It can't combat river encroachers otherwise
The purple colour of Karnopara Canal's water bears the evidence of indiscriminate discharge of toxic waste into it. Dyeing factories set up on both sides of the water body reportedly contribute to such pollution.
The media has for the last few decades highlighted the sorry state of our rivers, i.e. how powerful, vested quarters have taken advantage of the fact that the National River Conservation Commission (NRCC) was never given any legal or institutional capacity. The NRCC lacks teeth to do anything against polluters or river grabbers. Environmentalists have been voicing their concerns about this issue for many years, but the sad reality is that authorities are powerless to act because the NRCC cannot take any action in its present form.
It is not like there aren't enough laws to protect rivers. But who is going to implement those on behalf of the government, if not the NRCC? And whilst policymakers choose to turn a blind eye to the issue, we have thousands of fisherfolk out of jobs on the Buriganga River which is essentially a dead river. We see polluters wreaking havoc on other rivers like Norai, Debdholai and Balu rivers.
The media has covered the dual menace of pollution and river encroachment for years and yet nothing substantial has happened. The Buriganga may recover somewhere down the line as the tannery industry has been relocated to Savar, but the problem has basically been shifted to another river—Dhaleshwari—and while fishermen may one day fish again on the Buriganga, we may see new media reports in the coming years when the Dhaleshwari too begins to die due to pollution. If we are to save our rivers which are considered the lifeline of urban centres like Dhaka, then the time to act is now.
Courtesy: The Daily Star Editorial Sep 26, 2018
Search
Wednesday, September 26, 2018
নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করুন
সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশা
গত রোববার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আয়োজিত এক সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে সওজের কর্মকর্তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই অসন্তোষ জন-অসন্তোষেরই প্রতিধ্বনি। সংবাদমাধ্যমে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুরবস্থা নিয়ে ভুক্তভোগী জনসাধারণের অভিযোগ-অসন্তোষের ব্যাপক প্রতিফলন ঘটে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রোববারের ওই সেমিনারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনেক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আত্মসমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। কৌতূহল জাগে, মন্ত্রীর অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আত্মসমালোচনার কোনো সুফল কি ফলবে?
‘বাংলাদেশে মানসম্পন্ন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে সেসব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে, যেগুলো ইতিমধ্যে বহুল আলোচিত। যেমন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনায় ত্রুটি আছে, সেগুলোর স্থায়িত্ব কম, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না; সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি ইত্যাদি। এই সবই বাস্তব সত্য। কিন্তু এসবের দায় কাদের? যাদের দায়, তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা ও চর্চা আছে কি না? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অনুশীলন না থাকলে কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হয় না।
সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সওজের গত মে মাসের হিসাব অনুযায়ী ওই সময় পর্যন্ত দেশের প্রায় পৌনে ৫ হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। প্রশ্ন হলো, দেশের মোট সড়ক-মহাসড়কের চার ভাগেরও বেশির এই দুরবস্থা কেন হয়েছে। দুরবস্থায় পড়ার আগেই এগুলো মেরামত করা হয়নি কেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, যেসব সড়ক-মহাসড়কের স্থানে স্থানে ভেঙেচুরে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো কত দিন আগে নির্মিত বা মেরামত করা হয়েছিল। প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের স্বাভাবিক স্থায়িত্ব প্রত্যাশিত। কোনো সড়ক ৫ বছর, কোনোটি ১০ বছর টেকসই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার দুই-এক বছরের মধ্যেই সেগুলো ভেঙেচুরে যায়, খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। তারপর সেসব বেহাল সড়ক-মহাসড়কের ভাঙাচোরা জায়গায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে মেরামতি চালানো হয়, কিছু সময় পরেই সেগুলো আবার ভেঙেচুরে যায়। এভাবেই অবিরাম চলতে থাকে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের নামে অর্থ ব্যয়, কিন্তু দুর্দশা কোনোভাবেই দূর হয় না।
একটা বহুল উচ্চারিত অভিযোগ, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের গুণগত মান অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু কেন খারাপ? নির্মাণ ও মেরামতের কাজ তদারকির দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা কি সে দায়িত্ব যথাসময়ে ও যথাযথভাবে পালন করেন? যদি করেন, তাহলে নির্মাণ-মেরামতের গুণগত মান খারাপ হয় কীভাবে? জনসাধারণের চোখের সামনেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলে—এ রকম অভিযোগসংবলিত চিঠিপত্র সংবাদপত্রের দপ্তরে আসে, অথচ যাঁদের ওপর এসব কাজের তদারকির দায়িত্ব, তাঁরা এসব দেখতে পান না—এটা হয় না। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তদারকির অভাবে নির্মাণ-মেরামতের গুণগত মান খারাপ হলে এবং সেই কারণে সড়ক-মহাসড়কগুলো অচিরেই ভেঙেচুরে গেলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির অনুশীলন নেই বলে অবাধে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয় দুর্নীতির উদ্দেশ্যেই—এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে গত ৯ বছরে ৫৭ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। জনগণের এই বিপুল অর্থের কত ভাগ দুর্নীতিবাজদের পকেটে গেছে, তা হিসাব করার জন্য একটি তদন্ত হওয়া উচিত।
দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর চির-দুরবস্থা স্থায়ীভাবে দূর করতে হলে এই খাতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, তা ভেঙে দিতে হবে।
Courtesy: Prothom Alo সম্পাদকীয়: Sep 26, 2018
গত রোববার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আয়োজিত এক সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে সওজের কর্মকর্তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই অসন্তোষ জন-অসন্তোষেরই প্রতিধ্বনি। সংবাদমাধ্যমে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুরবস্থা নিয়ে ভুক্তভোগী জনসাধারণের অভিযোগ-অসন্তোষের ব্যাপক প্রতিফলন ঘটে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রোববারের ওই সেমিনারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনেক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আত্মসমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। কৌতূহল জাগে, মন্ত্রীর অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আত্মসমালোচনার কোনো সুফল কি ফলবে?
‘বাংলাদেশে মানসম্পন্ন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে সেসব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে, যেগুলো ইতিমধ্যে বহুল আলোচিত। যেমন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনায় ত্রুটি আছে, সেগুলোর স্থায়িত্ব কম, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না; সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি ইত্যাদি। এই সবই বাস্তব সত্য। কিন্তু এসবের দায় কাদের? যাদের দায়, তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা ও চর্চা আছে কি না? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অনুশীলন না থাকলে কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হয় না।
সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সওজের গত মে মাসের হিসাব অনুযায়ী ওই সময় পর্যন্ত দেশের প্রায় পৌনে ৫ হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। প্রশ্ন হলো, দেশের মোট সড়ক-মহাসড়কের চার ভাগেরও বেশির এই দুরবস্থা কেন হয়েছে। দুরবস্থায় পড়ার আগেই এগুলো মেরামত করা হয়নি কেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, যেসব সড়ক-মহাসড়কের স্থানে স্থানে ভেঙেচুরে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো কত দিন আগে নির্মিত বা মেরামত করা হয়েছিল। প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের স্বাভাবিক স্থায়িত্ব প্রত্যাশিত। কোনো সড়ক ৫ বছর, কোনোটি ১০ বছর টেকসই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার দুই-এক বছরের মধ্যেই সেগুলো ভেঙেচুরে যায়, খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। তারপর সেসব বেহাল সড়ক-মহাসড়কের ভাঙাচোরা জায়গায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে মেরামতি চালানো হয়, কিছু সময় পরেই সেগুলো আবার ভেঙেচুরে যায়। এভাবেই অবিরাম চলতে থাকে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের নামে অর্থ ব্যয়, কিন্তু দুর্দশা কোনোভাবেই দূর হয় না।
একটা বহুল উচ্চারিত অভিযোগ, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের গুণগত মান অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু কেন খারাপ? নির্মাণ ও মেরামতের কাজ তদারকির দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা কি সে দায়িত্ব যথাসময়ে ও যথাযথভাবে পালন করেন? যদি করেন, তাহলে নির্মাণ-মেরামতের গুণগত মান খারাপ হয় কীভাবে? জনসাধারণের চোখের সামনেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলে—এ রকম অভিযোগসংবলিত চিঠিপত্র সংবাদপত্রের দপ্তরে আসে, অথচ যাঁদের ওপর এসব কাজের তদারকির দায়িত্ব, তাঁরা এসব দেখতে পান না—এটা হয় না। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তদারকির অভাবে নির্মাণ-মেরামতের গুণগত মান খারাপ হলে এবং সেই কারণে সড়ক-মহাসড়কগুলো অচিরেই ভেঙেচুরে গেলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির অনুশীলন নেই বলে অবাধে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয় দুর্নীতির উদ্দেশ্যেই—এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে গত ৯ বছরে ৫৭ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। জনগণের এই বিপুল অর্থের কত ভাগ দুর্নীতিবাজদের পকেটে গেছে, তা হিসাব করার জন্য একটি তদন্ত হওয়া উচিত।
দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর চির-দুরবস্থা স্থায়ীভাবে দূর করতে হলে এই খাতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, তা ভেঙে দিতে হবে।
Courtesy: Prothom Alo সম্পাদকীয়: Sep 26, 2018
সংবিধানের মধ্যেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দেখছে বিএনপি
তানভীর সোহেল, ঢাকা
সংবিধান সংশোধন না করেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন সম্ভব বলে মনে করছে বিএনপি। বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের একটি রূপরেখা তৈরি করেছে দলটি।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, সরকার চাইলে তাদের এই রূপরেখা দেওয়া হতে পারে। অথবা এই রূপরেখা প্রকাশ করে তা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে পারে দলটি। তবে রূপরেখাটি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে বলে বিএনপির ওই সূত্র জানিয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে, সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো অসাংবিধানিক সরকার তারা মানবে না। সরকারের এই অনড় অবস্থানের মধ্যেই বিএনপি বলছে, তাদের রূপরেখাটি বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন না করেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
রূপরেখাটির খসড়ায় নির্বাচনকালীন ওই সরকারকে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। তারা বলছে, বর্তমান সংবিধানের আওতায় এই সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ জন্য প্রথমেই রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার বলে মনে করছে দলটি।
বিএনপির রূপরেখার প্রস্তাব
১. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। তবে তাতে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের রাখা হবে না।
২. প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৭(১)(খ)/৫৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদত্যাগ করবেন। তাঁর পদত্যাগের পরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তিনি সংবিধানে ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ এক–দশমাংশ মন্ত্রী অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন—এই বিধান প্রয়োগ করে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে একজনকে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তবে ওই ব্যক্তি দলের কেউ হতে পারবে না।
এরপর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে দেবেন এবং এঁরা কোনো দলের হবে না। যেহেতু এঁরা মন্ত্রী হবেন না, তাই এঁদের শপথের প্রয়োজন হবে না। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠিত হবে। এঁরা ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার দিন থেকে সহায়ক সরকারের মেয়াদে শেষ হবে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা এই রূপরেখা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের সংবিধানের কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই আইনজীবীরা কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই নিরপেক্ষ সরকার গঠন সম্ভব। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা পাশাপাশি এও বলেছেন, এরশাদ সরকারের পতনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল। এবারও সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন সম্ভব। এতে যদি কিছুটা সংবিধানের সঙ্গে অসংগতি থাকে, তবে পরবর্তী সরকার এসে এর বৈধতা দিতে পারে। ফলে, সংবিধান সংশোধনের এখন কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
Courtesy: Prathom Alo Sep 26, 2018
সংবিধান সংশোধন না করেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন সম্ভব বলে মনে করছে বিএনপি। বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের একটি রূপরেখা তৈরি করেছে দলটি।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, সরকার চাইলে তাদের এই রূপরেখা দেওয়া হতে পারে। অথবা এই রূপরেখা প্রকাশ করে তা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে পারে দলটি। তবে রূপরেখাটি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে বলে বিএনপির ওই সূত্র জানিয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে, সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো অসাংবিধানিক সরকার তারা মানবে না। সরকারের এই অনড় অবস্থানের মধ্যেই বিএনপি বলছে, তাদের রূপরেখাটি বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন না করেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
রূপরেখাটির খসড়ায় নির্বাচনকালীন ওই সরকারকে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। তারা বলছে, বর্তমান সংবিধানের আওতায় এই সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ জন্য প্রথমেই রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার বলে মনে করছে দলটি।
বিএনপির রূপরেখার প্রস্তাব
১. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। তবে তাতে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের রাখা হবে না।
২. প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৭(১)(খ)/৫৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদত্যাগ করবেন। তাঁর পদত্যাগের পরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তিনি সংবিধানে ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ এক–দশমাংশ মন্ত্রী অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন—এই বিধান প্রয়োগ করে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে একজনকে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তবে ওই ব্যক্তি দলের কেউ হতে পারবে না।
এরপর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে দেবেন এবং এঁরা কোনো দলের হবে না। যেহেতু এঁরা মন্ত্রী হবেন না, তাই এঁদের শপথের প্রয়োজন হবে না। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠিত হবে। এঁরা ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার দিন থেকে সহায়ক সরকারের মেয়াদে শেষ হবে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা এই রূপরেখা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের সংবিধানের কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই আইনজীবীরা কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই নিরপেক্ষ সরকার গঠন সম্ভব। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা পাশাপাশি এও বলেছেন, এরশাদ সরকারের পতনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল। এবারও সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন সম্ভব। এতে যদি কিছুটা সংবিধানের সঙ্গে অসংগতি থাকে, তবে পরবর্তী সরকার এসে এর বৈধতা দিতে পারে। ফলে, সংবিধান সংশোধনের এখন কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
Courtesy: Prathom Alo Sep 26, 2018
DIGITAL SECURITY ACT
Tool ripe for abuse: HRW
Diplomatic Correspondent
The Digital Security Act, which replaces the much-criticised Information and Communication Technology Act, retains the most problematic provisions of the ICT law and adds more provisions criminalising peaceful speech, Human Rights Watch said yesterday.
It said the act passed by parliament last week, despite vehement opposition from the country's journalists, “strikes a blow to freedom of speech in the country”.
“The new Digital Security Act is a tool ripe for abuse and a clear violation of the country's obligations under international law to protect free speech,” Brad Adams, Asia director of HRW, said in a statement.
“With at least five provisions criminalising vaguely defined types of speech, the law is a licence for wide-ranging suppression of critical voices,” the statement said, adding, “Several provisions violate international standards on free expression.”
On Section 21 which authorises sentences of up to 14 years in prison, the HRW said the UN Human Rights Committee has expressly stated that laws that penalise the expression of opinions about historical facts are incompatible with a country's obligations to respect freedom of opinion and expression.
The committee is an independent expert body that monitors compliance with the International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) to which Bangladesh is a party.
About Section 25 (a), the global rights watchdog said publishing information that is “aggressive or frightening” is not defined in the law. The vagueness, combined with harsh potential penalty, increases the likelihood of self-censorship.
With no clear definition of what speech would be considered a violation of Section 31, the HRW said the provision leaves wide scope for the government to prosecute speech it does not like.
The statement also highlights sections 28, 29 and 31 of the new law which grants law enforcement authorities wide-ranging powers to remove or block online information that “harms the unity of the country or any part of it, economic activities, security, defense, religious value or public order or spreads communal hostility and hatred,” and to conduct warrantless searches and seizures if a police officer has reason to believe it is possible that “any offense under the Act” has been or is being committed.
Journalists in Bangladesh opposed Section 32 of the law, which authorises up to 14 years for gathering, sending, or preserving classified information of any government using a computer or other digital device, noting that doing so is a means to expose wrongful actions by officials, the HRW said.
The UN Special Rapporteur on the promotion and protection of the right to freedom of opinion and expression has stressed the need to protect, not to prosecute, those who disclose information in the public interest. The Global Principles on National Security and the Right to Information make clear that journalists should not be prosecuted for receiving, possessing or disclosing even classified information to the public.
“The passage of this law utterly undermines any claim that the government of Bangladesh respects freedom of speech,” Adams said. “Unless parliament moves swiftly to repeal the law it just passed, the rights of the country's citizens to speak freely will remain under serious threat.”
In Bangladesh, the Editors' Council and various other journalists and reporters' organisations as well as RTI Forum have strongly protested the passage of the act, saying it is “against the freedom of the media and speech guaranteed by the constitution.”
Courtesy: The Daily Star Sep 26, 2018
Diplomatic Correspondent
The Digital Security Act, which replaces the much-criticised Information and Communication Technology Act, retains the most problematic provisions of the ICT law and adds more provisions criminalising peaceful speech, Human Rights Watch said yesterday.
It said the act passed by parliament last week, despite vehement opposition from the country's journalists, “strikes a blow to freedom of speech in the country”.
“The new Digital Security Act is a tool ripe for abuse and a clear violation of the country's obligations under international law to protect free speech,” Brad Adams, Asia director of HRW, said in a statement.
“With at least five provisions criminalising vaguely defined types of speech, the law is a licence for wide-ranging suppression of critical voices,” the statement said, adding, “Several provisions violate international standards on free expression.”
On Section 21 which authorises sentences of up to 14 years in prison, the HRW said the UN Human Rights Committee has expressly stated that laws that penalise the expression of opinions about historical facts are incompatible with a country's obligations to respect freedom of opinion and expression.
The committee is an independent expert body that monitors compliance with the International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) to which Bangladesh is a party.
About Section 25 (a), the global rights watchdog said publishing information that is “aggressive or frightening” is not defined in the law. The vagueness, combined with harsh potential penalty, increases the likelihood of self-censorship.
With no clear definition of what speech would be considered a violation of Section 31, the HRW said the provision leaves wide scope for the government to prosecute speech it does not like.
The statement also highlights sections 28, 29 and 31 of the new law which grants law enforcement authorities wide-ranging powers to remove or block online information that “harms the unity of the country or any part of it, economic activities, security, defense, religious value or public order or spreads communal hostility and hatred,” and to conduct warrantless searches and seizures if a police officer has reason to believe it is possible that “any offense under the Act” has been or is being committed.
Journalists in Bangladesh opposed Section 32 of the law, which authorises up to 14 years for gathering, sending, or preserving classified information of any government using a computer or other digital device, noting that doing so is a means to expose wrongful actions by officials, the HRW said.
The UN Special Rapporteur on the promotion and protection of the right to freedom of opinion and expression has stressed the need to protect, not to prosecute, those who disclose information in the public interest. The Global Principles on National Security and the Right to Information make clear that journalists should not be prosecuted for receiving, possessing or disclosing even classified information to the public.
“The passage of this law utterly undermines any claim that the government of Bangladesh respects freedom of speech,” Adams said. “Unless parliament moves swiftly to repeal the law it just passed, the rights of the country's citizens to speak freely will remain under serious threat.”
In Bangladesh, the Editors' Council and various other journalists and reporters' organisations as well as RTI Forum have strongly protested the passage of the act, saying it is “against the freedom of the media and speech guaranteed by the constitution.”
Courtesy: The Daily Star Sep 26, 2018
Tuesday, September 25, 2018
ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না মোংলা ও বুড়িমারী বন্দরে
সম্পাদকীয়
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর ও কাস্টম হাউজ উভয় প্রতিষ্ঠানেই পণ্যছাড় ও শুল্কায়নের প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন হয়। বন্দরে দুই প্রকার দুর্নীতি হয়। একটি যোগসাজশের দুর্নীতি, অন্যটি বলপূর্বক অর্থ আদায়ের দুর্নীতি; যা ঘুষ আদায়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এটা এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে এখন। সেখানে যারা অংশীজন, তাদের সবারই এক ধরনের সিন্ডিকেটের মতো যোগসাজশ কাজ করছে। দিন দিন মানুষের উন্নতি হয়, আমাদের হচ্ছে অবনতি। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৮’ শীর্ষক বৈশ্বিক সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যবসা করার পরিবেশ আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। এমনটি হওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতি ও বন্দরগুলোর অদক্ষতা। ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যার চাপ গিয়ে পড়ছে ভোক্তার ওপর। ব্যবসার ব্যয় বেড়ে গেলে তার প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়ে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বন্দরগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বন্দরগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা হ্রাসের পেছনেও ঘুষের প্রভাব রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেয়া করবে এখন। সেখানে ঘুষ ও দুর্নীতিপূর্ণ একটি অবস্থা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।
পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি দুর্নীতি আছে, ঘুষের রেওয়াজ আছে। এ কথাটির আপেক্ষিক সত্যতা মেনে নিয়েও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় দুর্নীতির ব্যাপকতাকে অস্বীকার করার কোনো অজুহাত নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ দুর্নীতি ব্যবসায়ীদের মনে ব্যাপক হতাশাবোধের জন্ম দিয়েছে। এ হতাশাবোধের মূল কারণ হলো, দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যকর ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থার প্রধানতম ভিত্তি হওয়ার কথা এসব প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু আমরা কয়েক দশক ধরে এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্রমে ধ্বংস বা অকার্যকর করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চালিত করছি।
সমাজের প্রতিটি স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের বেশকিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন এবং উন্নয়ন ঘটানো। এজন্য আমাদের রাজনীতিক, আমলা আর দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনেরও কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সেবা খাতের এ দুর্নীতিই সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সত্যিকার অর্থে কর্তৃপক্ষ চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। শুধু যেটা দরকার, তা হলো সদিচ্ছা। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যেন এর মধ্য দিয়ে সবার কাছে এ বার্তা পৌঁছে যে অনিয়ম করলে, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় - ডিআরইউ
স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন সব ধারা, উপধারা বহাল রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ সংসদে পাস হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সাংবাদিক সমাজের মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ উপেক্ষা করে এ আইন পাস করায় নিন্দাও জানিয়েছেন ডিআরইউ নেতারা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন খান গতকাল এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, বহুল আলোচিত এ বিলের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর থেকেই সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন সুনির্দিষ্ট কিছু ধারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর সংসদীয় কমিটিতেও সাংবাদিক নেতারা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দেন।
বিবৃতিতে ডিআরইউ নেতারা বলেন, মত প্রকাশের অন্তরায় ও স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা হতে পারে এমন কোনো ধারা আইনে থাকবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, সাংবাদিকদের সব মতামত ও সুপারিশ উপেক্ষা করেই ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস করা হলো। এতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে সেগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় ছড়িয়ে দেয়া, ব্রিটিশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করার বিধান রাখায় সাংবাদিকদের নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিধান মৌলিক মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আইনটি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
বিবৃতিতে সাংবাদিক সমাজের দেয়া সুপারিশ আমলে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন, আপত্তিকর ও নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিল করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে ডিআরইউ।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
Are high-quality roads too much to ask for?
Editorial
Remove inefficiency in road construction
We agree with roads and highways officials and experts who have recently said that the lack of proper road infrastructure is a major hindrance to Bangladesh becoming a developed country. It is a known fact that the cost of per kilometre road construction in Bangladesh is the highest in the world while the quality of roads being constructed is extremely poor. Not only that, many of the existing roads are in an abysmal condition despite so much money being spent on maintenance. In the last nine years, according to a leading Bangla daily, Tk 11,000 crore was spent on maintenance of roads and a whopping Tk 46,500 crore has recently been allocated for the same purpose. Despite thousands of crores of taxpayers' money being spent on road maintenance, 4,750km of roads remain in bad condition.
Poor planning, design, implementation and use of low-quality materials, among other things, are largely to blame for the sorry state of our road infrastructure. And we hope that the authorities understand the various implications of the lack of proper road infrastructure. Firstly, this is costing us potential foreign investment. Secondly, how can we expect to continue our growth momentum without proper road infrastructure and adequate road network? Bangladesh needs 80,000km of roads whereas currently the road network constitutes only 21,000km.
How much longer are we going to keep wasting public money in the name of cost overruns and project delays instead of addressing the myriad systemic flaws, i.e. improper planning and design, inefficiency in project implementation and rampant corruption? Furthermore, the fact that roads are being constructed upon political considerations does not help. It is time that policymakers realised the need to put public interest first and began addressing these issues because at the current snail's pace of development of road infrastructure, our growth momentum may be difficult to sustain.
- Courtesy: The Daily Star /Sep 25, 2018
ওএমএসের জব্দ পণ্য হয়ে গেল রেশনের!
এস এম আজাদ
ভর্তুকি সুবিধায় স্বল্পমূল্যে ট্রাকে করে খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) জন্য খাদ্যসামগ্রী কালোবাজারে বিক্রির ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে কালোবাজারি চক্র। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে এসব খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে ডিলারদের মাধ্যমে। সম্প্রতি র্যাব প্রকাশ্যে অভিযান চালিয়ে যেসব খাদ্যসামগ্রী জব্দ করেছে, সেগুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশনের সামগ্রী বলে প্রমাণ করার পাঁয়তারা চলছে। একই সঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি এবং তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে। র্যাবের অভিযানে জব্দ করা ২১৫ টন চাল, গম ও আটার মধ্যে রেশনের কিছু গম আছে বলে দাবি করছে একটি পক্ষ।
এর সূত্রে ধরে অভিযুক্ত ওএমএস ডিলার ও শ্রমিক নেতারা দাবি করছেন, জব্দ করা সব খাদ্যসামগ্রীই বৈধ এবং এর সঙ্গে ডিলারদের সম্পৃক্ততা নেই। গতকাল সোমবার এমন দাবি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয় ঢাকা মহানগর ওএমএস ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে। সেখানে অভিযানের ১৬ দিন পর নতুন দাবির বিষয়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও কোনো জবাব দিতে পারেননি আয়োজকরা।
পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, তিনজন ডিলারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জব্দ করা খাদ্যসামগ্রীর একটি অংশ রেশনের কি না এবং বৈধভাবে বিক্রির জন্য ছিল কি না, তা যাচাই চলছে আদালতের নির্দেশে। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, জব্দ করা খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ টন রেশনের হতে পারে। বাকি সবই ওএমএসের, যার সঙ্গে ডিলাররা সরাসরি জড়িত। আসামিরা মামলা থেকে রেহাই পেতে অপকৌশল নিয়েছেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ওএমএসের সামগ্রী পাচার ধরা পড়ার পর থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের (সিএসডি) বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে কালের কণ্ঠ। এতে জানা গেছে, ওএমএসের চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রির মাঠপর্যায়ের কাজে নেতৃত্ব দেয় সংশ্লিষ্ট সিবিএ তথা ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের একটি চক্র। ওই সিন্ডিকেটের প্রধান আলমগীর সৈকতই গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। আলমগীর কয়েক বছর আগেও সিএসডির ‘কুলি’ ছিলেন। এখন তিনি কোটিপতি। দামি গাড়িতে চড়ে বেড়ান। আছে একাধিক বাড়িও।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিএসডির তালিকাভুক্ত অনেক ডিলার ঘরে বসেই টাকা পান। কাগজপত্রে বিক্রি দেখানো হলেও বাস্তবে ট্রাকে ভরে সামগ্রী নিয়ে যায় আলমগীরের সিন্ডিকেট। সিএসডির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে চলছে এই ‘ওপেন সিক্রেট’ বাণিজ্য। ওএমএসের চাল ও আটা ট্রাকে নেওয়ার সময় পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশনের ডিও দেখায় পাচারকারীরা। এ কারণে পথে তাদের কেউ ধরে না। এই ‘ডিও কৌশল’ নিয়েই তারা কালোবাজারির মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার ফন্দি এঁটেছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিএসডি থেকে পাচার হওয়ার সময় আটটি ট্রাকভর্তি ১১৫ টন চাল ও আটা জব্দ করে র্যাব। তাত্ক্ষণিকভাবে সিএসডির ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির এবং গুদাম ইনচার্জ মনিয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৯ সেপ্টেম্বর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। ৯ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ১১টি আড়ত থেকে ওএমএসের আরো ১০০ টন চাল ও আটা জব্দ করে র্যাব। ওই ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে সিএসডি ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবিরকে। ১১ সেপ্টেম্বর ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার পরদিন দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে র্যাব। ওই মামলায় জামিন পেয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ১২ নম্বর আসামি আলমগীর সৈকত।
প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা : ক্র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর ওএমএস ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, ‘কালোবাজারে বিক্রির জন্য’ গুদাম থেকে বের করার সময় জব্দ করা ওই খাদ্যপণ্যের সঙ্গে ডিলারদের জড়িয়ে তাঁদের ‘সামাজিকভাবে হেনস্তা’ করা হচ্ছে। ওএমএসে প্রত্যেক ডিলারের জন্য প্রতিদিনের বরাদ্দ থাকে এক টন চাল ও দুই টন আটা। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় সিএসডি থেকে তুলে ওই পণ্য বিকেল ৫টার মধ্যে বিক্রি করতে হয়। তিনি আরো বলেন, “অবিক্রীত মালামাল তাদারকি কর্মকর্তা ‘ব্যালান্স’ হিসেবে দেখিয়ে ডিলারের জিম্মায় দিয়ে দেন। পরদিন ডিলার নিজের খরচে নির্দিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রে তা বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। অবিক্রীত মালামাল সিএসডিতে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’’ সারা দেশে আট শতাধিক ডিলার ওএমএসের সামগ্রী বিক্রির সঙ্গে জড়িত এবং ‘অপপ্রচারের কারণে’ তাঁরা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলে মন্তব্য করে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন হারুন।
সংগঠনের আহ্বায়ক আলমগীর সৈকত বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে মালামাল জব্দ করা হয়েছে তা বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের মালামাল। অথচ আমাদের পাচারকারী অপবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, আমাদের তিনজন ডিলারের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। রেশনের গম হয় না।’ জব্দ করা সব চাল, গম ও আটা রেশনের বলে দাবি করেন তিনি। ১৬ দিন আগে অভিযান হয়েছে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, মামলা হয়েছে; এত দিন পর কেন এসব দাবি করছেন—কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর সৈকত বলেন, ‘আমরা আগে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’ তখন উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন, এমন কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। চাল ও আটা কিভাবে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গেল জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে আলমগীর বলেন, ‘এটা ডিলারদের না।’ রেশনের পণ্য কিভাবে বিক্রি হয় এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি গ্রুপ ম্যানেজ করে করে। তবে এটার সঙ্গে ডিলাররা জড়িত না।’
তদন্তকারীর মতে একটি অংশ, তা-ও প্রমাণিত হয়নি : নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, তেজগাঁওয়ের পূর্ব তেজতুরী বাজারের সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে ১৪ টন চাল ও ১৬ টন গম নিজ জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। র্যাব ১-এর প্রত্যয়নপত্রসহ তিনি সেগুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলেও দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাকে বিষয়টি যাচাই করে আদালতকে অবহিত করতে আদেশ দেন। সে অনুযায়ী গত ২২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ও কালোবাজারিসংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন চিঠি দেন র্যাব ১ অধিনায়ককে। মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিনজন রেশনিংয়ের মাল নিচ্ছিল বলে আসে। একটি প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। সেখানে ৩০ টনের মতো আছে। আদালত বিবেচনা করবেন। আর এই একটি অংশের কারণে ওএমএসের চাল-আটার বিষয়টি ধামাচাপা পড়তে পারে না। ওএমএস-সামগ্রী বাইরে আসা বিশাল ব্যাপার। এখানে অনেক জবাবদিহি লাগে।’ রেশনিংয়ের হলে বাইরে যেতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আদালত দেখবেন। প্রমাণ দিতে হবে।’ আসামিদের গ্রেপ্তার না করার কারণ জানতে চাইলে পরিদর্শক কামাল উদ্দীন বলেন, ‘মামলায় আসামিদের পুরো ঠিকানা ছিল না। আমরা খোঁজখবর নিয়ে বের করেছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসেছে। বাকিদের ব্যাপারে অভিযান চলছে।’
র্যাব বলছে, আসামিদের অপকৌশল : ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের সামনে আইনগত প্রক্রিয়া মেনে ওই অভিযান চালানো হয়েছিল। এখন আসামিরা রেহাই পেতে অপকৌশল চালাচ্ছে। ট্রাকে কিছু গম পাওয়া যায়, যেটা মামলার এজাহারে এবং জব্দ তালিকায় সেভাবেই দেখানো হয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে জানা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তা ২৫ থেকে ৩০ টন। আমরা তো ২১৫ টন জব্দ করেছি। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে যা পাওয়া গেছে সবই ওএমএস।’ তিনি আরো বলেন, “অভিযানে উদ্ধার হওয়া বস্তায় লেখা ছিল ‘সুলভমূল্যে বিক্রির জন্য’। এটা ওএমএসের বস্তায় লেখা থাকে। ডিলাররা আদালতে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করুক।”
সারওয়ার আলম বলেন, ‘পুলিশ লেখা গাড়িতে এবং পুলিশের রেশনের ডিও নিয়ে ওরা ওএমএসের চাল-আটা পাচার করে। এ কারণে অনেক সময় কেউ ধরে না। এটা ওদের কৌশল। এখন সেটাই বড় আকারে করছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর অভিযান হলো। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলাম যে কোনো প্রমাণ থাকলে দেখান। তাঁরা দিতে পারেননি। তিন দিন পরে মামলা হলো। এরপর দুদকে রিপোর্ট দিলাম। এখন এত দিন পর সামান্য কিছু রেশনের বৈধ মাল বলে পুরো ব্যাপারে বলা অপকৌশল ছাড়া কিছু নয়।’
আঙুল ফুলে কলাগাছ আলমগীর সিন্ডিকেট : তেজগাঁও সিএসডির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মী কালের কণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ওএমএসের পণ্য কালোবাজারি ‘ওপেন সিক্রেট’ কারবার। আর এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন ট্রেড ইউনিয়ন বা সিবিএ নেতারা। সুবিধা পাচ্ছেন সিএসডির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ডিলারদের নিয়ে কালোবাজারির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন আলমগীর সৈকত। কয়েক বছর আগেও তিনি ছিলেন সিএসডির কুলি। এখন ঢাকায় তাঁর পাঁচটি বাড়ি ও জমি আছে। চড়ে বেড়ান নিজের দুটি গাড়িতে। সিএসডির পাশে ১১টি অবৈধ ঘর আছে আলমগীর সৈকতের, যেগুলো ভাড়া দিয়ে ‘লাখ লাখ টাকা’ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এখন ট্রেড ইউনিয়নের উপদেষ্টা এই শ্রমিক নেতা কয়েক বছর আগে হয়েছেন ডিলার। চাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক তিনি। সিএসডিতে মজুরিভিত্তিক শ্রমিকরা আলমগীরের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আলমগীরের ঘনিষ্ঠ ডিলার ও সিবিএ নেতা তোতা মিয়াও সিএসডির পাশে ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছেন। আটার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন নারায়ণগঞ্জের ডিলার সোহাগ।
কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, সিবিএ নেতা দুদু মিয়া গত ছয় বছরে দুইবার সভাপতি হয়েছেন। তিনি তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী বস্তিতে ছিলেন ২০ বছর। তবে কালোবাজারি সিন্ডিকেটে জড়িয়ে এখন কোটিপতি। বাগানবাড়ীতে সরকারি জায়গা দখল করে দুদুও গড়ে তুলেছেন টিনশেড বাড়ি। আসামি লোকমান বর্তমান সিবিএর সাধারণ সম্পাদক। ওএমএসের চাল-আটা বিক্রির সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা তিনিও। লোকমান ও দুদু মিয়া সরাসরি ঢাকার বাইরে চাল ও আটা পাঠান। দিনে ট্রাকে পণ্য বোঝাই করা হলেও বের করা হয় রাতে।
মামলার আসামি হয়েছেন মোহাম্মদপুরের এমন এক আড়তদার বলেন, ‘ট্রাকের চালকরাই বিক্রি করে। রাতে এসে জানতে চায় লাগবে কি না। রাজি হলে রাতেই নিয়ে আসে।’ কয়েকজন ডিলার জানান, সফি মিয়া, নাসির মিয়া, সারোয়ার মিয়া, মাহবুবুল হক, হাশেম, সাইদুল, মানিক, হানিফ, ফারুক, জামাল ও লোকমান নামে ডিলার ও আড়তদার ওএমএসের চাল-আটা কেনেন। টঙ্গীর সাইফুল সেলিম, কচুক্ষেতের মুসা, মিঠু ও আসাদ এবং শ্যামবাজার ও সোয়ারীঘাটের কয়েকজন আড়তদার ওএমএসের চাল-আটা কিনে প্রকাশ্যে বিক্রি করেন।
তবে কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর সৈকত বলেন, ‘পুরান ঢাকায় পৈতৃক একটি বাড়ি আছে আর একটি গাড়ি আছে। ২০০৮ সাল থেকে ডিলারশিপ আছে আমার।’ তিনি আরো বলেন, ‘সিএসডির পাশে আমার কোনো ঘর বা দোকান নেই। এগুলো মিথ্যা তথ্য।’
ডিলারদের ঘরে বসিয়ে টাকা দেয় ওরা : পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ডিলার কালের কণ্ঠকে বলেন, সিএসডি থেকে ওএমএস ও রেশনের সামগ্রী বাইরে যায়, এটা ‘ওপেন সিক্রেট’। যদি সঠিক তদন্ত হয়, তবে দেখা যাবে বেশির ভাগ ডিলারশিপ ঠিক নেই। তাঁরা দাবি করেন, ঢাকায় ৩৪০ জন তালিকাভুক্ত ডিলার আছেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ১৪১ জন ডিলারকে চাল ও আটা বিক্রির জন্য দেওয়া হয়। তবে প্রতিদিন মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাকে চাল-আটা বিক্রি হয়। বাকিগুলো চলে যায় কালোবাজারে। এ জন্য ঘরে বসেই টাকা পান বাকি ডিলাররা। ট্রাকের চালকরা বিক্রি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা দিয়ে দেয়। কোনো প্রকার কাজ না করেই প্রতি টনে পাঁচ হাজার টাকা হিসাবে দেওয়া হয় ডিলারদের। আলমগীর সৈকত এটা নিয়ন্ত্রণ করেন। ডিলাররা জানেনও না কোথায় তাঁদের ট্রাক।
সিএসডির আরেকটি সূত্রের দাবি, ডিলারদের তালিকা ধরে তদন্ত করলেই দেখা যাবে বেশির ভাগই ভুয়া। নামে-বেনামে ডিলারশিপ নিয়েছেন অনেকে। তাঁরা লোকজনের মাধ্যমে ঘরে বসে টাকা পেলেই খুশি থাকে। মূল টাকা আসলে সিন্ডিকেটের পকেটে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার নেতা ও সিন্ডিকেটের হোতা আলমগীর সৈকত বলেন, ‘ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। একটা ডিলারি করে অনেকের পোষায় না। তাই অথরাইজ (অনুমোদিত) ব্যক্তি দিয়ে দেয়। তারা বেচাকেনার কাজ করে। আমরা সহায়তা করি।’
- কার্টসিঃ কালের কণ্ঠ/ সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৮
আইনটির বিষাক্ত কাঁটা সরিয়ে নিন
সৈয়দ আবুল মকসুদ
মানবসম্পদ উন্নয়নসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্জন এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশের চেয়ে ভালো। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুললেও আইনশৃঙ্খলার অবস্থাও অনেক দেশের তুলনায় ভালো। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি নির্মম, এমন অভিযোগ অবশ্য দেশের বাইরে থেকেও প্রায়ই ধ্বনিত হচ্ছে। এর মধ্যে চতুর্দিকের আপত্তি ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত উপেক্ষা করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হয়েছে। এই আইন নিয়ে দেশের মানুষ শুধু নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইনটি সংসদে পাসের তিন দিন আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশেই প্রথম এ আইন প্রণীত হতে যাচ্ছে।’ [বাংলাদেশ প্রতিদিন]
যেহেতু বাংলাদেশেই প্রথম এ ধরনের আইন হতে যাচ্ছে, সাইবার অপরাধ দমনে এ ধরনের আইন ভূমিকা রাখবে। সুতরাং আইনটি এমন হতে পারত যা বিশ্বে দৃষ্টান্তস্থানীয়। কিন্তু তার পরিবর্তে আইনটির গুণগত মান ও নৈতিক দিক নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আরও বলেছেন, তথ্য অধিকার আইনে বর্ণিত নাগরিক অধিকার সমুন্নত রেখেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হচ্ছে। দুর্নীতিবিরোধী সংবাদ পরিবেশনের জন্য এ আইন অন্তরায় হবে না, তবে দাপ্তরিক গোপনীয়তা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
আইনটি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এটি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গেই যে সাংঘর্ষিক তা–ই নয়, সংবিধানের মূল নীতিরও পরিপন্থী। দুর্নীতি কমিয়ে আনা সরকারের অঙ্গীকার কিন্তু ‘দাপ্তরিক গোপনীয়তা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য’ বলে বিবেচিত হওয়ায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা সংবাদকর্মীদের পক্ষে অসম্ভব হবে। তাতে সরকারের জবাবদিহির জায়গাটি দুর্বল করে ফেলা হলো এবং সরকার হবে দুর্নীতিবান্ধব। ফলে সরকারের অনেক অর্জন আড়ালে পড়ে যাবে।
আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৩৯তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, এই আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষা না দিয়ে সরকার তা থেকে সরে গেছে। আইনটি সংশোধনের সুপারিশ করেছেন তাঁরা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে সরকারকে এই আইন কার্যকর করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) শনিবার এক বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে স্বাক্ষর না করার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে আহ্বান জানিয়েছে। আইনটি সংসদে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছে তারা। রাষ্ট্রপতিকে লেখা সিপিজের এশিয়া সমন্বয়ক স্টিভেন বাটলার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আইনটি বলবৎ হয়ে গেলে বাংলাদেশের সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তা বিঘ্নিত হবে। প্রস্তাবিত আইনটির বিভিন্ন ধারা কীভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করবে, তা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন—ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গর্ব করার মতো ইতিহাস বাংলাদেশের রয়েছে। সেই সঙ্গে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় শক্তিশালী প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে এ পরম্পরা হুমকির মুখে পড়বে। এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় গণতান্ত্রিক সমাজে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি রয়েছে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এই আইনটি রচনা করার সময় থেকেই মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা দেয় এবং আইনটি যাতে মতপ্রকাশের পথে বাধা না হয় এবং সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক না হয়, সে জন্য উদ্বেগ জানানো হয়। এর অনেক আগে থেকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। কারণ, এই ধারাটি একটি শক্তিশালী কালাকানুন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর দেখা গেল সেই ৫৭ ধারার উপাদানগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার অর্থ হলো এই এক গ্লাস শরবতের ভেতরে বিষ ছিল। সেই শরবতের পাত্রটি সরিয়ে ফেলা হলো, কিন্তু শরবতটি ভাত, ডালের বাটি, ভাজি এবং দুধের মধ্যে সমপরিমাণে মিশিয়ে খেতে দেওয়া হলো। তাতে যে বিষক্রিয়া কমবে, সে সম্ভাবনা নেই। বরং যোগ হয়েছে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের নতুন বিষ।
সবচেয়ে দুঃখজনক ও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো আইনটির ধারাগুলো নিয়ে যখন দেশে-বিদেশে কথা হচ্ছে, তখন আমাদের সংসদের সরকারি ও আধা-সরকারি দলের ১০ জন সদস্যও আইনটির ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেন না। কখনো আইনটি যদি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশোধন করা হয়ও, একদিন এ দেশের মানুষ বর্তমান সংসদের ৩৫০ জন সাংসদকে মনে রাখবে এই জন্য যে তাঁদের কারও ভিন্নমত দেওয়ার সৎসাহস ছিল না। তাঁদের জন্য বিষয়টি অতি অগৌরবের। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে সরকারি দলের বহু সদস্য কোনো কোনো প্রশ্নে স্বাধীন মত প্রকাশ করেন। সরকারের সমর্থক সবাই যদি সব ব্যাপারে একমত পোষণ করেন, তাহলে সংসদে কোরামের প্রয়োজন নেই—একজন মাত্র সদস্য উপস্থিত থাকলেই যথেষ্ট।
এই বিপজ্জনক আইনটির যাঁরা দেশের ভেতর থেকে বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা সরকারের অনেক ব্যাপারে সমালোচনা করলেও তাঁদের কেউ কেউ সরকারবিরোধী নন। এই আইন দ্বারা কে কখন অকারণ নিগ্রহের শিকার হবেন তা বলা যায় না। এই আইনের প্রশ্নে এখন যাঁরা নীরবতা অবলম্বন করছেন, এর বিষাক্ত তির একদিন তাঁদের এবং তাঁদের প্রিয়জনদের জীবনকেও ক্ষতবিক্ষত করতে পারে।
যেকোনো আইন রাষ্ট্রের সব মানুষের জন্য, কিন্তু এই–জাতীয় আইন শুধু ক্ষমতাসীনদের অবারিত সুযোগ করে দেয়। তার বাইরে যারা তাদের সবার গলার ওপরে ধারালো তলোয়ারের মতো ঝুলতে থাকে। পুলিশকে গ্রেপ্তারের যে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, তাতে এ আইনের অপব্যবহার অবধারিত, ইচ্ছা করলে যে কেউ তার শত্রুকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
এই আইন একাডেমিক গবেষকদের জন্যও খুব বড় বিপজ্জনক। বিশেষ করে যাঁরা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক কাজ করবেন, তাঁদের জন্য আইনটি বিপজ্জনক। কোনো বিষয়ে একই তত্ত্ব চিরকাল টেকে না। তাতে যোগ হয় নতুন নতুন উপাদান। সভ্য সমাজ তাতে আপত্তি করে না, বরং মেনে নেয়। ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়। ইতিহাসের ভুলগুলো দূর হয়। সত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। গ্যালিলিও বা কপারনিকাসের শাসকদের মানুষ মনে রাখেনি, তাঁরা চিরস্মরণীয়। নতুন কথা বলতে দিতে হবে। সে কথা যদি আমরা বিশ্বাস না–ও করি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষাক্ত কাঁটা থেকে শুধু সাংবাদিকেরা মুক্তি চান না, সব মানুষ চায়। আমরা আশা করব, তার আগেই আইনটি থেকে বিষাক্ত কাঁটা সরিয়ে নেওয়া হবে।
- সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক
- কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৮
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার এহসান দেশ ছেড়েছেন
- ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন এহসান
- এহসানের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়
- ভারতে এহসানের চোখে অস্ত্রোপচার করানো হয়
- এহসান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল
- গত মাসে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় যান
- বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের ৫ নেতা-কর্মী হলে থাকছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্যাতনের শিকার এহসান রফিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছেড়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। অথচ ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের যে সাত নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন হলেই থাকছেন। এমনকি যাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, তিনিও হলে থাকেন। একই ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকেও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কৃত প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন।
সহপাঠীর কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন এহসান রফিক। তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এতে এহসানের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়। তাঁর কপাল ও নাক ফেটে যায়।
আহত এহসানকে দেশের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁর বাবা মো. রফিকুল ইসলাম। এরপর ভারতের শংকর নেত্রালয়ে তাঁর চোখে এক দফা অস্ত্রোপচার করানো হয়। রফিকুল একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।
মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কী হয়, তা নিয়ে একটু ভীতি কাজ করছিল। কখন আবার কী হয়ে যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। এহসান নিজেই চাচ্ছিল না সেখানে যেতে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তাই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাঁকে বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে এহসান আহত হওয়ার পর নিরাপত্তাসংকটের কারণে আবাসিক হলের বরাদ্দ পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে সেটি সম্ভব নয় বলে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
২০১৭ সালে ড. িজগাবো কানো জুডো প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিলেন এহসান। তাঁর পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছবি: সংগৃহীত
হল কর্তৃপক্ষের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ওমর ফারুককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া উর্দু বিভাগের মেহেদী হাসান ওরফে হিমেল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রুহুল আমিন ব্যাপারী, দর্শন বিভাগের আহসান উল্লাহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিউল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের ফারদিন আহমেদকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তাঁরাও প্রত্যেকে হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং হল শাখার সহসভাপতি আরিফুল ইসলামকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সহপাঠী ও হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সামিউল ও ফারদিনকে মাঝেমধ্যে এসএম হলে আসতে দেখা যায়। স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক ও দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত মেহেদী হাসান ১২ নম্বর কক্ষে থাকেন। এই কক্ষটি হলের অনেকগুলো রাজনৈতিক কক্ষের একটি। সামিউলও মাঝেমধ্যে এই কক্ষে অবস্থান করেন। এ ছাড়া আরিফুল ইসলাম ১৫২ নম্বর কক্ষে ও আহসান উল্লাহ ১৭৮ নম্বর কক্ষে থাকেন। রুহুল আমিন থাকেন বারান্দায়। হার্ডবোর্ড দিয়ে সেখানে একটি কক্ষের মতো করে নিয়েছেন।
তাঁরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নতুন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হওয়ার পর তাহসান আহমেদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে রাজনীতি করেন। ফেসবুকে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে এই আরিফুল ও রুহুল আমিনের পৃথক ছবি আছে। তাঁরা নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার প্রথম আলোকে বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য বহিষ্কৃত কেউ হলে থাকতে পারবে কি না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। থাকলে তিনি তা মেনে চলবেন। এহসান রফিকের ঘটনায় স্থায়ীভাবে কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কাগজপত্র যাচাই না করে তিনি কিছু বলতে পারছেন না বলে জানান।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, যে সময়ের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়, ওই সময়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সুবিধা পাবে না, এটাই নিয়ম।
- কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৮
Subscribe to:
Posts (Atom)