— ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম
সোশ্যাল , ইলেকট্রিনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে এই প্রশ্নটা সামনে আসে যে কে বা কারা বা কার নির্দেশে এবং কার আমলে প্রথম স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও দালালদেরকে পুনর্বাসন শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও তাদের সুশীল সমাজসহ চেতনাজীবীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও দালালদেরকে পুনর্বাসিত করার জন্য অভিযুক্ত করে থাকে। এই অভিযোগ কতটা সত্য, জানুন।
‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়’ বইয়ের লেখক আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আহমদ শরীফ, কাজী নূর-উজ-জামান ও শাহরিয়ার কবির। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী বাঙালিদের তালিকা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত এই বইটি একটি দালিলিক প্রমাণ গ্রন্থ। এই বইতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা আছে যে শেখ মুজিবের আমলেই রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী দালালদের পুনর্বাসন শুরু হয়। এই রাজাকার ও দালাল পুনর্বাসন ব্যাপক ছিলো এবং রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীরা এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান পায় যে শেখ মুজিবর রহমানের আমলেই প্রায় সব চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকারের পুনর্বাসনের কাজ শেষ হয়ে যায়।
লেঃ কর্নেল ফিরোজ সালাহউদ্দিনের কথা আপনেদের সবার জানা আছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর উপপ্রধান এবং রাজকার বাহীনি প্রধান রিক্রুটিং অফিসার ছিলেন। এই লেঃ কর্নেল ফিরোজ সালাহউদ্দিন পাকিস্তানপন্থী স্বাধীনতা বিরোধী সব থেকে বড় রাজাকার ও দালাল ছিল। ৭২ সালের জানুয়ারিতেই পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের পদে নিযুক্তি দেন শেখ মুজিবুর রহমান। লেঃ কর্নেল ফিরোজ সালাহউদ্দিনকে এই পদে দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফায়েত জামিল তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। সাফায়েত জামিল এই পাকিস্তানপন্থী স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও দালালকে স্যালুট করেন নাই। সেই অপরাধে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফায়েত জামিলের কোর্ট মার্শাল হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
এই খানেই শেষ নয়।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার, ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সোমবার, ডিসেম্বর, ১৬, ২০১৩, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ ‘আমি বিজয় দেখিনি’ শীর্ষক লেখায় আরো অনেক রাজাকারদের কথা তুলে ধরেছিলেন যাদের স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার পুনর্বাসিত করেছিল।
তিনি লেখেন —
স্বাধীনতা লাভের মাত্র কয়েক দিনের মাথায় অদৃশ্য শক্তির আশীর্বাদে অলৌকিক সব ঘটনা ঘটতে লাগল। বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে শত্রু আর মিত্রে কোনো বিভক্তিই থাকল না। ক্যাপ্টেন হাকিম একজন গোলন্দাজ অফিসার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৭ ব্রিগেডের ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্টে কর্মরত থেকে যুদ্ধের ন'মাস হবিগঞ্জের নোয়াপাড়া অবস্থানে গোলন্দাজ অফিসার হিসেবে যুদ্ধরত থেকেছেন মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে। শত শত মানুষ হত্যা করেছেন তিনি তার নিক্ষিপ্ত গোলায়। স্বাধীনতার পর তিনি শুধু চাকরিই ফেরত পেলেন না, তিনি দায়িত্ব পেলেন মিলিটারি পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসেবে। একইভাবে চাকরি ফেরত পেলেন লেফটেন্যান্ট মোদাব্বের ও লেফটেন্যান্ট আল ফরিদ। এরা দুজনই পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ জায়গাটি দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন পরবর্তীতে।
সেনাবাহিনীর সদর দফতরে চাকরি পেলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম রহমান। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের ১ নং সামরিক আদালতের প্রধান কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়। আরও চাকরি পেলেন কর্নেল ফিরোজ সালাহউদ্দিন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব হিসেবে। আরও যারা চাকরি পেলেন তারা হলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলাম, বেসামরিক গোয়েন্দা দফতরের প্রধান সাফদার, রাজাকার বাহিনী প্রধান রহিম এবং আরও অনেকে। এরা সবাই শুধু চাকরিই ফেরত পেলেন না, পেলেন রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ দফতর।
— শেষ।
সূত্র — https://bit.ly/2TXzbSG
কাজেই মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষক, স্বাধীনতাযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও জেডফোর্সের কমান্ডার শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এসব হীন প্রোপাগান্ডা বন্ধ করুন। আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। সত্যকে মেনে নিন।
- লেখক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাস্ট্র।
No comments:
Post a Comment