Search

Wednesday, November 28, 2018

কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই

সম্পাদকীয়

সবার জন্য সমান সুযোগ

গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তার গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করবে না। তিনি তাঁদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেহেতু তাঁদের নির্বাচনী আইনকানুন ও আচরণবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি পড়া দরকার। কেননা, কোনো প্রার্থী বা তাঁর অনুসারীরা আইন ভঙ্গ করলে ত্বরিত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এর পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা দেওয়াও তাঁদের দায়িত্ব। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেভাবে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

সিইসি আগের দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাঁদের অধীনে থেকে কাজ করছেন। সেটাই যদি হবে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা কীভাবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সুলুকসন্ধান করেন। তফসিল ঘোষণার পর স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তাঁরা সেটি করতে পারেন না। সিইসি নিজেও তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তত্ত্বতালাশ না করার কথা বলেছেন।

এখানে জরুরি প্রশ্নটি হলো, যে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিষয়ে অযাচিত খোঁজখবর করছেন, তাঁদের সম্পর্কে কে খোঁজখবর নেবেন? সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁরা যে চরম পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন, তার কিছু বর্ণনা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যে উঠে এসেছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে সিইসি যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, সেটি সত্যিই তাঁর চাওয়া থাকলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। তাঁর কথা সেই পুরোনো বাংলা প্রবাদ ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’–এর কথাই মনে করিয়ে দেয়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও নির্বাচন কমিশনাররা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন, বাস্তবে যার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক সম্পর্কে যে অভিযোগ এসেছিল, নির্বাচন কমিশনের সচিব সেটি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এ রকম কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এই ধরনের অভিযোগ আনার জন্য তিনি বিএনপিকে সতর্কও করে দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, তথ্য–প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা উচিত নয়। তবে সেই সঙ্গে কমিশনকে এ কথা মনে রাখতে হবে যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে না-হক অভিযোগ যেমন কাম্য নয়, তেমনি সমস্যাগুলো উপেক্ষা করারও সুযোগ আছে বলে মনে করি না। নির্বাচন কমিশন সচিব যে ত্বরিত গতিতে বিএনপির অভিযোগের জবাব দিলেন, অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে সেটা প্রত্যাশিত। তফসিল ঘোষণার পরও মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যেভাবে গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে, সেসব বিষয়ে তিনি নিশ্চুপ কেন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেদিন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার কথা বলেছেন, সেদিনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কাজের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন স্থানে খবরদারি করলেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি সিইসির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছে। ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। তখনই সিইসি যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগের কথা বলেছেন, তার আসল পরীক্ষা শুরু হবে।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৮,২০১৭

পণ্য পরিবহন - অন্যতম ব্যয়বহুল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

শামীম রাহমান

দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রধান করিডোর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ে মহাসড়কটি দিয়ে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাবদ ব্যবসায়ীদের গুনতে হয় কিলোমিটারপ্রতি সাড়ে ৫ টাকার বেশি (৬ দশমিক ৭ সেন্ট)। হরতাল, অবরোধের মতো সংকটকালীন সময়ে তা ১৫ টাকা (১৮ সেন্ট) পর্যন্ত উঠে যায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ে পণ্য পরিবহনে যে ব্যয়, তাও বিশ্বের সর্বোচ্চ। বিভিন্ন দেশের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভারতে সড়কপথে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ২ দশমিক ৭ সেন্ট। এছাড়া পাকিস্তানে এ ব্যয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১ সেন্ট, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রে ৪ দশমিক ৮, ব্রাজিলে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৮ ও অস্ট্রেলিয়ায় ৩ দশমিক ৬ সেন্ট। কিলোমিটারপ্রতি প্রতি টন পণ্য পরিবহনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ে বেশি খরচ পড়ে কেবল আফ্রিকার কিছু দেশে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে অত্যধিক ব্যয়ের কারণ হিসেবে মহাসড়কটি দিয়ে পণ্য পরিবহনে বাড়তি সময় লাগার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে বন্দরে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয়কেও আরো একটি কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা যানজটকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, যানজটে যেমন ট্রিপের সংখ্যা কমছে, তেমনি বাড়ছে পরিচালন ব্যয়, যা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া হিসেবে আদায় করে নিচ্ছেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের মালিকরা।

বাংলাদেশের সড়কে সর্বোচ্চ ২৪ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান চলতে পারে। যানবাহনের ধরন (ধারণক্ষমতা) অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন পরিবহন মালিকরা। তবে ভাড়ার নির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই। দরকষাকষিই ভাড়া নির্ধারণের একমাত্র মাধ্যম।

বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক মকবুল আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যই বেশি পরিবহন করা হয়। স্বাভাবিক সময়ে ১০ টন ধারণক্ষমতার একটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান ভাড়া দেয়া হয় গড়ে ১৫ হাজার টাকায়। এ হারকে ভিত্তি ধরে বিভিন্ন ধারণক্ষমতার পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হয়। তবে যেহেতু এখানে দরকষাকষির একটা ব্যাপার থাকে, তাই ভাড়ার পরিমাণ সামান্য এদিক-ওদিক হতে পারে।

ঢাকা থেকে সড়কপথে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬৬ কিলোমিটার। এ পথে ১০ টনের একটি ট্রাকের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে এক টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া গুনতে হয় ৫ টাকা ৬৩ পয়সা বা ৬ দশমিক ৭ সেন্ট।

টনপ্রতি পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি এ ব্যয় ভারতের যেকোনো করিডোরের চেয়ে বেশি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লি-মুম্বাই করিডোরে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় ১ দশমিক ৬ সেন্ট। দিল্লি-চেন্নাই করিডোরে এ ব্যয় ২ সেন্ট, দিল্লি-কলকাতায় ২ দশমিক ১, মুম্বাই-চেন্নাইয়ে ২ দশমিক ১, মুম্বাই-কলকাতায় ২ সেন্ট ও চেন্নাই-কলকাতা করিডোরে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় ২ সেন্ট।

অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানে সড়কপথে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৫ ও সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১ সেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে এ ব্যয় ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৮ সেন্ট, চীনে ৪ থেকে ৬ ও অস্ট্রেলিয়ায় ৩ দশমিক ৬ সেন্ট।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় সড়কপথে নিয়মিত পণ্য পরিবহন করে এফএমসিজি কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির জিএম (সাপ্লাই চেইন) হাবিবুর রহমান বলেন, আমার কাছে মনে হয়, ঢাকা-চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এখানে আমাদের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটারের কম। তার পরও এত বেশি খরচের কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক সময় আবার যানবাহন সংকট দেখা যায়। তখন পরিবহন ব্যয় দু-তিন গুণ বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক পার্টনারদের সঙ্গে কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীরা পরিবহন বাবদ বাড়তি খরচে অনেকটা বাধ্য হন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ব্যবসায়ীদের কিলোমিটারপ্রতি সাড়ে ৫ টাকার বেশি গুনতে হলেও সংকট দেখা দিলে ১৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এর চেয়ে বেশি ব্যয় হয় আফ্রিকার কিছু দেশে। এছাড়া মিয়ানমারের পাহাড়ি এলাকায় প্রতি টন পণ্য পরিবহনে খরচ হয় ১০ সেন্টের মতো। তবে দেশটির আন্তর্জাতিক করিডোরে এ ব্যয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ে কম, ৫ দশমিক ৮ সেন্ট।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিবহন হয় পোশাকপণ্য। পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, পণ্য পরিবহন বাবদ আমাদের অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হয়। এর অন্যতম কারণ পরিবহনে বেশি সময়ক্ষেপণ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনে যেখানে ৫-৬ ঘণ্টা লাগার কথা, কোনো কোনো সময় তা ১২-১৪ ঘণ্টা লেগে যায়। এর ওপর আছে বন্দরের জট। এ কারণেও পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যায়। দেখা যায়, পণ্য পরিবহন বিলম্বের কারণে বেসরকারি আইসিডিতে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে পণ্য রেখে দিতে হয়। এ সময় যোগ হয় নানাবিধ চার্জ। বন্দরে পণ্য পৌঁছাতে যদি আট লেনের সড়ক থাকত, তাহলে পোশাক রফতানিতে আরো গতি আসত। সড়কের পাশাপাশি নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও বাণিজ্যের সময় অনেক কমে আসত। সার্বিকভাবে আমি মনে করি, পণ্য পরিবহনে আধুনিক সড়ক, নৌ ও রেলপথ এখন সময়ের দাবি।

শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নয়, সমগ্র বাংলাদেশেই সড়কপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেশি বলে তথ্য দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে সড়কপথে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ব্যবসায়ীদের ভাড়া পরিশোধ করতে হয় ৫ দশমিক ৫ সেন্ট। আর্জেন্টিনায় এ ব্যয় ১ দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৮ সেন্ট, ব্রাজিলে ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৮ এবং ফ্রান্স ও ভিয়েতনামে ৫ সেন্ট খরচ পড়ে।

যানজটকে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ৫-৬ ঘণ্টার পথ যেতে যদি ১২-১৩ ঘণ্টা লেগে যায়, তাহলে পরিবহন মালিকরা বেশি ভাড়া আদায় করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তখন তাদের পরিবহনের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে। সেটা তো তারা পণ্যের মালিকের কাছ থেকেই তুলে নেবেন। বাংলাদেশে গণপরিবহন বলি বা পণ্য পরিবহন বলি, সবই চালাচ্ছেন ছোট ছোট মালিক। তারা একটা-দুটো ট্রাক কিনে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েই ছেড়ে দেন। এগুলোর চালকদের কোনো ট্র্যাকিং ব্যবস্থা নেই। জবাবদিহিতারও অভাব রয়েছে। আবার পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে খাতটিতে অদক্ষতা ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাচ্ছে।

দেশে পণ্য পরিবহনের ৮০ শতাংশ হয় সড়কপথে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমদানি-রফতানি পণ্যের সিংহভাগই পরিবহন হয় এ মহাসড়ক দিয়ে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনা গেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা-চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও হয়েছে। আমরা হিসাব করেছি, এটি নির্মাণে ৭০ হাজার কোটি টাকা লাগতে পারে। পরিকল্পনা করা হচ্ছে পিপিপির ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ২৮,২০১৮ 

দুই মাসে দুই লাখ কোটি টাকার প্রকল্প পাস

দীন ইসলাম 

বাস্তবে অর্থ বরাদ্দ নেই। তবুও গত দুই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দুই লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ‘কাগুজে অনুমোদন’ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০শে অক্টোবর ২৪টি, ৪ঠা নভেম্বর ৩৯টি এবং ৬ই নভেম্বর ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। সব মিলিয়ে শেষ তিন একনেক বৈঠকে রেকর্ড পরিমাণ ১০৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমন গণহারে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা কথাবার্তা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কোনো প্রকল্প নেয়া হলে সেই প্রকল্পের সমীক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু গত দুই মাসে একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের অর্ধেকেরই সমীক্ষা করা হয়নি। অনেক প্রকল্পই অনুমোদনের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করা হয়েছে।

এ ছাড়া কঠিন শর্তের ঋণ নিয়েও বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে দেশ ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ অর্থবছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)  বৈঠকে ৮-১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আসছিল। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এর মধ্যে গত ২৯শে জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকে নয়টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। ব্যয় ধরা হয় সাত হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৭৫১ কোটি ৬৬ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৫৮ কোটি ৫৭ লাখ এবং  বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করা হবে। ৭ই আগস্টের  বৈঠকে উপস্থাপন করা হয় ১১টি প্রকল্প, যার সবগুলো পাসও হয়। ব্যয় ধরা হয় ছয় হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৪১৬ কোটি ১৬ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে মাত্র সাত কোটি ৯৮ লাখ টাকা খরচ করা হবে। ১১ই আগস্ট প্রকল্প পাস হয় ১৮টি। ব্যয় ধরা হয় ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। গত ২রা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৩ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন পায়। বৈঠকে ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি ৩৭ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ২৭ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাঁচ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। 

১১ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে ১৮ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৪ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪২ কোটি ৬২ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে তিন হাজার ৯৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ৪ঠা নভেম্বর একনেক সভায় ৩৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন করা হবে ৬৬ হাজার ৪৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে ৩১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ও ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে। সর্বশেষ ৬ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সংশোধিত ও নতুন মিলিয়ে ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে নতুন ২৮ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ হাজার ২৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২৪ হাজার ৮৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে ৫৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। 

অবশিষ্ট ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। গণহারে এসব প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প দ্রুত ছেড়ে দেয়ার চাপ রয়েছে। এ জন্য যাচাই বাছাইয়ে যথেষ্ট সময় না পেলেও বাধ্য হয়েই প্রকল্পের কাজ সারতে হয়। অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে কোয়ারি (তথ্যানুসন্ধান) করা যায়নি। ফলে প্রকল্পের অনুমোদন হলেও বাড়তি ব্যয় বরাদ্দের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এদিকে প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য অর্থ ছাড় করা নিয়ে এখন দৌড়াদৌড়ি চলছে। এ জন্য এখন মেয়র ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা পরিকল্পনা কমিশনে ভিড় করছেন। তবে অর্থ না থাকায় বেশিরভাগ প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসনিক অনুমোদন মিলছে না। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৮,২০১৭ 

অ্যাটর্নি জেনারেলের মন্তব্যে অনেকেই স্তম্ভিত

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মন্তব্যে অনেকেই স্তম্ভিত। কারণ তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য। অথচ খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় পাননি। রায় না পেলে তিনি আপিল করতে পারছেন না। জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় তিনি ৭ বছরের দণ্ড পেয়েছেন। সেই দণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছেন এবং তাতে তিনি স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু সেই বিষয়ে আদালত এখনো সিদ্ধান্ত দেননি। 

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টুয়েন্টিফোরডটকম বলেছে, ‘বেগম খালেদা জিয়া এখন খালাস পেলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হলে, পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলেও অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।তিনি বলেন, এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে, কিন্তু সংবিধানের ধারা কোনো আদালতেরই অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।’

এ পর্যায়ে  মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিচারিক আদালতে সাজা হলেও, আপিল চলমান অবস্থায় তারা নির্বাচন করেছেন, সেটা বেআইনি কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার এর আগে সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশে প্রাকটিস হলো আপিল করেই নির্বাচন করা যাবে। কারণ আপিলকে ধরা হয় চলমান বিচারের অংশ।   

অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এমন কিছু বলছেন, যা আদালতে এর আগে কাউকে বলতে শোনা যায়নি। প্রবীণরা বলেছেন, তারা নতুন কিছু শুনছেন। কারণ আপিল বিভাগের রায় আছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কে যোগ্য বা অযোগ্য সেটা ঠিক করবে ইসি। আর সেখানে যদি কোনো সংবিধান লংঘনের ঘটনা ঘটে তখন তা কেবল উচ্চ আদালতে আসতে পারে। এখন তিনি যা বলেছেন, তা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার শামিল। এমনকি তার বক্তব্য আপিল বিভাগের রায় দ্বারা সমর্থিত নয়। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী যেকোনো রিটার্নিং অফিসার বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বৈধ বলে ঘোষণা দিতে পারেন। তারা দেবেন কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু আইন তাকে বাধা দিবে না। কেউ তা মনে করলে তার বৈধতা ইসিতে আপিলে চ্যালেঞ্জড হবে।

ইসির নেয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা রিটে পরীক্ষা না করতেও আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে। বৈধতা পরখ করতে চাইলে ভোটের পরে করতে হবে, ভোটের আগে নয়। তফসিলের পরে এগুলো নির্বাচনী বিরোধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি দেখবেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্টের বিচারকদের নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল অনধিক ৬ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করবেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অতীত নজির হলো একই দণ্ডিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সকালে একরকম আবার বিকেলে বিপরীত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এভাবে তিনি জিতেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। টানা ৫ বছর দিব্যি কেটে গেছে, আর সেটাই বর্তমান অ্যাটর্নি  জেনারেল নিজেই অবলোকন করেছেন।

এবার হাইকোর্টে আপিল করা বিএনপির পাঁচ নেতা হলেন আমানউল্লাহ আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব। এই পাঁচ নেতার নির্বাচনে অংশ নেয়াও এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যারা আবেদন করেছিলেন তারা সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত। তারা তাদের দণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেনি। তাদের ৫ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি। এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয় তা হবে আমাদের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। কাজেই আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ থাকলো না বলে আমি মনে করি।’

খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, এটি সাংবিধানিক বিধিবিধান। যে কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিংবা সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদে থাকতে পারবেন না যদি কিনা ওই ব্যক্তি ২ বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিলাভের পর ৫ বছর সময় অতিবাহিত না হয়। এখানে শর্ত ২টি। তাহলো- তিনি যদি দণ্ডিত হন তাহলে পারবেন না। আর মুক্তিলাভের পর ৫ বছরের আগে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কাজেই খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে দুইটি প্রতিবন্ধকতাই রয়েছে। কোনো আদালত তার রায় দিয়ে এই সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করতে পারেন না।’   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনবিদরা বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল যা বলেছেন, সেটা  যেকোনো মীমাংসিত আইন নয়, তার জ্বলন্ত প্রমাণ তিনি নিজেই। কারণ সরকারদলীয় দণ্ডতিদের সংসদ সদস্যপদ টেকাতে তিনি যা খালেদা জিয়ার বিষয়ে বলেছেন, ঠিক তার উল্টা অবস্থান নিয়েছেন। এখন তিনি আকস্মিক তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। কিন্তু বড় কথা হলো, সাবজুডিশ বিষয়ে নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট বক্তব্য রেখে তিনি সংবিধান ও আদালতের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। 

বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পর আপিল করে সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকার নজির আছে। দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেন। আর সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ২০১৬ সালের ৩রা নভেম্বর সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদ প্রথম আলো অনলাইনকে গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কারণ, নিম্ন আদালতের দণ্ডই চূড়ান্ত দণ্ড নয়। নিম্ন আদালতের দেয়া দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করবেন। আবার হাইকোর্টের দেয়া দণ্ড বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবেন খালেদা। মওদুদ আহমদ মনে করেন, খালেদার আপিল চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পরও আপিল করে সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকার নজির আছে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৭,২০১৮ 

Govt's bank borrowing soars ahead of polls

AKM Zamir Uddin

The government has started borrowing heavily from banks in November after holding back in the previous three months to meet its growing cash requirement ahead of the national election in the next month. In the first 27 days of the month, the government borrowed Tk 3,042 crore from commercial banks, according to data from the Bangladesh Bank.

In contrast, Tk 1,373 crore was borrowed between the months of July and October. Last month, it did not borrow any amount but repaid Tk 1,163 crore to banks to adjust its previous debts.

The government initially set a net borrowing target of Tk 1,042 crore from banks for this November but it later revised the amount, keeping an option to borrow another Tk 2,000 crore.

There is no particular reason for the sudden spike in government borrowing this month other than the growing cash requirement centring the upcoming parliamentary election, experts and bankers said.

The government might spend its borrowed money to implement its election-centric programmes, said AB Mirza Azizul Islam, a former finance adviser to a caretaker government.

“I do not see any large amount of emergency cash requirement for the government right now but only election-oriented needs.”

The government will try to implement its annual development projects as much as possible before the election, which might be one of the core reasons for the sudden borrowing, Islam said.

Between the months of July and September, the government failed to achieve its targeted revenue collection, which might have fuelled bank borrowing, he said.

The borrowing spree will go on in December as it is the election month, said a BB official.

The banking sector is facing a cash crunch in recent months and the crisis may be exacerbated by the huge government borrowing from banks, said Syed Mahbubur Rahman, chairman of the Association of Bankers, Bangladesh, a platform of the private banks' chief executives.

The implementation of the annual development programme is the main reason for the hike in government borrowing, said Rahman, also the managing director of Dhaka Bank.

The government has set a bank borrowing target of Tk 42,029 crore for fiscal 2018-19 to finance the budget deficit.

Last fiscal year, the government borrowed only Tk 5,666 crore from the banking sector against the target of Tk 28,203 crore.

  • Courtesy: The Daily Star /Business/ Nov 28, 2018

Children's Death on Roads - A danger not even acknowledged

Tuhin Shubhra Adhikary

When it comes to unnatural deaths of children, road accident is the second biggest killer, right after drowning, but there is no specific government policy or action for preventing this or educating children about traffic rules. Road safety has caused quite a stir in the country recently but children dying on roads did not get specific attention. And the number of child casualties on roads has been increasing over the years, according to Bangladesh Shishu Adhikar Forum, a child rights group.

At least 549 children were killed and 79 injured in road crashes in the first 10 months of this year, a sharp rise from 357 of entire 2017, it added.

The Forum, a platform of 269 non-government organisations working for child rights, said according to the data it compiled based on media reports, death by drowning topped the list, 573 between January and October this year.

Abdus Shahid Mahmood, director of the Forum, said discussions on different child issues were common but children's death on roads never came to the fore.

“We all know that a large number of people are killed in road accidents but most of us are unaware that many of the victims are children,” he told The Daily Star.

“More worryingly the number of victims [children] is increasing day by day. It should have been a major issue, but sadly many people don't even know this,” he added. 

The lack of education about traffic rules among the minors is the main reason behind such a huge number of deaths, he said, stressing the need for creating awareness among them about road signs and other traffic rules.

“It is quite natural that children would not know traffic laws. Many adults also don't know the rules because in our education system these issues are not taught at the elementary level,” he added.

Apart from death, many children become disable permanently, becoming a burden on their families. Many have to take up begging for a living, activists say. 

Around half the road accident victims in the country are pedestrians, said Shahriar Parvez, a lecturer at the Accident Research Institute (ARI) at Buet.

Most of the accidents happen in rural areas where roads lack space for pedestrians, he added.  

“Many children in rural areas go to school on foot and that's why they are more vulnerable to road accidents,” he told this newspaper.

Schoolchildren in city and town areas are vulnerable to accidents at intersections.

Most students are not aware of traffic laws, he said, citing a study done in 2016.

“In many countries, these issues are incorporated in textbooks at school level. But it is yet to be adopted in our country,” he said.

The ARI has developed a booklet on the dos and don'ts on streets for children which can be distributed in schools, Shahriar said, adding that a proposal has already been sent to the government.

Existing textbooks do contain some information but those are not enough, he said.

The Prime Minister's Office (PMO) has directed the National Curriculum and Textbook Board (NCTB) to incorporate the rules in textbooks, he added.

However, a top NCTB official said the PMO was yet to issue an official directive.

  • Courtesy: The Daily Star/ Nov 28, 2018

Tuesday, November 27, 2018

আওয়ামী লীগের পক্ষেও এখন বলা সম্ভব হবে না যে, বিএনপি একেবারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’


এবারের নির্বাচনে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের ব্যবহার’ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে মতামত জানিয়েছেন দেশের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এবং অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এখন তো নির্বাচনকালীন পরিবেশ, এখন মানুষ চায় ভিন্ন কিছু। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের কাছে ভবিষ্যৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যখন বড় কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে না, তখন তারা এ বিষয়গুলোকে পুঁজি করে।’

‘আসলে মানুষ তার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েই সবচেয়ে বেশি সচেতন। জাতির অগ্রগতি ও মর্যাদা বাড়ানোর যে বিষয়, এখন সেগুলো তো কোনো অর্থ বহন করছে না। ধর্ম হলো অনন্তকালের বিষয়। এর কোনো নতুন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আর মুক্তিযুদ্ধ একটি গৌরবজনক বিষয়। একটা স্বাধীন জাতি যে নতুন সভ্যতায় গড়ে উঠবে, একটা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে সবকিছুই সুষ্ঠুভাবে থাকে। ধর্মেরও স্বাধীনতা থাকে, মুক্তিযুদ্ধেরও চেতনা থাকে,’বলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।

‘নির্বাচনের সময় এই দুটি বিষয়ের ব্যবহার আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। এগুলো প্রতি মুহূর্তের ব্যাপার। নির্বাচন আসলে এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার মানেই হচ্ছে এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত। নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই। ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে ভোট চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘আগে একপক্ষ ধর্মকে ব্যবহার করতো আর একপক্ষ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতো। এখন বোধহয় উভয়পক্ষই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দুটোই ব্যবহার করছে। নির্বাচনের সময় ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।’

তার মতে, ‘রাজনৈতিক দলগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা নিজেদের আদর্শ নিয়ে কোনো কথা বলে না, ইশতেহারের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে কী করবে তা বলা হয় না। তারা শুধু বলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করব। কিন্তু, সেটা আসলে কী? এই চেতনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আবার তারা যা বলে এবং করে, তাও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়।’

‘তার মানে, দলগুলো নিজেরা ভীষণ হতবিহ্বল অবস্থার মধ্যে বাস করছে এবং জাতিকেও ঘোল খাওয়াচ্ছে। আমার মতে, জনগণের সঙ্গে এই অবিচার অপরাধের শামিল। তারা জনগণকে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারছে না। ফলে জনগণও নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের রায় দিতে পারে না। খালি বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারলেই তো আর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে যায় না। নির্বাচনের পলিসি, লক্ষ্য ও ভিশন থাকে, যা রাজনৈতিক দলগুলো ঘোলাটে করে দেয়। এই কাজের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায় কিংবা ক্ষমতায় যেতে চায়। এটাই তাদের চতুর কৌশল, যেখানে কোনো স্বচ্ছতার বালাই থাকে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করার বিষয়টি একাকার হয়ে যায়নি। বিএনপির মৌলিক দর্শন পরিবর্তন হয়নি ঠিকই তবে আমার কাছে অবাক লাগছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেকেই প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। এবার ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে তারা কী বলেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।’

তার মতে, ‘আওয়ামী লীগের যে একটা সেক্যুলার চিন্তা-ভাবনা ছিল, তারও পরিবর্তন হয়েছে এবং সেটি পরিস্থিতির কারণে। তারা বুঝতে পারছে, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গে না নিলে জনমনে আশঙ্কা থেকেই যাবে যে, আওয়ামী লীগ ধর্মবিরোধী দল।’

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা ধর্ম নিয়ে এখন বড় কোনো বিতর্ক হচ্ছে না, তার তিনটি কারণ হচ্ছে, গত ১০ বছরে বিএনপির ভেতরেও একটি চিন্তা ভাবনা এসেছে। বিএনপি বুঝতে পারছে এখন তারা পুরনো রাজনীতিতে আর থাকতে পারবে না। তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। আর এখন যদি বলা হয় যে, আওয়ামী লীগ ধর্মবিরোধী দল, তাহলে তা আর হালে পানি পাবে না। হেফাজত ইসলাম জনসভা করে প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে সংবর্ধনা দিল তাতে প্রমাণিত হয় যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে তাদের মনেও কোনো ভয় নেই।’

তিনি মনে করেন, ‘এটি আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর, যে তারা আদর্শের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কিন্তু, ভোটের যুদ্ধে এটি কাজে দিতে পারে। আমি এটিকে আদর্শগত পরিবর্তন বলছি না, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক কৌশলের পরিবর্তন হয়েছে। আবার এটিও হতে পারে যে, আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মও এখন এই বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছে।’

‘অপরদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষেও এখন বলা সম্ভব হবে না যে, বিএনপি একেবারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এক জোটে নির্বাচন করায় তাদের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করছে এবং পরবর্তীতেও করবে বলে মনে হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, এটা বিএনপির জন্য সাপে বর হয়েছে। এখন তারা জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করছে না। তারা ঐক্য করছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে।’

‘তিন নম্বর কারণ হচ্ছে, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিএনপি বুঝতে পারছে, একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি পশ্চিমের দেশগুলো চায়। পশ্চিমে যেহেতু জঙ্গিবিরোধী মনোভাব প্রবল, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পশ্চিমের জন্য অন্তত গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। ফলে, বিএনপিকেও তাদের অতীত অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। ওরা আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে পারবে না,’ যোগ করেন সৈয়দ মনজুর।

তিনি মনে করেন, ‘প্রায় আড়াই কোটির মতো তরুণ ভোটার, এরা একেবারেই ভিন্ন প্রজন্মের মানুষ। এরা অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি, বিভিন্ন চেতনা নিয়ে চিৎকার, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা একেবারেই পছন্দ করে না। এটা তো অস্বীকার করতে পারবে না বিএনপি। যার ফলে তারা এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। এটাও কৌশল। কিন্তু, এই কৌশলটাও যদি ভালোভাবে প্রয়োগ করা যায়, একসময় সেটাও আদর্শে পরিণত হতে পারে।’ 

  • Courtesy: The Daily Star/ Bangla online/ Nov 26, 2018

প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে কলঙ্কিত হতে চাই না - মাহবুব তালুকদার

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কলঙ্কিত হতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গতকাল সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তিন দিনব্যাপী আচরণবিধি সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ের শেষদিনে এমন কথা বলেন তিনি। ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, বাকি তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ আরো কয়েকজন বক্তব্য দেন। 

নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক যাত্রার কথা উল্লেখ করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হলো নির্বাচন। যারা  দেশ পরিচালনা করবেন, নির্বাচনের মাধ্যমে তাদেরকে বেছে নেয়ার প্রক্রিয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন। এই দায়িত্ব অত্যন্ত গৌরবের।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের  গণতন্ত্রের অগ্রসৈনিক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপনারা আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। এই নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, বলা হয়ে থাকে নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। এই কথাটি ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। আইন যদি সবার জন্য সমান না হয়, সবার জন্য সমানের নিশ্চয়তা না দেয় তাহলে সেটি আইন নয়, কালো আইন। আপনারা আইনের প্রতিপালক, কালো আইনের নন।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি দৃঢ়ভাবে কার্যকর, আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের সাজা দেয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্তব্য পালন করতে হবে। যাতে করে ভোটারদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের চাওয়া অত্যন্ত সামান্য বলেও জানান কমিশনার।

তিনি বলেন, একজন ভোটার যেনো নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, নিজের ইচ্ছামতো যাকে খুশি ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন- এটুকুই আমাদের চাওয়া। রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ সামান্য চাওয়াটুকুও অসামান্য কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য মাহবুব তালুকদারের। তিনি বলেন, সবকিছু সত্ত্বেও ভোটারদের সামান্য চাওয়াটুকু যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল, সবগুলো রাজনৈতিক জোট এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

‘কোন বনেগা এমপি’ এখন সর্বোচ্চ আলোচনার বিষয়। দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশন সবসময়ই আপনাদের পাশে আছে।

এবারের নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীও এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, স্বাভাবিক, শুদ্ধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না- তা হতেই পারে না। আমরা কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কলঙ্কিত হতে চাই না। নির্বাচনে যেকোনো দল বা প্রার্থী জয়ী বা পরাজিত হতে পারে। তবে ম্যাজিস্ট্রেটদের খেয়াল রাখতে হবে দেশবাসী যেন পরাজিত না হয়। বক্তব্যের শেষের দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। সে কখনো করে না বঞ্চনা।’ 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৭, ২০১৮ 

সরকারের সঙ্গে জালিয়াতি - সাংসদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকীয়

সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের সঙ্গে জালিয়াতি করে ভাড়া বাবদ গত এক বছরে প্রাপ্য অর্থের চেয়ে ১১ কোটি টাকা বেশি আদায় করেছে। সরকারের সঙ্গে জালিয়াতি করা সহজ নয়, সবাই তা করতে পারে না। যারা পারে, তাদের নানা রকমের জোর থাকে: টাকার জোর, রাজনৈতিক ক্ষমতার জোর ইত্যাদি। দেখা যাচ্ছে, সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের মালিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদ আসলামুল হক। ঢাকার কেরানীগঞ্জের বছিলায় অবস্থিত তাঁর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সেইসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অন্যতম, যেগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সরকারের সরবরাহ করা তেল বা গ্যাস ব্যবহার করে। সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে তেল–গ্যাস সরবরাহ করে বিনা মূল্যে। অর্থাৎ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের জ্বালানি বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না, তাঁরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন নিখরচা। সেই বিদ্যুৎ সরকার তাঁদের কাছ থেকে কিনে নেয়। সরকার তাঁদের বিদ্যুতের দাম তো পরিশোধ করেই, উপরন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও অর্থ দেয়। শুধু তা–ই নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী ভাড়াও তাঁরা পেয়ে থাকেন, যেটাকে বলা হয় ক্যাপাসিটি পেমেন্ট।

সাংসদ আসলামুল হকের মালিকানাধীন সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে এই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট আদায় করার ক্ষেত্রে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেছে। এই অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকারি সংস্থা পিডিবির সূত্র থেকে, যেটি বেসরকারি মালিকানাধীন রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে সরবরাহ করে। দাবি করা হয়, উল্লিখিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনক্ষমতা ১০৮ মেগাওয়াট। কিন্তু পিডিবির সূত্র বলছে, এটি কখনোই ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। 

গত বছরের জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ গড় দৈনিক উৎপাদন হয়েছে ২ তারিখে, পরিমাণ ছিল ৮১ দশমিক ৭২ মেগাওয়াট। আর ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ গড় দৈনিক উৎপাদন ছিল ৯৮ দশমিক ১৮ মেগাওয়াট। ইউনিটভিত্তিক ক্যাপাসিটি পেমেন্টের হিসাবে গত বছর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাওনা হয়েছিল ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু কেন্দ্রটি নিয়েছে ৯১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ১১ কোটি টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে অন্যায্যভাবে।

কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব হলো? গত শনিবার এ বিষয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, পিডিবির সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামান গত বছরের ৯ মার্চ এই মর্মে ঘোষণাপত্র দিয়েছেন যে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনক্ষমতা ১০৮ মেগাওয়াট। কিন্তু তা যে সত্য নয়, তা তো পিডিবির হিসাবেই প্রমাণিত। 

কিংবা বলা যেতে পারে, প্রকৃত উৎপাদনক্ষমতা যতই হোক না কেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবে কখনোই ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে তাদের ১১ কোটি টাকা অতিরিক্ত নেওয়ার দায় অবশ্যই পিডিবির ওপরও বর্তায়। পিডিবির সচিব এই দায় চাপাতে চেয়েছেন সংস্থাটির কারিগরি টিমের ওপর। কিন্তু সে সুযোগ একদমই নেই। পিডিবির সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে; অনৈতিকতার চর্চা হয়ে থাকলে তাঁদের শাস্তির পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে যে অতিরিক্ত ১১ কোটি টাকা ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে, তা ফেরত নিতে হবে।

সাংসদ আসলামুল হকের মালিকানাধীন আরও দুটি কোম্পানি দুটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে যথাক্রমে ২০১১ ও ২০১২ সালে। এক বছরের মধ্যেই সেগুলোর নির্মাণকাজ শেষ করার বিধান ছিল, কিন্তু এই দীর্ঘ সাত–আট বছরে উভয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিধান অনুযায়ী সেগুলোর অনুমোদন বাতিল এবং কোম্পানি দুটির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হোক।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ২৭,২০১৮

প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইসির সিদ্ধান্ত ইউপি ও পৌর আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক


স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা মেয়ররা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) ও স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়ররা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিতে হবে।

২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত মেয়র ও চেয়ারম্যানের পদে থেকে কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে এ বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের লিখিত কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি, মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসির মতে, লিখিত নির্দেশ দেওয়া হলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ আদালতে গিয়ে মামলা করে নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে পারেন।

এই বিষয়ে একই দিন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগের নির্বাচনগুলোয় অনেকেই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পদে থেকে নির্বাচন করেছেন এবং এ–সংক্রান্ত মামলায় একই বিষয়ে আদালত থেকে দুই ধরনের নির্দেশ পাওয়া গেছে। তবে কমিশন মনে করে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদ লাভজনক। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সরকারের লাভজনক পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না। এই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে।

কিন্তু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইন ইসির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না। পৌরসভা আইনের ১৯/২ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি মেয়রপদে থাকার অযোগ্য হবেন। ৩৩ ধারায় বলা আছে, কোনো মেয়র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মেয়রের পদ শূন্য ঘোষিত হবে। 

ইউনিয়ন পরিষদ আইনে বলা আছে, নির্বাচিত চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে  চেয়ারম্যান পদে থাকার যোগ্য হবেন না। যার অর্থ, ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পদে থেকে কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁদের চেয়ারম্যান বা মেয়রের পদ ছেড়ে দিতে হবে। 

কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইসির নির্দেশনা কার্যকর হলে ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়ররা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।

তবে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি আদালতে গেলে ফল ভিন্ন রকম হতে পারে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন পৌর মেয়র ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ইসির নির্দেশ না মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হন। পরে এ–সংক্রান্ত মামলায় রায়ে আদালত সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে রায় দিলেও পৌর মেয়ররা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে রায় দেন। 

এই রায়ের ওপর ভিত্তি করেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে চারজন পৌর মেয়র পদে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই চার সাংসদ হলে নোয়াখালী-৩ আসনে মামুনুর রশীদ, ফেনী-২ আসনে নিজাম উদ্দিন হাজারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও ভোলা-২ আসনের আলী আজম। তাঁরা যথাক্রমে চৌমুহনী, ফেনী, রোহনপুর ও দৌলতখান পৌরসভার মেয়র ছিলেন। 

যদিও এই চার সাংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও পৌর মেয়রের পদ আগলে রেখেছিলেন। এই বিষয়ে একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘একই সঙ্গে সাংসদ ও পৌর মেয়র, চার আইনপ্রণেতার বেআইনি কাজ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরদিন প্রজ্ঞাপন জারি করে চার পৌরসভার মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করেছিল।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ২৭,২০১৮