Search

Monday, September 24, 2018

Religious minorities in Bangladesh to hold demo in Dhaka on Sept 28 over next election


Bangladesh Hindu Buddhist Christian Unity Council on Sunday announced that it would hold a rally in the capital on September 28 over the next parliamentary election.

The council’s general secretary, Rana Dasgupta, while addressing a news conference at the National Press Club, said, ‘The national coordination committee comprising 21 religious minority organisations have arranged the rally at Suhrawardy Udyan. The minorities will voice their concerns over the state, the government, political parties and their alliance. National Professor Anisuzzaman will grace the rally as the chief guest.’

He said they were very much concerned over the security of the religious and ethnic minorities of the country ahead of 11th national election likely to be held in December.

Both the local and general elections that were held in the country after 1990 did not become the matter of celebration, but misery for the minorities, said Rana. 

As the election was nearing, there was a rising concern, anxiety and a sense of insecurity among the minority groups, he added.

Around 1,004 incidents of violence on religious and ethnic minorities took place in 2017 while the figure was 1,471 in the previous year, he also said.

  • Courtesy: New Age /Sep 24, 2018

Sunday, September 23, 2018

Seven banks in 'red zone'

BB is likely to take measures as their financial health deteriorates

AKM Zamir Uddin


The central bank is concerned about seven banks, including three state-run lenders, for their deteriorating financial health stemming largely from rising default loans and declining capital and profits.   

These lenders belong to the “red zone” in the Bangladesh Bank's Bank Heath Index (BHI) report. 

The banks are: state-run Sonali, Rupali and BASIC, private commercial banks Farmers, Bangladesh Commerce and AB as well as foreign lender National Bank of Pakistan.

In the second week this month, the Financial Stability Department (FSD), a wing of the central bank, recommended the BB's policy and inspection departments take special supervisory and regulatory measures to improve the financial health of the lenders.

Since 2015, the central bank has been preparing the half-yearly BHI report on the basis of six financial indicators: asset quality, capital adequacy ratio, efficiency, profitability, liquidity and lending ratio against capital.

Banks that perform well in line with the indicators are placed in the 'green' category, while lenders with worst performance belong to the red zone. The yellow zone consists of banks that stay between the red and the green zones.

Among the seven lenders, Sonali, BASIC, Bangladesh Commerce, Farmers and Rupali have failed to meet the minimum capital requirement in the recent quarters.

Default loans at the seven banks also continued to go up as they had disbursed a huge amount of loans in violation of credit norms in the past.

The central bank also unearthed a number of financial scandals at most of the banks in recent years. Because of the irregularities, they have entered the red zone, a BB official told The Daily Star.

The latest BHI report, prepared on the basis of the financial health as of December last year, showed that 32 banks stayed in the yellow zone and 14 banks in green zone.

The FSD also advised the departments concerned at the central bank to take special measures to supervise six other lenders in the yellow zone as their financial health worsened significantly in recent times. The banks are Agrani, Janata, Prime, Islami, Shahjalal Islami and First Security Islami.

Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank and ICB Islamic Bank are not included in the BHI report as their financial health is “too bad”, the BB official said. Shimanto Bank was also excluded as it received licence in 2016.

  • Courtesy: The Daily Star/ Sep 23, 2018 

Corruption rampant at Mongla, Burimari ports - TIB


Transparency International Bangladesh has found massive corruption by customs house and port authorities of Mongla port as well as cases of extortion and corruption at Burimari land port.  

The study ‘Burimari Land Port & Customs Station and Mongla Port & Custom House: Governance Challenges in Import-Export and Way Out’ found that employees of Customs House at the Mongla port were involved with corruption worth Tk 15.69 crore in 2016-17 fiscal.

TIB also found corruption worth Tk 4.61 crore conducted by Mongla port authorities during the same period, TIB Executive Director Dr Iftekharuzzaman revealed at a press conference today.

Meanwhile, at the Burimari Land Port corruption estimated Tk 17.10 lakh were committed by Land port authorities and Customs station in the fiscal year 2017-18 fiscal.

Along with that, Transport Workers Union extort Tk 900 from each truck with a total of Tk 5.41 crore extortion each year at the Burimari Land port.

TIB held the press conference at their office today.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 23, 2018

Assault on leftwing protest

Editorial

Betrays a shrinking political space


We are appalled by the way police baton-charged left-leaning protesters who were marching toward the office of the Election Commission on September 20, leaving scores injured. The protest was entirely peaceful, yet it was violently dispersed. Such an intolerant approach towards harmless protests runs contrary to the democratic spirit.

As enshrined in our Constitution, people are entitled to protest and ventilate their grievances through peaceful means. One may not agree with everything the other side of the political aisle has to say, but to stifle their voice so vehemently is unacceptable. This only reinforces the claim by opposition parties that the political space has shrunk greatly.

The assault on the leftwing protesters occurred just months before the elections. This begs a question: if one cannot organise political activities now, when should they? Moreover, their views about the Election Commission should be heard. Given that the commission's track record is disappointing, that political parties would try to exert pressure on the commission to make it accountable and effective is only to be expected.

Democracy thrives on dissent and divergent views. It's imperative that we ensure an environment in which people feel comfortable to voice their frustration and dissent, in order to retain our political system's democratic character which has suffered considerable damage in recent years.

  • Courtesy: The Daily Star/Sep 23, 2018

পেট্রোবাংলার তদন্তেও তিতাসে দুর্নীতির চিত্র

  • গাজীপুর অঞ্চলে শতাধিক কোম্পানির ৬০০% পর্যন্ত অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার
  • তিতাসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই দুর্নীতি
  • গ্যাস কারচুপির কারণে এক কোম্পানির কাছে তিতাসের পাওনা ৭৫ কোটি টাকা
  • টাকা আদায়ের কোনো উদ্যোগ নেই

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তদন্তেও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। পেট্রোবাংলা তদন্ত করে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী চিহ্নিত করেছে, যার সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে তিতাসের কর্মকর্তাদেরও।

পেট্রোবাংলার কাছে অভিযোগ ছিল, গাজীপুর অঞ্চলে শতাধিক কোম্পানি ২০০ থেকে ৬০০ শতাংশ পর্যন্ত অনুমোদনের অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করে এবং এ কাজে তিতাসেরই কর্মকর্তারা জড়িত। পেট্রোবাংলা পরে অনুমোদনের অতিরিক্ত ১২০ শতাংশের বেশি গ্যাস ব্যবহারকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাস ব্যবহারের ওপর তদন্ত করতে ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর সংস্থার এক পরিচালককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।

তবে তদন্তের জন্য কমিটি শুধু ফার সিরামিক নামক একটি কোম্পানিকে বেছে নেয়। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্যাস কারচুপির কারণে ফার সিরামিকের কাছে তিতাসের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ফার সিরামিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিতাসের চলতি দায়িত্বের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মশিউর রহমানের কাছে কোম্পানিটির পরিদর্শন বিভাগ নথি উপস্থাপন করেছে। তা সত্ত্বেও ফার সিরামিক থেকে টাকা আদায়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি।

পরে প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নিয়ে পেট্রোবাংলা গত ৭ জুন তিতাসের এমডিকে চিঠি দিয়ে আবার এই টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়। তবে তিতাসের এমডি ফার সিরামিকের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।

এ বিষয়ে তিতাসের এমডি মীর মশিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি এবং পেট্রোবাংলার কাছে নির্দেশনা চেয়েছি।’ পেট্রোবাংলা তো চিঠি দিয়ে জানিয়েই দিয়েছে, নতুন কী নির্দেশনা চেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, ‘চাওয়ার কারণ হচ্ছে, ফারকে আমরা চিঠি দিতে পারি না।’

ফার সিরামিক তিতাসের যে অঞ্চলের গ্যাস ব্যবহারকারী, কোম্পানিটির পাইপলাইন ডিজাইন বিভাগের একটি শাখার ব্যবস্থাপক সাব্বের আহমেদ চৌধুরী সেই গাজীপুরের ব্যবস্থাপক ছিলেন ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়েই ফার সিরামিক অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করেছে ১৪ কোটি টাকার।

ফার সিরামিকের পরিচালক ইরফান উদ্দিন গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলার হিসাবে ভুল আছে। আর তিতাস থেকে আমরা কোনো চিঠি পাইনি বলে এখন কিছু বলতে পারছি না।’

তবে ফার সিরামিককে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া ও বিচ্ছিন্ন করা এবং কোম্পানিটির মাধ্যমে গ্যাসের অবৈধ লোড ব্যবহার করার চিত্র উঠে এসেছে সরকারেরই একটি নজরদারি সংস্থার তথ্যে। দেখা যায়, সাব্বের আহমেদ চৌধুরী তিতাসের এমডিকে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট এক খুদে বার্তায় জানান, ফার সিরামিকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কারণ, কোম্পানিটি অতিরিক্ত লোড ব্যবহার করছে।

তবে তিতাস সূত্রে জানা গেছে, লাইন বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে তিতাসের গ্রাহক ফাইলে কোনো তথ্য নেই। তথ্য না থাকা ঘুষ খাওয়ারই একধরনের কৌশল বলে মনে করা হয়।

তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর বেলা ১টা ২৩ মিনিটে এক খুদে বার্তায় সাব্বের তিতাসের এমডিকে জানান, ফার সিরামিকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দল পাঠানো হয়েছে। তিতাস সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন ঠিকই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু তিন দিনের মাথায় ফারকে পুনঃসংযোগ দেয় তিতাস।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতির কৌশলের কথা সবারই জানা। এখানে একটি ভয়ংকর চক্র রয়েছে। আশ্চর্যজনক যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ ব্যাপারে বরাবরই নিশ্চুপ।’

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৩,২০১৮ 

বাক্‌স্বাধীনতার পশ্চাৎমুখী যাত্রা

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন


১৯ সেপ্টেম্বর দেশের মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা হরণের জন্য একটি কালো দিন হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নেবে। কারণ, এই দিনটিতে সচেতন অংশীজন বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বিস্ময়ে স্তব্ধ করে দিয়ে বিতর্কিত ডিজিটাল আইন পাস হয়েছে। দলমত-নির্বিশেষে সচেতন মহল তাই একবাক্যে এই বিষয়ে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে। তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতে এই আইনের ব্যাপকভিত্তিক অপপ্রয়োগ ঘটতে পারে। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একশ্রেণির সদস্য এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন।

অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন যে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইন ব্যবহার করা হবে না। বরং উল্টো তিনি সংসদে একটি অভিনব দাবি করেছেন যে, এই আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পথ খুলে দেবে। অপ্রিয় সত্য হলো, তাঁর এই দাবি সঠিক বলে গণ্য করার কোনো কারণ নেই। মন্ত্রীর এই দৃষ্টিভঙ্গি একটি প্রহসন। তবে কয়েক বছর ধরে কলঙ্কিত কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত ৫৭ ধারাকে যে ‘ছড়িয়ে ছিটিয়ে’ নতুন আইনে অবিকল ধারণ করার মতো নজির তৈরি হতে পারে, তা আমাদের কল্পনায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত তা–ই ঘটেছে।

২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করার দুরভিসন্ধি থেকে সুকৌশলে একটা রাজনৈতিক ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারা যুক্ত করেছিল। ঠিক এ রকমেরই একটি বিধান ভারত তার আইনে যুক্ত করলে তার বৈধতা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। এবং সুপ্রিম কোর্ট তা অসাংবিধানিক হিসেবে বাতিল করলে ক্ষমতাসীন দল তা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়। সব থেকে বেদনাদায়ক হলো, একাধিক সেমিনারে আইনমন্ত্রী নিজেও ৫৭ ধারা বাতিল বা সংশোধনে নির্দিষ্ট আশ্বাস দিয়েছিলেন।

আমরা এটাও বিবেচনায় নেব যে, দেশের প্রচলিত আইনে বহুকাল ধরে বিরাজমান থাকা কিছু কালাকানুনের প্রয়োগ সরকার করেনি। ঔপনিবেশিক আমলের ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের সাম্প্রতিক ব্যবহার আমরা দেখি না। কিন্তু প্রয়োগ করি না, করব না—এ ধরনের যুক্তি দিয়ে প্রায় শতাব্দী কাল পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির নীতিনির্ধারকেরা ১৯২৩ সালের আইনের ‘গুপ্তচরবৃত্তির’ ধারণাকে বরণ করবেন, তা কোনো স্বাভাবিক চিন্তাপ্রসূত বিষয় হতে পারে না। ওই আইনে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ যুক্ত করার লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামীদের দমন করা।

সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক যে, নয় মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাক্‌স্বাধীনতা এবং সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল, এই রাষ্ট্র গঠনে সাংবাদিকদের লেখনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং অনাগত দিনের শাসকদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, তারা শাসনের স্বার্থে কখনোই যা খুশি উপায়ে ‘সংবাদক্ষেত্রের’ স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। নতুন আইনটি এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগেরই প্রণীত তথ্য অধিকার আইন এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ, যাতে শুধুমাত্র ‘যুক্তিসংগত বাধানিষেধ’ বজায় রাখার শর্তে সংসদকে আইন পাস করার শর্ত দিয়েছে, সেই শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

এই আইন সর্বতোভাবে ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং এরপরে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় এবং আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সমর্থিত মৌলিক মানবাধিকারের সঙ্গে গুরুতর সংঘাত তৈরি করেছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও গঠনমূলক সমালোচনার নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু নতুন আইন অপব্যবহারের ভয়ংকর ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এটা তাই চলতে পারে না।

আগামী সাধারণ নির্বাচন, যা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ সংশয় যখন যথেষ্ট জোরালো, তখন নির্বাচনকে টার্গেট করেই তড়িঘড়ি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হলো কি না, সেই প্রশ্ন নাকচ করা যাবে না। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে এই কালো আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই। 

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৩,২০১৮ 

সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন ২৯ সেপ্টেম্বর


জাতীয় সংসদে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হওয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে সম্পাদক পরিষদ। এর প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। আর এই আইনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া তিন গণমাধ্যম প্রতিনিধি যৌথ বক্তব্যে বলেছেন, সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। বরং পুলিশকে অবাধে ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করার পথ সুগম করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি, উদ্বেগ ও মতামত উপেক্ষা করে গত বুধবার জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস করা হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি সই করলেই এটি আইনে পরিণত হবে। বিলটি সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে গণমাধ্যম সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি

শনিবার ডেইলি স্টার সেন্টারে সম্পাদক পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংসদে পাস হওয়া বিলটিকে সংবিধানে গণমাধ্যম ও বাক্‌স্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে তার পরিপন্থী উল্লেখ করে গভীর হতাশা ব্যক্ত করা হয়। এই সভাতেই ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ১৮ জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়ে এই মানববন্ধনে যোগ দিতে সব সাংবাদিক, গণমাধ্যম সংগঠন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের প্রতি অনুরোধ জানায়।

বিবৃতিদাতা সম্পাদকেরা হলেন, নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনূস ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ।

কণ্ঠরোধে ব্যবহার হতে পারে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এই আইনে পরোয়ানা বা অনুমোদন ছাড়াই পুলিশের হাতে যে কাউকে তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই এই আইনকে অপব্যবহার করে পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের হেনস্তা করতে পারে। 

এদিকে, প্রথম আলোর যশোর অফিস জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা বাতিলের দাবিতে যশোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকেরা।

Courtesy: Prothom Alo Sep 22, 2018

জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ঘোষণাপত্র

সমাবেশের ঘোষণাপত্র -

নাগরিক সমাবেশ শেষে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পরে কণ্ঠভোটে ও হাত তুলে প্রস্তাবটি পাস করেন নাগরিক সমাবেশে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমাবেশ থেকে। সমাবেশের ঘোষণাপত্রে এ দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে ৩০শে সেপ্টেম্বরের পর ১লা অক্টোবর থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ শুরু হবে। এতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। ঘোষণাপত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রীসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে এবং  গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। 

এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। এ নাগরিক সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি যে, সরকার আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৮’র মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেবেন। আমরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-এ গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি শ্রেণি-পেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র কমিটি গঠন করুন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ গণজাগরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখুন। 

জনগণের ঐক্য হলে স্বৈরাচার পালায়

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, জাতীয় ঐক্য মানে জনগণের ঐক্য। জনগণের ঐক্য যখন হয় তখন স্বৈরাচার পালায়। দেশ খুন, গুম, অপরহণ ও বেওয়ারিশ লাশের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সবাইকে মাঠে নামতে হবে। ব্যাংকে টাকা নেই, ভল্টে সোনা নেই, খনিতে কয়লা নেই। সব লুট হয়ে গেছে। দেশ লুটের মালে পরিণত হয়েছে। কবে মানচিত্র চুরি হয়ে যায় সেই চিন্তায় আছি। দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে। জাহান্নামের পরে যদি কিছু থাকে সেখানে নিয়ে যাবে না কি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। রক্ত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অর্জন করিনি। 

এই সরকার তা বাতিল করেছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। পার্লামেন্ট বাতিল করে আপনিও নির্বাচনে আসতে পারেন। তাতে আপনি রাজি হলে ও জিতলে, জনগণ যে ভোট দেবে তা আমরা মেনে নেব। দেশে এক টাকার উন্নয়ন হয়েছে, একশ টাকা লুট হয়েছে। আসুন ঐক্য প্রক্রিয়া গড়ে তুলি। এর বিকল্প নেই। রাজবন্দিদেরকে কারাগারে রাখতে পারবেন না। মুক্তি দিতে হবে। সমাবেশে তিনি বিভিন্ন স্লোগান ধরেন। তা হলো, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এবার গদি ছাড়তে হবে। বেহুদার ইভিএম, মানি না মানব না ইত্যাদি। 

জাতিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে

নাগরিক সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা হচ্ছে কেন্দ্রীভূত উন্নয়ন। এখন সারা দেশের মানুষকে চিকিৎসা, বিচার এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা নেয়ার জন্য ঢাকায় আসতে হয়। এই কেন্দ্রীকতার উন্নয়ন জাতিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গ্রামের মানুষ, গার্মেন্টেসের কর্মীদের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী করণীয় তা করতে হবে। দেশ এখন ‘র’ ও ‘মোসাদ’ দ্বারা পরিচালিত। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানান। 

দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। দুঃশাসনের প্রতি জনগণ ঐক্যবদ্ধ। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। দেশ আমাদের, সরকার আমাদের। কিন্তু ভোট আমাদের হবে না তা তো হবে না। বাক্সে ভোট আমাদের, ফলাফল ঘোষণা হবে অন্য স্থান থেকে, তা হবে না। ক্ষমতা না ছাড়ার নীলনকশা করা হচ্ছে। সংসদ ও গণতন্ত্রের নিয়মে নির্বাচন হতে হবে। কয়েক লাখ লোক হত্যা করার ভয় আপনাদের দেখাতে হবে না। জনগণ অপরাজেয়। জনগণের বিষয় নিশ্চিত। 

বিনা ভোটের সরকার হঠাতে হবে

ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, এখানে  সকল দল-মতের মানুষ একত্রিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যাকে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই ড. কামাল হোসেন সভাপতিত্ব করছেন। শুধু দলে দলে, নেতায় নেতায় নয়; পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে ঐক্য হতে হবে। বিনাভোটের সরকার হটিয়ে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ও তাজ উদ্দীনের আওয়ামী লীগ নয়। লুটেরা আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে যারা ডুগডুগি বাজানোর কথা বলেছিল তাদের আওয়ামী লীগ। 

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ছাত্ররা আমাদের দেখিয়েছে। রাস্তায় শৃঙ্খলা এনেছে। পুলিশকে শিক্ষা দিয়েছে। জনগণ সবকিছু দিয়ে এই আন্দোলন করে যাবে। 

বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেন, জাতি আজ রুগ্ন। জনগণ সব অধিকার হারিয়েছে। অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। কেড়ে আনতে হবে। এখানে দলগুলো অনেক দাবি নিয়ে এসেছে। 

দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে

সমাবেশে গণসংগতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়ের সাকি গত বৃহস্পতিবার পুলিশের পিটুনিতে আহত হন। একহাত গলায় বাঁধা অবস্থায় নিজদলের পক্ষ থেকে তিনি সমাবেশে যোগ দেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সবাই জানে যে, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে আমরা আছি। এটা এক ব্যক্তির স্বৈরতন্ত্র নয়। ব্যবস্থাগত স্বৈরতন্ত্র। দেশের স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো কাজে লাগিয়ে এতদিন তা কার্যকর রয়েছে। জনগণ গণতন্ত্র পায়নি। 

যে ক্ষমতা কাঠামোর অধীনে এক দল বলে- ‘আসুন। পারলে ঠেকান। ক্ষমতা হারালে আমাদের লোক ঘরে থাকতে পারবে না।’ তাহলে দেখুন, এরা আবার ক্ষমতায় আসলে বিরোধীশক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সংকট ও সংঘাতকে পুনরাবৃত্তির মধ্যে ফেলেছে। আমাদের নতুন একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো আমরা একটা জাতীয় এক্য চাই। সংবিধান সংস্কার করা প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনসহ ভবিষ্যতে আরো ৩টা নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। 

বাংলাদেশ বহু আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মুখোমুখি ও দেশের ভবিষ্যৎ নানাভাবে হুমকির মুখে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশে এখন নির্বাচিত সরকার নেই। গণতান্ত্রিক সরকার নেই। একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকার আছে। ভোটাধিকার এই সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় ঐক্য ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মোমেনা খাতুন, যুব শাখার নেতা মো. হানিফ, গণফোরামের ঢাকা মহনগরীর সভাপতি সাইদুর রহমান ও ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজের সভাপতি আজম অপু।

ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় নাগরিক সমাবেশে আরো বেশ কয়েকটি দলের প্রধান ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ২০ দলীয় জোটের নেতা জুনায়েদ বাবু নগরী, জাতীয় পার্টি (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, স্বদেশ পার্টির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মন্টু, আম জনতা ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান শংকু, বাংলাদেশ শরীয়া আন্দোলনের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, খেলাফত মজলিসের ড. আহমেদ আবদুল কাদের ও আহসান হাবীব লিংকন প্রমুখ।

বেলা ৩টায় সমাবেশ শুরুর আগে দুপুরের পর থেকে শুরু হয় গণসঙ্গীত পরিবেশনা। সমাবেশের শুরুর দিকে গণসঙ্গীত পরিবেশ করেন, উদীচীর কেন্দ্রীয় সঙ্গীত সম্পাদক সুরাইয়া পারভীন ও মাইশা সুলতানা উর্বী। 

জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে: মোশাররফ

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে দেশকে রক্ষা করার প্রক্রিয়ার সূচনা হলো। আজ এই সমাবেশে উপস্থিত নেতারা বর্তমান সরকারকে সরানোর জন্য একটি জাতীয় ঐক্য চাইছে। কিন্তু আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া অনেক আগেই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। আমি মনে করি সারা দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যে নেত্রী ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি বলে কোনো নির্বাচনই হয়নি- এই জন্য তাকে আজ কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে কারাগারে রেখে আবার ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায়। তিনি আরো বলেন, এই সরকার নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এটার প্রমাণ হয়েছে গত ১লা সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে পুলিশ যতো ভুতুড়ে মামলা দিয়েছে তার মাধ্যমে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকের এই সমাবেশ নতুন মাইলফলক। যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাজনীতির নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ঐক্যপ্রক্রিয়া দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে আরো সুসংহত করবে। ড. কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের গৌরব আখ্যায়িত করে তার উদ্দেশ্যে বলেন, আইনের শাসন, ভোটের অধিকার রক্ষায়, গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে চাই। ভোটের অধিকার রক্ষায় আপনারা কাজ করেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবো। মওদুদ বলেন, আমি মনে করি ৫টি দাবি নিয়ে ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, ইসি পুনর্গঠন করতে হবে ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বাতিল করতে হবে। এই দাবিগুলোর সঙ্গে আমরা যারা বিএনপি করি তাদের আরেকটি দাবি হলো- দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। সকল নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে। কোনো নতুন গ্রেপ্তার চলবে না।  

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে থেকে ৪৭ বছর আগে এ দেশের কোটি কোটি মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের বলতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আজ মৃত। অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে সব সম্পদ চলে যাচ্ছে। আর দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিম্নের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এসব অনাচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য একটি জাতীয় ঐক্য দরকার। আসুন আমরা সকলে মিলে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ইতিমধ্যে সারা দেশের জনগণের ঐক্য হয়েছে। সারা দেশের আইনজীবীরাও ঐক্যবদ্ধ হওয়া শুরু করেছে। আশা করি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল নেতৃবৃন্দ মুক্তি পাবে। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমাদেরকে এই দাজ্জাল শাসকের হাত থেকে রক্ষা করুন।

খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে আজ গভীর সংকট। আর মাত্র সাড়ে তিন মাস পরে নির্বাচন। অথচ গতকালও সারা দেশে সাড়ে তিন শত বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। ঈদের পর থেকে আজ ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ২২ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে কতো জনের নামে তার হিসাব নেই। এসময় তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করছি। তাদের মুক্তি দিতে হবে। 

যদি কেউ পুলিশ দিয়ে, র‌্যাব দিয়ে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে বলবো- আমরা এত জোরে আওয়াজ তুলবো যে, আপনারা কথাই বলতে পারবেন না। মান্না বলেন, আজকে আমরা যে দাবি করছি আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল ছাড়া সকল দল সেই দাবি করছে। সুতরাং জাতীয় ঐক্য তো হয়েই গেছে। আমরা এখন সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই জাতীয় ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেব। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন দিতে হবে।

যারা এই সরকারে আসবেন তারা কোনো নির্বাচন করতে পারবেন না। ভোটের আগের দিন, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে রাস্তার মানুষ ঘরে ছিল। আমরা যতোই চেষ্টা করেছি মানুষ রাস্তায় নামেননি। এবার এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ঘরের মানুষ রাস্তায় নামবে। আর রাস্তার সকল দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে যাবে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওরা একটা গোষ্ঠী। ওরা চোর, ডাকাত। ওরা ভোট চুরি করে, শেয়ার বাজার লুট করে। আগামী নির্বাচন যেন ৫ই জানুয়ারির মতো ফোর টুয়েন্টি মার্কা নির্বাচন না হয় তার দাবিতে বামফ্রন্ট মিছিল করেছে। তাদের পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। 

কার্টসিঃ মানবজমিন/সেপ্টেম্বর ২২,২০১৮

৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি


নতুন এক ধারার সূচনা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। জামায়াত বাদে নানা মত আর পথের রাজনৈতিক দল শামিল হয়েছে এ প্রক্রিয়ায়। ডান-বাম-মধ্যপন্থি-ইসলামপন্থি সব ধারার দলের নেতাদেরই দেখা গেছে গতকাল মহানগর নাট্যমঞ্চে। নির্বাচন আর রাজবন্দিদের মুক্তির ইস্যুতে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সমাবেশ থেকে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় দিয়ে বলা হয়েছে এর অন্যথা হলে ১লা অক্টোবর থেকে সারা দেশে ঐক্য প্রক্রিয়া সভা-সমাবেশের কর্মসূচিতে যাবে। ন্যায় বিচার প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিএনপি ও ২০ দলের অন্যান্য শরিক দল, যুক্ত ফ্রন্ট, গণফোরামের নেতারা ছাড়া আরো কয়েকটি দলের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। ২০ দলের শরিক জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এ সমাবেশে। সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অংশীদার গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষনেতা জোনায়েদ সাকিও সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে ঘোষণাপত্রও উপস্থাপন করেন বাম সমর্থিত তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মো. মনসুর আহমেদও যোগ দেন সমাবেশে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বি. চৌধুরী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে কড়া বক্তব্য রেখেছেন জাতীয় ঐক্যের পক্ষে। সমাবেশ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন অন্য নেতারাও। আয়োজকরা জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বৃহত্তর ঐক্য গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে নাট্যমঞ্চের সমাবেশের মাধ্যমে এর ভিত রচিত হলো। সামনে এ প্রক্রিয়া বৃহত্তর ঐক্যে রূপ নেবে। 

সভা, করবো, অনুমতির তোয়াক্কা করবো না

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন এ স্বাধীন দেশে মায়েরা-বোনেরা আতঙ্কে থাকে দিনে রাতে, ঘুমোতে পারে না। কেন বৃদ্ধ মা-বাবা শঙ্কিত থাকে তার সন্তান কি ঘরে ফিরবে কিনা? কেন এ হত্যা, গুম, সন্ত্রাস? কেন, কেন, কেন? সারা দেশে অধিকার হারা ও লুণ্ঠিত জনগণের এ অভিযোগ আজ সরকারের কাছে। তারা আজ রুখে দাঁড়াবে। স্বাধীন বাংলাদেশে কেন মায়েরা নির্যাতিত হবে, কেন শিশুদের ওপর নির্যাতন হবে। তিনি বলেন, পুলিশ-র‌্যাব আমাদের সন্তান। তাদের কেন আমাদেরই সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। জবাব দিতে হবে। প্রবীণ এ নেতা বলেন, ঘুষকে স্পিড মানি হিসেবে সরকারিকরণ করা হয়েছে। সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোন মন্ত্রণালয়টায় দুর্নীতি নেই জবাব দেন। কিন্তু দিতে পারে না। কেন একটি জাতির নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটালেন? কোটি কোটি টাকা চুরি করে, দুর্নীতি করে; লজ্জা নেই? স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামতে হলো? 


সড়কটাকেও নিরাপদ করতে পারলেন না? কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল মেধাবীদের পক্ষে। কিন্তু হাতুড়ি, লাঠি, পিস্তল নিয়ে তাদের পেছনে ধাওয়া করলেন। আপনাদের লজ্জা নেই, শরম নেই। বি. চৌধুরী প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন আমরা দেখি তার জন্য প্রয়োজন মেধাবীদের। সেগুলো কি নির্বোধ লোকরা করবে? আর মেধাবীদের আপনি হাতুড়ি দিয়ে পেঠাবেন? স্বাধীন দেশে প্রতিবার সভা করার জন্য কেন পুলিশের কাছে অনুমতি নিতে হবে? আপনারা পুলিশকে অপদস্থ ও কলঙ্কিত করতে চান আমাদের চোখে। কিন্তু আমরা তো জানি, পেছনের লোকটি তো আপনি। স্বার্থসিদ্ধির জন্য পুলিশকে ব্যবহার করে চলেছেন। আমরা সভা করবো। অনুমতির তোয়াক্কা করবো না। আমাদের অনুমতি দেবে জনগণ। 

সাবেক এ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার ভোট আমি দেব, পছন্দ করে উপযুক্ত লোককে দেব। কেন দিতে পারবো না? পারি না কি জন্য জানেন? কারণ আপনি (প্রধানমন্ত্রী) চান আপনার সরকার। আপনার সরকার সূক্ষ্মতম কারচুরির মাধ্যমে ভোট জেতার জন্য সাতদিন আগ থেকে সমস্ত এজেন্টদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আর পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আপনি কেন আমার ভোট দিতে দেবেন না, এ অধিকার কে আপনাকে দিয়েছে। তিনি বলেন, এমন দলীয়করণ করেছেন, রাজনীতি করতে হলে আপনার পক্ষে থেকে করতে হবে। এটা কোন কথা হলো? আমি স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে চাই, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই, স্বাধীনভাবে ভাবতে চাই। স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চাই। 

বি. চৌধুরী বলেন, সারা পৃথিবী পরিত্যাগ করেছে যে ইভিএম যন্ত্র, সে যন্ত্রের যন্ত্রণা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চান জোর করে? সে জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন না। ছুড়ে ফেলে দেব আমরা। এই ইভিএম ছুড়ে ফেলে দিবো। ইভিএমের বদলে যদি সাহস থাকে, বুকের পাটা থাকে তাহলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি টিভি লাগান। কেবল বুথ ছাড়া সব জায়গায়, যেন বাইরে থেকে সাধারণ সবাই সেটা দেখতে পান। সাহস আছে? সরকারকে জবাব দিতে হবে, কেন সিসি টিভি দেবে না, কেন ইভিএম ফেলে দেবে না। তিনি বলেন, আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষক চাই। তবে ১৪ বা ২৪ জন নয়। তারা থাকেন কয়দিন, দুইদিন। কি নির্বাচন দেখেন? যেসব জায়গায় লিখে দেন ওইখানে যান। সেখানে বেড়িয়ে আসেন। লিখে দেন চমৎকার নির্বাচন। কমপ্লিট ননসেন্স, আপনাদের (সরকার) ভাষা ধার নিয়ে বলছি, রাবিশ। বাইরে থেকে যেসব পর্যবেক্ষক আসবে তাদের এক মাস আগে আনতে হবে। জাতিসংঘ থেকে ১০০ প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। তারা এক মাস আগে এসে দেখবে, কোথায় চুরি ডাকাতি হচ্ছে, কেমন করে জুলুম নির্যাতন হচ্ছে, কেমন করে রেজাল্ট বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেখবে, বুঝবে, তারপর লিখবে রিপোর্ট, তারপর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হয় কিনা তা দেখতে আরো সাতদিন থাকবে। পারবেন? পারবেন না। কেন পারবেন না। কারণ দুরভিসন্ধি ছাড়া কোনো কারণ নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বি. চৌধুরী বলেন, ক্ষমতা দেখাচ্ছেন? আসল জিনিসই তো বুঝেননি। আপনাকে দেশের জনগণ ভোট দেয় ক্ষমতা দেখানোর জন্য নয়, তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য। আগের অনেকে বুঝতে চায়নি, এখনো অনেকে চায় না। তারা চায় ক্ষমতা, ক্ষমতা। নো ক্ষমতা, দায়িত্ববোধের রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, আপনারা শাসন করেছেন ১০ বছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন দল ১০ বছর শাসন করেনি। তাতেই এত সাহস, তাতেই এত নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যা! কিন্তু তার পরও তো আমরা গঙ্গার পানি পাইনি। তার পরও তিস্তার পানি পাইনি। এতে কি প্রমাণ হয়, প্রমাণ যাই হোক, আপনাকে জবাব দিতে হবে। ডা. বি. চৌধুরী বলেন, কোনো দেশ, কোনো রাষ্ট্র আমাদের চিরকালীন শত্রু হতে পারে না। কোনো রাষ্ট্র চিরকালের মিত্রও হতে পারে না। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু। আমাদের দাবি যখন ন্যায়সঙ্গত হবে আমরা বন্ধুর মতো ভাববো। আগেও বলেছি ভারত বন্ধু রাষ্ট্র, এখনো বলি বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু বলতে হবে বন্ধু রাষ্ট্র, তুমি কোথায়? আমার পানি কোথায়? ভারত বন্ধু রাষ্ট্র তাহলে আপনারা পানি আনতে পারেননি কেন? বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে আদায় করতে পারলেন না তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা তো আপনার নেই। 

গণতন্ত্রের স্বপক্ষের সব শক্তিকে আমরা আহ্বান করেছি ঐক্য হোক। আমরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আশান্বিত, ভবিষ্যতে এ প্রক্রিয়ার একটি সুফল হবে। তিনি বলেন, আমরা যে কাগজটি সই করেছি, সেখানে পরিষ্কারভাবে কথাগুলো লেখা আছে। আর তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকলে ৮৮ বছর পূর্ণ করবো। কিন্তু আমার কি অসুখ-বিসুখ হতে পারবে না। এ গ্যারান্টি কে দেবে? কেন এগুলো নিয়ে মানুষ তামাশা করে। 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জননেত্রী খালেদা জিয়া আমার চেয়ে ১৫ বছরের ছোট। তিনি অসুস্থ। আমিই তো বলেছিলাম, তার টিআইএ হয়েছে। এতে কখনো কখনো অঙ্গহানিও হয়ে যায়। আমি প্রথম স্টেটমেন্ট দিয়েছি। কিন্তু তারপরও একটি বোর্ড হয়েছে। তিনি নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, এখানে অনেক আইনবিদ আছেন। তারা কি জানেন না? আমার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমার একটি অধিকার আছে। আমি যাকে মনোনীত করিনি সে আমার রোগের ইতিহাস নিতে পারে না। শরীরে হাত দিতে পারে না। আমার গোপনীয় রিপোর্টগুলো দেখতে পারে না। কিন্তু আপনারা (বিএনপি) বসে রইলেন, আমরা দেখলাম। এরপরও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড করে তারা কেমন করে তার ইতিহাস নিতে গেল? কেমন করে গায়ে হাত দিলো। কেমন করে তার গোপনীয় রিপোর্ট দেখলো। প্রশ্ন করলেন না? করা উচিত ছিল। 

আসুন গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই। কিন্তু যারা এ দেশ স্বাধীন করার জন্য রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, সম্ভ্রম দিয়েছে আজ দেশমুক্ত করার সময় আমরা কি তাদের কথা ভাববো না, তাদের ভুলে যাবো? এতবড় বেঈমান আমরা হতে পারবো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্য চাই। যারা মানচিত্রে বিশ্বাস করবে না তাদেরকে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করবো। যারা আমার পতাকাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতে জানবে না তাদের কীভাবে বিশ্বাস করবো। যারা আমাদের এই বাংলাদেশকে এখনো স্বীকার করবে না আমি তাদের কেমন করে স্বীকার করবো। 

বি. চৌধুরী বলেন, আমি মুক্ত গণতন্ত্র চাই, এ সরকারের পতন চাই। কিন্তু বেগম জিয়ার মুক্তি চাই। সমস্ত রাজবন্দির মুক্তি চাই। একবিন্দু এদিক-ওদিক নেই। পরিষ্কার লেখা আছে। নির্বাচন করতে হলে আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সমস্ত রাজবন্দির মুক্তি চাই। আমরা বলেছি, ১০০ দিন আগে থেকে আমাদের সেনাবাহিনীকে নামাতে হবে। 

সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে ন্যূনতম কর্মসূচি ও দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ের আন্দোলনে শুরুর তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নাগরিক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ঐক্যের পথে একধাপ এগিয়ে গেছি। আশা করব, দাবিগুলো অর্জন করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। সবাইকে জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন আমরা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে, ন্যূনতম দাবি-দাওয়াসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবিগুলো আদায় করতে একটি আন্দোলন শুরু করি। সে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে এ সরকারকে বাধ্য করবো। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। 

এ জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেয়ায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাতির এ চরম দুর্দিনে, যখন সবাই একটি মুক্তির পথ খুঁজছে তখন তিনি একটি পথ দেখিয়ে জনগণকে সামনে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের হারিয়ে যাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট ও বেঁচে থাকার অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনে একতাবদ্ধ হয়ে একমঞ্চে উপস্থিত হওয়ার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান তিনি। মির্জা আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করায় গণতন্ত্রের নেতা খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এখন একটা স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসা সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। 

দেশে অপশাসন ও দুঃশাসন চলছে: ড. কামাল

সভাপতির বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আপনারা এসেছেন একটি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তা হচ্ছে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আপনারা এসেছেন একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে তা হচ্ছে লুণ্ঠিত ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের সবার প্রত্যাশা সুখী, সমৃদ্ধ, উদার, গণতান্ত্রিক ও বহুমতের বাংলাদেশ। ড. কামাল বলেন, দেশে এখন অপশাসন ও দুঃশাসন চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও অপদস্থ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করে জয়ী হয়েছে। 

আবার হোঁচট খেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারে না। ড. কামাল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করি না। আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। 

জনগণের ক্ষমতা জনগণের নিকট ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস যেমন আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার ইতিহাসও আছে। দেশে উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা ও স্বর্ণ গচ্ছিত রাখাও নিরাপদ না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনী বাড়ার যে প্রবণতা তাতে বাংলাদেশের নাম সবার আগে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। 

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. কামাল বলেন, আমরা প্রকাশ্য সভা করছি। কোনো গোপন বৈঠক করছি না। যারা জনগণের শক্তিকে ভয় পায়, তারা জনগণের সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টাকে ষড়যন্ত্র বলে তারা জনগণকেই অপমান করছে। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের সংবিধান রচনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। ব্যক্তিগতভাবে আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/সেপ্টেম্বর ২২,২০১৮ 

Thursday, September 20, 2018

বগুড়া আওয়ামী লীগ নেতার এত সম্পদ!

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করেছেন দলটির স্থানীয় আরেক নেতা। দুর্নীতি দমন কমিশনে করা ১৬টি অভিযোগ থেকে জানা যায়, বগুড়া ও ঢাকায় মোহনের বাড়ি-গাড়ি, জমি ও ব্যাংকে মোটা অঙ্কের সঞ্চয় রয়েছে। বিদেশেও তাঁর বাড়ি রয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে ‘ক্যাডার বাহিনী’ দিয়ে চাঁদাবাজি, হুমকি দিয়ে টাকা আদায় এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করে এই বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে মোহনের বিরুদ্ধে। 

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বগুড়ার উপপরিচালক আনোয়ারুল হক অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। তাঁরা অভিযোগের একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও দিয়েছেন। এখন তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।

বগুড়া শহরের বাদুরতলা এলাকার মেসার্স শুকরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ এই অভিযোগ দাখিল করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁকে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিয়েছে। আব্দুল মান্নান বগুড়া পৌর শাখা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, বগুড়া শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে বগুড়া শহরের একাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করা’, নকল ও নিম্নমানের বই ছাপিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের উেকাচ গ্রহণের অভিযোগও করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোহন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনে এসি/নন এসি  করে। তাঁর নাম ব্যবহার করেও অনেক গাড়ি চলে, যা থেকে তিনি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি নিজে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ব্যবহার করেন। তাঁর বড় ছেলে অর্ক করোলা গাড়ি ব্যবহার করেন। কিন্তু তাঁর এই ছেলের নামে কোনো আয়কর নথি নেই। মোহনের ছোট ছেলে অয়ন সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করেছেন। এই অয়নের নামে কাহালুর সারাই মৌজায় তিন একর জমিসহ বাগানবাড়ি রয়েছে, যার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। এই জমিতে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে তিনি বাংলোবাড়ি করেছেন। সেখানে আরো চারতলা ভবন রয়েছে, যেটি রেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মোহন তাঁর শ্বশুরবাড়ি এলাকা বরিশালে দুই কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছেন। বগুড়া শহরের সুবিল এলাকায় সাধারণ বীমা ভবনের পাশে চার কোটি টাকা মূল্যের জমি রয়েছে তাঁর, যা প্রাচীর দেওয়া আছে এবং সামনে দোকান রয়েছে। শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় হটু মিয়া লেনে ৯ শতক জমির ওপর আট কোটি টাকায় চার ইউনিটের সাততলা বাড়ি করেছেন মোহন। এ ছাড়া ঢাকার গুলশানে বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজায় তাঁর এক হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম পাঁচ কোটি টাকা। ফ্ল্যাট নম্বর-৮/এ, প্লট নং-চ-৯০/এ, প্রগতি সরণি। সদর উপজেলার এরুলিয়ায় কাহলা মৌজায় তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের আট একর জমি রয়েছে। শহরের দত্তবাড়ী তিনমাথার পূর্ব পাশে ৯ শতক জায়গা প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকায় কিনেছেন। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এর নকশাও অনুমোদন করা হয়েছে। চকসূত্রাপুরে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছেন মোহন। এ ছাড়া দেশের বাইরে ভারতের কলকাতা শহরের মুকুন্দপুর এলাকায় তাঁর দোতলা বাড়ি রয়েছে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, মঞ্জুরুল আলম মোহনের নামে শহরের ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ব্যাংক, এসআইবিএল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা রয়েছে।

অভিযোগকারী আব্দুল মান্নান আকন্দের আরজি, সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন বলে মোহনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে এবং খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

  • কার্টসিঃ কালের কণ্ঠ/ সেপ্টেম্বর ২০,২০১৮