Search

Friday, June 25, 2021

প্রথম আলো — প্রোপাগান্ডা নয়, সাংবাদিকতার সাথে থাকো

-----------------------------

মুহম্মদ ইসমাইল 

-----------------------------

তারেক রহমান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বিএনপি
বাংলাদেশ আজ দুই ভয়াবহ কঠিন সমস্যায় জর্জরিত-মুমূর্ষু-স্তব্দ, শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতিতে নাগরিকেরা — প্রথম সমস্যা, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও মানুষের ভোটাধিকার না থাকায় জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন শাসকগোষ্ঠী স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি আর গণতন্ত্রপন্থী মানুষদেরকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে অবলীলায় টার্মের পর টার্ম ক্ষমতায় বসে আছে। জনগণের অধিকার নিয়ে তাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়ছে না এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারির ফলে সারাদেশে মানুষ অকাতরে কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত হচ্ছেন, বেঘোরে মারা যাচ্ছেন, মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ আছেন, অর্থনৈতিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। জীবন-জীবিকা বাঁচাতে শূন্যহাতে লড়াই করছেন তারা । দিশেহারা উদ্বিগ্ন সমগ্র জাতি। ভিন্ন এক সময় পার হচ্ছে জাতি।     

অথচ দেশের প্রধান একটি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে ‘প্রথম আলো’ দেশের এই দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে রুটিন মাফিক কিছু ডেস্ক রিপোর্টিং ছাড়া কিছুই করছে না। মানুষের যে ভোটাধিকার নেই,  গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, বিচার পাচ্ছে না, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে অন্ধকারাচ্ছন্ন যে গোটা দেশ — এসবের কোন প্রতিফলন এই পত্রিকায় দেখা যায় না।  সংবাদপত্র জনগণের দর্পণ। মিডিয়াকে বলা হয় রাষ্ট্রের ‘ফোর্থ স্টেট’। রাষ্ট্রকে সঠিক পথে রাখতে মিডিয়ার রয়েছে পবিত্র দায়িত্ব। মানুষের অধিকার আর মানুষের সামগ্রিক বিষয়কে কেন্দ্র করেই একটি গণমাধ্যম বেড়ে গড়ে ওঠে। এটিই একটি জাতীয় মিডিয়া আউটলেটের কাজ এবং এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের প্রধান শর্ত পূরণের শপথ নিয়েই এই অর্গানাইজেশন অনুমতি লাভ করে। সংবাদপত্র, রেডিয়ো, টিভি, ইন্টারনেট নিউজপেপার যে মাধ্যমেই হউক না কেনো একটি গণমাধ্যমের কাজ হচ্ছে সত্য উৎঘাটন করা, মানুষের অধিকারের পক্ষে থাকা, এর ব্যত্যয় হওয়া মানে পবিত্র দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা।   দেশে দেশে যুগে যুগে গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে গণমাধ্যম সাহসী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ও নব্বই দশকের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সংবাদমাধ্যম সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। অথচ দেশে আজ এক যুগ ধরে গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার অধিকারও নেই। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। কিন্তু প্রথম আলো যেনো উট পাখির মতো বালির ভিতর মুখ লুকিয়ে পালিয়ে থেকে টিকে থাকার নীতির সাথেই চলছে!  


করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারিতে সরকারের ব্যর্থতা, মানুষের ভোগান্তী, সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার কাজটি করতেও প্রথম আলো যেনো নিত্য ভয় পাচ্ছে। ভয়াবহ করোনাভাইরাস বিষয়ে সরকার ও জনগনকে আগাম সতর্ক করতে  আট কলাম ব্যানার হেডলাইন পাঠক হিসেবে আমাদের চোখে পড়েনি! এটি একটি বড়ো কাজ ছিল। সরকার ও দেশবাসীকে একটা ম্যাসেজ দেয়া জরুরি ছিল যে এক ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে দেশে। কিন্তু রুটিন, কপিপেস্ট ডেস্ক রিপোর্টিং এর বাইরে কিছু করেনি প্রথম আলো! কর্তৃপক্ষ যা বলছে তা-ই   প্রথম আলো ছাপছে, প্রকাশ করছে। এবং সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় এবং নানা উপায়ে প্রকাশ করছে করোনাভাইরাস তেমন কিছু না, একে জয় করবে সরকার। অথচ নিজের জগতটাকে বিস্তৃত করে চোখ মেলে একটু বিশ্ব মিডিয়াগুলোর দিকে তাকালে প্রথম আলো দেখতে পারত কোভিড নাইনটিকে তারা কিভাবে কাভার করছে। দেশে দেশে সরকারসমূহ তাদের জনগণের জীবন ও জীবিকার দায়িত্ব নিয়েছে। নাগরিকেরা পাচ্ছেন অর্থনৈতিক সহযোগিতা, নিখরচায় চিকিৎসা। অনেক দেশে  ব্যর্থ সরকারদেরকে সরে যেতে হয়েছে।  অথচ জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে জনগণের প্রাপ্য অধিকারের বিষয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় না প্রথম আলোকে।  অথচ এটি গণমাধ্যমের নিত্য কাজ। এই জন্য একটি সম্পাদকীয় বিভাগই থাকে, যেখানে প্রতিদিন জনগণের কণ্ঠ শুনতে পাওয়া যাওয়ার কথা ছিল। 

পাঠক হিসেবে দেখি প্রথম আলো খেলাধুলা ও ইন্ডিয়ান সিনেমার নায়ক নায়িকাদের খবরাখবর প্রকাশ করতেই ব্যস্ত থাকছে সারাক্ষণ যখন করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে থমকে রেখেছে! পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন। খেলার খবরই বড়ো বড়ো করে থাকে প্রথম পাতায়। আপনি আজকেই তাদের বিনোদন সেকশন একটি চেক করে আসেন। যেন এটি ইন্ডিয়ান পত্রিকা। প্রথম আলোকে প্রশ্ন, ভারতের কোন পত্রিকায় কি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের কোন সংবাদ এতো বড়ো করে প্রতিদিন প্রকাশ করে? আপনাদের কি আত্নসম্মানবোধে লাগে না। আপনারা ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির নিত্য প্রচার ও প্রশার করে যাচ্ছেন! কিন্তু বাংলাদেশী সাংস্কৃতিকে অন্য দেশতো প্রমোট করছে না। 

সারা বিশ্বে এবং আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্যান্ডেমিকজনিত এমন ভয়াবহ শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতিতেও জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকার প্রযোজিত ঘূর্ণমান ‘তারেক রহমান’ গিবতের সাথে তাল মেলাতে যেন প্রথম আলো পণ ধরেছে। নির্লজ্জভাবে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে নিজেকে ব্যবহার করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিপক্ষেই অবস্থান সুস্পষ্ট করছে। আস্থা হারাচ্ছে প্রথম আলো। পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে পত্রিকাটি। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে সুপরিকল্পিতভাবে অপ্রাসঙ্গিক ও অদরকারি বিষয়ে অসত্য রিপোর্ট তৈরি করে 'কৃত্রিমইস্যু' সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্তকরে জাতির চলমান চ্যালেঞ্জসমূহ থেকে তাদের চিন্তাজগতকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করছে।  

প্রতিটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ, বাছাই ও সম্পাদনার নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে। রিপোর্টারকে আস্যাইনমেন্ট দেয়া হয় অথবা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রিপোর্টার সংবাদ লেখেন।  অথচ  সংবাদ তৈরি ও প্রকাশের ন্যূনতম মানদণ্ডও বজায় না রেখে বৃহসস্পতিবার, জুন ২৪, ২০২১, সকালে একটা অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রথম আলো এখন যেনো মিথ্যাচার, গল্পগুজব, ইন্ডিয়ান নাচ, গানের কারখানা! রিপোর্টারকে প্রশ্ন দেশের চলমান রাজনৈতিক মঞ্চে এমন কী হয়েছে যে এমন একটি মনগড়া ফরমায়েশি রিপোর্ট লিখতে হলো! এ যেন মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দীর্ঘ সংগ্রামের পিঠে ছুরিকাঘাত! 

নগর পুড়লে দেবালয় কি এড়ায়

রিপোর্টের হেডলাইন ‘তারেকের নেতৃত্বে বিএনপি দাঁড়াতে পারছে না’। বাস্তবতা হচ্ছে চক্রান্তমূলক একএগারো থেকেই বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারছে না। সে কালো দিনে আশির দশকের আন্দোলন সংগ্রাম আর ত্যাগ, রক্ত, জীবন এর বিনিমিয়ে অর্জিত দেড় দশকের গৌরবময় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে পদদলিত করে বাংলাদেশকে ধ্বংস করা হয়েছে।  এই চক্রান্তের অন্যতম ক্রীড়নক হিসেবে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী প্রথম আলোকে বার বার চিহ্নিত করেছে। জেলায় জেলায় মামলা করেছে। এরপর একএগারোর বিশেষ প্রকিয়াজাত সরকার  জানুয়ারি ৫, ২০১৪ এর  বিনাভোটের নির্বাচনের এবং ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮ এর মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যত জনগনের ম্যান্ডেটবিহীনভাবে ক্ষমতা দখলে রেখেছে। মানুষ হারিয়েছে ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য। বাংলাদেশ বিপদে, জনগনের শ্বাসরূদ্ধ। ‘গুম-খুন-গ্রেপ্তার-মামলা-হামলা’ এর মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে এর কুফল প্রথম আলোকেও ভোগ করতে হচ্ছে। মামলা, নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সাংবাদিকদের। বড় কর্পোরেটদের বিজ্ঞাপনও পাচ্ছে না। এই নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবাদ বা এক্টিভিজম জাতি লক্ষ করছে না। কিন্তু মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন তারা।  

তৃণমূল থেকেই উঠে এসেছেন তারেক রহমান। 


কিন্তু প্রথম আলো নিশ্চয়ই জানে যে তারেক রহমান আজকে নেতা হননি। আশির দশকেই তিনি একজন সাধারণ প্রাথমিক সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগ দিয়ে নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঝে থেকে অবিরাম সংগঠনকে গণতান্ত্রিক উপায়ে শক্তিশালী করার কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই তিনি গণতান্ত্রীক ও শান্তপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে পাল্টে দিতে দিনরাত একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে সুদীর্ঘ  কাল ধরে তিনি বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বে দায়িত্বপালন করেই আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে কৌশল প্রণয়ন ও প্রচারণায় নিউক্লিয়াসের মতো কাজ করেছেন। তারেক রহমান কিন্তু দলে একজন প্রাথমিক সদস্য থেকে শুরু করে চার দশক ধরে মাঠে ময়দানে অক্লান্ত পরিশ্রম করেই সময়ের প্রয়োজনে দলের শীর্ষে এসে পৌঁছেছেন। তিনি পেশায় রাজনীতিবিদ। এর মাঝে বিএনপি তিনবার জনগনের ভোটে সরকার গঠন করেছিল। তারেক রহমান কিন্তু এমপি, মন্ত্রী হননি। তিনি দলের একজন হয়েই জনগণ ও কর্মীর মাঝে থাকতেই পছন্দ করেছিলেন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দেশ ও দলের জন্য নিরলস কাজ করে গিয়েছেন এবং যাচ্ছেন। তারেক রহমান আর বিএনপি এক ও অভিন্ন। বিএনপির সবস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভালোবাসা ও প্রেরণার অসীম উৎস। দলে তারেক রহমানের বিস্তার বিএনপির মূলকাঠামোর সাথে একাকার। এটাই বাস্তব। এইখানে অন্য কোন সমীকরণ সম্ভব নয়, ফল মিলবে না।   


তাঁর ক্রিয়েটিভ  নেতৃত্বে সারাদেশে তৃণমূল বিএনপির যে সাংগঠনিক সভাগুলো তিনি সেই দেড় যুগ আগেই করেছেন, সেই রকম কর্মসূচি অন্যকোন দল এখনো করতে পারেনি। একই সময়ে তারেক রহমানের পরিকল্পনায় দেশে বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় ভোটের মাধ্যমে দলীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিএনপি বিএনপির সাথে লড়েছিল। সেই সময়ে তাঁর এসব গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড সারাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। প্রথম আলো চক্র কিন্তু সেগুলো দেখেও দেখিনি।  উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে এইভাবেই দলের কমিটি গঠন ও প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। নিজেদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দলে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে অন্যকোন দল কিন্তু এমনটি করতে পারেনি। তারেক রহমান সফল্ভাবেই করে দেখিয়েছেন। দলে গণতন্ত্র চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে তারেক রহমান অবিচল। সর্বশেষ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি তিনি সুদূর লন্ডন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে গাইডলাইন দিয়ে ভোটের মাধ্যমে গঠন করেছিলেন। প্রথম আলোকে অনুরোধ করব তারেক রহমান যেভাবে তৃণমূল প্রতিনিধি সভা করেছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের আর কোন রাজনৈতিক দল সেটি করতে পেরেছে কীনা তা একটু খতিয়ে দেখে একটা রিপোর্ট প্রকাশ করতে। 

বিএনপি চেয়ারপার্সন, মাদার অব ডেমোক্রেসি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবেই কর্মসূচি পালন করছে। দলের জাতীয় স্থায়ীকমিটি, চেয়ারপার্সন এর উপদেষ্টা কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকরা এবং সমমনা পেশাজীবী সংগঠনগুলো দলের পরিকল্পনা মতো কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। 

বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক শান্তিময় দল। এই পথেই অবিরাম ছুটছে বিএনপি।  আর তারেক রহমান আজীবন দলের সেই ম্যারাথন দৌড়ের সাথেই আছেন বিএনপির রাজনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে। হঠাৎ করে এখনি তিনি নেতা হননি। হঠাৎ করেই বিএনপি দাঁড়াতে পারছে না, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। কাজেই ‘তারেকের নেতৃত্বে বিএনপি দাঁড়াতে পারছে না’ গিবত তথা অসত্য ছাড়া কিছুই নয়। তারেক রহমানের চার দশকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে পুরো ভুলে গিয়েই এমন অসত্য ভাবনা সম্ভব। 

রিপোর্টের সাবহেড —  দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ মহলে তারেক রহমানের ব্যাপারে অগ্রহণযোগ্যতা কাটেনি। ফলে ক্ষমতার রাজনীতিতে বিএনপি আগের জায়গাতেই রয়ে গেছে।

কিন্তু রিপোর্টে কোন কোন বিদেশীমহলের কাছে তারেক রহমান এর অগ্রহণযোগ্যতা কাটেনি, সেসব মহলের কারো নাম ও বক্তব্য নেই। রিপোর্টার যেন আষাঢ়ে গল্প বলছেন। পত্রিকা আছে, লেখা প্রকাশের ক্ষমতা আছে বলেই কি একটি সংবাদপত্র এইভাবে অসত্য ও সূত্রবিহীন রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারে? এমন গল্পকাহিনী যে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়, সেটি কি আদৌ কোন সংবাদপত্র? প্রশ্ন রইল প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এর কাছে। প্রথম আলো কি উন্মুক্ত সোশ্যাল মিডিয়া যে যেকেউ তাঁর ইচ্ছামতো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই কিছু পাব্লিশ করে দিতে পারে। 

এবং প্রথম আলো কী স্বৈরতন্ত্র ও বিদেশী প্রভুর দাসত্বে বিশ্বাস করে। চক্রান্তে বিশ্বাস করে?  সরকার গঠন তো হবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এখন প্রশ্নজাগে প্রথম আলো কী মনে করে জনগণ নয় বরং দেশিবিদেশি গুরুত্বপূর্ণ মহল লাখো মানুষের আত্নত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠনকে নিয়ন্ত্রণ করছে? গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের পক্ষে থাকলে সেইসব চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচন কিন্তু করছে না প্রথম আলো! প্রথম আলোর সুশীল মুখোশ কিন্তু উন্মোচিত হয়ে গেলো। এমন এক অগণতান্ত্রিক ও চক্রান্তমূলক বিষয়ের অবতারণার মাধ্যমে। প্রথম আলোকে দেশের মানুষে পক্ষেই থাকতে হবে। প্রথম আলোকে সম্পাদকীয় লিখতে হবে যে বিদেশী শক্তি নয়, দেশের জনগণই হতে হবে ক্ষমতার উৎস।   

রিপোর্টের ইন্ট্রোতে লেখা আছে বিএনপির বড় একটি অংশের কাছে নাকি তারেক রহমান এর কর্তৃত্ব ও অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি আছে। এই ‘বড় অংশটির’ কারো নাম বা সূত্রও এখানে উল্লেখ করা হয়নি।  উচ্ছিষ্টভোগী এইসব প্রোপাগান্ডা মেশিনারিজের সবচেয় সহজ রাস্তা ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ এই কথাটিও ব্যবহার করা হয়নি। হায়রে হলুদ সাংবাদিকতা!  

বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। জনগণ কিন্তু এই বিষয়ের প্রশংসা করছে। জনগণ বলছে এমন দুর্দিনেও বিএনপি ইস্পাত কঠিন গণঐক্য বন্ধন তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছ। আমরা দেখছি যে তারেক রহমান কর্তৃত্ববাদী নন, গণতন্ত্রবাদী। বিএনপির জাতীয় স্থায়ীকমিটির প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত বৈঠক হয়। সেখানে পলিসি নিয়ে  বিস্তারিত আলোচনা শেষে গণতান্ত্রিকভাবেই সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বিষয়ে অনেকবার কথা বলেছেন। কর্তৃত্ববাদী হলে তো এসব মিটিং না করলেও চলতো। প্রথম আলোকে প্রশ্ন, বিনাভোটের যে দলটি ক্ষমতা নির্লজ্জভাবে দখল করে আছে সেই দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠক কয় মাস পরপর হয়?   

ইন্ট্রোতে আরো লেখা আছে তারেক রহমান এর নেতৃত্ব দৃঢ় হয়নি। আবার নিচেই লেখা আছে তারেক রহমান দলে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন! একই রিপোর্টে বিপরীতমুখী অবস্থান। এখন প্রশ্ন জাগে প্রথম আলোর সাংবাদিকরা কি সুস্থা আছেন নাকি বেঘোরে কাজ করছেন?   

রিপোর্টার লিখেছেন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। গুম-খুন-গ্রেপ্তার-মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন। দেশে কর্মসংস্থান নেই। এসব কারণে সারাদেশের মানুষই এখন হতাশার অতলে ডুবে আছে। বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকেরা এই দেশেরই অংশ। দেশের সমগ্র সাংবাদিক সমাজও হতাশায় আছেন। 

দলের সদ্য প্রয়াত জাতীয় নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এলাকায় কমিটি গঠনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। প্রোপাগান্ডা মেশিনারিজ বাস্তবে প্রয়াত মানুষদের উদাহরণ ব্যবহার করতে ভালোবাসে। কারণ সেগুলো ভেরিফাই করা কঠিন।  কমিটি গঠন বিষয়ে দুই তিনটি এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ দলে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।   

২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ প্রার্থীদের মধ্যে চার জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে নাকি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে! বাস্তবে যারা নমিনেশন পাবেন না তারা কম বেশি ক্ষুব্ধ হতে পারেন। সব দলেই হয়। আর যে চার জনের নাম উল্লেখ করা আছে তারা কিন্তু বিএনপির পরীক্ষিত নেতা। নির্বাচনী এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তা সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে। তাদের কারো মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে, কারো বাড়ীতে ভাংচুর করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে দেশের অন্যদল যেটি ভোট ছাড়াই ক্ষমতায়, তাদের এক পরিবারের অনেক প্রার্থী এখন অবৈধ এমপি!  প্রথম আলো সেই ব্যাপারে উদাসীন। কারণ তারা ব্যস্ত ভারতীয় সিনেমার খবর প্রকাশে আর বিএনপি গিবতে, সাংবাদিকতা ছেড়ে প্রোপাগান্ডা মেশিনে পরিণত হয়েছে। 

রিপোর্টে জাতীয় স্থায়ীকমিটি গঠন বিষয়ে বলা হয়েছে। জাতীয় স্থায়ীকমিটিতে দলের এবং দেশের শ্রদ্ধেয়া সিনিয়র নেত্রী সেলিমা রহমান ও সিনিয়র নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এর অন্তর্ভুক্তি বিএনপির সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি ছিল চমৎকার এবং এর মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট প্রাজ্ঞতা প্রমাণিত হয়েছে।  

প্রথম কথাটিই দ্বিতীয়বার বলছি, জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকার ফ্যাসিজমের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। বিপদে বিপথে আজ বাংলাদেশ। এই থেকে কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এর সর্বশেষ উদাহরণ মাত্র। রোজিনা ইসলামসহ গণমাধ্যমের সকল ন্যায্য দাবির প্রতি বিএনপি সর্বদা সোচ্চার রয়েছে। ভারতীয় সিনেমার নায়ক নায়িকাদের নিয়ে প্রতিদিন বড় বড় রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ করতে কোন ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট করতে প্রথম আলোকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদেরকেই এমন হতাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে দেখা যায়। প্রথম আলো এই বিষয়ে একটু কাজ করুন।  

আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সর্বদা 'মুক্ত গণমাধ্যম' এ বিশ্বাস করে। বিএনপি গণমাধ্যমবান্ধব দল। এটাই দলটির অবিচল নীতি। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষক, মহাবীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের এক ও এগারো নাম্বার সেক্টর এবং জেডফোর্সের কমান্ডার, সাতই নভেম্বরের সিপাহীজনতার বিপ্লবের মহানায়ক, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমত্রী, মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া গণমাধ্যমে শত ফুল ফোটার পরিবেশ নিশ্চিত করেছিলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গণমাধ্যমে বান্ধব। সাংবাদিকদের সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের সিনিয়র অনেক সাংবাদিক বিভিন্ন সময় সেটি উল্লেখ করেছেন।  

এবার আসা যাক শেষ কথায়। আসলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলেকে ক্রমাগত শক্তিশালী করছেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন। জাতীয় স্থায়ীকমিটির সভা নিয়মিত করছেন। প্রধান কর্মসূচিগুলোতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকছেন। বিভিন্ন ইউনিট এর কমিটি হচ্ছে। অথচ তারেক রহমানের গিবত প্রকাশে প্রথম আলো এগিয়ে থাকলেও তাঁর বক্তব্য প্রচারে কিন্তু হাতঘুটিয়েই থাকে! দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার বক্তব্য তারা প্রচার করেনা। এ কেমন সাংবাদিকতা যে গিবত প্রকাশ করা যাবে, প্রশংসা করা যাবেনা। আর তারেক রহমানের আধুনিক নেতৃত্বের সম্ভাব্য প্রভাব ও ফল সম্পর্কে প্রোপাগান্ডা মেশিনারিজ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তারা উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের ব্যাপক গাত্রদাহ চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পেইজ খুলে টাকা খরচ করে অপপ্রচার করে চলছে।  প্রথম আলোর এমন ভিত্তিহীন অসত্য রিপোর্টিং তারই অংশ। প্রথম আলো তুমি মানুষের ভোটাধিকারের পক্ষে দাঁড়াও। গণতন্ত্রের পক্ষে থাকো। প্রোপাগান্ডা ছেড়ে সাংবাদিকতা করো। আমরা দেখেছি বিএনপি তোমাদের সাথেই আছে। বিএনপি তোমাদের জেলেও নেয়নি এবং বিজ্ঞাপনও বন্ধ করেনি। করবেও না।  

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হৃদয়ে আছেন তারেক রহমান, এই সত্যকে অসত্যের সাথে গুলিয়ে প্রোপাগান্ডা প্রচার থামাও। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিরুদ্ধে চলমান চক্রান্ত থেকে বেরিয়ে আসুন। অন্যথায় ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।   


  • লেখক একজন প্রথম আলোর পাঠক ও সাধারণ নাগরিক।  

No comments:

Post a Comment