|
মাহ্ফুজ আনাম |
মাহ্ফুজ আনাম ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইল স্টার-এর সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি। প্রথম আলোর ২১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে তিনি বৈশ্বিক পরিসরে ও বাংলাদেশে সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা, এর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম।
প্রথম আলো: সাংবাদিকতার অবস্থা এখন কেমন?
মাহ্ফুজ আনাম: সাংবাদিকতা এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
প্রথম আলো: কী অর্থে?
মাহ্ফুজ আনাম: স্বাধীনতা চর্চার দিক থেকে সাংবাদিকতা এখন সারা বিশ্বে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যেমন আমরা জানি আমেরিকা স্বাধীন সাংবাদিকতার দেশ হিসেবে সুপরিচিত। সে দেশে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মতো একটা অনন্য বিধান আছে, যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। সেই দেশেই এখন প্রেসিডেন্ট কথায় কথায় সাংবাদিকদের বকাঝকা করেন। সংবাদমাধ্যমে যা কিছু তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়, তাকেই তিনি ফেক নিউজ বলেন। তিনি প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের নিকৃষ্টতম জীবদের অন্যতম বলছেন। এভাবে সাংবাদিকদের ও সাংবাদিকতা পেশাকে হেয় করা হচ্ছে। শুধু আমেরিকা নয়, পশ্চিমা দেশগুলো ছিল স্বাধীন সাংবাদিকতার তীর্থস্থান; তাদের সাংবাদিকতার মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার চর্চা থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের সাংবাদিকেরা অনুপ্রাণিত হতাম। সেটা এখন সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
প্রথম আলো: স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি ক্ষমতাধরদের দিক থেকে চ্যালেঞ্জ তো সব সময়ই কমবেশি ছিল।
মাহ্ফুজ আনাম: এখন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে দেশে দেশে অত্যন্ত কঠোর আইন–বিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটা একটা বৈশ্বিক প্রবণতা। আরও এক দিক থেকে সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেটা ঘটেছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসার ফলে একজন পাঠকের সামনে সংবাদের অনেক পথ উন্মোচিত হয়েছে। সে এখন আর খবরের কাগজ, টেলিভিশন ও রেডিওর ওপর নির্ভরশীল নয়। যেকোনো খবর সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎক্ষণাৎ জেনে ফেলছে। শুধু জেনে ফেলছে না, সে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের অভিমত দেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে। খবরের কাগজের পাঠকের সেই সুযোগ ছিল না; তাকে সম্পাদক বরাবর চিঠি লিখতে হতো, সেই চিঠি ছাপা হতো কি হতো না, হলে কদিন পরে ছাপা হতো ইত্যাদি অনেক সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন যার হাতেই একটা স্মার্টফোন আছে, সে তার মতামত প্রকাশ করতে পারছে এবং তার মতামত একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সর্বসাধারণের মতপ্রকাশের এত ব্যাপক স্বাধীনতা পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো ছিল না।
প্রথম আলো: এটাকে আপনি সাংবাদিকতার জন্য চ্যালেঞ্জ বলতে চাইছেন কেন?
মাহ্ফুজ আনাম: কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপকতার তুলনায় একটা সংবাদপত্র, একটা টিভি চ্যানেল বা একটা অনলাইন নিউজপোর্টালের অভিগম্যতা অত্যন্ত সীমিত। নাগরিক পর্যায়ে তথ্য আদান–প্রদান ও মতপ্রকাশের এমন স্বাধীনতা ও তার এত ব্যাপকতা সাংবাদিকতার ইতিহাসে কোনো সময়ই ছিল না; এমনকি সভ্যতার ইতিহাসেই ছিল না।
প্রথম আলো: কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিকেরা তো সাংবাদিকদের বিকল্প ভূমিকা পালন করতে পারে না। মানে, আমি বলতে চাইছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেশাদার সাংবাদিকতার বিকল্প হতে পারবে না।
মাহ্ফুজ আনাম: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটা বড় দুর্বলতা হলো, সেখানে যেসব খবরাখবর আদান–প্রদান হয়, সেগুলোর সত্য–মিথ্যা যাচাই–বাছাই করা হয় না, সেগুলো অসম্পাদিত। কিছু বলায় বাছবিচার নেই, যার যা খুশি তাই বলে দিচ্ছে। এবং মিথ্যা কথাও বলছে, নিজেদের মনগড়া কথা বলছে; কাউকে হেয় করার জন্য বা বিপদে ফেলার জন্য বলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন কদিন আগেই আমরা ভোলায় দেখলাম; তার আগে দেখেছি রামুতে। এভাবে আমরা দেখছি যে এক সম্প্রদায়ের মানুষ আরেক সম্প্রদায়ের মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করছে।
প্রথম আলো: অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নেই, যা পেশাদার সাংবাদিকতার আছে।
মাহ্ফুজ আনাম: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যে ব্যাপক স্বাধীনতা ও বিস্তৃতি, সেই তুলনায় এর দায়িত্বশীলতার ঘাটতি বিরাট। সাংবাদিকতায় যেটাকে বলা হয় এডিটোরিয়াল কন্ট্রোল বা সম্পাদকীয় নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটা নেই। ফলে এই মাধ্যমে খবর আদান–প্রদানের অভিজ্ঞতায় লোকজন আস্থার সংকটে ভোগে। ভাবে যে, আমি যে খবরটা পেলাম, এটা ঠিক না বেঠিক; এটা গুজব বা ফেক নিউজ কি না।
প্রথম আলো: ফেক নিউজ তো শুধু নাগরিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, সংঘবদ্ধভাবেও তৈরি করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে।
মাহ্ফুজ আনাম: ২০১৬ সালে আমেরিকার নির্বাচনের সময় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে রুশরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করেছিল কি না, তা নিয়ে অনেক তর্ক–বিতর্ক হয়েছে; তদন্ত হয়েছে। আমেরিকানরা এখন নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে রাশিয়া একটা ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এখানে রাষ্ট্রেরও ভূমিকা চলে আসছে। এসব কারণে প্রথাগত সাংবাদিকতার ওপরই লোকজনের আস্থা আবার ফিরে আসছে। তারা ফেসবুকে কোনো সংবাদ পেলেই তা বিশ্বাস করছে না, সেটা যাচাই করার জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কাছে ফিরে আসছে: দেখি তো প্রথম আলো কী বলছে, ডেইলি স্টার কী বলছে, বা অন্য কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত সংবাদ প্রতিষ্ঠান কী বলছে। এভাবে প্রতিষ্ঠিত সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন হয়ে যাচ্ছে খবর সত্যায়ন করার জায়গা। কোটি কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে, সে তুলনায় প্রথাগত সাংবাদিকতার পরিধি অতি সামান্য। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আস্থার সংকট বিরাট।
প্রথম আলো: এটা পেশাদার সাংবাদিকতার জন্য একটা সুযোগ?
মাহ্ফুজ আনাম: বিরাট সুযোগ। আমরা যদি পাঠক–দর্শকদের আস্থা আরও দৃঢ় করতে সঠিক সাংবাদিকতা করতে থাকি, তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যতই ব্যাপক হোক না কেন, তারা আমাদের কাছেই ফিরে আসবে।
প্রথম আলো: আপনি বৈশ্বিকভাবে সাংবাদিকতার সামনে দুই ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জের কথা বললেন। এটা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, অন্যটা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে। আর কোনো চ্যালেঞ্জ?
মাহ্ফুজ আনাম: তৃতীয় একটা বৈশ্বিক প্রবণতা আছে। সেটা হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বহীন তথ্য আদান–প্রদানের সুযোগ নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ নিচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ভোলা ও রামুর মতো ঘটনা যখন ঘটতে পারছে, যা বিদেশেও ঘটছে, তখন তো একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। এটার একটা যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু এটার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার অত্যন্ত কঠোর আইনকানুন তৈরি করছে, কিছু কিছু দেশে প্রয়োগও করছে। তার ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতা ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা একটা বৈশ্বিক প্রবণতা; অনেক দেশ এটা করছে। কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় এ রকম আইনের প্রতিবাদে সে দেশের সব সংবাদপত্রের প্রথম পাতা সাদা রেখে ছাপা হয়েছে। অর্থাৎ সাংবাদিকতার ওপর রাজনৈতিক আক্রমণ হচ্ছে এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুযোগ নিয়ে কঠোর কালাকানুন তৈরি করা হচ্ছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কঠিন করে তুলছে।
প্রথম আলো: এখন বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।
মাহ্ফুজ আনাম: যে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলা হলো, বাংলাদেশে আমরা এই তিনটারই শিকার। তবে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বা রাষ্ট্রনেতারা এখনো আমাদের ট্রাম্পের ভাষায় আখ্যায়িত করেননি। কিন্তু আমাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এ দেশে ডিজিটাল ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব আইন করা হয়েছে, সেগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভীষণ প্রতিকূল। সবচেয়ে কঠোর আইনটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এবং সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে এর প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ আইনের প্রতিটি ধারা আমরা ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছি, এটা কী সাংঘাতিক আইন। সরকার যদি এ আইন প্রয়োগ না–ও করে, এ আইনের অস্তিত্বই সাংবাদিকদের সব উদ্যম নষ্ট করে দিতে পারে। এ আইনে ১৯ ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ আছে, সেগুলোর মধ্যে ১৪টাই জামিনের অযোগ্য। তাহলে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, যেহেতু তিনি জামিন পাবেন না, বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগেই তাঁকে ছয় মাস, এক বছর কারাগারে কাটাতে হবে। একজন সাংবাদিকের মাথায় যদি এই দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষে কীভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা করা সম্ভব। তা ছাড়া, এ আইনে পুলিশকে খুব বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রয়োজন নেই, কোনো পুলিশ কর্মকর্তার যদি মনে হয় যে কোনো সংবাদ প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সে রকম কিছু করার সম্ভাবনা আছে, তাহলেই তিনি সেই সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করে নিয়ে যেতে পারবেন।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে তো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশি মামলা হয় মানহানির অভিযোগে।
মাহ্ফুজ আনাম: হ্যাঁ, এটা আগে থেকেই ছিল, কিন্তু এত ব্যাপকভাবে এটার প্রয়োগ হতো না। মানহানির মামলা দুই রকমের হয়—একটা ফৌজদারি মানহানি, অন্যটা দেওয়ানি আদালতে মানহানির মামলা। সাধারণ নাগরিক কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মানহানি মামলা করতে গেলে আদালত হয়তো মামলা গ্রহণ করবেন না; কিন্তু কোনো প্রভাবশালী বা টাকাওয়ালা লোক মামলা করতে যান, তাহলে তাঁর মামলা নেওয়া হবে এবং সেটা নেওয়া হবে ফৌজদারি আইনে; সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে। তা ছাড়া, আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, মামলা করতে পারবেন শুধু সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, অন্য কেউ নয়। যার মানহানির অভিযোগ উঠল, শুধু তিনিই মামলা করতে পারবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাঁর বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, সমর্থক, অনুসারীরা মামলা করে এবং সেসব মামলা গ্রহণ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটরা কিন্তু এসব মামলা না নিলেও পারেন, আইনে তাঁদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা এসব মামলা গ্রহণ করেন। এতে একই অভিযোগে ১০–১৫–২০টা মামলা হয়। আমার বিরুদ্ধে হয়েছে ৮৪টা মামলা। আইনে আরও বলা হয়েছে যে একটা মানহানির ঘটনায় একের বেশি মামলা হতে পারবে না। সেখানে একাধিক মামলা হয় কীভাবে? কিন্তু আমাদের দেশে সেটাও হয়ে আসছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই মানহানির মামলা এখন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর মানহানির মামলা—এই দুটো জিনিস আমাদের সাংবাদিকতা জগতে বিরাট ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সে জন্য সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সরশিপ সাংঘাতিক বেড়ে গেছে। এখন বেশির ভাগ সংবাদ আমরা ছাপি না
প্রথম আলো: বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব কতটা পড়েছে।
মাহ্ফুজ আনাম: বিরাট প্রভাব পড়েছে। ডিজিটালাইজেশনের ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা এখন বেশি করে ঝুঁকছে ডিজিটাল প্রকাশ মাধ্যমের দিকে। সারা বিশ্বেই এটা ঘটছে। এতে মুদ্রিত সংবাদমাধ্যমের বিজনেস মডেল সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশে নামকরা অনেক সংবাদপত্রের ছাপা সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে, তারা শুধু অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করছে। টেলিভিশনের দর্শকও ভীষণভাবে কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সাংবাদিকতা এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও ব্যবসায়িক—তিন দিক থেকেই একটা ক্রান্তিকাল।
প্রথম আলো: এই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণ কীভাবে ঘটতে পারে?
মাহ্ফুজ আনাম: সাংবাদিকতার সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, এর মধ্যেই বিরাট সুযোগ লুকিয়ে আছে। এখন আমাদের নৈতিক সাংবাদিকতা সুদৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি মানুষ যে অনাস্থা বোধ করছে, সেই অনাস্থা যদি পেশাদার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। তাই আমাদের আস্থা অটুট রাখা, বরং তা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। আমরা হলাম সঠিক সংবাদদাতা—এই অবস্থানে সম্পূর্ণভাবে অটল থাকতে হবে। এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে জনগণ সত্য সংবাদের জন্য, সঠিক তথ্যের জন্য আমাদের কাছেই ফিরে আসবে; পেশাদার সাংবাদিকতাই বিকল্পহীন বলে প্রমাণিত হবে।
প্রথম আলো: আগামীকাল ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।এ উপলক্ষেই আমাদের এই কথোপকথন। এ নিয়ে কিছু বলবেন?
মাহ্ফুজ আনাম: প্রথম আলো বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় বিরাট পরিবর্তন এনেছে, সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি মনে করি, প্রথম আলো বাংলাদেশের সেরা সংবাদপত্র; শুধু পাঠকসংখ্যার দিক থেকেই নয়, সাংবাদিকতার গুণমানের দিক থেকেও। আমি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
প্রথম আলো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাহ্ফুজ আনাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
- কার্টসি — প্রথম আলো/ নভেম্বর ৩, ২০১৯