রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকার গতকালের বিস্ফোরণে ধসে যাওয়া ভবনের একাংশ। মগবাজার, ঢাকা, জুন ২৮, ২০২১। ছবি — সাজিদ হোসেন |
মরা ইঁদুর খাওয়ার গল্প শুনিয়ে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি করা যায় তবে দেশের মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। একটি দেশের নাগরিকের জান ও মালের রক্ষার জন্য সর্বাপেক্ষা প্রয়োজন সুশাসন ও সুশাসক। এই দুই জিনিসের মূল্য বা প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের মানুষ যত দ্রুত বুঝতে পারবে নিজের জান ও মালের রক্ষা তত দ্রুত করতে পারে বলে।
ঘুম থেকে উঠে বিছানায় থাকা অবস্থায় মোবাইল হাতে নিতেই দুইটা সংবাদ চোখে পড়লো। একটা হলো ঢাকার মগবাজারের একটি হোটেলে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ ও অন্যটি হলো কুয়াকাটা শহরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই একটি সেতু ধসে পড়ার ঘটনা।
যে দুইটি দুর্ঘটনার কথা উপরে উল্লেখ করেছি তার কোনটাই বাংলাদেশে প্রথম না, কিংবা এই দুই দুর্ঘটনাই শেষ না। পূর্বের প্রতিটি গ্যাস কিংবা ক্যামিকেল দুর্ঘটনার তদন্ত শেষে দেখা গেছে সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘুষ-দুর্নীতি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকা কিংবা স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা কর্তৃক আইন অমান্য করে গ্যাসের লাইন বিতরণ করা কিংবা ক্যামিকেলের গুদাম চালু রাখা। নির্মাণাধীন ব্রিজ কিংবা স্থাপনাগুলোর প্রায় ১০০% স্থাপনা ভেঙ্গে পড়ার জন্য প্রায় শতভাগ দায়ী ঠিকাদার কর্তৃক মানহীন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা। ঠিকাদারকে শুধু দোষ দেওয়া যা না। নির্মাণ কাজ থেকে সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রাম থেকে মন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত ঘুষের পার্সেন্টেজ বিতরণ করার পরে নির্মাণ ঠিকাদার লোহার পরিবর্তে নির্মাণ কাজে বাঁশ ব্যবহার করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। দশ বস্তা সিমেন্টের পরিবর্তে ৫ বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। আমি দাবি করছি না যে বাংলাদেশের ঠিকাদাররা আজ থেকে ১০-২০ বছর পূর্বে নির্মাণ কাজে ১০০ ভাগ মান বজায় রেখে নির্মাণ কাজ করেছে। তবে একটা বিষয় আমি হলফ করেই বলতে পারি আজ থেকে ১০-২০ বছর পূর্বে কোন নির্মাণ কাজে লোহার পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করে নাই। আজ থেকে ১০-২০ বছর পূর্বে ঠিকাদারদের ঐ পরিমাণ দুর্নীতি করার সাহস ছিলও না কিংবা ঐ পরিমাণ দুর্নীতি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করেনি। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরি করে তা দুঃসহ মানুষদের হাতে তুলে দেওয়ার পূর্বেই তা ভেঙ্গে পড়ে নি, মডেল মসজিদ উদ্বোধনের পরের দিন পলেস্টার খসে পড়ার সংবাদ পাওয়া যায় নি। সুশাসন দিয়ে নাগরিকের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার পরিবর্তে দলীয় নেতাকর্মীদের যেভাবে পারো টাকা বানাও কিংবা পুরো আমলাতন্ত্রকে কানাডার বেগম পাড়া কিংবা আমেরিকার জ্যাকসনহাইটে বাড়ি কেনার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করার ব্ল্যাংক চেক দেওয়া যত দিন না বন্ধ হবে ততদিন একের পর এক বিস্ফোরণে মানুষের পোড়া শরীরের গন্ধ দেশের নাগরিকের নাকে আসা বন্ধ হবে না। উদ্বোধনের পূর্বেই সেতু, মডেল মসজিদ কিংবা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ির ওয়াল ধসে পড়া ছবি পত্রিকায় আসা বন্ধ হবে না।
- লেখক কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক।
No comments:
Post a Comment