Search

Wednesday, October 17, 2018

বাড়ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়জনিত ঋণগ্রস্ততা - স্বল্প আয়ের মানুষের আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে

সম্পাদকীয়

সব নাগরিকের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সে বিবেচনায় এ দুটি খাতে ব্যক্তিব্যয় সবসময় সাধারণ্যের সামর্থ্যের মধ্যে রাখাই সমীচীন। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে উল্লিখিত দুটি খাতে লক্ষণীয়ভাবে ব্যয় বাড়ছে। আর এ বাড়তি ব্যয় মেটাতে অনেক পরিবারের ঋণগ্রস্ততাও বেড়ে চলেছে। ২০১৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যেই বিষয়টি স্পষ্ট। আলোচ্য জরিপের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ঋণ গ্রহণ ও ব্যয় মূলত কৃষি ও ব্যবসা খাতে হওয়ার কথা থাকলেও বস্তুত তা ব্যয় হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়। ২০১০ সালে মোট ঋণের মাত্র ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কোনো পরিবারকে যেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করতে হয়েছিল, ২০১৬ সালে সেখানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশে। সমরূপভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মোট ঋণ গ্রহণের পরিমাণও। একই মেয়াদে পরিবারপ্রতি ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৬২ টাকা থেকে উন্নীত হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকায়। বলা যায়, প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি! কাজেই ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের উল্লম্ফন যে বড় ভূমিকা রাখছে, তা সহজেই অনুমেয়। সন্দেহ নেই, এ অবস্থা প্রলম্বিত হলে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর আর্থিক চাপের বোঝা বাড়বে; দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঋণ পরিশোধজনিত যন্ত্রণা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা চাইব মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির বহুমুখী প্রভাব গভীরভাবে আমলে নিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

লক্ষণীয়, সরকারি বিনিয়োগের বড় দুই খাত হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। সেখানে ঘাটতি থাকলে ব্যক্তি খরচ বেড়ে যায়। আর তা মেটাতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। এখন যেমনটি হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সবার নির্বিঘ্ন প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতে এ দুটি খাতে অন্তত জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও আমাদের দেশে এ বরাদ্দ এখনো ০.৯২ থেকে ২.০৯ শতাংশে আটকে আছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নিশ্চয়ই মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে ব্যয় বৃদ্ধির লাগাম টানতে হলে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী মহলের সক্রিয়তা জরুরি।

একটি বিষয় পরিষ্কার, চাহিদা থাকলে বেসরকারি খাত বিকশিত হয়। গত দেড় দশকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাহিদার নিরিখে প্রতিষ্ঠানগুলো অবদান রাখছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে ব্যয় অত্যধিক বেশি। দেখা যাচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত হওয়ায় স্বল্প আয়ের পরিবারের সন্তানরাও এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়ার পর উচ্চব্যয় বহন অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। আবার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যক্তির পকেট থেকে যাচ্ছে। ফলে বিপুল স্বাস্থ্যব্যয়ের কারণেও ঋণগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্প আয়ের অনেক পরিবার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমাদের অবশ্যই সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। শুধু বিনিয়োগ বাড়ালে হবে না, একই সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সরকারের নিয়ন্ত্রণও জরুরি। একদিকে কোচিং ও উচ্চ ফি আরোপ যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি অহেতুক ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, রোগীদের অযথা প্রেসক্রিপশন ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও হ্রাস করতে হবে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার বলিষ্ঠ  পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা।  

  • কার্টসিঃ বনিকবার্তা/ ১৭ অক্টোবর ২০১৮

The election commissioner should have his say

The EC must function democratically


We are dismayed that one of the election commissioners was forced to walk out of an election preparatory meeting because he was not allowed to voice his proposals regarding how to hold a free, fair and inclusive election. It is unfortunate that the election commissioner's proposals were not included in the agenda. Moreover, why was the commissioner not allowed to speak? What does this kind of non-cooperation within the EC do to public confidence?

The recommendations that did not see the light of day were quite pertinent to the ground realities of our electoral environment. They included holding talks with all the political parties, finding ways to ensure impartiality, increasing the EC's ability to exercise its power, having a dialogue with the government regarding recommendations put forward by the political parties and the role of the army during elections. These proposals seem perfectly reasonable and logical for an election commissioner to put forward.

We believe that while election is not the be-all and end-all of a healthy democracy, it is definitely the single most important exercise for voters to elect their representatives to the government. And the Election Commission is the main actor responsible for making this happen through a free and fair election. This responsibility, moreover, is not confined to just Election Day but for all the days leading up to it. So it is all the more disappointing to see such an undemocratic move within the EC. Unfortunately, the track record of the past ECs has not been particularly commendable, with problems of credibility and image constantly plaguing it.

By not allowing a democratic culture to thrive within the EC, it is making itself weak and ineffective. We hope this trend will be reversed and the EC is allowed to exercise its power without any interference.
  • Courtesy: The Daily Star /Oct 17, 2018 

ইসির বিরোধ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?

  • একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন 
  • নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হতে পারে
  • ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে 
  • অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে না চাওয়ায় ইসি প্রশ্নের মুখে
  • বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই


জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মুহূর্তে নিজেদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিজেদের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় এই ইসি কতটুকু সফল হবে, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। তবে ইসি এই বিরোধকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মতবিরোধ থাকলেও নির্বাচন পরিচালনা তাদের জন্য কঠিন হবে না।

নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের পাশাপাশি সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি, পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মতো বড় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে না চাওয়া এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এর ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় আরও বাড়বে। তা ছাড়া ইসির বর্তমান অবস্থান এই বার্তা দিচ্ছে যে জাতীয় নির্বাচনে ইসি নিজের ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগে খুব একটা আগ্রহী নয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপিসহ কয়েকটি দল। আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটসঙ্গীরা বাদে গত নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো এখনো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ অবস্থায় কোনো দলের কথা না শুনেই, এমনকি একজন নির্বাচন কমিশনারের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে জাতীয় নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে ইসি। আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন হতে পারে।

এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সংলাপ করেছিল। কিন্তু সংলাপের সুপারিশগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেনি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংলাপের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে পাঁচটি প্রস্তাব তৈরি করে গত সোমবার ইসির বৈঠকে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অন্য কমিশনারদের আপত্তির কারণে তিনি প্রস্তাবগুলো সভায় তুলতে পারেননি। পরে তিনি বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ এনে সভা বর্জন করেন।

মাহবুব তালুকদারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ওটা নিয়ে পত্রপত্রিকা, টিভিতে প্রচার হয়েছে। নো কমেন্ট। আমাকে আর ইনসিস্ট করবেন না, আমি আর কথা বলব না।’

কমিশনের মধ্যে মতবিরোধ রেখে জাতীয় নির্বাচন করা কঠিন হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কঠিন হবে না।

আগের দিন বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ এনে বৈঠক বর্জন করলেও গতকাল সকালে সিইসির দপ্তরে যান মাহবুব তালুকদার। পরে পাঁচ কমিশনার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০ অক্টোবর ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন মাহবুব তালুকদার। ৩০ অক্টোবর তাঁর ফেরার কথা রয়েছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, কমিশনে মতবিরোধ থাকতে পারে। কোনো একজন বা একাধিক কমিশনার কোনো বিষয়ে ভিন্ন মত রাখতে পারেন। তবে অধিকাংশ কমিশনার যে মত দেবেন, সেটাই গ্রহণযোগ্য হবে এবং ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবাই এক হয়ে কাজ করবেন। কিন্তু সভা বর্জন করার মতো ঘটনার নজির আগের কমিশনগুলোতে নেই। এ ধরনের ঘটনা বিভ্রান্তি তৈরি করে।

বর্তমান কমিশনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের পাঁচ সদস্য শপথ নেন। এরপর জুলাইয়ে ইসি সচিবালয়ের ৩৩ জন কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এরপর জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সিটি নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসির মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কমিশনে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে মূলত মতবিরোধ দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে অন্য কমিশনারদের।

এর বাইরে সিইসির সঙ্গে চার কমিশনারেরও মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে কয়েকটি ঘটনায়। সম্প্রতি সিইসি বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনে কোথাও কোনো অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। তাঁর এই বক্তব্যের পর অন্য চার কমিশনার গণমাধ্যমে বলেছিলেন, এটা কমিশনের বক্তব্য নয়, সিইসির নিজস্ব মত। গত মাসে ইসির কর্তৃত্ব নিয়ে চার কমিশনারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও নির্বাচনের দৈনন্দিন প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে ইসি। গতকাল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনারেরা। বৈঠক শেষে সিইসি কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি সন্তোষজনক। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর জানা যাবে, সরকারের বা সংসদ সদস্যদের অবস্থান কী থাকবে। তবে আচরণবিধিতে কিছু পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবে ইসি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে যেসব নির্বাচন কমিশনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ছিল, সেসব কমিশন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবে ইসি কাজ করতে পারেনি। এখন ইসির বিরোধ বড় আকার ধারণ করছে। দলনেতা হিসেবে সমন্বয়ের দায়িত্ব সিইসির। সংবিধানে যে প্রতিষ্ঠানটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে এত বিভাজন থাকলে ভোটারদের আস্থার জায়গা থাকবে না।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৭ অক্টোবর ২০১৮

No survey in 16 years to net in new taxpayers

Plea to reactivate central tax survey zone

New taxpayers' survey by the central tax survey zone had remained suspended in the last 16 years, hampering the effort to expand the tax net across the country. The zone under the National Board of Revenue (NBR) has kept its survey activities and the issuance of Taxpayer’s Identification Number (TIN) suspended since 2002.

It has empowered the territorial zones of the income tax wing instead of the survey zone for conducting new taxpayers' survey. Joint Commissioner of the central tax survey zone Md Mohidul Islam disclosed this at a meeting on Tuesday.

The meeting was arranged by the zone with the Dhaka South City Corporation at Nagar Bhaban as a part of the programme to motivate people about the tax net expansion and survey.

Dhaka South City Corporation Mayor Md Sayeed Khokon, NBR chairman Md Mosharraf Hossain Bhuiyan, NBR members Ziauddin Mahmud, Md Golam Nabi attended the programme. Central Tax Survey Zone Commissioner Md Asaduzzaman chaired the meeting.

Addressing the meeting, the NBR chairman said tax certificates would be made mandatory for the candidates of city and upazila elections to increase the number of taxpayers.

"Furnishing TIN alone would not be enough for the candidates in city corporation election," he said.

He added it is a legal obligation for the candidates to submit tax returns considering their election expenditures.

The revenue authority formed the central tax survey zone in 1992 aiming to increase the number through inclusion of new taxpayers.

The government has neither closed down the survey zone nor has revamped it despite suspension of its survey activity. From its inception to 2001, the central survey zone has found 1.0 million new taxpayers across the country, Mr Islam said.

The zone kept 20 per cent of those new taxpayers under its supervision and the rest of the taxpayers' files were distributed to other territories, he added.

There was a Taxpayers Information Retrieval System (TIRS) under TACT project for the zone, which also failed to perform due to the lack of manpower and support after the closure of that programme, he said.

Tax commissioner of the zone Md Asaduzzaman said the number of taxpayers could be raised to 7.0 million with boosting revenue to Tk 300 billion in the next five years if the board activated the central survey zone.

In the meeting, taxpayers and tax lawyers also urged the NBR to make the central survey zone vibrant. They said the zone has not been working according to its mandate.

Director of the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA) Monir Hossain said taxpayers do not want to visit tax offices frequently, fearing harassment.

Ziauddin Mahmud said the tax-GDP ratio could have been increased by 2.0 to 3.0 per cent had the NBR reduced the exemptions it grants to development projects.

NBR chairman said the country's tax GDP ratio is still below 10 per cent due to the poor base of taxpayers. "The people would have been encouraged to pay a minimum tax of Tk 5,000 had the taxmen ensured a hassle-free environment," he said.

He said the number of taxpayers should be increased two-fold by the next year after door-to-door visit aimed at finding out new taxpayers.

Taxmen would conduct survey in flats and apartments to see whether the flat owners have tax files, he added.

Sayeed Khokon said the economic growth could be made balanced through tax measures. He underscored the need for proper distribution of the taxpayers' money and expansion of tax net in rural areas.

  • Courtesy: The Financial Express/ Oct 17, 2018

আস্থার সংকট নির্বাচন কমিশনে

সম্পাদকীয়


নির্বাচন কমিশনের সভায় নির্বাচনসংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা নির্বাচন কমিশনারদের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গত সোমবার নিজের পাঁচ দফা প্রস্তাব নিয়ে কথা বলার সুযোগ না পেয়ে আপত্তি জানিয়ে কমিশনের বৈঠক বর্জন করেন। এ ধরনের ঘটনা নির্দেশ করে যে ইসির বৈঠকে মুক্ত আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

এই ঘটনার একটি আইনি এবং একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা মঙ্গলবার আশ্বস্ত করেছেন যে মতবিরোধ থাকলেও নির্বাচন করা ‘কঠিন হবে না’। কিন্তু তাঁর এই আশ্বাস ইসির প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে, তা মনে করার কারণ নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে মাহবুব তালুকদারের পাঁচ দফা প্রস্তাব আলোচনা করলে নির্বাচন কমিশনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না। আলোচনার প্রস্তাব শুনেই তিন কমিশনারের বিরোধিতা ছিল অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণুতার লক্ষণ। কোনো বিষয়ে আলোচনা হওয়ার অর্থ সেটি গ্রহণ করা নয়। ইসিতে সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে। কিন্তু ওই তিন কমিশনার এতটুকু ধৈর্য কেন ধরতে পারলেন না, সেটি প্রশ্ন বটে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কমিশনারের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়া এবং টানা দেড় মাস ইসির কোনো বৈঠক না হওয়া ইসির সামর্থ্যহীনতার নির্দেশক।

২০০০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিলেন, ইসি ‘কম্পোজিট বডি’ (সমন্বিত সংস্থা) হিসেবে কাজ করবে। একজন কমিশনার কমিশন দ্বারা দায়িত্বপ্রাপ্ত না হলে তাঁর পক্ষে ‘ব্যক্তিগতভাবে’ কিছুই করার সুযোগ নেই। সুতরাং এটা পরিষ্কার ছিল যে আলোচনার বিষয়বস্তু ভোটাভুটিতে দিলে মাহবুব তালুকদার হয়তো তাঁর পাঁচ দফা প্রস্তাবের একটিও অনুমোদন করাতে সক্ষম হতেন না। কিন্তু এখন তাঁকে আলোচনা করতে না দেওয়ায় তাঁর আইনি, সাংবিধানিক এবং মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এবং বাস্তবতার নিরিখে এর দায়িত্ব প্রধানত সিইসিকেই নিতে হবে।

এটা লক্ষণীয় যে পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, ইসির সক্ষমতা বাড়ানো, সংলাপের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা—এই চারটি প্রস্তাবই বহুল আলোচিত এবং এতে নতুনত্ব বলতে কিছু ছিল না। এমনকি জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, তা ‘আগে থেকেই নির্ধারণ’ করার মতো বিষয়ও একটি রুটিন কাজ হিসেবে গণ্য করা চলে। কারণ, আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে, সেই ঘোষণা সিইসি আগেই স্পষ্ট করেছেন। একটি বৈঠকে কোনো বিষয়ে আলোচনা করলেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয় না।

কেউ অবশ্য যুক্তি দিতে পারেন যে সিইসি এখানে রেফারির ভূমিকা পালন করে থাকতে পারেন। কারণ, অপর তিন কমিশনার চিঠি দিয়ে মাহবুব তালুকদারের বিষয়গুলো আলোচ্যসূচি না করতে সিইসিকে অনুরোধ করেছিলেন। সেদিক থেকে দেখলে সিইসি সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের পক্ষে থেকেছেন। কিন্তু আমরা এই অনুমান নাকচ করতে পারি না যে তিন কমিশনার সিইসির মনোভাব আঁচ করতে পেরেই হয়তো তাঁদের ভিন্নমত লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। অন্যদিকে আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও মাহবুব তালুকদারকে ইসির সভায় তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মত প্রকাশ করতে দেওয়া যেত। আর সেটাই স্বাভাবিক ও শোভন হতো। এখানে সিইসিসহ চার কমিশনার পরমতসহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত ৩০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের আগের সভায় আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে আপত্তি দিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন মাহবুব তালুকদার। সেখানেও আমরা সিইসিকে নির্বিকারভাবে ইভিএম আমদানির প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকতে দেখেছি।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের যে আস্থার সংকট আছে, তা আরও বাড়িয়ে দেবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৭ অক্টোবর ২০১৮

মানে বেলাইনে রেললাইন

কমল জোহা খান


বাড়াতে হলে দেশের সমৃদ্ধি, করতে হবে রেললাইন বৃদ্ধি’—রাজধানীর আবদুল গণি রোডে রেল ভবনের সামনে বিল বিশাল একটি বোর্ডে এই দুটি লাইন লেখা। ১৪ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন উপলক্ষে রেলপথ মন্ত্রণালয় বিল বোর্ড স্থাপন করেছে।

একদিকে দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন রেললাইন স্থাপনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে পুরোনো রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকমতো করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মোট রেললাইন দুই হাজার ৯২৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে মানসম্পন্ন রেললাইন মাত্র ৭৩৯ কিলোমিটার বা ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। সে অনুযায়ী, দেশের দুই হাজার ১৯০ কিলোমিটার বা ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ রেললাইন চলছে নির্ধারিত মান ছাড়াই।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যন্ত্রাংশের সংকট ও চুরি, লোকবলের অভাব, রেললাইনের ওপর মানুষের চলাচল এবং রেললাইনের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য ব্যালাস্ট পাথর না পাওয়ার কারণে দেশের রেললাইনের এই বেহাল দশা। তাঁদের মতে, এসব সমস্যার সমাধান না করে শুধু নতুন নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে রেলওয়ের আধুনিকায়নের সুফল পাওয়া যাবে না।

রাজধানী ঢাকাতেই নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, সংস্কারে ত্রুটির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে গতি তুলতে পারছে না ট্রেনগুলো। ২০০১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের প্রায় পুরোটাতেই ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করত। এখন গতি কমিয়ে চলছে ৭২ কিলোমিটারে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পর্যন্ত রুটে ৬৫ কিলোমিটারের বদলে ট্রেন চলছে ৫০ কিলোমিটারেরও কম গতিতে।

রেলওয়ের নিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফিশপ্লেট দিয়ে রেললাইনের একটি পাতের (রেল) সঙ্গে আরেকটি পাতকে যুক্ত করে রাখা হয়। কিন্তু এই ফিশপ্লেট ঢিলে হয়ে যাওয়ায় রেললাইন বেঁকে যায়। এতে ট্রেনের গতিও ঠিক থাকে না। এ জন্য প্রায়ই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেললাইনের নিরাপত্তার তদারকির দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন রেললাইনে এ ধরনের সমস্যা নেই। তবে পুরোনো রেললাইনে এই সমস্যা প্রকট। রেললাইন ঠিক রাখার জন্য ওয়েম্যান, গ্যাংম্যান ও কীম্যানদের পাওয়া যায় না। তারা ঠিকমতো রেললাইন মেরামত করেন না।

তবে রেলকে গতিশীল করতে নতুন রেল লাইন নির্মাণ সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কাজী রফিকুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক শ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলাচল উপযোগী করে নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সংকটের বিষয়গুলো স্বীকার করে তিনি বলেন, রেলওয়েতে লোকবল সংকট রয়েছে। ব্যালাস্ট পাথর কিনতে রাজস্ব বরাদ্দ কম পাওয়া যায়। তারপরও রেলওয়েকে গতিশীল রাখা হচ্ছে। নতুন রেললাইনে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজন। এরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

যেভাবে রেললাইন তৈরি হয়: রেললাইন নির্মাণে প্রথমে মাটি দিয়ে বাঁধের মতো রাস্তা তৈরি করা হয়। এর পর গর্ত করে নতুন মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। সেই জায়গা পরিষ্কার করে পানি ছিটিয়ে রোলার দিয়ে সমান্তরাল করা হয়। সমান্তরাল করে সাবগ্রেড করতে হয়। এ জন্য খোয়া ফেলে একটি স্তর তৈরি করতে হয়। সাবগ্রেডের পর সাব ব্যালাসড করানো হয়। এ জন্য খোয়া ও বালি ফেলতে হয়। এরপর সম্পূর্ণ পাথরের স্তর তৈরি করতে হয়। এই স্তরের ওপরই স্লিপার বসানো হয়। ব্রিটিশ আমলে কাঠের স্লিপার দিয়ে রেললাইন নির্মাণ করা হতো। কাঠের স্লিপারের স্থায়িত্ব কম থাকায় বর্তমানে কংক্রিটের স্লিপার স্থাপন করা হয়। সিমেন্ট, বালু ও রড দিয়ে তৈরি করা হয় কংক্রিটের স্লিপার। ডুয়েল গেজের কংক্রিটের একটি স্লিপারের ওজন ৩৫০ কেজি, ব্রড গেজের ৩০০ কেজি এবং মিটার গেজের স্লিপারের ওজন ২৫০ কেজি। একইভাবে দৈর্ঘ্যও কমবেশি হয়ে থাকে। এই কংক্রিটের স্লিপারের ওপর ইস্পাত লাইন বসানো হয়। বাংলাদেশে এখন যে ধরনের রেললাইন তৈরি হচ্ছে, তার ওপর দিয়ে এক শ কিলোমিটারের কিছু বেশি গতিতে ট্রেন চলানো সম্ভব বলে দাবি রেলওয়ের প্রকৌশলীদের।

 মানসম্পন্ন রেললাইন: রেলওয়ের প্রকৌশলী বিভাগ থেকে ১৪টি রুটকে মানসম্পন্ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো পার্বতীপুর-পঞ্চগড় ১৩২ কিলোমিটার, কাঞ্চন-বিরল সীমান্ত ১২ কিলোমিটার, লালমনিরহাট-বুড়িমারী ৮৫ কিলোমিটার, রাজশাহী-রোহনপুর সীমান্ত ৮৫ কিলোমিটার, আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৩ কিলোমিটার, মাঝগ্রাম-পাবনা ২৫ কিলোমিটার, টঙ্গী-ভৈরববাজার (ডাউন লাইন) ৬৪ কিলোমিটার, লাকসাম-চিনকী আস্তানা (ডাউন লাইন) ৫১ কিলোমিটার, ষোলোশহর-দোহাজারী ৪১ কিলোমিটার, লাকসাম-চাঁদপুর ৩১ কিলোমিটার, কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া ৭৫ কিলোমিটার, কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-গোবরা ৪৭ কিলোমিটার, পাচুরিয়া-ফরিদপুর ২৫ কিলোমিটার, পাবনা-ধালারচর ৫৩ কিলোমিটার।

তবে ৭৩৯ কিলোমিটার মানসম্পন্ন রেললাইনের বাইরে বাকি দুই হাজার ১৯০ কিলোমিটারকে ‘মানহীন’ বলতে নারাজ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো রেললাইন দিয়েই ট্রেন সার্ভিস সচল রাখা হচ্ছে। নতুন নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। পুরোনো রেললাইনগুলোও সংস্কার করা হচ্ছে। আশা করা যায়, এর সুফল আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে।’ 

৪৮ বছরে রেললাইন বেড়েছে ৭১ কিলোমিটার: বাংলাদেশে রেলওয়ের ইতিহাস দেড়শ বছরেরও বেশি। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রিটিশ শাসনামলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতী পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার লাইন দিয়ে এই অঞ্চলে রেলওয়ের যাত্রা শুরু হয়। আসাম-বাংলা রেলওয়ে থেকে পাকিস্তান আমলে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে (ইবিআর) এবং স্বাধীন দেশে নাম হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারত বিভক্তিতে ইবিআর উত্তরাধিকার সূত্রে পায় দুই হাজার ৬০৬ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার রেললাইন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে পায় দুই হাজার ৮৫৮ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন। তবে ২০১০-১১ অর্থবছরে রেললাইন কমে হয় দুই হাজার ৭৯১ কিলোমিটার। পরের বছর ২০১১-১২ সালে রেললাইন বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৮৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার। ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত সংখ্যাটি একই থাকে। সবশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট রেললাইন দাঁড়ায় দুই হাজার ৯২৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটারে। ৪৮ বছরে ৭০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার রেললাইন বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৯০ দশকে বিশ্ব ব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো রেল খাতে ঋণ দেওয়া একেবারেই কমিয়ে দেয়। তখন বাংলাদেশ রেলওয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় সড়কপথে অর্থ বরাদ্দ হতে থাকে। এর ফলে ওই সময় এ দেশে রেলওয়ে সেক্টর অবহেলিত হয়ে পড়ে। বয়সের ভার, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আর লোকবল সংকটে রেললাইন ও ইঞ্জিনগুলো ধুঁকতে থাকে।

রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১১-১৫ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ৪৩ হাজার ৫০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৬-২০ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এ খাতে ৬৬ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ৮৫৬ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ, এক হাজার ১১০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ এবং ট্রেনের গতি বাড়ানো ও নিরাপদ চলাচলের প্রকল্প রয়েছে।

তবে রেললাইনগুলোকে বাধাহীন করলে রেলওয়েতে গতি আসবে বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, লেভেল ক্রসিংগুলোকে বাধাহীন করতে হবে। একই সঙ্গে রেললাইনের পাশে ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। বর্তমান কাঠামোতে ৭০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব। কিন্তু যথাযথ যাচাই না করে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। নতুন রেললাইনের মাধ্যমে বাসের মতো ডোর টু ডোর সেবা রেলওয়ে দিতে পারবে কিনা সেসব বিষয় ভাবা হচ্ছে না।

রেললাইন সামগ্রীর দুষ্প্রাপ্যতা: রেললাইনের নির্মাণসামগ্রী বেশ দুষ্প্রাপ্য। মাটি ছাড়া সব উপকরণ আমদানি-নির্ভর। রেললাইনের পাত চীন থেকে তৈরি করিয়ে আনতে হয়। কংক্রিটের স্লিপার তৈরির জন্য রড ও পাথর আমদানি করা হয়। বালু ও সিমেন্টের স্লিপার সিলেটের ছাতক ও পঞ্চগড়ে তৈরি করা হয়। রেললাইনের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য ব্যালাস্ট পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তবে ভিয়েতনাম থেকেও পাথর আনা হয়। 

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুসারে, রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ঘনফুট ক্রাশড স্টোন বা চূর্ন পাথর প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেলে মাত্র এক লাখ ঘনফুট পাথর।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতি মিটার রেললাইন নির্মাণে প্রয়োজন হয় দুই ঘনমিটার পাথর। প্রতি কিলোমিটারে দুই হাজার ঘনমিটার পাথর। ট্রেন চলাচল, বন্যাসহ প্রাকৃতির নানা কারণ এবং মানুষের চলাচলের কারণে প্রতিবছর রেললাইন থেকে ১০ শতাংশ পাথর কমে যায়। এই ১০ শতাংশ পাথর রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজন হয় ৫৬ হাজার ঘনফুট পাথর।

পর্যাপ্ত পাথর না থাকলে ট্রেন চলাচলের সময় রেললাইনের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। তাই পাথর স্বল্পতায় ট্রেনের গতিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে খোদ রাজধানী ঢাকায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ব্রডগেজ ও মিটারগেজ—দুই ধরনের রেললাইন রয়েছে ঢাকায়। এর দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলার উপযোগী করে ব্রডগেজ রেললাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। গত এক বছরে ঢাকায় ট্রেন চলাচলে ট্রেনের গতি চার কিলোমিটার কমিয়ে ঘন্টায় ৩৬ কিলোমিটার থেকে ৩২ কিলোমিটার করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একটি ট্রেনের সম্পূর্ণ ওজন চাকাগুলোর ওপর এসে পড়ে। সেখান থেকে এই ভার পড়ে রেললাইনের নিচে থাকা স্লিপারে। ট্রেনের সঙ্গে স্লিপারের ভারসাম্য রাখতে রেললাইনে পাথর বা ব্যালাসড বসানো হয়। কিন্তু ঢাকায় রেললাইনে এখন পাথর রাখা যাচ্ছে না। ট্রেনের গতিবেগের সঙ্গে কম্পনের বিষয়টিও জড়িত। এসব বিবেচনা করে রেললাইন নির্মাণ করা হয়। ট্রেন চলাচলে প্রতিবছর ১০ শতাংশ পাথর মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তবে রাজধানীতে রেললাইনের ওপর ২৪ ঘণ্টাই মানুষের চলাচল রয়েছে। এতে রেললাইনের ওপর পাথর থাকছে না।

যন্ত্রাংশের সংকট: এ দেশে সনাতন রেললাইনের লোকোমোটিভ চালিয়ে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। অনেক সময় ট্রলি চালিয়ে এই ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। রেলওয়ের বেশ কয়েক জন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে এমন কথাই জানা গেল। তাদের মতে, রেললাইনে চলার সময় ঝাঁকুনি খেলে সমস্যা ধরা যায়। তবে আধুনিক ব্যবস্থায় টেম্পিং মেশিন দিয়ে রেললাইনে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। এই মেশিন দিয়ে দ্রুত ত্রুটি শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়েতে মাত্র চারটি টেম্পিং মেশিন রয়েছে। কিন্তু রেললাইনের অনুপাতে ২২টি টেম্পিং মেশিন দরকার। শুধু মেশিন হলেই চলবে না, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা জনবল ও ওয়ার্কশপ প্রয়োজন। এর কিছুই রেলওয়েতে নেই।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৭ অক্টোবর ২০১৮

ইসির ইভিএম-বিলাস

সম্পাদকীয়

অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উচ্চ দামে আমদানি নয়


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে হবে না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাও বলেছিলেন, ‘সবাই চাইলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে, না চাইলে হবে না।’ রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয়টি বাদ দিলেও কারিগরিভাবেও নির্বাচনের আগে ইভিএম চালু করা সম্ভব নয়। তারপরও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ইভিএম কেনা নিয়ে যে কাণ্ড ঘটছে, তা অগ্রহণযোগ্য, এমনকি স্বেচ্ছাচারিতা বললেও কম বলা হয়। সব থেকে বড় কথা, ইভিএম বিতর্কমুক্ত নির্বাচনবান্ধব প্রযুক্তি হিসেবে বিশ্বে এখনো সাধারণভাবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। অনেক উন্নত দেশ এটি চালু করেও পরিত্যাগ করেছে। সুতরাং ইভিএম নিতে হলে বেশি হুঁশিয়ার থাকতেই হবে। বিষয়টিকে আমরা কেবল উচ্চমূল্যে আমদানির জায়গা থেকেই উদ্বেগজনক মনে করি না। 

গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) নাটকীয়ভাবে ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করে। দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ওই প্রকল্পে ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৯২ শতাংশ। আগামী ছয় বছরে তিন পর্যায়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার ঘোষণা দেওয়া হলেও চলতি অর্থবছরেই ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইসিকে নতুন ইভিএম সরবরাহ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। ইতিমধ্যে চীন ও হংকং থেকে ইভিএমের মূল যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আনার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে বিএমটিএফ। তবে আমদানির প্রক্রিয়া ভিন্ন বলে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ইভিএম আমদানির জন্য এ ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন দিতে হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ইসির জন্য যে ইভিএম তৈরি করেছিল, তার প্রতিটির দাম পড়েছিল ২০-২২ হাজার টাকা। বাংলাদেশি টাকায় ভারতের ইভিএমের দাম পড়ে ২১ হাজার ২৫০ টাকা। এর অর্থ প্রতিবেশী ভারতে ব্যবহৃত ইভিএমের দামের চেয়ে ১১ গুণ বেশি দিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে এগুলো কেনা হচ্ছে। এসবই দুর্ভাগ্যজনক।

বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ইভিএমে কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট ও ডিসপ্লে ইউনিট আছে। এতে ভোটারের নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লেতে ওই ভোটারের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য চলে আসবে। ব্যাটারির মাধ্যমে ইভিএম চলবে। কিন্তু যে জিনিসটি নেই, তা হলো ইভিএম তৈরির ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটি যে ইভিএমে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি (যন্ত্রে ভোট দেওয়ার পর তা একটি কাগজে ছাপা হয়ে বের হবে) সুবিধা। অথচ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি এটি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। নির্বাচন কমিশন সেটি বাদ দিয়েছে। ফলে এ কথা বলার সুযোগ নেই যে কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইভিএম কেনা হচ্ছে।

আমরা স্মরণ করতে পারি যে, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টও ভিভিপিএটি অন্তর্ভুক্ত করার শর্তে ইভিএম ব্যবহারের নির্দেশ দিলে ভারতীয় ইসি তা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনেছিল। সবচেয়ে মানসম্পন্ন ইভিএম তৈরি এবং তা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের যুক্তি নিশ্চয় গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দামের তুলনা করে তারা দাবি করছে, বাংলাদেশের ইভিএমের দাম তুলনামূলক কম পড়ছে। কিন্তু জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার করা দরকার যে, তুলনার ভিত্তি কী। কারণ প্রযুক্তিগত উপকরণ ও ব্যবহারিক সুবিধার রকমফেরের মানদণ্ডে বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত ইভিএমের মধ্যে কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্যগত ফারাক থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কারিগরি কমিটিকে পাশ কাটিয়ে যে উপায়ে ইভিএম আমদানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগী হয়েছে, সেটা অনভিপ্রেত।

তাড়াহুড়ো করে উচ্চ দামে ইভিএম কেনার এই বিলাসিতা বন্ধ হোক।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৭ অক্টোবর ২০১৮

Tuesday, October 16, 2018

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়ে পরিবারে ঋণগ্রস্ততা বাড়ছে

সাইদ শাহীন|
 
মেয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পা রাখার আগ পর্যন্ত কখনো ঋণ করতে হয়নি নড়াইলের মহিষখোলা গ্রামের সাইফুল ইসলামকে। চার বছর আগে বড় মেয়ে তামসী লাইলা প্রাপ্তিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর পরই ঋণের জালে জড়িয়ে যান তিনি। মাসে মাসে টিউশন ফির টাকা জোগাড় করতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হয়েছে তাকে। সেই ঋণ পরিশোধে প্রতি মাসে এখন ৮ হাজার টাকার কিস্তি টানতে হচ্ছে সাইফুল ইসলামকে।


 
ছোট একটি পোলট্রি খামার ছিল দিনাজপুরের রফিকুল ইসলামের। দুই বছর আগে স্ত্রীর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সেটি বিক্রি করে দেন তিনি। স্ত্রীর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে একটি এনজিও থেকে ঋণও করতে হয় তাকে। সব খুইয়েও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেননি। উল্টো ঋণের জালে জড়িয়েছেন। স্ত্রী-সম্পত্তি হারিয়ে কিস্তি পরিশোধের তাগিদে রফিকুল ইসলাম এখন ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন।
 
শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যয় সংকুলানে সাইফুল, রফিকুলের মতো অনেকেই এভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। আগে থেকেই যাদের ঋণ আছে, বাড়ছে তাদের ঋণও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬-এর প্রাথমিক তথ্য বলছে, ২০১০ সালে মোট ঋণের মাত্র ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ একজনকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করতে হয়েছিল। ২০১৬ সালে তা উন্নীত হয়েছে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশে। যদিও ঋণ গ্রহণ ও তা ব্যয় হওয়ার কথা মূলত ব্যবসা, কৃষি ও শিল্প খাতে।
 
প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাতীয়ভাবে ঋণ গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে এ বৃদ্ধির হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। ২০১০ সালে পরিবারপ্রতি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৬২ টাকা। ২০১৬ সালে তা উন্নীত হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকায়। ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশি ভূমিকা রাখছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় বৃদ্ধি।
 
চিকিৎসার ব্যয়ভার সমাজের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসুখ-বিসুখ নিরাময়ে ব্যক্তিগত ব্যয়ের যে হার, সারা বিশ্বের মধ্যেই বাংলাদেশে তা অন্যতম সর্বোচ্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৬৭ শতাংশই বহন করতে হয় ব্যক্তিকে। বিপুল এ স্বাস্থ্য ব্যয় সংকুলানেও অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
 
মেয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নীলফামারীর দেবেন সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকায় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত মেয়ে বিপাসার (১৪) অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এর বাইরে প্রতি মাসেই খরচ করতে হচ্ছে ওষুধ-পথ্য বাবদ মোটা অংকের অর্থ। মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে ঋণগ্রস্ত দেবেন সরকারের এখন নিঃস্ব হওয়ার দশা।
 
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সীমিত হওয়ায় স্বল্প আয়ের পরিবারের সন্তানরাও এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়ার পর উচ্চব্যয় বহন অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।
 
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগভেদে স্নাতক প্রোগ্রামের টিউশন ফি ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রতি সেমিস্টারেই টিউশন ফি বাড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
যেসব উৎস থেকে পরিবারগুলো এ ঋণ নিচ্ছে, সেগুলোর অন্যতম গ্রামীণ ব্যাংক। ২০১৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের মোট ঋণের ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ গেছে শিক্ষা খাতে। আর স্বাস্থ্য খাতে দেয়া হয়েছে ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণের ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
 
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ঋণেরও উল্লেখযোগ্য অংশ যাচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। ২০১৬ সালে ব্র্যাকের ঋণের ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ গেছে শিক্ষায়। স্বাস্থ্যে গেছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।
 
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা বণিক বার্তাকে বলেন, বিনিয়োগের বড় দুই খাত হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। সেখানে যদি কোনো ধরনের ঘাটতি থাকে, তাহলে ব্যক্তি খরচ বেড়ে যায়। আর সেটি মেটাতে ব্যক্তিকে অনেক সময় ঋণ গ্রহণ করতে হয়। চাহিদা থাকলে বেসরকারি খাত বিকশিত হয়। গত কয়েক বছর প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বেশ দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলোও এতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারিভাবে ততটা চাহিদা মেটাতে পারছি না। আবার স্বাস্থ্য খাতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এখন বেশ এগিয়েছে। কিন্তু জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এটি মেটাতে গিয়ে মানুষকে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। সেজন্যই স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই এখন দিতে হচ্ছে ব্যক্তি পকেট থেকে, যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক অর্থের চাহিদা মেটাতে যেমন কাজ করছে, তেমনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
 
আরেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশাও তাদের মোট ঋণের ২ দশমিক ৬২ শতাংশ দিয়েছে শিক্ষায়। স্বাস্থ্যে গেছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যান্য এনজিওর মোট ঋণের ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ গেছে শিক্ষায় ও ৭ দশমিক ৩ শতাংশ স্বাস্থ্যে।
আশার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বর্মণ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারিভাবে যে হারে বিনিয়োগ দরকার, সেটি না হওয়ার কারণেই ব্যক্তি খরচ বাড়ছে। চাহিদা মেটাতে তারা নানা উৎস ব্যবহার করছে। তবে ব্যক্তি খাত সেটিকে বিনিয়োগ হিসেবেই নিচ্ছে। আর চাহিদা মেটাতে ঋণ করেই সেটি পূরণ করছে। সুস্বাস্থ্য ও শিক্ষিত জনসম্পদ ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যা স্বল্প মূল্যে মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এনজিওর বড় উদ্যোগ রয়েছে। তবে অসংক্রামক বা জটিল রোগের ক্ষেত্রে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
 
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণেরও বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে এ দুই খাতে। ২০১৬ সালে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া মোট ঋণের ৩ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল শিক্ষা ও ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ স্বাস্থ্যে।
 
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। কিন্তু সেটিতে যে ঘাটতি রয়েছে, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলে নিয়োগের সময়ই আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। আবার স্বাস্থ্য খাতে এখনো ভালো মানের হাসপাতালের অভাব রয়েছে। মানুষজন তাদের ব্যয় মেটাতে এক খাতের ঋণ অন্য খাতে ব্যয় করছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ালে সাধারণ মানুষের এ দুটি খাতে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না। তখন ঋণগুলোও উৎপাদনমুখী বা মুনাফা বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করা যাবে।
 
তবে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ পূরণ করছে মানুষ। বন্ধু কিংবা পরিজন থেকে নেয়া অর্থের ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শিক্ষায় ও ২২ দশমিক ৮৪ শতাংশ স্বাস্থ্যে ব্যয় করছে তারা। আবার আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নেয়া অর্থের ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে শিক্ষায় ও ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যে।
 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারি বিনিয়োগের যেমন অপ্রতুলতা রয়েছে, তেমনি এ দুই খাতে ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অহেতুক ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, রোগীদের অযথা প্রেসক্রিপশন ও টেস্ট করানোর ফলে ব্যক্তি ব্যয় বাড়ছে। আবার শিক্ষা খাতে বাড়তি কোচিং ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চফির কারণে শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে।
 
 Courtesy: BanikBarta Oct 16, 2018
 

 






 

QUESTION PAPER LEAK

DU postpones ‘Gha’ unit intake test result

Students Against Repression stages protests for cancelation of exam


DU Correspondent
     
 Dhaka University authorities have postponed publishing the results of its admission test for Gha unit without showing any valid reason.
On Monday morning, the authorities issued a press release saying that the results will be published on Tuesday. But hours later, they issued a second press release saying that fresh date of publishing results will be announced soon.



The suspension of publishing result came on the heels of widespread allegation of question paper leak during the admission test held on Friday.

Meanwhile, a section of students of Dhaka University under the banner of ‘Students Against Repression’ demonstrated at the campus demanding cancellation of Friday’s admission test and retaking of the test.

Meanwhile, the university authorities shortly after Saturday midnight filed a case under Digital Security Act against six named accused and many unnamed accomplices alleging that they had leaked 72 questions of ‘Gha Unit’s admission test on Friday.
The case was filed with the Shahbagh police station after the six named accused, all from Bogura, were arrested at the Doel Chattar on the DU campus.

The suspects face the charge of cheating using digital and electronic devices and recording and transferring information after illegally entering into computer system, he said.

The question paper of Dhaka University admission test, held on Friday, was leaked 43 minutes before the tests commenced, the admission seekers and guardians said.

A total of 95,341 candidates appeared at this year’s admission test for the Gha Unit offering 1,615 seats.


   Courtesy: New Age Oct 16, 2018

1,200 factories shuttered in four years

BGMEA says


Star Business Report
Some 1,200 garment factories have been closed down over the last four years because of their lack of compliance and falling behind in the competitive landscape, BGMEA said yesterday.

“It is our apprehension that some more factories will be shuttered soon as they are failing to make profits,” said Siddiqur Rahman, president of Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association, the garment makers' platform, at a press conference at its office in Dhaka.



Bangladeshi garment products have been losing competitiveness because of longer lead time, poor productivity and poor demand for apparel worldwide, Rahman said.

In 2014, the global market size for apparel was $483 billion; in 2017, the figure declined to $454 billion.

Between 2014 and 2018, the prices of Bangladeshi garment items declined in the US market by 11.72 percent while the cost of production increased 29.54 percent, the BGMEA chief said. Similarly, the prices of locally made garment items declined in the EU markets.

But at the same time, each of the garment owners has spent Tk 3-5 crore for fixing the electrical and structural loopholes as per the recommendations of the Accord and Alliance experts.

The cost of production will go up further after the implementation of the recommended minimum wage of Tk 8,000 from December this year, Rahman said. At present, the garments sector's minimum wage is Tk 5,300.

The wage comprises nearly 5 percent of the total production cost of garment items, according to industry insiders.
However, a section of people have been dissemin
ating wrong information for creating a chaotic situation in the garment sector ahead of the implementation of the proposed wage structure, he said.

For instance, the National Garment Workers Federation at a recent press conference said only 3 to 5 percent of the total workers in the garment sector are in the seventh grade.

“This information is wrong,” Rahman said, adding that more than 20 percent of the workers belong to the seventh grade or the entry level now.

The BGMEA leader also praised the statement of the Clean Clothes Campaign, the International Labour Rights Forum and the Maquila Solidarity Network, which urged 25 international retailers to hike the prices of garment items sourced from Bangladesh.

At the same time, American Apparel and Footwear Association, which last year sent a letter to the prime minister of Bangladesh for increasing the wage of the workers, should now urge the buyers to increase the prices of the products.

The garment sector has been witnessing a peaceful and calm situation over the last four years as there were no incidents of unrest. But, if a section of trade unions disseminates wrong information there is a possibility of unrest in the sector, he said.
A lot of workers will lose their jobs if any garment factory is shut down for any reason, he added.

  Courtesy: The Daily Star Business Oct 16, 2018