Search

Monday, January 28, 2019

তিন বছর ধরে ৩৩ মামলায় জেল খাটছে ‘ভুল’ আসামি!

  • ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’
  • সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ৩৩ মামলা
  • সালেকের বদলে জেল খাটছেন পেশায় পাটকলশ্রমিক জাহালম
  • জাহালমের কারাবাসের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি
  • দুদক এখন বলছে, জাহালম নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন
  • তদন্ত করে একই মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও
  • এক মামলায় জামিন, আরও ৩২টি মামলায় জামিনের অপেক্ষায়


জাহালমের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধুবড়িয়া গ্রামের এই বাড়ি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই তাঁর।  প্রথম আলো 

‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না…আমি নির্দোষ।’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাঁকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকলশ্রমিক।
ছেলে জাহালমের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন মা মনোয়ারা বেগম। প্রথম আলো ছেলে জাহালমের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন মা মনোয়ারা বেগম। প্রথম আলো

জাহালমের কারাবাসের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। দুদক এখন বলছে, জাহালম নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন। তদন্ত করে একই মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। ফলে একটি মামলায় তাঁর জামিন হয়েছে। আরও ৩২টি মামলায় জামিন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

দুদকের একটি ‘সর্বনাশা’ চিঠি

পাঁচ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি চিঠির মাধ্যমে জাহালমের ঝামেলা শুরু। জাহালমের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঠিকানায় দুদকের একটি চিঠি যায়। সেই চিঠিতে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে নয়টায় জাহালমকে হাজির হতে বলে দুদক। জাহালম তখন দূরে, নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করছেন।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আবু সালেক নামের এক লোক, যাঁর সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব রয়েছে। আবু সালেকের ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুয়া ঠিকানাগুলোর একটিতেও জাহালমের গ্রামের বাড়ির কথা নেই। রয়েছে পাশের আরেকটি গ্রামের একটি ভুয়া ঠিকানা। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল জাহালমের জীবনে।

নির্ধারিত দিনে দুই ভাই হাজির হন দুদকের ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জাহালম বুকে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’ তাঁর ভাই শাহানূর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুদক কর্মকর্তারা জাহালমের কাছে জানতে চান, আবু সালেক নাম দিয়ে তিনি সোনালী ব্যাংকে হিসাব খুলেছিলেন কি না। জাহালম দুদক কর্মকর্তাদের স্পষ্ট করে জানান, সোনালী ব্যাংকে তাঁর কোনো হিসাব বা লেনদেন নেই। তিনি সামান্য বাংলা জানেন। ইংরেজিতে স্বাক্ষরও করতে পারেন না। আবু সালেক নামে ব্যাংকের হিসাবটিও তাঁর না। হিসাব খোলার ফরমে আবু সালেকের যে ছবি, তা-ও তাঁর নয়। অথচ সেদিন দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সবাই জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ বলে শনাক্ত করেন। কারণ, দুজনই দেখতে প্রায় একই রকম।

দুদকে হাজিরা দিয়ে জাহালম সোজা চলে যান নরসিংদীর জুট মিলের কর্মস্থলে। এর দুই বছর পর টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জাহালমের খোঁজ করতে থাকে পুলিশ। সেখান না পেয়ে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের মিল থেকে জাহালমকে আটক করা হয়। জাহালম তখন জানতে পারেন, তাঁর নামে দুদক ৩৩টি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ, তিনি বড়মাপের অপরাধী। পুলিশের কাছেও জাহালম একই কথা বলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’ কেউ শুনল না এই আকুতি। তাঁর ঠাঁই হয় কারাগারে।

কারাগারে কেটে যায় আরও দুটি বছর। জাহালমকে যতবার আদালতে হাজির করা হয়, ততবারই তিনি বলেন, ‘আমি জাহালম। আমার বাবার নাম ইউসুফ আলী। মা মনোয়ারা বেগম। বাড়ি ধুবড়িয়া গ্রাম, সাকিন নাগরপুর ইউনিয়ন, জেলা টাঙ্গাইল। আমি আবু সালেক না।’ তাঁর ভাই শাহানূর দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকেন। হাজতখানার পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাঁকে পান, তাঁকেই বলতে থাকেন, ‘আমার ভাই নির্দোষ।’

প্রকৃত আসামি আবু সালেক। ছবি: সংগৃহীত

অথচ ব্যাংক, দুদক, পুলিশ ও আদালত—সবার কাছেই জাহালম হলেন ‘আবু সালেক’ নামের ধুরন্ধর ব্যাংক জালিয়াত। এই চারটি পক্ষের ভুলেই হারিয়ে গেল তাঁর জীবনের তিনটি বছর। জাহালমের স্ত্রী থাকেন নরসিংদীতে। তিনিও সেখানকার একটি কারখানার শ্রমিক। বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ধুবড়িয়া গ্রামে। ছেলে আর টাকা পাঠাতে পারেন না। তাই মনোয়ারা বেগম প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। ১৯ জানুয়ারি ধুবড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১০ শতাংশ জমির ওপর দুটি টিনের ঘর জাহালমদের। মা মনোয়ারা বেগম জানালেন, এই ভিটেটুকু ছাড়া তাঁদের আর কিছুই নেই। প্রতিবেশীরাও বললেন, জেলে যাওয়ার পর চরম বিপাকে পড়েছে জাহালমের পরিবার। 

‘এখন আর কানতেও পারি না’

জাহালমের মা মনোয়ারা বলেন, ‘মানষেরে কী ক্ষতি করছিলাম, মানষে আমার এত বড় সর্বনাশটা করল। ৩৫ বছর ধরে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যাচ্ছি। মামলা চালাতে গিয়ে ফকির হয়ে গেছি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিনা দোষে বিনা অন্যায়তে ব্যাটা আমার জেল খাটছে। ব্যাটার জন্য আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। কানতে কানতে এখন আর আমি কানতেও পারি না।’ বড় ভাই শাহানূর মিয়া বলেন, ‘কে শোনে কার কথা। দুদকের ভুলে আজ আমার ভাই তিন বছর ধরে জেলের ঘানি টানছে। কে ফিরিয়ে দেবে আমার ভাইয়ের তিনটি বছর?’

অভাবে প্রাইমারি স্কুলের চৌকাঠ পেরোতে পারেননি জাহালম। কোনোমতে বাংলায় নিজের নামটা লিখতে পারেন। জন্মের কয়েক বছর পর তাঁর বাবা বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পাতেন। তখন থেকে মা মনোয়ারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে বড় করে তোলেন।

ভুলটা ধরা পড়ল যেভাবে 

আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে চরম হতাশ হয়ে পড়েন শাহানূর মিয়া। গত বছরের শুরুর দিকে কারও পরামর্শে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে হাজির হন। ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে অনুসন্ধানে নামে মানবাধিকার কমিশন। গত বছরের ২২ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম একই ব্যক্তি নন। এ কথা ঢাকার আদালতকেও জানায় কমিশন। কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার অন্যতম আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে সাগরের সঙ্গেও কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনকালে কমিশনের কথা হয়। তিনি ২০১০ সাল থেকে আবু সালেকের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। আবু সালেক মিরপুর-১২তে অবস্থিত শ্যামল বাংলা আবাসন প্রকল্পের মালিক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে আবু সালেকের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা। আবু সালেকের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল কুদ্দুস। আদালতকে মানবাধিকার কমিশন বলেছে, আবু সালেক উচ্চমাধ্যমিক পাস। একসময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটা এন্ট্রির কাজ করতেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি ব্যাংক জালিয়াতি করেছেন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক বছর আগে সালেক ঠাকুরগাঁও শহরে ৫ শতক জমি কেনেন। জমি এবং দোকান আছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলাতেও।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মাঠপর্যায়ের তদন্তে উঠে আসে জাহালম নিরপরাধ ব্যক্তি। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে তিনি দুদকের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। রিয়াজুল হক বলেন, বিনা অপরাধে জাহালম এত দিন ধরে জেল খাটছেন। তিনি সামাজিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, অপদস্ত হয়েছেন। তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। মানবাধিকার কমিশন তাঁর পক্ষ হয়ে লড়ছে, লড়বে।

কে এই আবু সালেক? 

আবু সালেকের পরিবারের খোঁজে কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলামের সঙ্গে। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবু সালেককে আমি ভালোভাবে চিনি। তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুসকেও চিনি। কুদ্দুস পেশায় কৃষক। শুনেছি, ঢাকায় থাকার সময় সোনালী ব্যাংকের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সালেক।’ একই কথা বলেন ওই ইউপির চেয়ারম্যান নূর এ আলম ছিদ্দিকী। সালেক গত বছর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।

আবু সালেকের বাবা আবদুল কুদ্দুস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের খবর তিনিও শুনেছেন। তবে অনেক দিন ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ছেলে কোথায় তিনি জানেন না। সালেক ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন বলে জানতেন বাবা। 

বহুরূপী সালেক ও জালিয়াতির সঙ্গীরা

সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখার চেক ব্যবহার করে জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও উঠে আসে আবু সালেকের নাম। বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে তাঁর নাম কখনো গোলাম মর্তুজা, কখনো আবু সালেক। কখনো বাড়ির ঠিকানা নড়াইল, কখনো টাঙ্গাইল। এমনকি বাবা-মার নামও একেক জায়গায় একেক রকম।

সালেক সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব খোলেন ২০১০ সালে। সেখানে বাবার নাম লিখেন আবদুস সালাম, মা সালেহা খাতুন। ঠিকানা দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার সলিমাবাদ ইউনিয়নের গুনিপাড়া গ্রাম। একই নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি ব্যবহার করে ওই বছর বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকে হিসাব খোলেন তিনি।

একই ছবি ব্যবহার করেন ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবেও। তবে ব্র্যাক ব্যাংকে হিসাব খোলেন গোলাম মর্তুজা নামে। এখানে ঠিকানা দেন নড়াইলের লোহাগড়া। ব্যবহার করেন আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র। আবু সালেক এই ঠিকানা ব্যবহার করে আরও আটটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খোলেন।

তিন বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন নিরীহ জাহালম

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে ৩৩টি মামলা করে দুদক। দুদক তদন্ত করে বলে, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী মাইনুল হক জালিয়াতির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যাপারে সালেককে সহায়তাও করেন মাইনুল। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখার কর্মচারী মাইনুল সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিস (মতিঝিল) থেকে ভাউচার, চেক, কম্পিউটার প্রিন্ট আনা-নেওয়া করতেন। আনা-নেওয়ার পথে আবু সালেক স্বাক্ষরিত চেকগুলো সরিয়ে আলাদা রাখতেন। ওই চেকগুলো ছাড়া বাকি চেকের জন্য আলাদা ভুয়া ভাউচার তৈরি করে তা ক্যান্টনমেন্ট শাখায় দাখিল করতেন। লোকাল অফিসের কর্মকর্তা শাখা অফিসের কর্মকর্তার স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই না করে পুরো অর্থ ক্লিয়ারিং হাউসে পাঠাতেন। এভাবে ক্লিয়ারিং হাউসের সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ভুয়া ভাউচার তৈরির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। দুদক মনে করে, মাইনুল একা নন, সোনালী ব্যাংকের আরও কর্মকর্তা এতে জড়িত।

অধিকতর তদন্ত

গত বছরের এপ্রিলে দুদক অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্তের কথা আদালতকে জানায়। বলা হয়, তদন্ত চলাকালে মামলার বিচারকাজ স্থগিত রাখা প্রয়োজন। দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া কয়েকটি মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে।

দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মঈদুল ইসলাম গতকাল জানান, জাহালম যে নির্দোষ, তা দুদকের অধিকতর তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আদালতকে তা জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) জুলফিকার আলীও আদালতকে চিঠি দিয়ে একই কথা জানিয়েছেন।

দুদকের পরিচালক ও মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহালম নিরীহ, মূল আসামি আবু সালেক। জাহালমকে মুক্ত করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রসিকিউশন প্রত্যাহার করা হচ্ছে।’ তাহলে কেন জাহালমকে শাস্তি পেতে হচ্ছে? জবাবে জাহিদ বলেন, ‘আমি তো আবু সালেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তদন্তকারীরা ভুল করে আবু সালেকের বদলে জাহালমের নামে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।’

জাহালম এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছেন, যাঁদের কারণে নিরীহ জাহালম কারাগারে, তাঁদের চিহ্নিত করা জরুরি। দুদক ইচ্ছা করলে এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। যা হয়েছে, তা চরম অন্যায়। জাহালমের পরিবার আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারে।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৮, ২০১৯ 

মইনুল হোসেন জামিনে মুক্ত


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোববার রাতে মুক্তি পান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে মইনুল হোসেনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ বিকেলে জামিনের আদেশ-সংক্রান্ত আদালতের কাগজপত্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সম্পন্ন শেষে রাত নয়টার দিকে মইনুল হোসেনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর আগে মানহানির অভিযোগে বিভিন্ন আদালতে করা মামলায় মইনুল হোসেনকে জামিন দেন হাইকোর্ট।

গত ১৬ অক্টোবর রাতে একটি বেসরকারি টিভিতে এক নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মইনুলের করা মন্তব্য নিয়ে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলা করেন ওই সাংবাদিক। এ ছাড়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। এরপর রংপুর, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানি ও ডিজিটাল আইনে আরও কয়েকটি মামলা হয়।

রংপুরে করা মানহানির এক মামলায় ২২ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতের আদেশে তাঁকে বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি করা হয়।

  • Courtesy: Prothom Alo/Jan 2019

দুর্ঘটনায় আর কত মৃত্যু!

সম্পাদকীয়

যেদিন যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০১৮ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছিল, সেদিনই কুমিল্লায় ট্রাক চাপা পড়ে ১৩ জন ইটভাটা শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁদের বেশির ভাগ ছিল স্কুলের ছাত্র, দারিদ্র্যের কারণে ইটভাটায় কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাত। এই যে কিশোর-তরুণদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেল, তার জবাব কী।  

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে দৈনিক গড়ে ১৮ জন। আর পুরো বছর, অর্থাৎ বাকি আট মাস যোগ করলে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০-এ। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭ হাজার ২২১ জন, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি।

তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই হিসাবকে পূর্ণাঙ্গ ভাবার কারণ নেই। সংগঠনটি বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইত্যাদিতে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আবার এসব গণমাধ্যম খবর পেয়ে থাকে প্রত্যক্ষদর্শী ও থানায় দায়ের করা এফআইআর বা মামলা থেকে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক দুর্ঘটনার খবর অজানাই থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশকালে যেসব সুপারিশ করেছে কিংবা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, তা–ও নতুন নয়। সমিতি একাধিকবার সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল পায়নি। বরং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বীকারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দেওয়ার কারণে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসের নিচে দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তারা ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সড়ক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শিক্ষার্থীরা নীতিনির্ধারকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে কীভাবে সড়ক নিরাপদ রাখতে হয়। কিন্তু সেটি ছিল প্রতীকী। সড়ক নিরাপদ রাখা কিংবা দুর্ঘটনা রোধ করা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এটি করতে হবে সরকারকেই।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে চালকদের শাস্তির মাত্রা বাড়ালেও সেটি কতটা কার্যকর হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা আইনটি সংসদে পাস করার পরই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট পালন করেন। অথচ সড়ক পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, চালকদের ওপর বাড়তি চাপ ও পদচারীদের অসচেতনতার কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ও সেতু, সময়মতো মেরামত না হওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন এবং চালকদের অদক্ষতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

দুর্ঘটনা রোধে যেসব আইন আছে, তার কোনোটাই প্রতিপালিত হচ্ছে না। আইন যারা ভাঙছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী যে দূরপাল্লার চালকদের জন্য কর্মঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটিও মেনে চলা হচ্ছে না। কথা অনেক হয়েছে। আশ্বাসবাণীও কম শোনা যায়নি। কিন্তু শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, এমনকি কমিয়ে আনতে হলে পরিবহন খাতে যে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি চলছে, তা বন্ধ করতেই হবে।
  • Courtesy: Ptoyhom Alo /Jan 28, 2019

হিমাগারের অভাবে সবজি নষ্ট

সম্পাদকীয়

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জরুরি


সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার না থাকায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কারও কোনো মাথাব্যথা নেই!

গতকাল রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শিম, বরবটি, ফুলকপি, শসা, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার চাষি। আলু সংরক্ষণের জন্য এখানে ১২টি হিমাগার থাকলেও দ্রুত পচনশীল সবজির জন্য কোনো বহুমুখী হিমাগার নেই। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত সবজি একসঙ্গে বাজারে তুলতে হচ্ছে এবং সস্তায় বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ কারণে সবজি চাষে যে খরচ হয়েছে, তা অনেকেই তুলতে পারছেন না।

শিবগঞ্জ উপজেলা আয়তনের দিক দিয়ে বগুড়া জেলার বৃহত্তম উপজেলা। এ উপজেলা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবজি উৎপাদনে প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রচুর ধান ও আলু চাষ হয়। অন্যান্য ফসলের মধ্য রয়েছে ভুট্টা, গম, কলা, পাটসহ নানান দেশি-বিদেশি শাকসবজি। প্রায় প্রতিবছর আলুর বাম্পার ফলন হয় বলে এখানে আলু সংরক্ষণের জন্য একে একে মোট ১২টি আলু রাখার হিমাগার তৈরি হয়েছে। অথচ অন্যান্য দ্রুত পচনশীল সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। যে অঞ্চলে এত সবজি উৎপাদিত হয়, তার যথাযথ বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের দিকে যে মনোযোগ দিতে হবে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যদি এদিকে নজর থাকত, তবে এত দিনে এর একটা বিহিত হতো। এখানে নিশ্চিতভাবেই পচনশীল সবজি সংরক্ষণের একটি হিমাগার গড়ে উঠত।

শিবগঞ্জে জরুরি ভিত্তিতে সবজির হিমাগার স্থাপনের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া সারা দেশেই হিমাগারের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে সরকারি হিমাগারের সংখ্যা ২১। বেসরকারি হিমাগার আছে ৪০৭টি, এর মধ্যে প্রায় ৩৮৫টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়। স্থানিক প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য সবজি রাখার জন্য হিমাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশে সবজিবিপ্লব ঘটে গেছে। এখন দেশে ৬০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এসব সবজি সংরক্ষণ করতে না পারলে কোনো লাভ নেই। কৃষকের পাশাপাশি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উচিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনা, গুদামজাত করা এবং প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানি করার মতো উদ্যোগ নেওয়া। দেশের সার্বিক উন্নতির জন্যই এগুলো প্রয়োজন।  
  • Courtesy: Prothom Alo/ Jan 28, 2019

মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ — সাতদিনের নির্দেশনা দুই সপ্তাহেও বাস্তবায়ন হয়নি


দেশের ২২টি মহাসড়ক থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা সাতদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১১ জানুয়ারি এ নির্দেশনা দেয়ার পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মহাসড়কের দুই পাশে বহাল আছে সিংহভাগ অবৈধ স্থায়ী স্থাপনা।

গতকাল একাধিক মহাসড়ক সরেজমিন ঘুরে বেশির ভাগ স্থাপনা অপরিবর্তিতই দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘুরে কোথাও এ নির্দেশনার প্রতিফলন চোখে পড়েনি। মহাসড়কের পাশে হাটবাজার রয়েছে, এমন এলাকাগুলোয় সড়কের ১০ মিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা আগের মতোই আছে। বিশেষ করে আমিনবাজার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকার বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনাই অপসারণ করা হয়নি।

এ মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটারে ৪৩টি স্থায়ী হাটবাজার রয়েছে, যেগুলোর একাংশ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী অবৈধ। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে মহাসড়কটির অন্তত ১২টি স্থানে প্রতিদিন তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে।

একই অবস্থা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের। মহাসড়কটির বরিশাল নগরী অংশে গড়িয়ারপাড় মোড় থেকে সিঅ্যান্ডবি রোড, সাগরদী বাজার, রূপাতলী এলাকায় আগের মতো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত সড়কাংশে ২২ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান চালায় বরিশাল মহানগর পুলিশ। অভিযানের পর সড়কটির এ অংশে মোটামুটি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে এ ধরনের অভিযানকে যথেষ্ট হিসেবে মনে করছে না স্থানীয়রা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এর বাইরে মহাসড়কটির কয়েকটি পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। তবে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জ অংশের বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে আগের মতোই।

দেশের অন্যান্য মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পুলিশ অভিযান চালালেও স্থায়ী স্থাপনাগুলো অপসারণ হয়নি। এগুলোর বদলে মহাসড়কের পাশে রাখা নির্মাণসামগ্রী, যানবাহন, অস্থায়ী দোকান অপসারণেই বেশি নজর ছিল পুলিশের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ আমাদের রুটিন কাজগুলোর অন্যতম। মন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে মানুষ এর সুফলও পেতে শুরু করেছে।

আইন অনুযায়ী, মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায় বা ক্ষেত্রমতে মহাসড়কের ঢাল থেকে উভয় পাশে ১০ মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা যেমন হাটবাজার, দোকান ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে না। মহাসড়কে নিরাপদে মোটরযান চলাচল নিশ্চিত করতে সওজ অধিদপ্তরকে অবৈধভাবে নির্মিত কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা তাত্ক্ষণিক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন আইনে। এ ক্ষমতাবলে ২২টি মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সাতদিনের ‘নোটিস’ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর একাধিক সড়ক বিশেষজ্ঞ সেটিকে গতানুগতিক দিকনির্দেশনা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। সাতদিনে এসব স্থাপনা অপসারণ কঠিন বলেও মত দেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এর আগেও অবৈধ স্থাপনা অপসারণে একাধিকবার ঘোষণা এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাময়িকভাবে হয়তো অস্থায়ী স্থাপনাগুলো সরেছে, যেগুলো কিছুদিনের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সাম্প্রতিক উচ্ছেদ কার্যক্রমেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বার বার নির্দেশ দেয়ার পরও মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • Courtesy: Banikbarta /Jan 28, 2019

জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প!

নাভানা, তেপান্তরসহ ২২ কোম্পানির ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা


গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাধার ও নিচু শ্রেণীর জমি ভরাট ও দখল করে প্লট বিক্রি করছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি। নাভানা রিয়েল এস্টেট, তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডসহ এ ধরনের ২২ কোম্পানির জলাধার দখল ও ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গতকাল একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে দুই মাসের মধ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার ২২টি আবাসন কোম্পানির জলাশয়, পুকুর, নিচু ভূমি ভরাট ও দখল বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে ২৪ জানুয়ারি রিট আবেদনটি করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ আবাসন কোম্পানির ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা জারির এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড ও তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড এ ২৪ কোম্পানির অন্যতম। অন্য কোম্পানিগুলো হলো ইউনাইটেড পূর্বাচল ল্যান্ডস লিমিটেড, এজি প্রপার্টিজ লিমিটেড, নীলাচল হাউজিং লিমিটেড, বাগান বিলাস, রূপায়ণ ল্যান্ডস লিমিটেড, আদর্শ আইডিয়াল লিমিটেড, মেট্রোপলিটন ক্রিশ্চিয়ান কো-অপারেটিভ হাউজিং, মঞ্জিল হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, শিকদার রয়েল সিটি, কপোতাক্ষ গ্রীন সিটি, ডিভাইন হোল্ডিং লিমিটেড, শতাব্দী হাউজিং, স্বর্ণছায়া রিয়েল এস্টেট, ভিশন ২১ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, ওশান হ্যাভেন লিমিটেড, এসএফএল চন্দ্রিমা লিমিটেড, গ্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল, নর্থসাউথ হাউজিং ও ফেয়ার ডিল শিপিং লিমিটেড।

রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী সাহা। আদেশের বিষয়টি জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে কোনো এলাকার জলাভূমি, জলাশয়, পুকুর দখল ও ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। তার পরও কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে জলাশয়, জলাভূমি, নিচু ভূমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি সাইনবোর্ড টানিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছে। এ ধরনের ২২ আবাসন কোম্পানি এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় মাটি ভরাট অব্যাহত রেখেছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, এসব যুক্তিতে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। আদালত ২২ আবাসন কোম্পানির দখল ও ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বছরের ২ নভেম্বর ‘ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল দখল করে আবাসন প্রকল্প’ শিরোনামে বণিক বার্তায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বেলাই বিলে বালি ভরাট করে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের প্লট বিক্রির তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। তাতে উল্লেখ করা হয় পরিবেশগত ক্ষতি ও বিলের আশপাশের মানুষের জীবিকা সংকটের চিত্রও।

প্রতিবেদনটি তৈরির আগে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিলের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের অংশে বালি ফেলে এরই মধ্যে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে টানানো হয়েছে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের নামে সাইনবোর্ডও। বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বাগাদুনা খাল। এ খাল থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালি তুলে ফেলা হচ্ছে বেলাই বিলে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে বেলাই বিলের কিছু জমি কেনে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড। এরপর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে বিলে বালি ভরাটের কাজ শুরু করে। বালি ফেলার জন্য তারা মূলত বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়। কারণ বর্ষা মৌসুমে বালি ফেললে তা নির্ধারিত জমির পাশে আরো কিছু জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পর বিলের যতদূর পর্যন্ত বালি দেখা যায়, ততদূর পর্যন্ত নিজেদের জমি হিসেবে পুনরায় ভরাট শুরু করে আবাসন প্রতিষ্ঠানটি।

গাজীপুর ভূমি অফিস থেকে বেলাই বিলের আরএস ও এসএ খতিয়ান তুলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দাগে ৯ দশমিক ৭১ একর জমি তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের নামে জারি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই বোরো ও আমন শ্রেণীর। কিছু রয়েছে নালা শ্রেণীর। এসব জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করেই বালি ভরাট করে প্লট বিক্রি শুরু করেছে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ১৬টি হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক জলাশয় ও নিচু জমি ভরাটের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পূর্বাচল সিটি, সিটি ক্লাউড, কানাডা সিটি, জমিদার সিটি, ড্রিমল্যান্ড, হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি, হোমটাউন পূর্বাচল সিটি, প্রিটি রিয়েল এস্টেট, মাসকট গ্রীন সিটি, পুষ্পিতা এমপায়ার হাউজিং, নন্দন সিটি, বেস্টওয়ে সিটি, মালুম সিটি, মেরিন সিটি ও সোপান সিটি।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 28, 2019

এতিম শিশুকে খুঁটিতে বেঁধে পেটালেন আ.লীগ নেতা


লক্ষ্মীপুরে বলাৎকারের অভিযোগ এনে এক এতিম শিশুকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে। তিনি সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

রোববার বিকেলে একই এলাকার বাবলাতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ নূর (১২) ওই এলাকার মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে। তার মা মালেকা বেগম ভিক্ষা করে সংসার চালান বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকার এক প্রতিবন্ধী শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ এনে নূরকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নালসহ কয়েকজন নূরকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে তার মা মালেকা বেগম থানা থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে জয়নালের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এতে শিশুটিকে নিয়ে তার মা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

মালেকা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি সকালে ভিক্ষা করার জন্য বের হয়ে যাই। বিকেলে বাড়িতে ফিরে শুনি জয়নালসহ কয়েকজন নূরকে পিটিয়ে আহত করেছে। পরে পুলিশ এসে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আমি থানায় গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসি। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। জয়নালসহ তার লোকজন বাধা দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে মান্দারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুজ্জামান বেগ বাবলু জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাটি জানার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াসীম বলেন, শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তার মায়ের দায়িত্বে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
  • জাগোনিউজ / জানু ২৮, ২০১৯ 

নিয়োগ প্রত্যাশীদের স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও


নিয়োগের দাবিতে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছে দেড় শতাধিক নিয়োগ প্রত্যাশী। সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ২০১২-১৩ সালে ৯ জেলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে তা বাতিল করে অধিদফতর। পরে আদালত ও মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাতিলকৃত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও তাদের নিয়োগের দাবি আন্দোলনকারীদের।

এ ব্যাপারে আন্দোলনে অংশ নেয়া খাইরুল হক জানান, ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর ৯ জেলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের এপ্রিলে আমরা পরীক্ষা দিই, জুলাইয়ে ফলাফল প্রকাশ পায়। এরপর জুলাই থেকে দুই মাসব্যাপী মৌখিক পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অজানা কারণে ওই পরীক্ষা বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, ওই পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে আমরা আদালতে রিট আবেদন করি। রিট আবেদনের (৪৭৪৭/১৪) শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যে আগের অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে উত্তীর্ণদের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা অমান্য করে ৬৫৪ দিন দেরি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর আদালতের ওই নির্দেশনার বিরুদ্ধে আপিল করে।

তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি আমরা আপিলের রায় পাই। রায়ে আপিল আবেদন খালিজ করে আগের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ওই রায়ের বিপক্ষে আপিল বিভাগের রিভিউ আবেদন করে। ২০১৮ সালের মে মাসে রিভিউতেও আগের রায়েই বহাল থাকে এবং বাতিল করা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে আদেশ দেয়া হয়।

এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবর একে একে তিনটি অর্ডার দেয়। ওই অর্ডারে আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল করা পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত করতে বলা হয়। কিন্তু এখন অবধি ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।

তিনি বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও করে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছি।

লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মুক্তার আলী বলেন, আমরা অনেক দিন থেকেই ধৈর্য ধরে আছি। আজ ফলাফল প্রকাশ পাবে, তো কাল- এভাবেই ঘোরানো হচ্ছিল আমাদের। আদালতের নির্দেশনাও তোয়াক্কা করা হচ্ছিল না। তাই নিজেদের অধিকার আদায়ে নিজেরাই কর্মসূচি দিয়েছি। চাকরির নিশ্চয়তা নিয়েই ঘরে ফিরবো।
  • জাগোনিউজ / জানু ২৮, ২০১৯ 

Sunday, January 27, 2019

কাজের মেয়াদ শেষ, কিন্তু কাজই শুরু হয়নি!


কাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও শুরুই হয়নি মৌলভীবাজারে মনু নদ খননের কাজ। নির্ধারিত মেয়াদে বিআইডব্লিউটিএ কাজ শুরু না করায় একে গাফিলতি এবং দুর্নীতির সূত্র খুঁজছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, বন্যাপ্রবণ এলাকা মৌলভীবাজারের মনু নদের ২৩ কিলোমিটার নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষে ২৩ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়াধীন বিআইডব্লিউটিএ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা শুরু হয়নি। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, কাজ না করিয়েই টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশে মেয়াদ শেষ হবার সময় এসে গেলেও এখনও কাজ শুরু করেনি ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান। কারণ বর্ষা মৌসুমে পানি চলে আসলে প্রমাণ করা যাবে না যে কাজ হয়েছে নাকি হয়নি।

বিআইডব্লিউটিএ এর স্থানীয় অফিস না থাকায় দীর্ঘদিন মনু খননের তথ্য লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান মণ্ডল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি তাদের কাছে আসে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। চিঠিতে উল্লে­খ করা হয় বিআইডব্লিউটিএ এর একটি প্রকল্পের আওয়তায় ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মনু নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে এবং শেষ হবে ২০১৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই কাজে বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। সেই চিঠির পর প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

মৌলভীবাজার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জাগো নিউজকে জানান, সহযোগিতা চেয়ে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে চিঠি দিলেও এরপর আর কোনো যোগাযোগ করেনি তারা। আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, বর্তমানে কি করা হচ্ছে প্রকল্পটি কোনো অবস্থায় আছে পাউবো অবগত নয়।

মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জানান, এ অঞ্চল বন্যাকবলিত এক বছর হয়ে গেল এখনও কোনো কাজ বিআইডব্লিউটিএ করেনি। যাদের গাফিলতির জন্য এই টাকাগুলো ফেরত যাবে তাদের শাস্তি দাবি করছি।

বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী প্রকৌশলী সমিরন পাল জাগো নিউজকে জানান, গত বছর মে মাসে কাজ শুরু করতে গিয়েও করা যায়নি বালু মহল ইজারাদারদের কারণে এর পর পরই আসে বন্যা। নানাভাবে কাজটি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে মনু নদের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথাও ড্রেজিংয়ের কাজ দেখা যায়নি। তবে দুটি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিরক্ষা বাধ হুমকির মুখে জানিয়ে গতকাল থানায় জিডি করেছে পাউবো মৌলভীবাজার অফিস।
  • জাগোনিউজ/ জানু ২৭, ২০১৯ 

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ব্রিজটির আজ একি হাল!


দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ক্রমেই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত ফেনীর শুভপুর ব্রিজটি। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ।

ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়ন ও চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার করের ইউনিয়ন সীমান্তে ছোট ফেনী নদীর ওপর ১৯৫২ সালে এ ব্রিজটি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের দীর্ঘ ৬৬ বছর অতিক্রম হলেও অযত্ন-অবহেলায় ব্রিজটি এখন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। 

জানা যায়, ১৯৫২ সালের দিকে আরসিসি স্লাবের ওপর ব্রেইলি ট্রাস দিয়ে ১২৯ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। পরে নদীর প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৮ সালে সেতুটিতে ২৪৯ মিটার সম্প্রসারণ করা হয়। এতে করে সেতুটির দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৭৪ মিটারে।


মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন জানান, যুদ্ধ চলাকালীন ব্রিজের এপারে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এটি ব্যবহার করেই ওপারের পাকহানাদার বাহিনীকে পরাহত করেন ফেনীর মুক্তিযোদ্ধারা। ব্রিজের ১০নং পিলারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এটিকে কিঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিলে এ অংশ হানাদার মুক্ত হয়।

তিনি জানান, এখনও ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে গোলা বারুদের চিহ্ন পাওয়া যাবে। যুদ্ধ চলাকালীন সেক্টর কমান্ডাররা ব্রিজের আশপাশে থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে এটি সংষ্কার করে পুণরায় চালু করা হয়। স্মৃতিস্বরূপ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে শুভপুর ব্রিজের চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ব্রিজটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখন সেখানে আগের মতো জৌলুস নেই। এর পাশেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। আর এতেই ব্রিজের মূল পিলারগুলোর নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। এতে এর পশ্চিমাংশ যেকোনো সময়ে ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় ব্রিজের ওপর ঢালাই নষ্ট হয়ে গেছে। লোহার রেলিং ও নাট-বল্টু খুলে চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এখন ছোট পরিবহন পার হলেও কাঁপতে থাকে ব্রিজটি। দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রিজটির ওপর ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক বিভাগ। 

ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল জানান, ব্রিজটির সম্মুখে ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। ব্রিজটিকে দ্রুত মেরামত অথবা বিকল্প ব্রিজ নির্মাণের দাবিও জানান তিনি।
  • জাগোনিউজ বিডি/ জানু ২৭, ২০১৯