শামা ওবায়েদ
---------------------------------------------------
বাংলাদেশের মানুষ এক দুঃসহ সময়ের মধ্যে বসবাস করছে। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মাত্রা দিনে-দিনে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষের মৃত্যুতে ভার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে অপরিকল্পিত লকডাউন--- যেখানে জীবিকা আর প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মানুষের নাভিশ্বাস সংগ্রাম। রাষ্ট্রজুড়ে বর্তমান আওয়ামী লীগের বিনা নির্বাচিত সরকারের দুর্গতিসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা।
এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধানতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, সাবেক তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক-এগারোর মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। অথচ একইসময়ে করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই মামলাগুলো নেই। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত করছে সরকার। অথচ, এক-এগারোর সময় বেগম খালেদা জিয়াই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসার জন্য সোচ্চার ছিলেন।
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, নেতৃত্বদানকারী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রধান, সাবেক নির্বাচিত তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সেক্টর ও ফোর্সেস কমান্ডারের সম্মানিতা স্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের ফিরোজায় ব্যক্তিগত ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বিত বোর্ডের অধীনে আছেন। তার মুক্তিকে যেমন বাধাগ্রস্ত করে রাখা হয়েছে, তেমনি মানুষের স্বাভাবিক জীবনকেও আটকে রেখেছে সরকার।
সব মানুষের মনে ক্ষোভ, জীবনবঞ্চনার হাহাকার। চরিত্রহীন একটি রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশ পরিচালনায় রয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ‘খারাপ সরকার’টি।
‘নিখোঁজ গণতন্ত্র’ এ অধ্যাপক আলী রীয়াজ লিখছেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হলো একটি হেজিমনিক ইলেকটোরাল অথরিটারিয়ান শাসনব্যবস্থা বা আধিপত্যশীল নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদী শাসন।’
আইন ও শালিস কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে ইতিহাসের বর্বরতম সরকারের চিত্র। প্রতিষ্ঠানের একটি তথ্য বলছে, ‘২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত অপহরণের শিকার হওয়া ৩১০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৩ জন ফিরে এসেছেন।
ফিরে আসাদের সংখ্যা নিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যের পার্থক্য থাকলেও যারা ফিরে আসেন, তারা যেন স্বাভাবিক থাকতে পারেন না। একটা ভীতি, একটা ভীরু পরিবেশ বজায় থাকে চারপাশে। সংবাদপত্রে দেখি, তারা কেউ কথা বলতে চান না।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার বিপরীতে দলান্ধ, দুর্নীতিগ্রস্থ রাখার মধ্য দিয়ে এই ভীরু পরিবেশ স্থায়ী রাখার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মূল্যবোধ, মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ভীতি সারাদেশে ছড়িয়ে স্বৈরশাসনের সবরকম প্রতিবাদ রুখে দেওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। আর এই ভীতির সাম্রাজ্যে একমাত্র হুমকি তারেক রহমান-- যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আসন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে মানুষ।
সুদূর লন্ডনে বসে করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন তারেক রহমান। তার নেতৃত্বাধীন বিএনপির নেতাকর্মীরা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপন্ন মানুষকে তার নেতৃত্ব, নির্দেশনায় দেওয়া হয়েছে ত্রাণ, খাবার, নিত্যপণ্য। পুরো দল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে দেশের মানুষের সঙ্গে লড়াই করেছেন। আর এই বেঁচে থাকার কঠিন সময়েও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আহত হয়েছেন অনেক সহকর্মী। নিমর্মভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন ত্রাণ কার্যক্রম। তবুও, মানুষের পাশেই আছে বিএনপি। তারেক রহমানের আবারও নির্দেশনা, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
পলিমাটির এই দেশের সাধারণ মানুষমাত্রেই জানেন আসন্ন ভবিষ্যতের নির্মাণ শুরু হবে তারেক রহমানের হাত ধরে। তারা জানেন যে খাল কেটে, বস্ত্র রপ্তানি করে, সার্ক গঠন করার মতো অগণিত উদ্যোগ ও নেতৃত্ব বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী করে তোলার অবিচ্ছেদ্য রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের ছেলেও সেই সাধারণ মানুষের মায়ামমতায় আশ্রিত। বহু দূরে বসে স্বদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে একদিকে ঝকঝকে উন্নতির ফানুস, আড়ালে লুটপাট আর জোর-জুলুম--এমন পরিস্থিতিকে আরও শাণিত করতে, রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদি সংঘের অন্যায়, অবাধ অপশাসনের যাত্রা আরও অব্যাহত রাখতেই; এই বিক্ষুব্ধ মানুষের, জনমানুষের নেতা তারেক রহমানকে টার্গেট করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বাংলাদেশবিরোধী শক্তি তার রাজনৈতিক জীবনের উন্মেষের সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসেছে, রাজনীতিতে থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন মেজর জিয়াউর রহমান ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে, আবার যখন বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র প্রায় ঘনিয়ে এসেছিলো-- সিপাহী-জনতার সমন্বিত প্রতিরোধের মুখে তাদের বিজয়ী করেন জিয়াউর রহমানই। এরপর তাকে শহীদ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবারও হারানোর চক্রান্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে নেতৃত্বে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দেশের মধ্যাহ্নে নিয়ে এসে নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অবিচল আপোষহীনতার মূর্ত প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার সেই সংগ্রামের পথ ধরেই বাংলাদেশকে জেতাবেন তারেক রহমান।
দেশে ভোট নেই, মানুষের অধিকার নেই, নারীর নিরাপত্তা নেই, প্রত্যেক মানুষকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে রেখে ‘ফ্যাসিবাদি রাষ্ট্রের’ পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার চক্রান্তকে কেবলমাত্র তার নেতৃত্বই নস্যাৎ করতে পারে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ‘ব্যর্থ’ করে রাখার যে চক্রান্ত অব্যাহত আছে, তার শুরুটা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে টার্গেট করা হয়েছে।
এক-এগারোর সময় নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলার অপচেষ্টাও হয়েছে। ওই সময় আমার বাবা, বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমান ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই সময় টিভিতে সংবাদ দেখে বলেছিলেন-- ‘মা দেশনেত্রী; দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাবা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, তাদের সন্তানের সাথে এভাবে আচরণ করছে, এইটা ফেস করতে হবে, ভাবিনি। তার বাবা তো দেশ স্বাধীন করেছেন।’