শফিউল বারী বাবু |
‘আমি স্তব্ধ, নির্বাক ... আমাদের প্রিয় ভাই, শফিউল বারী বাবু ভাই আর নেই’– এভাবেই মনের গহিন থেকে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির এক নেতা। দলটির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুতে শোকাহত বিএনপি পরিবার। বিএনপি নেতারা শফিউল বারীকে সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, রাজপথের কর্মী, তারুণ্যদীপ্ত, সম্ভাবনাময়ী ও সাহসী নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করেছে শোকবার্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিউল বারীকে তারা একজন সফল তরুণ নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাই ছাত্ররাজনীতি থেকে তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। একসময়কার ব্যাকফুটে এই সংগঠনকে সারাদেশে ঢেলে সাজিয়েছেন বাবু। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সফল সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেল। দুজন মিলে সারাদেশে ছাত্রদল থেকে অবসরে যাওয়া নেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করে স্বেচ্ছাসেবক দল পুনরুজ্জীবিত করেন।
হাবীব-উন-নবী খান সোহেল বিএনপির রাজনীতিতে মনোযোগী হলে শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের হাল ধরেন শক্ত হাতে। তার কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে। যিনি আজিজুল বারী হেলাল ও শফিউল বারী বাবুর ছাত্রদলের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন।
দুঃসময়ে রাজপথে যে কয়জন নেতা সক্রিয় ছিলেন, তাদের মধ্যে শফিউল বারী অন্যতম। ৫১ বছর বয়সী এ নেতার অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে শোক প্রকাশ করছেন।
শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রাহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ ও তাবিথ আউয়াল, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার সকালে এক শোক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বিএনপির রাজনীতির এক নির্ভীক সৈনিক ছিলেন বাবু। দলের সব ক্রান্তিকালে শফিউল বারী বাবু দায়িত্ব পালন করতেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের আঘাতে তার মতো একজন যোগ্য ও দক্ষ নেতা না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় বিএনপির সব নেতাকর্মী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। অকালে পৃথিবী থেকে তার চলে যাওয়া দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি।
তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আইনের শাসন, মানবিক মর্যাদা, মৌলিক-মানবাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে। বাবুর রাজনৈতিক চিন্তা ছিল দেশ ও দশের পক্ষে। তাই ছাত্ররাজনীতি শেষ করার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকায় সহায়তা দানের জন্য অসহায় মানুষের পাশে ছুটে যেতেন। নানা বাধার মুখেও মরহুম বাবু দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে গেছেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ছাত্রজীবন থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শ ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। এ জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই নেতাকে সইতে হয়েছে সরকারি নানা শারীরিক ও মানসিক জুলুম-নির্যাতন। তার এই সংগ্রামী ভূমিকার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে করোনার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজের জীবনকে বিপন্ন করে নিরন্ন কর্মহীন মানুষের পাশে বারবার ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়েছেন সাবেক এ ছাত্রনেতা। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।
‘আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকার্ত পরিবার, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
শফিউল বারীর ঘনিষ্ঠ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন ফেসবুকে লিখেছেন– আমি স্তব্ধ, নির্বাক ... আমাদের প্রিয় ভাই, শফিউল বারী বাবু ভাই আর নেই। নিজেকেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না, তার পরিবারের কথা ভেবে বারবার চোখে পানি চলে আসছে নিজের অজান্তেই। ভাবতেই বুকটা মুচড়ে উঠছে যে বাবু ভাইয়ের সঙ্গে আর দেখা হবে না, দেখা হওয়া মাত্র বাবু ভাই আর হেসে বলবেন না– ‘কি ব্যারিস্টার সাহেব, কেমন আছেন?’ বড় ভাই নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীমের মাধ্যমে বাবু ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ২০০৪ সালে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উনি সবসময় ব্যক্তিগত সম্পর্ককে অসম্ভব মূল্য দিতেন। বরাবরই আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন, অনেক সময় সম্পর্কের কারণে আমার অনেক আবদার নিজের পছন্দ না হলেও রেখেছেন। একদম মাটির মানুষ আমার বাবু ভাই, আমাদের বাবু ভাই।
শফিউল বারীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ওই কমিটির সদস্য ও বাবুর ঘনিষ্ঠ গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী নজরুল ইসলাম খান বিকি। তিনি ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে শফিউল বারীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
বাবুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ফেসবুকে লেখেন– ওই পারে ভালো থাকবেন বাবু ভাই। আপনার সন্তানকে নিজ সন্তানের মতো সারাজীবন আগলে রাখব ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম ফেসবুকে লেখেন– বাবুর অসময়ে চলে যাওয়াটা কল্পনাতীত। কাকে, কি সান্ত্বনা দেব?
No comments:
Post a Comment