— এম আবদুল্লাহ
|
বুধবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২১, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আলাউদ্দিন। সহিংসতায় নিহত আলাউদ্দিনের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে পরিবেশ।
|
একসময় নির্বাচন নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেছি। দীর্ঘ তিন দশকের সক্রিয় সাংবাদিকতার বেশির ভাগ সময় নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন বিষয়ক রিপোর্টের দায়িত্ব ছিল। পেশাগত এই দায়িত্বের কারণেই ভোটাভুটির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই ছিল। গত এক দশকে ক্রমাগতভাবে এ বিষয়ে আগ্রহে ভাটা পড়তে পড়তে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন আর এ নিয়ে লিখতে উৎসাহ বোধ করি না।বুধবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২১, বন্দরনগরীতে এক রক্তাক্ত নির্বাচন দেখল জাতি। দু’টি লাশ পড়া ছাড়াও ব্যাপক সহিংসতার চিত্র উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। পুরো নির্বাচনে প্রাণ গেছে পাঁচটি। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ধানের শীষের ডা: শাহাদাতকে তিন লাখ ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছেন। নৌকার ভোট তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮, আর ধানের শীষের ৫২ হাজার ৪৮৯টি। রাত পৌনে ২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেল, সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিতর্কিত ইভিএমে ভোটাভুটি হয়েছে। ভোটের ফলাফল পেতে সেই সনাতন পদ্ধতির চেয়েও বেশি সময় কেন লাগল সে এক বড় রহস্য। ইভিএম ফলাফল দিতে বড়জোর আধা ঘণ্টা সময় নেয়। সব কেন্দ্র থেকে তা সংগ্রহ করতে প্রযুক্তির যুগে বড়জোর দুই ঘণ্টা লাগার কথা। সেখানে ১০ ঘণ্টা লাগল কেন, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কমিশনের মান-ইজ্জত রক্ষায় মনের মতো করে ভোটের হার ও ফলাফল মেলাতে এ সময় লেগেছে কি না তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে।
ভোটের আগের দিন নির্বাচন কমিশন সচিব সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘আশা করি চট্টগ্রামে একটি ভালো নির্বাচন দেখবেন’। এ বক্তব্যে প্রকারান্তরে আগের নির্বাচনগুলো যে খারাপ ছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। এ আশ্বাস কেউ গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হয় না। প্রাণ ও রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের শেষেও কমিশন সচিব বরাবরের মতো তুষ্টির ঢেঁকুর তুলেছেন। সচিব নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্য কমিশনেরই বক্তব্য। ভোট পরবর্তী মূল্যায়নে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বলব, ভালো নির্বাচন হয়েছে। তবে দুটি কেন্দ্রে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন, যারা ইভিএমে ভোট হোক চান না, তারা আক্রমণ চালিয়েছিল। ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমরা ওই দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে দিয়েছি। এ ছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলোতে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। যারা ভোট দিতে এসেছিলেন, তারা ভোট দিয়ে গেছেন’। সহিংসতা প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ ধরনের নির্বাচনে কিছু ঘটনা ঘটে। সেই হিসেবে যদি বলেন, তাহলে বলব, বরং কমই হয়েছে’। আর ভোটের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘দেশ উন্নত হওয়ায় মানুষ ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্রের বর্ণনায় স্বাভাবিক, কম সহিংসতার ভালো নির্বাচনটি কেমন ছিল তা দেখে নেয়া যাক প্রধান কয়েকটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে। নয়া দিগন্ত ‘প্রাণহানি ও সহিংস ভোট চসিকে’ শিরোনাম করে প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দু’জনের প্রাণহানি, বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকার সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি বিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণ, কয়েকটি স্থানে বিএনপি সমর্থকদের সাথে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান, বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেয়া, ইভিএমের গোপনকক্ষে সরকার সমর্থকদের হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চসিক নির্বাচন।’
দৈনিক প্রথম আলো ‘সহিংসতায়ম্লান ভোট উৎসব’ শিরোনামে নির্বাচনী রিপোর্টটি শুরু করেছে এভাবে, ‘আশঙ্কাই সত্য হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটে। হামলা, গোলাগুলি, একজনের প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তির প্রদর্শনী ভোটের উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধীদলীয় প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেয়া বা ঢুকতে বাধা দেয়া, কেন্দ্রের প্রবেশপথসহ আশপাশের এলাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, গোপন বুথে অবাঞ্ছিত ব্যক্তির উপস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতমূলক আচরণ, অভিযোগ পাওয়ার পরও নির্বাচন কমিশনের কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়াসহ সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন নির্বাচনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ ছিল, তার সবই ছিল চট্টগ্রামের নির্বাচনে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের ‘চট্টগ্রাম ভোটে ব্যাপক সংঘর্ষ’ শিরোনামের রিপোর্টের শুরুতে জানিয়েছে, দফায় দফায় সংঘর্ষ, সহিংসতা, গোলাগুলি, প্রাণহানি, ককটেল বিস্ফোরণ ও বর্জনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোপন ভোটকক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে ভোটারদের। নির্বাচন নিয়ে নৈরাজ্যকর অবস্থার কারণে সকালের পর কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কমতে থাকে।’
দৈনিক যুগান্তর ‘দফায় দফায় সঙ্ঘাত-সংঘর্ষে ভোট সম্পন্ন’ শিরোনাম করে জানিয়েছে, দিনভর সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইভিএম ভাঙচুরসহ নানা অঘটনের মধ্য দিয়ে বুধবার শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। শুরু থেকেই বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে হানাহানির আশঙ্কা করা হয়েছিল, ভোটারদের মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল সেসবের প্রতিফলন ঘটেছে ভোটের মাঠে।’
শীর্ষস্থানীয় চারটি দৈনিকে চসিক নির্বাচনের যে খণ্ডিত চিত্র উঠে এসেছে তা যদি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক, কম সহিংসতার ভালো নির্বাচনের অনুষঙ্গ হয় তা হলে বলার কিছু নেই। কিছু দিন আগে ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য কমিশনের প্রতি যে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এবং বিচার দাবি করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকপত্র দিয়েছেন তার যৌক্তিকতার প্রমাণ তারা নিজেরাই বারবার দিচ্ছেন।
চসিক নির্বাচনে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। তার মানে হচ্ছে, বন্দরনগরীর তিন-চতুর্থাংশের বেশি ভোটার বুধবারের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭৮ শতাংশ ভোটার যে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সে নির্বাচন নামক তামাশায় কাউকে পাঁচ বছর নগরীর কর্তৃত্ব করতে দেয়া যায় কি না প্রশ্ন তোলা বোধ করি অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯ লাখ ভোটারের ১৪ লাখ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনের বাতাবরণে কথিত নগরপিতার আসন দখলের নৈতিক ভিত্তি কতটা? এই ৭৮ শতাংশ ভোটার কি তাহলে নৌকাবিরোধী। নৌকা সমর্থক কোনো ভোটারের মনে তো ভয়ভীতি থাকার কথা নয়। তারা কেন ভোট দিতে যাবে না? তা হলে চট্টলার মানুষ রায়টা আসলে কোন দিকে দিলো? ক্ষমতাসীনদের বলদর্পী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে, নাকি নতজানু ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে? আর বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার যে শবযাত্রা মানুষ দেখছে তারই বা প্রতিকার কী?
জাতি হিসেবে আমরা ভুলোমনা। খুব দ্রুতই আমাদের বিস্মৃতি ঘটে। একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর গঠিত সরকার এরই মধ্যে দুই বছর দেশ শাসন করেছে। নির্বাচনটি কেমন হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-পর্যালোচনা, বিতর্ক হয়েছে দেশে-বিদেশে। এক দশক ধরেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা তুমুল আলোচনায়। জাতীয় কিংবা স্থানীয় কোনো নির্বাচনই জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না বলেই মত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের।
একাদশ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, দিনের ভোট রাতে দেয়ায়। ভোট চলাকালে কেন্দ্র দখল করে সিল মারা, ব্যালট বাক্স লুট, একের ভোট অন্যে দেয়া এসব বাংলাদেশের নির্বাচনে সবসময়ই কমবেশি হয়েছে। কিন্তু ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ রাতে হবে এমনটা সম্ভবত কেউ ভাবতে পারেননি। ফলে এ নিয়ে নানা হাস্যরসও হয়েছে, হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ আড্ডা-আলোচনায়। কেউ বলছেন এটি ছিল ‘ডে-নাইট ইলেকশন’। কারো মতে ‘ডবল শিফটে’ ভোট করেছে প্রশাসন। নিন্দুকেরা সরকারকে আখ্যায়িত করছে ‘ মিডনাইট ভোটের সরকার’ হিসেবে।
কন্ট্রোলড ও ম্যানেজড মিডিয়ার জামানায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র জনসম্মুখে এসেছে খুব কমই। এক ধরনের ত্রাসের পরিবেশে সাংবাদিক, সুশীল, পর্যবেক্ষক, বিশ্লেষক- কেউই নির্বাচন প্রশ্নে ঝেড়ে কাশতে পারেননি। জাতীয় নির্বাচনের নামে যে তামাশা হয়েছে তা বিস্মৃতির গহ্বরে যাওয়ার পর ঢাকা সিটির উপনির্বাচন ও পরে মূল নির্বাচন, তারও পর উপজেলা নির্বাচন এবং বর্তমানে চলমান পৌরসভা নির্বাচনের ডামাডোল জাতিকে ভোটরঙ্গ দেখিয়ে বিনোদন দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা তার পৌর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল হিসেবে যে ‘সত্য বচন’ দিয়েছেন তা কিছু দিনের জন্য হলেও বাজার পেয়েছিল। তার ভাষায়, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চট্টগ্রামেও হয়তো অনেকে পালানোর ‘দজ্জা’ খুঁজে পেতেন না। বগুড়ায় শাসকদলীয় এক নেতা ঘরোয়া সভায় নৌকায় ভোট না দিলে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই বলে যে হুঙ্কার দিয়েছেন তা-ই হচ্ছে সমকালীন নির্বাচনে সরকারের অনুসৃত নীতি। এমন পরিস্থিতিতে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কেন নির্বাচনে অংশ নেয়, অথবা অংশ না নিয়েই বা কী করবে সে বিতর্ক হয়তো চলতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রীয় কোষের অর্থ অপচয় ও মানুষের জীবন ও মান-সম্ভ্রমের ক্ষয় বন্ধ করার সময় এসেছে। চট্টগ্রামে পাঁচটি জীবন ও বিপুল অর্থের শ্রাদ্ধ করে কী অর্জন তা আমজনতার জানার অধিকার রয়েছে।
অনেকের স্মরণ থাকার কথা, ইভিএম নিয়ে বিতর্কের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বলেছেন, ‘রাতে ব্যালট বাক্স ভরার প্রবণতা রোধেই নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের দিকে ঝুঁকছে’। সেই ইভিএমে অনেকগুলো নির্বাচন হলো। তাতে দেখা গেল, ব্যালটে সিল মারার পরিবর্তে এখন আঙুলের ছাপ নিয়ে ভোটারদের বিদায় করে ‘নৌকা’ প্রতীকের বাটন চেপে দিচ্ছেন শাসকদলীয় ক্যাডাররা। পার্থক্য শুধু এই, আগে ক্যাডারদের গোপন বুথ দখল করতে হতো না, এখন সেই বুথে একজন করে ক্যাডার অবস্থান নিতে হয়। ক্যাডারদের কষ্ট খানিকটা বেড়েছে, বেড়েছে ভোটারের কষ্টও। কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আঙুলের চাপে মেশিন অন করা পর্যন্ত ভোটারের দায়িত্ব। কোন মার্কায় ভোট দেয়া হবে সে দায়িত্বটা নিচ্ছেন ‘মহানুভব’ ক্যাডার। ব্যালট বই দখলে নিয়ে সিল মারার পরিবর্তে এ পদ্ধতিতে ভোটের সংখ্যা কমে এসেছে, এই যা। ফলাফল তথৈবচ।
- লেখক সাংবাদিক, সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন -বিএফইউজে