওপর নির্যাতন হবে। তিনি বলেন, পুলিশ-র্যাব আমাদের সন্তান। তাদের কেন আমাদেরই সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। জবাব দিতে হবে। প্রবীণ এ নেতা বলেন, ঘুষকে স্পিড মানি হিসেবে সরকারিকরণ করা হয়েছে। সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোন মন্ত্রণালয়টায় দুর্নীতি নেই জবাব দেন। কিন্তু দিতে পারে না। কেন একটি জাতির নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটালেন? কোটি কোটি টাকা চুরি করে, দুর্নীতি করে; লজ্জা নেই? স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামতে হলো?
সড়কটাকেও নিরাপদ করতে পারলেন না? কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল মেধাবীদের পক্ষে। কিন্তু হাতুড়ি, লাঠি, পিস্তল নিয়ে তাদের পেছনে ধাওয়া করলেন। আপনাদের লজ্জা নেই, শরম নেই। বি. চৌধুরী প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন আমরা দেখি তার জন্য প্রয়োজন মেধাবীদের। সেগুলো কি নির্বোধ লোকরা করবে? আর মেধাবীদের আপনি হাতুড়ি দিয়ে পেঠাবেন? স্বাধীন দেশে প্রতিবার সভা করার জন্য কেন পুলিশের কাছে অনুমতি নিতে হবে? আপনারা পুলিশকে অপদস্থ ও কলঙ্কিত করতে চান আমাদের চোখে। কিন্তু আমরা তো জানি, পেছনের লোকটি তো আপনি। স্বার্থসিদ্ধির জন্য পুলিশকে ব্যবহার করে চলেছেন। আমরা সভা করবো। অনুমতির তোয়াক্কা করবো না। আমাদের অনুমতি দেবে জনগণ।
সাবেক এ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার ভোট আমি দেব, পছন্দ করে উপযুক্ত লোককে দেব। কেন দিতে পারবো না? পারি না কি জন্য জানেন? কারণ আপনি (প্রধানমন্ত্রী) চান আপনার সরকার। আপনার সরকার সূক্ষ্মতম কারচুরির মাধ্যমে ভোট জেতার জন্য সাতদিন আগ থেকে সমস্ত এজেন্টদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আর পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আপনি কেন আমার ভোট দিতে দেবেন না, এ অধিকার কে আপনাকে দিয়েছে। তিনি বলেন, এমন দলীয়করণ করেছেন, রাজনীতি করতে হলে আপনার পক্ষে থেকে করতে হবে। এটা কোন কথা হলো? আমি স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে চাই, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই, স্বাধীনভাবে ভাবতে চাই। স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চাই।
বি. চৌধুরী বলেন, সারা পৃথিবী পরিত্যাগ করেছে যে ইভিএম যন্ত্র, সে যন্ত্রের যন্ত্রণা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চান জোর করে? সে জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন না। ছুড়ে ফেলে দেব আমরা। এই ইভিএম ছুড়ে ফেলে দিবো। ইভিএমের বদলে যদি সাহস থাকে, বুকের পাটা থাকে তাহলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি টিভি লাগান। কেবল বুথ ছাড়া সব জায়গায়, যেন বাইরে থেকে সাধারণ সবাই সেটা দেখতে পান। সাহস আছে? সরকারকে জবাব দিতে হবে, কেন সিসি টিভি দেবে না, কেন ইভিএম ফেলে দেবে না। তিনি বলেন, আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষক চাই। তবে ১৪ বা ২৪ জন নয়। তারা থাকেন কয়দিন, দুইদিন। কি নির্বাচন দেখেন? যেসব জায়গায় লিখে দেন ওইখানে যান। সেখানে বেড়িয়ে আসেন। লিখে দেন চমৎকার নির্বাচন। কমপ্লিট ননসেন্স, আপনাদের (সরকার) ভাষা ধার নিয়ে বলছি, রাবিশ। বাইরে থেকে যেসব পর্যবেক্ষক আসবে তাদের এক মাস আগে আনতে হবে। জাতিসংঘ থেকে ১০০ প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। তারা এক মাস আগে এসে দেখবে, কোথায় চুরি ডাকাতি হচ্ছে, কেমন করে জুলুম নির্যাতন হচ্ছে, কেমন করে রেজাল্ট বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেখবে, বুঝবে, তারপর লিখবে রিপোর্ট, তারপর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হয় কিনা তা দেখতে আরো সাতদিন থাকবে। পারবেন? পারবেন না। কেন পারবেন না। কারণ দুরভিসন্ধি ছাড়া কোনো কারণ নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বি. চৌধুরী বলেন, ক্ষমতা দেখাচ্ছেন? আসল জিনিসই তো বুঝেননি। আপনাকে দেশের জনগণ ভোট দেয় ক্ষমতা দেখানোর জন্য নয়, তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য। আগের অনেকে বুঝতে চায়নি, এখনো অনেকে চায় না। তারা চায় ক্ষমতা, ক্ষমতা। নো ক্ষমতা, দায়িত্ববোধের রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, আপনারা শাসন করেছেন ১০ বছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন দল ১০ বছর শাসন করেনি। তাতেই এত সাহস, তাতেই এত নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যা! কিন্তু তার পরও তো আমরা গঙ্গার পানি পাইনি। তার পরও তিস্তার পানি পাইনি। এতে কি প্রমাণ হয়, প্রমাণ যাই হোক, আপনাকে জবাব দিতে হবে। ডা. বি. চৌধুরী বলেন, কোনো দেশ, কোনো রাষ্ট্র আমাদের চিরকালীন শত্রু হতে পারে না। কোনো রাষ্ট্র চিরকালের মিত্রও হতে পারে না। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু। আমাদের দাবি যখন ন্যায়সঙ্গত হবে আমরা বন্ধুর মতো ভাববো। আগেও বলেছি ভারত বন্ধু রাষ্ট্র, এখনো বলি বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু বলতে হবে বন্ধু রাষ্ট্র, তুমি কোথায়? আমার পানি কোথায়? ভারত বন্ধু রাষ্ট্র তাহলে আপনারা পানি আনতে পারেননি কেন? বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে আদায় করতে পারলেন না তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা তো আপনার নেই।
গণতন্ত্রের স্বপক্ষের সব শক্তিকে আমরা আহ্বান করেছি ঐক্য হোক। আমরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আশান্বিত, ভবিষ্যতে এ প্রক্রিয়ার একটি সুফল হবে। তিনি বলেন, আমরা যে কাগজটি সই করেছি, সেখানে পরিষ্কারভাবে কথাগুলো লেখা আছে। আর তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকলে ৮৮ বছর পূর্ণ করবো। কিন্তু আমার কি অসুখ-বিসুখ হতে পারবে না। এ গ্যারান্টি কে দেবে? কেন এগুলো নিয়ে মানুষ তামাশা করে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জননেত্রী খালেদা জিয়া আমার চেয়ে ১৫ বছরের ছোট। তিনি অসুস্থ। আমিই তো বলেছিলাম, তার টিআইএ হয়েছে। এতে কখনো কখনো অঙ্গহানিও হয়ে যায়। আমি প্রথম স্টেটমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু তারপরও একটি বোর্ড হয়েছে। তিনি নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, এখানে অনেক আইনবিদ আছেন। তারা কি জানেন না? আমার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমার একটি অধিকার আছে। আমি যাকে মনোনীত করিনি সে আমার রোগের ইতিহাস নিতে পারে না। শরীরে হাত দিতে পারে না। আমার গোপনীয় রিপোর্টগুলো দেখতে পারে না। কিন্তু আপনারা (বিএনপি) বসে রইলেন, আমরা দেখলাম। এরপরও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড করে তারা কেমন করে তার ইতিহাস নিতে গেল? কেমন করে গায়ে হাত দিলো। কেমন করে তার গোপনীয় রিপোর্ট দেখলো। প্রশ্ন করলেন না? করা উচিত ছিল।
আসুন গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই। কিন্তু যারা এ দেশ স্বাধীন করার জন্য রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, সম্ভ্রম দিয়েছে আজ দেশমুক্ত করার সময় আমরা কি তাদের কথা ভাববো না, তাদের ভুলে যাবো? এতবড় বেঈমান আমরা হতে পারবো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্য চাই। যারা মানচিত্রে বিশ্বাস করবে না তাদেরকে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করবো। যারা আমার পতাকাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতে জানবে না তাদের কীভাবে বিশ্বাস করবো। যারা আমাদের এই বাংলাদেশকে এখনো স্বীকার করবে না আমি তাদের কেমন করে স্বীকার করবো।
বি. চৌধুরী বলেন, আমি মুক্ত গণতন্ত্র চাই, এ সরকারের পতন চাই। কিন্তু বেগম জিয়ার মুক্তি চাই। সমস্ত রাজবন্দির মুক্তি চাই। একবিন্দু এদিক-ওদিক নেই। পরিষ্কার লেখা আছে। নির্বাচন করতে হলে আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সমস্ত রাজবন্দির মুক্তি চাই। আমরা বলেছি, ১০০ দিন আগে থেকে আমাদের সেনাবাহিনীকে নামাতে হবে।
সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে ন্যূনতম কর্মসূচি ও দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ের আন্দোলনে শুরুর তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নাগরিক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ঐক্যের পথে একধাপ এগিয়ে গেছি। আশা করব, দাবিগুলো অর্জন করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। সবাইকে জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে, ন্যূনতম দাবি-দাওয়াসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবিগুলো আদায় করতে একটি আন্দোলন শুরু করি। সে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে এ সরকারকে বাধ্য করবো। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে।
এ জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেয়ায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাতির এ চরম দুর্দিনে, যখন সবাই একটি মুক্তির পথ খুঁজছে তখন তিনি একটি পথ দেখিয়ে জনগণকে সামনে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের হারিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট ও বেঁচে থাকার অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনে একতাবদ্ধ হয়ে একমঞ্চে উপস্থিত হওয়ার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান তিনি। মির্জা আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করায় গণতন্ত্রের নেতা খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এখন একটা স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসা সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
দেশে অপশাসন ও দুঃশাসন চলছে: ড. কামাল
সভাপতির বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আপনারা এসেছেন একটি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তা হচ্ছে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আপনারা এসেছেন একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে তা হচ্ছে লুণ্ঠিত ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের সবার প্রত্যাশা সুখী, সমৃদ্ধ, উদার, গণতান্ত্রিক ও বহুমতের বাংলাদেশ। ড. কামাল বলেন, দেশে এখন অপশাসন ও দুঃশাসন চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও অপদস্থ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করে জয়ী হয়েছে।
আবার হোঁচট খেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারে না। ড. কামাল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করি না। আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি।
জনগণের ক্ষমতা জনগণের নিকট ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস যেমন আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার ইতিহাসও আছে। দেশে উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা ও স্বর্ণ গচ্ছিত রাখাও নিরাপদ না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনী বাড়ার যে প্রবণতা তাতে বাংলাদেশের নাম সবার আগে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. কামাল বলেন, আমরা প্রকাশ্য সভা করছি। কোনো গোপন বৈঠক করছি না। যারা জনগণের শক্তিকে ভয় পায়, তারা জনগণের সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টাকে ষড়যন্ত্র বলে তারা জনগণকেই অপমান করছে। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের সংবিধান রচনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। ব্যক্তিগতভাবে আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/সেপ্টেম্বর ২২,২০১৮