Search

Monday, January 25, 2021

আজো খুঁজে ফেরে তার চোখ কোকোকে — আতিকুর রহমান রুমন


দেশকে স্বয়ম্ভর, সমৃদ্ধ করার নেশায় তখন তারেক রহমান পাগলপারা। সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন উল্কার মতো। কৃষিজীবী, শ্রমজীবী ও সম্প্রদায়গত পেশার মানুষদের দিয়ে চলেছেন পরামর্শ আর সাধ্যমতো সহযোগিতা। এরই এক পর্যায়ে গেলেন তিনি কক্সবাজারে। সমবেত হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে তিনি তাঁর কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করলেন। দিনটি ছিল পয়লা বৈশাখ। হঠাৎ এক কৌতুহলী সাংবাদিক জিজ্ঞেস করে বসলেন, “ভাইয়া, আপনি স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে এ ধরনের কর্মসূচির জন্য এই দিনটি কেন বেছে নিলেন? সেদিন হেসে হেসে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের মতো লোকজনের নববর্ষ এভাবেই কাটবে। পুরো দেশটাই আমার কাছে একটি পরিবার বলে মনে হয়।”

২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ‘চ্যানেল আই’-এ একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে দৈনিক মানব জমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করছিলেন। এক পর্যায়ে মতিউর রহমান চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, সংসার কেমন চলছে? উত্তরে তারেক রহমান বললেন, “সংসার কিছু অভিযোগের পালায় চলছে। রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার জন্য এ দিকেই সময় বেশি দিতে হচ্ছে। স্ত্রী-সন্তানের অভিযোগ যে তাদের সময় দিতে পারছি না।”

এসব ঘটনায় কারো মনে হতেই পারে, দেশের জন্য তাঁর যতো ভালবাসা, স্বজন-প্রিয়জনের প্রতি মমতা বোধ ততোখানি নেই, এ রকম ধারনা কেউ করলে তা কিন্তু একেবারেই ভুল। দেশের ও দশের জন্য তিনি যেমন আকুলপ্রাণ, স্বজন-প্রিয়জনের জন্যও তেমনি মমতার সাগর। অপরিসীম মাতৃভক্তি, স্ত্রী-কন্যার জন্য হৃদয় উজাড় করা প্রেম ও মমতা, স্নেহ ধন্য ছোট ভাইয়ের জন্য অগাধ ভালবাসা, দেশের জন্য অন্তরের গভীর টান সবকিছুই যেন সমানে সমান।


স্নেহের ছোট ভাই মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জন্য তাঁর যে অগাধ ভালবাসা- জনসমক্ষে তার প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল। এর আগের রাতেই ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। সে এক বর্বোরচিত ও বেদনা-বিধুর ঘটনা। রাত তখন সোয়া ১১টা। একের পর এক গাড়ি এসে থামছে মঈনুল রোডের বাসাটির সামনে। গাড়ি থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। যৌথবাহিনীর প্রায় দু’শতাধিক সদস্য গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলে। তখন বাসার ভেতরে ছিলেন দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, তাঁর স্ত্রী শরমিলা রহমান, তাঁদের দু’কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও তাঁদের একমাত্র সন্তান জায়মা রহমান। দেশনেত্রী এ সময় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। জায়মা, জাফিয়া ও জাহিয়া ছিল ঘুমিয়ে। ডা. জুবাইদা রহমান, আরাফাত রহমান ও শরমিলা রহমান নিজ নিজ কক্ষে ছিলেন।

ঠিক সেই সময় গাড়ির আওয়াজ ও বুটের শব্দে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এরপর শুরু হয় দরজায় ধাক্কাধাক্কি। বাসার দরজা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলে প্রচণ্ড আওয়াজ ও বুটের শব্দে গোটা বাড়ি জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে ছিলেন যারা, সকলেই আঁতকে ওঠেন। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে শিশুরা কেঁদে ওঠে। বিশ্রামরত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই ভীতিকর পরিবেশে ছুটে আসনে বাড়ির প্রধান ফটকের দিকে। তিনি জানতে চান,  ‘কে আপনারা?’ জবাবে জানানো হয় তারা যৌথ বাহিনীর সদস্য, কোকোকে গ্রেপ্তার করতে এসেছেন। এ সময় বেগম খালেদা জিয়া তাদের উদ্দেশে বলেন,  ‘কোকোকে নিতে এসেছেন ভাল কথা, দরজা ভাঙছেন কেন? এতোটা নির্যাতন চালানো ভাল নয়!’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, তাদের কাছে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে কিনা? থাকলেও এতো রাতে কেন? দিনের আলোয় আমার ছেলেকে ডাকলেও তো সে সময়মতো যথাস্থানে চলে যেতো। এরপর হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে পড়ে যৌথ বাহিনী। ভেতরে ঢুকেই তারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি গ্রুপের সদস্যরা আরাফাত রহমান কোকোকে বলেন, আমাদের সাথে যেতে হবে। বলার সঙ্গে সঙ্গেই মৃদু হাসি দিয়ে বিনয়ী আরাফাত রহমান বিনা বাক্য ব্যয়ে যাবার প্রস্তুতি নেন। যৌথ বাহিনী তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আগে আরাফাত রহমান মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আরাফাত রহমানকে গাড়িতে তোলার সময় তাঁর স্ত্রী-সন্তান, বড় ভাই তারেক রহমানের স্ত্রী-সন্তানের অঝোর কান্নায় রাতের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

যৌথ বাহিনীর আরেকটি গ্রুপ তল্লাশীর নামে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। তারা আরাফাত রহমানের স্ত্রীকেও বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাসা থেকে যাবার সময় তারা দুটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়।


আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তারের কথা শুনে আবেগআপ্লুত হয়ে কেঁদে ওঠেন কারাবন্দি তারেক রহমান। তিনি তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট একটি সেলে সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় অন্তরীণ। তাঁর কান্নার শব্দে ছোট্ট সেলটি যেন কেঁপে উঠছিল। দিনভর তিনি কেঁদেছেন। তাঁকে সাহস যুগিয়েছে, সান্ত্বনা দিয়েছে একই সেলে অপর বন্দি কবির। কারা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরিয়েছে যে সারাদিন কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখমুখ ফুলে গেছে।

কারাকর্তৃপক্ষ আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তারের কথা তারেক রহমানকে জানাননি, তবে সেলে ছোট্ট একটি টেলিভিশন আছে, সেখানে কেবল বিটিভির অনুষ্ঠানমালা দেখা যায়। সেখানে সকাল এবং দুপুরের সংবাদে আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তার হবার খবর প্রচার হয়েছিলো। তিনি টেলিভিশন দেখার আগেই অন্যান্য বন্দির কাছ থেকে খবরটি জেনেছেন। একমাত্র ছোট ভাই গ্রেফতার হওয়ার খবর তাঁকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে।

তারেক রহমান পিনু এবং আরাফাত রহমান কোকো পিঠেপিঠি দুই ভাই। তারা পরস্পর বন্ধু ও খেলার সাথীও। তারা এক সাথে স্কুলে গেছেন, এক সাথে খেলাধুলা করেছেন, আব্বা-আম্মার কাছে এক সাথেই অনুযোগ-অভিযোগ দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন, এক সাথে বেড়াতে গেছেন। সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের জবানীতে পাওয়া যায়, এক সাথে দু’ভাই হজব্রত পালন করতে গেছেন, এক সাথে দু’ভাই স্ত্রী-কন্যা সমেত চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দু’ভাইয়ের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া, চমৎকার হৃদ্যতা। হবেই না-বা কেন? দু’ভাই যে অভিন্ন সুখ-দুঃখের সাথী। বাবা শাহাদাৎবরণের পর শিশুকাল থেকেই দু’জন অনেক বিপদ-আপদ, ঝঞ্ঝাবহুল ইতিহাসের সাক্ষী। কখনো বাবাকে দেখেছেন তারা রণাঙ্গণে, কখনো দেখেছেন অগোছালো সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করতে, কখনো সেই সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে পিতার আটক হওয়া আর মুক্ত হওয়ার ঘটনা এবং একই বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে পিতার মর্মান্তিক শাহাদতবরণের ঘটনারও তারা সাক্ষী।

ছোট ভাইয়ের জন্য তারেক রহমানের যে কী অপরিমেয় স্নেহ-মমতা সেটা আরেকবার বোঝা গিয়েছিল আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি কুয়ালালামপুরে বাংরাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। সীমাহীন অপপ্রচার, অকথ্য অত্যাচার ও নির্মম-নির্যাতন চালানো হয়। ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকিসহ নানারূপ মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হৃদরোগী বানিয়ে ছেড়েছিল মঈনুল-ফখরুদ্দিন সরকার। তার ফলেই চিকিৎসারত অবস্থায় বিদেশে তাঁর করুণ মৃত্যু ঘটে।

মৃত্যু সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তারেক রহমান শোকে প্রায় পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। অনেকটা সময় তিনি কোনো কথাই বলতে পারেননি। তারপর শুরু হয় তাঁর অন্তর্ভেদী হাহাকার, বুকফাঁটা কান্না। প্রিয় ভাইটির কথা মনে হলেই তাঁর অন্তর এখনো গুমরে কেঁদে ওঠে, দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, নীরবে ও গোপনে অশ্রুপাত করেন।

আমার সাথে ভাল সখ্য আছে, এমন এক রাজনৈতিক কর্মী মাঝে মাঝেই লন্ডনে যান এবং তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর কুশলাদি জানতে চান। 

তাঁর মুখ থেকে শোনা — 

দিন কয়েকের এক অনুষ্ঠানে লন্ডনে গেলাম। অনুষ্ঠানের মাঝখানে কিছুটা অবকাশ পাওয়া গেল। ভাবলাম, নেতার শারীরিক অবস্থা এখন কী রকম, দেখে আসি। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে আমি মুখ খোলার আগেই আমার কুশল জিজ্ঞেস করলেন। দেখলাম, তিনি আগের চেয়ে বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ভীষণ  ভালো লাগলো নিজের কাছে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর একজন ইতিবাচক প্রিয় তারেক রহমানকে দেখে। ভিনদেশেও পারিবারিক ও রাজনৈতিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তাই, সময় বেশী না নিয়ে বিদায় নেবার আগেই মনের কথা বুঝতে পেরে তিনি বললেন, তুমিতো সেন্ট্রাল লন্ডনের দিকেই থাকছো, চলো ঐ দিকেই আমার গন্তব্য। এক পর্যায়ে তাঁর সঙ্গেই বেরিয়ে একটি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সুযোগ হলো আমার। টেমস নদীর পাশে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় একটি সড়কের পাশে হঠাৎ করেই তিনি গাড়ি থামালেন। ডানপাশে জানালার কাঁচ খুলে তিনি এক দৃষ্টিতে কী যেন দেখছেন, কাকে যেন খুঁজছেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে নির্দেশ করে বললেন,  ‘দেখো তো, দেখো তো কোকোর মতো লাগছে না? ঠিক যেন কোকো হেঁটে যাচ্ছে!’

আমার বুঝতে বাকি রইলো না, স্নেহের ছোট ভাইকে আজও আগলে রেখেছেন বুকের মধ্যখানে। ভাইয়ের জন্য এখনো থামেনি তাঁর কান্না। রাস্তা-ঘাটে, সভা-সমাবেশে, বিপণীকেন্দ্রে বা লোকালয়ে যেখানেই যান, আজও তাঁর চোখ খুঁজে ফেরে আরাফাত রহমান কোকোকে।


লেখক বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক দিনকাল। সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল। 

Friday, January 22, 2021

Labour market demands revisit of perception

— Imran Rahman

Imran Rahman


Our endless plight in international labour market is regularly doing the round on the media. This unveils how we are losing grip on the Middle East that once lured us as a key source of foreign remittances: lifeline of our national economy next to the apparel sector.


According to a report, recently published in a Bengali newspaper the number of workers returned by the end of last year from 28 labour markets across the world is as many as 326758 and workers sent to different manpower importing countries are 250000 falling three times shorter than government's target of 750000. Experts say a growing tendency among local owners of recruiting local workers in various sectors is leading to the expulsion of foreign workers from the Middle East. Moreover, war-torn situation in those countries including Covid-19 impactis equally responsible for shrinkage of labour market forcing ultimate return of workers to their homeland.

This bad time for us for manpower business is not merely confined in the Middle East; its ominous shade looms large on other parts of the world too. Reasons behind such fall of overseas job scopes are manifold. This crisis will not find a silver bullet solution in the pandemic ridden world of colossal economic, political and societal change. Business and monetary transactions almost everywhere in the world has come to a halt due to lockdown. Under present global reality, a trend of containing flight of domestic money to other countries is keenly observed.


On the backdrop of ongoing Covid-19 this conservative trend has become even stricter than it was after 9/11 when an all pervasive panic of extremism seized the world laying the poor Islamic nations in tatters. Leading global economies mostly reliant on labour force from under developed countries have already begun tightening their borders and checking inflow of people from outside. In addition to this, if the ongoing adverse relation between Iran and the US further worsens, military tension will spread throughout the Middle East resulting in further fall in labour market prospect.


This policy of constraint by the healthy economies, however, will not be fully able to stop illegal immigration. External glosses and lure of better life will as usual draw unemployed youths from developing states risking their own lives. In pursuit of a better future they will try all possible illegal perilous means. We often come through media how their dreams while crossing violent sea embrace watery graves capsizing boats.


Bangladesh is no exception to this. The news of a mass grave of Bangladeshi expatriate workers discovered in deep forest of Thailand and many falling to death in desert being hunger stricken are not distant memories. Limited resources, increasing unemployment, over-population and natural disasters- all compel our educated young generation to opt for overseas jobs. These helpless and innocent people are getting mindless target of human traffickers and unscrupulous man power export agencies mushrooming in the country.


Reports of many of our people languishing in jails in Malaysia and Saudi Arabia and facing adversities such as: unfriendly behaviour, torture, cheating and even death bring forward the questions about the role of concerned authorities, high commissions and embassies to foreign countries. Many female workers are reportedly becoming victims of physical and sexual abuse in the Middle Eastern countries. The inhuman and unsafe working conditions our workers are being forced to face reflects indifference, mismanagement and inefficiency of our concerned regulatory bodies.

 

The prospect of our labour market in the Middle East that ushered in a new era during the last BNP regime, regrettably fell flat due to successive governments' unidirectional foreign policy and their failure to create alternative market for Bangladeshi work force. In order to tackle this gruesome situation, incumbent government needs to take initiatives to find new place to explore labour market. Our workers are often heard to be earning lesser wages compared to that of other countries due to lack of necessary skills and linguistic command.


Post Covid-19 labour market in a changed world with added use of artificial intelligence and automation will be a grim reality for us if we fail to respond compatible with the neo-world requirements. Moreover, cost-effective labour from famine stricken African nations like Somalia and Ethiopia will pose a real threat to nation like Bangladesh.

 

Needs of hour is to pay due attention to the reasons behind our decline in man power prospect. There is no alternative to rein in ubiquitous corruption and irregularities that enormously marred our domestic regulatory system and tarnished image in outer world.

 

Couple of years back I learned from an article that against the decreasing number of active people in developed world the number of those aged under 24 in Bangladesh is almost 50%. And this is the high time for Bangladesh to take the supreme advantage of demographic dividend.


— The writer is poet

শহীদ জিয়ার পররাষ্ট্র নীতি

—  শায়রুল কবির খান











শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিচার করতেন। উদাহরণ দিয়ে বলতেন মিশর, মরক্কো, স্পেনের ভৌগোলিক অবস্থানের একটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ উপমহাদেশে সামরিক রাজনৈতিক কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করছে।


এর উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণী আর দক্ষিণে সুগভীর বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করে রেখেছে বাংলাদেশকে তার আপন ভূখণ্ডের বৈচিত্র্য দিয়ে। তাই বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটিতে অতীতে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। ইংরেজ জাতি বাংলাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল এই ভেবে এখান থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চলাচলের সুবিধাজনক অবস্থান পূর্বে ও পশ্চিমের যাতায়াত।


স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় এর আগে ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলায় নিজের নামে লিখেছেন ‘একটি জাতির জন্ম’ সেখানে সংক্ষিপ্ত লেখার মধ্যে উপলব্ধি আছে এই ‘রাষ্ট্রের জন্মের প্রেক্ষাপট তার প্রয়োজনীয়তা ও রাষ্ট্রের জন্য করণীয়’। তিনি যখন যতটুকু সম্ভাবনা দেখেছেন তার সবটুকুই নাগরিকদের কল্যাণে দৃঢ় সংকল্পে করতে চেষ্টা করেছেন। দৃষ্টান্তও আছে নাগরিকরা তার সুফলও পেয়েছেন।

 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে গেলেন সেই সময়ে ভারত সরকার গঙ্গা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেয়। (গঙ্গা নদীটি আন্তর্জাতিক নদী যার অববাহিকা পদ্মা যমুনা নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে।) বাংলাদেশ ভয়াবহ পানি সংকটে সম্মুখীন হয়।


দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল পরিণত হয় মরুভূমিতে। ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সম্ভব না হওয়ায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।


বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের ভাটি অঞ্চলে সেহেতু পানি ধরে রাখা ও পানি দ্রুত নদীর অববাহিকায় চলাচলের জন্য স্বেচ্ছা শ্রমে যুবকদেরকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজে কোদাল হতে খাল খনন কর্মসূচি শুরু করেন।


তার সময়ে প্রায় ৪ হাজার খাল খনন করা হয়। এর ফলে কৃষি, মৎস্য, শুষ্ক-মৌসুমে পানি ধরে রাখা, নদী পথে যাতায়াতের সুবিধা হয়েছিল।


ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহতায় পানির সংকট নিয়ে প্রথমে ১৯৭৬ সালে মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ৪২ জাতি ইসলামী শীর্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একই বছরে আগস্টে কলম্বোতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে উত্থাপন করে ন্যাম সদস্যদের সহানুভূতি পান। ৩১ তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও উত্থাপন করেন।


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনা, দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থার প্রতীক ছিলেন বিধায় জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপনের ফলে ভারত সরকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করে। গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন প্রশ্নে ভারত সরকার ১৯৭৭ সালে নিরাপত্তা বিধান রক্ষা করে পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করতে সম্মতি হয়।


শহীদ জিয়ার শাসন আমলে ইসলামী সলিডারিটি ফান্ডের স্থায়ী কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভ করে। জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইনের সমস্যা সমাধানে গঠিত আল-কদুস কমিটিতে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়।


১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত ইরাক ইরান যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী কমিটির সদস্য করা হয়। ১৯৭৮-৮০ সালে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন। সফরে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রের সরকার প্রধানের কাছে ১৯৮০ সালে ২৪ এপ্রিল প্রথম চিঠি পাঠান বিশেষ দূতের মাধ্যমে, তারা সবাই মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে উপ-প্রধানমন্ত্রী জালালউদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে কৃষি মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম শিশুকে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইউমের কাছে মন্ত্রী কে এম ওবায়দুল রহমানসহ ছয়জন প্রতিনিধি।


জিয়াউর রহমান তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, আজকের সমসাময়িক বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বাঁধা হচ্ছে ‘মানসিকতা’।


সম্পদে সমৃদ্ধি যতই হোক না কেন একাকী চেষ্টা করে এককভাবে কোনো দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতে পারে না। আরো একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন সরকার প্রধানদের কাছে ১৯৮০ সালে ২ মে তারিখে।


১৯৮০ সালে ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের কাছে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি ওয়ার্কিং পেপার প্রেরণ করেন, তার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ সংগঠন ‘সার্ক’ গঠিত হয়। ধারাবাহিক সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে, ২০০৫ সালে ত্রয়োদশ সম্মেলনে চেয়ারপার্সন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিকাল ৫ টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


ঐ সম্মেলনে সার্কের ‘প্রথম এওয়ার্ড’ দেয়া হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যে এওয়ার্ডটি গ্রহণ করেছিলেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরি জোষ্ট্যপুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (তখনকার সময়ে সিনিয়র যুগ্ম মহা-সচিব।) প্রথম সার্ক এওয়ার্ড ঘোষণায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী নিয়নপো স্যানগে নিধুপ বলেন সার্কের ২০ বছর পূর্তিতে আমরা আপনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (স্বামী মরহুম জিয়াউর রহমান)-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তার দূরদৃষ্টিতে এবং উদ্যোগের ফলে আমাদের এই এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সার্কের ‘প্রথম এওয়ার্ড’ ঘোষণা করে আমরা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সংহতি, অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের কথা পূর্ণব্যক্ত করালাম বলে বক্তব্য শেষ করেন।


শহীদ জিয়ার সময়ে বাংলাদেশ ২০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমক্ষ হয়েছিল।


তিনবিঘা করিডর চুক্তির রূপরেখা প্রণয়ন করেন। তালপট্টি মালিকানা দাবি প্রতিষ্ঠাও করেন। বাংলাদেশ শক্তিশালী জাপানকে ভোটে হারিয়ে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে সদস্য পদ লাভ করে।


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ভূ-রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বহির্বিশ্বের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা বজায় রেখে পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত করেছেন।


সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিকদের চাহিদা পূরণকে সামনে রেখে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরী করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।


বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’কে ধারণ করে, গণতন্ত্রের মাতা বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ধারাবাহিক সংগ্রামের শক্তি ও সরকার পরিচালনার সাফল্যের মধ্যে দিয়ে আগামীর সুজলা-সুফলার বাংলাদেশের গড়ে উঠবে।


লেখক পরিচিতি — সাংবাদিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মী

স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম 'জিয়াউর রহমান'



শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। ১৯ জানুয়ারি এই ক্ষণজন্মা মানুষটির ৮৫তম জন্মদিন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ সংগঠন সার্কের প্রতিষ্ঠা।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার কার্যকর সময়ের মধ্যেই দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কাজের ক্ষেত্রে মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তন এনেছেন তিনি।

দেশ গড়ার ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। পায়ে হেঁটে নিজ চোখে তিনি মানুষের সমস্যা দেখেছেন, দেশের সমস্যা অনুধাবন করেছেন। দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিয়েছেন। জনগণকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশবাসী তার ডাকে সাড়া দিয়েছিল। তিনি গড়ে তুলেছিলেন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য।

উন্নয়ন কার্যক্রমে সঞ্চারিত হয়েছিল দুর্বার গতি। সন্ত্রাসের করাল ছায়া থেকে মুক্ত স্বদেশে প্রথমবারের মতো বইল শান্তির সুবাতাস। অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণ হলো স্থিতিশীলতায়। অবসান হলো রাজনৈতিক শূণ্যতার। তিনি প্রায় ১০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সাফল্য বয়ে আনে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল দলের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। ফিরিয়ে দেয়া হয় বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব শুরু হয়। সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তায়র সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন করা হয়। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দেয়া হয়। হাজার-হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হয়। ২৭ হাজার ৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা দূরিকরণ করা হয়।

কলকারখানায় শ্রমিকের কাজ তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রফতানি পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগ নেয় হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন। হাইস্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার জন্য গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন জিয়াউর রহমান।

তার সময়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসন লাভ করে। তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয়। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ তিনি।

এছাড়াও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেসরকারিখাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিত করেন। জনশক্তি রপ্তানি, তৈরী পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যোর রফতানির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় সংবিধানের প্রথমে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম (পরম দয়াময় ও করুনাময় আল্লাহর নামে) সংযোজিত হয়। আর্টিকেল ১২⁄২-এ ‘ইসলামি উম্মার সাথে ভ্রাতৃত্ববোধের আলোকে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, উন্নায়ন এবং শক্তিশালী করার নীতি’ সূচনা করা হয়।

একটি সামগ্রিক জাতীয় পরিচয় সূচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী সংখ্যালঘু সাঁওতাল, গাঁড়ো, মনীপুরী ও চাকমাদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি সংবিধান ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিচায়ক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি স্থাপিত করেন।

সাংস্কৃতিক সমন্বয় ও অর্থনেতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ জিয়া ১৯৭৬ সালে একটি পার্বত্য উন্নয়ন কমিশন প্রতিষ্ঠা ও নিয়োগ করেন। সরকার এবং বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ সংঘটনের লক্ষ্যে তিনি একটি উপজাতীয় কনভেনশন আয়োজন করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ৯০ হাজারে উন্নীত করা হয়। গ্রাম সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ কল্পে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠা। সারা বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক ও যুব শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টসের সূচনা এবং ব্যক টু ব্যক এলসি প্রথা প্রবর্তন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্টকরণ ও উন্নয়ন। সৌদি আরব ও চায়নার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন-সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগী করণ। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। সকল ইসলামী দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শীর্ষ সংগঠন সার্ক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ সফর করে আঞ্চলিক ফোরাম গঠন করার প্রস্তাব করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলগুলোর ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় কাজ করা। ইতিবাচক সাড়া পেয়ে কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের কাছে চিঠি পাঠান বিশেষ দূতের মাধ্যমে। তারা সবাই মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন।  প্রথম চিঠি পাঠানো হয়েছে ১৯৮০ সালে ২৪ এপ্রিলে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কাছে চিঠি নিয়ে যান বাংলাদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী জালালউদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে কৃষিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম শিশুকে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইউমের কাছে মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমানসহ সাতটি দেশে সাতজন প্রতিনিধি ছিলেন।

আজকের সমসাময়িক বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাধা হচ্ছে ‘মানসিকতা’। সম্পদে সমৃদ্ধি যতই হোক না কেন একাকী চেষ্টা করে কোনো দেশের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরো সাফল্য আর্জন সম্ভব হতে পারে না।

১৯৮০ সালে ২ মে আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত প্রস্তাবনা আকারে পাঠান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সার্ক গঠনে উদ্যোগের সাফল্য সার্ক প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫ সালে ত্রয়োদশ সম্মেলনে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
জিয়াউর রহমানকে ‘প্রথম সার্ক এওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। প্রথম সার্ক এওয়ার্ড ঘোষণায় সার্ক চেয়ারম্যান বলেন, সার্কের ২০ বছর পূর্তিতে আমরা আপনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (স্বামী মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। যার দূরদৃষ্টিতে এবং উদ্যোগের ফলে আমাদের এই এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। তাকে সার্কের প্রথম এওয়ার্ড ২০০৪ ঘোষণা করে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সংহতি অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের কথা পূর্ণব্যক্ত করলাম বলে বক্তব্য শেষ করেন ভুটানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়নপো স্যানগে নিধুপ।

সার্কের প্রথম এওয়ার্ড ২০০৫ সালে ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশনায়ক তারেক রহমান (তখনকার সময়ে বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহা-সচিব) গ্রহণ করেন। তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আর্দশে, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনকে ধারণ করে।


—   শায়রুল কবির খান

লেখক সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

Wednesday, January 6, 2021

ফিরে দেখা ৫ জানুয়ারি : ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে

৫ জানুয়ারি থেকে ৫ জানুয়ারি। কেমন গেল একটি বছর। কেমন গেল দেশের রাজনীতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি। চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উপায় কী? এসব নিয়ে কথা বলেছেন মানবাধিকার সংগঠন অধিকার–এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম


জানুয়ারি ৫ — ভোটার-প্রার্থীবিহীন কলঙ্কিত নির্বাচনে ভোটারশূণ্য একটি কেন্দ্র। ছবি — প্রথম আলো।

প্রথম আলো  —  ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার এক বছর পূর্ণl করতে যাচ্ছে। এই এক বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

আদিলুর রহমান খান  —  গত এক বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। আমাদের সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা ৩৯ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা আর কখনোই ফিরে আসেননি। এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৮৯ ব্যক্তি, আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৪২৬ জন। তবে এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে না। নাগরিক স্বাধীনতা, মত ও তথ্য প্রকাশের অধিকার ভীষণভাবে খর্বিত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও তাদের কর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এবং এসবই করা হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের দায়ে। সামগ্রিকভাবে মানবাধিকারকর্মীদের জন্য একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

প্রথম আলো  —  এই এক বছরে দেশের শাসনপ্রক্রিয়া অর্থাৎ গভর্নেন্স সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাইছি।

আদিলুর রহমান খান  —  মূলত ২০১১ সালের জুন মাসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের কাজে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের পরিণতিতে পাঁচ, সাত ও আটদলীয় ঐক্যজোটের রূপরেখা অনুযায়ী বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তৎকালীন বিরোধী দলের চাপের মুখে পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বিরোধ-সংঘাত, অবিশ্বাসের বাস্তবতায় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ তৈরি হয়েছিল এবং পরবর্তী তিনটি নির্বাচন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আওতায় সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তারপর বিরোধী দলগুলো ও বৃহত্তর জনমত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যেভাবে বাতিল করা হয়েছে এবং এই সংশোধনীর সমালোচনা করলে যে সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা বাংলাদেশের ওপর প্রচণ্ড আঘাত। এবং এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে তিনটি মূল উপাদান: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, তা থেকে এক বিরাট বিচ্যুতি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আইনের শাসনের প্রশ্নে দেশ একটা বড় বিপজ্জনক অবস্থার দিকে চলে গেছে।


আদিলুর রহমান খান মানবাধিকার এক্টিভিস্ট ও সেক্রেটারি, অধিকার



প্রথম আলো  —  কেউ কেউ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন পক্ষ দাবি করে এটা তারা নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার জন্য। বিরোধী দলগুলো কোনোভাবেই যখন নির্বাচনে আসছিল না, তখন সরকারের আর কী করার ছিল?

আদিলুর রহমান খান  —  দেখুন, পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের চূড়ান্ত বিরোধটা মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছিল কিন্তু আমাদের ভোটাধিকার অস্বীকার করার কারণে। সত্তরের নির্বাচনের ফল অনুযায়ী পাকিস্তানিরা যখন আমাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যা চাপিয়ে দিল, তখনই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে আমরা ধাবিত হলাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন করা হয়েছে, সেখানেও কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। ৪ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ভোটারের ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। ১৫৩ সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ রকম অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছে—এ কথা অবশ্যই বলা যায়।

প্রথম আলো  —  তো এই ভোটাধিকারবিহীন অবস্থার কী ফল গত এক বছরে লক্ষ করা গেল?

আদিলুর রহমান খান  —  দেশে যখন জনগণের সমর্থিত শাসনব্যবস্থা থাকে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেটা দমনপীড়নমূলক হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে সেটাই ঘটেছে, একটা অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে চলে এসেছে বাংলাদেশের জনগণ। আইনের শাসনের অধিকার তাদের পদে পদে খর্ব করা হচ্ছে। একজন নাগরিক ভিন্নমত পোষণের কারণে যেকোনো সময় গুম হয়ে যেতে পারেন, একজন নাগরিককে ক্রসফায়ারে হত্যা করে বলা হচ্ছে যে তিনি বিপথগামী মানুষ। মানুষকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হচ্ছে বা পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। এসবের জন্য আমার এবং আমাদের পরিবারগুলো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম এমন বাংলাদেশের জন্য, যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

প্রথম আলো  —  রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কী?

আদিলুর রহমান খান  —  দুর্নীতি আরও ব্যাপক হয়েছে, অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। যেসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দলীয়করণ করা হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রকে জনগণের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রথম আলো  —  কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে সমাজে বা রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন কোনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ নেই। কেন?

আদিলুর রহমান খান  —  বিভিন্ন সময় জনগণ এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, নাগরিক সমাজ কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, সভা-সমাবেশ করার অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। গুমের বিরুদ্ধে বলার কারণে, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে রিপোর্ট উত্থাপনের কারণে এবং পরবর্তী সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশ করার কারণে আমাকে ও আমার সহকর্মী নাসিরউদ্দিন এলানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমাকে ৬২ দিন ও তাঁকে ২৫ দিন কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। আমাদের মামলা এখনো চলমান। শুধু আমাদের ওপর নয়, সারা দেশে কর্মরত মানবাধিকারকর্মীদের ওপরেও দমন-পীড়ন, হুমকি, কখনো কখনো তুলে নিয়ে যাওয়া—এসব চলেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরার জন্য অধিকারের সব ফান্ড এনজিওবিষয়ক ব্যুরো এক বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে, আমাদের স্টাফদের আমরা বেতন দিতে পারি না। বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় আমরা কোনোমতে আমাদের সংস্থার কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। আমরা সার্বক্ষণিক চাপের মুখে আছি, আমাদের সব যোগাযোগের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়।

প্রথম আলো  —  রাজনৈতিক প্রতিরোধের বাইরেও একটা সমাজে অন্যায়-অবিচার, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একধরনের সামাজিক প্রতিরোধ থাকে, যেটা আমরা এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় দেখেছি। আমাদের সমাজ কি সেই প্রতিরোধ হারিয়ে ফেলেছে?

আদিলুর রহমান খান  —  আমার তো মনে হয় সেটা এখন অনুপস্থিত। এবং এই সামাজিক প্রতিরোধ ফিরে না এলে এই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় অর্জন সম্ভব নয়।

প্রথম আলো  —  বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির প্রতিরোধ কোথায় গেল? সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে চাইছে আর বিরোধী দল দমিত হচ্ছে, তারা এমনকি তাদের সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকারও প্রয়োগ করতে পারছে না—এই অবস্থা কেন হলো?

আদিলুর রহমান খান  —  আজকের বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারাও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলার কাজটা করেনি, যে কাঠামোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের শক্তি থাকে। আজকের বিরোধী দলের প্রতিরোধের শক্তি নেই, কারণ তারা জনগণের স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। এটা জনগণের কাছে আকর্ষণীয় নয়। শুধু সেই আন্দোলনই জনগণের কাছে আকর্ষণীয় হয় যে আন্দোলন জনগণের স্বার্থের কথা বলে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে। একটা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য যেভাবে ছাত্র, যুব, শ্রমিক, পেশাজীবীদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে হয়, বিরোধী দল সেই কাজটা কখনো করেনি। যদি করত, তাহলে আজ এমন প্রতিরোধহীন অবস্থা হতো না।

প্রথম আলো  —   আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আদিলুর রহমান খান  —   আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • আদিলুর রহমান খান মানবাধিকার এক্টিভিস্ট ও সেক্রেটারি, অধিকার।  সাক্ষাৎকারটি দৈনিক প্রথম আলোতে জানুয়ারি ৫, ২০১৫ এ প্রকাশিত হয়। লেখাটির লিঙ্ক — https://bit.ly/3nhNOJq 

Thursday, December 31, 2020

জানুয়ারি ৫, ও ডিসেম্বর ৩০ — বাকশাল দিবসের মতো আরো দুইটি কলঙ্কিত দিবস

—  ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম 

বাংলাদেশের ইতিহাসে জানুয়ারি ৫, ও ডিসেম্বর ৩০, বাকশাল দিবসের মতো আরো দুইটি কলঙ্কিত দিবস, শুধু  পিতা থেকে কন্যা। 

বাংলাদেশের ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, নির্বাচন হল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচন।  বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষণ ও মতামতধর্মী নিবন্ধে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বিপুল ব্যবধানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শাসকদল জয়লাভ করেছে। বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে পার্থক্যসূচক এমন চিত্র উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে আশা করা যায়, বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নয়। এই নির্বাচনের পর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ক্ষমতা দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে দেশটির শাসনব্যবস্থা একদলীয় শাসনে পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন অস্পষ্ট। দেশটির তরুণ ও যুবসমাজ গণতন্ত্রের ওপর বিশ্বাস হারাতে বসেছে। জানুয়ারি ২৫ —  বাকশাল দিবসের মতই জানুয়ারি ৫ এবং ডিসেম্বর ৩০ আরো দুইটি কালো দিবস যোগ হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের মানুষের সাথে চরম পরিহাস করা হয়েছে।  

ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের
প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হন।  

২০১৪ সালের একতরফা একদলীয় নির্বাচনের পর থেকে কয়েক বছর যাবৎ যে ভোটডাকাতির নির্বাচনী সংস্কৃতি চলছে তার কারণে মানুষের ভোট প্রদানের উৎসাহ কমে গেছে। ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, মিডনাইট ভোটডাকাতির জাতীয় নির্বাচনের পর ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার প্রবণতা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনেও এই চিত্র পাল্টায়নি। বিগত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিক দৃশ্যপট বজায় ছিল এইসব নির্বাচনেও। এবারের নির্বাচনে ভোটার নেই ও ভোট প্রদানের আগ্রহ নেই, কারচুপি ও অনিয়মের শেষ নেই, কারো কারো ক্ষেত্রে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার উপায় নেই, প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্ট নেই। দিনভর ছিল সহিংসতা। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে ভোট, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভার নির্বাচন। এ ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় ভোট বর্জন করেছেন বিএনপি প্রার্থীরা। ভোট গ্রহণের আগেই আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয় অনেক পৌর এলাকায়। হুমকি-ধমকি ও আতঙ্কে ভোট দিতে যাননি অনেকে। এমনকি মেয়র প্রার্থীও আতঙ্কে মাঠ ছেড়েছেন। 

অনেক স্থানে ইভিএম মেশিন বিকল, আঙ্গুলের ছাপ না মেলার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হন ভোটাররা। 

এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো সুশাসন, সমঅধিকার ও শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সাংবিধানিক ভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্র স্বীকৃত একটি দেশ বাংলাদেশ। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র। যেখানে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সবপর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। কিন্তু নির্বাচনে ভোটডাকাতি ও কারচুপি করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা সংবিধান লঙ্ঘন। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে। গণমুখী অনুচ্ছেদগুলো শুধু সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রয়েছে কিন্তু বাস্তবে এসবের প্রয়োগ নাই বললেই চলে। তাই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পারদ দিন দিন নিম্নগামী। শাসকদলের ক্ষমতালিপ্সার কারনে দেশের আজ এই বেহাল অবস্থান এবং বহুমুখী ষড়যন্ত্রে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। 

দেশের মালিক জনগণের পবিত্র ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে জনগণকেই আবারো ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। ফ্যাসিস্টদের পতন অনিবার্য। মজলুমের বিজয় সুনিশ্চিত। 

—  লেখক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ। 

Wednesday, December 30, 2020

২০১৮ সালের ‘নির্বাচন’

— আলী রিয়াজ 


ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮ এ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার সময়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি'র প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করে।  

একাদশ জাতীয় সংসদের ‘নির্বাচনের’ দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে এবং বিএনপি এই দিনটিকে বলছে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষা এবং হত্যা দিবস পালনের এই ঘটনা নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক-দলীয় নির্বাচনের বার্ষিকীকেও এইভাবেই এই দুই দল চিহ্নিত করেছিলো। সম্ভবত ২০১৭ সালের পরে আর এইভাবে কোনও পক্ষই আর এই দিন নিয়ে উৎসাহ দেখায়নি। এর আগে ১৯৯১ সাল থেকে কয়েক বছর ৬ ডিসেম্বরকে ‘গণতন্ত্র দিবস’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিলো – ১৯৯০ সালে গনআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদের সরকারের পতনের দিনটি এক সময় ঘটা করে পালিত হতো, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পরে মন্ত্রিসভা গঠন এবং ১৯৯৯ সালে বিরোধী জোট গঠনের পরে এই দিন পালনে উৎসাহেরই কেবল অবসান হয়েছে তা নয়, দিনটি রাজনীতিবিদদের জন্যে এক ধরণের অস্বস্তির দিন বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। ২০২০ সালে এসে এই দিন যে কোনও রকম ভাবেই পালিত হয়নি সেই বিষয় ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ  আনাম স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন (মাহফুজ আনাম, “নীরবেই চলে গেল ‘গণতন্ত্র দিবস’”, ডেইলি স্টার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০)।

এটি যতই বেদনাদায়ক বলে মনে হোক না কেন, একে এখন আর বিস্ময়কর মনে হয়না। কেননা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা ১৯৯০ সালে তৈরি হয়েছিলো গত তিন দশকে সেই আশাবাদ আকাঙ্ক্ষা এখন আর উপস্থিত নেই। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সংবিধানের বদল ঘটেছে, নির্বাচন হয়েছে – কিন্ত গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো গড়ে ওঠার প্রশ্ন পরে, যে অধিকারগুলো ছিলো সেগুলো টিকে থাকার সম্ভাবনারও অবসান হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে যা ছিলো প্রত্যাশা, তা ক্রমেই দূরে সরে গেছে। ১৯৯০-এর দশকে, বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার সূচনার পরে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি শান্তিপূর্ণ পথ প্রতিষ্ঠার কারণে আশা ছিলো গণতন্ত্রের অন্যান্য উপাদান এবং প্রতিষ্ঠানের দিকে সম্ভবত মনোযোগ দেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। মতপ্রকাশের অধিকারের আরও সম্প্রসারন ঘটবে, বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে, জবাবদিহির কাঠামোগুলো গড়ে উঠবে। নির্বাচন জবাবদিহির একটি কাঠামো, একে বলা হয় উল্লম্ব কাঠামো। এর বাইরে আছে আনুভুমিক কাঠামো – এগুলো হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে তৈরি কিন্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান যারা ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি করবে। সামাজিক জবাবদিহির ব্যবস্থা হচ্ছে সেই সব প্রতিষ্ঠান যেগুলো হচ্ছে সমাজের অন্যান্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে যারা রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উভয় পক্ষের জবাবদিহি দাবি করতে পারেন। কিন্ত জবাবদিহির এই ধরণের কাঠামোগুলো গড়ে ওঠেনি, সেগুলো গড়ে ওঠার আশাও ক্রমান্বয়ে তিরোহিত হয়েছে।

২০১৪ সালের এক-দলীয় নির্বাচনের পরে নাগরিকের অন্যান্য অধিকারের প্রশ্নকে পিছে ফেলে ভোটের অধিকারের মতো মৌলিক প্রশ্ন, যা গণতন্ত্রের একেবার অত্যাবশ্যকীয় বিষয়, সেই বিষয়েই নজর দিতে হচ্ছে। গণতন্ত্র এখন হয়ে উঠেছে ভোট দিতে পারা না পারার প্রশ্ন। একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়, কিন্ত সকলের অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া পৃথিবীর কোনও দেশে কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই ধরণের পশ্চাৎযাত্রা শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচনকেই অকার্যকর এক আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত করেছে। অনেকের মনে থাকবে যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছিল যে সাংবিধানিক ধারবাহিকতা রক্ষার জন্যে এই নির্বাচন। কিন্ত তাতে করে সংবিধানের মর্মবস্তের সঙ্গেই এই নির্বাচন অসামঞ্জস্য পূর্ন হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, যেহেতু আর কোনও ধরণের জবাবদিহির কাঠামো বাস্তবে ছিলোনা সেহেতু ক্ষমতাসীনরা সব ধরণের জবাবদিহির কাঠামোর বাইরে চলে গেলেন। ফলে ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসি বা নির্বাচনী গণতন্ত্রও থাকলো না।

ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ করা স্বত্বেও এটি আর ‘নির্বাচন’ হয়ে ওঠেনি। কিন্ত তার পরেও ২০১৮ সালের নির্বাচন ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে ভিন্ন। কেননা ২০১৮ সালের নির্বাচনের  মধ্যে যে কেবল নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে তাই নয়, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন অংশ (যেমন প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী), ক্ষমতাসীন দল, নির্বাচন কমিশন একাকার হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতে ভোট দেয়ার ব্যাপার কেবল ভোট জালিয়াতি বলে বিবেচনা করাই যথেষ্ট নয়। এটি হচ্ছে নতুন এক ধরণের রাষ্ট্রের ইঙ্গিত। এটি যদিও একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় এনেছে এবং একটি কার্যত এক-দলীয় সংসদ তৈরি করেছে কিন্ত তার চেয়েও বড় হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর রাতে এমন এক ধরণের জোটের অভিষেক হয়েছে যা আগে কখনোই ছিলোনা। এই অভিষেক হঠাৎ করে হয়নি, ২০১৪ সালের পর থেকে তা ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে, এক ধরণের সমঝোতা বা বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছে যা কোনও ধরণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। এই বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখার স্বার্থ কেবল রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নয়, যারা এই বন্দোবস্তের অংশীদার তাঁদেরও। ২০১৮ সালের পরের এবং আগের বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার পার্থক্যটা সেখানেই। এই পার্থক্যের একটা বড় দিক হচ্ছে রাজনীতির অবসান, পুরো ব্যবস্থায় উপস্থিত একাদিক্রমে বল প্রয়োগের বৈধতা এবং আমলাতান্ত্রিকতা।          



— লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। 

Friday, December 25, 2020

নির্বাচন কমিশন ‘মারাত্মক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ যা বিশ্বে বিরল

— শহীদুল্লাহ ফরায়জী

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের কিছু কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ শফিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাওয়া যায় সিল মারা এসব ব্যালট৷ 


কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন। দেশে দলীয় অনুগত বুদ্ধিজীবীদের ‘বিস্ময়কর নীরবতা’ এবং ‘অবিশ্বাস্য তোষামোদ’-এর প্রতিযোগিতার মাঝেও নির্বাচন কমিশনের নৈতিক অধপতনের বিরুদ্ধে ৪২ জন নাগরিকের ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হুমকির ওপর সত্য উচ্চারণ’- দেশবাসীকে শুধু সাহসীই করবে না, তাদের এ অনন্য ভূমিকা দেশবাসীকে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সময়ের স্বপ্ন দেখতে শক্তি যোগান দেবে এবং জনগণের সংগ্রামী প্রতিভাকে উন্মোচিত ও শাণিত করবে।

রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনে দুই ধরনের নয়টি অভিযোগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আর্থিক অনিয়ম ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে নির্বাচনী অনিয়ম। দুর্নীতি ও অর্থসংক্রান্ত তিনটি অভিযোগ হচ্ছে ১. বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেয়ার নামে দুই কোটি টাকা নেয়ার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম ২. নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম ৩. নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম।

নির্বাচন সংক্রান্ত ৬ অভিযোগ - ১. ইভিএম কেনা ও ব্যবহারে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম ২. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম ৩. ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম ৪. খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম ৫. গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম এবং ৬. সিলেট বরিশাল রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম।

নির্বাচন কমিশনের ভূলুণ্ঠিত নৈতিকতা আর ভয়াবহ কদর্য অবস্থা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।

ভোটাধিকার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের দায় ও দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত ও সুস্পষ্ট। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে - প্রজাতন্ত্রের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করা ও ভোটাধিকারের সাংবিধানিক ক্ষমতার নিশ্চয়তা প্রদান করা। জনগণের ভোটাধিকার যখন বিপদগ্রস্ত হয়, ভোটাধিকার প্রশ্নে যখন অরাজকতা সৃষ্টি হয় তখন হস্তক্ষেপ করে ভোটাধিকারের সাংবিধানিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে দেওয়াই নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে - প্রজাতন্ত্রের সাংবিধানিক নির্দেশনাকে সুরক্ষা দেয়া, সরকারের আইন বহির্ভূত দুর্বিনীত ক্ষমতা প্রয়োগের প্রবণতা থেকে বিরত রাখা, সর্বোপরি জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের সহযোগী নয় বরং সাংবিধানিক কর্তৃত্ব প্রয়োগের উৎস। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রতিবিম্ব নয় বরং রাষ্ট্রের প্রতিবিম্ব। গণমুখী ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের প্রয়োজনে সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ।

সরকারি দলকে আইন বহির্ভূতভাবে বৈধতা দেয়া বা সুবিধা বণ্টন করে দেয়া বা সমঝোতা বা মধ্যস্থতা করে দেয়ার কাজ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নয়।

রাতের আঁধারে নির্বাচন সম্পন্ন হলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে এবং  জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, যা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার পথে ধাবিত করে।

গণতন্ত্র হলো - বহুমুখী প্রক্রিয়া যা মানুষের চিন্তা ও কর্মের সমগ্র দিককে স্পর্শ করে, মনোজগতের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে। গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে মানুষ ক্রমাগত ব্যক্তিস্বার্থের বদলে সর্বজনীন মূল্যবোধের পানে এগিয়ে যায় এবং যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করার প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। জনগণ ক্রমাগত নাগরিক কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হয়। গণতন্ত্রবিহীন রাষ্ট্র সমাজের জন্য অভিশাপস্বরূপ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সচল থাকলে সমাজে দুর্নীতি, শোষণ ও অসাম্যের মূল উৎস উচ্ছেদের সংগ্রামকে বেগবান করা যায়। গণতন্ত্রের মাধ্যমেই মানুষের আকাঙ্ক্ষাসমূহ সার্থক বিকাশ ও চরিতার্থতা লাভ করে।

আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১১৮(৪) বলা হয়েছে “নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন”।

কিন্তু আমাদের নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইনের অধীন না থেকে সরকারের ইচ্ছার অধীন হয়েছেন। জনগণকে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহী ভূমিকা রেখেছেন।

নির্বাচন কমিশনের সৌজন্যে ভোট এখন আর জনগণের অধিকার নয়। নির্বাচন কমিশন ভোটারবিহীন নির্বাচনে যে নৈতিক সমর্থন যোগায় তাতে মনে হয় নির্বাচন কমিশন সরকারের রাজনৈতিক শাখার  ভূমিকায় অবতীর্ণ। নির্বাচন কমিশন ভোটাধিকার প্রশ্নে অভিভাবকত্বের ভূমিকা গ্রহণ করার কথা কিন্তু কার্যত সরকারের ক্ষমতা সংহত করার দায়-দায়িত্ব পালন করছে, যা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর খারাপ ফলাফল বয়ে আনবে।

গত কয়েক বছরে নির্বাচন কমিশন সরকারি দলের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে দেয়ার ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করে তার সাংবিধানিক কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন সমাজে নির্বাচন কমিশনের উপযোগিতা একেবারে  ভোঁতা হয়ে গেছে। অন্যান্য দেশের নির্বাচন কমিশন জনগণের  ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য যখন অধিকতর ক্ষমতা সচেষ্ট তখন আমাদের নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস করার প্রস্তাব পেশ করে।

আমাদের নির্বাচন কমিশন সংবিধান লঙ্ঘন, আর্থিক অনিয়ম ও অজ্ঞতায় ‘মারাত্মক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ যা বিশ্বে বিরল। কিছুদিন পূর্বে বাংলা ভাষা থেকে বিদেশি শব্দ বিদায় করার জন্য ভাষাবিজ্ঞানীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম ও পদ-পদবি পরিবর্তনের অনধিকার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। যে নির্বাচন কমিশন তার  সাংবিধানিক এখতিয়ার সম্পর্কে অবগত নয়, সে প্রতিষ্ঠান অসদাচরণে অভিযুক্ত হবে না - তা কি করে আশা করা যায়!

একসময়ে ভোট মানে ছিল জনগণের উৎসব। ভোটে প্রতিফলিত হতো সমগ্র সমাজের প্রতিচ্ছবি। সেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন যখন বলেন - কে ভোট দিতে এলো কিংবা এলো না সেটা আমাদের দায়িত্ব নয়, তখন মনে হয় নির্বাচন কমিশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয়, মনে হয় দেশ বিরোধী কোনো অপশক্তির প্রতিষ্ঠান।

জাতীয় সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যে কোনো নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের ন্যূনতম যে ব্যবস্থা পূর্বে ছিল তা বর্তমান কমিশন ধ্বংস করে কার্যত ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। এরপরও নির্বাচন কমিশন গর্ববোধ করে।

স্বৈরশাসক আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র সম্পর্কে বলেছিলেন ‘এটি একটি সহজবোধ্য সাদামাটা ব্যবস্থা, যা নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা যায় সহজে তা বাস্তবায়ন যোগ্য’। আইয়ুব খানের যোগ্য উত্তরসূরি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছেও রাতের আঁধারে বা স্বল্প উপস্থিতিতে বা এক পক্ষের উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ ও গণনা করাও সহজবোধ্য সাদামাটা হয়, এ রকম তামাশাপূর্ণ কাজ করতেই নির্বাচন কমিশন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন এবং সহজে তা বাস্তবায়নযোগ্য করে তুলছেন।

আইয়ুব খান আরও বলেছিলেন মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে সুদক্ষ ও কার্যকরভাবে নাগরিকদের অংশগ্রহণ পরিপূর্ণ ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে সর্বোপরি সর্বজনীন ভোটাধিকারের প্রশ্ন আমরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই মীমাংসা করে ফেলেছি। সত্তরের নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকারকে অমর্যাদা করার প্রতিবাদে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এদেশের জনগণ, অগণিত আত্মদানের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রপরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

আমরা যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে অতি দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বপ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জনগণের অধিকারের স্বীকৃতি ছাড়া স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। আমরা আইয়ুব খানের পুরনো রাজনৈতিক মডেল বুকের রক্ত দিয়ে ছুড়ে ফেলেছি ভোটারবিহীন নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়।

সুতরাং ভোটারবিহীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আমাদের জন্য জরুরি। এ পরিবর্তনের লক্ষ্য হবে বৃহত্তর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণের পরিধি বৃদ্ধি করা। রাষ্ট্র পরিচালনায়  জনগণের অগ্রাধিকারই চূড়ান্ত।

জনগণের সম্মতিবিহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা জনগণকে ক্ষমতাহীন করে দেয়, রাষ্ট্রের ‘লক্ষ্য’ ও ‘উদ্দেশ্য’ থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

‘চুরি হয়ে যাওয়া’ নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার না হলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাবে অধিকতর চরমপন্থার উদ্ভব ঘটবে, রাষ্ট্র এবং সমাজ অনৈতিক ও অমানবিকতা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং সহিংসতায় বিশ্বাসীদের উসকে দেবে। জনগণকে নির্দয় হতে বাধ্য করবে। সর্বক্ষেত্র হতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠাবে।

সুতরাং গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তাদের অপসারণ করা জরুরি।  নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের পূর্বরাতে এবং ভোটের দিন সংঘটিত গুরুতর অনিয়ম ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এমনকি ২৩১ টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট প্রদানের মতো অলৌকিক ঘটনায়ও নির্বাচন কমিশন একটি তদন্তের প্রয়োজন বোধ করেনি। যে নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করে ভোটার তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ হওয়ার পর ভোটারের আর মৃত্যু হতে পারে না। সেজন্য শতভাগ ভোট পড়ার পরেও তারা অবাক হননি বা কোনো অনিয়মের আভাষ পাননি। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভিনগ্রহের নির্বাচন সম্পন্ন হলেও হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের নয়। এটা তাঁরা দক্ষতার সঙ্গে প্রমাণ করতে পেরেছেন।

জনগণ এবং রাষ্ট্রের মাঝে কারও হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত। জনগণকে ক্ষমতার কাঁটাস্বরূপ মনে করা কোনো বিবেচনায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশটা স্বাধীন হয়েছে জনগণের রক্তে, কারো সাথে কোনো দেনদরবারে নয়।

নির্বাচন কমিশনের অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে সংবিধানের ১১৮(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে শত অপসারিত হতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না। এজন্য সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের অপসারণ করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও নৈতিক কর্তব্য।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনসহ আর্থিক অনিয়ম এবং গুরুতর অসদাচরণের যে অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে তা দ্রুত নিরসন হতে পারে যদি কমিশন সংবিধানের ১১৮(৬) মোতাবেক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করেন, যা হবে সবচেয়ে উত্তম বিকল্প।

কান্টের নীতি দর্শনের বলা হয়েছে মানুষের প্রকৃতি সুমহান; কেননা নৈতিকতা নামক মর্যাদার বস্তুকে নীতিরূপে গ্রহণ করতে মানুষের প্রকৃতি প্রস্তুত; অথচ কার্যক্ষেত্রে সেই নীতিবোধ অনুসরণ করতে সে দুর্বলতার পরিচয় দেয়, যে যুক্তিবৃত্তির কাজ হলো নৈতিক আইন দান করা, সেই যুক্তিকেই স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার দার্শনিক ভিত্তিকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়।





— লেখক গীতিকার। তাঁর ইমেইল একাউন্ট faraizees@gmail.com। লেখাটি প্রথমে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত হয়েছে, https://bit.ly/2WPm7Nj । 

 


Thursday, December 24, 2020

মানব অধিকার কোথায়

— সায়ন্থ সাখাওয়াৎ 




আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের দ্বারপ্রান্তে। নিশ্চয়ই অনেক অর্জনের কথা শুনব, উৎসব করব। অর্জন যে নেই এমনও নয়। এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের গর্ব করার মতো অনেক অর্জন আছে। পাশাপাশি আছে অনেক বঞ্চনাও। আবার অর্জনের বিনিময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিসর্জনের উদাহরণও আছে।

এই বিজয়ের মাসেই ১০ ডিসেম্বর পালিত হলো বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে অধিকার সুরক্ষার ফিরিস্তি শুনলাম। অন্যদিকে সরকারবিরোধী পক্ষ, মানবাধিকার সংস্থা ও কর্মী এবং মানবাধিকার হরণের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে শুনলাম অধিকার হরণের লোমহর্ষক ও নির্মম কাহিনী। যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের অধিকারের সুরক্ষা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, সে রাষ্ট্রই কীভাবে অধিকার হরণ করে সে কথাই উঠে এলো ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের কণ্ঠে। আসলে রাষ্ট্র তো নিজে কিছু করতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালকরা রাষ্ট্রের পক্ষে তার দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালকরা করছেন সে অঙ্গীকারের উল্টোটা। তারা নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করছেন না বা পারছেন না তো বটেই, উপরন্তু নিজেরাই অধিকার হরণে প্রবৃত্ত হচ্ছেন অহরহ। এ কথাই উঠে এসেছে বাংলাদেশ বিষয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার রিপোর্টগুলোতে।

সে বিষয়ে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক, একটি সভ্য রাষ্ট্রে মোটাদাগে মানুষের অধিকারগুলো কী। সংবিধান, মানবাধিকার সনদসহ বহু কিতাবে অনেক ধরনের অধিকারের কথা বলা আছে। সে জটিল হিসাবের খাতা না খুলেও সহজ ভাষায় যেটুকু বলা যায় তা হলো, একজন নাগরিকের জান-মাল-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা দেবে রাষ্ট্র। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দেবে। তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্রীয় আইন মেনে সভা-সমাবেশ-সংগঠন করার অধিকার থাকবে। ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকারও থাকবে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার পাবে। এবার যদি আমরা একটু মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি যে, এই অধিকারগুলো আমরা পাচ্ছি কি না এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আমাদের এই অধিকার হরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে সরকার ঠিক পথে আছে কি না। মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকে অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সরকার। মানবাধিকারের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি সব সময় পালনের চেষ্টা করে সরকার এবং চলমান করোনা পরিস্থিতিতেও এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না। করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে অনেকগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধের জবাবদিহি করতে হবে, যাতে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

আইনমন্ত্রীর এবারের এ কথার মতোই রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় জমা দিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়। সেখানেও বরাবরই সরকার দাবি করেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ মানবাধিকারের ক্ষেত্রে চমৎকার অগ্রগতি লাভ করেছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিরোধীদলীয় সদস্যদের গ্রেপ্তার, মতপ্রকাশের অধিকার সংকোচন, ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, নারী ও শিশুর নিরাপত্তাহীনতা এবং বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের যেসব পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা সরকারের দাবিকে অসংগতিপূর্ণ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।

চলতি বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের র‌্যাব কর্মকর্তাদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও বেশ কয়েকজন সিনেটর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য ডেমোক্র্যাট দলের বব মেনেনদেজ ও রিপাবলিকান সিনেটর টড ইয়াংয়ের সঙ্গে সিনেটর বেন কারডিন, কোরি গার্ডনার, জিন শেহিন, মার্কো রুবিও, ক্রিস মারফি, ক্রিস কুনস, জেফ মার্কলে ও কোরি বুকার ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুশেনকে লেখা মার্কিন সিনেটরদের ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের পর থেকে চারশোর বেশি ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’র অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এই বাহিনীর বিরুদ্ধে।

ওই অভিযোগে শীর্ষস্থানীয় র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ম্যাগনিৎস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট এবং ফারদার কনসোলিডেটেড অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট-২০২০-এর ৭০৩১(সি) ধারায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ জানানো হয়েছে সিনেটরদের চিঠিতে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনের ওই দুটি ধারায় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ রয়েছে।

চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছাড়াও র‌্যাবের হাতে গুম এবং ব্যাপক মাত্রায় নির্যাতনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার গ্রুপগুলো।

এর আগে চলতি বছরের ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবসকে সামনে রেখে ১২টি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের গুম বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। তাতে বাংলাদেশের দুটি সংগঠন ‘অধিকার’ ও ‘মায়ের ডাক’ ছাড়াও অ্যাডভোকেট ফর হিউম্যান রাইটস, অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসএপেয়ারেন্সেস (এএফএডি), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি), এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এনফ্রেল), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআর ডব্লিউ), রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের মতো সংগঠনও। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে, বর্তমান সরকারের ১ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৩১ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অন্তত ৫৭২ জন মানুষকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে গুম করেছে। এর মধ্যে কিছুসংখ্যককে ছেড়ে দিয়েছে বা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, কিছু মানুষকে তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আর বড় একটা অংশ এখনো নিখোঁজ! যদিও বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য মতে এ সময় গুমের শিকার মানুষের সংখ্যা ৬০৩ জন।

যৌথ বিবৃতিতে গুরুতর যে তথ্যটি উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো, গুমের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচন ঘিরে। সবচেয়ে বেশি গুম করা হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে। আর ২০২৮ সালের নির্বাচনের সময় গুম করা হয়েছে অন্তত ৯৮ জনকে। আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়। তা হলো, দেশের যেসব এলাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো ছিল, সেখানে গুমের সংখ্যাও বেশি। এ পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গুমের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক। (দৈনিক দেশ রূপান্তর, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)

এই রিপোর্টগুলোর সঙ্গে মিলে যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট, মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হামলা, মামলা, হয়রানি, মতপ্রকাশে বাধা, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ভোটের অধিকার হরণ কী করা হয়নি বাংলাদেশে? শুধু করা হচ্ছে, তা-ই নয়। দিনে দিনে বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। একদিকে সরকার তা প্রতিরোধের চেষ্টা তো করছেই না, অন্যদিকে ক্ষেত্রবিশেষে এসব মানবাধিকার হরণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে সরকার ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে আমরা যদি সরকারের একটি কার্যকর উদ্যোগ দেখতে পেতাম যে তারা আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো জঘন্য কাজে প্রবৃত্ত হবে না এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখবে সেটাই হতো বড় প্রাপ্তি। একটি দেশে যদি ন্যূনতম মানবাধিকার না থাকে, সে রাষ্ট্র কোনোভাবেই একটি সভ্য রাষ্ট্র বলে দাবি করতে পারে না। সরকার যত উন্নয়নের দাবিই করুক না কেন, মানবাধিকার রক্ষিত না হলে কোনো উন্নয়নই কাজে আসবে না। যে মানুষের জন্য উন্নয়ন, আগে সেই মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে হবে। মানুষের জন্যই রাষ্ট্র। মানুষের জন্যই রাষ্ট্রের পরিচালক। তাই আগে রাষ্ট্রকে সেই মানুষের জন্য উপযোগী একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। মানুষের অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। রাষ্ট্রটিকে শুধু ক্ষমতাবানদের নয়, সবার করে তুলতে হবে। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচালকরা কখনোই তার নাগরিকের পূর্ণ অধিকার দেয়নি। তাই প্রয়োজনে রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে তাদেরই।


— লেখক চিকিৎসক ও কলামিস্ট। লেখকের ইমেইল একাউন্ট sayantha15@gmail.com । লেখাটি প্রথম দৈনিক দেশরূপান্তরে প্রকাশিত হয়েছে, লিঙ্ক — https://bit.ly/34Gaugg 

Sunday, December 13, 2020

রোহিঙ্গাদের কি রেখেই দেবে বাংলাদেশ

—  সায়ন্থ সাখাওয়াৎ 

জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিন বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। কিন্তু বারো লাখের বেশি রোহিঙ্গার চাপে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন কক্সবাজার থেকে গত সপ্তাহে হাজার দেড়েক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশেরই আরেক অঞ্চলের দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে। সেখানে এই রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা, আবাসন, চিকিৎসা, তাদের শিশুদের জন্য শিক্ষাসহ উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। সেখানে ইতিমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি ছাউনি নিয়ে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম। প্রতিটি ছাউনিতে ১৬টি রুম। রান্নার জন্য ৮ পরিবারের জন্য এক জায়গায় ৮টি চুলা। সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার তো রেশন দিচ্ছেই। আরও আছে ২২টি এনজিওর সাহায্য।

 

আপাতত সেখানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাসের জায়গা তৈরি করা হয়েছে। তবে ভাসানচরে যে পরিমাণ জায়গা আছে তাতে পর্যায়ক্রমে প্রায় সব রোহিঙ্গাকে সেখানে হস্তান্তর করা সম্ভব বলে অনেকেই মত দিয়েছেন। কেউ কেউ এমনও বলছেন যে প্রথম পর্যায়ে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা ভাসানচরে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন কক্সবাজারে থেকে যাওয়া তাদের স্বজনদের জানাবেন যে নতুন জায়গায় তারা অনেক ভালো আছেন, তখন সব রোহিঙ্গাই ভাসানচরে স্বেচ্ছায় যেতে চাইবেন।

প্রথম দফায় স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা ভাসানচরে গিয়ে খুশি বলেই সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় যে পরিবেশে রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক সুন্দর খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে তাদের খুশি হওয়ারই কথা। সেখানে অনেকটা মুক্ত পরিবেশ পেয়েছেন তারা। তাদের শিশু সন্তানরা খেলাধুলা করতে পারছে, যা কক্সবাজারে পারেনি। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত লাল রঙের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখে হয়তো অনেক বাংলাদেশিও আফসোস করেছেন যে এমন জায়গা পেলে তারাও সেখানে বসবাস করতে চলে যাবেন।

কিন্তু এই চমৎকার জায়গাটিতে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ^বাসীকে কী বার্তা দিলাম? বাংলাদেশ কি তবে ধরেই নিয়েছে রোহিঙ্গাদের আর মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না? তাই তাদের জন্য স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে কি সরকার? এই পদক্ষেপের ফলে সরকারের যথাযথ প্রচেষ্টা থাকলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর যে ন্যূনতম সম্ভাবনাটুকু ছিল তাও কি শেষ হয়ে যাবে না?

এই স্থানান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি আছে। আপত্তি আছে জাতিসংঘেরও। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা রোহিঙ্গাদের এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়। মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোও এই স্থানান্তরের সমালোচনা করেছে। যদিও জাতিসংঘ বা এসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে এখনো কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি। আর তাদের আপত্তির উদ্দেশ্যও ভিন্ন। ফলে তাদের আপত্তি কানে তোলা নিষ্প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের যুক্ত থাকা উচিত বলেও বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘উচিত’ আর জাতিসংঘের ‘উচিত’ যে সমান্তরাল হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তাই জাতিসংঘ অনড় থেকেছে তার অবস্থানে। আর বাংলাদেশও অটল থেকেছে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে। কিন্তু এতে বাংলাদেশের লাভ হলো নাকি ক্ষতির মুখে পড়ল সেটা সময় বলবে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এ স্থানান্তরের বিষয়ে সরকারের প্রশংসা করার প্রতিযোগিতা ছিল লক্ষণীয়। বিশেষ করে টিভি টক-শোতে সরকারপন্থি আলোচকরা এ স্থানান্তরের পক্ষে ব্যাপক ওকালতিতে নেমে পড়েন। একজন সম্পাদক ও একজন সাবেক কূটনীতিক একটি অনুষ্ঠানে বলছিলেন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিশ-ত্রিশ বছর লেগে যেতে পারে। মুখে বিশ-ত্রিশ বছর বললেও তাদের চোখেমুখে ছিল অবিশ^াসের হাসি। অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছেন যে এই রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ বাংলাদেশের সামনে নেই। তারা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের আমরা নাগরিকত্ব দিয়েছি। তারা এখন বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার। সেই উদারতা আমরা দেখিয়েছি। সুতরাং রোহিঙ্গাদের ব্যাপারেও বাংলাদেশের উদারতা দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। কিন্তু তারা কেউ এ প্রশ্নটি করেননি যে তিন বছরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সরকার কী প্রচেষ্টা চালিয়েছে? কেন সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলো রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে আনতে? আর এত তাড়াতাড়ি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিরাপদ নিবাস গড়ে দিয়ে তাদের রেখে দেওয়ার মেসেজটি দেওয়া কতটা সংগত হয়েছে সে প্রশ্নটিও করেননি তারা।

গত বছর ৩১ আগস্ট দেশ রূপান্তরেই লিখেছিলাম সরকারের অনেকগুলো ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে জাতিকে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের প্রথম ভুল, এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি না করা। এর আগে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান এবং ২০০৩ ও ২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার সফল হয়েছিল রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শও নিতে পারত সরকার। তাও নেয়নি। দ্বিতীয় ভুল মিয়ানমারের ফাঁদে পড়া। অনেকেরই হয়তো মনে আছে, যখন বানের জলের মতো বাংলাদেশে ঢুকছিল রোহিঙ্গারা, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিল, তখন চাল আমদানির কথা বলে মিয়ানমার গিয়েছিলেন সরকারের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী। তখনই গুঞ্জন উঠেছিল যে সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশ কাটিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাচ্ছে কারও বুদ্ধিতে। যারা সরকারকে ওই পথে পরিচালিত করেছে তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের বন্ধু না। খাদ্যমন্ত্রীর ওই সফর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তখন যে মেসেজ দিয়েছিল তা বাংলাদেশকে তাদের সহানুভূতির তালিকা থেকে বের করে আনার জন্য ছিল যথেষ্ট।

আজও এ সরকারের জন্য সে একই কথাই প্রযোজ্য। তারা সব সময়ই একলা চলার নীতি অবলম্বন করেছে। বিএনপিসহ ডান, বাম, মধ্য কোনো দলকেই ডাকেনি এ বিষয়ে সমাধানের পরামর্শ নিতে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি রাজনৈতিক। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির অংশ রোহিঙ্গা ইস্যুটি। তাই এটিকে সমাধানের পথও হতে হবে রাজনৈতিকই। কিন্তু বাংলাদেশে সহাবস্থানের রাজনীতি নির্বাসনে রেখে দেশ পরিচালনার মতো জাতীয় ইস্যুতেও রাজনৈতিক ঐক্য নিয়ে মোটেই ভাবেনি সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের অকৃত্রিম বন্ধু বলে কথিত ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেন বাংলাদেশের পক্ষে নেই, তারা কেন জাতিসংঘে এ ইস্যুতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রইল, সে প্রশ্নের উত্তর নেই। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সবচেয়ে বড় অংশীদার চীনও এ ইস্যুতে কেন মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দেয়, সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলে না।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর আপত্তির উদ্দেশ্য যাই হোক, তাদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর স্থগিত রেখে বলত যে তবে তোমরা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের সহযোগিতা করো, সেটাই হতো যুক্তিসংগত। এতে ওই সব সংস্থা একটা চাপের মধ্যে থাকত। কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রভাবশালী দেশগুলোকে পক্ষে আনার চেষ্টা চালাতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশের ভূমিকা দেখে মনে হতে পারে যে, সরকার রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

সরকারের পক্ষে যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয় সেটা হয়তো তারা ভালো করেই জানে। জানে বলেই তাদের এখন ভাসানচর প্রকল্প ছাড়া আর কোনো পথ নেই। এ সরকারটি গত একযুগ ধরে যে পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে তাতে তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক ফোরামে জোর গলায় কথা বলা মুশকিল। ভোটবিহীন নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসে তারা একদিকে যেমন থাকে জনবিচ্ছিন্ন, অন্যদিকে সারাক্ষণ থাকে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত। যাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে সমর্থন ভিক্ষা করতে হয়, তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো বিষয়ে দরকষাকষি করা। সেটা যত ন্যায্যই হোক না কেন। সে কারণেই হয়তো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম দেশগুলো পেয়ে বসেছে বর্তমান সরকারকে। তারা জানে জনবিচ্ছিন্ন একটি সরকারকে খুব বেশি পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই। বরং তারা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে তাদের ব্যবসায়িক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে চলছে, সেখানে বাংলাদেশের কোনো স্থান নেই।

 






লেখক —  চিকিৎসক ও কলামিস্ট।ইমেইল —  sayantha15@gmail. লেখাটি প্রথম দৈনিক দেশরূপান্তর এ প্রকাশিত হয়েছে। 

 লিঙ্ক —   https://bit.ly/34oN0w7