Search

Tuesday, April 12, 2016

২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.০৫% বৃদ্ধির দাবি : বিএনপি’র ভাবনা


মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জিডিপি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। 
এপ্রিল, মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় আয় প্রবৃদ্ধির উপর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জন্য সাময়িক হিসাব (Provisional estimate) প্রকাশ করেছে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী  তথ্য জানিয়েছেন বিবিএস এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে .০৫ শতাংশ বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে . শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রাক্কলন . শতাংশ সরকারের প্রাক্কলন এই সংস্থা দুটির তুলনায় অনেক বেশি সুতরাং বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বাস্তবতার আলোকে সংগতভাবেই প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে 

দাবী করা হয়েছে এবারই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতাংশের ঘরে যাবে দাবি সঠিক নয়বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি . শতাংশ হয়েছিল এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৬-০৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়ে .০৬ শতাংশে এসেছিল  সময় জিডিপি হিসেবে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী, পোনামাছ, চাষকৃত মাছ, মিনারেল ওয়াটার, ইন্টারনেট কেবল সেবাসহ অনেকগুলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অন্তর্ভুক্ত  ছিলনা, যেগুলো ২০০৯ সালে পরিবর্তিত ভিত্তি বছরের নিরিখে জিডিপি প্রাক্কলনে যোগ করা হয় ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এই কর্মকান্ড গুলো জিডিপি হিসেবে যদি যুক্ত করা হত, তাহলে অবশ্যই প্রবৃদ্ধি .০৬ শতাংশের বেশি হত উল্লেখ্য যে, শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারা আমাদের সময়েই শুরু হয়

সংবাদপত্রের সূত্র থেকে জানা গেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই এই হিসেবটি প্রকাশ করেছে অন্যান্য বছর মাসের (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) তথা তিন প্রান্তিকের পূর্ণাঙ্গ  হিসাব পেয়ে তবেই জিডিপি প্রাক্কলন করা হয় সব হিসাব পাওয়া যায় এপ্রিলের শেষে এবার তাড়াহুড়ো করে প্রাক্কলন প্রকাশ উদ্দ্যেশ্য মূলক মনে হয় বর্তমান সরকার পরিসংখ্যান ব্যুরোকে নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে চাপের মধ্যে ফেলে চলেছে ওয়াকিফাল মহলের রকম অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়

বাংলাদেশের জিডিপির শতাংশ কিংবা তার চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি দেশবাসীর জন্য একটি সুসংবাদ হতে পারত  কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলো  (Variables) সেরকম আশাবাদ সৃষ্টি করছে না চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকুরেদের বেতন ভাতা প্রায় দ্বিগুনের মত বৃদ্ধি করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই জিডিপি প্রাক্কলনে  এর প্রতিফলন ঘটেছে এটি একটি এককালীন বৃদ্ধি প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিশ্চয়ই এভাবে  বৃদ্ধি পাবে না ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জনপ্রশাসন প্রতিরক্ষায় জিডিপি পরিমান ছিল ৫০৬,৭৪১ মিলিয়ন টাকা এবং চলতি অর্থ বছরে (২০১৫-২০১৬) তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭০১,০৩১ মিলিয়ন টাকা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে বেতন ভাতা বৃদ্ধির প্রভাব - তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে শিক্ষা  স্বাস্থ্য খাতেও বেতন ভাতা বৃদ্ধির অনুরুপ প্রভাব পড়েছে মনে রাখা দরকার, শুধু বেতন ভাতা বৃদ্ধি বা তৎসংশ্লিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধিকে প্রকৃত জন-কল্যানের বৃদ্ধি বলা যায় না

অর্থনীতির যেসব সূচকগুলো জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে সব সূচকের অবস্থা সন্তোষজনক নয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি বলতে আমরা বুঝি পণ্য সেবার উৎপাদন  বৃদ্ধি পণ্য সেবার উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে চলতি অর্থ-বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি খোদ অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমালোচনা করেছেন রাজস্ব আদায় বাড়লো না, কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে গেল- দুটো বিপরীতমুখী অবস্থা শতাংশের অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দাবীকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়

প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার সঙ্গে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হারের সরাসরি সম্পর্ক (Co-relation) রয়েছে দেশে বিনিয়োগ বাড়লে শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতির আমদানি বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তিখাতে ঋণের চাহিদা বেড়ে যায় গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারী সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামাল   যন্ত্রপাতির আমদানি অধিকতর মন্থর হয়ে পড়েছে এই পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাওয়া অবাস্তব মনে হয়

ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না হলে আমাদের মত অর্থনীতিতে সুঠাম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Robust Economic Growth) করা যায় না সরকারি খাতে বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতি অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বর্তমান সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক অধিকারহীনতা এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতি সামগ্রিকভাবে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি আস্থাহীনতা  সৃষ্টি করেছে রকম পরিস্থিতি ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত  হয় না এরই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই সরকারের হিসেবেও ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ গত বছরের জিডিপির ২২.০৭% থেকে চলতি অর্থ বছরে জিডিপির ২১.৭৮ % শতাংশে নেমে এসেছে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের নেতিবাচক পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বৃদ্ধির দাবি অসংগতিপূর্ন জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যে পরিমান বৃদ্ধি দাবি করা হয়েছে তার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের একটি সন্তোষজনক উল্লম্ফন অথচ সে রকম কিছু ঘটেনি বরং পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক প্রাক্কলনে কৃষি প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও সুসংবাদ নেই গত অর্থ বছরে কৃষির প্রবৃদ্ধির হার ছিল .৩৩ শতাংশ উক্ত প্রাক্কলন অনুযায়ী বর্তমান অর্থ বছরে কৃষি ক্ষেত্রে অবনতি ঘটে . শতাংশে দাঁড়িয়েছে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাসমান কৃষির প্রবৃদ্ধি বিশাল কৃষক সমাজের অধকিতর সমৃদ্ধির সূচক এই বিবেচনায় কৃষির প্রবৃদ্ধিতে নিম্নমুখী ধারা বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সুখবর নয় ছদ্ম বেকারত্ব আরো বেড়ে যাবে এই প্রবণতা নিঃসন্দেহে আয় বৈষম্য বাড়াবে

অন্যদিকে প্রাক্কলন অনুযায়ী, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১০ শতাংশ হবে বলে বলা হয়েছে গতবার খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ৬৭ শতাংশ জিডিপির ৫৩ শতাংশের বেশি আসে সেবা খাত থেকে খাতে এবার প্রবৃদ্ধি বলা হচ্ছে দশমিক ৭০ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি মাঝারী বৃহৎ উৎপাদন শিল্পের 'কোয়ান্টাম ইনডেক্স অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশান' এর সাম্প্রতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে নভেম্বের সময়ে মাঝারী বৃহৎ উৎপাদন শিল্পের 'কোয়ান্টাম ইনডেক্স অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশান' এর সূচক জুন মাসে সর্বোচ্চ ২৮৫.৫০ হয় যা পরবর্তীতে হ্রাস পেয়ে জুলাই, অগাস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বের মাসে যথাক্রমে ২৫৩.৬৭, ২৬৫.৬২, ২৩৮.৭০, ২৩৫.০৪, ২৫৩.২৪ হয় এমতাবস্থায় ম্যনুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধির হিসাব কি ভাবে করা হল তা বোধগম্য নয় অন্য একটি সূচক তথা মেয়াদী শিল্প ঋণ বণ্টন পুনরুদ্ধারেও সাম্প্রতিক সময়ে হ্রাসমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মেয়াদী শিল্প ঋণ বণ্টনের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় .৮৬ শতাংশ কমে গিয়ে ১২৬৯৯.৬৮ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে একই সময় অর্থাৎ বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মেয়াদী শিল্প ঋণ পুনরুদ্ধারের হার গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় .৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে

অভ্যন্তরীন খাতে মুদ্রানীতিতে (২০১৫, জুলাই- ডিসেম্বর) ধার্যকরা ১৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির স্থলে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯.৯৩ শতাংশ। এরফলে এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য যে দেশে ব্যাক্তিখাতে বিনিয়োগ মন্দা চলছে। এরফলে ব্যাঙ্কে বাড়ছে অলস টাকার পরিমাণ। অন্য দিকে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় চলছে সর্বগ্রাসী লুটপাট ও চরম অব্যবস্থাপনা।

সেবা খাতের সম্প্রসারণের মন্থরগতি লক্ষণীয় পরিবহণ, সংরক্ষণ যোগাযোগ এবং আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক খাতের অসন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি সেবা খাত সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে পরিবহণ, সংরক্ষণ যোগাযোগ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ক্রমহ্রাসমান

বাংলাদেশের শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ক্রমবর্ধনশীল মুলধন উৎপাদন অনুপাতের (ICOR) পরিপ্রেক্ষিতে জিডিপি নূন্যতম ৩০. % বিনিয়োগ হ্ওয়া আবশ্যক কিন্তু বিনিয়োগ জিডিপি ২৮% শতাংশে দাঁড়িয়ে আছে এই বিনিয়োগ দিয়ে % শতাংশ কিংবা তার বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাবি রা অবাস্তব দেশে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশ নেই দুর্নীতি, ব্যবসায়ের ব্যয় বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আইনের শাসনের ঘাটতি প্রতি মুহূর্তে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে  নিরুৎসাহিত করছে তদুপরি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে এর দাম না কমানোর ফলে আমাদের ব্যক্তিখাত বিরুপ প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশ না থাকায় দেশ থেকে পুঁজি পাঁচার হচ্ছে যার ইংগিত আমরা পাই সুইস ব্যংক, গ্লোবাল ইন্টিগ্রিটি রিপোর্ট এবং পানামা পেপারস থেকে ছাড়া কানাডা, মালয়েশিয়া, আরব-আমিরাত (দুবাই) সহ পৃথিবীর অনেক দেশে বাংলাদেশের বিশাল অংকের পুঁজি পাঁচার হচ্ছে পুঁজি পাঁচার জাতীয় অর্থনীতিকে রক্তশূন্য করে ফেলছে

সরকার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়িয়ে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণের কৌশল নিয়েছে সরকারি বিনিয়োগের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রতিফলিত হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে এই আর্থিক বছরের নয় মাসে (জুলাই -  মার্চ) মাত্র ৪১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে  সরকারি বিনিয়োগের পাঁচটি অন্যতম প্রধান খাত - সড়ক মহাসড়ক, সেতু, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কল্যাণ - কে বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে এই খাতগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের হার অসন্তোষজনক গত নয় মাসে  স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতে এডিপি বাস্তবায়নের হার যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ ৪৫ শতাংশ সেতু বিভাগের জন্য বর্তমান অর্থবছরে বরাদ্দকৃত এডিপি' মাত্র ২৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কল্যাণ খাতে উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দের হ্রাসমান প্রবণতা লক্ষ্যণীয় সামাজিক খাতসমূহে উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দের এই হ্রাসমান হার বজায় থাকলে দেশে সামাজিক উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ মন্দা এবং সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে থাকা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চতর প্রবৃদ্ধির হিসাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে       

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা অভিবাসী আয় কমছে রেমিট্যান্স কেবল তাঁদের পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে জিডিপি অন্যতম প্রধান অংশভোগ বৃদ্ধি করে না, তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে এবং নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৯৭৭ কোটি (.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৫২ শতাংশ কম আর সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে

অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পরিমাপ করা  হয়  গিনি সহগ’ মাধ্যমে তা যদি বাড়তে বাড়তে শূন্য দশমিক পাঁচ-এর কাছাকাছি পৌঁছায় বা অতিক্রম করে তবে তা দেশের জন্য মারাত্মক সংকেত সরকারের খানা পর্যায়ের আয়-ব্যয় জরিপও বলছে, আয়ের বণ্টন আরও অসম হচ্ছে গ্রামেও বাড়ছে, শহরেও বাড়ছে রাজধানীতে আরও বেশি করে গ্রামাঞ্চলে অসমতা মাপার সূচক ১৯৯১ সালের ২৮ শতাংশের তুলনায় বেড়ে ২০১০ সালে এসে ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে শহরে দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে দশমিক ৪৫ শতাংশে মোট আয়ে দরিদ্রদের আয়ের অংশ ১৯৯১-৯২ সালে ছিল দশমিক ৫২ শতাংশ; যা ২০১০ সালে কমে গিয়ে দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়ায় নিম্ন মধ্যবিত্তদের আয়ের অংশও সময়ে ১০ দশমিক ৮৯ থেকে দশমিক ১০ শতাংশে নামে আর মধ্যবিত্তদের আয়ের অংশ ১৫ দশমিক ৫৩ থেকে কমে গিয়ে ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশে নেমে যায় অন্যদিকে সবচেয়ে উপরের ১০ শতাংশের আয়ের অংশ ২৯ দশমিক ২৩ থেকে বেড়ে ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশে উঠে যায় এসব পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, আয়ের বণ্টনের দিক থেকে দেখলে নিম্ন মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্তদের অবস্থার অবনতি ঘটেছে, আর উচ্চবিত্তরা উপরের দিকে উঠেছে

দারিদ্র্যের হার কমানোর প্রবণতা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সরকারের হিসাব মতে, ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪৮ দশমিক শতাংশ ছিল পরের পাঁচ বছরে দশমিক শতাংশ পয়েন্ট কমে ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশে দাঁডিয়েছে অর্থাৎ, আমাদের সময়ে দারিদ্র্য কমেছে বছরে ১.৭৮ শতাংশ হারে আর ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩১. শতাংশ ছিল ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার কমানোর প্রবণতা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে এই পাঁচ বছরে সাঁড়ে আট শতাংশ পয়েন্ট দারিদ্র্য কমেছে আর সর্বশেষ চার বছরে (২০১০ থেকে ২০১৪) দারিদ্র্য কমেছে মাত্র দশমিক শতাংশ অর্থাৎ, এ সময়ে দারিদ্র্যের হার কমেছে ১.৪৮ শতাংশ হারে।

দেশে বেকারত্ব বেড়েই চলছে বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৫ (জুলাই-সেপ্টেম্বর)– অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ২৬ লাখ ৩১ হাজার বেকার রয়েছেন তরুণ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা  লাগামহীন হারে বাড়ছে বেকারদের মধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশ কিংবা লাখ ১০ হাজারই উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৪ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে থেকে ২৯ বছর অর্থাৎ আমরা Demographic Dividend এর সুফল পাচ্ছি না।
 
পরিসংখ্যান ব্যুরোর  তথ্য অনুযায়ী মাথা পিছু আয় গত অর্থবছরের ১৩১৬ ডলার থেকে চলতি অর্থ বছরে ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে মাথা পিছু আয় ব্যাপক জনগোষ্ঠির প্রকৃত কল্যাণের সূচক নয় এর জন্য জানা প্রয়োজন আয় বৈষম্যের সূচক বাংলাদেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাতীয় আয় নির্ধারণে ভিত্তি বছর পরিবর্তন করার ফলে বর্তমান দলীয় সরকারের আমলে ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয় ১২১ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা নেহায়েতই পরিসংখ্যানগত চমক বাস্তবে সাধারণ মানুষের অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি কারণেই  পরিসংখ্যানের চমকে বিভ্রান্ত ওয়ার সুযোগ নেই

দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে উন্নয়ণের নামে বর্তমান সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের রথি মহারথিরা গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়ার নামে সকল সামাজিক চুক্তি ভংগ করে জনগণকে শৃংখলিত করছে। উন্নয়নের নামে চলছে বল্গাহীন লুন্ঠন। দেশে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী অলিগার্কি। 

জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান পরিসংখ্যাণের চমকে বিভ্রান্ত হবেন না আপনাদের জীবন-মানের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারাই জানেন আপনারা কেমন আছেন। 


প্রকাশনায়ঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।


No comments:

Post a Comment