Search

Sunday, September 30, 2018

Family debt lowest in 14 years: Global study

BD lags behind Asian economies, economists

Jasim Uddin Haroon

The country's household debt as percentage of gross domestic product (GDP) has been shrinking over the years from its peak in 2005. The household debt means the purchase of residential property and cars. The household debt, which was 5.1 per cent of the GDP in 2005, fell to 4.1 in 2010. It further decelerated to 3.5 per cent in 2015.

The percentage dipped to 3.3 per cent in 2018, lowest in 14 years, according to data prepared by the Institute of International Finance (IIF), a Washington-based organisation.

This falling trend signifies that people's involvement with the financial sector is decreasing even though Bangladesh's economy is expanding.

Usually household debt grows in line with economic expansion and it is believed that the falling trend is an exception.

The IIF is the global association of the financial industry, with close to 450 members from 70 countries.

In India, this trend is upward while in case of Pakistan the trend is also going down but not the way Bangladesh experiences.

Indonesia is one of the fastest-growing economies of Asia, with the household debt heading upward.

Economists view that this is happening as the depth of Bangladesh's financial sector is low.

They also said the financial sector, which has been struggling with a high volume of non-performing loans, is less focused on the household debts.

"Bangladesh's financial market has not deepened yet adequately to raise the household debt," said Dr Ahsan H Mansur, executive director at the Policy Research Institute of Bangladesh (PRI), a private think tank.

He said the household debt is involved with mortgage and this is yet to develop in the country leading to poor home-related financing.

"To my mind, the government's policy and diversified products are required to boost such debt," he noted.

Dr Zahid Hussain, lead economist at the World Bank's Dhaka office, said Bangladesh's financial market is less-developed than in other Asian economies and this is reflected in this indicator.

"We're falling behind day by day …" he said.

He said since the banking system is now crippled with troubled loans, it cannot think about expanding services.

"How can the banks show courage to invest in the areas?" he said.

Dr Hussain said currently Bangladesh's household loans mostly depend on immovable property as collateral and it is one of the constraints to expanding the loans.

"We've been working with the central bank of Bangladesh to introduce movable property as security to diversify the age-old collateral system," he noted.

On the other hand, people in the banking sector view that the country's financial market is presently urban-based and that's why the debt is falling.

Association of Bankers' Bangladesh Limited Chairman Syed Mahbubur Rahman told the FE: "Actually our market is yet to mature…"

"I believe a few cities -- Dhaka, Chattogram and Sylhet -- have higher household debts but the other cities and towns have remained outside such facilities," Mr Rahman said.

"In my view, only microcredit is the main source of household debts in the rural areas," he added.

According to a study of the Bangladesh Institute of Bank Management (BIBM), more than 80 per cent of the bank finances are concentrated in urban areas.

He, however, said this contraction in percentage is true, but in absolute value this is rising at slow pace compared to the economic expansion.

  • Courtesy: The Financial Express/ Sep 30, 2018

হজে থেকেও আসামি!

কুমিল্লায় গায়েবি মামলা


কুমিল্লার সদর দক্ষিণে গায়েবি ঘটনাস্থল উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এছাড়া মাজাহারুল ইসলাম সফু নামের এক বিএনপি নেতা পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কায় থেকেও মামলা থেকে রেহাই পাননি, তাকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। 

জানা যায়, জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই কোমল কুমার সাহা বাদী হয়ে গত ১৭ই আগস্ট স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৬ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার ৩৯নং আসামি ‘মো. মাজাহারুল ইসলাম প্রকাশ সফু (৪০), পিং- মাস্টার মমতাজুর রহমান, সাং- তুলাগাঁও, থানা- নাঙ্গলকোট’ কুমিল্লা। মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয় সদর দক্ষিণ উপজেলার ‘শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কোণা’। জানা গেছে, সদর দক্ষিণ উপজেলায় শাসনপাড়া নামে কোনো গ্রাম নেই, তবে এই নামে লালমাই উপজেলায় একটি গ্রাম রয়েছে এবং ওই গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এছাড়া এ মামলায় মাজাহারুল ইসলাম সফুকে আসামিভুক্ত করা হলেও তিনি মামলায় উল্লিখিত ঘটনার ৫৮ দিন আগে হজ্বে গেছেন এবং ফিরেছেন মামলায় উল্লিখিত ঘটনার ২৪ দিন পর।

এদিকে ওই মামলার ঘটনাস্থল এবং হজ্বে যাওয়া মাজাহারুল ইসলাম সফুর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান এবং শাসনপাড়া গ্রামের লোকজন জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।’

গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের লোকজন জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও এই নামে বিদ্যালয়ের মাঠের কোণে গায়েবী ঘটনাস্থল দেখিয়ে মামলা দায়ের করে হয়রানী করা হচ্ছে।’ মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মোতালেব মজুমদার জানান, আমরা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করে বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। ওই তালিকায় শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। 

তাই মামলায় উল্লিখিত ওই ঘটনাস্থলকে গায়েবী ঘটনাস্থল হিসেবে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, নাঙ্গলকোট উপজেলার মক্রবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম সফু পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য গত ২১শে জুলাই মক্কায় গেছেন, দেশে ফিরেছেন ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তাকে এ মামলার ৩৯নং আসামি করা হয়েছে। আদালতে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমানাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানীর উদ্দেশ্যে গায়েবি ঘটনা, ঘটনাস্থল ও মিথ্যা অভিযোগে যেভাবে একের পর এক মামলা সৃষ্টি করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর আমার পিতার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীরা আসার পথে ১৯ জনকে ধরে নিয়ে ৪৬ জনের নামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। 

এ ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার আতংকে নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর দিনাতিপাত করছে। হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবি জানান। এ বিষয়ে মামলার বাদী এসআই কোমল কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, সংঘটিত ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের নাম ভুল হয়েছে। এ মামলার কোনো আসামি হজ্বে ছিল কি-না তা জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা মামলায় দোষীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

  • কার্টসিঃ মনবজমিন/ সেপ্টেম্বর ৩০,২০১৮ 

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে গায়েবি বিলের ছড়াছড়ি, ৪০ কোটি টাকার বিল জব্দ

দীন ইসলাম 

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে গায়েবি বিলের খোঁজ মিলেছে। কাজ হয়নি অথচ কোম্পানির প্যাডে স্বাক্ষর করে বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগসাজশে এমন অপকর্ম করেছেন তারা। বিল দেয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিল প্রস্তুতের মাপবহি (এমবি)-তেও  কোনো তথ্য এন্ট্রি নেই। গেল ছয় বছরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিলের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম ঠিকাদারি বিলগুলো দেখে রীতিমতো হতবাক। প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদের সামনে তিনি বলেছেন, এভাবেও কি সরকারি অর্থ গায়েব করে দেয়া যায়। কাজ হয়নি অথচ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলা হয়েছে। 

কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ৩০,২০১৮ 

BNP activists panicked, on run as prosecution, arrest continue

Rashed Ahmed Mitul 

Main opposition Bangladesh Nationalist Party leaders and activists across the country are in panic and on the run as filing of spooky cases, revival of old cases and arrest by police continue ahead of the 11th parliamentary polls. 

Party leaders said that the panic caused many leaders and activists of BNP and its associate bodies to resort to various tactics to avoid arrest and many of them did not dare to attend party programmes while many were on the run. 

BNP secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir on September 21 said that they doubted if there would be any scope for restoring democracy the way the government filing ‘ghostly’ cases against the opposition, particularly BNP, leaders and activists across the country, making the elections ‘uncertain’.

He said that 3,736 cases were filed against over 3.13 lakhs BNP leaders and activists, over 2.33 lakhs unnamed in the cases and 3,690 were arrested in September 1-18. 

Several thousand leaders and activists joined the human chain in front of National Press Club on September 10 while only 1,500 joined two-hour token hunger strike on the premises of Institution of Engineers, Bangladesh in Dhaka on September 12 demanding immediate release of jailed BNP chairperson Khaleda Zia. BNP leaders blamed the fear of arrest for the poor participation in the hunger strike as over 200 leaders and activists were arrested on the way to and from the human chain.In both the programmes, many leaders and activists started to leave the venues halfway through the programmes apparently fearing arrest, party leaders said.

BNP standing committee members including ailing Tariqul Islam, Mirza Abbas and  Goyeshwar Chandra Roy, vice-chairmen  Khandaker Mahbub Hossain, Nitai Roy Chowdhury and Aminul Hoque, BNP chairperson’s adviser Taimur Alam Khandaker, senior joint secretary general Ruhul Kabir Rizvi and law affairs secretary Sanaullah Mia, among others, were named in ‘ghostly’ cases while joint secretary general  Habib-un-Nabi Khan Sohel,  assistant climate change affairs secretary Mostafizur Rahman Babul and assistant religious affairs secretary John Gomez , among others, were arrested in September, party leaders said. 

The fresh spell of arrest, prosecution and raid began from September 1, the day BNP celebrated its 40th founding anniversary, they said. Dhaka Metropolitan Police deputy commissioner (media) Masudur Rahman said that investigation into old cases usually continued until submission of the police report.

He said that new cases might be filed when any offence was committed.
About BNP’s allegation of filing ‘ghostly’ cases, he said that it was a common allegation. 

New Age correspondents from districts, including Barishal and Tangail, reported that local BNP leaders and activists were on the run in fear of arrest. Barishal south district BNP president Ebadul Hoque Chan said that it was difficult to count but several hundred leaders were named in 50 cases.

Barishal north district unit president Mejbahuddin Farhad said that the leaders and activists were in fear of arrest. Barishal metropolitan police commissioner Mosarraf Hossain said that no separate statistics of cases against and arrest of BNP leaders and activists. He claimed that police arrested only the people named in cases.

Barishal district superintendent of police Saiful Islam claimed that not a single political case was filed and none was arrested without being named in a case.

Tangail district BNP president Shamsul Alam Tofa alleged that a case was filed with Gopalpur police station in September against 300 leaders and activists, naming 36.

Police arrested Tangail district BNP general secretary Farhad Iqbal on September 8.Tangail model police station officer-in-charge Sayedur Rahman said that Iqbal was arrested in a case of sabotage injuring police members filed in July.

BNP-backed Sakhipur upazila parishad vice-chairman Mohammad Sabur Reza said that police detained five leaders, including Sakhipur municipal BNP former general secretary Abdul Gani, municipal Jubadal vice-chairman Sentu Mia and upazila Krishak Dal general secretary Fazlur Rahman, raiding houses of the upazila’s top leaders on September 6. 

Police filed a case on September 7 accusing 16 local BNP leaders and 50–60 unnamed activists of preparing for sabotage, BNP leaders said.

About 500 leaders and activists of Sakhipur and Basail upazilas are on the run, they said.  Tangail superintendent of police Sanjit Kumar Roy said that no false cases were filed against anyone.

  • Courtesy: New Age /Sep 29,2018

Thursday, September 27, 2018

পরিবর্তনের আলামত স্পষ্টতর হচ্ছে

মাসুদ মজুমদার


নির্বাচন কমিশন সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না। যেখানে অবিতর্কিত নির্বাচন কমিশন বা ইসি এবং সিইসি প্রয়োজন, সেখানে বিতর্ক বাড়ছে। যার ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি কিংবা নির্বাচন কমিশন এখনো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারছে না। সরকারের মুখপাত্ররা সিইসি ও নির্বাচন কমিশনকে অবিতর্কিত থাকতে দিতে চান না বলেই মনে হয়। কারণ, সিইসি যা বলেন তা ‘সংশোধন’ করে দিতে চেষ্টা করেন বর্তমান সরকারের মুখপাত্ররা।

ইভিএম নিয়ে অতি উৎসাহ এবং সেনা মোতায়েন নিয়ে সিইসি যা বলেন; সরকার যেন তার সে বক্তব্যকে সমর্থন করা দায়িত্ব বলে মনে করে। নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ প্রশ্নেও ইসি কতটা দৃঢ়, তা স্পষ্ট হতে পারেনি। কারণ, সরকারি লোকদের চিন্তা-ভাবনা ইসিকে বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে বলেই জনসাধারণের ধারণা। জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ তথা আরপিও খসড়ার পর্যালোচনা নিয়েও সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে; ঘোষিত রোডম্যাপও অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণায় এক ধরনের জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। সে ক্ষেত্রে ইসি এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। তাই ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, ইসি সম্ভবত নিষ্ঠা নিয়েও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না; যেমনটি পারা উচিত ছিল। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, সে ব্যাপারেও জনমনে সংশয় রয়েছে। তার বাইরে পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ইসির কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে আজো জনমনে আস্থা সৃষ্টি হয়নি।

বর্তমান সরকার সারা দেশে বিরাট একটি সুবিধাভোগী শ্রেণী সৃষ্টি করেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে, কিন্তু বাস্তবতা এড়ানো যাবে না। এদের দৌরাত্ম্য নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা এখনো কতটা দৃঢ়, সেটা বোঝা কঠিন। ক্ষমতাসীনেরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন; অথচ বিরোধী দল ন্যূনতম গণতন্ত্রচর্চার সুযোগও পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ইসির ভূমিকা এখনো অনেকটা দায়হীন।

আইন নির্বাচন কমিশনকে প্রচুর ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা প্রয়োগের সাহস ও সক্ষমতা দেখাতে প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রয়োজন। অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি, ইসি নিজের ক্ষমতাটুকু স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় না; বরং প্রশাসনের কাছে জিম্মি হয়ে ইসি প্রচুর অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা বাদ দিলেও নির্বাচন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধান এবং ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া সম্ভব হয় না।

ক্ষমতাহীন সেনা মোতায়েন কার্যত কোনো কাজ দেয় না। তাই সেনা মোতায়েন করতে হবে তাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতাসহ। নয়তো জাতিকে যেখানে এনে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা দাঁড় করিয়েছেন, সেখানে একটি গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন।

জাতীয় সংসদের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক মেরুকরণ ততটা চাঙা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর নাট্যমঞ্চের ঐক্যপ্রক্রিয়া নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই মেরুকরণের ধরন-ধারণের ওপরই জাতীয় নির্বাচন নির্ভর করবে। মিডিয়ায় খবর এসেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কেউ দুর্ভাবনায় রয়েছেন; কেউ আছেন খোশ মেজাজে। বাস্তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভোটারদের মনের ওপর নির্বাচন নির্ভর করবে। তবে নির্বাচন কমিশন যতটা সাফল্য ও যোগ্যতার সাথে আম্পায়ারিং করবে- গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে কি না সেটাই ফলাফল মিলিয়ে দেবে। এটা ঠিক, ভোটারেরা পরিবর্তনের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে। জাতীয় নেতাদের মনের অবস্থাও তাই। শেষ পর্যন্ত পরিবেশ পরিস্থিতি এবং ইসির ভূমিকাই মুখ্য হয়ে যাবে।

যেকোনো মানুষের সাথে দেখাসাক্ষাতে সবার প্রশ্ন একটাই- কী হবে? কী হতে যাচ্ছে? নির্বাচন হবে তো? সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না, আবার ৫ জানুয়ারি ধরনের কোনো কিছুর আয়োজন চলছে না তো? এর বাইরেও অনেক প্রশ্ন করা হয়, যা উল্লেখ করা যায় না কিংবা উল্লেখ করলে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠবে। আর জবাবই বা কী দেয়া সম্ভব? দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন না তোলাই ভালো। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কম কথাই সবার জন্য নিরাপদ। দেশে যখন এমন একটি গুমোট ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। তা ছাড়া, পুরো দেশটি এক ধরনের ভীতি ও শঙ্কার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কেউ নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একবাক্যে মন্তব্য করতে পারছেন না। রাজনীতিবিদেরা রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে নারাজ। অর্থনীতিবিদেরা শুধু বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি হতাশাজনক।

গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, পররাষ্ট্রনীতি, দেশের উন্নয়ন, ব্যাংকপাড়ার অবস্থা- কোথাও কেউ সুখবর দিতে পারছেন না। সরকারপ্রধান ও ক্ষমতাসীন দলের লোকদের রাজনীতি আছে, তারা যা খুশি বলতে পারেন, মন্তব্য করতে পারেন, প্রতিপক্ষকে শাসাতে পারেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ শোনাতে পারেন। কিন্তু পুরো জাতিকে হতাশায় ঘিরে ধরেছে। এ দিকে, নির্বাচনের রোডম্যাপ শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকবে কি না, বলা কঠিন।

জাতীয় রাজনীতিতে নানামুখী সঙ্কট রয়েছে। অসংখ্য ইস্যু রয়েছে। আস্থা-অনাস্থার সঙ্কটও কম নেই। তাই সরকার সঙ্কট ঘনীভূত করার ক্ষেত্রে এখনো কোনো ছাড় দেয়নি। আবার বিরোধী দলও একটা সীমা পর্যন্ত ছাড় দেবে, তার বাইরে নির্বাচনকে এড়িয়ে যেতেও পারে। তবে দেশী-বিদেশী প্রভাবক শ্রেণী এবার আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশ উৎসাহী। এই উৎসাহে যাতে ভাটা না পড়ে সে ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী জোট সমানভাবে সতর্ক থাকার চেষ্টা করার কথা।

এবার বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন, গুম, জেল-জুলুম বেশি মাত্রায় সামনে এসে যাবে। দলবাজির বিষয়টি জনগণ আমলে নেবে। সবচেয়ে বড় কথা, জনগণ বিগত দিনের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির সাক্ষী হয়ে আছে। জনগণ প্রত্যক্ষ দেখা এ বিষয়গুলোর সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোর্টে যাবে না। প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়নি বলে সাক্ষ্য দিতে যাবে না। তবে ব্যালট হাতে পেলে সেটি বাক্সে ফেলার সুযোগ পেলেই হবে।

খালেদা জিয়ার বিষয়টি জনগণের মনে এত বেশি দাগ কেটেছে যে, সেটাই সরকারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে। বিচার-আচার নিয়ে জনগণ উচ্চবাচ্য করেনি। করতেও যাবে না। কিন্তু যে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটা ভাবনারও অতীত। তা শাসকেরা এখনো ভাবতে পারছেন না। এখনো শাসকেরা যেদিকে তাকাচ্ছেন, সেদিকেই ‘নিজের লোক’ দেখতে পাচ্ছেন। সবাই কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাইতে চেষ্টা করছে। এটাই যেকোনো স্বৈরশাসক ও একনায়কের দৃষ্টিভ্রম। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে অতীত যতটা স্মৃতিতে আছে, ততটায় মনে হয়- সব একনায়ক একই ধরনের আচরণ করে থাকেন। একই ধরনের ভাবেন। একই ধরনে সব মানুষকে নিজের লোক ভাবতে চেষ্টা করেন। যতক্ষণ না তখত উল্টে যায়, ততক্ষণ তারা শুধু দুর্বিনীত থাকেন না, এতটা বেপরোয়া থাকেন যে, মনে হয় তারা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতার যোগ্য নন। প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যারা আছে তারা তো দুর্বল। ফুৎকারে উড়ে যাবে।

যদিও আমরা কোনো শাসকের ভাগ্য গুনে বলে দিতে পারি না, কার কী পরিণতি হবে বা কখন হবে। এটা বিধাতা নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। তবে জানিয়ে দিয়েছেন- দুর্বিনীত এবং দুঃশাসক, যারা জনগণের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জুলুম করে, তাদের পরিণতি কোনো দিন ভালো হয় না। 

এবার বিশ্বপরিস্থিতি ও জাতীয় প্রেক্ষাপট একসাথে পাল্টে গেছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে বোঝাপড়ার ধরনও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। এখন আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমরা একক খেলোয়াড় নই। খেলোয়াড়ের সংখ্যা শুধু বাড়েনি, আরো বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করে যাবে।

আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে বিশ্বরাজনীতির পারঙ্গম অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা তাদের স্থানীয় এজেন্টদের সময়মতো কাজে লাগাবেন এবং ঘুড়ির রশির মতো টানবেন। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের মাঠের একটা খেলা নয়। এখানে বহু উৎসাহী দর্শক থাকবেন, আম্পায়ার থাকবেন অনেকেই। তা ছাড়া, দেশীয় রাজনীতির অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা বসে থাকবেন না। তারা নতুন করে অঙ্ক কষবেন। তাই জাতীয় নির্বাচন হবে জাতীয় প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য। এ সত্যটি কেউ মস্তিষ্ক থেকে বাদ দিলে ভুল করবেন।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৮ 

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপে বসুন

সম্পাদকীয়

উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক পরিবেশ


আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপর দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন জোট তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। 

নির্বাচন কমিশন বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। এসব দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব দাবির ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি; বরং বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানিয়েছেন। 

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে বলেছেন, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় এবং নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নয়, বরং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারও আগ্রহী। কিন্তু নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ ক্ষমতাসীন দলকে সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনের অতীত অত্যন্ত রক্তাক্ত ও সঙ্ঘাতময়। ক্ষমতায় থেকে কোনো দল সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারেনি। দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য এক সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আন্দোলন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করার কারণে এখন নির্বাচনকালীন সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। 

দেশে যদি সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়া দরকার। নির্বাচনের তিন মাসের কম সময় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিভাবে নির্বাচন হবে তার সমাধান যদি এখন করা সম্ভব না হয়, তাহলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্তভাবে সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠবে। 

আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফেরার পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করবেন। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ শুরু করা যায়, তাহলে সঙ্কট সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। এর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।


  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৮

পরিবহনব্যবস্থা সমস্যাটি আইনের নয়, শাসনের

এ কে এম জাকারিয়া

নিরাপদ সড়ক নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিণতি শেষ পর্যন্ত যা–ই হোক, অন্তত একটি নতুন আইন পাওয়া গেছে। সংসদে সড়ক পরিবহন আইন বিল, ২০১৮ পাস হয়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অবশ্য একে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফল হিসেবে মানতে রাজি হননি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুগোপযোগী করার জন্য যে আইন বছরের পর বছর ধরে ঝুলে ছিল, তা পাস হয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাসখানেকের মাথায়। নতুন ও সংশোধিত এই আইন পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি, তবে একে সামান্য হলেও অগ্রগতি হিসেবেই মানছেন তাঁরা।

সড়কমন্ত্রী স্বীকার করুন বা না করুন, এর কৃতিত্ব ছোট বাচ্চাদের আন্দোলনকেই দিতে হবে। কতটা বিশৃঙ্খলা আর অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের পুরো পরিবহনব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা এভাবেই চলছিলাম, আর উন্নয়ন-উন্নয়ন জপ শুনছিলাম। এই যে এত উন্নয়ন, এর ফলাফলটা আসলে কী? একটি উদাহরণ দিই, ১০ বছর আগে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি ছিল ২১ কিলোমিটার। এখন তা ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। মানুষের স্বাভাবিক হাঁটার গতি হচ্ছে ঘণ্টায় ৬ কিলোমিটার।

এখন সরকার বা এর নীতিনির্ধারকদের যদি বলা হয়, ঢাকায় আপনাদের ১০ বছরের উন্নয়নের ফল হচ্ছে যানবাহনের গতি ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা; তাঁরা কী জবাব দেবেন? আসলে তাঁরা কখনো জবাব দেন না। জবাব দেওয়ার কোনো দরকারও মনে করেন না। এই যে বছরের পর বছর ধরে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী শহরের পরিচিতি পেয়ে আসছে, তা নিয়ে সরকারকে কখনো বিচলিত বা এ কারণে তৎপর মনে হয়েছে?

আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বপ্নের মধ্যে রয়েছি। ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চালিয়ে বা বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী রাজধানী শহর নিয়ে কি তা সম্ভব? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কয়েক বছরের পুরোনো এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধু সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বছরে ক্ষতি হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, যানজটের কারণে প্রতিবছর ক্ষতি হচ্ছে দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। দেশের পরিবহনব্যবস্থা, নগর ব্যবস্থাপনা—এসব নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হয়েছে, সুপারিশেরও অভাব নেই। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ বা ঢাকার পরিবহনব্যবস্থা এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে সমস্যা-সংকট রয়েছে, তার সমাধান নেই এমন নয়। বিশ্বের অনেক দেশ এসব সমস্যার সমাধান করেছে। এর নানা মডেল আছে। আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরাও সমস্যার সমাধানের নানা পথ বাতলেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি সেসব বিবেচনায় নিয়েছে? কোনো সামগ্রিক পরিকল্পনার অধীনে কি এসব সমস্যা মোকাবিলার পথ ধরা হচ্ছে?

ঢাকা শহর পরিচালনা, এর ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ সামনে রেখে পরিকল্পনা তৈরির কাজে যে সবচেয়ে বড় সমস্যা সমন্বয়হীনতা, এটা বলতে বলতে আমাদের বিশেষজ্ঞ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন। কোনো কাজের কাজ কি হয়েছে? কমবেশি ৫০টি সংস্থা ঢাকার সেবা দেওয়ার কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রেষারেষি আছে। কেউ কারও কথা শুনতে চায় না। যে যার মতো পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। এসব সমস্যা দূর করতে একটি একক কর্তৃপক্ষের কথা বহুদিন ধরে বলা হচ্ছে। তা সম্ভব না হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি বিশেষ সেল করে একজন শক্তিশালী মন্ত্রীকে এর দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও বিভিন্ন নগর–পরিকল্পনাবিদের মুখ থেকে আমরা শুনেছি। সরকার কোনো কিছুতেই গা করেনি। উন্নয়নের জন্য নাকি ধারাবাহিকতা লাগে। এই সরকার তো প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, পরিস্থিতি তো দিনে দিনে খারাপই হয়েছে!

ঢাকা শহরের পরিবহন সমস্যা দূর করতে বিশেষজ্ঞরা গণপরিবহনের দিকে জোর দেওয়ার কথা বলে আসছেন। এটাই পরীক্ষিত পথ। কিন্তু সরকার হাঁটছে পুরো উল্টো পথে। ফ্লাইওভার কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এসব তৈরি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার যত আগ্রহ দেখা যায়, গণপরিবহনব্যবস্থা নিয়ে তার ছিটেফোঁটাও নেই। বাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কথা ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) রয়েছে। কোথায় সেই বিআরটি? গণপরিবহন বা সাধারণ মানুষ কীভাবে যাতায়াত করবে, তা সরকারের কাছে প্রাধান্য পাওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে নেই। এসটিপিতে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটি তৈরির সুপারিশ ছিল। এখন এই পরিকল্পনার পুরো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না মগবাজার–মৌচাক ফ্লাইওভারের কারণে। এই ফ্লাইওভার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিআরটির কথা বিবেচনাতেই নেওয়া হয়নি। এই সমন্বয়হীনতার দায় কার? কে জবাবদিহি করবে? এসব বিষয় সুশাসন ও রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।

সরকার এখন সড়ক পরিবহন আইন পাস করছে। এই আইন আসলে কতটুকু ভূমিকা রাখবে দুর্ঘটনা কমাতে বা ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে? উল্টো পথে চলা কি ট্রাফিক আইনে বৈধ? অথবা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর বিষয়টি? পুলিশের গাড়ি যে চালায়, তার লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স ছাড়াই পুলিশ মোটরসাইকেল চালায়। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা—তাঁদের গাড়িচালকদের বৈধ লাইসেন্স নেই। গণমাধ্যমের গাড়ির চালকদেরও নেই। আমরা বিস্ময় নিয়ে দেখলাম, এসব প্রভাবশালীর অনেকের মধ্যে এমন ধারণা গেঁথে গেছে যে তাঁদের গাড়ির চালকদের কোনো লাইসেন্স লাগে না। তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। নতুন আইন দিয়ে কী হবে, যদি কেউ আইন না মানে বা কাউকে আইন না মানতে বাধ্য করা যায়! সমস্যাটি আসলে আইনের নয়, আইনের শাসনের। আইনের শাসন দেশে কার্যকর থাকলে পরিস্থিতি এমন হতো না।

দেশের পরিবহন সমস্যা, ট্রাফিক অব্যবস্থা, সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা, সামগ্রিক পরিবহন পরিকল্পনা—এসব বিষয় বুঝতে নিয়মিত যাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, আলাপ-আলোচনা করি, পরামর্শ নিই, তিনি সামছুল হক। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পরিবহন বিষয়ে রয়েছে তাঁর বিশেষজ্ঞ জ্ঞান। তিনি বলেন, সব সমস্যারই সমাধান আছে। সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে দূরদৃষ্টি এবং ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে, যার ভিত্তি হতে হবে বিজ্ঞান। সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন আইন নিয়েও কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। এখানেও তিনি বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বললেন, আইন ও নিয়মনীতিও হতে হবে বিজ্ঞান মেনে। বিজ্ঞান বলে, মানুষের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা আছে, ফলে পরিকল্পনাটাই এমনভাবে করতে হবে যাতে মানুষ আইন মানতে বাধ্য হয়।

আসলে ব্যবস্থাটাই এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যা হবে স্বনিয়ন্ত্রিত। আইন ভেঙে যাতে কারও কিছু করার না থাকে বা আইন ভেঙে কোনো বাড়তি সুবিধা না পায়। পরিবহনব্যবস্থা সাজানোর ক্ষেত্রে শুরুতেই এটা মাথায় রাখতে হবে যে মানুষের যাতে আইন ভাঙার দরকার না পড়ে। এবং পরিকল্পনাটি করতে হবে এর ওপর ভিত্তি করে। আবার সবকিছু পরিকল্পিত ও ঠিকঠাক থাকার পরও কিছু মানুষ আইন ভাঙতে চাইবে। সেখানে দরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ। উন্নত বিশ্বে ট্রাফিক বা পরিবহনব্যবস্থা খুবই পরিকল্পিত, কিন্তু এরপরও আইন লাগে এবং তার যথাযথ প্রয়োগ লাগে। আইন মেনে চলা হচ্ছে কি না, তার নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন তদারকি লাগে। আমাদের সমস্যা এই সব কটি ক্ষেত্রেই।

আমাদের পরিবহনব্যবস্থা এখন যেভাবে চলছে, তাতে কি এটা মনে হবে যে এর পেছনে বিজ্ঞানভিত্তিক যথাযথ কোনো পরিকল্পনা আছে! এই যে মেট্রোরেল হচ্ছে, দেরি হলেও একসময় তা শেষ হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল এই রেলরুটের নকশা স্টপেজগুলোসহ আমরা পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে দেখছি। কিন্তু এই রুটে বাধাহীন পথ অতিক্রম করে যাঁরা স্টপেজগুলোতে নামবেন, তাঁরা সেখান থেকে তাঁদের গন্তব্যে কীভাবে বা কোন ধরনের বাহনে করে যাবেন? বাসে, ট্যাক্সিক্যাবে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, নাকি হেঁটে? এসব বিবেচনায় নিয়ে কোনো পরিকল্পনা কি নীতিনির্ধারকদের আছে? চরম বিশৃঙ্খলা ও পরিকল্পনাহীনতার মধ্যে চলছে আমাদের পরিবহনব্যবস্থা। এর সঙ্গে আছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করার গুরুতর সমস্যা। নিরবচ্ছিন্নভাবে আইনের প্রয়োগ ছাড়া মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে যে জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করা যায় না, এটা আমাদের নীতিনির্ধারকদের কে বোঝাবে!

নতুন নতুন আইন প্রণয়ন কোনো কাজে দেবে না, যদি না তার প্রয়োগ হয়। আর একটি কার্যকর ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করা কার্যত অসম্ভব। এই দুটি সমস্যা দূর করার জন্য যা দরকার, তা হচ্ছে জবাবদিহি ও আইনের শাসন।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৮ 

টাকা ছাড়া নড়েন না আওয়ামী লীগ নেতা

  • ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বরগুনা-১ আসনে চারবারের সাংসদ
  • ২৫ বছর ধরে জেলা আ.লীগের সভাপতি সাবেক এই উপমন্ত্রী
  • শম্ভুর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ
  • অভিযোগকারীরা সবাই শম্ভুর দলীয় সহকর্মী

নিয়োগ, মনোনয়ন, নির্বাচন, উন্নয়ন, নলকূপ বরাদ্দ, টিআর, কাবিখা—হেন কোনো খাত নেই, যেখান থেকে টাকা খান না তিনি। বেশি টাকা পেলে কম টাকার প্রার্থীকে ভুলে যান অনায়াসে। আছে দখল, মারধর, পারিবারিকীকরণের অভিযোগও।

যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তিনি সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি বরগুনা-১ আসনে চারবারের সাংসদ, ২৫ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক উপমন্ত্রী। অভিযোগকারীরা সবাই তাঁর দলীয় সহকর্মী। শম্ভু এসব অভিযোগের ব্যাপারে একেবারেই কুম্ভকর্ণ।

গত এপ্রিলে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে সাংসদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ২৪টি লিখিত অভিযোগ করেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এর আগে জানুয়ারিতে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে প্রতিকার না পেয়ে ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে একই অভিযোগ তুলে ধরা হয় গণমাধ্যমের কাছে। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে সাংসদ শম্ভুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় তাঁর তিন দশকের সহযোগী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে।

এই সংবাদ সম্মেলনের পর বদলে গেছে সাংসদের নির্বাচনী এলাকার দৃশ্যপট। রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে এখন স্থানীয় প্রভাবশালী এই সাংসদকে নিয়ে আলোচনা। সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মী—সবার মুখে একই অভিযোগ, ‘টাকা ছাড়া নড়েন না শম্ভু বাবু’!

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘কালেকশন মাস্টার’ দিয়ে রাজনীতি চালান সাংসদ। টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান ওরফে নশা সাংসদের ‘কালেকশন মাস্টার’ বা ঘুষ আদায়কারী বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান (মারুফ)। এই দুজন নলকূপ বরাদ্দে ঘুষ আদায় থেকে শুরু করে মাদ্রাসায় চাকরি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্যের টাকা আদায় করেন।

তবে আলতাফ হোসেন ও মনিরুজ্জামান দুজনই অভিযোগ অস্বীকার করেন। সাংসদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না বলে জানান।

আরিফুর রহমান গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে হেরেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের মনোনয়নের বিনিময়ে তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিলেন সাংসদের ‘কালেকশন মাস্টার’ আলতাফ হোসেন। টাকা না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেন এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষ নেন সাংসদ। এভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করে চারটি ইউনিয়নে দল মনোনীত প্রার্থীকে হারানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন সাংসদ শম্ভু।

বরগুনা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে সাংসদকে টাকা দিয়েছি। ভোটের আগের দিন আবার টাকা চাইলেন তিনি। নির্বাচনের দিন দেখা গেল, প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। বেশি টাকার বিনিময়ে বিএনপির প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়েছেন।’

ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির আবু হেনা মোস্তফা কামাল। অভিযোগের বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে নির্বাচনের আগে সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সে হিসেবে তিনি নির্বাচনে প্রশাসনিক সহযোগিতা করেছেন। অন্যান্য ইউনিয়নে আর্থিক লেনদেন হতে পারে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হয়নি।’

সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, সব ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ও নির্বাচনে জয়ী হতে সাংসদকে টাকা দিতে হয়েছে। তবে তিনি নিজে কোনো টাকা দেননি।

দলীয় সূত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা জানান, সাংসদের বড় দুই অর্থায়নকারী বরগুনা ও আমতলীর দুই মেয়র। দুজনেই এখানকার প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার। বরগুনার মেয়র শাহাদাত হোসেন ‘শাহাদাত কন্ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। কামরুল আহসানের অভিযোগ, ‘দলীয় প্রার্থী হওয়ার পরও সাংসদ সরাসরি আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবহার করে কারচুপির মাধ্যমে বিদ্রোহী প্রার্থীকে জিতিয়ে দেন।’

২০১১ সালে আমতলী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন গাজী শামসুল হক। তাঁকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সাংসদের ঘনিষ্ঠ মতিয়ার রহমান ওরফে মতি কন্ট্রাক্টর। টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে সাংসদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র শাহাদাত হোসেনকে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার টাকা কে না খায়? দলের অর্ধেক খরচ এখনো আমি চালাই।’

নিয়োগ-বাণিজ্য

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল নিয়োগ–বাণিজ্য। এতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী কাম দপ্তরি নিয়োগে প্রতিজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়েছেন সাংসদ। পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের সুপারিশে নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ৭ থেকে ৮ লাখ। আবার নারী কোটার শূন্য পদে পুরুষ নিয়োগ দিয়ে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন সাংসদ। জেলা হাসপাতালের কর্মচারী নিয়োগে নিয়েছেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) আর টেস্ট রিলিফসহ (টিআর) ৪০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলকভাবে মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ ঘুষ দিতে হয় সাংসদকে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘আমি নিজে সাংসদকে দুই লাখ টাকা দিয়েছিলাম আলিয়া মাদ্রাসায় আমার স্ত্রীর চাকরির জন্য। কিন্তু তিনি আরও বেশি টাকা নিয়ে অন্য একজনকে চাকরি দেন। তবে পরে আমার টাকা ফেরত দেন।’

আনোয়ার হোসেন নামের একজন অভিযোগ করেন, ‘গর্জনগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য স্কুল কমিটির সভাপতি হুমায়ূন কবির আমার কাছ থেকে সাংসদকে দেওয়ার কথা বলে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। পরে আরেকজনের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে তাঁকে চাকরি দিয়ে দেন। আমার টাকাও ফেরত দেননি।’

বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম দেলোয়ার বলেন, নিয়োগ ও মনোনয়ন-বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাংসদ। টাকা ছাড়া তাঁর কাছে কোনো কথা নেই।

সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর

সরকারি কর্মকর্তারাও হয়রানির শিকার হন সাংসদের কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সাংসদ নিজে ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ে তদবির করেন, চাপ প্রয়োগ করেন। তাঁর কথা না শুনলে ওই কর্মকর্তাকে বদলি করতে ঊর্ধ্বতনদের কাছে অভিযোগ করেন।

২০১৪ সালে বরগুনায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের নেওয়া ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঘিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মালেককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কিল-ঘুষি মারেন সাংসদ। ওই দিনই বরগুনা ছেড়ে যান ওই নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বর্তমানে অবসরে আছেন। প্রকৌশলী আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদের মনে হয়েছে আমি প্রকল্প থেকে কমিশন নিয়েছি, কিন্তু সাংসদ কিছু পাননি। তাই তিনি ওই ঘটনা ঘটান।’ 

জমি দখল

বরগুনা সদর রাস্তাটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ। এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশের জমি পাউবোর। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি কার্যালয় চালাচ্ছেন সাংসদ। দ্বিগুণ দাম পরিশোধ করে এ জমি এখন সরকারের কাছ থেকে কিনে নিতে চাচ্ছেন তিনি।

সদর উপজেলা পরিষদের সামনে একটি জলাশয় ভরাট করে নতুন ভবন বানিয়েছেন সাংসদ। এলাকায় এটি সাংসদের রংমহল হিসেবে পরিচিত। বরগুনায় এলে এখানেই থাকেন তিনি। অভিযোগ আছে, জলাশয় ভরাট, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনেজ নির্মাণ ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করার পাশাপাশি এ বাড়ির নিয়মিত পরিচর্যা করে পৌরসভা।

এ বিষয়ে সাংসদের ঘনিষ্ঠ বরগুনা পৌরসভার মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শম্ভু বাবুর মায়ের জায়গা সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। তিনি সরকারের কাছে আবেদন করে ফেরত নিয়েছেন। পৌরসভা থেকে শুধু বাসার সামনের ড্রেনেজ ও ল্যাম্পপোস্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির ভেতরের সব কাজ সাংসদ নিজের টাকায় করেছেন।’

বিভিন্ন পদে স্বজনেরা 

সাংসদের স্ত্রী মাধবী দেবনাথ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একমাত্র ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। ছেলের শ্বশুর অমল তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ছেলের চাচাশ্বশুর সুবল তালুকদারকে বানিয়েছেন প্রচার সম্পাদক। আর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদের ভায়রা সিদ্দিকুর রহমান। দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতেই পরিবারের সদস্যদের দলীয় পদে এনেছেন বলে অভিযোগ করেন নেতা-কর্মীরা।

এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করা হয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে। ১৪ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক ছিল তাঁর। তার আগে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। বৈঠকটি পিছিয়ে যাওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর আবারও তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তাই তিনি এসব বিষয়ে এখন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৮ 

Digital Security Bill: TIB terms it black law

Urges president not to give consent


The Digital Security Bill 2018 might be considered useful for the government in the short term, but it could boomerang on the government in the long run, Transparency International Bangladesh said yesterday.

Terming the legislation a black law, the TIB urged the president not to give his consent to the bill and return it to parliament for review of some “controversial and risky” provisions.

TIB Executive Director Iftekharuzzaman said the law would not only curb freedom of speech, but also would restrict independent journalism and research.

He was speaking at a human chain organised at Dhaka University's Teacher-Student Centre (TSC) marking the International Right to Know Day which would be observed tomorrow.

Freedom of expression and right to information are the fundamental rights of the people, he said, adding that the Right to Information (RTI) Act was exceptional as it gave people the right to hold the government accountable.

“But at the same time, it is noticeable that the government took negative and frustrating initiatives.”

Iftekharuzzaman said the new law, recently passed by parliament, would rob the people of their basic human rights and be an obstacle in the way of flourishing democracy in the country.

Passing a law contradictory to the constitution and the spirit of Liberation War is not acceptable from a party which had led the war, he added.

The much-debated Digital Security Bill 2018 was passed by Jatiya Sangsad on September 19 with harsh provisions allowing police to frisk or arrest anyone without warrants.

Journalists and rights activists have expressed concerns about the new law, saying it was passed without addressing their concerns.

Iftekharuzzaman said giving recognition to the Official Secrecy Act of the British colonial era under section 32 of the Digital Security Act was a backward-looking move.

 “The law will pose a big threat and create a sense of insecurity among journalists, particularly among investigative journalists.”

The TIB executive director said the law would be an obstacle to media persons and NGO staff members who have been conducting researches on various works of the government and holding it accountable.

He said they were hopeful that the president would use his constitutional power to send the bill to parliament for review.

  • Courtesy: The Daily Star/ Sep 27, 2018

Sponsors of Padma Islami Life Ins to sell ownership

The sponsors of Padma Islami Life Insurance listed on both Dhaka and Chittagong stock exchanges yesterday announced to sell their entire holdings in the company. The insurer informed through the DSE website that the board of directors of the company has decided to sell 1.74 crore shares held by five sponsor shareholders, 11 sponsor directors, one director and one shareholder (the inheritor of one sponsor) subject to the approval of competent authorities.

The shares account for 44.78 percent of the total paid-up capital of the company, established in 2000.

Padma Life shares traded at Tk 26.20 yesterday at the DSE. The company did not disclose the name of the buyers.

AFM Obaidur Rahman, chairman of Padma Life, also did not receive mobile phone calls and reply to a text message. The decision to change the ownership of the company came at a board meeting last month, said company insiders.

“As the company is facing liquidity crisis, it cannot meet policyholders' demand now. So, the board has decided to sell off the shares,” said a senior official of the company, seeking anonymity.

He also said the company purchased land in many places in the country, but it cannot sell them now.

Last year the insurer failed to give any dividend to its shareholders. As a result, it is now considered a junk stock.

  • Courtesy: The Daily Star/ Sep 27, 2018