Search

Monday, April 11, 2016

ইন্টারভিউঃ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে: মির্জা আলমগীর





By রেজাউল করিম লাবলু, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক সকালের খবর 
 
দীর্ঘ সময় পরভারমুক্তহয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকে যখন রাজনীতিবিদ, রাজনীতিকে বাঁকা চোখে দেখছেন,  মির্জা ফখরুলের স্বচ্ছ ইমেজ মানুষের শ্রদ্ধা কুড়িয়েছে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মির্জা ফখরুলের সক্রিয় রাজনীতির শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (অধুনা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন দেশ স্বাধীনের পর ঢাকা কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন৮৮ সালে তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও- আসন থেকে নির্বাচন করে হেরে যান৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি হন এবং৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও পরাজিত হন ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল পরে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হলে তাকে বেসামরিক বিমান চলাচল পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পদে বহাল ছিলেন সম্প্রতি তিনি সমসাময়িক রাজনীতি, দলের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সকালের খবর-এর সঙ্গে সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার রেজাউল করিম লাবলু
 
সকালের খবর : মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি কী? চ্যালেঞ্জ কী?
মির্জা ফখরুল :  
সারাদেশে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আজকে বিএনপির মতো একটি বড় দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছি তাদের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে আমাকে মহাসচিব বানিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন এজন্য আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমার প্রতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা সর্বোপরি দলের প্রত্যাশা পূরণে দায়িত্ব বেড়ে গেল তৃণমূলের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন প্রত্যাশা পূরণে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাব
এমন একটা সময়ে আমাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হল যখন দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত যে আশা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি আপনারা জানেন, ছাত্র অবস্থায় আমি নিজেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম সে স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও আজ তারাই সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করছে তাদের কথার সঙ্গে আজ কাজের মিল নেই কেউ নিজের ভোট নিজে দিতে পারছে না অবস্থায় দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ কারণ একমাত্র জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই পারবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ২০১৪ সালের জানুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একতরফা একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেছে ভোটারবিহীন ওই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এরপর থেকেই একের পর এক ভোটারবিহীন নির্বাচন হচ্ছে জনগণকে এখন আর ভোট দিতে হচ্ছে না জনগণের ভোট ছাড়াই কিছু মানুষ তাদের প্রভু হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে আসছেবিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচ্যগ্র মেদিনী’-এই হল অবস্থা সরকারের তাই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আগামীদিনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গঠনতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ জনসম্পৃক্ত চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনবে বিএনপি ইতিপূর্বে সেসব আন্দোলন সংগ্রাম আমরা করেছি তাতে কিছু ভুলত্রুটি ছিল সেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করে নতুনভাবে আন্দোলন সংগ্রামের রূপরেখা তৈরি করা হবে

সকালের খবর : কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসবে কমিটিতে কারা আসছেন?
মির্জা ফখরুল : নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার আগে দলের পুনর্গঠন সম্পন্ন করা হবে দলের পুনর্গঠনে মাঠপর্যায়ের ত্যাগী, পরীক্ষিত, দলের প্রতি অনুগত নেতাদের সমন্বয় করা হবে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ান, এমন নেতাদের দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে পাশাপাশি বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন; তাদেরকেই দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এমন আশা দিয়েছেন তুলনামূলকভাবে তরুণ নেতৃত্ব আনা হবে এবার  


সকালের খবর : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার চেষ্টা করছে কি না?
মির্জা ফখরুল : সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা করছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও করেছে এই সরকার, যা দুর্ভাগ্যজনক যে অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে, দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা তাতে অবাক হয়েছেন ছাড়া যাত্রাবাড়ীতে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রল বোমা হামলা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত তিনি ওই মামলায় জামিন নিয়েছেন বিএনপি মনে করছে, সরকার রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাই বিএনপিও মামলার বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে শুধু তাই নয়, বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেও একাধিক মামলা হয়েছিল ক্ষমতায় এসে তারা তাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিলেও খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি বরং তার বিরুদ্ধে আরও মিথ্যা, হয়রানিমূলক নতুন নতুন মামলা দেওয়া হয়েছে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত  

সকালের খবর : জনগণ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন দেখতে চায় বিএনপি কি পারবে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে?   

মির্জা ফখরুল : দেশের জনগণ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজসহ বিদেশি বন্ধুরা চান গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুক রাজনৈতিক দলগুলো তারা চান, গণমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনীতি করুক রাজনৈতিক দলগুলো সকল শ্রেণি পেশার মানুষ বিদেশি বন্ধুদের এমন প্রত্যাশা পূরণ করতে চায় বিএনপি সকলের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় বিএনপি জনগুরুত্বসম্পন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক রাজনীতি করতে চায় বিএনপি সেজন্য ইস্যু বা বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি করা হবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে কাউন্সিলররা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিষয়ভিত্তিক কমিটিগুলো সমসাময়িক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ নানা বিষয় নিয়ে বিএনপির করণীয় নির্ধারণ করে দলের হাইকমান্ডের কাছে প্রস্তাব করবে প্রস্তাবনাগুলো চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করবেন এরপর বিএনপি তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে প্রয়োজনে কর্মসূচি দেবে
 
জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন গতানুগতিক রাজনীতির পক্ষে আর তারা সমর্থন জানাবেন না আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে জনগুরুত্বসম্পন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়া হবে সেই কর্মসূচি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক হবে অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন করে নতুন ধরনের রাজনীতি করবে বিএনপি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে পরিবর্তনের রাজনীতি করার অঙ্গীকার করেছেন

সকালের খবর : চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে বিএনপি আলাপ-আলোচনার প্রস্তাব দিলেও সরকারের সাড়া নেই অবস্থায় বিএনপি কী করবে?



মির্জা ফখরল : নিশ্চয়ই দেশবাসীর স্মরণ আছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা বলেছিলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আর সংলাপের সুযোগ নেই দশম সংসদ নির্বাচনের পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একাদশ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে বিএনপি শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা করা সংলাপের বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আসছে আলোচনায় বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু সরকার বিএনপির এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি বরং সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করে হামলা, মামলা, নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্নে একের পর এক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এতে সরকার নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দেশ দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অবস্থায় বিএনপি আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়ে যাবে আশা করি, সরকারের ভুল ভাঙবে দেশ দেশের জনগণের স্বার্থে তারা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে পদক্ষেপ নেবে আর না নিলে বরং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে      

সকালের খবর : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপির প্রাপ্তি কী?

মির্জা ফখরুল : আপনারা জানেন, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বিএনপির এই কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সরকার করতে দেয়নি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে কাউন্সিলের কয়েকদিন আগে পুলিশ আমাদের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আমাকেসহ দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় কাউন্সিলের জন্য যে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল, তা তছনছ করে দিয়েছিল মোটকথা, কার্যালয়ে এক ধরনের তাণ্ডব চালিয়েছিল পুলিশ সে কারণে কাউন্সিলের প্রস্তুতির কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায় কার্যালয়ে রক্ষিত টাকাও লুট হয়েছিল যার কারণে ভণ্ডুল হয়ে যায় কাউন্সিল সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ আমরা আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত, প্রত্যাশার কাউন্সিল করলাম কিন্তু সেই কাউন্সিলে সরকার সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে কীভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে তা দেশের মানুষ দেখেছে জেনেছে তার জন্য সরকার যে আচরণ করল তা তো আপনারা দেখেছেন আমরা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কাউন্সিল করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু সে জায়গা আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি আমরা আমাদের পঞ্চম কাউন্সিল এই জায়গায় করেছিলাম সর্বশেষ ২০১৩ সালে যে কাউন্সিল করার কথা ছিল তখনও একই জায়গায় অনুমতি দিয়েছিল সরকার কিন্তু এবার দেয়নি শেষ পর্যন্ত তারা অনেক দেরিতে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বরাদ্দ দেয় কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দলের কাউন্সিল এত ছোট্ট সম্মেলন কেন্দ্রে করা সম্ভব নয় তারপরও দলের নেতাকর্মীদের সার্বিক সহযোগিতায় কষ্ট করে আমরা কাউন্সিল করেছি কাউন্সিল ছিল তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি মিলনমেলা অতীতের সকল কষ্ট, বেদনা, হামলা, হামলা, নির্যাতন সহ্য করে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলররা উত্সাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাউন্সিলে জড়ো হয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত আমরা সুষ্ঠুভাবে আমাদের কাউন্সিল শেষ করতে পেরেছি এজন্য সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে, আমার পক্ষ থেকে সকলকে অশেষ ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দীর্ঘ বছর পরে এই কাউন্সিলের মাধ্যমে এই দুঃসময়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে কাউন্সিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর ডেলিগেটের অংশগ্রহণ সেটাই প্রমাণ করেছে  

সকালের খবর : বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?


মির্জা ফখরুল : কেন নয়? বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল রণাঙ্গনের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দল জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত একটি দল যখনই দেশের জনগণ সুষ্ঠুভাবে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছে, তখনই তারা বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এনেছে বিএনপিও ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করেছে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বারবার বিভিন্ন স্বৈরশাসকের রোষানলে পড়েছে কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফিনিক্স পাখির মতো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের রোষানলে পড়েছিল এরপর বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া তিনি দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বছর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেন আপসহীনভাবে তার এই আপসহীনতার কারণে ৯১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি এরপর ২০০৭ সালে জেনারেল মইন আহমেদ ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে দলটি আরেক দফা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি কিন্তু বর্তমান সরকারের মতো এত অগণতান্ত্রিক কঠোর মনোভাব বিএনপির প্রতি দেখায়নি কোনো সামরিক স্বৈরশাসক শত প্রতিকূলতার মধ্যেও খালেদা জিয়া কঠিন কঠোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন শত বাধা-বিপত্তি নির্যাতন অতিক্রম করে এই কাউন্সিলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ভবিষ্যত্ কর্মপরিকল্পনা স্বপ্ন বিএনপিকে এক নতুন ধাপে উন্নীত করেছে দেশনেত্রীর বক্তব্যে তার ভিশন-২০৩০ দেশের রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে এখন দায়িত্ব সরকারের তারা জাতীয় ঐক্যের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য দেশনেত্রীর প্রসারিত হাত গ্রহণ করবেন, নাকি তারা তাদের চিরায়ত প্রতিহিংসার পথে, গণতন্ত্র ধ্বংসের পথে এগুবেন আমি মনে করি, এটা একটা ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জাতির জন্য সরকার এটাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশ, জাতি, জনগণ উপকৃত হবে   

সকালের খবর : বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে তৃণমূলের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে কী? 

মির্জা ফখরুল : বিএনপি জনগণের ভালোবাসার দল সকল পর্যায়ের বিশেষ করে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই দল পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার প্রতিফলন ঘটবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তৃণমূলের মনোভাব সম্পর্কে অবহিত আছেন তিনি ইতিপূর্বে পরিষ্কার করেছেন বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে যারা জেল-জুলুম, হামলা- মামলা, নির্যাতন উপেক্ষা করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন তাদেরকেই দলের নেতৃত্বে আনতে চান ইতোমধ্যে তিনি আমাকে মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এই বিষয়টি নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে যে পরে যে কমিটি আসছে তাতে নিপীড়িত নির্যাতিন নেতারাই দলের নেতৃত্বে আসবেন   

সকালের খবর : শিগগিরই আন্দোলন-সংগ্রামে নামার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

মির্জা ফখরুল : শিগগিরই কেন? বর্তমানেই তো বিএনপি আন্দোলনে আছে আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আন্দোলন সেই সংগ্রাম, আন্দোলন চলছে আমাদের কাউন্সিলও সেই সংগ্রামেরই অংশ শুধু তাই নয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌর নির্বাচনসহ সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নিয়েছে আন্দোলন সংগ্রামেরই অংশ হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল প্রকার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছি নিরলসভাবে  

সকালের খবর : মামলা-হামলায় নিমজ্জিত নেতাকর্মীরা কি পারবে আন্দোলন-সংগ্রামে সফল করতে রাজপথে নামতে?
মির্জা ফখরুল : হামলা-মামলা চালিয়ে সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারেনি হত্যা, খুন, গুম, নির্যাতন, কারাগারে আটকিয়ে রাখা, মিথ্যা মামলা কোনোটাই নেতাকর্মীদের হতাশ করতে পারেনি ইতিপূর্বে সকল আন্দোলন সংগ্রামে যে যার সাধ্যমতো ভূমিকা রেখেছেন আবার ভবিষ্যতে যখনই সময় হবে নেতাকর্মীরা তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন
 
সকালের খবর : এবারের কাউন্সিলে বিএনপি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের গঠনতন্ত্রেএক ব্যক্তি এক পদনীতি সংযোজন করা হয়েছে বিএনপি কি পারবে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে?

মির্জা ফখরুল : কেন নয়? এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলের ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারলে দল আরও শক্তিশালী হবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরে যখন এর সুফল দল পাবে তখন সবাই বরং খুশি হবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একাধিক পদে নেই আমি কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদ ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলাম আমাকে মহাসচিব করার পর এই দুই পদ থেকে পদত্যাগ করেছি ওপর থেকে দলের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে নিচের লেভেলে সবাই এটি মেনে নেবেন একইভাবে যারা একাধিক পদে আছেন তারা নতুন পদ পাওয়ার পর আগের পদ ত্যাগ করবেন ইতিপূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শাহজাহান ওমর সেখানে দল পুনর্গঠনের জন্য অন্য নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দলের মঙ্গলের জন্য বিএনপি একটি বড় দল তাছাড়া নিয়মিত কাউন্সিল না করায় অনেক যোগ্য নেতাকে দলের কাঠামোর মধ্যে সম্পৃক্ত করা যায়নি, যারা দলের জন্য অবদান রাখতে পারতেন ভবিষ্যতে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা এই স্বৈরশাসককে তার ক্ষমতা থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে দিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবেই     

সকালের খবর : পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা করে নাগাদ আসতে পারে?

মির্জা ফখরুল : কাউন্সিলে সারাদেশের কাউন্সিলররা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি স্থায়ী কমিটি গঠনের দায়িত্ব চেয়ারপারসনকে দিয়েছেন তিনি যথাসময়ে তার ওপর অর্পিত এই দায়িত্ব পালন করবেন কাউন্সিলের ১০ দিনের মাথায় তিনি আমাকে মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত করেছেন এরই মধ্যে গত শনিবার যুগ্ম মহাসচিব বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে শিগগিরই বাকি কমিটি চেয়ারপারসন ঘোষণা করবেন   
সকালের খবর : ভিশন-২০৩০ কি নির্বাচনী ইশতেহার হবে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে?
মির্জা ফখরুল : এটি দলীয় ফোরামে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আরও আলোচিত হবে এবং বিতর্কের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে এইভিশনদলের ডকুমেন্ট হিসেবে গৃহীত হবে নির্বাচনী ইশতেহারে যাবে কি না সেটা পরে দলের চেয়ারপারসন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন  

সকালের খবর : বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কী বিএনপি কী ভাবছে?

মির্জা ফখরুল : বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা এজন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানই পারে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে জনগণের নির্বাচিত সরকার এলেই দেশের রাজনৈতিকসহ অপরাপর সঙ্কট থাকবে না বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগে নিতে হবে বর্তমানে দেশে যে সঙ্কট চলছে তা বিএনপির একার সঙ্কট নয় দেশের সঙ্কট তাই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই সঙ্কট থেকে দেশকে উদ্ধারে দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সঙ্কট সমাধানে জোর উদ্যোগ নেবেন তিনি
 
সকালের খবর : আগামীদিনে জনগণের সমস্যাগুলো সমাধানে কী উদ্যোগ নেবে বিএনপি?

মির্জা ফখরুল : জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করা এবং তার সমাধান করার জন্য বিএনপি সবসময় কাজ করে যখনই বিএনপি ক্ষমতায় গেছে তখনই জনকল্যাণে কাজ করেছে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারই পারে সমস্যার সমাধান করতে ক্ষমতায় না থাকলেও জনগণ যেসব সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে সে সম্পর্কে বিএনপি তাদের বক্তব্য তুলে ধরছে সরকারকে জনগণের সমস্যা সমাধানে তাগিদ দিচ্ছে আমরা আশা করি, বিএনপির নতুন নেতৃত্ব আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সফলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

সকালের খবর :  আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মির্জা ফখরুল : আপনাকে এবং সকালের খবরের পাঠকদেরও ধন্যবাদ

No comments:

Post a Comment