Search

Tuesday, December 17, 2019

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন অবশ্যই প্রশাসনিক ও প্রায়োগিক হতে হবে

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ


ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

একটি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ভীষণ তাত্পর্যপূর্ণ। অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে এর নিবিড় সংযোগ বিদ্যমান এবং অন্যান্য খাত যেমন—ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, রফতানি, আমদানির পাশাপাশি অধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। যেকোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রভাব এড়াতে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকারিতা সরাসরি সংস্থাটির স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিষয়টি প্রশাসনিক সমস্যাকে ঘনীভূত করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার আধুনিক ধারণাটি বিকশিত হয়। ১৯২৯-৩৯ সালের মহামন্দার পর আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আর্থিক নীতি সম্পাদনের ক্ষমতা দেয়। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে মূল্যস্ফীতির জোয়ারের ফলে বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নীতিগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে সফল হয়। তবে সে সময় প্রেসিডেন্ট রিগানের চিফ অব স্টাফ ডোনাল্ড রেগান যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পল ভলকারকে ১৯৮৪ সালের নির্বাচনের আগে নীতিমালার হার না বাড়ানোর পরামর্শ দেন। বিনা বাক্য ব্যয়ে সেদিনের মিটিং থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ভলকার, তবে সে পরামর্শ মোতাবেক নীতি গ্রহণ পরবর্তী সময়ে স্বল্প মূল্যস্ফীতি ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণ হয়। ফলস্বরূপ অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার ওপর জোর দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে। প্রথমটি স্বাধীনতার লক্ষ্য, দ্বিতীয়টি কার্যসম্পাদনে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোয়, বিশেষ করে সরকারের অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তুলনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট পরিমাণ স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। প্রধান লক্ষ্যগুলো, বিশেষ করে মূল্য স্তর (মূল্যস্ফীতি) ও প্রবৃদ্ধির রক্ষণাবেক্ষণকে সাধারণত প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা-ই হোক, প্রবৃদ্ধি হার এবং মূল্যস্ফীতির হার আর্থিক স্থিতিশীলতা ও দ্রুততর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের বিস্তৃত নীতি পরামর্শ দ্বারা নির্ধারিত হয়। আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) সম্ভবত সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব ইংল্যান্ড রাজস্ব দপ্তরের মন্ত্রীদের দ্বারা প্রভাবিত থাকায় পুরোপুরিভাবে স্বাধীন ছিল না। ইউরো ব্যবহারকারী দেশগুলোর হয়ে সুদের হার পর্যবেক্ষণ করে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ছিল। তবে বর্তমানে আমেরিকা সরকার সুদের হার কমানোর জন্য ফেডের ওপর যারপরনাই চাপ প্রয়োগ করছে, যা ফেডকে ঘিরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের লক্ষণ। ব্যাংক অব জাপান ২০১৩ সালে সরকারের সঙ্গে নীতি সমন্বয় করতে রাজি হয়, পদক্ষেপটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা হ্রাস করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়টি বিতর্কযোগ্য, তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা-ই হোক না কেন, ব্যাংকের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নত আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। তাই ব্যাংককে তার সব কার্যকরী ও সিদ্ধান্তগত কার্যক্রমে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হতে হবে।

পারস্পরিক নির্ভরতাবিষয়ক প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে কৃতিত্ব দেয়া থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হবে; এটি সরকারের ওপর নির্ভর না করেই তার ব্যয় নির্বাহ করতে পারে কিনা; গভর্নর কিংবা পরিচালক পর্ষদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কিনা; মুদ্রানীতি অনুসরণে গভর্নর স্বাধীন কিনা; আর্থিক সরঞ্জাম নির্বাচনে এটি কতটা স্বাধীন, সর্বোপরি এটি ব্যাংকিং নীতি ও ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত কিনা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামষ্টিক অর্থনীতি এবং অর্থ সংক্রান্ত—এ তিনটি বিষয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হতে পারে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ততা মূল্যের স্থিতিশীলতা, স্বাধীন পরিচালক পর্ষদ যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য নির্বাচিত হবেন, যাদের অন্যদের থেকে পৃথক করা হবে, সংসদ ও আইনসভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের জবাবদিহিতা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি লক্ষ্যকে ধারণ করবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুদ্রা ও বিনিময় হার নীতি গঠনের ইঙ্গিত দেয়। আর্থিক স্বাধীনতা জোর দেয় হিসাবের স্বচ্ছতা, বিচক্ষণতার নীতি অনুসরণ, আর্থিক ভর্তুকি যেমন পছন্দসই সুদের হার, বিনিময় হারের গ্যারান্টি, নগদ অলাভজনক বিতরণ ও লোকসানের সংযোগ সীমাবদ্ধকরণ এবং ব্যাংকের নিট সম্পদ। সুতরাং স্বায়ত্তশাসন অবশ্যই প্রশাসনিক ও প্রায়োগিক হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে আর্থিক নীতি সম্পাদন, ব্যাংকারদের ব্যাংক, সরকারের ব্যাংকার ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তত্ত্বাবধান। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) মূলত মুদ্রানীতিমূলক কার্যাদি নিয়ে কাজ করে, এছাড়া অন্যান্য কার্য প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি (পিআরএ) এবং ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (এফসিএ) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়; যারা সার্বিকভাবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নির্দেশনা অনুসারিত এ দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই দ্বৈত কার্যাদি সম্পাদন করতে হয়। সুতরাং এর কাজের পরিধি বিশাল। অন্য সেক্টরগুলোর পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্ষমতা নিবিড়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পারফরম্যান্সের সঙ্গে সংযুক্ত।

নিচে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করা হলো, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজগুলোকে বর্ণনা করে।

লক্ষ্য: কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ক্রমাগত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পেশাদারিত্ব অর্জন, মূল্য স্থিতিশীলতা ও আর্থিক ব্যবস্থার দৃঢ়তা বজায় রাখতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক খাতে তদারকি, দ্রুত ও বিস্তৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন, কর্মসংস্থান তৈরি এবং বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন।

উদ্দেশ্য: দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য অনুসারে নিম্নে উল্লিখিত কার্য সম্পাদন করে চলেছে:

১. আর্থিক ও ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন; ২. মুদ্রা পরিচালনা ও পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ; ৩. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিচালনা করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং ৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি, অর্থ, মুদ্রা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক নীতিসম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপ ও প্রভাব সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো যথাযথ হলেও এগুলোকে কার্যে পরিণত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রসঙ্গে মূল তর্কটা হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিতর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে রাজনৈতিক চাপ ছাড়াই আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ছাড়াই আর্থিক নীতি বাস্তবায়িত করতে পারে কিনা। বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্বগত সীমাবদ্ধতা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, নন-পারফর্মিং লোন বৃদ্ধি, সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার পরিণতি হিসেবে ব্যাংকের ওপর থেকে জনগণের আস্থা কমেছে। অবস্থা বিশ্লেষণে মনে হয় যে বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত অভ্যন্তরীণ (ব্যাংকের মধ্যকার সমস্যা) এবং বাহ্যিক (ব্যাংকের পরিধির বাইরে) উভয় ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যাংকিং খাতে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে। চাপ প্রদানকারী সংগঠনগুলো যেমন ব্যাংক মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার (বিএবি), ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোয়িসেশন অব ব্যাংকার, বাংলাদেশ (এবিবি) ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি ব্যাংকের স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য তৈরির বিষয়টি চিহ্নিত করা জরুরি। যার মানে ব্যাংককে অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ কিংবা পুরোপুরি তাদের হাতে স্বাধীনতা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়, যা প্রায়ই ব্যাংকিং বিপর্যয়ের কারণ হয়। অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ জাঁ তিহল তার সহকর্মীকে নিয়ে যৌথভাবে লেখা একটি বইয়ে বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর্থিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা কী অর্জন করতে যাচ্ছি, তা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমানতকারী, বিনিয়োগকারী, সাধারণ জনগণ এবং প্রকৃত অর্থনীতিকে (প্রকৃত পণ্য ও পরিষেবা) সুরক্ষিত করা। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় যুক্তিটি হচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মতান্ত্রিক ঝুঁকির ডমিনো ইফেক্ট (ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকা প্রভাব) হ্রাস করা, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি নষ্ট করে প্রকৃত আউটপুট, নিম্ন প্রবৃদ্ধি, উচ্চ বেকারত্ব এবং মানবকল্যাণ কার্যক্রম হ্রাসের পরিণতি ডেকে আনে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকট প্রসঙ্গে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির সবচেয়ে যথাযথ উদাহরণটি হচ্ছে সোনালী ও বেসিক ব্যাংকে কেলেঙ্কারি; যেখানে ঋণগ্রহীতা এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের আঁতাতে অস্বচ্ছ পন্থায় জনসাধারণের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এ ধরনের জালিয়াতির জন্য যারা দায়ী, তাদের এখন পর্যন্ত কোনো শক্তিশালী প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপের আওতায় আনা হয়নি, বরং তাদের ‘বিকৃত প্রণোদনা’ দেয়া হয় এবং ওই ব্যাংক কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সৎ কর্মীদের প্রান্তিকীকরণ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ‘দ্বৈত’ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক যেমন সোনালী, রুপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংকের মতো বিশেষায়িত ব্যাংক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র, শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যাংক লিমিটেড), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এবং কয়েকটি সংবিধিবদ্ধ ব্যাংক যেমন আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক আর কর্মসংস্থান ব্যাংকগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিদেশী ব্যাংক, ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়ন্ত্রণের এ দ্বৈততার ফলে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর জন্য অসমন্বয়সাধিত ও প্রায়ই দুর্বল নীতিগত পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ওই ব্যাংকগুলোয় বিচক্ষণ ও পরিচালনা মান কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা ‘ডমিনো ইফেক্ট’-এর মাধ্যমে গোটা ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল ও অরক্ষিত করে তুলছে। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতি কোনোভাবেই বিশ্বব্যাপী মন্দা অথবা বৃহত্তর অর্থনীতির নেতিবাচক নীতি থেকে প্রভাবমুক্ত নয়, সুতরাং বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক বিকাশের একটি শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। 

জি২০-এর মতো ফোরামে বাংলাদেশের সমপর্যায়ের রাষ্ট্রগুলোকে পুনরুদ্ধারের মতো স্থিতিশীলতায় একই ধরনের অগ্রাধিকার প্রাপ্তির পাশাপাশি লক্ষণ মোকাবেলার বাইরে স্থিতিশীল কাজের এজেন্ডার জন্য (যেমন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির অপ্রতুলতা) অন্তর্নিহিত কারণগুলো সম্বোধন করতে (যেমন শিথিল নীতি, বিচক্ষণতা ও পরিচালনার মান না মেনে চলা, দুর্বল আর্থিক প্রতিবেদন, নিরবচ্ছিন্ন তারল্য প্রসারণ, যা বুদ্বুদগুলোকে সঞ্চারিত করে) জোরালো যুক্তি প্রদান করতে হবে। ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের নেপথ্য কারণ ছিল বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতা, ধসটি নিয়ন্ত্রণের মৌলিক বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে বিচক্ষণতা ও পরিচালনা মান বাস্তবায়নের বাইরে চলেছে। একটি স্বাধীন ও কার্যকর বাংলাদেশ ব্যাংক রাখার জন্য তিনটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজনীয়: (১) ব্যাংকিংয়ের মূল বিষয়গুলোকে আরো বেশি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে একটি শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক, (২) বহিরাগত রাজনৈতিক/ প্রশাসনিক চাপের কারণে ঘন ঘন পরিবর্তনের সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিচক্ষণ ও পরিচালনার মানদণ্ডগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং (৩) সংকট তৈরির জন্য এবং একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকে বা গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি/ প্রশাসনিক পদক্ষেপের জন্য তাত্ক্ষণিক সংশোধনমূলক ব্যবস্থা।

বাস্তববিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন সহজেই অর্জিত হয় না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উচিত রাজনৈতিক ও অন্যান্য বাহ্যিক চাপ কমাতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং নিজেদের কর্মকাণ্ড ঘিরে জনসমর্থন অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। ভালো বা খারাপ সময় যা-ই হোক না কেন, তত্ত্বাবধায়করা সর্বদা লবিস্ট ও রাজনীতিবিদদের দ্বারা চাপের মুখোমুখি হন, যা আর্থিক ব্যবস্থার স্থায়িত্বকে দুর্বল করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণে সফল হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক ও বাস্তববাদী নীতি, বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনা বিধি থাকতে হবে এবং তা নিশ্চিত করতে হবে, সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা অনুসরণ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন রক্ষার জন্য ‘বিশেষ ব্যবস্থা ক্ষমতা’ বা ‘অ্যাড-হক’ ব্যবস্থা এড়ানো উচিত। ‘নীতি’ বনাম ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে দৃঢ়তার সঙ্গে সমাধান করতে হবে, যেখানে নীতি ও বিধিগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে—কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার অযৌক্তিক ক্ষমতা প্রয়োগ চলবে না। উচ্চ প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংস্কারের বিপদ এড়াতে যথাযথ পেশাদারি অবস্থান প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারসাম্য বজায় রাখার সময় এসেছে।

  • ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যাপক/বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
  • কার্টসি  —  বণিক বার্তা/ ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯

‘শেষ আপিলে দোষী না হওয়া পর্যন্ত আসামি মুক্ত থাকবে’

মইনুল হোসেন



ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট বিচারাধীন আসামিকে জেলে রাখার বাধ্যতামূলক বিধান বাতিল করে দিয়েছে। ফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলাসহ হাজার হাজার বন্দী উপকৃত হবে।

শেষ আপিলে সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অপরাধীদের জেলে পাঠানোর আইন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট গত নভেম্বর মাসে পরিবর্তন করে দেয়ার ফলে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে কারাবন্দী ব্রাজিলের সাবেক বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাশিও লুলা দ্য সিলভা মুক্তিলাভ করেছেন।

আলজাজিরার রিপোর্ট মতে, ব্রাজিলের পেনাল কোডের এই নতুন ব্যাখ্যা অনুযায়ী যেসব সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর আপিল এখনো শেষ হয়নি এরকম কয়েক ডজন বড়মাপের আসামি উপকৃত হবেন যাদেরকে গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছিল।

স্মরণীয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয় অনুকূলে থাকার পরও ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী প্রধান বামপন্থী নেতা, যার বয়স এখন ৭৪ বছর, নির্বাচনে লড়তে পারেননি কারাদণ্ড ভোগের কারণে।

একাধিক প্রকৌশলী সংস্থাকে সরকারি কাজ দেয়ার বিনিময়ে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট লুলাকে আট বছর ১০ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের মতো আরো অনেকে এখন কারাগারের বাইরে মুক্ত জীবনের স্বাদ পাবেন।

ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের এই যুগান্তকারী রায় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইকারীদের মধ্যে যুক্তি ও চিন্তার খোরাক জোগাবে। এই রায়ের পেছনে যে যুক্তি রয়েছে সেটা অনস্বীকার্য। শেষ বিচারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কারো কারাদণ্ড ভোগ করার অর্থ চূড়ান্ত বিচারে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই অন্যায়ভাবে শাস্তি ভোগ করা। আদালতের শেষ বিচারে যদি দেখা যায় তিনি কোনো অপরাধ করেননি এবং তিনি নির্দোষ তাহলে তার কারাগারে বন্দী জীবন কাটানোর সময়ের জন্য কী করা হবে? জীবনের হারানো অংশ ফেরত দেয়ার কোনো পথ নেই।

কারাজীবনের ক্ষতি কিংবা পরিবার-পরিজনের ভোগান্তি পুষিয়ে দেয়ার কোনো উপায় নেই। আর্থিক ক্ষতিপূরণও যথেষ্ট হতে পারে না।

শেষ বিচারে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিচারাধীন বন্দীকে জামিনে মুক্ত থাকার অর্থই তো সে জামিনের শর্ত অনুযায়ী সদাচরণ করবে এবং শেষ বিচারে শাস্তি হলে তার উপস্থিতি নিশ্চিত থাকবে। এটাই তো হবে ন্যায়বিচারের কথা।

অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ চূড়ান্ত বিচারে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাজা ভোগে বাধ্য করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। কিন্তু তারপরও নানা সমস্যার কথা তোলা হয় যাতে পুলিশি গ্রেফতারকে জেলে রাখার জন্য চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা হয়।

অভিযুক্তকে অপরাধী হিসেবে দেখা হয় কেননা শাস্তি প্রদানের এক ধরনের নিষ্ঠুর মানসিকতায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। বন্দী থাকতে গিয়ে তার যে মৌলিক অধিকারগুলো এবং বন্দিজীবনের অবমাননাসহ আরো কতভাবে যে তার ক্ষতি হচ্ছে তা ভাবা হয় না। তার জীবিকা অর্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সমগ্র সমাজের কাছে তাকে এবং তার ঘনিষ্ঠদের হেয় হয়ে থাকতে হয়।

এসব হতভাগ্যদের নিয়ে সমাজের উচ্চাসনে যারা বসে আছেন তারা মনে করেন আইনের ঊর্ধেŸ থাকার ভাগ্য নিয়ে তারা জন্মগ্রহণ করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য কোর্টে হাজির করলেই মনে করা হয় তারা অপরাধ করা লোক।

নিন্ম আদালতের সাথে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে মন-মানসিকতার এক বিরাট ব্যবধান রয়েছে। বিচার ব্যবস্থা বিচার ব্যবস্থাই। অসহায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পক্ষে জজ-বিচারকদের তো থাকতেই হবে। এটাই তো সুবিচারের কথা যে অভিযুক্তকে নির্দোষ হিসেবে দেখতে হবে।

শেষ বিচারিক আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে নিরপরাধ বলে গণ্য করতে হবে এবং আইন ও বিচারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যাবে না। শেষ কথা বলা যাবে চূড়ান্ত বিচার শেষ হওয়ার পর। চূড়ান্ত বিচার শেষ হওয়ার আগে কেন অভিযুক্তকে অপরাধী হিসেবে দেখা হবে? কেন তার ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করা হবে? চিন্তা-ভাবনা করে এসব বিচারসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে জজ-বিচারকদের।

এদিক থেকে দেখলে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে যুগান্তকারী রায় বলতে হবে। বিচারকে ন্যায্য ও মানবিক করার চিন্তা-ভাবনা চলছে পৃথিবীর সর্বত্র। সাজার জন্য সাজা; নির্দোষ প্রমাণ করার কথা ভাবা হয় না- এটা তো পুলিশি রাষ্ট্রের মানসিকতা।

চূড়ান্ত বিচারে সাজা যদি বহাল না থাকে তাহলে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির জীবন কেন জেলে পচবে, কেন তিনি পরিবারের পরিচর্যা ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত জীবনযাপনে বাধ্য হবেন, কেন তার সব অধিকার কেড়ে নেয়া হবে, এ বিষয়ে যে কেউ যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করতে পারেন, বোঝাতে পারেন। অধিকার হিসেবে এসব বিষয়কে আমরা যদি স্বীকার করে নিই তাহলে শেষ আপিলে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে অবশ্যই অভিযুক্তকে জেলে বন্দী রাখা অন্যায়। আপিলের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিন্ম আদালতের রায়ের কারণে কাউকে বন্দী রেখে সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে দেখলে আপিল পর্যন্ত চলমান প্রক্রিয়াকে বিচার প্রক্রিয়া বলার সুযোগ থাকে না।

বিখ্যাত জুরিস্ট লর্ড ডেনিং বলেছেন, তিনি বিচার করতে গিয়ে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও বিচারকের মানবতাবোধ মনে রাখেন।

প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় ভয়ঙ্কর অপরাধীদের তুলনায় অনেক বেশি নিরপরাধ লোক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বছরের পর বছর কারাদণ্ড ভোগ করার কারণে বহু নারী-পুরুষের জীবন শেষ হয়ে গেছে আপিল শেষ হতে না হতে। ইতোমধ্যে তাদের সুখ্যাতি বিনষ্ট হয়েছে। যৌবন হারিয়ে গেছে এবং পরিবার ভেঙে গেছে। তাই দীর্ঘ কারাজীবনের পর আপিলে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার কি আর তেমন অর্থ থাকে!

প্রতিহিংসার মনোভাবদুষ্ট বিচারিক ধারণার ঐতিহ্য ভেঙে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারকগণ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। এ কারণে অনেক বিচারক এবং আইনবিজ্ঞানী বিদ্যমান আইন ও বিচার ব্যবস্থায় মানবিক দিকের ওপর জোর দিচ্ছেন।

আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত আমরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের জামিনসংক্রান্ত আইন মেনে চলছি এবং পুলিশি শক্তির বাহাদুরি দেখানোর জন্য সেই আইনের প্রয়োগে অনেক বেশি কঠোরতা অবলম্বন করছি। শাসনতন্ত্র প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলো বা জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত মানবাধিকারগুলো তেমন কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। এ জন্যই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে হরদম জেলে পাঠানো হচ্ছে।

পুলিশি শক্তির এত বেশি অপব্যবহার করা হচ্ছে যে, রাজনীতি পুলিশি মামলার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং এ জন্য আদালত জামিন প্রদানে অনীহা দেখাচ্ছে। জামিন দানে অস্বীকৃতি কিংবা জামিন বাতিল করার ব্যাপারটি এখন নি¤œ আদালতের ক্ষমতা প্রদর্শনের সহজ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে যাদের খরচ বহনের ক্ষমতা আছে তারা জামিনের কোনো সুযোগ আছে কি না, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে এসে ভিড় করছে।

আমাদের বিচারিক প্রক্রিয়া নিরপরাধ ব্যক্তিকে পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহারের শিকার করার ব্যাপারটি এতটাই সহজ করে দিয়েছে যে, যেদিন থেকে কাউকে গ্রেফতার দেখানো হবে সেদিন থেকেই সে অপরাধী। পুলিশের ইচ্ছায়ই তাকে বন্দী জীবন যাপন করতে হবে। সুতরাং এই সময়ে পুলিশের হাতে থাকবে সব ক্ষমতা এবং জনগণ থাকবে সর্বতোভাবে অসহায়।

এ ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার রক্ষায় যে নিশ্চয়তা শাসনতন্ত্রে দেয়া হয়েছ তার কতটুকু মূল্য থাকে। জামিন পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে আমরা বলতে গেলে ঔপনিবেশিক আমলের চেয়েও নিকৃষ্ট অবস্থায় রয়েছি। তখন বিচার ব্যবস্থায় রাজনীতি ছিল না।

আস্থা করার মতো নেতৃত্বের অভাবে জনগণ সংগ্রাম করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে এমন ধারণা ক্ষমতাসীনদের যে কেউ পোষণ করতে পারেন। জনগণ তাদের মৌলিক ভোটাধিকার হারানোর ফলে সব অধিকারই অর্থহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের মতো লোকেরা তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করি, সেই সাথে নিজেদের জন্যও।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ চূড়ান্তভাবে সত্য বলে প্রমাণ করার আগ পর্যন্ত তিনি আইন ও আদালত প্রদত্ত জামিনের শর্ত অনুযায়ী অবশ্যই মুক্ত জীবনযাপনের অধিকার ভোগ করতে পারবেন। এটাই হবে মানবিক বিচার ব্যবস্থা। জামিনের আবেদন মঞ্জুর না করে পুলিশি বিচারে কাউকে জেলে আটক রাখা বিচার ব্যবস্থার জন্যও অপরাধ।

এ বিষয়ে ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের চেয়ে আমাদের দেশের আইনজীবী ও বিচারকগণ সুবিচারের সৈনিকসুলভ চিন্তা-ভাবনা এখনই শুরু করতে পারেন।

  • লেখক বিশিষ্ট আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
  • কার্টসি  —  নয়াদিগন্ত / ডিসেম্বর ১৪,  ২০১৯

Thursday, December 12, 2019

সরকারি হাসপাতালে ক্রয়ে দুর্নীতি

জড়িত কর্মকর্তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে

সম্পাদকীয়



সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের কেনাকাটায় দুর্নীতিতে জড়িত সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগটি সময়োচিত।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ অনুসন্ধান শাখার পরিচালকের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির তদন্ত চলছে। প্রথম ধাপে সরকারি অর্থ তছরুপসহ দুর্নীতির মামলা হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় রাখা হচ্ছে।

বস্তুত কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলে তার দায়দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের ওপরই বর্তায়। তবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে বা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, পর্যায়ক্রমে তাদেরও আনা হবে এ তালিকায়। আমরা মনে করি, কেনাকাটায় অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। তাহলেই এ ধরনের পদক্ষেপ দুর্নীতি রোধে সহায়ক হবে।

বস্তুত, সরকারি হাসপাতালের ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সরকারি হাসপাতালের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি চক্র এ দুর্নীতির মূল হোতা।

তারা কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করছে। হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি না কিনেই ভুয়া বিল-ভাউচারে টাকা তুলে নিচ্ছে। যে দামে যন্ত্রপাতি কিনছে, তার অনেক গুণ বেশি টাকার বিল করছে। আবার প্রয়োজন ছাড়াই মেডিকেল সরঞ্জাম কিনছে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ তৈরির জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে সোহরাওয়ার্দী, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সেট পর্দার (১৬ পিস) দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা!

এভাবে সেখানে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। আর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সোয়া তিন কোটি টাকাই লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এজন্য প্রয়োজন সব ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ইতঃপূর্বে দুদকের এক সুপারিশে বলা হয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করার জন্য ক্রয় কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা যেতে পারে।

এছাড়া হাসপাতাল পর্যায়ে যন্ত্রপাতি রিসিভ কমিটিতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যন্ত্রপাতি গ্রহণের ব্যবস্থা, যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার স্বার্থে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিধান করা ইত্যাদি পদক্ষেপের কথাও বলা হয় দুদকের সুপারিশে। দুদকের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল, হাসপাতালে বিদ্যমান মেডিকেল ইকুইপমেন্টের হালনাগাদ তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।

এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক স্টক রেজিস্টারের সঙ্গে একটি ডিসপ্লে যুক্ত করা যেতে পারে। হাসপাতালে ই-রেজিস্টার চালু করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, অভিযুক্তদের কালো তালিকাভুক্তির পাশাপাশি এসব সুপারিশও আমলে নেয়া উচিত। মোদ্দাকথা, সরকারি ক্রয়ের সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করতে হবে। সেই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠামাত্র এর সুষ্ঠু তদন্ত করে নিতে হবে ব্যবস্থা।

  • কার্টসি - যুগান্তর/  ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

মূল্যস্ফীতির থাবা

বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিন

সম্পাদকীয়

এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ ভাগ। বলা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের বাজারে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। মূলত পেঁয়াজসহ মসলাজাতীয় পণ্য এবং শাকসবজির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতির এই উল্লম্ফন ঘটেছে।

উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশে। এটি আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর বাইরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী মাসে ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বিবিএসের সিপিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং অক্টোবরে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে। শুধু এবারের ‘পেঁয়াজকাণ্ড’ নয়; অতীতেও অনেকেই সময় ও সুযোগ বুঝে বাজার অস্থিতিশীল করার নানা অপপ্রয়াস চালিয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে।

যোগসাজশের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি যদি বাধাগ্রস্ত করা হয়, তবে একদিকে যেমন ভোক্তাস্বার্থের হানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিগত কয়েক বছরে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যায়নি, যা মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ।

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে প্রায় প্রতিটি পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও শিশু খাদ্যের দাম ৫ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষত নিুআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায় বোধ করেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উচ্চবাচ্য হয় না বললেই চলে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই- এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

মূল্যস্ফীতির থাবা থেকে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্রদের সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের আর্থিক প্রণোদনামূলক কর্মসূচিগুলো আরও উৎপাদনমুখী ও মানবসম্পদ উন্নয়নমুখী করা প্রয়োজন।

এর ফলে একসময় হয়তো দেখা যাবে, প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দ্বারা তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। স্বস্তির বিষয় হল, এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামবৃদ্ধির চাপ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম কম।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও জিও পলিটিক্যাল কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আমাদের দেশীয় বাজারে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া বন্যার কারণে শাকসবজির উৎপাদন হ্রাস, ধানের আবাদ ও পণ্য সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ পরিস্থিতি যাতে স্থায়ী না হয় সরকার সে ব্যাপারে যত্নবান হবে, এটাই প্রত্যাশা।

  • কার্টসি - যুগান্তর/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

Wednesday, December 11, 2019

পেঁয়াজের মূল্য কি কমবে?

শায়রুল কবির খান


বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানত দু’টি কারণে পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে। প্রথমত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, দ্বিতীয়ত বাজার ব্যবস্থাপনা। প্রথম অংশে বাজার ব্যবস্থাপনার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই। দ্বিতীয় অংশে বিবেচনায় আনতে চাই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।


উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে জোরদার করার বিষয়ে জনগণের স্বার্থরক্ষায় শুরু থেকেই এই সরকারের জোরালো প্রচেষ্টার অভাব ছিল। জনগণের সরকারকে কী রকম প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হয়, তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম জিয়াউর রহমান সরকারের সময়। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের সরকারের আমলে ১০ মাস বৃষ্টি হয়নি। অনেকের ধারণা ছিল, খরায় কৃষকের উৎপাদন বন্ধ, দুর্ভিক্ষ হবে। কিন্তু তা হয়নি বরং ৮১ সালে দুই লাখ টন চাল রফতানি হয়েছে। খাদ্যগুদাম করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকসহ অনেক দেশের কাছে ঋণ সহায়তা চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সারাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে খাদ্যগুদাম তৈরি করতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন বিএনপির এই প্রতিষ্ঠাতা।



এক. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে পণ্যের মোট সরবরাহ ও মোট চাহিদার ভিত্তিতে। চাহিদার চেয়ে পণ্য সরবরাহ কম হলে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে—যতক্ষণ না চাহিদার ও সরবরাহে একটা সমতা আসে। বর্তমান সরকারের আমলে অস্বাভাবিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে দুটি কারণে। উৎপাদনের উপকরণের যেমন—বীজ, সার, তেল, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদির দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি। এ কারণেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত রয়েছে। সংরক্ষণ করা যায়, এমন সব পণ্যের বাজার গত কয়েক মাসে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আরও একটি কারণ হলো—সংরক্ষণ-পণ্যের গুদামে আকস্মিক তল্লাশি, কোনও-কোনও ক্ষেত্রে সিলগালা করা কিংবা বাজারে বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করা। কালোবাজারি ও ব্যবসায়ী সংরক্ষণকারীকে একই মনে করা ঠিক নয়। পণ্য সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কার্যক্রম। উদাহরণস্বরূপ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্মকৌশল ঠিক করে খাদ্য গোডাউন করেছিলেন বিধায় ধান ও চাল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছিল। যার ফলে আজ বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনও পণ্য উৎপাদনের পর সংরক্ষণ করেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ হয় বাজার ব্যবস্থাপনা।

দুই. মৌসুমভিত্তিক উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে অমৌসুমে আমরা চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, পেতাম না এবং সব উৎপাদিত পণ্যই পানির দরে বিক্রি হতো। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রমের ফলেই কৃষিপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। যথেষ্ট প্রতিযোগিতা থাকলে সংরক্ষণকারী, পণ্য অতিরিক্ত সময়ের বেশি একদিনও ধরে রাখবে না। অথচ পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য আমরা সরবরাহ ও চাহিদার অবস্থা বা ভারসাম্যের কথা চিন্তা না করে প্রথমেই আঘাতটা সংরক্ষণকারীর ওপর করার চেষ্টা করি। অবশ্য সপ্তাহকয়েক পরেই বাজারের আরও বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষকে পিছুটান দিতে হয়। ততদিনে সরবরাহ সংকট উত্তরোত্তর মূল্যবৃদ্ধিকে উসকে দেয়। পণ্য আমদানিকারক সিন্ডিকেট কিংবা বাজার ব্যবস্থার যেকোনও পর্যায়েই সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি হলে অবশ্যই তা হয় ভোক্তাদের চরম ক্ষতির কারণ। এ রকম বাজার ব্যর্থতাকেই বরং সরকার হস্তক্ষেপ করে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

সেটা বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই–এক্ষেত্রেও ধরপাকড়, হুমকি বরং বাজারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে পণ্য সরবরাহে আরও বাধা তৈরি করতে পারে। সিন্ডিকেট তৈরি হতে না দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের। আমদানিকারক কিংবা বাজারের যেকোনও পর্যায়েই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তৈরি হয় রাজনীতিকদের (ক্ষমতাসীন) পরোক্ষ সমর্থন কিংবা সরাসরি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগে। ব্যবসার যেকোনও পর্যায়ে যেন যথেষ্ট প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হয়, সেটাই সরকারের দেখার বিষয়। পূজা-পার্বণ, ঈদ ছাড়া বাংলাদেশে পণ্য চাহিদার আকস্মিক বৃদ্ধি ঘটে না বরং ইদানীং গ্রামে-গঞ্জেও ক্ষুদ্র ব্যবসার সুযোগ অসম্ভব রকম সীমিত হয়েছে। অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙচুরের কারণে বহু পরিবার কর্মহীন হয়েছে, ব্যবসায়ীরা ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ায় চাহিদায় ভাটা পড়েছে। তবু কেন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে?

(ক) দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যসামগ্রীর প্রায় প্রতিটির ঘাটতি রয়েছে।

(খ) আমদানি পর্যায়ে বর্তমান সরকারের রাজনীতিক ব্যবসায়ীদের আঁতাতের ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হওয়ায় মূল্যকে তারা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেয়েছিল। পাশপাশি আমদানির জন্য বড় বড় আমদানিকারকের ওপর নির্ভরশীলতার জন্য ওই অপরাজনীতি দায়ী।

(গ) পণ্য উৎপাদনে অত্যাধিক খরচ, সেচ-বিদ্যুৎ ও সারের বণ্টন অব্যবস্থাপনা এর জন্য দায়ী।

(ঘ) পণ্য পরিবহনে নানা অনিয়ম ও সম্প্রতি পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা, চাঁদাবাজি ও পুলিশের অবৈধ কার্যক্রমের খরচও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা অর্জন (মূল্যের ওঠানামার ব্যাপকতা কমে যাওয়া), দ্রব্যমূল্য সাধারণ ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে পারাটাই যেকোনও সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্যের বড় মাপকাঠি। অর্থনীতির প্রকৃত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেলেই কেবল এটি সম্ভব।

তিন. উৎপাদন ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রযুক্তি উন্নয়ন ও হস্তান্তরে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন উপকরণগুলোর সরবরাহ যতটা সম্ভব ছেড়ে দিতে হবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে। সর্বত্রই প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা ছাড়া বাজারব্যবস্থার সুফল উৎপাদক কৃষক শ্রেণি কিংবা ভোক্তা—কেউই পেতে পারে না। কৃষি উৎপাদন উপকরণগুলোর ক্ষেত্রে যেমন-সেচ ও চাষের যন্ত্রাদি, সার, পল্লী বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ও বিদ্যুৎ মূল্য, উন্নত বীজ, আমদানির ও বিক্রির ক্ষেত্রে সারচার্জ, ট্যাক্স অবশ্যই থাকবে না। সরকারি সার বিতরণে ডিলারশিপকে গ্রামের বাজারভিত্তিক বহু ব্যবসায়ীর কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। সার, বীজ, যন্ত্রাদি আমদানিতে এসবের যথাযথ মানকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমদানিতে সিন্ডিকেট  যেন গড়ে না ওঠে, সে জন্য যেকোনও আমদানিতে যথাসম্ভব অধিক সংখ্যক আমদানিকারককে সুযোগ দিতে হবে। ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল আমাদানিতে বিগত বছরে রাজনৈতিক-ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতার কারণে সিন্ডিকেটগুলোর মুনাফালোভী কার্যক্রমে দেশবাসীকে এসব পণ্যের জন্য আকাশছোঁয়া মূল্য দিতে হয়েছে। এখন ওই সিন্ডিকেটগুলো ভাঙার ব্যবস্থা করাই হচ্ছে সরকারের জরুরি দায়িত্ব।

চার. এসবক্ষেত্রে, পণ্য সংরক্ষণ সময়সীমা বেঁধে দেওয়াও বাজার কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। এই হস্তক্ষেপ বাজারে অংশগ্রহণকারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হলে এবং বাজার কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়লে দীর্ঘমেয়াদে বাজার দাম আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। বাজার কার্যক্রমে এজেন্টদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। যার কাজ তাকেই করতে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে খুব আপৎকালীন সময়ের জন্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় অত্যাবশকীয় পণ্যের-বাজারের স্টক গড়ে তুলতে পারে। যেন জাতীয় কোনও দুর্যোগের সময়ে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হলে তা বাজারে ছেড়ে নিম্নবিত্ত ও দুস্থ শ্রেণিকে সহায়তা দিতে পারে। এটাও হওয়া উচিত টার্গেট গ্রুপভিত্তিক। কোনোভাবেই উন্মুক্ত বিক্রয় নয়। বাজার ব্যবস্থার বিকল্প সরকার হতে চাইলে তা অর্থনীতিতে আরও বিপর্যয় ডেকে আনে। স্বাধীনতার পরপর বিধ্বস্ত বাজার ব্যবস্থায় সরকারি অত্যধিক হস্তক্ষেপে আমরা যে ভুল করেছিলাম, তার ধারাবাহিকতা কোনও না কোনও সময়ে কোথাও না কোথাও প্রতিফলিত হয়। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ কৃষিপণ্য বাজার ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দক্ষ। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াকে সামনে রেখেই এ কথার যৌক্তিকতা প্রমাণে যথেষ্ট গবেষণার ফলাফল কৃষি অর্থনীতিবিদদের হাতে রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও অসততার পরেও এই স্বাধীন বাজার ব্যবস্থাই বিগত সময়ে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দিয়েছে। উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থাকে অবমূল্যায়ন করার কোনও কারণ নেই। ব্যবসায়ী ও উৎপাদক শ্রেণি হচ্ছে অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি, তাদের আস্থায় নিতে হবে।

পাঁচ. বেসরকারি পর্যায়ে সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, গুদাম ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃষ্টিতে বিশেষ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণ, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা কার্যক্রম চালু করা উচিত। সংরক্ষণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয় সহায়তায় সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রশিক্ষণ সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। কৃষক উৎপাদকদের যেন পণ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ তারাও নিতে পারবেন।

ছয়. আমদানি ক্ষেত্রে কাস্টমস ও প্রশাসনের দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা বাজার ব্যর্থতা এর অন্যতম কারণ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য তারাও বহুলাংশে দায়ী। যেকোনও পণ্য চলাচল জরুরি খাত হিসেবে বিবেচিত হবে। কৃষি ব্যবসা এখন আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূলধারা। এই খাতকে বেগবান করতে সরকারের করণীয় যথেষ্ট কিছু রয়েছে। বাজেটে আমরা ভর্তুকি রাখি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে। এর ফলাফল উৎপাদক শ্রেণির হাতে পৌঁছে না। ভর্তুকিতে যে অদক্ষতা ও অপচয় অবশ্যই কমাতে হবে। বরং ভর্তুকির টাকা কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ব্যয় করলে তা অনেক বেশি লাভ দেবে। কৃষককে মূল্য সমর্থন দেওয়ার জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা ও ব্যর্থতাই পর্যবসিত। শুধু রাজনৈতিক ক্যাডাররাই সংগ্রহ কেন্দ্রে বিক্রির সুযোগ পায়। এসবের পর্যালোচনা করে গতানুগতিক এই কর্মসূচিগুলো সীমিত করা উচিত এবং ওইসব অর্থ দিয়ে বাজার অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত। প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় বিসিক শিল্পনগরী কার্যক্রমের আদলে অসংখ্য পাইকারি বাজার সৃষ্টি জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষি পণ্যের কেন্দ্রীয় বাজার হিসেবে ঢাকার আশেপাশে অন্তত আরও কয়েক ডজন বৃহৎ পাইকারি বাজার সৃষ্টি করা অপরিহার্য। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বাধাহীন পণ্য চলাচলের যত চ্যানেলে সৃষ্টি করা সম্ভব, তা-ই করতে হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে।

সাত. দ্বিতীয় অংশে আমরা ভুলে গেলে চলবে না, বর্তমান সরকার নৈতিকভাবে পরাজিত। সরকার পরিবর্তনে গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনৈতিকভাবে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই প্রশাসনকে দিয়ে দখল করে নিয়েছে। প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে যত রকম চেষ্টাই করুক নৈতিকভাবে পরাজিত সরকার জনগণের কাছে কোনও সময়েই মূল্যায়ন পাবে না। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না। সরকারি অতিরিক্ত ব্যয় মেটানোর জন্য সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংক মালিকরাও লুটপাট করছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি দফায় দফায় বৃদ্ধি করে জনগণের টাকায় সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। পরিবহণ সেক্টরের কথা আর নাই বললাম; তারা কথায় কথায় ধর্মঘটের ডাক দেন।

এরকম পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করবে তাকেও পুলিশ দিয়ে দমন করে চলছে। তাহলে কী দাঁড়ালো? একদিকে সরকার নিজে শক্তিশালী গোষ্ঠীর কাছে অসহায়, অন্য দিকে সাধারণ জনগণ সরকারের কাছে মূল্যহীন। এর চেয়ে পরিত্রাণ পেতে হলে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তবেই দেশের সার্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে জনগণ রক্ষা পাবে। তা না হলে দিনে-দিনে সবকিছুর মূল্য বাড়বে, সাধারণ জনগণের জীবনের মূল্য কমবে। দেখবেন পেঁয়াজের মূল্যও সয়ে গেছে, এরপর আরও একটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হবে।

  • লেখক —  সহ সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদ—জাসাস 
  • কার্টসি —  বাংলাট্রিবিউন / ডিসেম্বর ১১, ২০১৯ 

Impossible to meet growth target as economy under pressure


The government is borrowing the most from the banking system and if it continues, the government’s bank borrowing may cross the target

On the basis of various indicators, it is apparent that our economy is under tremendous pressure even though there is no recession yet. In essence, the country's economic progress is not satisfactory at all.  

Export growth is not good at all. In fact, this area has been experiencing negative growth over the last few months. The negative growth exceeded 17 percent in October. The growth was 7 percent during the July-October period. 

The import of capital machinery and industrial raw material has declined considerably. As a result, the government's revenue collection is not reaching the target. In fact, there is a big shortfall. This is creating big pressure on the government's fiscal management. The government has to borrow a large amount of money from internal sources to finance the budget deficit. 

The government is borrowing the most from the banking system because the sale of savings certificates has dropped due to various restrictions. 

If such borrowing continues, the government's bank borrowing may cross the target, and private entrepreneurs will be deprived. 

According to the latest Bangladesh Bank data, private sector credit growth has dropped to 10 percent, which is worrying. 

And if private sector investment does not pick up, there will be no new employment and no rise in revenue collection. In fact, the government will have to borrow again to finance the budget. 

The government should take effective initiatives after analysing this information. At first, the government should analyse the reason for the slump in export earnings. It has to find out if the problem is in the demand side or in the supply side.  

If there is a demand side problem, we have to find the reason for the decline in exports. Different countries including Vietnam and Cambodia are doing better than us in garment exports to the international market – then why are we lagging behind, what is our problem?   

We have to find the reason for it and solve the problem. Increasing exports by devaluing the Taka will not bring in any sustainable positive results. 

And the overall investment friendly environment in the private sector is not improving. Our position in the World Bank's 'ease of doing business index' is still 168, which means that 167 countries are above ours. 

On top of that, our rank is not good in the corruption index either. The government has to pay attention to the problems in the long run. 

Analysing all the factors, I apprehend that the GDP growth target will not be fulfilled in the current fiscal year too. Economic growth was shown to be 8.1 percent in the last fiscal year, but I do not agree with that figure. Again, for the current fiscal year, the GDP growth target has been set at 8:2 percent which will be impossible to meet. 

Link - https://bit.ly/2rr6e3V

Tuesday, December 10, 2019

অপরাধ প্রণোদনা পেয়েছে

জসিম উদ্দিন

যুক্তরাজ্যের পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হয়। নাগরিকরা রাস্তাঘাট, হাটবাজার, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশকে মুশকিল আহসানকারী হিসেবে পায়। শুধু যুক্তরাজ্য কেন, পুরো ইউরোপে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসেবে জনগণের সেবার দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে পুলিশ জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার দেশগুলোতে পুলিশের ভূমিকা ব্যাপক বিতর্কিত। আমাদের দেশে পুলিশবাহিনী মানে অনেক ক্ষেত্রে জনগণের মনে ভীতিজাগানিয়া একদল অস্ত্রসজ্জিত লোক। তারা আইনি সুরক্ষা নিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এর বিপরীত চিত্রও সামান্য কিছু পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবাদানকারী ৯৯৯ সার্ভিস একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে। ছিনতাই, ধর্ষণসহ অনেক সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ পুলিশবাহিনীর কিছু সদস্য করেছে, আর এ সার্ভিসটিকে ঠিক এর বিপরীত উন্নতমানের একটি সেবা বলা যায়। উন্নত বিশ্বের পুলিশের যে সেবা, তার ছোঁয়া এই সার্ভিসে পাওয়া যাচ্ছে।

এ সেবার আওতায় জরুরি ভিত্তিতে জীবনাশঙ্কায় পড়া মানুষ উদ্ধার পাচ্ছে, রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছে, দ্রুত ফেরি পারাপারের সহযোগিতা পাচ্ছে রোগীরা। ধর্ষণ, গৃহকর্মী নির্যাতন ও মুক্তিপণের জন্য পণবন্দীরা সহযোগিতা পাচ্ছেন। লিফটে আটকে পড়া, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডে সাহায্য মিলছে। পারিবারিক সমস্যায়ও এ সার্ভিসের আওতায় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মধ্যেও একদল আক্রান্ত লোক ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে উদ্ধার পেয়েছেন।

মেঘনার মিয়ারচরে বিআইডব্লিউটিএ খননকাজ চলছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের পর খননকাজে ব্যবহৃত ছয়টি পন্টুন কিনারে নোঙর করে প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা অবস্থান করছিলেন। রোববার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে একটি পন্টুনের নোঙর ছিঁড়ে যায়। ৩০ জন শ্রমিকসহ পন্টুনটি মেঘনায় ভেসে যায়। আসন্ন বিপদে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হন। উত্তাল নদীতে ডুবে যাওয়াই তাদের পরিণতি মনে হচ্ছিল। ঘোর বিপদের সময় এক শ্রমিক ফোন করেন ৯৯৯ নাম্বারে। ৩টার সময় এ আকুতি জানানোর ২ ঘণ্টার মধ্যে কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে। এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উদ্ধার পাওয়ার আশা যখন প্রায় সবাই ছেড়ে দিয়েছে, সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেছে পুলিশের ৯৯৯ নাম্বার।

এ নাম্বারে ফোন করতে কোনো খরচ হয় না। ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এ সেবা। বিপদগ্রস্তরা এ সার্ভিসের মাধ্যমে সমস্যার সমধান পান। পুলিশের প্রতি সাধারণ যে ধারণা, তাতে আক্রান্ত ব্যক্তি থানা পুলিশের সহযোগিতা পাবেন, এমনটি সাধারণত কেউ প্রত্যাশা করে না। কিন্তু এই নাম্বারে ফোন করার পর নিকটবর্তী থানার দায়িত্বশীল পুলিশের সাথে কথা বলিয়ে দেয়া হয়। তখন পুলিশ আর তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। ডিজিটাল পদ্ধতির এ একটা ইতিবাচক সুযোগ। কেউ চাইলে দায়িত্ব এড়াতে পারে না, কিংবা অন্যায় করতে পারে না। মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনায় এর মাধ্যমে সেবা পাওয়া গেছে। এমনটি আমাদের দেশে সাধারণত অবিশ্বাস্য।

রাজধানীর আবদুল গনি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে এ সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দুটো ফ্লোরে সাড়ে ৪০০-এর বেশি কর্মী কয়েকজন পুলিশ অফিসারের তত্ত্বাবধানে রাতদিন এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ৯৯৯ নাম্বারটি প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিচ্ছে। যেখানে মানুষ পুলিশবাহিনীকে এড়িয়ে চলে। একান্ত বাধ্য না হলে তারা পুলিশের ধারকাছ মাড়ায় না। সেখানে এই সার্ভিস শুরু হওয়ার পর বিগত ২০ মাসে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ কল এসেছে এ নাম্বারে। সেবা নিয়েছে প্রায় ২৬ লাখ লোক।

বিপরীত চিত্র ভয়াবহ। বাংলাদেশে পুলিশের সেবা তো দূরের কথা, কিছু ক্ষেত্রে নৈতিকতার এমন অবনতি ঘটেছে এবং কিছু পুলিশ নিজেরা আইন ভঙ্গ করছে। অন্যায় অপকর্ম করছে লাগামহীন। পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমের ছেলে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের পরিবারের সদস্যদের তুলে নেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার ‘অপরাধ’ পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদকে তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করে আসছিলেন। ঘটনার দিন রাসেলকে না পেয়ে তার স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও রাসেল তার ফেসবুকে শেয়ার করেন। এরপর ব্যবসায়ীদের তরফে প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নজরে এলে এসপি হারুনকে প্রত্যাহার করা হয়। এই ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে করা পুলিশ সুপারের অপরাধের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা নজিরবিহীন। সাধারণ ব্যাপার হচ্ছে, আইনের রক্ষক হিসেবে ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে নিরাপত্তা পাবেন। উল্টো পুলিশ নিজেই তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। হারুনকে প্রত্যাহার করার পর সংবাদমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে এখন অনেকে মুখ খুলছেন। ভুক্তভোগীরা বিপদে পড়ে যাওয়ার ভয়ে এত দিন তাদের বিরুদ্ধে করা অপরাধ চেপে গেছেন।

এসপি হারুনের চাঁদাবাজি নিয়ে ২০১৬ সালের ৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে রাসেল একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই চিঠিতে তিনি হারুনের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আনেন। বিস্তারিত বিবরণে তিনি জানান, হারুনের পক্ষে উপপরিদর্শক আজহারুল ইসলাম আম্বার ডেনিমের স্টোর ম্যানেজার ইয়াহিয়া বাবুকে ফোন করে টাকা দাবি করেন। এর আগেও রেস্তোরাঁয় হারুন তাকে ডেকে নিয়ে পাঁচ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানায় পাঠাতে বলেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আম্বার ডেনিমের ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গাজীপুর থানায় ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়। এসব যখন ঘটছে, তার প্রতিকার চেয়ে রাসেল পাত্তা পাননি। সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধীদের আশকারা কোন পর্যায়ে রয়েছে, এ ঘটনা তার দৃষ্টান্ত।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, একজন দুই কোটি টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে জায়গা কেনেন। তাকে ডেকে নিয়ে ওই জায়গা ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন এসপি হারুন। এ সময় তিনি জায়গার ক্রেতাকে অকথ্য গালিগালাজ করেন। পরে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে ক্রেতাকে জমির দখল নিতে হয়। পত্রিকা লিখেছে, কয়েক মাস আগে এসপির আদালতে ডাক পড়ে গার্মেন্টের অতিরিক্ত সুতা বা বন্ড ব্যবসায়ীদের। এসপি জানিয়ে দেন ডিবির পরিদর্শক এনামুল যা বলে তাই শুনতে হবে। তারপর ব্যবসায়ীদের গোডাউনে হানা দেয় এনামসহ পুলিশ সদস্যরা। বাধ্য হয়েই চার থেকে সাত লাখ করে টাকা দেন একেক ব্যবসায়ী। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই আটক করে নিয়ে যাওয়া হতো থানাহাজতে। এমন অনেক ঘটনার মধ্যে একটির শিকার সিদ্ধিরগঞ্জের বালু ব্যবসায়ী শাহজাহান। দুই মাস আগে এক সন্ধ্যায় ঘটে ঘটনাটি। এসপি হারুনের ছক অনুসারে নাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী হোসেন আলার কার্যালয়ে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশের এসআই আলমগীরের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী শাহজাহানকে আটক করে নিয়ে যায়।

কাউন্সিলর আলা জানান, পরে কাউন্সিলর আলাকেও ডেকে নেয় ডিবি। ডিবি অফিসে নিয়ে শাহজাহানের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে হারুন। এ সময় তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। মাদক মামলায় ফাঁসানো থেকে শুরু করে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে ২০ লাখ টাকা দিতে সম্মত হন ওই ব্যবসায়ী। কাউন্সিলর আলার উপস্থিতিতে নগদ ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েও সে দিন মুক্তি পাননি শাহজাহান। পরদিন সকালে আরো ২২ লাখ টাকা (মোট ৩৯ লাখ ৫০ হাজার) দিয়ে মুক্তি মেলে শাহজাহানের। এ ঘটনার পর থেকে ব্যবসায়ী শাহজাহান অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

নারায়ণগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনকে ডেকে নিয়ে ৪৫ লাখ টাকা আদায় করেন এসপি হারুন। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি জিডি করতে গেলে এই অভিযোগটিকে ২২ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলায় রূপ দেন এসপি হারুন। এই অভিযোগে জয়নালকে নারায়ণগঞ্জ থানায় ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করেন তৎকালীন ওসি কামরুল। এ সময় তার কাছে এসপির নির্দেশের কথা বলে এক কোটি টাকা দাবি করা হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আরো মামলার হুমকি দেয়া হয়। পরে ২০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন জয়নাল। তাতে কাজ হয়নি, আরো তিনটি মামলা করানো হয়। অবশেষে মামলা ও রিমান্ড নিয়ে নির্যাতন করার ভয় দেখানোর পর ৪৫ লাখ টাকা দেন জয়নাল। জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি নিজ হাতে তিন বারে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি এসপি হারুনের কাছে। বাকি টাকা দেয়া হয়েছে আমার স্ত্রী ও অন্যদের মাধ্যমে। এ ছাড়া তিনি জানান, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অস্ত্র জমা দিতে যান তিনি। এ সময় থানায় ফ্লোরে একটি গুলি পড়ে যায়। পরে এসপি হারুনের নির্দেশে তাকে আটকে রেখে অভিযোগ করা হয় জয়নাল পুলিশকে গুলি করেছেন। এ ঘটনায় ১৫ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন জয়নাল আবেদীন।

পত্রিকা আরো লিখেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের উৎসব পরিবহনের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে এসপি হারুন একটি পক্ষকে সমর্থন দেন। এ বিষয়ে উৎসব পরিবহনের চেয়ারম্যান কামাল মৃধা বলেন, আমি বৃদ্ধ বয়সে গত ২০ মে থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ বার এসপি অফিসে গিয়েছি। তিনটি লিখিত অভিযোগ করেছি, কিন্তু আমি আইনি সহযোগিতা পাইনি।

এগুলো এসপি হারুনের সর্বসাম্প্রতিক ক্রিয়াকাণ্ড। তার অপরাধী হয়ে ওঠার একটি দীর্ঘ পটভূমি রয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিভাবে অপরাধী হন তার ঘটনাটি একটা কেসস্টাডি হতে পারে। বর্তমান সরকারের একেবারে প্রথম মেয়াদের ঘটনা। ২০১১ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃস্থাপনের দাবিতে বিএনপি জোট হরতাল ডেকেছে। তৎকালীন সংসদে বিরোধী দলের চিপ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে সংসদ ভবনের পাশে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। ফারুকের সাথে পুলিশ সদস্যদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার হারুন আর রশিদ তার ওপর চড়াও হন। হারুন তাকে ঘুষি ও লাথি মারেন। ফারুক দৌড়ে পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে চান। কয়েকবারই তাকে ধরে এনে মারধর করেন হারুন। হারুনের উপর্যুপরি মারধরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাথায় তাকে ১১টি সেলাই দিতে হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের আজকের অব্যাহতি পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা হারুন আর রশিদই অপরাধটি করেছিলেন।

ওই ঘটনায় লুকোছাপা কিছু ছিল না। সব কিছু একেবারে প্রকাশ্যে ঘটেছিল। মারধরের পুরো ঘটনাটি পরে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এসেছে। স্পষ্ট দেখা গেছে, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কিভাবে পেটানো হচ্ছে। তারপর সাধারণভাবে মনে হয়েছিল, এ ঘটনার বিচার হবে। দেখা গেল উল্টো জয়নাল আবদিনের বিরুদ্ধে পুলিশি মামলা হয়েছে। তিনি মার খেয়ে মামলার হয়রানিতে পড়ে গেলেন। হাসপাতাল থেকে তিনি এ হয়রানির শিকার হতে লাগলেন। অপরাধী পুলিশ অফিসার হারুনের বিচারের পরিবর্তে অপরাধের শিকার সংসদ সদস্য জয়নুল আবদিনের বিরুদ্ধে হয়রানির এমন চিত্র বাংলাদেশের পুলিশের জন্য একটা বার্তা বহন করেছে। এই ঘটনা এই বার্তাই দিয়েছে ‘অপরাধ’ যা সংঘটিত হয়েছে সেটা নয়। অপরাধ হচ্ছে ক্ষমতাসীনরা যা ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করছে। অন্ততপক্ষে সংসদ জয়নাল আবদিনের সহকর্মীরা নিজেদের মানসম্মান রক্ষার স্বার্থে সে দিন এগিয়ে আসতে পারতেন। তারা কেউই সে দিন এগিয়ে আসেননি। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের উন্নতি এবং পুরস্কার পেতে দেখা গেছে। তিনি সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পেয়েছেন। তারপর আজ জন্ম নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তা হারুন।

হারুনের বিরুদ্ধে উপস্থিত সব অভিযোগ নারায়ণগঞ্জের। তিনি এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন ও গাজীপুরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময়ে তিনি একেবারে নিয়মকানুন ও আইনের রক্ষক হয়েছেন সেই খবর নেই, বরং এই তিনিই একই অপরাধের কাজ করে থাকতে পারেন একই সময়ে। সুযোগ পেলে ভুক্তভোগীরা নিশ্চয়ই তা প্রকাশ করবেন। ব্যাপার হচ্ছে, এ ধরনের অপরাধের জন্য অবশ্যই একা হারুন দায়বান নন। তাকে এভাবে গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। কারণ, অপরাধ সংঘটনের জন্য তিনি কোনোভাবে শস্তি পাচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় এটাই স্বাভাবিক যে, অপরাধী তার অপরাধের মাত্রা বাড়াবে।

অপরাধ একটা সংক্রামক ব্যাধি। সংঘটিত একটি অপরাধ সংবাদমাধ্যমের খবরে ছড়িয়ে পড়লে সেই অপরাধ আরো বেশি করে সংঘটিত হয়। নতুন অপরাধ চালু হওয়ার ক্ষেত্রে একজন থাকেন এর সূচনাকারী। এর পরে এর অনুসারী হয়ে যান আরো অনেকে। হারুন যখন রাজনৈতিক নেতাদের পেটানোর এমন ব্লাংক চেক পেলেন, সেটা অনেকের জন্য ছিল সবুজ সঙ্কেত। এ সুযোগের অসৎ ব্যবহার অনেকে করেছেন। সরকার এর মাধ্যমে বিরোধীদের ন্যায্য দাবিগুলো দমন করার সুযোগ নিয়েছে। এখন তো আর রাজনৈতিক বিরোধিতা নেই। অপরাধী মন তো কখনো বসে থাকবে না। তারা এখন অন্যান্য অপরাধে বেশি করে জড়িয়ে পড়ছেন। সেগুলো হচ্ছে আর্থসামাজিক অপরাধ।

অপরাধকে ঘৃণা করতে চাই, অপরাধীকে নয়। যারা ঘৃণ্য কর্মে জড়িয়ে পড়েন, তারা ফিরেও আসতে পারেন। প্রতিটি মানুষের জন্য পরিশুদ্ধ হওয়ার নিশ্চয়ই একটি সময় রয়েছে। বারবার সুযোগ পেয়েও যারা সঠিক শুদ্ধ হতে চান না, তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত। মানুষের সমাজে ভালোর জন্য পুরস্কার এবং মন্দের জন্য তিরস্কারের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই অর্থে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ইনসাফপূর্ণ বলা যায় না। এখানে যার শক্তি আছে, আইন ও প্রশাসন তার পক্ষে কথা বলে।

  • কার্টসি — নয়াদিগন্ত/ নভেম্বর ১৩, ২০১৯

Monday, December 9, 2019

৫ মাসে পোশাক রফতানি কমেছে ৭.৭৪ শতাংশ


তৈরি পোশাক রফতানি উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করেছে। টানা চার মাস ধারাবাহিকভাবে কমছে পোশাক রফতানি। নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, অক্টোবরে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে যায় পোশাক রফতানি। এই খাতটির এমন নেতিবাচক প্রবণতায় হতবাক তৈরি পোশাক এবং এর ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ডে শত শত শিল্পের সাথে যুক্ত লাখ লাখ মানুষ। 

সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রণোদনার অভাব, অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক-ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাস প্রতি বছরই রফতানি প্রবৃদ্ধি ভালো থাকে। গত ১০ বছর ধরে প্রতি অর্থবছরেই প্রথম পাঁচ মাসে গড়ে ৬ থেকে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। এবারই প্রথম দেখা গেছে নেতিবাচক চিত্র। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) তৈরি পোশাক খাতে এক হাজার ৩০৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে এই খাতে আয় হয়েছিল এক হাজার ৪১৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে ওভেন পোশাকে রফতানি আয় কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, আর নিট পোশাকে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই দুই খাতে আয় কমেছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ২০ ও ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রফতানি চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয়ে তৈরি পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতে রফতানির অন্যান্য উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশে দাঁড়াবে। পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে পুরো রফতানিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি খাতে আয় কমেছে সাড়ে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়। 

পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, রফতানিতে নেতিবাচক চিত্রের প্রধান কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অতিমূল্যায়ন। তারা জানান, প্রতিযোগী দেশগুলো ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রা অবমূল্যায়ন করেছে। এতে তাদের মূল্য সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে না এসে প্রতিযোগী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। ক্রয়াদেশ ঘাটতিতে পণ্য রফতানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানি কমছে। আগামী কয়েক মাসও ক্রয়াদেশ কম থাকবে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, ক্রয়াদেশের বেশি অংশ পাচ্ছে ভিয়েতনাম। এছাড়া পাকিস্তান এবং ভারতেও ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে। সবগুলো দেশই এ খাতের রফতানিতে প্রণোদনা ও বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। 

উদ্যোক্তাদের দাবি, গত কয়েক বছরে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৫১ শতাংশ। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়, সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স, পৌরকর এবং বন্দর খরচ। কিন্তু পণ্যের দাম সে তুলনায় বাড়েনি, উল্টো কমেছে। কমেছে রফতানির পরিমাণও। অসম এবং অনৈতিক প্রতিযোগিতায় রফতানিমূল্যও প্রতিনিয়ত কমছে। এসব কারণে রফতানি বাণিজ্যে ৮৪ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাকশিল্প খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন কারখানা। গত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১,৩০০ কারখানা। বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাই এবং অসন্তোষ। স্বল্পসংখ্যক বড় কারখানার কথা বাদ দিলে অধিকাংশ কারখানার জন্য কোনো সুসংবাদ নেই আগামী দিনের রফতানি আদেশে। 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছি। গত চার বছরে ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের মুদ্রা অবমূল্যায়ন করলেও আমাদের মুদ্রা এখনো শক্তিশালী। নীতি-নির্ধারকরা বসে যদি কৌশল নির্ধারণ না করেন, তাহলে খাতটিকে গভীর সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য শুধু নয় বরং দীর্ঘমেয়াদে শিল্প টিকিয়ে রাখার স্বার্থেও কৌশল নির্ধারণ জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত বিপুল পরিমাণ ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নিয়ে আমরা কম রফতানির ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই আমাদের বিকল্প ও সৃজনশীল সমাধানে আসতে হবে। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, দেশের রফতানি আয় তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে বর্তমানে পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই অর্ডার কমছে। সাথে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক-ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে চলছে নিম্নগতি। রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরো কমে যাবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। 

অভিযোগ রয়েছে, পোশাক খাতে রফতানির এমন নেতিবাচক অবস্থার জন্য দায়ী সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। চলতি অর্থবছরের বাজেটে পোশাকসহ সব খাতের উৎসে কর এক শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে হোঁচট খায় শিল্প। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত নিজ অবস্থান থেকে ফিরে আসে। এক শতাংশ থেকে কমিয়ে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়। যদিও বিজিএমইএ চায়, সুবিধাটি যেন ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। তৈরি পোশাক খাতের চলমান দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) লেখা এক চিঠিতে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক এ দাবি জানান। বিজিএমইএ’র ওই চিঠিতে রফতানি পোশাক খাতের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮৪ শতাংশ রফতানি আয় অর্জনকারী এই শিল্পটি বর্তমানে দেশ-বিদেশে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। 

বর্তমানে পোশাকশিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত দরপতন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তাই এই খাতকে সহায়তা দেয়ার অংশ হিসেবে উৎসে কর কমানো হয়েছে। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রফতানি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট রফতানি হয়েছে চার হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। এই আয় আগের অর্থবছরে রফতানি হওয়া তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ রফতানি বেশি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। এ বছর রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। সব মিলিয়ে বছরটিতে তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। আর বিদায়ী অর্থবছরের পোশাক রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। আবার পোশাকশিল্পের মধ্যে ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে এক হাজার ৭২৪ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে নিট পোশাক রফতানি হয়েছে এক হাজার ৬৮৮ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সামনে সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। আমরা এখন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে পণ্যের দাম কমাচ্ছি। অনৈতিক প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে সবারই ক্ষতি করছি। 

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের পুরো অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক খাত ৩০ লাখ নারী শ্রমিকের ক্ষমতায়ন করেছে। শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের সাথে যুক্ত ছোট ছোট দর্জি, মুদি দোকানি, ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকানদার, লিপস্টিক বিক্রেতা, লেইস ফিতার হকার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অনেক খাতে এর প্রভাব পড়বে। আর আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর তো টিকে আছে পোশাকশিল্পের ওপরই। এ শিল্পের কিছু হলে আর্থিক খাতে চরম দুর্গতি নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

  • কার্টসি - দিনকাল/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

Sunday, December 8, 2019

‘I want to go back to class’

Nahid Riyasad
Rushad Faridi

Rushad Faridi is an assistant professor at the department of economics, University of Dhaka. He is on forced leave since 2017 and yet to go back to class despite the High Court ruling terming the university decision illegal. As a symbolic protest, he took a class at the staircase of social science building attended by students from different disciplines. During a conversation with Nahid Riyasad, Rushad Faridi shares his struggle for a just academic environment and the plummeting quality of tertiary education in Bangladesh.

New Age Youth: What is the recent update? Have you started earned back your access to class rooms? 

Rushad Faridi: I started protesting because even after the High Court ruling terming my forced leave illegal, the department is yet to give me my rightful access to classrooms on a flimsy ground that the administration is yet to receive the certified copy of the order. I did not expect such media attention on my protests; however this might help to create a public pressure on the department authorities to comply with the High Court order. I am hopeful that this whole episode will be behind me and it will not resolved by next week.

New Age Youth: Where did all these start from?

Rushad Faridi: It all started in 2012, when the department authorities brought up my relationship with a student back in 2010; that student was living abroad at the time when the allegation was made. In an emergency meeting on the issue, I told the authorities that they have been choosing to overlook a number of professional, academic and administrative irregularities but how come they are so eager to discuss my relationship with a student from two years back. Due to my choice of words and rightful indication towards some serious issues of the department, the authorities sent me on forced leave in September 2012.

The department launched an official investigation against me on the allegations. Four years went by but that committee submitted neither any reports nor any punishment for me. Forced leave is not a punishment and the department cannot keep anyone on forced leave forever. According to the university provision, forced leave cannot be extended beyond a 90-day period.

As the authorities could not charge me with anything serious, they thought barring me from taking classes could be an alternative punishment, even though it goes against the university rules.

New Age Youth: Against what kind of irregularities of the department did you speak up?

Rushad Faridi: There are a lot of administrative and academic irregularities in the department. In a regular semester, there are 28 classes for a course. In reality, there are many instances, not even half of the required classes are taken. Students don’t get their checked mid-term exam-papers even after appearing in the semester finals. These are nominal crimes compared to others.

A teacher’s room in the economics department was opened after 30 years. That too was because teachers from other departments protested as they suffer from the scarcity of space, a teacher kept a room occupied but never used it for once in three decades. The janitor who cleaned the room was almost fainted because of the pungent gases formed there over the decades.

There are allegations that one teacher uses the same question paper year after year. Another teacher finishes the entire semester by taking presentations from the students on every class so s/he wouldn’t have to prepare for the lecture.

These are severe academic crime but such practices are internalised and institutionalised in our academia to such extent that one teacher, during a meeting in her room asked me, how could I violate the sanctity of the department? For them, the irregularities are entirely normalised and this is how a department should run and if anyone rises against questions — the sanctity of the department is violated.

New Age Youth: When did that forced leave ended and how? What happened after that?

Rushad Faridi: The leave ended in December 2015. From January 2016, I understood that the department is not willing to resolve the matter, so I volunteered and sought a mutual understanding between me and the department. The department perceived this as admitting my faults. Furthermore, the authorities did not offer me any classes in the entire 2016.

It felt like even my presence is embarrassing for the department because I get involved in a lot of student related activities; however, the authorities want a still academic environment where students would not involve in critical thinking. This silence among the students gave the authorities a comfort zone because no one is pointing finger to their irregularities.

From 2016 to mid-2017, I wrote seven letters to the department pointing out all the irregularities in rather strong language. The chair, through an official letter, demanded an apology from me but I said I can apologise for my language, but not for the allegations I brought up. Then I offered an apology, but demanded an investigation on the allegations I mentioned. They did not inform me of any investigation.

Meanwhile, I wrote an op-ed at a Bengali national daily where I argued not only the public university busses are going on the wrong direction (plying on the wrong side of the road is a common practice among public university buses during traffic congestion) but also the public universities are moving on the wrong direction. I pointed out that politically appointed vice-chancellors are a major concern and they can only serve the partisan interest. My piece went viral which enraged different interest groups including a former vice-chancellor and teachers loyal to him. My department took the chance and handed me another forced leave.

New Age Youth: Your symbolic protest of taking an open class on the staircase has attracted a lot of media and public attention. Would you like to share your experience?

Rushad Faridi: During my recent protest, members of Bangladesh Students Union offered me the idea of taking an open class. More than 80 students from different departments and disciplines attended the class making it a really enjoyable experience and so much so, the second open class will be held on next week.

I got such tremendous response from students that I am determined to continue the class, even if I start taking formal classes in the department. In a regular class, we cannot expect such diversity of ideas and interest.

New Age Youth: The opinion-piece you wrote blamed political appointment of vice-chancellors for the current academic environment in public universities. Recently, students protested at Jahangirnagar University, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science and Technology University, University of Barisal and Pabna University of Science and Technology against corruption and irregularities of their respective VC’s. What can we make of this?

Rushad Faridi: Political appointment of vice-chancellors is a very serious issue in our public universities since the independence. Following the trend of extreme centralisation of power, loyalty of the VCs’ to the government is increasing. We cannot say this is a new problem.

This has been seriously hampering the relationship between teachers and students. Even when I was a student during the 1990s, the only relation among most of the teacher and their student were of fear. As there are is no accountability of the teachers, this has become the norm.

From my experience, I have seen a teacher do not need to take class and only have to produce poor papers in whatever journal and their promotion is guaranteed. Under this situation, who would want to work for a proper research when they are getting desired post so cheaply?

The condition is such now that the department is monitoring social media activities of the students and if anyone is found interacting on my social media post they may face consequences. So, the students are living in an intimidating environment. Even today, I met a group of students who were scared while talking to me as they have a upcoming viva-voce and were scared of losing mark because they were seen talking to me. When the top of the organisation is on special assignment of entertaining a certain group’s interest, this is bound to happen.

New Age Youth: On the topic of research, neo-liberalism policies are at play in our tertiary education sector. These policies are criticised by experts as these aim to shape higher education more market oriented rather than contextual research focused? What is your take on the question?

Rushad Faridi: I believe that arguing on whether quality research is produced or not is diverting the attention from the main crisis. Research is the job of a university. Considering the current state of public universities, they are not even schools because they cannot do their basic job properly — delivering education. Production of knowledge is secondary and is important only if an institution can deliver education properly.

Let alone research, human rights are violated in the university campuses right and left. A residential student has to go through metal and physical stress only to survive the prevailing academic environment.

In this scenario, without deconstructing the entire system, the public universities are on the path of a slow and gradual demise.

  • Nahid Riyasad is a member of the New Age Youth team
  • NewAge/Dec 9, 2019 

ব্যাংক খাতে অশনিসংকেত

মুঈদ রহমান


শিরোনামটি গত ২৯ নভেম্বরের যুগান্তর থেকে ধার নিয়েছি। ধার করায় আমার লজ্জা লাগেনি। কেননা ব্যাংকিং খাতের যে ভয়ংকর চিত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তাতে লাজলজ্জার বিপরীতে আতঙ্ক আর ভয়াবহতাই বেশি কাজ করছে। খেলাপি ঋণ, ফোর্সড লোন আর ঋণ জালিয়াতিতে ভেঙে পড়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। আমরা সবাই জানি, আর্থিক লেনদেন হচ্ছে একটা আস্থা ও বিশ্বাস। এখানে সাক্ষ্য-প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই। আপনি যদি বছর চারেক আগের কথা আমলে নেন তাহলে দেখবেন, ‘পৃথিবীতে মোট অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশ্বের সব মুদ্রা আর ব্যাংক নোটের মূল্যমান ৬ ট্রিলিয়ন ডলারেরও কম।

অর্থাৎ আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ বা আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রদর্শিত ৫০ ট্রিলিয়নেরও অধিক অর্থের অস্তিত্ব আছে শুধু কম্পিউটার সার্ভারে। ফলে, বেশিরভাগ ব্যবসায়িক লেনদেন এক কম্পিউটার থেকে অন্যটিতে ইলেক্ট্রনিক তথ্য স্থানান্তরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়, বাস্তবিক কোনো ক্যাশ বিনিময় ছাড়াই’ (ইয়ুভাল নোভাল হারারি, স্যাপিয়েন্স; পৃষ্ঠা : ১৯৪)। এটা এক ধরনের বিশ্বাস ও আস্থার ওপর স্থাপিত। তাই মাঝে-মধ্যে আমেরিকার অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক পতন ঘটলে ডলারের দাম পড়ে যায়, মানুষ তখন ইউরো খোঁজে। আস্থাহীনতাই মানুষকে বিকল্প পথে যেতে বাধ্য করে। আমরা আশা করব সরকার যেন আর্থিক খাতে মানুষের আস্থাকে সমুন্নত রাখে।

সরকারের ভুল নীতির কারণে ব্যাংগুলোতে খেলাপি ঋণের মাত্রা লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর, এ ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। হিসাবমতে, মোট প্রদত্ত ঋণের প্রায় ১২ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অবলোপিত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা হিসাবের বাইরেই রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয়বার ক্ষমতা নেয়ার শুরুতে অর্থাৎ ২০০৯ সালে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। কী করা যায়। সে সময়েও খেলাপিদের সুবিধা দিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করে। ১১টি শিল্প গ্রুপের মোট ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

কিন্তু দুঃখজনক এবং খুব স্বাভাবিক দৃশ্য হল ১১টির মধ্যে মাত্র ২টি শিল্প গ্রুপ ছাড়া বাকি ৯টি গ্রুপ টাকা পরিশোধ করছে না। এত সুবিধা দেয়ার পরও ২০১৮ সাল নাগাদ খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ তো হিসাবের কথা। অবলোপন ঋণ, যেটা কিনা আলাদা লেজারে স্থিতি অবস্থায় আছে, কোনোদিন সম্ভব হলে সুদসহ আদায় হবে, তার পরিমাণ ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। তাহলে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়াল ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। পরিমাণটা আমাদের ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ। ভাবা যায়! আর্থিক খাতের এমন দুর্দশা মেনে নেয়া যায় না। একের পর এক সুবিধা দিয়েও কোনো ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

এমনটি আয়করের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। শত সুবিধা সত্ত্বেও খুব কম লোকই কালো টাকা সাদা করেছেন। এমন হওয়ার কারণ হল কোনো যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার সংস্কৃতি। ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন, এ খেলাপিদের তোয়াজ না করে তাদের গতি নেই। তাহলে কি তাদের প্রতি ওপর মহল কোনো অশুভ দায়ে দায়বদ্ধ! এমন আশঙ্কা দূরে রাখার মতো কোনো স্বচ্ছ উদাহরণ তো আমরা দেখিনি। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইউজিসি প্রফেসর মইনুল ইসলামের বক্তব্য পরিষ্কার- ‘ঋণখেলাপিদের অন্যায্য সুবিধা দেয়ার জন্য এসব খামখেয়ালিপনা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী হিসেবে খেলাপিদের এসব সুবিধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। মনে হচ্ছে সময়টা ঋণখেলাপিদের। নতুন সিদ্ধান্ত খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রভাব ফেলবে না, বরং একে খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত বলা যায়। ঋণখেলাপিদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। উচ্চ আদালতে যেন বেশিদিন সুবিধা না পায়, তারও উদ্যোগ নিতে হবে’ (প্রথম আলো, ২৬.০৩.২০১৯)। আমরাও তার সঙ্গে একমত। কারণ এ টাকা সাধারণ মানুষের টাকা। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ভোগ অসম্পূর্ণ রেখে টাকা ব্যাংকে রাখি। সেই টাকার নিশ্চয়তা আমরা চাইবই। সরকারের দুর্বল আচরণের সুযোগে বেড়ে উঠছে খেলাপি ঋণের পাহাড়।

আরেকটি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ফোর্সড লোন’। ‘পণ্য আমদানির (ঋণপত্র বা এলসি) বিপরীতে বিদেশি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিয়ে থাকে দেশি ব্যাংক। দেশে আমদানি পণ্য আসার পর শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক টাকা পরিশোধ করলে ওই অর্থ বিদেশি ব্যাংককে দেশি ব্যাংক পরিশোধ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো কারণে অর্থ পরিশোধ না করলে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী গ্রাহকের নামে ব্যাংক ফোর্সড বা বাধ্যতামূলকভাবে সমপরিমাণ ঋণ সৃষ্টি করে। ওই অর্থে ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের দেনা শোধ করে। এভাবে ব্যাংক গ্রাহকের নামে ফোর্সড লোন সৃষ্টি করে। মূলত আমদানির বিপরীতেই এসব ফোর্সড লোন সৃষ্টি করা হয়েছে’ (যুগান্তর, ০১.১২.২০১৯)।

রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকে গত জুন পর্যন্ত ফোর্সড লোন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ফোর্সড লোন দিয়েছে জনতা ব্যাংক, ৫ হাজার ৬৮০ কেটি টাকা। ডিসেম্বর ’১৮ থেকে জুন ’১৯- এই ৬ মাসে জনতা ব্যাংকের ফোর্সড লোন বেড়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা। এ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ফোর্সড লোন বেশিরভাগই হচ্ছে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে। এ ধরনের ঋণ যাতে আর না বাড়ে সেজন্য ব্যাংকগুলোর আরও যাচাই-বাছাই করে এলসি খোলা উচিত। ফোর্সড লোন বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।’

ব্যাংক খাতে তৃতীয় অভিশাপটি হল ‘ঋণ জালিয়াতি’। সম্প্রতি বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক এ অপকর্মটি করেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা নাফ ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫০ কোটি টাকা এবং একই ব্যাংকের মহাখালী শাখা হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কেটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে। অবাক কাণ্ড হল ওভার ভেল্যুয়েশনের কথা বাদ দিলেও ‘নাফ ট্রেডিং’ নামের কোনো কোম্পানির অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঋণের টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

অপর কোম্পানি হাসান টেলিকম পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করালেও কোনো পণ্য আমদানি না করেই ঋণের টাকা ছাড় করিয়ে নিয়েছে। এমন জালিয়াতি বিরল বলে দাবি করেছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের ওপর একটি তদন্ত পরিচালনা করে। সেখান থেকেই এ ধরনের জালিয়াতির তথ্য প্রকাশিত হয়। সাধারণ মানুষের ঘামঝরা আয়ের আমানত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কোনো ব্যাংকের নেই। এ ধরনের খবর আমাদের মনে হতাশার জন্ম দেয় বৈকি!

ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে একটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে- ঋণের উচ্চ সুদের কারণে খেলাপি হচ্ছে, নাকি খেলাপিদের কারণে উচ্চ সুদ কমানো যাচ্ছে না? এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে এবং তা বলতে পারেন সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থমন্ত্রী সরাসরিই বলেছেন, আমাদের দেশে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রধান কারণ হল ডাবল ডিজিট সুদ। ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে এ মাত্রায় সুদহারের পরিবর্তে আগামী জানুয়ারি থেকে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পক্ষে রায় দেয়।

অপরদিকে এফবিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেছেন, ‘এক অঙ্কের সুদের হারের কথা এক-দেড় বছর ধরে শুনছি। কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। একেকবার একেক কথা বলা হচ্ছে।’ যিনি উদ্যোক্তা তিনি তো চাইবেনই স্বল্প মাত্রার সুদ। কিন্তু তারপরও উদ্যোক্তারা মনে করেন, খেলাপি হওয়াটা অনেকটাই ইচ্ছাকৃত এবং রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত।

ব্যাংকারদের কথাও আমলে নিতে হবে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি এম শহীদুল ইসলামের বক্তব্য হল, ‘তহবিল ও পরিচালনা খরচ মিলেই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা খেলাপি হয়ে পড়লে বড় সমস্যায় পড়তে হয়। ওই টাকার জন্য অন্য আয় থেকে সঞ্চিতি রাখতে হয়। আমানতকারীদেরও টাকা দিতে হয়। এসব কারণে সুদহার বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ কমে এলে সুদহার কমে আসবে।’

তাহলে আমাদের মতো সাধারণ আমানতকারীদের অদৃষ্টে কী লেখা আছে? অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে থেকে সার্বিক অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। তা না হলে আমরা হতাশার মধ্যেই ডুবে থাকব।

  • মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  • কার্টসি - যুগান্তর/ ডিসেম্বর ৮, ২০১৯