Search

Wednesday, December 12, 2018

১৮ জেলায় হামলা, সংঘর্ষ


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে দেশের ১৮ জেলায় বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর। হামলা হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মইন খানের প্রচার মিছিলেও। কোথাও কোথাও বিরোধী জোটের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালী সদর আসনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরে নির্বাচন নিয়ে বাকবিত-ার জের ধরে হামলায় নিহত হয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। হামলা সংঘর্ষের সময় নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বগুড়ায় বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। 

খুলনায় বিএনপির প্রার্থী বকুলের সমর্থকদের ওপর হামলা ও যশোরে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ীতে ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী সভা প- হয়ে যায় ক্ষমতাসীনদের হামলায়। ঝিনাইদহে বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। ময়মনসিংহের ৩টি আসনে বিএনপির গণসংযোগ-মিছিলে হামলা, অফিস ভাঙচুর হয়। সোমবার রাত ও গতকাল মঙ্গলবার এসব ঘটনা ঘটে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ হামলার খবর নিশ্চিত করলেও কারা গাড়িতে হামলা করেছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। গতকাল বেলা ১টার দিকে সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান জানান, মির্জা ফখরুল নির্বাচনী গণসংযোগকালে দানারহাট এলাকায় পথসভা করছিলেন। এ সময় একদল লোক হঠাৎ এসে হামলা চালায়। তার গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের লোকজন বলে তিনি দাবি করেন। হামলায় ৬টি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর হয়। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দুই-তিনটা গাড়ি ভাঙচুর হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্তের পর জানা যাবে।

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি নেতার বাড়ি, ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস, ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কবিরহাট বাজারের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে সকালে কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পথসভা করার কথা ছিল। সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে ঘোষবাগ থেকে বিএনপির মিছিল আসার সময় কবিরহাট দক্ষিণ বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সংঘর্ষ পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। কবিরহাট পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। পরবর্তীতে হামলাকারীরা তার বাড়ি, বিএনপির নির্বাচনী অফিস ও বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর করে। হামলায় কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা চৌধুরী লিটন, জাসাসের সভাপতি আবদুস সাত্তার, নরোত্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ, কবিরহাট পৌর যুবদলের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন ও প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোমিত ফয়সলসহ অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সকালে পথসভায় আসার পথে উপজেলার ভূঁইয়ারহাট, শাহজীরহাট, কাচারিরহাট, কালামুন্সী বাজার, ব্যাপারীহাটসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মিছিলেও হামলা করা হয়। এদিকে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সকালে কবিরহাট দক্ষিণ বাজারের নবারুণ একাডেমির সামনে বিএনপির মিছিল থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইসমাইলসহ আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। বিএনপির হামলায় জলিল, ইসমাইলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ইসমাইলকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাছান জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সহিংসতা এড়াতে বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার ধুনটে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর এবং চারটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর জের ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গতকাল ধুনট পৌর শহরের কলাপট্টি এলাকায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ ঘটনার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামে ধানের শীষের ভোট চাওয়ায় নাদিম ও মাসুম নামের দুই বিএনপি কর্মীকে মারপিট করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় যুবদল নেতা মুরাদ এর প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাত ১২টার দিকে মুরাদের বাড়িতে পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। মুরাদ জানান, অগ্নিসংযোগে তার পরিবারের লোকজন প্রাণে বাঁচলেও বাড়ির আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়। স্থানীয়রা জানান, বগুড়া-৬ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ গতকাল সকালে ধুনটে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। বেলা ১১টার দিকে চারটি জিপ এবং শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রামের যুবদল নেতা মুরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।

তার গাড়িবহর ধুনট পৌর শহরের কলাপট্টি এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিরাজের গাড়িবহরে হামলা করে। গাড়িবহরে থাকা চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় এবং জিপসহ আরো ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। খবর পেয়ে ধুনট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার নেতাকর্মীদের নিয়ে হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জিএম সিরাজ অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে তার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা কুলখানি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে: ময়মনসিংহের ৩টি আসনের বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগ, মিছিল ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থী-সমর্থকরা। এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়, প্রার্থীর গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গতকাল এসব পৃথক হামলায় আহত হয়েছেন প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলুসহ কমপক্ষে ৩৫ জন নেতা-কর্মী। মুক্তাগাছা আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ জাকির হোসেন বাবলু জানান, বিকেলে গণসংযোগকালে উপজেলার ৪নং কুমারগাতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে আমি ও ড্রাইভার আবদুল্লাহসহ প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হন। তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা। অপরদিকে ভালুকা উপজেলার বাটাজোড় বাজার এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করে ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ৯নং কাচিনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুরের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে দাবি করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। 

এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, টিভি ও আলমারি ভাঙচুর করা হয়। এতে ৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে জানান ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর সমর্থকরা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভালুকা থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং পাল্টাপাল্টি মিছিলকে কেন্দ্র করে একটু গ-গোল হয়েছে। তবে এটা বড় কিছু না। এছাড়াও জেলার ফুলপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকা গতকাল বিকালে ধানের শীষ ও নৌকা সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হন। জানা যায়, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ারের পক্ষে বিকেলে ধানের শীষের একটি মিছিল বের হলে হামলা চালায় নৌকা সমর্থকরা। এ সময় দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বাসস্ট্যান্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিন (৩৫), মোশারফ হোসেন (৫২), আবদুস ছাত্তার (৩৫), মিলন (৩৫), মোস্তফা কামাল খান (৩৫), পাপু (১৬)সহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকা কামারখন্দ উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর এবং নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নেতাকর্মীদের মারপিট করা হয়েছে। সোমবার এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। গতকাল জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু লিখিত বক্তব্যে বলেন, সোমবার বেলা ১২টার দিকে কামারখন্দ উপজেলা বিএনপি অফিস ভাঙচুর করে। সন্ধ্যায় শিয়ালকোলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারপিট ও জিব্রাইলের বসতবাড়ি ভাঙচুর করে। রাতে ধুকুরিয়া গ্রামে ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও তার গরুর খামারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। অপরদিকে, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, নিজেরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্যের ওপরে দোষ চাপাতে চাচ্ছে। তারা হামলা ও মারপিটের অভিযোগ করলেও তাদের কোনো নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি, অথচ আওয়ামী লীগের অন্তত ৪-৫ জন নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীকে মোবাইলে ও সশরীরে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও তাঁবু ছিঁড়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টন। সংবাদ সম্মেলনে জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, সোমবার সাহারবাটি এলাকায় বিএনপির প্রচারণা মাইক ভাঙচুর করে ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। গতকাল সকালেও নেতাকর্মীরা যখন বিএনপি অফিসে আসতে থাকেন, তখন ৮-১০ জন লোক হঠাৎ অফিসে হামলা চালায় ও নির্বাচনী তাঁবু ছিঁড়ে ফেলে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জ পশুহাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় শরীফুজ্জামানের দু’টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। হামলায় দু’জন আহত হয়েছেন বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গায় ফিরছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শরীফুজ্জামানের গাড়িবহর আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জ পশুহাট এলাকায় পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তাদের গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালায়। রাতে চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এ সময় সঙ্গে থাকা যুবদল নেতা হাবলু ও মিশু আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকাতেও বিএনপির প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবুর নির্বাচনী মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সন্ধ্যায় জীবননগর উপজেলা শহরের চার রাস্তার মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ধানের শীষের মিছিলটিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনের বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগ নেতারা। সোমবার রাতে খালিশপুর থানার ১৫নং ওয়ার্ডের জংশন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতা নাজু, সুমন, আরিফ, জনি, রাজু ও মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তক্বির নেতৃত্বে ৫০-৫৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত যুবদল নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা করে। এ সময় ১৫নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা লিটন হোসেন লিটু ও রুহুল আমিন হাওলাদারসহ ৫-৭ জন গুরুতর আহত হন। এ ব্যাপারে খালিশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, গভীর রাতে যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকায় টানানো ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত দু’টার দিকে শহরের চৌরাস্তা মোড়, এমএম আলী রোড, মাইকপট্টিসহ আশপাশের এলাকায় টাঙানো ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা। যশোর-৩ আসনের বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর সন্ধ্যায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ধানের শীষের পোস্টার টানানো হয়। নির্বাচনী বিধি মেনেই প্রচারণার অংশ হিসেবে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়। সোমবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে এসব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে তারা ক্ষান্ত হয়নি তারা তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী সভা প- করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে রাজবাড়ী বাজারের খলিফাপট্টিতে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির উদ্যোগে শহরের খলিফাপট্টিতে ধানের শীষ প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নির্বাচনী সভা করার কথা থাকলেও সভা শুরুর পূর্বে দুপুরে ও বিকালে পরপর ২ বার কতিপয় দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় ঘটনাস্থলেই ১০ জন আহত হন। বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনী সভাকে বানচাল করতে দুপুর ৩টায় দুর্বৃত্তরা একবার সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করে ও পরে বিকালে সভা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আরেক দফা দুর্বৃত্তরা পুনরায় উপস্থিত জনতার ওপর হামলা চালালে ১০ জন আহত হন। এর আগে সোমবার গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে বিকালে এক নির্বাচনী সভা করার কথা থাকলেও সেখানেও দুর্বৃত্তদের হামলায় তা প- হয়ে যায়। এ সময় সভাস্থল ভাঙচুর করা হয়।

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী-২ পলাশ আসনে বিএনপির প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকালে নির্বাচনী এলাকার আমদীয়া ইউনিয়নের বেলাব নামক স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ৪টি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ছাড়া এ ঘটনায় ছাত্রদল ও যুবদলের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পলাশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, সকালে মঈন খান নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন। দুপুরে চরনগর্দী পার্টি অফিসে মতবিনিময় শেষে আমদীয়া ইউনিয়নে গণসংযোগ করতে গেলে বেলাব নামক বাজারে পৌঁছলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাও মিয়ার নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ি বহরে হামলা চালায়।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে পৌর সদরের শক্তিপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হামলা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, বিএনপি প্রার্থী ড. এমএ মুহিতের বাড়ির গেট, চেয়ার টেবিল, জানালার গ্লাস, ১টি মোটরসাইকেল ও ১টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। 

শাহজাদপুর উপজেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে তিনি ও তার বড় ভাই শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এমদাদুল হক নওশাদ জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে (সাবেক বিএনপি অফিস) বসে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছিলেন। এ সময় একদল যুবক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের দু’ভাইকে বেধড়ক মারপিট করে। এর কিছু সময় পরই তারা বিএনপি প্রার্থী ড. এমএ মুহিতের শক্তিপুরের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও এ সংর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা সরকারি দলের সমর্থকদের এ হামলার জন্য দায়ী করেন। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, খবর পেয়ে আমাদের ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বড় কোনো অঘটন ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে সিংড়ায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দাউদার মাহমুদের নির্বাচনী পোস্টারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাতে উপজেলার ৮ নম্বর শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও একইদিন সন্ধ্যায় শুকাশ ইউনিয়নের জয়কুড়ি বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও আমিনুল ইসলাম নামের এক যুবদল নেতাকে মারপিটের অভিযোগ করেন বিএনপির নেতারা। শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি গ্রামের উজানপাড়া ও ভাটোপাড়ায় প্রায় শতাধিক ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া বাজারে গতকাল সন্ধ্যার দিকে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। নৌকার স্লোগান দিয়ে ধানের শীষের বহরে থাকা বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। হামলার সময় আসাদের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইল-২ আসনের ধানের শীষের নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ অভিযোগ করেছেন, ২০ দলীয় জোটপ্রার্থী এনপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এজেডএম ফরিদুজ্জামান। এ আসনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফরিদুজ্জামান অভিযোগ করেন, গতকাল বিকালে নড়াইলের লোহাগড়া বাজার এলাকায় তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এ ভাঙচুর চালানো হয়। এ হামলায় অন্তত ৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে তার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালানো হয়। এদিন বিকালেই এখানে কর্মিসভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পর ফরিদুজ্জামান বিকালে তার লোহাগড়ার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ। বিকাল ৪টা পর বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতা সাটুরিয়া উপজেলার কালুশাহ মাজার জিয়াতর করতে গেলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আ. খালেকের নেতৃত্বে স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ বিএনপির নেতৃবৃন্দের। এ ঘটনায় ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর কন্যা আফরোজা খান রিতা গতকাল বিকালে তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নামার আগে সাটুরিয়া কালুশাহ মাজার জিয়াতর করতে যান। ৪টার দিকে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে আফরোজা খান রিতার বহনকারী গাড়িটি মাজারের রাস্তায় থামানোর পরপরই সেখানে জড়ো হয়ে থাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে গাড়িটি ঘেরাও করে। এ সময় আফরোজা খান রিতাকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের সেøাগান দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। পরে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতাকে ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হাতে হাত রেখে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কালুশাহ মাজারে নিয়ে যায়। পেছন পেছন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরাও সেখানে যায়। আফরোজা খান রিতা মাজার জিয়ারত শেষে নিজের বহনকারী গাড়িতে উঠতে গেলে আবারও হট্টগোল বাধিয়ে দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এ সময় তিনি নিজের দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। 

একপর্যায়ে আফরোজা খান রিতার কর্মী ও সমর্থকদের লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। পরে সেখান থেকে আফরোজা খান রিতার গাড়িটিকে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী নিরাপদে নিয়ে যায়। সাটুরিয়া থানার সামনে রিতার গাড়িবহর থামিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সাহায্য চান। পরে সেখান থেকে সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে প্রচারণায় গেলে, সেখানেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ একই কায়দায় বাধা দেয় এবং নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেও পারেনি। তখন গাড়িবহরটি দরগ্রাম অভিমুখে যাত্র করলে পেছনে পেছনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সেøাগান দিয়ে বেশ কিছু দূর যায়। বাধা ও হামলার কারণে আফরোজা খান রিতা তার নির্ধারিত গণসংযোগ স্থগিত করে মানিকগঞ্জের গিলন্ডা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। প্রচারণায় হামলার ঘটনায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানা গেছে।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় দলের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে উপজেলার খালগোড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩টায় খালগোড়া বাজারের রাঙ্গাবালী জাহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা মাঠে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে এক সভার আয়োজন করা হয়। পরে একইসময় ওই বাজারের বালুর মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিব্বুর রহমান মহিবের সমর্থকরাও সভার আয়োজন করেন। এতে দুই পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

একপর্যায়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। দফায় দফায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের সংঘর্ষে এনামুল ইসলাম লিটু, মজিবর রহমান, মশিউর রহমান শিমুল, সোহেল মাতুব্বর, জসিম হাওলাদার, বাবু তালুকদার, খালিদ বিন ওয়ালিদ, মহসিন মৃধা, রাজিব রহমান, জাকির, মিজানুর রহমান, শওকত প্যাদা, মহসিন হাওলাদার, মাসুম হাওলাদার, নাজমুল হোসেন, রাব্বি হাওলাদার, স্বপন ও নিয়াজ আকনসহ অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করেন।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী সদর আসনে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ওয়ালিউল হক। ওয়ালিউল হক অভিযোগ করেন, সোমবার রাত ১২টার দিকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এরপর এসব পোস্টার, ফেস্টুন পদদলিত করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ 

দেশজুড়ে ধরপাকড়


নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ধরপাকড়। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ বিরোধীদলীয়  নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করার দাবি ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু মোটেই মানা হয়নি সে দাবি। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের দিনও সারা দেশে অন্তত দুই শতাধিক বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকালও অব্যাহত ছিল গ্রেপ্তারের সে ধারাবাহিকতা। 

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়ার কথা তাদেরই বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত এক মাসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপিসহ অঙ্গদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অন্তত এক হাজার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কোনো কোনো জায়গায় গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের থানায় নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি প্রার্থীদের উঠান বৈঠক, নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও গণসংযোগকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছে। হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে। তবে গ্রেপ্তার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা সবাই ফৌজদারি মামলার আসামি। গোয়েন্দা তথ্যে নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্য যারা নাশকতা চালাতে পারে এবং অতীতেও যাদের বিপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল তাদের নজরদারি ও পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

বিএনপির তথ্য মতে, চট্টগ্রাম-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরীর বাড়িতে নির্বাচনী সভা চলাকালে বাড়ির ১০০ গজ দূরে র‌্যাব-পুলিশের ১০-১২টি গাড়ি অবস্থান নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় আসলাম চৌধুরীর ভাই নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সভা শেষে ফেরার পথে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল আলম জহির, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম, পাহাড়তলী বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, আব্বাস রশিদ, সীতাকুণ্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিমসহ ২৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে জামালপুরের মেলান্দহে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে একটি মাজার জিয়ারত শেষে ফেরার পথে দুর্মূট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ রাশেদুুজ্জামান অপুর বাসা ঘেরাও বিএনপি নেতা সাহেব আলী মেম্বার, আলমগীর মেম্বার, জিয়াউল, যুবনেতা মোতালেব, হযরত আলী ও হেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলা বিএনপি নেতা ও ইউপি মেম্বার ফারুক, ঝিনাইগাতি উপজেলার মালিঝিকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর ও ছাত্রদল নেতা নূর মোহাম্মদকে একটি উঠান বৈঠকে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শেরপুরের এসপি’র নির্দেশে জেলা বিএনপির অফিসের সামনে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য টাঙ্গানো সামিয়ানা গুঁড়িয়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এ ছাড়া নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইমাম হাসান আবু চাঁন ও দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মজিবুর রহমান এবং কুষ্টিয়া সদর থানা ছাত্রদল নেতা শফিকুর রহমান সাবু ও জিয়ারখি ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আবদু হান্নানের নির্বাচনী সভা চলাকালে পুলিশ বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। কোনো মামলা ছাড়া গ্রেপ্তারের পর চাঁদপুর জেলা ২০ দলীয় জোট নেতা বিল্লাল হোসেন নিয়াজীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ভৌতিক মামলা। অন্যদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামানসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।      
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক কমিশনার আবদুল আলিম নকীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুর রহমান, মিরপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আবদুল, সাধারণ সম্পাদক ওয়াইজ উদ্দিন ও যুগ্ম সম্পাদক একেএম লুৎফল বারী মুকুলকে সোমবার ঢাকা জজকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে তাদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরে ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশীদ, শেরেবাংলানগর থানার বিএনপির জামাল, সেলিম, অলি, শামীম, নুর জামাল, অলিউল ইসলাম, শামীম হোসেন, শেখ রাসেল, রনি, জাহাঙ্গীর হোসেন, হিমু ও শানুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে গতকাল দুপুরে দয়াগঞ্জ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি ও কদমতলী বিএনপির সভাপতি মীর হোসেন মিরু, কমিশনার মোজাম্মেল ও বাদশাসহ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগের দিন গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বংশাল থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাজী আবুল হাশেম শাহজাহান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা খোকন ও কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল নেতা সাহিদকে গ্রেপ্তার করে। রোববার রাত আটটায় রাজধানীর বিজয়নগর থেকে নেছারাবাদ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব রায়হান ও নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান শরীফকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ২০০টি মিথ্যা মামলার মধ্যে গত ১৪ই নভেম্বর হাইকোর্ট ১৪টি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। ৯ই ডিসেম্বর সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে হাইকোর্ট বিভাগের এ্যাপিলেট বিভাগ কোনো কারণ ছাড়াই সে ১৪ মামলার জামিন বাতিল করে দেন। তিনি টাঙ্গাইল-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। 

এদিকে দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জে নাশকতার মামলার অভিযোগে দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সোমবার দুপুরে সিলেট-জকিগঞ্জ মহাসড়কের হেতিমগঞ্জ নামক স্থান থেকে ২নং গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরী এবং ৩নং ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফয়ছলকে তার অফিসের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন) মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে ফোন করে থানায় নিয়ে আটক করা হয়। তবে মামলায় উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. ইদ্রিস আলী, নায়েবে আমীর মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজ, আবদুল কুদ্দুস ও পাবনা সদর উপজেলা জামায়াতের অফিস সহকারী ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলা জামায়াতের তিন নেতা সামাদ শেখ, কফিলউদ্দিন, হোসাইন শেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফেনীতে বিএনপি প্রার্থীর মিছিল শেষে ফেরার পথে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম মিলন, সদর থানা সম্পাদক মিলন ও সদস্য নয়নকে গ্রেপ্তার করেছে ফেনী সদর থানা পুলিশ। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগের রাতে রাজাপুর থানা পুলিশ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস সিকদার ও ছাত্রদল নেতা গোলাম আজমকে গ্রেপ্তার করে। যশোর জেলার চৌগাছা থানা পুলিশ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও পাশাপোল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল কাদের ও চৌগাছা পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শহীদ ইকবাল হোসেন ও তার দুই ছোট ভাই যুবদল সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক ও তুহিন হাসানসহ বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের ৩৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৮৪ জনের নামে একটি নাশকতার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশ ফারুক হোসেনসহ ১২ বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। 

এর আগে রোববার রাতে দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজ, হাকিমপুর উপজেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মির্জা, চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী, হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউপি চেয়ারম্যান মেফতাউল জান্নাত, পার্বতীপুরের রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাদো, নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ডাবলুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসানুল মারুফ শিমুল, ময়মনসিংহের পাগলা বিএনপি নেতা আবদুল হামিদ চেয়ারম্যান, বাগেরহাটের কচুয়া বিএনপি নেতা আল মামুন, ভোলা লালমোহন থানা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিনসহ ৫ জন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর বিএনপি নেতা আবুল কালাম, কিবরিয়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের দারুস সালাম থানা বিএনপির সভাপতি রহমান হাজীকে বাসায় না পেয়ে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুমিল্লার লাকসাম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা-৯ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তাজুল ইসলাম খোকনকে গতকাল ডিবি পুলিশ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তুলে নিয়ে ভাষানটেক থানায় হস্তান্তর করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সবুজবাগ বিএনপি নেতা মিন্নত আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তিনি এখন স্থানীয় একটি হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন। 

এদিকে সারা দেশের বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা সবাই ফৌজদারি মামলার আসামি। ফৌজদারি অপরাধে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নাই। সে যে দলেরই হোক না কেন। 

গোয়েন্দা তথ্যে নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে যারা নাশকতা চালাতে পারে এবং অতীতেও যাদের বিপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল তাদেরকে নজরদারি ও পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যদিও বিরোধী জোটের অভিযোগ রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে ধরপাকড় করা হচ্ছে। সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অপারেশন) জয়দেব কুমার ভদ্র মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ২০১৩ সালের আন্দোলন থেকেই বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক বা নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এখনো যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদেরকে পুরাতন ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে আমাদের সিলেট অঞ্চলে মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো মহলকে নজরদারিতে রাখা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে নির্বাচন বানচাল বা নাশকতার পরিকল্পনা করছে এমন ব্যক্তি, নেতাকর্মী ও গোষ্ঠীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে নয় ফৌজদারি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ফৌজদারি অপরাধ করলে যে দলের হোক না কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। 

এ ছাড়া নির্বাচনে নাশকতা, ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা যেকোনো ধরনের সহিংস আচরণ করতে পারে এমন কিছু নেতাকর্মীদের আমরা চিহ্নিত করে রেখেছি। অতীতে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল মূলত তাদেরকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি ও গ্রেপ্তার করছি। আবার অনেকের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা রয়েছে তাদেরকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। যে সকল এলাকার ভোট কেন্দ্রে আগের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না সেগুলো নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। কোনো তালিকা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে কিনা এমন প্রশ্নে এই ডিআইজি বলেন, তালিকা একটি চলমান কাজ। পুলিশ সব সময়ই একটি তালিকা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু সেই তালিকা সব সময় ঠিক তাকে না। কখনো তালিকাভুক্তদের সক্রিয়তা কমে যায়। আবার তালিকার বাইরে থাকা অনেকের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হয়। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ 

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ইসিতে হাফিজ ও খোকন

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গতকাল তারা পৃথকভাবে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতির কথা জানান। ভোলাসহ সারা দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। জাতীয় নির্বাচনের আগে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার ঘোরতর অবনতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। নির্বাচনের আগে, অবৈধ অস্ত্র জমা নেয়া ও এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে নিশ্চুপ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অবৈধ অস্ত্রধারীরা ঢাকা ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলেও জানান মেজর (অব.) হাফিজ। তিনি বলেন, তারা ইতিমধ্যে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপরে ক্রমাগত অত্যাচার-নির্যাতন বেড়েই চলেছে।

জেলা যুবদলের সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সেলিমসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ভোলা-৩ এলাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা। সেখানে জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। রাস্তাঘাটে অস্ত্রধারীরা টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দেখেও দেখছে না। ৩৫ জন যুবদল কর্মী আহত হওয়ার পর উল্টো এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, রাজধানী থেকে সন্ত্রাসীরা গিয়ে ভোলার সংসদীয় আসনে অবস্থান নিয়েছে। সারা দেশে ভোটাররা যদি কেন্দ্রে যেতে না পারেন সেজন্য ক্ষমতাসীন সরকার দায়ী থাকবে বলেও তিনি জানান। নির্বাচন কমিশনও এই দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ভোলা-৩ আসনের অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী উচ্চ আদালতে হন্যে হয়ে ঘুরছে বলেও জানান তিনি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন এবং প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে, এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর আমি আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। পুলিশি হয়রানি ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত-প্রশাসনকে অবহিত করতেও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন মেজর (অব.) হাফিজ। 

পুলিশের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নোয়াখালী-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। মঙ্গলবার দুপুরে চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে খোকন সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে মহড়া দিচ্ছে। পুলিশ এসব অপরাধের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুই বিএনপি নেতাকর্মীকে অপহরণ করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে। আহত হয়ে এসব নেতাকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলেও পুলিশ কোনো মামলা নিচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই চাটখিল- সোনাইমুড়ি এলাকায় পুলিশ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে দাবি করে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিনা কারণে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করছে পুলিশ। পাশাপাশি, সারা দেশেও পুলিশ গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। নোয়াখালীর রিটার্নিং কর্মকর্তাকে  এসব অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ কমিশনের কোনো কথা শুনছে না। ইসি গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে বললেও পুলিশ এসব আমলে নিচ্ছে না। নতুন নতুন মামলায়, মাদক দিয়ে কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। চাটখিলের ওসি এক বিএনপি নেতাকে আটক করে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে। প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই পুলিশের ওপর কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ, সরকারি অফিসার, আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। রিটার্নিং অফিসাররা চেষ্টা করেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে পারছেন না। এসব অনিয়ম বন্ধে কমিশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেই সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের বদলি ও অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত শাস্তি প্রদানের দাবি জানান তিনি।

কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ 

নির্বাচনী ইশতেহার - রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে কী দেবে

সম্পাদকীয়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। আর মাত্র তিন সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। তাঁরা নিজ নিজ দল বা জোটের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন আকর্ষণের চেষ্টা করছেন, কিন্তু নির্বাচিত হলে তাঁরা দলগতভাবে দেশ ও জাতির জন্য কী করবেন, সে সম্পর্কে তেমন কিছু এখনো জানা যায়নি। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে অনেক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে, লিখিত ও মুদ্রিত আকারে সেগুলোর উপস্থাপন ঘটে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের পথে দলগুলোর প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়ে গেছে, সময়ও আর বেশি নেই; কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেনি।

ভোটাররা কোন দলকে কী প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ভোট দেবেন—গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা একটা স্বাভাবিক ও প্রচলিত কৌতূহলের বিষয়। নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়। রাজনৈতিক দলগুলো সেসব আহ্বানে সাড়া দেয়, কখনো কখনো আহ্বান ছাড়াই তারা ভোটারদের মনোযোগ ও সমর্থন আকর্ষণের উদ্দেশ্যে নানা প্রতিশ্রুতিসংবলিত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ ও প্রচার করে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে জনসাধারণের আগ্রহ কম। এর কারণ সম্ভবত এই যে দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহারের মাধ্যমে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চায়, নির্বাচিত হওয়ার পর সেগুলো পূরণ করে না। তাদের এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়েছে এবং জনসাধারণ সম্ভবত এই তিক্ত উপলব্ধিতে পৌঁছে গেছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে যত প্রতিশ্রুতিই শোনাক না কেন, ক্ষমতায় গিয়ে তারা সব প্রতিশ্রুতি ভুলে যাবে।

এটা একটা হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি, এভাবে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি সাধিত হতে পারে না। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়মিতভাবে ভঙ্গ করা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, তাহলে সেই গণতন্ত্রে জনসাধারণ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক থাকতে পারে না।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার এই নেতিবাচক চর্চা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের গুরুত্ব আছে। কারণ, প্রতিটি দলের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সঙ্গে তাদের লিখিত ও মুদ্রিত চুক্তির মতো একটা বিষয়। এই চুক্তির ভিত্তিতে জনসাধারণ তাদের নির্বাচিত সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার দাবি তুলতে পারে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জবাবদিহি চাইতে পারে এবং মেয়াদ শেষে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে পারে।

নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নির্বাচনের পরে পূরণ করা হবে কি না, সেই প্রশ্ন ছাড়াই বলা যেতে পারে, ইশতেহার প্রকাশিত হলে সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন ফোরামে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে; ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হতে পারে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলো সমাজের বিভিন্ন অংশের দাবিদাওয়ার প্রতি সাড়া দিয়ে সেগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। যেমন, সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আহ্বান জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি যুক্ত করে।

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে। একই সঙ্গে এটা প্রত্যাশিত যে, এসব প্রতিশ্রুতি যেন নিছক কথার কথা না হয়। সরকারে গেলে কী করবে আর বিরোধী দলে থাকলে কী করবে, সেই প্রতিশ্রুতিও থাকা প্রয়োজন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/১২ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনে আসা ইতিবাচক

বদিউল আলম মজুমদার

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে প্রবীণদের সঙ্গে বিশেষভাবে তারুণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় দিক। নারী প্রার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে একজন বেড়েছে। তবে সংখ্যালঘু প্রার্থী আরও বাড়তে পারত।

যা হোক, তারা একটি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, এটিও একটি ইতিবাচক দিক।

দলটি নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে যেটা নেতিবাচক, তা হলো সমালোচিত কিছু নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন, আলোচিত ও ত্যাগী কিছু নেতা বাদও পড়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ–বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু প্রার্থী কেন মনোনয়ন পেলেন, তার সদুত্তর নেতা–কর্মীরাও জানেন না। এটা অপ্রত্যাশিত।

বিএনপির মনোনয়নে উত্তরাধিকারের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ যাঁরা একসময় দলের বড় নেতা-মন্ত্রী ছিলেন, সংসদ সদস্য ছিলেন—তাঁদের ছেলে-মেয়ে বা স্ত্রী কিংবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা সাংসদ হবেন—এটা কাম্য নয়। এভাবে উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তবে এবারের মনোনয়নে বিএনপি প্রবীণের সঙ্গে তারুণ্যের বড় সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে, এটা ইতিবাচক বলে মনে করি।

  • বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/১২ ডিসেম্বর ২০১৮

কারাগারে কম্বল সংকট

সম্পাদকীয়

বন্দীদের অধিকার নিশ্চিত করুন


চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর ‘ভিড়’ অস্বাভাবিকতাকেও যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই কারাগারে ধারণক্ষমতা আছে ১ হাজার ৮৫৩ জনের। আর গত সোমবার পর্যন্ত সেখানে বন্দী ছিলেন ৯ হাজার ৭৩৩ জন। তার মানে তাঁদের সংখ্যা ধারণক্ষমতার পাঁচ গুণের বেশি। রাখার জায়গা না থাকায় অনেককে কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় রাখা হয়েছে।

নির্বাচনের ঠিক আগে বন্দীদের এই অস্বাভাবিক আধিক্যে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, ভোটের কথা মাথায় রেখেই তাঁদের আটক করা হচ্ছে কি না। মামলা থাকলে আসামি আটক হবে এবং আদালত তাঁদের জেলে পাঠালে প্রশাসনও সে হুকুম তামিল করবে—সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বন্দীদের যেভাবে কারাগারে রাখা হচ্ছে, সেটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রয়োজনীয় কম্বল না পেয়ে শীতে কষ্টে আছেন বন্দীরা। ঠান্ডা লেগে অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আটক বন্দীদের স্বজন ও সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বন্দীরা সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানাচ্ছেন।

নিয়ম অনুযায়ী কারাগারে নতুন আসা একজন বন্দী তিনটি করে কম্বল পান। একটি বালিশ, একটি বিছানা এবং আরেকটি চাদর হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সেখানে এমন বন্দীও আছেন যাঁকে একটি কম্বলও দেওয়া হয়নি। এই তীব্র শীতের মধ্যে মেঝেতে একজন মানুষকে ঘুমাতে দেওয়া কতটা অমানবিক, তা উপলব্ধি করা দরকার। কয়েকজন জেল থেকে বেরিয়ে বলেছেন, কম্বল না পাওয়ায় ঠান্ডা লেগে তাঁরা সর্দি-কাশিতে ভুগছেন।

কারা সূত্র জানিয়েছে, স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথমবারের মতো সাড়ে ৯ হাজারের বেশি বন্দী এই কারাগারে আছেন। গড়ে পাঁচ হাজার বন্দী থাকায় কারাগারে কম্বলের মজুতও রয়েছে পাঁচ হাজারের। কিন্তু বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়ে কারা কর্তৃপক্ষ। আটক বন্দীদের বেশির ভাগই মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলায় জামিনের হার কমে যাওয়ায় এই সংখ্যা বেড়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, ‘কয়েক দিনের মধ্যে’ কম্বলের সংকট কেটে যাবে। কিন্তু এতগুলো মানুষ কম্বল ছাড়া ‘কয়েক দিন’ কীভাবে শীতের রাত পার করবেন, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

শুধু চট্টগ্রামেই নয়, প্রকৃতপক্ষে সারা দেশেই জেলখানাগুলোতে এখন বন্দীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে পুরোনো মামলা সক্রিয় হচ্ছে, নতুন নতুন মামলাও করা হচ্ছে। এসব মামলায় আটক করে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম কারাগারের অবস্থা দেখে দেশের অন্য কারাগারগুলোর অবস্থাও কিছুটা আন্দাজ করা যায়। এ বিষয়ে সরকারকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব দেখাতে হবে। ধারণক্ষমতার বাইরে বন্দী রাখলে তাঁদের নিম্নতম অধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে কারা প্রশাসনের সচেষ্ট হওয়া দরকার। 

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/১২ ডিসেম্বর ২০১৮

Crammed beyond Capacity

Jails across the country holding some 95,000 inmates against their capacity for 36,000


Prisons across the country are crammed with a record number of inmates, in some places three to seven times their capacity, as a result of the crackdown on illegal drugs and a “mass arrest” of BNP men over the last few months.

Late last month, the 68 jails were holding 95,222 prisoners against their total capacity for 36,614, forcing the authorities to accommodate inmates in corridors or any other place they can find, according to the Directorate of Prisons.

Under the jail code, each prisoner is entitled to 36sqft of living space. But currently, three, four or even five inmates are sharing that space.

Four senior jail officials have said this is the highest prison population they have seen in their 10-14 years of service. They spoke on condition of anonymity because they are not authorised to speak to the media.

The number of prisoners suddenly started soaring in May, when the government launched a crackdown on illegal drugs.

In the three months from May to July, some 42,000 suspected drug peddlers landed in 55 district and 13 central jails, according to prison officials.

In addition, in September-October, police arrested hundreds of BNP men across the country ahead of the party's founding anniversary and its rally in the capital.

The BNP has claimed that as of November 14, at least 10,513 of its leaders and activists had been arrested.

The Daily Star could not verify the claim, and the prison authorities say they do not keep separate records of arrestees who are political leaders and activists.    

However, they said about 43 percent of the total prisoners face drug-related charges.

Jail officials in Rajshahi and Rangpur divisions said they were facing a hard time accommodating and looking after prisoners three to five times the capacity. Many are left with no choice but to lie in the corridors although winter is here.

“It is not that big a problem in summer. But keeping inmates outside cells in cold may result in a series of problems,” said an official at the prisons directorate, describing the situation in northern districts.

The Cox's Bazar district jail is among the most crowded, holding prisoners about seven times its capacity. 

“The jail shelters 3,800 prisoners against its capacity of 530. Of them, 2,500 are accused in drugs-related cases. The number of such inmates is rising as courts are denying bails in such cases,” said Jail Superintendent Bazlur Rashid Akhand.

Crowded prisons hamper the routine activities and violate prisoners' rights, officials said.

They are also perfect breeding grounds for corruption, said a former high prison official.

Corruption in jails can be controlled through efficient management, which is difficult in an overcrowded prison, the official added, asking not to be named. 

Sometimes, convicts who are chosen as leaders in prisons offer undue favour to inmates in exchange of money. A portion of that money reaches some corrupt jail officials as well, said sources in different jails.

With a large number of the inmates being drug dealers, drug abuse also continues inside jails dodging surveillance, they added.

For example, six inmates in the district jail in Cox's Bazar, the hub of yaba trade, were caught carrying yaba pills in their rectums very recently. Similar recoveries were made at least five other times in recent months, officials said.

Asked how they are accommodating the prisoners, Chittagong Jail Superintendent Prashanta Kumar Banik said, “We are trying to manage the pressure by arranging sleeping spaces for inmates in verandas in regular wards.”

There are 9,695 inmates in the jail against its capacity for just 1,853.

He added that four new wards had been constructed to accommodate 800 prisoners.

Contacted, Abdullah Al Mamun, assistant inspector general at the Directorate of Prisons, said some jails had already been renovated to accommodate more prisoners.

Renovation of other prisons are underway, he told The Daily Star on November 27.

In January 2010, a year after the AL took office, the prison population stood at 90,000 in 67 jails against their capacity for 27,000, according to the Directorate of Prisons.

It came down to 75,000 in September 2015 when the combined capacity was 33,430. The number went up again in July this year to 83,350.

(Our correspondents from Chattogram, Barishal, Cox's Bazar, Sylhet and Mymensingh contributed to this report.) 

  • Courtesy: The Daily Star /Dec 12, 2018

Why are stalkers not caught?

Editorial

HC directives have not been heeded at all


Fifteen-year-old Lucky Ghosh, a schoolgirl who is fighting for her life in hospital at the time of writing this, was brutally stabbed by a group of stalkers while on her way home at a village in Manikganj. A candidate for the upcoming SSC exams, Lucky was being stalked by this group for the last two months until it decided to attack her so viciously.

It is outrageous that despite strong directives from the High Court and laws that have been enacted to prevent violence against girls and women, school girls continue to be stalked and attacked on a regular basis all over the country. In 2011 the HC recognised stalking as sexual harassment after many young girls took their lives after being stalked. Among the directives, the HC asked the government to include stalking as a sexual offence in the Women and Children Repression Act, set up separate cells at every police station across the country to monitor and deal with stalking cases, make sure the heads of police stations hold meetings on these cases and ensure that appropriate actions are taken; so that such cases are properly tried in court. The court also said that its directives will be considered as law, and mobile courts will deal with incidents of stalking until the government enacts a fresh law or amend the relevant law to stop the crime.

It is obvious that none of these directives have been taken seriously, leaving young girls vulnerable to the whims of these psychopaths. If we really did have separate cells in police departments to monitor stalking, if stalkers were given exemplary punishment, if the police (including higher officials) seriously went after stalkers and took action, how many of these girls would have been saved?

Stalking as we all know, usually happens over a period of time, which means it is not difficult to identify the stalker. So why are we not stopping the crime before it escalates into a fatal attack on a helpless young girl or woman? The government has a huge responsibility to implement the HC directives and protect young girls, whether they are at school, on the streets or at home, from these predators. 

  • Courtesy: The Daily Star /Dec 12, 2018

Tuesday, December 11, 2018

Govt must stop extrajudicial killings

Editorial

ALTHOUGH the government has claimed that it is sincere in protecting human rights, human rights defenders have termed the country’s rights situation alarming and repressive as extrajudicial killing, enforced disappearance and custodial torture continued despite the government’s commitment to international community to maintain ‘zero tolerance’ policy for criminal liabilities of law enforcers. According to a local rights group Odhikar, 1,877 people became victim to extrajudicial killing between 2009 and October 2018 in the name of ‘crossfire’ or ‘gunfight’. Between 2009 and 2013, the number was 764 while it rose to 1,113 between January 2014 and October 2018; and 486 people were subjected to enforced disappearance between January 2009 and October 2018. Of them, 132 disappeared between 2009 and 2013 in the first tenure of the Awami League-led government while the rest 354 disappeared in its second tenure. The number of inmates in the country’s 68 jails reached 97,746 on November 4 against their capacity of 36,614 ahead of the 11th parliamentary elections.

It would be pertinent to mention that in the face of growing demand from conscious sections of society for preventing custodial death and torture, the government passed a law in 2013 criminalising deaths and torture in custody of the police and other law enforcing agencies. The law was enacted in compliance with the United Nations Convention against Torture and other Cruel, Inhuman Treatment or Punishment. But still we are swamped with a large number of reports of deaths in police custody. While this kind of killings has touched off strong criticism and condemnation at home and abroad, especially by national and international human rights organisations, and prompted the High Court to issue a series of rules on the government in this regard, a section of law enforcers have appeared unperturbed and are continuing with this practice of torturing and killing. The Awami League-led government, in line with the 2008 AL manifesto, did talk tough against extrajudicial killings in early days of its previous tenure and even publicly announced the adoption of a ‘zero toleration’ policy against such killings.

Regrettably, these words have hardly translated into reality. What actually came about afterwards is that the incumbents soon sought to defend such extrajudicial killings on the plea of the law enforcers’ right to self-defence. According to Ain o Salish Kendra, 437 people were killed in the custody of law enforcement authorities or in the name of ‘encounter, crossfire or gunfight’ in first 10 months of 2018. Overall, the government and law enforcers seem to lack sincerity to put an end to such monstrosities which could lead to more lawlessness and weaken the fabric of the state and society. Most importantly, enforced disappearance and extrajudicial killing erode public faith in law enforcement and may prompt people to take the law into their own hands.

Hence it is incumbent on the government to put an end to such unconstitutional killings and to instruct law enforcers to act in complete adherence to relevant rules so that human rights violation by law enforcers can be stopped once and for all.
  • Courtesy: New Age /Dec 11, 2018

Fakhrul’s motorcade attacked


BNP Secretary General Mirza Fakhrul Isalm Alamgir’s motorcade was attacked in his hometown Thakurgaon this morning, claimed the party.

Some 40-50 men attacked the motorcade at 1:00pm, Syrul Kabir Khan, a press wing staff of BNP Chairperson Khaleda Zia, told The Daily Star.

The respected senior politician went to his hometown this morning a day after the Election Commission opened the field for Election Campaign.

Chuadanga motorcade also attacked

The Star report added: Chuadanga’s BNP candidate for the upcoming general election claims he was attacked in the district’s Alamdanga upazila last night. Sharifuzzaman, contestant from Chuadanga-1 constituency, said at a press conference that he was attacked during election campaign.

“A group of people shouted Joy Bangla slogans and attacked us in Munshiganj bazar around 9:30pm,” our Kushtia correspondent quotes him as saying.

According to him at least 10 people were hurt in the attack and two microbuses vandalised.

  • Courtesy: The Daily Star /Dec 11, 2018