Search

Wednesday, February 17, 2021

ব্যতিক্রমী সেক্টর কমান্ডার

— আসিফ নজরুল



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন মেজর। সে রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাসরত পাকিস্তানি এক জেনারেলের কাছে তাঁকে পাঠানো হচ্ছিল। পরিকল্পনা ছিল তাঁকে ‘গ্রেপ্তার বা হত্যা’ করার (গোলাম মুরশিদ, মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস)। পথিমধ্যে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সংবাদ শোনামাত্র বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরে এসে তাঁর কমান্ডিং অফিসারসহ অন্যান্য পাকিস্তানি অফিসার ও সৈন্যকে বন্দী করেন। পরদিন তিনি প্রাণভয়ে পলায়নপর মানুষকে থামিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনাময় ভাষণ দিতে শুরু করেন (বেলাল মোহাম্মদ, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র)। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বেতারে নিজ কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

জিয়ার এই রূপান্তর বা উত্থান বিস্ময়কর হতে পারে, কিন্তু তা আকস্মিক ছিল না। বরং বাংলাদেশের মানুষের বঞ্চনা, স্বাধীনতার স্বপ্ন, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একজন সৈনিককেও কীভাবে উদ্দীপিত করেছিল, এটি ছিল তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত (জিয়াউর রহমান, ‘একটি জাতির জন্ম’)।

জিয়া ছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন অগ্রগণ্য সেনানায়ক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের একজন ছিলেন। ৪৯ জন যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাকে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার সর্বোচ্চ বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। তিনি তাঁদের একজন ছিলেন। কিন্তু তিনি সেক্টর কমান্ডার ও বীর উত্তম খেতাবধারীদের মধ্যেও অনন্য ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে। ২৭ মার্চ এই ঘোষণা ‘মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ পক্ষে তিনি প্রদান করেন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে।

এরপর জিয়া চট্টগ্রাম যুদ্ধাঞ্চল, ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে বহু আলোচিত যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন। যুদ্ধের শেষ ভাগে সিলেট অঞ্চলে তাঁর বাহিনীর কাছেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তিনি সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের, এম এ জলিল বা খালেদ মোশাররফের মতো সম্মুখসমরের অসীম সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না। সমশের মবিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিনের মতো তাঁর নিজস্ব বাহিনীর অফিসারদের মতো তিনি যুদ্ধ করতে গিয়ে আহতও হননি। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধে তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম শক্তিশালী প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।



জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। তাঁর আগে মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছাত্রনেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, এ জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি ২৫ মার্চ কালরাতের পর জিয়ার আগেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার তাৎপর্য ছিল অন্য রকম।

প্রথমত, শক্তিশালী সম্প্রচারকেন্দ্রে বারবার সম্প্রচারিত হওয়ার ফলে জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটিই কেবল দেশের সব অঞ্চল থেকে বহু মানুষ শুনতে পেয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে দিশেহারা ও পলায়নপর অবস্থায় এটি মানুষের কাছে পরম ভরসার বাণী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, জিয়ার ঘোষণাটি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন বিদ্রোহী বাঙালি অফিসারের এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে। এটি মানুষকে প্রতিরোধের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রবলভাবে আশান্বিতও করেছিল।



মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এ কে খন্দকার ২০০২ সালে এক স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়েও জানি যে মেজর জিয়ার এই ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারা দেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে হ্যাঁ, এইবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামল।’ (এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জা, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন)। 

জিয়ার ঘোষণায় উৎসাহিত বা উদ্দীপিত হয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি), এইচ টি ইমাম (বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১), অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের (আমার একাত্তর) মতো আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও। তাঁর ঘোষণার গুরুত্বের উল্লেখ আছে মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের সক্রিয় কূটনীতিক জে এন দীক্ষিতসহ ট্রেভর ফিসলক, ডেভিড লুডেনের মতো বহু আন্তর্জাতিক ব্যক্তির ভাষ্যে (মাহফুজ উল্লাহ, প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ)।

জিয়ার ঘোষণাটির অতুলনীয় প্রভাব পড়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এটি দেওয়া হয়েছিল বলে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক মঈদুল হাসান লিখেছেন, ‘মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় (২৭ মার্চ সন্ধ্যা) নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করলেও পরদিন স্থানীয় নেতাদের পরামর্শক্রমে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। এই সব ঘোষণা লোকের মুখে মুখে বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়ে, শেখ মুজিবের নির্দেশে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালিরা স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই শুরু করেছে।’ (মূলধারা ’৭১)


২.

১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি অফিসারদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট বা সরাসরি নির্দেশ ছিল না। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে পাকিস্তানের শাসনভার প্রদানে অনীহার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা সচেতন ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীতে তাঁদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা নিয়েও প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল (রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে)। এ কারণে তাঁদের অনেকেই ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার সংবাদ শোনামাত্র বিদ্রোহ করেন। বাঙালি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে জিয়া বিদ্রোহ করেন সবার আগে (মুরশিদ, পূর্বোক্ত)। ২৮ মার্চের মধ্যে বিদ্রোহ করেন সেক্টর কমান্ডারদের প্রায় সবাই। কিন্তু তাঁদের বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহকে সমন্বিত, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা এবং এটিকে পরিপূর্ণ একটি স্বাধীনতাযুদ্ধে পরিণত করার ব্যাপারে জিয়াসহ প্রত্যেকে সচেতন ছিলেন। যুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় তাঁদের এই অসাধারণ প্রজ্ঞা, দায়িত্ববোধ ও রণকৌশলের পরিচয় পাওয়া। এবং এখানেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমরা জিয়াকে অনন্য বা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে দেখি।

প্রথমত, ৩ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার ঠিক পরদিন জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, কে এম সফি উল্লাহসহ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর কমান্ডাররা তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা ভারতের সামরিক সাহায্য এবং দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে স্বাধীন সরকার গঠনের আবশ্যকতা প্রশ্নে একমত হন, বিদ্রোহী ইউনিটগুলো নিয়ে সম্মিলিত মুক্তিফৌজ গঠন করেন এবং এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে স্থির করেন। ৪ এপ্রিলের এই বৈঠকই ছিল বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রথম সাংগঠনিক ভিত্তি।

দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ সরঞ্জামের অভাব, কেন্দ্রীয় কমান্ডের নিষ্ক্রিয়তা এবং কূটনৈতিক স্বীকৃতি দানে ভারতের বিলম্বের কারণে একাত্তরের মে থেকে জুলাই মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত হতোদ্যম পরিস্থিতিতে যুদ্ধাঞ্চলের অধিনায়কদের এক সম্মেলনে জিয়াই নতুন চিন্তা নিয়ে আসেন। ১০ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এর সূচনায় মুক্তিযুদ্ধের অধোগতি রোধ ও যৌথ কমান্ড-ব্যবস্থায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেন জিয়া। তাঁর এই প্রস্তাবে একজন বাদে বাকি সব সেক্টর কমান্ডারের সম্মতি ছিল। মন্ত্রিসভার সমর্থন থাকলে এটি যুক্তিসংগত বলে মেনে নিতে পারতেন তাজউদ্দীন। তাতে যুদ্ধ আরও গতিশীল হতে পারত (এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জা, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন)। তবে সেই সম্মেলনে গেরিলাযুদ্ধের পাশাপাশি সম্মুখসমর, মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যৎ সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে ব্রিগেড গঠনের যে সিদ্ধান্ত হয়, তা রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকেই।


সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে মেজর জেনারেল কে​ ভি কৃষ্ণ রাওয়ের সঙ্গে জেড ফোর্স কমান্ডার জিয়াউর রহমান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ​ছবি: সংগৃহীত


তৃতীয়ত, জুলাই মাসের এই সম্মেলনে জিয়ার নেতৃত্বাধীন ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হলেও পরে কর্নেল ওসমানীর একক সিদ্ধান্তে আরও দুটি ফোর্স গঠিত হয় (এ কে খন্দকার, পূর্বোক্ত)। জেড ফোর্স নামে পরিচিত জিয়ার ব্রিগেড একাত্তরে দ্রুত কাজ শুরু করে। ঢাকামুখী অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি বাহিনীর কামালপুর ঘাঁটিতে তারা ৩১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট কয়েক দফা হামলা চালায়। ১ আগস্ট জেড ফোর্স বাহাদুরবাদ এবং ৩ আগস্ট শেরপুরে নকশি বিওপিতে আক্রমণ করে। এসব দুঃসাহসিক সম্মুখসমরে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। কামালপুর যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হন। জিয়াকে এ জন্য কিছু সমালোচনাও মেনে নিতে হয়। কিন্তু এসব যুদ্ধ মুক্তিবাহিনীর সামর্থ্য ও সাহসিকতা সম্পর্কে নতুন উপলব্ধির জন্ম দেয়।

চতুর্থত, মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে জিয়াকে আমরা দেখতে পাই সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণাত্মক যুদ্ধের অধিনায়ক হিসেবে। একাত্তরের অক্টোবরে যৌথ সামরিক নেতৃত্ব গঠনের পর যুদ্ধের নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব চলে যায় ভারতের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে। নভেম্বরে ভারতীয় বাহিনী নিজ দেশের সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশের সেক্টর ও ফোর্সগুলো আরও মুহুর্মুহু আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ওসমানীর নিদের্শ অক্টোবর মাসে পুরো জেড ফোর্স নিয়ে মেজর জিয়া চলে আসেন সিলেটে। এর তিনটি ব্যাটালিয়ন শ্রীমঙ্গল, ছাতক ও কুলাউড়ায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা ও ক্যাম্পে সরাসরি হামলা চালায়। ১০ ডিসেম্বর এই ফোর্স সিলেট আক্রমণ শুরু করে। ১৪ তারিখ তারা সিলেটে প্রবেশ করে। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তিনি একদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, সিলেটে ১২৫ জন অফিসার, ৭০০ সৈন্যসহ সেই বাহিনীর একটি অংশ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে।


৩.

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান ছিল অপরিসীম। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করা ছাড়াও যুদ্ধ পরিচালনা ও যুদ্ধ প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। জিয়া ছিলেন এই যুদ্ধে মহানায়কের মতো। আরও ছিলেন খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের, আবু ওসমান, এম এ জলিল, রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি ছিল একটি জনযুদ্ধ, বহু সাধারণ মানুষের অসাধারণ আত্মত্যাগ আর শৌর্য–বীর্যের এক অনুপম গৌরবগাথা।

বাংলাদেশের এই বীর সন্তানেরা ছিলেন অত্যুজ্জ্বল এক নক্ষত্রমণ্ডলীর মতো। সে নক্ষত্রমণ্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধুই। কিন্তু তাই বলে অন্য কোনো নক্ষত্রের আলোও ম্লান হতে পারে না, অন্য কোনো নক্ষত্রও মুছে যেতে পারে না।

জিয়া আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের এমনই এক অবিনশ্বর নক্ষত্র। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শুধু জিয়া নন, আরও অনেকের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা আলোচনা রয়েছে। কিন্তু সেটি তাঁদের একাত্তরের ভূমিকাকে ম্লান করতে পারে না।


  • লেখক  অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬



Wednesday, February 10, 2021

জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হিংসার অপরাজনীতি

— ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম 

 

স্বাধীনতার যুদ্ধের মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীর উত্তম


স্বাধীন বাংলাদেশ ও জিয়া একে অপরের পরিপূরক। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার অপর নাম জিয়াউর রহমান। জিয়াকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। জিয়া বাংলাদেশের আপামর জনগণের হৃদয়ে মেজর জিয়া নামে প্রতিষ্ঠিত। মেজর জিয়া ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক, রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সেনাপ্রধান এবং বাংলাদেশের একজন সফল রাষ্টনায়ক। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য স্বাধীনতা উত্তর সরকার ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভুষিত করেন জিয়াকে। স্বাধীনতার ঘোষণার আগেই ১৯৭১ সাল ২৫শে মার্চ রাজনৈতিক নেতারা গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন অথবা পালিয়ে যান। শহীদ জিয়া সংকট মূহুর্তে শুধু স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি, সেক্টর কমান্ডার হিসেবে রনাঙ্গনে যুদ্ধে নেতৃত্বও দেন। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করা হলে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করা হবে। এটাই সত্য ও ইতিহাস। ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে।  হিংসা ও বিদ্বেষের রাজনীতি এবং আদালতের রায় দিয়ে ইতিহাস বদলানো যায় না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সাথে শহীদ জিয়ার নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুতরাং কখনোই স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ থেকে জিয়াকে বিচ্ছেদ করা যাবে না।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার স্বীকৃতিসরূপ স্বাধীনতার ঘোষক, রনাঙ্গনের যোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে যে খেতাব দেওয়া হয় তা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা নিকৃষ্টতম সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ন ও হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। স্বীকৃত সত্য শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ও রনাঙ্গনের যোদ্ধা। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর যারা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত  নিয়েছে, তারা মূলত স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছে। তাই জিয়াউর রহমানের খেতাব সরকার বাতিল বা যাই করুক না কেনো তিনি এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে রয়েছেন। বাংলাদশের ইতিহাসও এটাই বলে। 

 

—   লেখক  সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি 



মাফিয়াতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় পদক ছিনতাই

— মারুফ কামাল খান

 

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের অমর ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম 

মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এ জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধারাই এ রাষ্ট্রের স্রষ্টা। তারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এ ভূখণ্ডকে হানাদার শত্রুবাহিনীর কবলমুক্ত করে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে উপহার দিয়েছিলেন। তারা এ দেশ মুক্ত করেছিলেন বলেই রাজনীতিকেরা এর শাসনক্ষমতা ও কর্তৃত্ব গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারাই এ রাষ্ট্রের সব পদ-পদবি ও ক্ষমতার স্রষ্টা। এ রাষ্ট্র অস্তিত্বশীল না হলে এসবের কিছুই থাকতো না।

জিয়াউর রহমান স্বকণ্ঠে সদর্পে এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে বিপ্লবে এবং প্রতিরোধ যুদ্ধকে স্বাধীনতার সশস্ত্র যুদ্ধে উন্নীত করেন। তিনি কেবল আমাদের স্বাধীনতার প্রথম কণ্ঠস্বরই নন, প্রথম মুক্তিযোদ্ধাও। তিনি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডারই কেবল নন, তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্রবাহিনীর অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক রূপে স্বাধীনতার ঘোষক এবং মুক্তিযুদ্ধের তিনটি ব্রিগেড ফোর্সের একটির অধিনায়ক ছিলেন। 

রাষ্ট্রের স্রষ্টারা এই রাষ্ট্রের আইন-আদালত, সংবিধান, ক্ষমতাকাঠামো, সব প্রথা-প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি বা অন্য কোনো কিছুরই অনুকম্পানির্ভর নন। তারাই এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বরং আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা যাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এনে দিয়েছে তারাই মুক্তিযোদ্ধাদের করুণা নির্ভর ও কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ থাকার কথা ছিল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীরউত্তম 

কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের দুর্বিনীত নব্য শাসকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তা সেজে বসেন। এমনকি তারা নিজেদেরকে সমগ্র জাতির উর্ধ্বে এবং জাতির চেয়েও বড় ভাবতে থাকেন। তারা প্রচার করতে থাকেন, এই দেশ ও স্বাধীনতা নাকি তাদেরই দয়ার দান। প্রকৃত জাতীয় বীরদের আড়াল করে মেকি বীরপূজা শুরু করা হয়। তারাই কৃতিত্বারোপ ও হরেক রকমের সার্টিফিকেট বিতরণের মালিক সেজে বসেন। তাদেরই হঠকারি তত্ত্বে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। অনেক  বড়ো হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তির আকৃতি। সেই রাজনৈতিক হঠকারিতার বিবরণ তুলে ধরে তখন সংবাদপত্রে 'সিক্সটি-ফাইভ মিলিয়ন কোলাবরেটর্স' শিরোনামে আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলা উপেক্ষার পাশাপাশি তাদের মধ্যে বিভেদ ও বিভাজনও সৃষ্টি করা হয়।

এসবের ফলাফল শুভ হয়নি। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার এই রাজনৈতিক ধারা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে রক্তাক্ত এক বিদ্রোহের মধ্যদিয়ে এর পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তন আসে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিদ্রোহী অংশের হাত দিয়েই। সেই নির্মম অভিজ্ঞতা জাতিকে বিভাজনের বদলে ঐক্যবদ্ধ করার, সংহতি গড়ে তোলার অনিবার্য বাস্তবতা, প্রয়োজনীয়তা ও শিক্ষাকে সামনে তুলে ধরেছিল। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান সব চেয়ে বেশি উপলব্ধি করেছিলেন সময়ের এই দাবিকে। তাই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কেন্দ্রে স্থাপন করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দ্বন্দ্ব-বিভাজনের রক্তাক্ত সব ক্ষত নিরাময় এবং জাতীয় সংহতি ও সমঝোতার মহাসড়ককে চলার পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশ।

জিয়াউর রহমানের আগে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানও সেই জাতীয় ঐক্যের পথে নানা পদক্ষেপে এগুবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে তার ব্যক্তিগত অনুপস্থিতিজনিত দুর্বলতা এবং যুদ্ধোত্তর জাতীয় পুনর্গঠনে নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা হ্রাস তাকে এ ক্ষেত্রে সফল হতে দেয়নি। মুজিবোত্তর কালে জিয়াউর রহমান এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেন।

আজ বাংলাদেশকে আবার ইতিহাসের কানাগলিতে ঠেলে দেয়ার জন্য মূর্খতাপ্রসূত এক হঠকারি অন্ধ রাজনীতির ধারা প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রীয় চরিত্র হারিয়েছে। এটি আজ আর কোনো রাষ্ট্র নয়, প্রজাতন্ত্র নয়, পরবাহুনির্ভর এক মাফিয়াতন্ত্র মাত্র। অধঃপতিত এই পদ্ধতিতে নীতি, আদর্শ, প্রজ্ঞা বা দূরদর্শিতা নয়, হঠকারিতা ও অবিমৃষ্যকারিতাই এখন এর চলার পথ নির্ধারক। পদ-পদবি-ক্ষমতা লোভী স্তাবকের দল বিশেষ কাউকে তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে এখন পরিণাম-পরিণতির চিন্তা না করেই যা-খুশি তাই করে যাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অর্জিত বীরত্বসূচক 'বীরউত্তম' পদক ছিনতাই করার সিদ্ধান্তের কথা জানা গেলো। মাফিয়াতন্ত্র সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় পদক ছিনিয়ে নেয়ার। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জাতির কৃতজ্ঞতার স্বীকৃতিস্বরূপ এসব পদকে ভূষিত করে আমাদের রাষ্ট্রই সম্মানিত হয়েছিল। এটা বুঝবার মতন ন্যূনতম যোগ্যতা ও শিক্ষা যাদের নেই তারাই নতুন করে কলঙ্কের এই ক্ষতচিহ্ন অঙ্কন করতে যাচ্ছে। গর্ত থেকে মুখ বের করে হুতোমপ্যাঁচা ভাবছে, সে সূর্যের প্রখর দীপ্তিকে আটকে দিতে সক্ষম। হিংসায় জর্জরিত এই অতিক্ষুদ্ররা বুঝতেও পারছে না যে, এর মাধ্যমে তারা প্রকারান্তরে আমাদের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে চ্যালেঞ্জ করার ধৃষ্টতাই প্রদর্শন করেছে। ঘৃণা-বিভাজনের এই বিষবৃক্ষ রোপণের ফলাফল কী হবে তা আগামী দিন বলবে।


লেখক সাংবাদিক।  

Monday, February 1, 2021

একটি ‘ভালো’ নির্বাচনের উপাখ্যান

— এম আবদুল্লাহ

বুধবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২১, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আলাউদ্দিন। সহিংসতায় নিহত আলাউদ্দিনের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে পরিবেশ।

একসময় নির্বাচন নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেছি। দীর্ঘ তিন দশকের সক্রিয় সাংবাদিকতার বেশির ভাগ সময় নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন বিষয়ক রিপোর্টের দায়িত্ব ছিল। পেশাগত এই দায়িত্বের কারণেই ভোটাভুটির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই ছিল। গত এক দশকে ক্রমাগতভাবে এ বিষয়ে আগ্রহে ভাটা পড়তে পড়তে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন আর এ নিয়ে লিখতে উৎসাহ বোধ করি না।

বুধবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২১,  বন্দরনগরীতে এক রক্তাক্ত নির্বাচন দেখল জাতি। দু’টি লাশ পড়া ছাড়াও ব্যাপক সহিংসতার চিত্র উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। পুরো নির্বাচনে প্রাণ গেছে পাঁচটি। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ধানের শীষের ডা: শাহাদাতকে তিন লাখ ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছেন। নৌকার ভোট তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮, আর ধানের শীষের ৫২ হাজার ৪৮৯টি। রাত পৌনে ২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেল, সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিতর্কিত ইভিএমে ভোটাভুটি হয়েছে। ভোটের ফলাফল পেতে সেই সনাতন পদ্ধতির চেয়েও বেশি সময় কেন লাগল সে এক বড় রহস্য। ইভিএম ফলাফল দিতে বড়জোর আধা ঘণ্টা সময় নেয়। সব কেন্দ্র থেকে তা সংগ্রহ করতে প্রযুক্তির যুগে বড়জোর দুই ঘণ্টা লাগার কথা। সেখানে ১০ ঘণ্টা লাগল কেন, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কমিশনের মান-ইজ্জত রক্ষায় মনের মতো করে ভোটের হার ও ফলাফল মেলাতে এ সময় লেগেছে কি না তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

ভোটের আগের দিন নির্বাচন কমিশন সচিব সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘আশা করি চট্টগ্রামে একটি ভালো নির্বাচন দেখবেন’। এ বক্তব্যে প্রকারান্তরে আগের নির্বাচনগুলো যে খারাপ ছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। এ আশ্বাস কেউ গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হয় না। প্রাণ ও রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের শেষেও কমিশন সচিব বরাবরের মতো তুষ্টির ঢেঁকুর তুলেছেন। সচিব নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্য কমিশনেরই বক্তব্য। ভোট পরবর্তী মূল্যায়নে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বলব, ভালো নির্বাচন হয়েছে। তবে দুটি কেন্দ্রে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন, যারা ইভিএমে ভোট হোক চান না, তারা আক্রমণ চালিয়েছিল। ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমরা ওই দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে দিয়েছি। এ ছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলোতে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হয়েছে। যারা ভোট দিতে এসেছিলেন, তারা ভোট দিয়ে গেছেন’। সহিংসতা প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ ধরনের নির্বাচনে কিছু ঘটনা ঘটে। সেই হিসেবে যদি বলেন, তাহলে বলব, বরং কমই হয়েছে’। আর ভোটের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘দেশ উন্নত হওয়ায় মানুষ ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’

নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্রের বর্ণনায় স্বাভাবিক, কম সহিংসতার ভালো নির্বাচনটি কেমন ছিল তা দেখে নেয়া যাক প্রধান কয়েকটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে। নয়া দিগন্ত ‘প্রাণহানি ও সহিংস ভোট চসিকে’ শিরোনাম করে প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দু’জনের প্রাণহানি, বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকার সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলি বিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণ, কয়েকটি স্থানে বিএনপি সমর্থকদের সাথে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান, বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেয়া, ইভিএমের গোপনকক্ষে সরকার সমর্থকদের হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চসিক নির্বাচন।’

দৈনিক প্রথম আলো ‘সহিংসতায়ম্লান ভোট উৎসব’ শিরোনামে নির্বাচনী রিপোর্টটি শুরু করেছে এভাবে, ‘আশঙ্কাই সত্য হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটে। হামলা, গোলাগুলি, একজনের প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তির প্রদর্শনী ভোটের উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধীদলীয় প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেয়া বা ঢুকতে বাধা দেয়া, কেন্দ্রের প্রবেশপথসহ আশপাশের এলাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, গোপন বুথে অবাঞ্ছিত ব্যক্তির উপস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতমূলক আচরণ, অভিযোগ পাওয়ার পরও নির্বাচন কমিশনের কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়াসহ সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন নির্বাচনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ ছিল, তার সবই ছিল চট্টগ্রামের নির্বাচনে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের ‘চট্টগ্রাম ভোটে ব্যাপক সংঘর্ষ’ শিরোনামের রিপোর্টের শুরুতে জানিয়েছে, দফায় দফায় সংঘর্ষ, সহিংসতা, গোলাগুলি, প্রাণহানি, ককটেল বিস্ফোরণ ও বর্জনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোপন ভোটকক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে ভোটারদের। নির্বাচন নিয়ে নৈরাজ্যকর অবস্থার কারণে সকালের পর কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কমতে থাকে।’

দৈনিক যুগান্তর ‘দফায় দফায় সঙ্ঘাত-সংঘর্ষে ভোট সম্পন্ন’ শিরোনাম করে জানিয়েছে, দিনভর সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইভিএম ভাঙচুরসহ নানা অঘটনের মধ্য দিয়ে বুধবার শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। শুরু থেকেই বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে হানাহানির আশঙ্কা করা হয়েছিল, ভোটারদের মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল সেসবের প্রতিফলন ঘটেছে ভোটের মাঠে।’

শীর্ষস্থানীয় চারটি দৈনিকে চসিক নির্বাচনের যে খণ্ডিত চিত্র উঠে এসেছে তা যদি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক, কম সহিংসতার ভালো নির্বাচনের অনুষঙ্গ হয় তা হলে বলার কিছু নেই। কিছু দিন আগে ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য কমিশনের প্রতি যে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এবং বিচার দাবি করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকপত্র দিয়েছেন তার যৌক্তিকতার প্রমাণ তারা নিজেরাই বারবার দিচ্ছেন।

চসিক নির্বাচনে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। তার মানে হচ্ছে, বন্দরনগরীর তিন-চতুর্থাংশের বেশি ভোটার বুধবারের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭৮ শতাংশ ভোটার যে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সে নির্বাচন নামক তামাশায় কাউকে পাঁচ বছর নগরীর কর্তৃত্ব করতে দেয়া যায় কি না প্রশ্ন তোলা বোধ করি অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯ লাখ ভোটারের ১৪ লাখ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনের বাতাবরণে কথিত নগরপিতার আসন দখলের নৈতিক ভিত্তি কতটা? এই ৭৮ শতাংশ ভোটার কি তাহলে নৌকাবিরোধী। নৌকা সমর্থক কোনো ভোটারের মনে তো ভয়ভীতি থাকার কথা নয়। তারা কেন ভোট দিতে যাবে না? তা হলে চট্টলার মানুষ রায়টা আসলে কোন দিকে দিলো? ক্ষমতাসীনদের বলদর্পী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে, নাকি নতজানু ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে? আর বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার যে শবযাত্রা মানুষ দেখছে তারই বা প্রতিকার কী?

জাতি হিসেবে আমরা ভুলোমনা। খুব দ্রুতই আমাদের বিস্মৃতি ঘটে। একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর গঠিত সরকার এরই মধ্যে দুই বছর দেশ শাসন করেছে। নির্বাচনটি কেমন হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-পর্যালোচনা, বিতর্ক হয়েছে দেশে-বিদেশে। এক দশক ধরেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা তুমুল আলোচনায়। জাতীয় কিংবা স্থানীয় কোনো নির্বাচনই জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না বলেই মত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের।

একাদশ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, দিনের ভোট রাতে দেয়ায়। ভোট চলাকালে কেন্দ্র দখল করে সিল মারা, ব্যালট বাক্স লুট, একের ভোট অন্যে দেয়া এসব বাংলাদেশের নির্বাচনে সবসময়ই কমবেশি হয়েছে। কিন্তু ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ রাতে হবে এমনটা সম্ভবত কেউ ভাবতে পারেননি। ফলে এ নিয়ে নানা হাস্যরসও হয়েছে, হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ আড্ডা-আলোচনায়। কেউ বলছেন এটি ছিল ‘ডে-নাইট ইলেকশন’। কারো মতে ‘ডবল শিফটে’ ভোট করেছে প্রশাসন। নিন্দুকেরা সরকারকে আখ্যায়িত করছে ‘ মিডনাইট ভোটের সরকার’ হিসেবে।

কন্ট্রোলড ও ম্যানেজড মিডিয়ার জামানায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র জনসম্মুখে এসেছে খুব কমই। এক ধরনের ত্রাসের পরিবেশে সাংবাদিক, সুশীল, পর্যবেক্ষক, বিশ্লেষক- কেউই নির্বাচন প্রশ্নে ঝেড়ে কাশতে পারেননি। জাতীয় নির্বাচনের নামে যে তামাশা হয়েছে তা বিস্মৃতির গহ্বরে যাওয়ার পর ঢাকা সিটির উপনির্বাচন ও পরে মূল নির্বাচন, তারও পর উপজেলা নির্বাচন এবং বর্তমানে চলমান পৌরসভা নির্বাচনের ডামাডোল জাতিকে ভোটরঙ্গ দেখিয়ে বিনোদন দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা তার পৌর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল হিসেবে যে ‘সত্য বচন’ দিয়েছেন তা কিছু দিনের জন্য হলেও বাজার পেয়েছিল। তার ভাষায়, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চট্টগ্রামেও হয়তো অনেকে পালানোর ‘দজ্জা’ খুঁজে পেতেন না। বগুড়ায় শাসকদলীয় এক নেতা ঘরোয়া সভায় নৌকায় ভোট না দিলে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই বলে যে হুঙ্কার দিয়েছেন তা-ই হচ্ছে সমকালীন নির্বাচনে সরকারের অনুসৃত নীতি। এমন পরিস্থিতিতে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কেন নির্বাচনে অংশ নেয়, অথবা অংশ না নিয়েই বা কী করবে সে বিতর্ক হয়তো চলতেই থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রীয় কোষের অর্থ অপচয় ও মানুষের জীবন ও মান-সম্ভ্রমের ক্ষয় বন্ধ করার সময় এসেছে। চট্টগ্রামে পাঁচটি জীবন ও বিপুল অর্থের শ্রাদ্ধ করে কী অর্জন তা আমজনতার জানার অধিকার রয়েছে।

অনেকের স্মরণ থাকার কথা, ইভিএম নিয়ে বিতর্কের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বলেছেন, ‘রাতে ব্যালট বাক্স ভরার প্রবণতা রোধেই নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের দিকে ঝুঁকছে’। সেই ইভিএমে অনেকগুলো নির্বাচন হলো। তাতে দেখা গেল, ব্যালটে সিল মারার পরিবর্তে এখন আঙুলের ছাপ নিয়ে ভোটারদের বিদায় করে ‘নৌকা’ প্রতীকের বাটন চেপে দিচ্ছেন শাসকদলীয় ক্যাডাররা। পার্থক্য শুধু এই, আগে ক্যাডারদের গোপন বুথ দখল করতে হতো না, এখন সেই বুথে একজন করে ক্যাডার অবস্থান নিতে হয়। ক্যাডারদের কষ্ট খানিকটা বেড়েছে, বেড়েছে ভোটারের কষ্টও। কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আঙুলের চাপে মেশিন অন করা পর্যন্ত ভোটারের দায়িত্ব। কোন মার্কায় ভোট দেয়া হবে সে দায়িত্বটা নিচ্ছেন ‘মহানুভব’ ক্যাডার। ব্যালট বই দখলে নিয়ে সিল মারার পরিবর্তে এ পদ্ধতিতে ভোটের সংখ্যা কমে এসেছে, এই যা। ফলাফল তথৈবচ।


  • লেখক সাংবাদিক, সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন -বিএফইউজে


হাইকোর্ট-ফাইকোর্ট, মানব-পাচার আর আওয়ামী এমপিদের 'খেলা'

— ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা



'আপনি এখন রাত্তিরে থানায় বোম মারেন একটা। মারায়ে ওর নামে মামলা করতে হইবে। পারবেন? আপনি থাকলে এগুলো করতে অইবে' - ছোটবেলার পরীক্ষার মতো যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই কথাগুলো কে, কাকে, কোন প্রসঙ্গে বলেছিল, তাহলে প্রায় সকলেই এর সঠিক উত্তর দিয়ে দিতে পারবেন। বরাবরের মতই এটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তবে সেটা হালে পানি পাচ্ছে না খুব একটা, মানুষ নিজ কানে অডিওতে শুনেছে এবং একেবারে মূল ধারার মিডিয়ায় সংবাদটি দেখেছে।


একজন তথাকথিত আইন প্রণেতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ওসিকে এই কথাগুলো বলছেন, এটুকু জানিয়ে এই কথাগুলো ন্যূনতম গণতন্ত্র আছে এমন কোন দেশের মানুষকে শোনানো হলে তাদের কাছে অকল্পনীয় লাগবে। তারা ভাববে রাষ্ট্রের ২ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এমন আলাপ করতে পারে? 


পুরো কথোপকথনটি যারা শুনেছেন তারা কেউ কেউ বলতে পারেন সংসদ ওসিকে থানায় কিংবা ইটের ভাটায় বোমা মেরে মামলার কথা বলেছেন কিন্তু ওসি তো সেই ব্যাপারে অন্তত সেই সময়ে রাজি হননি। কিন্তু আমরা কেউ কি এভাবে ব্যাপারটা ভেবে দেখছি যে একজন ওসিকে এইরকম কথা বলা যায় সেটা এমপির কেন মনে হল? কেন তিনি মনে করেন থানায় থাকতে হবে এসব করতে হবে? 


গত এক যুগে এই রকম অসংখ্য মিথ্যা মামলা সাজিয়ে এই দেশের বিরোধী দলকে দমন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা হয়েছে। সেই চেষ্টায় বিভিন্ন থানার কর্মরত কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কিংবা অন্য কোনো নেতার ফরমায়েশ মত মামলা সাজিয়েছেন। প্রভাবশালীদের দেয়া মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া মানুষের প্রচুর খবর নিয়মিতই আসে আমাদের সামনে। অলক্ষ্যে থেকে যায় আরো অনেকে যারা দুর্ভাগা। 


যশোরের কেশবপুরের সাইফুল্লাহ 'সৌভাগ্যবান'। এই ফাঁস হওয়া অডিও হয়তো তাকে বাঁচিয়ে দেবে। কিংবা হয়তো দেবে না। সাইফুল্লাহকে থামিয়ে দেবার জন্য হয়ত আবিষ্কার করা হবে নতুন কোন পথ। কারণ থানার ওসির চোখেও সাইফুল্লাহ ভালো কোনো মানুষ নয়; এমপি চাকলাদার সাইফুল্লাহ পরিচয় জানতে চাওয়ার জবাবে ওসি বলেন - 'স্যার ওই ইটভাটার একটা বিষয় নিয়ে সাইফুল্লাহ, বেলায় যেয়ে মামলা-টামলা করে আর কী। বাজে একটা ছেলে স্যার'।


আসলেই তাই, বর্তমান বাংলাদেশের সরকারি দলের বাইরে গিয়ে এই দেশের জনগণ এবং রাষ্ট্রের পক্ষে যে কারো দাঁড়ানো মানেই তাদের চোখে খারাপ হওয়া। গত এক যুগের ক্ষমতায় থাকার পথে বিশেষ করে ২০১৪ সালের পরের ৭ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দেশের প্রশাসনের কাছে এই ন্যারেটিভ তৈরি করেছে। 


আলোচিত কথোপকথনে আরো বেশি উল্লেখযোগ্য বিষয় এসেছে ওসির একটা তথ্যের জবাবে এমপি চাকলাদার যা বলেন তাতে। ইটভাটার বিরুদ্ধে সাইফুল্লাহর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসা প্রসঙ্গে যখন ওসি এমপিকে জানান তখন তার জবাব -


'আরে কোথার হাইকোর্ট-ফাইকোর্ট। কোর্ট-ফোর্ট যা বলুক, বলুইগ্যা। আমাদের খেলা নাই? খেলা নাই'?


একজন আইনপ্রণেতা দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে এই ধরনের মানসিকতা পোষণ করে। এই রাষ্ট্রের 'সেপারেশন অব পাওয়ার' কে ধ্বংস করে সবকিছুকে শাসন বিভাগের সাথে একত্রে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বিচার বিভাগের প্রতি এরকম তাচ্ছিল্য এবং অবজ্ঞা অবধারিতই ছিল। আমরা স্মরণ করব এই সরকারের আমলেই বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে একজন প্রধান বিচারপতিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে সেই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল উচ্চ আদালতকে একেবারে ধ্বংস করে যাচ্ছে তাই যেন করা যায় সেটা নিশ্চিত করতে। হ্যাঁ, সরকার খুব ভালোভাবেই সফল তাতে।


উচ্চ আদালত নিয়ে বক্তব্যের শেষ বাক্যে বারবার 'খেলা'র কথা বলছিলেন চাকলাদার। খেলা শব্দটি এখন আওয়ামী লীগের অনেকের মুখ থেকে শোনা যায়। ভাস্কর্য ইস্যুতে খেলাফত মজলিসের মামুনুল হকের সাথে যখন সরকারি দলের সংঘাত চলছিল তখন আরেক এমপি মুজিবর রহমান নিক্সন চৌধুরী বারবার তাদের সাথে খেলতে আসার কথা বলছিলেন মামুনুল হককে। কাগজে-কলমে স্বতন্ত্র সদস্য হলেও তুমি চিরকাল আওয়ামী লীগ করেছেন এবং এখন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মাঝেমাঝেই খেলার কথা বলে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, এই দেশকে এবং দেশের মানুষকে নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করছে ক্ষমতাসীন সরকারটি।


জনাব নিক্সনেরই একটা অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছিল কিছুদিন আগে, যেখানে তিনি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারকে ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এবং চরভদ্রাসনের ইউএনওর ফোনে ফোন করে গালিগালাজ করেছেন ভাঙা উপজেলার এসিল্যান্ডকে। 


বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর জেলা শাখা গতকাল রোববার সভা করে এই ঘটনার প্রতিকার চেয়েছিল। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘটনায় আলোচিত এই এমপির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, নেবার কথাও না। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, ব্যবস্থা নেয়া হবে না শাহীন চাকলাদার এর বিরুদ্ধেও।


এবার আসা যাক আরেক 'আওয়ামী' এমপি পাপুল কাণ্ডে। আমি জানি পাপুলকে আওয়ামী এমপি বলায় কেউ কেউ আপত্তি করবেন কারণ কুয়েতে মানব পাচারের দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি পাপুল কাগজে-কলমে স্বতন্ত্র এমপি। আসলেই কি তাই?


গত নির্বাচনে পাপুলের আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি; সেই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই আসনে জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দিতা করেনি সেই প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কয়েকজন বড় নেতা দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিককে বলেছিলেন - আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বেইলি রোডের বাসায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাপার প্রতিনিধির কাছে লক্ষ্মীপুর–২ আসন শহিদ ইসলামকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন এইচ টি ইমাম। এ কারণে জাপা আসনটি ধরে রাখেনি।


সেই রিপোর্টেই জানা যায়, পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনাকমিটি থেকে চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের পক্ষে চিঠিটি পাঠান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী সেলিম মাহমুদ।


শুধুমাত্র টাকা ছিটিয়ে একজন মানুষ নিজের এবং তার স্ত্রীকে এমপি বানাতে পারেন তার এক অসাধারণ উদাহরণ হয়ে থাকবে নেই পাপুল। পাপুল এর টাকার জোর থেমে থাকেনি তিনি কুয়েতে আটক হবার পরও। তিনি যখন আটক হন তখন‌ও জাতীয় সংসদ থেকে বলা হয়েছে তার আটক এর ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না। এখন তার চার বছর সাজা পাবার পার‌ও তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। 


বছরের পর বছর এই দেশের গরীব মানুষকে নিয়ে নোংরা ব্যবসা করেছে পাপুল। দেশের মানুষকে কুয়েতে নিয়ে গিয়ে বীভৎস অত্যাচার-নির্যাতন করে অতি তুচ্ছ বেতন দিয়ে বা না দিয়ে কাজ করিয়েছে। এই দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়ায়নি এই দেশের সরকার। শুধুমাত্র টাকা আর ক্ষমতা থাকলেই যে কেউ যে কোনো কিছু করে পার পেয়ে যেতে পারে এই দেশে। 


একটার পর একটা নির্বাচন বাদ দিয়ে ক্ষমতায় থাকা এই দেশ থেকে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও বিলীন করে দিয়েছে - এটা এখন এক মাফিতন্ত্র। সেই মাফিয়াতন্ত্রের তথাকথিত সংসদে সংসদ সদস্যের মুখোশ পড়ে মাফিয়ারাই তো বিচরণ করার কথা; হচ্ছেও সেটা। 


মুখোশের সমস্যাই হলো সেটা মাঝে মাঝে খসে পড়ে। সম্প্রতি যেমন পড়েছে এই কলামে আলোচিত এই তিন জনের। আগেও খসেছে কারো কারো, অচিরেই খসে পড়বে আরো অনেকের। তাদের চেহারা দেখাই সার, এই মাফিয়াতন্ত্র ভেঙে দেশে গণতন্ত্র কায়েম করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার চিন্তা একেবারেই আকাশ-কুসুম কল্পনা। 


লেখক — রাজনীতিবিদ, আইনজীবী।

Monday, January 25, 2021

আজো খুঁজে ফেরে তার চোখ কোকোকে — আতিকুর রহমান রুমন


দেশকে স্বয়ম্ভর, সমৃদ্ধ করার নেশায় তখন তারেক রহমান পাগলপারা। সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন উল্কার মতো। কৃষিজীবী, শ্রমজীবী ও সম্প্রদায়গত পেশার মানুষদের দিয়ে চলেছেন পরামর্শ আর সাধ্যমতো সহযোগিতা। এরই এক পর্যায়ে গেলেন তিনি কক্সবাজারে। সমবেত হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে তিনি তাঁর কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করলেন। দিনটি ছিল পয়লা বৈশাখ। হঠাৎ এক কৌতুহলী সাংবাদিক জিজ্ঞেস করে বসলেন, “ভাইয়া, আপনি স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে এ ধরনের কর্মসূচির জন্য এই দিনটি কেন বেছে নিলেন? সেদিন হেসে হেসে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের মতো লোকজনের নববর্ষ এভাবেই কাটবে। পুরো দেশটাই আমার কাছে একটি পরিবার বলে মনে হয়।”

২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ‘চ্যানেল আই’-এ একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে দৈনিক মানব জমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করছিলেন। এক পর্যায়ে মতিউর রহমান চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, সংসার কেমন চলছে? উত্তরে তারেক রহমান বললেন, “সংসার কিছু অভিযোগের পালায় চলছে। রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার জন্য এ দিকেই সময় বেশি দিতে হচ্ছে। স্ত্রী-সন্তানের অভিযোগ যে তাদের সময় দিতে পারছি না।”

এসব ঘটনায় কারো মনে হতেই পারে, দেশের জন্য তাঁর যতো ভালবাসা, স্বজন-প্রিয়জনের প্রতি মমতা বোধ ততোখানি নেই, এ রকম ধারনা কেউ করলে তা কিন্তু একেবারেই ভুল। দেশের ও দশের জন্য তিনি যেমন আকুলপ্রাণ, স্বজন-প্রিয়জনের জন্যও তেমনি মমতার সাগর। অপরিসীম মাতৃভক্তি, স্ত্রী-কন্যার জন্য হৃদয় উজাড় করা প্রেম ও মমতা, স্নেহ ধন্য ছোট ভাইয়ের জন্য অগাধ ভালবাসা, দেশের জন্য অন্তরের গভীর টান সবকিছুই যেন সমানে সমান।


স্নেহের ছোট ভাই মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জন্য তাঁর যে অগাধ ভালবাসা- জনসমক্ষে তার প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল। এর আগের রাতেই ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। সে এক বর্বোরচিত ও বেদনা-বিধুর ঘটনা। রাত তখন সোয়া ১১টা। একের পর এক গাড়ি এসে থামছে মঈনুল রোডের বাসাটির সামনে। গাড়ি থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। যৌথবাহিনীর প্রায় দু’শতাধিক সদস্য গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলে। তখন বাসার ভেতরে ছিলেন দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, তাঁর স্ত্রী শরমিলা রহমান, তাঁদের দু’কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও তাঁদের একমাত্র সন্তান জায়মা রহমান। দেশনেত্রী এ সময় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। জায়মা, জাফিয়া ও জাহিয়া ছিল ঘুমিয়ে। ডা. জুবাইদা রহমান, আরাফাত রহমান ও শরমিলা রহমান নিজ নিজ কক্ষে ছিলেন।

ঠিক সেই সময় গাড়ির আওয়াজ ও বুটের শব্দে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এরপর শুরু হয় দরজায় ধাক্কাধাক্কি। বাসার দরজা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলে প্রচণ্ড আওয়াজ ও বুটের শব্দে গোটা বাড়ি জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে ছিলেন যারা, সকলেই আঁতকে ওঠেন। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে শিশুরা কেঁদে ওঠে। বিশ্রামরত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই ভীতিকর পরিবেশে ছুটে আসনে বাড়ির প্রধান ফটকের দিকে। তিনি জানতে চান,  ‘কে আপনারা?’ জবাবে জানানো হয় তারা যৌথ বাহিনীর সদস্য, কোকোকে গ্রেপ্তার করতে এসেছেন। এ সময় বেগম খালেদা জিয়া তাদের উদ্দেশে বলেন,  ‘কোকোকে নিতে এসেছেন ভাল কথা, দরজা ভাঙছেন কেন? এতোটা নির্যাতন চালানো ভাল নয়!’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, তাদের কাছে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে কিনা? থাকলেও এতো রাতে কেন? দিনের আলোয় আমার ছেলেকে ডাকলেও তো সে সময়মতো যথাস্থানে চলে যেতো। এরপর হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে পড়ে যৌথ বাহিনী। ভেতরে ঢুকেই তারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি গ্রুপের সদস্যরা আরাফাত রহমান কোকোকে বলেন, আমাদের সাথে যেতে হবে। বলার সঙ্গে সঙ্গেই মৃদু হাসি দিয়ে বিনয়ী আরাফাত রহমান বিনা বাক্য ব্যয়ে যাবার প্রস্তুতি নেন। যৌথ বাহিনী তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আগে আরাফাত রহমান মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আরাফাত রহমানকে গাড়িতে তোলার সময় তাঁর স্ত্রী-সন্তান, বড় ভাই তারেক রহমানের স্ত্রী-সন্তানের অঝোর কান্নায় রাতের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

যৌথ বাহিনীর আরেকটি গ্রুপ তল্লাশীর নামে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। তারা আরাফাত রহমানের স্ত্রীকেও বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাসা থেকে যাবার সময় তারা দুটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়।


আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তারের কথা শুনে আবেগআপ্লুত হয়ে কেঁদে ওঠেন কারাবন্দি তারেক রহমান। তিনি তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট একটি সেলে সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় অন্তরীণ। তাঁর কান্নার শব্দে ছোট্ট সেলটি যেন কেঁপে উঠছিল। দিনভর তিনি কেঁদেছেন। তাঁকে সাহস যুগিয়েছে, সান্ত্বনা দিয়েছে একই সেলে অপর বন্দি কবির। কারা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরিয়েছে যে সারাদিন কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখমুখ ফুলে গেছে।

কারাকর্তৃপক্ষ আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তারের কথা তারেক রহমানকে জানাননি, তবে সেলে ছোট্ট একটি টেলিভিশন আছে, সেখানে কেবল বিটিভির অনুষ্ঠানমালা দেখা যায়। সেখানে সকাল এবং দুপুরের সংবাদে আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তার হবার খবর প্রচার হয়েছিলো। তিনি টেলিভিশন দেখার আগেই অন্যান্য বন্দির কাছ থেকে খবরটি জেনেছেন। একমাত্র ছোট ভাই গ্রেফতার হওয়ার খবর তাঁকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে।

তারেক রহমান পিনু এবং আরাফাত রহমান কোকো পিঠেপিঠি দুই ভাই। তারা পরস্পর বন্ধু ও খেলার সাথীও। তারা এক সাথে স্কুলে গেছেন, এক সাথে খেলাধুলা করেছেন, আব্বা-আম্মার কাছে এক সাথেই অনুযোগ-অভিযোগ দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন, এক সাথে বেড়াতে গেছেন। সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের জবানীতে পাওয়া যায়, এক সাথে দু’ভাই হজব্রত পালন করতে গেছেন, এক সাথে দু’ভাই স্ত্রী-কন্যা সমেত চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দু’ভাইয়ের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া, চমৎকার হৃদ্যতা। হবেই না-বা কেন? দু’ভাই যে অভিন্ন সুখ-দুঃখের সাথী। বাবা শাহাদাৎবরণের পর শিশুকাল থেকেই দু’জন অনেক বিপদ-আপদ, ঝঞ্ঝাবহুল ইতিহাসের সাক্ষী। কখনো বাবাকে দেখেছেন তারা রণাঙ্গণে, কখনো দেখেছেন অগোছালো সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করতে, কখনো সেই সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে পিতার আটক হওয়া আর মুক্ত হওয়ার ঘটনা এবং একই বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে পিতার মর্মান্তিক শাহাদতবরণের ঘটনারও তারা সাক্ষী।

ছোট ভাইয়ের জন্য তারেক রহমানের যে কী অপরিমেয় স্নেহ-মমতা সেটা আরেকবার বোঝা গিয়েছিল আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি কুয়ালালামপুরে বাংরাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। সীমাহীন অপপ্রচার, অকথ্য অত্যাচার ও নির্মম-নির্যাতন চালানো হয়। ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকিসহ নানারূপ মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হৃদরোগী বানিয়ে ছেড়েছিল মঈনুল-ফখরুদ্দিন সরকার। তার ফলেই চিকিৎসারত অবস্থায় বিদেশে তাঁর করুণ মৃত্যু ঘটে।

মৃত্যু সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তারেক রহমান শোকে প্রায় পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। অনেকটা সময় তিনি কোনো কথাই বলতে পারেননি। তারপর শুরু হয় তাঁর অন্তর্ভেদী হাহাকার, বুকফাঁটা কান্না। প্রিয় ভাইটির কথা মনে হলেই তাঁর অন্তর এখনো গুমরে কেঁদে ওঠে, দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, নীরবে ও গোপনে অশ্রুপাত করেন।

আমার সাথে ভাল সখ্য আছে, এমন এক রাজনৈতিক কর্মী মাঝে মাঝেই লন্ডনে যান এবং তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর কুশলাদি জানতে চান। 

তাঁর মুখ থেকে শোনা — 

দিন কয়েকের এক অনুষ্ঠানে লন্ডনে গেলাম। অনুষ্ঠানের মাঝখানে কিছুটা অবকাশ পাওয়া গেল। ভাবলাম, নেতার শারীরিক অবস্থা এখন কী রকম, দেখে আসি। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে আমি মুখ খোলার আগেই আমার কুশল জিজ্ঞেস করলেন। দেখলাম, তিনি আগের চেয়ে বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ভীষণ  ভালো লাগলো নিজের কাছে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর একজন ইতিবাচক প্রিয় তারেক রহমানকে দেখে। ভিনদেশেও পারিবারিক ও রাজনৈতিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তাই, সময় বেশী না নিয়ে বিদায় নেবার আগেই মনের কথা বুঝতে পেরে তিনি বললেন, তুমিতো সেন্ট্রাল লন্ডনের দিকেই থাকছো, চলো ঐ দিকেই আমার গন্তব্য। এক পর্যায়ে তাঁর সঙ্গেই বেরিয়ে একটি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সুযোগ হলো আমার। টেমস নদীর পাশে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় একটি সড়কের পাশে হঠাৎ করেই তিনি গাড়ি থামালেন। ডানপাশে জানালার কাঁচ খুলে তিনি এক দৃষ্টিতে কী যেন দেখছেন, কাকে যেন খুঁজছেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে নির্দেশ করে বললেন,  ‘দেখো তো, দেখো তো কোকোর মতো লাগছে না? ঠিক যেন কোকো হেঁটে যাচ্ছে!’

আমার বুঝতে বাকি রইলো না, স্নেহের ছোট ভাইকে আজও আগলে রেখেছেন বুকের মধ্যখানে। ভাইয়ের জন্য এখনো থামেনি তাঁর কান্না। রাস্তা-ঘাটে, সভা-সমাবেশে, বিপণীকেন্দ্রে বা লোকালয়ে যেখানেই যান, আজও তাঁর চোখ খুঁজে ফেরে আরাফাত রহমান কোকোকে।


লেখক বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক দিনকাল। সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল। 

Friday, January 22, 2021

Labour market demands revisit of perception

— Imran Rahman

Imran Rahman


Our endless plight in international labour market is regularly doing the round on the media. This unveils how we are losing grip on the Middle East that once lured us as a key source of foreign remittances: lifeline of our national economy next to the apparel sector.


According to a report, recently published in a Bengali newspaper the number of workers returned by the end of last year from 28 labour markets across the world is as many as 326758 and workers sent to different manpower importing countries are 250000 falling three times shorter than government's target of 750000. Experts say a growing tendency among local owners of recruiting local workers in various sectors is leading to the expulsion of foreign workers from the Middle East. Moreover, war-torn situation in those countries including Covid-19 impactis equally responsible for shrinkage of labour market forcing ultimate return of workers to their homeland.

This bad time for us for manpower business is not merely confined in the Middle East; its ominous shade looms large on other parts of the world too. Reasons behind such fall of overseas job scopes are manifold. This crisis will not find a silver bullet solution in the pandemic ridden world of colossal economic, political and societal change. Business and monetary transactions almost everywhere in the world has come to a halt due to lockdown. Under present global reality, a trend of containing flight of domestic money to other countries is keenly observed.


On the backdrop of ongoing Covid-19 this conservative trend has become even stricter than it was after 9/11 when an all pervasive panic of extremism seized the world laying the poor Islamic nations in tatters. Leading global economies mostly reliant on labour force from under developed countries have already begun tightening their borders and checking inflow of people from outside. In addition to this, if the ongoing adverse relation between Iran and the US further worsens, military tension will spread throughout the Middle East resulting in further fall in labour market prospect.


This policy of constraint by the healthy economies, however, will not be fully able to stop illegal immigration. External glosses and lure of better life will as usual draw unemployed youths from developing states risking their own lives. In pursuit of a better future they will try all possible illegal perilous means. We often come through media how their dreams while crossing violent sea embrace watery graves capsizing boats.


Bangladesh is no exception to this. The news of a mass grave of Bangladeshi expatriate workers discovered in deep forest of Thailand and many falling to death in desert being hunger stricken are not distant memories. Limited resources, increasing unemployment, over-population and natural disasters- all compel our educated young generation to opt for overseas jobs. These helpless and innocent people are getting mindless target of human traffickers and unscrupulous man power export agencies mushrooming in the country.


Reports of many of our people languishing in jails in Malaysia and Saudi Arabia and facing adversities such as: unfriendly behaviour, torture, cheating and even death bring forward the questions about the role of concerned authorities, high commissions and embassies to foreign countries. Many female workers are reportedly becoming victims of physical and sexual abuse in the Middle Eastern countries. The inhuman and unsafe working conditions our workers are being forced to face reflects indifference, mismanagement and inefficiency of our concerned regulatory bodies.

 

The prospect of our labour market in the Middle East that ushered in a new era during the last BNP regime, regrettably fell flat due to successive governments' unidirectional foreign policy and their failure to create alternative market for Bangladeshi work force. In order to tackle this gruesome situation, incumbent government needs to take initiatives to find new place to explore labour market. Our workers are often heard to be earning lesser wages compared to that of other countries due to lack of necessary skills and linguistic command.


Post Covid-19 labour market in a changed world with added use of artificial intelligence and automation will be a grim reality for us if we fail to respond compatible with the neo-world requirements. Moreover, cost-effective labour from famine stricken African nations like Somalia and Ethiopia will pose a real threat to nation like Bangladesh.

 

Needs of hour is to pay due attention to the reasons behind our decline in man power prospect. There is no alternative to rein in ubiquitous corruption and irregularities that enormously marred our domestic regulatory system and tarnished image in outer world.

 

Couple of years back I learned from an article that against the decreasing number of active people in developed world the number of those aged under 24 in Bangladesh is almost 50%. And this is the high time for Bangladesh to take the supreme advantage of demographic dividend.


— The writer is poet

শহীদ জিয়ার পররাষ্ট্র নীতি

—  শায়রুল কবির খান











শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিচার করতেন। উদাহরণ দিয়ে বলতেন মিশর, মরক্কো, স্পেনের ভৌগোলিক অবস্থানের একটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ উপমহাদেশে সামরিক রাজনৈতিক কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করছে।


এর উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণী আর দক্ষিণে সুগভীর বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করে রেখেছে বাংলাদেশকে তার আপন ভূখণ্ডের বৈচিত্র্য দিয়ে। তাই বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটিতে অতীতে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। ইংরেজ জাতি বাংলাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল এই ভেবে এখান থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চলাচলের সুবিধাজনক অবস্থান পূর্বে ও পশ্চিমের যাতায়াত।


স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় এর আগে ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলায় নিজের নামে লিখেছেন ‘একটি জাতির জন্ম’ সেখানে সংক্ষিপ্ত লেখার মধ্যে উপলব্ধি আছে এই ‘রাষ্ট্রের জন্মের প্রেক্ষাপট তার প্রয়োজনীয়তা ও রাষ্ট্রের জন্য করণীয়’। তিনি যখন যতটুকু সম্ভাবনা দেখেছেন তার সবটুকুই নাগরিকদের কল্যাণে দৃঢ় সংকল্পে করতে চেষ্টা করেছেন। দৃষ্টান্তও আছে নাগরিকরা তার সুফলও পেয়েছেন।

 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে গেলেন সেই সময়ে ভারত সরকার গঙ্গা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেয়। (গঙ্গা নদীটি আন্তর্জাতিক নদী যার অববাহিকা পদ্মা যমুনা নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে।) বাংলাদেশ ভয়াবহ পানি সংকটে সম্মুখীন হয়।


দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল পরিণত হয় মরুভূমিতে। ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সম্ভব না হওয়ায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।


বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের ভাটি অঞ্চলে সেহেতু পানি ধরে রাখা ও পানি দ্রুত নদীর অববাহিকায় চলাচলের জন্য স্বেচ্ছা শ্রমে যুবকদেরকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজে কোদাল হতে খাল খনন কর্মসূচি শুরু করেন।


তার সময়ে প্রায় ৪ হাজার খাল খনন করা হয়। এর ফলে কৃষি, মৎস্য, শুষ্ক-মৌসুমে পানি ধরে রাখা, নদী পথে যাতায়াতের সুবিধা হয়েছিল।


ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহতায় পানির সংকট নিয়ে প্রথমে ১৯৭৬ সালে মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ৪২ জাতি ইসলামী শীর্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একই বছরে আগস্টে কলম্বোতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে উত্থাপন করে ন্যাম সদস্যদের সহানুভূতি পান। ৩১ তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও উত্থাপন করেন।


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনা, দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থার প্রতীক ছিলেন বিধায় জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপনের ফলে ভারত সরকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করে। গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন প্রশ্নে ভারত সরকার ১৯৭৭ সালে নিরাপত্তা বিধান রক্ষা করে পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করতে সম্মতি হয়।


শহীদ জিয়ার শাসন আমলে ইসলামী সলিডারিটি ফান্ডের স্থায়ী কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভ করে। জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইনের সমস্যা সমাধানে গঠিত আল-কদুস কমিটিতে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়।


১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত ইরাক ইরান যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী কমিটির সদস্য করা হয়। ১৯৭৮-৮০ সালে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন। সফরে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রের সরকার প্রধানের কাছে ১৯৮০ সালে ২৪ এপ্রিল প্রথম চিঠি পাঠান বিশেষ দূতের মাধ্যমে, তারা সবাই মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে উপ-প্রধানমন্ত্রী জালালউদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে কৃষি মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম শিশুকে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইউমের কাছে মন্ত্রী কে এম ওবায়দুল রহমানসহ ছয়জন প্রতিনিধি।


জিয়াউর রহমান তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, আজকের সমসাময়িক বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বাঁধা হচ্ছে ‘মানসিকতা’।


সম্পদে সমৃদ্ধি যতই হোক না কেন একাকী চেষ্টা করে এককভাবে কোনো দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতে পারে না। আরো একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন সরকার প্রধানদের কাছে ১৯৮০ সালে ২ মে তারিখে।


১৯৮০ সালে ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের কাছে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি ওয়ার্কিং পেপার প্রেরণ করেন, তার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ সংগঠন ‘সার্ক’ গঠিত হয়। ধারাবাহিক সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে, ২০০৫ সালে ত্রয়োদশ সম্মেলনে চেয়ারপার্সন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিকাল ৫ টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


ঐ সম্মেলনে সার্কের ‘প্রথম এওয়ার্ড’ দেয়া হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যে এওয়ার্ডটি গ্রহণ করেছিলেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরি জোষ্ট্যপুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (তখনকার সময়ে সিনিয়র যুগ্ম মহা-সচিব।) প্রথম সার্ক এওয়ার্ড ঘোষণায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী নিয়নপো স্যানগে নিধুপ বলেন সার্কের ২০ বছর পূর্তিতে আমরা আপনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (স্বামী মরহুম জিয়াউর রহমান)-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তার দূরদৃষ্টিতে এবং উদ্যোগের ফলে আমাদের এই এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সার্কের ‘প্রথম এওয়ার্ড’ ঘোষণা করে আমরা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সংহতি, অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের কথা পূর্ণব্যক্ত করালাম বলে বক্তব্য শেষ করেন।


শহীদ জিয়ার সময়ে বাংলাদেশ ২০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমক্ষ হয়েছিল।


তিনবিঘা করিডর চুক্তির রূপরেখা প্রণয়ন করেন। তালপট্টি মালিকানা দাবি প্রতিষ্ঠাও করেন। বাংলাদেশ শক্তিশালী জাপানকে ভোটে হারিয়ে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে সদস্য পদ লাভ করে।


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ভূ-রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বহির্বিশ্বের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা বজায় রেখে পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত করেছেন।


সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিকদের চাহিদা পূরণকে সামনে রেখে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরী করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।


বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’কে ধারণ করে, গণতন্ত্রের মাতা বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ধারাবাহিক সংগ্রামের শক্তি ও সরকার পরিচালনার সাফল্যের মধ্যে দিয়ে আগামীর সুজলা-সুফলার বাংলাদেশের গড়ে উঠবে।


লেখক পরিচিতি — সাংবাদিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মী

স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম 'জিয়াউর রহমান'



শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। ১৯ জানুয়ারি এই ক্ষণজন্মা মানুষটির ৮৫তম জন্মদিন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ সংগঠন সার্কের প্রতিষ্ঠা।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার কার্যকর সময়ের মধ্যেই দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কাজের ক্ষেত্রে মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তন এনেছেন তিনি।

দেশ গড়ার ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। পায়ে হেঁটে নিজ চোখে তিনি মানুষের সমস্যা দেখেছেন, দেশের সমস্যা অনুধাবন করেছেন। দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিয়েছেন। জনগণকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশবাসী তার ডাকে সাড়া দিয়েছিল। তিনি গড়ে তুলেছিলেন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য।

উন্নয়ন কার্যক্রমে সঞ্চারিত হয়েছিল দুর্বার গতি। সন্ত্রাসের করাল ছায়া থেকে মুক্ত স্বদেশে প্রথমবারের মতো বইল শান্তির সুবাতাস। অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণ হলো স্থিতিশীলতায়। অবসান হলো রাজনৈতিক শূণ্যতার। তিনি প্রায় ১০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সাফল্য বয়ে আনে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল দলের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। ফিরিয়ে দেয়া হয় বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব শুরু হয়। সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তায়র সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন করা হয়। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দেয়া হয়। হাজার-হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হয়। ২৭ হাজার ৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা দূরিকরণ করা হয়।

কলকারখানায় শ্রমিকের কাজ তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রফতানি পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগ নেয় হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন। হাইস্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার জন্য গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন জিয়াউর রহমান।

তার সময়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসন লাভ করে। তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয়। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ তিনি।

এছাড়াও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেসরকারিখাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিত করেন। জনশক্তি রপ্তানি, তৈরী পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যোর রফতানির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় সংবিধানের প্রথমে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম (পরম দয়াময় ও করুনাময় আল্লাহর নামে) সংযোজিত হয়। আর্টিকেল ১২⁄২-এ ‘ইসলামি উম্মার সাথে ভ্রাতৃত্ববোধের আলোকে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, উন্নায়ন এবং শক্তিশালী করার নীতি’ সূচনা করা হয়।

একটি সামগ্রিক জাতীয় পরিচয় সূচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী সংখ্যালঘু সাঁওতাল, গাঁড়ো, মনীপুরী ও চাকমাদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি সংবিধান ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিচায়ক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি স্থাপিত করেন।

সাংস্কৃতিক সমন্বয় ও অর্থনেতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ জিয়া ১৯৭৬ সালে একটি পার্বত্য উন্নয়ন কমিশন প্রতিষ্ঠা ও নিয়োগ করেন। সরকার এবং বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ সংঘটনের লক্ষ্যে তিনি একটি উপজাতীয় কনভেনশন আয়োজন করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ৯০ হাজারে উন্নীত করা হয়। গ্রাম সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ কল্পে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠা। সারা বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক ও যুব শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টসের সূচনা এবং ব্যক টু ব্যক এলসি প্রথা প্রবর্তন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্টকরণ ও উন্নয়ন। সৌদি আরব ও চায়নার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন-সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগী করণ। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। সকল ইসলামী দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শীর্ষ সংগঠন সার্ক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ সফর করে আঞ্চলিক ফোরাম গঠন করার প্রস্তাব করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলগুলোর ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় কাজ করা। ইতিবাচক সাড়া পেয়ে কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের কাছে চিঠি পাঠান বিশেষ দূতের মাধ্যমে। তারা সবাই মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন।  প্রথম চিঠি পাঠানো হয়েছে ১৯৮০ সালে ২৪ এপ্রিলে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কাছে চিঠি নিয়ে যান বাংলাদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী জালালউদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে কৃষিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম শিশুকে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইউমের কাছে মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমানসহ সাতটি দেশে সাতজন প্রতিনিধি ছিলেন।

আজকের সমসাময়িক বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাধা হচ্ছে ‘মানসিকতা’। সম্পদে সমৃদ্ধি যতই হোক না কেন একাকী চেষ্টা করে কোনো দেশের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরো সাফল্য আর্জন সম্ভব হতে পারে না।

১৯৮০ সালে ২ মে আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত প্রস্তাবনা আকারে পাঠান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সার্ক গঠনে উদ্যোগের সাফল্য সার্ক প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫ সালে ত্রয়োদশ সম্মেলনে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
জিয়াউর রহমানকে ‘প্রথম সার্ক এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। প্রথম সার্ক এওয়ার্ড ঘোষণায় সার্ক চেয়ারম্যান বলেন, সার্কের ২০ বছর পূর্তিতে আমরা আপনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (স্বামী মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। যার দূরদৃষ্টিতে এবং উদ্যোগের ফলে আমাদের এই এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। তাকে সার্কের প্রথম এওয়ার্ড ২০০৪ ঘোষণা করে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সংহতি অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের কথা পূর্ণব্যক্ত করলাম বলে বক্তব্য শেষ করেন ভুটানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়নপো স্যানগে নিধুপ।

সার্কের প্রথম এওয়ার্ড ২০০৫ সালে ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশনায়ক তারেক রহমান (তখনকার সময়ে বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহা-সচিব) গ্রহণ করেন। তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আর্দশে, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনকে ধারণ করে।


—   শায়রুল কবির খান

লেখক সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী