Search

Monday, September 2, 2019

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম


ড. এমাজউদ্দীন আহমদ 


জিয়াউর রহমান তার লিখিত প্রবন্ধ ‘আমাদের পথ’-এ বলেছেন : ‘আমাদের সামনে বর্তমানে লক্ষ্য একটাই - আর তা হলো দেশ ও জাতি গঠন। দু’শ বছর পরাধীন থাকার ফলে দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। সময় নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমাদের প্রয়োজন অবিলম্বে জনশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দেশের জনগোষ্ঠীকে একটা পথে পরিচালিত করাই সর্বোত্তম পথ বলে আমি মনে করি।’ ঐতিহাসিক স্মিথের (R.E.) বক্তব্যও ঠিক এমনি। রোম প্রজাতন্ত্রের পতনের কারণগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে সমগ্র সমাজকে সমাজকল্যাণের স্বর্ণসূত্রে আবদ্ধ করে অতীতের বিরাট কোনো অর্জনের নিরিখে ভবিষ্যতের পথে চালিত করা সম্ভব।’ তিনি আর বলেন, ‘সমাজ একটি অনুভূতিপ্রবণ সচেতন সত্তা। এর মিলন সূত্রটি সরিয়ে নাও অথবা ছিন্ন করো, দেখবে সমাজ হাজারো ভাগে বিভক্ত ও খ-ছিন্ন হয়েছে। সমাজে তখনো মানুষ বাস করবে বটে, কিন্তু সবার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী ঐক্যসূত্রটি তখন আর থাকবে না। সমাজকল্যাণ এবং জনকল্যাণের এই সূত্রটি একবার ছিন্ন হলে সমাজ হারাবে তার গতি। সামাজিক শক্তিগুলো হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত। লিপ্ত হয় পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে। জাতীয় জীবন হারায় তার চিৎশক্তি। সবকিছুকে গ্রাস করতে থাকে তখন অনাকাক্সিক্ষত এক স্থবিরতা ও নৈরাজ্য। এমনি সময়ে মহান কোনো নেতার আকস্মিক আগমন না ঘটলে ওই সমাজে পতন অনিবার্য। এভাবেই রোমান প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটে। সংকটকালে রোমে কোনো ত্রাতার আবির্ভাব ঘটেনি।

১৯৭৫ সালের শেষদিকে দৃষ্টি দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাজের দিকে, দেখবেন স্মিথের কথা কত বাস্তব, কত সত্যনিষ্ঠ। কত ব্যাখ্যামূলক। কৃতসংকল্প এবং সাস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের জনগণ জীবনপণ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অনলকুন্ড থেকে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল গোলাপ। হস্তগত করে রক্তরঞ্জিত পতাকা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে স্থায়ী করে নিজেদের ঠিকানা। প্রত্যেকের প্রত্যাশা ছিল, এতদিনের বঞ্চনা থেকে সবাই মুক্তি লাভ করবে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সবাই অংশগ্রহণ করবে এবং নিজেদের উদ্যোগে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনার সুযোগ লাভ করবে। সবার জীবনে আসবে সার্থকতার স্পর্শ, সাফল্যের কিঞ্চিত ভাগ। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থানসহ সব কল্যাণমূলক ক্ষেত্রে সবাই অংশীদার হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সম্মানীয় নাগরিক হিসেবে সবাই মাথা উঁচু করবে। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে জনগণের সব সুখস্বপ্ন শূন্যে মিলিয়ে গেল। জনকল্যাণমুখী ঐক্যসূত্র ছিন্ন হলো। দেশে প্রবর্তিত হলো সমাজতন্ত্রের নামে এক অপচয়প্রবণ পীড়নমূলক লুটেরা অর্থনীতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সীমাহীন অবনতি জনজীবনকে পর্যুদস্ত করল। দলকে সমাজতান্ত্রিক দীক্ষায় দীক্ষিত না করে এবং দলীয় নেতৃত্বকে সমাজতন্ত্রের অঙ্গীকারে সিক্ত না করে সমাজতন্ত্র প্রবর্তনের ফলে বঙ্গবন্ধুর কথায়, ‘চাটার দলের’ লুটেরাদের দাপটে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল। সবচেয়ে মারাত্মক আকার দেখা দিল সব সামাজিক শক্তিগুলোর বিভাজনে। অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত হতে লাগল দেশের ফরমাল (Formal) ও ইন-ফরমাল সংস্থাগুলো। মুজিবনগরে কর্মরত কর্মকর্তা এবং দেশের অভ্যন্তরে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা সৈনিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়ে ওঠে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে বামপন্থার অনুসারী এবং কেন্দ্রের অনুসারীরা নতুনভাবে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। মুক্তিযোদ্ধারাও বিভিন্ন গ্রুপে খ-ছিন্ন হয়ে দেশময় নিজ নিজ প্রভাব বলয় রচনায় লিপ্ত হয়। এক কথায়, সমগ্র সমাজজীবনকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় এক ধরনের নৈরাজ্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়। বিচার বিভাগ প্রবল প্রতাপান্বিত নির্বাহী বিভাগের পদতলে লুটিয়ে পড়ে। ব্যক্তিশাসনের নিগড়ে বন্দি হয় নাগরিকদের রাজনৈতিক জীবন। যে আইনের শাসনের প্রত্যাশা নিয়ে জনগণ যুদ্ধে নেমেছিল মাত্র ক’বছরের মধ্যে তা পরিণত হয় মস্ত বড় এক প্রহসনে। অর্থনীতির অবস্থা তখন ছিল নৈরাজ্যজনক। উৎপাদন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের কলকারখানা, মিল-ফ্যাক্টরি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে এসে পড়ে। এই অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ বুভুক্ষু দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন তাদের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়, তেমনি সীমাহীন উৎপাদন হ্রাসের ফলে এবং আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে সমগ্র দেশে মূল্যস্ফীতির হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতকরা পাঁচশ থেকে সাতশ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর জনজীবনে নেমে আসে মৃত্যুর করাল ছায়া। বাংলাদেশ হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক করুণার পাত্র, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। জনগণের কাছে তখনো স্বাধীনতার স্থপতি নন্দিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাকেই ঘিরে জনগণ বুক বেঁধেছিল আশায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, আত্মকলহ ও ষড়যন্ত্রের ফলে এবং সামরিক বাহিনীর কিছুসংখ্যক নির্মম ঘাতকের হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হলে জনগণের সামনে আশার প্রদীপটিও নিভে যায়। আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং ষড়যন্ত্রের কথা সুস্পষ্ট হয় যখন দেখা যায় আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৫ আগস্টে ক্ষমতাসীন হলে শুধু সামরিক বাহিনীর তিন প্রধান তাকে স্যালুট করে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন তাই নয়, দলের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা মোশতাক সরকারের স্বীকৃতি আদায় তথা তার সরকারকে স্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আবদুল মালেক উকিল ব্রিটেনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছে যা বলেছিলেন, তা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। বর্ষীয়ান নেতা মহিউদ্দীন আহমদ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপে যান মোশতাক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির আবেদন নিয়ে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী হন এই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী নিযুক্ত হন এই সরকারের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিপরিষদের ১৯ জনের মধ্যে ১১ জন এবং ৯ জন প্রতিমন্ত্রীর ৮ জন মোশতাক আহমদের মন্ত্রিপরিষদে যোগ দেন। মোশতাক সরকার কিন্তু স্থিতিশীল হয়নি। সক্ষম হয়নি জনগণের আনুগত্য ধারণ করে তাদের আশা-আকাক্সক্ষার মাধ্যমরূপে বেশিদিন টিকে থাকতে। যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন জনগণকে সংহত করে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় ঐক্যের সমর্থনকারীর ভূমিকা পালন করে তার অবসান ঘটে। এমনি সময়ে আবির্ভাব ঘটে জিয়াউর রহমানের। তারই উদ্যোগে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় ঐক্যভিত্তিক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। বাংলাদেশ ফিরে পায় নতুনভাবে তার প্রাণশক্তি জিয়ার সৃজনশীল নেতৃত্বে। জনগণ জিয়ার মধ্যে ফিরে পায় তাদের সুহৃদকে। জাতীয়তাবাদী দলের সৃজনশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের সামাজিক শক্তিগুলো (Social Force) ফিরে পায় নতুন এক ঐক্যসূত্র। A People’s President সাব হেডিংয়ে জায়ারিং (Lawrence Ziring, Jr.) তার Bangladesh : From Mujib to Ershad : An Interpretive Study গ্রন্থের ১৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘জিয়া কৃষক-জনতার একজন হিসেবে জনগণের মাঝে মিশে গেলেন। তারাই হলেন জিয়ার দৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু’[Zia ingratiated himself with the peasant masses. They received his primary attention.] ! যখন বাংলাদেশের দায়িত্বভার জিয়াউর রহমান গ্রহণ করেন, তখন দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান হয় প্রাণহীন অবস্থায় ছিল, না হয় ছিল জরাজীর্ণ, শতধাবিভক্ত। তখন দেশে কোনো রাজনৈতিক দল বিদ্যমান ছিল না। দেশের দক্ষিণপন্থি দলগুলো মুজিবনগর সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের সময় বামপন্থার দলসহ সব দল বেআইনি ঘোষিত হয়। ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমদ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে বাকশালও নিষিদ্ধ হয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে হয়ে পড়ে ত্রিভঙ্গমুরারী। না ছিল তার গতিশীলতা, ছিল না সুসংহত কাঠামো। রাষ্ট্রপতির ৯নং আদেশের ফলে প্রশাসনিক দক্ষতা ও নৈতিক মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। সামরিক বাহিনী ওই সময়ে অন্ততপক্ষে চার ভাগে বিভক্ত ছিল। এর একাংশ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বামঘেঁষা হয়ে পড়ে। তাওয়াবের নেতৃত্বে আর এক অংশ ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে। পাকিস্তান থেকে আগতরা সংহত হয় এরশাদের নেতৃত্বে আর এক অংশের নেতৃত্ব দিতে থাকেন খালেদ মোশাররফ। ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অভ্যুত্থান এবং প্রতি-অভ্যুত্থানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে ওঠে অনিশ্চিত, ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এমনি সময়ে রাষ্ট্রীয় জাহাজের হাল ধরতে হয়েছিল জেনারেল জিয়াকে। জেনারেল জিয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর, বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের পর শাসন-প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতির আমূল পরিবর্তন সাধন করেন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নতুন নীতি প্রবর্তন করেন।

সামরিক বাহিনীর মধ্যে পেশাদারিত্বের ওপর সমধিক গুরুত্ব আরোপ, রাষ্ট্র কৃত্যকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের মধ্যে জনকল্যাণের চেতনার বিস্তার, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ইন্দো-সোভিয়েত কক্ষপথ থেকে সরিয়ে এনে বিশ্বময় বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি, বহুদলীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্র রচনা, বন্ধুবিহীন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন সহযোগী ও বন্ধু সৃষ্টি, কৃষিক্ষেত্রে সর্বাধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে সেচ-উত্তম বীজ-সার সমন্বয়ে নতুন কৌশল প্রয়োগ, শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ গণতন্ত্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গের প্রয়োগ, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এসব নীতির ফল হয় অত্যন্ত শুভ। অল্প সময়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হয়ে ওঠে স্বাভাবিক। দেশে সুশাসনের সূচনা হয়। মিল-ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন বেড়ে যায়। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের গতি ত্বরান্বিত হয়। দলবিধি অনুযায়ী প্রায় ২ ডজন রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে সন্তোষের মাত্রা সন্তোষজনক হয়ে ওঠে। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতে থাকে। The Sunday Observer (7 November 1976) তার সম্পাদকীয়তে লেখে : ‘বাংলাদেশের মৃতদেহে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে (Life breathes again in the corpse of Bangladesh)। লন্ডনের Sunday Times (২৫ জানুয়ারি ১৯৭৬) এই সংখ্যায় লেখা হয়, ‘বাঙালিদের মুখ আশার মৃদুহাস্যে উদ্ভাসিত’ (Bangalis are beaming with smiles of hope)। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ সরকারের প্রবর্তিত নীতিসমূহকে Remarkable breakthrough বলে চিহ্নিত করেন। এই প্রেক্ষাপটে জেনারেল জিয়ার নেতৃত্ব এবং তার প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা এবং সফলতার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ পাওয়া যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল গণতন্ত্রের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে সেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্র তৈরি করেন এবং তার সুযোগ্য সহধর্মিণী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আবার সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা হয়। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি স্বাধীন অ্যাক্টর হিসেবে মাথা উঁচু করে পথচলা শুরু করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় অবস্থান সৃষ্টি করে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী দল নন্দিত দল হিসেবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দলে রূপান্তরিত হয়। জনগণ লাভ করে আইনের শাসনের আশীর্বাদ। নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর হয়।

 — ড. এমাজউদ্দীন আহমদ : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  

No comments:

Post a Comment