Search

Tuesday, January 29, 2019

৫ বছরে বেওয়ারিশ লাশ ৬২১৩


২০১৮ সালের নভেম্বরের ১ তারিখ। বাংলাদেশের বেওয়ারিশ লাশ দাফনের দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম একটি লাশ ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ প্রাথমিক সুরতহাল করে আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে দিয়ে দেয় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফনের জন্য। 

ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো আরো হাজার খানেক বেওয়ারিশ লাশের মতই। কিন্তু ঘটনার মোড় নেয় যখন আঞ্জুমান মফিদুলের কর্মীরা তাকে দাফনের আগে গোশলের জন্য নেন। মৃত ব্যক্তির কোমরে কিছু কাগজ খুঁজে পান তারা। সেই সময় উপস্থিত থাকা একজন কর্মী ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবে, তিনি বলছিলেন ‘আমরা তার কোমরে আইডি কার্ড আর ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাই। আইডি কার্ড দিয়ে শনাক্ত করা যায়নি। এরপর পুলিশকে জানালে তারা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তার পরিচয় বের করেন। দেখা যায় তিনি চট্টগ্রামের বিশাল বড়লোক ফ্যামিলির লোক। পরে তাদের খবর দিলে তারা এসে লাশ নিয়ে যায়’। চট্টগ্রামের এই পরিবারটির সাথে আমি কথা বলেছি। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। কিন্তু পরিবারটি বলেছে- তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং এই ঘটনায় এতটাই বিপর্যস্ত যে, এখন আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলেন না তারা। 

বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা

বেওয়ারিশ লাশের ওয়ারিশ বা পরিবার-পরিজনের খবর পাওয়া যায় হাজারে দুই থেকে তিনটা। আঞ্জুমান মফিদুল বলছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্ব^র এই পাঁচ বছরে ৬ হাজার ২১৩ জনকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেছে তারা। অর্থাৎ প্রতি বছরে ১ হাজারের বেশি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে যাদের কোনো ওয়ারিশ পাওয়া যায়নি। 

ঢাকায় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্রের কার্যালয়। সংস্থাটি ২০১৮ সালের নিখোঁজদের যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে এর সংখ্যা ৩৪। পরবর্তীতে ১৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন মামলায় পুলিশের কাছে আটক আছে। আর বাকি ১৫ জন নিখোঁজ। 

পরিবারগুলো কি খোঁজ করে?

এই নিখোঁজদের একজন মোহন মিয়া। যিনি ঢাকার মিরপুর থেকে ২০১৮ সালের ১০ জুন নিখোঁজ হন। মোহন মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলছিলেন তারা আঞ্জুমান মফিদুলে যাননি। কারণ তার আশা তার স্বামী একদিন ফিরে আসবেন। তিনি বলছিলেন ‘তার শত্রুতা ছিল বাড়ি ঘর নিয়ে। মুদি দোকান ছিল আমার স্বামীর, সে তো কোনো সন্ত্রাসী না, নেতাও না যে, তারে মেরে ফেলবে। নিখোঁজের পর আমরা অনেকবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। কিন্তু আঞ্জুমান মফিদুলে যাইনি। আমরা বিশ্বাস করি সে ফিরে আসবে একদিন’। আরো একজন নিখোঁজ ব্যক্তির বাবা বলছিলেন তার ছেলের খোঁজে একাধিক বার থানা-পুলিশ করেছেন কিন্তু আঞ্জুমান মফিদুলে যাননি। কারণ পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তার ছেলেকে তারা খুঁজে বের করবেন। সে ঘটনার পার হয়ে গেছে ছয় মাস। 

তিনি বলছিলেন ‘অনেক কিছু করলাম। মিডিয়া করলাম, থানা-পুলিশ করলাম। পুলিশ বলতো আপনার ছেলেকে পাবেন। এখন সেই ওসিও ট্রান্সফার হয়ে গেছে’। বেশির ভাগেরই লাশের খোঁজ করতে কেউ আসে না এখানে। যেসব পরিবারে কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ থাকেন দীর্ঘদিন, তারাও যান না কারণ তাদের আসা থাকে একদিন হয়ত নিখোঁজ ব্যক্তিটি পরিবারের কাছে ফিরে আসবে এই আশায়। এছাড়া অনেক সময় লাশগুলো এমন অবস্থায় থাকে যে, সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। বলছিলেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একজন কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম। 

মি. ইসলাম বলছিলেন, ‘যদি কোনো পরিবার এসে একটা টাইম লিমিট বলতে পারেন যে, ঐ সময়ের মধ্যে ঘটনাটা ঘটেছে বা ব্যক্তির বর্ণনা দিতে পারে তাহলে আমরা আমাদের নথি ঘেঁটে মেলানোর চেষ্টা করি। তবে সেটা খুব কম হয়। বছরে দুই-তিনটা এমন কেস থাকে। তারপর আগে ছবি তোলার সিস্টেম ছিল না। এখন কিছুদিন হল হয়েছে। কিন্তু লাশগুলো এত বিকৃত অবস্থায় থাকে যে, পরিবারের লোক আসলেও শনাক্ত করতে পারে না’। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পরিচয় শনাক্ত করতে পারে? 

একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, জিডি, মামলা সব কিছু হয় সংশ্লিষ্ট থানাতে। এর একটা কপি দেয়া হয় আঞ্জুমান মফিদুলে। এছাড়া দেশের সব থানাতে এই বিবরণ বা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাহলে কেন একটা ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় না? আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর (মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশন্স) সোহেল রানার সাথে। 

প্রশ্ন: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে একটা বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার পর আপনারা কী করেন তার পরিচয় বের করার জন্য?

উত্তর : ময়নাতদন্ত হয়, পরিচয় জানার জন্য থাম্প ইম্প্রেশন থেকে এনআইডির সাথে মেলানোর চেষ্টা করি, প্রাথমিকভাবে যদি না পরিচয় পায় সেেেত্র ডিএনএ নমুনা নিয়ে সিআইডিকে পাঠায়। এছাড়া মামলা হয়। জনপ্রিয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেয়, সব থানার ইউনিটগুলোকে জানানো হয়। 

প্রশ্ন: আপনি ডিএনএ নমুনা, পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনের কথা বলছেন এসব কি বিশেষ কেসের ক্ষেত্রে নাকি সব ক্ষেত্রে করেন?

উত্তর : এসব আমরা সব অশনাক্তকৃত লাশের ক্ষেত্রে করে থাকি।

প্রশ্ন: যেহেতু একটা লাশের সব তথ্য আপনাদের কাছে থাকে সেেেত্র এটা কি খুব কঠিন কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য খুঁজে বের করা?

উত্তর : নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকতে পারে খুঁজে না পাওয়ার পিছনে, যে সকল েেত্র অনেক সময় বা কখনো কখনো সম্ভব নাও হতে পারে।

পুলিশ বলছে এভাবে তারা একটি লাশ শনাক্তের জন্য তিনমাস তদন্ত করতে থাকেন। তারা দাবি করছেন এর ফলে সন্তোষজনক সংখ্যক লাশের শনাক্ত করা গেছে তবে সেই সংখ্যাটি দিতে পারেননি। এদিকে সেটাই যদি হয় তাহলে আঞ্জুমান মফিদুলের পাঁচ বছরে ৬ হাজারের বেশি বেওয়ারিশ লাশের যে হিসেব দিচ্ছে তার সংখ্যাটা অনেকটা কম আসতো। 

আদৌ কি সম্ভব পরিচয় বের করা? মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলছিলেন, যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সব রকম তথ্য রয়েছে সেেেত্র একটা লাশের শনাক্ত করা কঠিন কিছু না। 

তিনি বলছিলেন, ‘কেন একটা লাশের শনাক্ত করা যাবে না, নিশ্চয় যাবে। এটা শুনলে মনে হবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কি সচেতন কিন্তু এটা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যদি পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে সেই নির্দেশনা থাকে, পলিটিকাল উইল (রাজনৈতিক ইচ্ছা) থাকে তাহলে এটা হবে। পুলিশের অনেকগুলো কাজের মধ্যে এটাকে হায়েস্ট ইম্পর্টেন্স দিয়ে করা উচিত। এখন অনেক প্রযুক্তি বের হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে অবশ্যই বের করা যায়। তবে তার জন্য দরকার বাহিনীগুলোর সদিচ্ছা’। বাংলাদেশের বেওয়ারিশ লাশের দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ২৭টি শাখা সক্রিয় রয়েছে সারা দেশে। তবে দেশের যে কোনো প্রান্তে কোনো বেওয়ারিশ লাশ পেলে পুলিশ তাদের নির্দিষ্ট কার্যক্রম শেষ করে সৎকারের বা দাফনের জন্য ঢাকাতে পাঠিয়ে দেন। 

ঢাকার দুইটি স্থানে সেসব লাশের দাফন হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে পরিবারগুলো অপোয় থাকেন তাদের নিখোঁজ আপনজনের, অপরদিকে হাসপাতালের মর্গ, থানা-পুলিশ সব পার করে একজন মৃত ব্যক্তির হয়ত স্থান হয় বেওয়ারিশ লাশের তালিকায়। যেটার খবর শুধু তার পরিবারের কাছেই যায় না।
  • দিনকাল/ জানু ২৯,২০১৯ 

বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে, সূচকে চার ধাপ অবনতি — টিআই


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ওই বছর বাংলাদেশ সূচকে ১০০ এর মধ্যে স্কোর করেছে ২৬। আগের বছর এটি ছিল ২৮। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থান ছিল নিচের দিক থেকে ১৭। ২০১৮ তে হয়েছে ১৩।

ওপরের দিক থেকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯। ধারণা সূচকে পাকিস্তানের স্কোর ৩৩, ওপরের দিক দেশটির অবস্থান ১১৭। ভারতের অবস্থান ৭৮। তাদের স্কোর ৪১।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একযোগে মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

আজ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। এখানে আত্মতুষ্টির কোনো অবস্থা নেই।’

দুর্নীতির ধারণা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে আছে শুধু আফগানিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটান কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ২৫ নম্বরে স্থান পেয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে ডেনমার্ক। সবচেয়ে বেশি সোমালিয়া। দেশটি গত ১২ বছর ধরে একই অবস্থানে আছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা থাকলেও এটার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই। উচ্চ পর্যায়ের লোকদের বিচারের আওতায় আনার সেরকম উদাহরণ কম। ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারি ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি এক ধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক ও অন্যান্য জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। গণমাধ্যম ও নাগরিক প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগতভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদকের কাজ নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে সীমাবদ্ধ উচ্চ পর্যায়ে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্সের’ যে ঘোষণা আছে সেটা কার্যকর করার জন্য পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সংসদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। আসামিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে টিআইবির ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৯, ২০১৯ 

ডাকসু নির্বাচন — হলে ভোট নিলে কঠোর আন্দোলন!

  • ডাকসু নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ চাইল ছাত্র ইউনিয়ন
  • ডাকসু নির্বাচন : আচরণবিধি সংশোধনে ছাত্রদলের প্রস্তাব
  • ডাকসু নির্বাচন : কোটা আন্দোলনকারীদের ৫ দাবি


আগামী ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের হাওয়া লেগেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। আলোচনা চলছে ঘটা করেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কি হবে না, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। সব ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ২৮ বছর পর উপহার দিতে পারবে কি না, এখন সেটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল আলোচনার বিষয়।

ক্যাম্পাসজুড়েই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সেই হাওয়ায় মিশে আছে নির্বাচনী শঙ্কাও। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো ধরনের শঙ্কাবোধ না থাকে—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তা আদায় করে নিতে তৎপর ছাত্রসংগঠনগুলো। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা কোনোভাবেই চায় না বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক। তাদের দাবি, হলে ভোট গ্রহণ করলে সেই ভোটে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক পক্ষ কারচুপির চেষ্টা করবে।

এ ছাড়া আরো কয়েকটি ছাত্রসংগঠন হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ চুপ করে বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। সংগঠনটির নেতারা জানান, হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় অনড় থাকলে তারা (কোটা আন্দোলনকারী) কঠোর আন্দোলনে যাবেন।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা ছাড়াও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তাপ চরমে। চায়ের আড্ডায় ডাকসু নির্বাচনী আবেশ বিরাজ করছে। টিএসসির মোড়ে জালালের চায়ের দোকানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের চার বন্ধু গল্পে মাতেন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। এই প্রতিবেদক তখন চায়ের দোকানেই উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা এনটিভি অনলাইনের। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নাজমুল হুদা নামের একজন শিক্ষার্থী বলে উঠলেন, ‘হলে ভোট গ্রহণ করা হলে অনাবাসিক ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে বলে মনে হয় না। ঝামেলা হতে পারে। ভোট কারচুপির সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। আগের রাতেও ব্যালট বাক্স ভর্তি হয়ে যেতে পারে!’

জবাবে নাজমুলের বন্ধু তরিকুল ইসলাম বললেন, ‘আচ্ছা, নির্বাচনী সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি কি একেবারেই গেল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন নিয়েও কী সব ভাবছি আমরা! তবে সত্যিই যদি এই পরিস্থিতির ভেতরে দিয়ে নির্বাচন হয়, আমি চাইব ভোট না হোক। প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের জন্য কলঙ্কিত হবে, সেটা আমি চাই না। প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সব ছাত্রসংগঠন অংশগ্রহণ করবে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। তবেই হবে নির্বাচনের আসল মজা। ভোটই যদি হয় তবে সিলেকশন না হোক!’

জালালের চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে এসব ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সঙ্গে। নাজমুল হুদার সঙ্গে সুর মিলিয়ে হাসান আল মামুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে কঠোর আন্দোলনে যাব। কারণ, হলে ভোট গ্রহণ করা হলে সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে ভয়ে ও আতঙ্কে থাকবে। হলের বাইরে থাকা অনাবাসিক ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহাও প্রকাশ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে পাশে থাকি, তারা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী সংস্কৃতি প্রশ্নবিদ্ধ হোক। বিশ্ববিদ্যালয় তো আমাদের প্রাণের ও আবেগের স্থান। তাই নির্বাচনী কমিটি হলে ভোট গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সামনে কঠোর আন্দোলন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।’

হাসান আল মামুন আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু গৌরব-ঐতিহ্য আছে, সেটা কর্তৃপক্ষ ভালোভাবেই জানে। সেই গৌরব ও ঐতিহ্যকে নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। আমরা প্রত্যাশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সবার দাবি মেনেই হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবে। মুক্ত স্থানে ব্যবস্থা করলেও আমাদের সমস্যা নেই। আমরা চাই প্রকাশ্যেই সবকিছু হোক। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাটা ফিরে আসুক। জনপ্রিয় প্রার্থীরাই সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ভিপিসহ অন্য পদগুলোতে নির্বাচিত হোক। আর যদি হলেই ভোট গ্রহণ করা হয়, তাহলে আমরা সেটা মেনে নেব না।’

হলে ভোট গ্রহণের বিরোধিতার কারণ জানতে চাইলে হাসান আল মামুন বলেন, ‘দেখুন, হলে কিন্তু ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভোট গ্রহণ করা হলে ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কিন্তু ভয়ে থাকবে। যারা ঝামেলা চায় না, তাদের ভেতরে কেউ কেউ কিন্তু নানা অজুহাতে হল ত্যাগ করারও চেষ্টা করবে। হলের বাইরের শিক্ষার্থীরা তো হলে যেতেই চাইবে না। হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সঠিক মতামত প্রদান করতে পারবে না বলে আমার মনে হয়। সুতরাং যেখানে এত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে কেন্দ্র করার প্রশ্নই ওঠে না। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা সবাই একমত। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভোট গ্রহণ করা হলে আমরা আন্দোলনে যাব। আমরা জানি, আজকে হলগুলোকে কীভাবে একটি সংগঠন তাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই আমাদের সবার দাবি থাকবে, হলের বাইরেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা। সেটা যদি প্রশাসন করতে না পারে, তবে এখানে নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হতে দেবে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী শুভ বলেন, ‘গত ২৮ বছরে বিভিন্ন ক্ষমতার পালাবদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন যদি ডাকসু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে সে নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কোনো প্রহসনকে ছাড় দেবে না।’ 


  • এনটিভি অনলাইন/ জানু ২৯,২০১৯

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেবে ছাত্রদল


ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে নীতিগত  সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির  এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে এক ঘন্টার এ বৈঠকে  দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,  ব্যারিস্টার  মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার  জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ডাকসু নির্বাচন ছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়মের দাবি করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত সব নেতারা একমত হয়ে এর জন্য প্রয়োজনীয়  প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে পার্থী নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠনের বিষয়েও  সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রী দলের প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের  প্রস্তাবনা তৈরী করেন নেতারা। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ট্রাইব্যুনালে মামলার  কর্মসূচীর বিষয়ে নেতাদের মধ্যে বিভক্ত মতামত চলে আসে। বেশিরভাগ নেতা জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে মামলা করে কোন ফায়দা হবে না। সরকার আদালতকে  নিয়ন্ত্রণে   নিয়ে তাদের পে রায় নিয়ে নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য করার সহৃযোগ নিবে।

আবার দলের প্রার্থীরাও মামলার বিষয়ে তেমন আগ্রহী না বলেও জানান তারা। অন্যদিকে একজন নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের অনিয়মের প্রতিবাদ স্বরুপ এই মামলা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে কাজে লাগবে। ফলাফল যাই আসুক না কেনো এটাকে  কর্মসূচী হিসেবে নিয়েই তা পালন করা দরকার। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়নি বলে জানা গেছে। 

  • যুগান্তর/ জানু ২৯, ২০১৯ 

মজুরিকাঠামো - জাতীয় শ্রমনীতি কি উপেক্ষিত হচ্ছে?

আসজাদুল কিবরিয়া  

মজুরিকাঠামো ঘিরে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শ্রমিকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আপাতত শেষ হয়েছে। নামমাত্র মজুরির হার সংশোধনের পাশাপাশি সরকার ও মালিকপক্ষের কঠোর অবস্থান শ্রমিকদের কারখানায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। এই আন্দোলনের কিছু মূল্যও গুনতে হচ্ছে তাঁদের। কিছু শ্রমিকের কাজ খোয়া গেছে, কিছু শ্রমিক আছেন পুলিশি হয়রানিতে। আর বাকিরা ভবিষ্যতে কর্মচ্যুতির হুমকি মাথায় নিয়ে ন্যূনতম জীবিকার তাগিদে উদয়াস্ত খেটে যাচ্ছেন। অথচ এমন পরিস্থিতি কাঙ্ক্ষিত ছিল না, এখনো নয়। তারপরও হয়েছে। এটা যেন তৈরি পোশাক খাতে অনিবার্য হয়ে গেছে।

দেশে আরও অনেক শিল্প খাত রয়েছে, সেখানেও মজুরি নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ কমবেশি আছে। কিন্তু বৃহত্তম রপ্তানি খাত এবং ৪০ লাখ শ্রমিকের কাজের স্থান হওয়ায় তৈরি পোশাক খাতে সামান্য ক্ষোভ-অসন্তোষই অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় এবং দ্রুত নজরে চলে আসে। এই খাতের ন্যূনতম মজুরি এখন আট হাজার টাকা, যেখানে বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরির হার ৫ হাজার ৭১০ টাকা। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। আবার ওষুধশিল্প খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা আর কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। সুতরাং, নিম্নমজুরি নিয়ে সমস্যাটা এককভাবে পোশাক খাতে নয়।

আসলে শ্রমিকদের মজুরিজনিত সমস্যার অন্যতম কারণ হলো শ্রমনীতিকে বিভিন্নভাবে উপেক্ষা করা। জাতীয় শ্রমনীতিতে মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘ন্যায্য মজুরি’র ওপর সুস্পষ্টভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে শ্রমিক ও তাঁর পরিবার যেন মানসম্মত জীবন ধারণ করতে পারেন এবং সেই জীবনধারণ–উপযোগী ন্যায্য মজুরি যেন শ্রমিক পান, সরকার সেই ব্যবস্থা করবে। তার মানে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দায়িত্বটা সরকারের। ন্যায্য মজুরি কী, তা নিয়ে কূটতর্ক হতে পারে। তবে জীবনধারণের ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম মজুরি আর যা–ই হোক ন্যায্য হতে পারে না। অথচ দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিল্প খাতে যে ন্যূনতম মজুরি আছে, তা জীবনধারণের মজুরির চেয়ে অনেক কম। অবশ্য যাঁরা মাত্র কাজে ঢুকেছেন বা বছরখানেক কাজ করেছেন, স্বাভাবিকভাবে তাঁরাই সবচেয়ে কম মজুরি পান। তাঁদেরই ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর একেবারে নিচের ধাপে থাকতে হয়। ফলে তাঁরা জীবনধারণের মজুরির চেয়ে কম মজুরি পেয়ে থাকেন, এটাই বাস্তবতা। যেসব শ্রমজীবী কয়েক বছর বা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই সমস্যা থাকে না।

শ্রমনীতিতে ন্যায্য মজুরির পাশাপাশি মজুরির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই। মজুরি বিতর্কে এ বিষয়টি প্রায়ই হারিয়ে যায় বা অনুপস্থিত থাকে। ফলে প্রকৃত মজুরির চিত্রটিও পরিষ্কার হয় না। নগদ টাকা মজুরি পাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের আরও যেসব ন্যায্য ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, সেসব কতটা মিলছে বা মিলছে না, তা চিহ্নিত করাও জরুরি। বলা দরকার যে বাংলাদেশের একটি লিখিত ও অনুমোদিত শ্রমনীতি আছে। এটির আনুষ্ঠানিক শিরোনাম ‘জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২’। শ্রমনীতির লক্ষ্য হলো, ‘বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল কর্মক্ষম নাগরিকের জন্য উৎপাদনমুখী, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, শোভন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার ও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।’

অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও অস্বীকার করা কঠিন যে ‘শোষণমুক্ত, শোভন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ’ এখনো অনেক দূরে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এরপর গত পাঁচ বছরে দেশের পোশাক কারখানাগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কাজের পরিবেশ উন্নত করায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, আরও অনেক খাতের বেশ কিছু শিল্পকারখানায় এসবের ঘাটতি এখনো রয়েছে, যা বিভিন্নভাবে দৃশ্যমান হয়। শ্রম মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দেশের ৩২ হাজার ৯২৪টি শিল্পকারখানা পরিদর্শন করেছে এবং এগুলোর মধ্যে ৬ হাজার ৯৮৫টি কারখানায় শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে; যেগুলো কিনা কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকৃত কারখানা ও প্রতিষ্ঠান। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৬৫। তার মানে কাজের পরিবেশ উন্নত এমন কারখানার সংখ্যা বাড়ছে, যদিও এর হার এখনো দেশের মোট কলকারখানার এক-পঞ্চমাংশ। বিষয়টাকে অবশ্য হতাশাজনকভাবে দেখার কিছু নেই। শ্রমনীতিতে শোভন কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন শ্রমজীবী মানুষের কাজকে ধীরে ধীরে শোভন পর্যায়ে উন্নীত করতে সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

শ্রমনীতিতে শ্রমিক সংঘ কিংবা শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন, এর মাধ্যমে মালিকপক্ষ ও সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষি এবং ত্রিপক্ষীয় সংলাপকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো শ্রমিক সংঘ বা ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম ক্রমে সংকুচিত ও বিকৃত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংঘ একাধারে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এর কার্যকারিতা হারিয়েছে। আর বেসরকারি খাতের শিল্পকারখানায় মালিকেরা শ্রমিক সংঘ নিয়ে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতায়। ফলে শ্রমিক সংঘ আর শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ও উৎপাদশীলতা রক্ষায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমনীতি মোটামুটিভাবে ভারসাম্যপূর্ণ, বাস্তবানুগ ও শ্রমিকবান্ধব। তবে এটি কোনো অবশ্যপালনীয় আইন নয়; বরং বৃহত্তর দিকনির্দেশনার এক দলিল। এই দিকনির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটে শ্রম আইন ও বিধিমালার মাধ্যমে। আবার শ্রম আইন প্রয়োগে ও সংশোধনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে, যা কমাতে শ্রমিক-মালিক-সরকার তিন পক্ষেরই ইতিবাচক তৎপরতা দরকার। তাহলে শ্রমনীতি আর অতটা উপেক্ষিত হবে না।  

  • Courtesy: Prothom Alo /Jan 28, 2019

Monday, January 28, 2019

‘এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে আ.লীগের বড় ক্ষতি হয়েছে’ — মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেভাবে আওয়ামী লীগকে জেতানো হয়েছে, তাতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানের প্রতি আঘাত করা হয়েছে। যারা এই কাজে জড়িত ছিলেন, তারা কেউ আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খী না। এতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। 

রোববার, জানুয়ারি ২৮, দিবাগত রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক টকশোতে তিনি একথা বলেন। 

এসময় তিনি আরো বলেন, সবাই দেখেছে বৃষ্টি হয়েছে। পানি শুকিয়ে গেছে বলে বৃষ্টি হয়নি বলা যায়, কিন্তু সেটি মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় না। যত কথাই বলি না কেনো, কোটি কোটি মানুষের চোখকে ফাঁকি দেয়া যায় না। প্রশাসন যেভাবে ন্যাক্কারজনকভাবে কাজ করেছে, সেটি না করলেও চলতো।

মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমি ছিলাম লাঙ্গলের প্রার্থী। সেজন্য আমাকে হ্যালমেট আর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরেই নির্বাচন করতে হয়েছে। ২৫ বছর পরে এবার নির্বাচনে এসেছিলাম। আমার নির্বাচনী আসনের ও আশে-পাশের প্রায় সবাই জানে আমার গ্রহণযোগ্যতা কী রকম। মানুষের স্বতস্ফূর্ততা দেখে আমি ধরে নিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ বিএনপি একসঙ্গে কাজ করলেও আমি জিততাম।

অফিসার অর্ডার দিয়ে বলেছেন, কীভাবে কী করতে হবে। অফিসার একজন, কিন্তু অর্ডার মান্য করছেন একশ’ জন। ওই একশ’ জন তো জানে কিভাবে অন্যায় হয়েছে। যেভাবেই হোক, যারা এতে জড়িত, তারা কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর শুভাকাঙ্খী নয় বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সহজেই ইলেকশনে জিততো বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ক্ষতি করা হয়েছে এবং এতে করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও ক্ষতি করা হয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক এই মেয়র। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো, টোটাল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সেজন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।
  • শীর্ষকাগজ/ ২৮ জানুয়ারী, ২০১৯ 

ভোটের অনিয়ম জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় টিম যাচ্ছে খুলনায়


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম, গায়েবি রাজনৈতিক মামলা ও হামলা-নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও অবস্থান সরেজমিন পরিদর্শন করতে খুলনায় আসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

দেশের সাতটি বিভাগের জন্য কেন্দ্র থেকে সাত শীর্ষস্থানীয় নেতাকে প্রধান করে গঠন করে দেওয়া হয়েছে পৃথক সাত কমিটি। খুলনা বিভাগীয় কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি টিম দুইদিনের সফরে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি খুলনায় আসছে।

খুলনা সফরকালে তারা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতায় নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্ত এবং নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের বাড়িতে যাবেন। কারাগারে বন্দি থাকা কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। হামলায় আহত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনও অসুস্থ তাদের সঙ্গেও এ সময় কথা হবে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর সফল করতে খুলনা মহানগর বিএনপির এক সভা রোববার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে সেখানে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, শাহজালাল বাবলু, স ম আবদুর রহমান, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, শফিকুল আলম তুহিন, এহতেশামুল হক শাওন, ইকবাল হোসেন খোকন, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, শেখ সাদী, শামসুজ্জামান চঞ্চল, একরামুল হক হেলাল, কেএম হুমায়ুন কবির, হেলাল আহমেদ সুমন প্রমুখ।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, খুলনায় একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনেরও প্রস্তুতি চলছে। এ বৈঠকে খুলনা বিভাগে অবস্থানরত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা, বিভাগের ১০ জেলা ও এক মহানগর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগের ৩৬টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থী অংশ নেবেন। তারা নির্বাচনে অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরবেন। অনিয়মের অডিও-ভিজ্যুয়াল চিত্রও তুলে ধরার চিন্তা রয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে এ গোলটেবিল বৈঠক করার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, রোববার অনুষ্ঠিত সভায় নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে নির্বাচনকালীন সহিংসতা, নির্বাচনে অনিয়ম, হামলা-মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরির জন্য ওয়ার্ড কমিটিগুলোর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
  • সমকাল/ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

সড়কে থামছে না লাশের মিছিল


ঢাকা, ময়মনসিংহ, নাটোর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আর কমপক্ষে ২০ জন। সোমবার, জানুয়ারি ২৮, মধ্য রাত থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে ঘটনাগুলো ঘটেছে।  

ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে ২ পথচারী নিহত হয়েছেন।  এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

নিহতদের কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগের কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, তাদের নাম ডালিম (২০) ও মোবারক (২৭)। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় নিহতদের বাড়ি।

ঢাকা: ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাবার মোটরসাইকেল আরোহী ষষ্ঠ ও তৃতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের বাবা ডালিম হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মাওয়া হাইওয়ের রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, স্কুল থেকে বাবার মোটরসাইকেলে চড়ে বাসায় ফেরার পথে কেরাণীগঞ্জ থানার অন্তর্গত রাজেন্দ্রপুর হাটখোলায় এলাকায় একটি ট্রাক তাদের পিষে দিয়ে চলে যায়। এতে ডালিম হোসেনের দুই মেয়ে নিহত হন। তাদের বাবার অবস্থা আশংকাজনক। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া সড়কের পোস্তগোলা অংশে সড়ক অবরোধ করে রাখে।

ঢাকা: রাজধানীর খিলক্ষেত তিন’শ ফুট রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় বুলবুল হোসেন (২২) নামে ১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন, সাগর (২০) ও কামরুল (২২) নামে দুই যাত্রী।  
রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ২টার দিকে এ র্দুঘটনা ঘটে।
খিলক্ষেত থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহজাহান কবির  ঘটনার সথ্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় বাসের ধাক্কায় আজিজুর রহমান ভেগল (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত আজিজুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মণ্ডলের ছেলে। সোমবার ভোর ৬টার দিকে লালপুর-ঈশ্বরদী সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লালপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মাসুদ ঘটনার সথ্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর এলাকায় ট্রাকচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- সদরের ধুঞ্চি গ্রামের রজব আলীর ছেলে শান্ত (২৫) ও পৌরসভার গোদার বাজার এলাকার মো. সিদ্দিকের ছেলে হৃদয় (২৫)। রোববার রাতে শ্রীপুরের পলাশ ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। রাজবাড়ী সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুনির দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। 

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় বাস ও ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে একটি ট্রাকের চালক ও হেলপার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ জন। সোমবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার আমিরবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন- ট্রাক চালক আলামিন (২২) ও হেলপার হাফিজুর রহমান (২০)। আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মাদারীপুর: মাদারীপুরের শিবচরে চাল ভর্তি ট্রাক উল্টে পথচারী এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিলন শিবচর পৌরসভার নলগোড়া গ্রামের মালাই হাওলাদারের ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, আজ ভোরে জেলার শিবচর-পাঁচ্চর সড়ক হয়ে একটি চালভর্তি ট্রাক একই উপজেলার চান্দেরচর যাচ্ছিল। ট্রাকটি পৌরসভার দাদাভাই তোরন সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এ সময় পথচারী বাঁশ ব্যবসায়ী মিলন হাওলাদার ট্রাকটির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
  • শীর্ষকাগজ/ jan 28, 2019 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অপরাধমূলক’ কর্মকাণ্ডে আতঙ্কে জনগণ — রুহুল কবির রিজভী


দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জনমনে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত, বর্তমানে তারাই মানুষের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটক করা হয়েছে। ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী যেভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে তাতে দেশবাসীর মধ্যে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

সোমবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলেন তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল-

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোটারবিহীন ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়েছে। সুতরাং নির্বাচনোত্তর সরকার নিজেকে যে নামেই অভিহিত করুক, সেটি অবৈধ সরকার। এই সরকার রাতের আঁধারের ভোটের সরকার। অথচ আওয়ামী লীগ বলছে-তাদের প্রার্থীরা নাকি লাখ লাখ ভোটে বিজয়ী হয়েছে। প্রকৃত ভোটার’রা এই কথায় নিজেদের অধিকার হারিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে।

রাষ্ট্র এমন এক ভয়াবহ একদলীয় রুপ ধারণ করেছে যেখানে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার কোন জায়গা নেই। এত বড় মহাভোট ডাকাতি ও মহাভোট জালিয়াতির নির্বাচন গোটা জাতির সামনে সংঘটিত হলো, অথচ নির্বাচন কমিশন জানালো যে, ‘নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়নি’। 

প্রধান নির্বাচন কমিশানারসহ অন্যান্য কমিশনারদের মনে কোন অনুশোচণা নেই। তাহলে অধিকারহারা ভোটার’রা প্রতিকার কার কাছ থেকে চাইবে। সরকার ও তাদের একনিষ্ঠ অনুগ্রহভাজন নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যে ভূমিকা রেখেছে তাতে গোটা জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রভূত সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী হলেও সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে শুধু মনিবের কথা রাখতে গিয়ে গোটা নির্বাচনকেই ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে বিক্রি করে দিয়েছে। ন্যুনতম বিবেক-বুদ্ধি এবং মর্যাদার কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র কমিশনের উচ্চ পদের চেয়ার ধরে রাখতে এক মহা প্রশ্নবিদ্ধ ও নজীরবিহীন জালিয়াতি ও সহিংস ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে তারা দ্বিধা করলো না। 

আসলে ৩০ ডিসেম্বরের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের ছদ্দনাম নুরুল হুদা কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের জন্যই গণতন্ত্রের সংকট আরও গুরুতর রুপ ধারণ করলো। কারণ নির্বাচন হচ্ছে-গণতন্ত্রের প্রধান অনুশীলণ। সরকার সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই চূড়ান্তভাবে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে, আর এই ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের তকমা দিয়েছে এই নির্বাচন কমিশন। ভোটার’রা স্বাধীন ইচ্ছায় তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার দিন শেষ হয়ে গেল। এই দেশে একটি উন্নতর গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দিলো এই নির্বাচন কমিশন। 

মানুষ আশা-ভরসা-উৎসাহ ও এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্ধকার শ^াসরোধী পরিবেশে মানুষকে নির্বাক করে দেশ এখন একদলীয় দু:শাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনীত হয়েছে। এখানে এখন টু শব্দ করা যাবে না। ভিন্নমত প্রকাশিত হলে সাথে সাথেই পুলিশী আক্রমণের মুখে পড়তে হবে। মানুষকে রুদ্ধশ^াসে একদল ও এক ব্যক্তির বন্দনা করতে হবে, নইলে কারাবাস বা ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকারও আর থাকবে না সাধারণ মানুষের। কেউ যদি স্বাধীনভাবে চিন্তা করে তাহলে মনে হয় তাকে ‘থট পুলিশ’ এসে হানা দিবে। গণমাধ্যমকে অন্ধকার ছায়া থেকে প্রতিনিয়ত নজরদারী করা হচ্ছে। 
    
সাংবাদিক বন্ধুরা, 
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে মহাভোট ডাকাতিতে নিয়োজিত থাকায় তারা সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের বদলে এখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়াতে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতিশীল হয়েছে। সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ সমাজে শাািন্ত-শৃঙ্খলা বিধানে প্রশাসন ও পুলিশ অপরাধীদের যদি দমন করতে না পারে তাহলে সমাজে দূর্বৃত্তদের উৎপাত বিভৎস রুপ ধারণ করবে। অপরাধীরা যদি রাজনৈতিক কারণে রেহাই পেতে থাকে তাহলে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা ভয়াবহ সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। 

বর্তমান পরিস্থিতি যেন কেউ দেখার নেই, শোনার নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে খুন, গুম, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো লোমহর্ষক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুরা অপহৃত হচ্ছে, কয়েকদিন পর তাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে রাস্তা-ডোবা-নালায়। ‘আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পুলিশকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে’ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এধরণের বক্তব্য এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের কাজে নিয়োজিত, বর্তমানে তারাই মানুষের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকালও সারাদেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটক করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী যেভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলছে তাতে দেশবাসীর মধ্যে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না, আইন ক্ষমতাসীনদের হাতের মুঠোয়। এই কারণে আইনের প্রয়োগের বদলে ক্ষমতাসীনদের বেআইনী বলপ্রয়োগের প্রতাপে জনজীবনে অরাজকতার গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে। বন্ধুরা, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাঁড়া কাটবে না। অপশাসনের কলুষ থেকে মানুষের মুক্তি হবে না।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
এখনও বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা চলছে। ২৯ ডিসেম্বরের রাতের ভোটের সরকার সকল সরকারী শক্তি দিয়ে বেগম জিয়াকে কারাগারে আটকিয়ে রাখছে। তাঁর জামিন পেতে আইনী কোন বাধা নেই। তাঁকে আটকিয়ে রাখতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেআইনী রাস্তায় নানা চক্রান্ত চলছে। দেশজুড়ে ব্যর্থতা ঢাকতেই বিশেষভাবে ২৯ ডিসেম্বর নিশীথে মহাভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতেই বেগম জিয়াকে এখনও মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি চাই। 

পাশাপাশি নির্বাচনকে একতরফা করার জন্য অন্যায়ভাবে আটক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে-

  • গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান-বিএনপি 
  • খায়রুল  কবির খোকন, যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
  • এ্যাড: শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস
  • হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
  • লায়ন আসলাম চৌধুরী-যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি 
  • ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক-বিএনপি 
  • আনিসুজ্জামান খান বাবু, গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক-বিএনপি
  • সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক-যুবদল
  • শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • মাহবুবুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, সভাপতি-চট্রগ্রাম মহানগরী বিএনপি
  • এ্যাডঃ রফিক শিকদার, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
  • মামুনুর রশিদ মামুন, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি ও ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি 
  • নিপুন রায় চৌধুরী, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
  • শেখ মোহাম্মাদ শামীম-সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
  • হযরত আলী, সাধারণ সম্পাদক-শেরপুর জেলা বিএনপি 
  • মোঃ আবুল হাশেম বকর, সাধারণ সম্পাদক, চট্রগ্রাম মহানগরী বিএনপি
  • মিয়া নুর উদ্দিন অপু, ধানের শীষের প্রার্থীন-শরিয়তপুর
  • মনোয়ার হোসেন, ধানের শীষের প্রার্থী-মাগুরা

সহ দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি চাই।  
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ

  • ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ
  • ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা
  • ২০১৮ সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা
  • এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন
  • হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, নুরজাহানসহ অনিয়মের ঘটনায় জড়িত অনেক গ্রুপ
  • প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপি ঋণ


ব্যাংকগুলোতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণ কমাতে কার্যকর আছে ঋণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা প্রক্রিয়া। অনেক সময় নিয়মের মধ্যে এসব সুবিধা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ ভালো দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও যেসব ঋণ দীর্ঘদিন ধরে আদায় করা যাচ্ছে না, তা অবলোপন করছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। মন্দ বা ক্ষতিকর মানের খেলাপি ঋণকে স্থিতিপত্র (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন বলে।

২০০৩ থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। তবে এসব অবলোপন ঋণ থেকে ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা আদায়ও হয়েছে। এতে অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাব গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে আলোচিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, নুরজাহানসহ অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেক গ্রুপের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।

আর ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ।

যেসব ব্যাংক অবলোপন ঋণ থেকে বেশি টাকা আদায় করতে পেরেছে, সেগুলোর মুনাফাও তত বেশি হয়েছে। কারণ, অবলোপন ঋণ থেকে আদায় করা অর্থ সরাসরি ব্যাংকের আয়ে যোগ হয়। শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরই ঋণ অবলোপন করা যায়। যেসব ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার মতো অবস্থায় নেই, তারা ঋণ অবলোপন করতে পারে না। মুনাফা থেকেই সেসব ব্যাংকের সঞ্চিতি রাখতে হয়।

এ নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী সেই পর্যায়ে পরিপক্ব হয়নি। এ কারণে অনেকে ব্যবসায় খারাপ করেছে। আবার অনেকে অসৎভাবেও টাকা সরিয়েছে। যেসব ঋণ কোনোভাবে আদায় হয় না, জামানতও সেভাবে থাকে না, অবলোপন করা হয় সেগুলোই।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, হিসাব থেকে মুছে ফেলার কারণে এসব ঋণ আদায় হলে তা আয়ে যুক্ত হয় ফি আকারে। যেসব ব্যাংক যত বেশি অবলোপন ঋণ আদায় করতে পারে, তারা তত বেশি লাভবান হয়। এটা ভালো যে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়ে গেছে। বিশ্বের সব দেশেই এ প্রথা চালু আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে তা অবলোপন করা হয়।

তবে মন্দ মানে খেলাপি হলেই অবলোপন করার সুযোগ আছে। ঋণ অবলোপন করতে মামলা থাকতে হয় এবং শতভাগ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তবে মামলার ব্যয়ের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক এযাবৎ অবলোপন করেছে ৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, তবে এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংক অবলোপন করেছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। জনতার অবলোপন ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ও আদায় ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অবলোপন ২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ও আদায় ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবলোপন সবচেয়ে বেশি। এই ব্যাংকের অবলোপন ২ হাজার ১৫৪ কোটি ও আদায় ৪০৭ কোটি টাকা। অবলোপন ও আদায় যথাক্রমে দি সিটি ব্যাংকের ১ হাজার ৯০৩ কোটি ও ২৫২ কোটি টাকা এবং আইএফআইসির ১ হাজার ৮১৪ কোটি ও ৫৪৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের অবলোপন ১ হাজার ৬১৯ কোটি, এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৫৩৩ কোটি, পূবালীর ১ হাজার ৫২৯ কোটি, উত্তরার ১ হাজার ৩২৫ কোটি, ইস্টার্ণের ১ হাজার ১৪৯ কোটি, ইউসিবির ১ হাজার ১৪১ কোটি, রূপালীর ১ হাজার ১৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৯০৪ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৯৮৯ কোটি এবং ব্যাংক এশিয়ার ৮২৭ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অবলোপনের পর ঋণ আদায়ে জোরদার ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ব্যাংকগুলোর দিক থেকে তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। বরং অনিয়মের ঋণগুলো অবলোপন করে দোষী ব্যক্তিদের আড়ালই করে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণেই ঋণ অবলোপন করতে হয়, আর এর মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিরাও আড়াল হয়। ব্যাংকগুলোর উচিত এসব ঋণ আদায়ে তদারকি অব্যাহত রাখা ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৮, ২০১৯