Search

Monday, January 28, 2019

সড়কে থামছে না লাশের মিছিল


ঢাকা, ময়মনসিংহ, নাটোর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আর কমপক্ষে ২০ জন। সোমবার, জানুয়ারি ২৮, মধ্য রাত থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে ঘটনাগুলো ঘটেছে।  

ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে ২ পথচারী নিহত হয়েছেন।  এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

নিহতদের কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগের কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, তাদের নাম ডালিম (২০) ও মোবারক (২৭)। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় নিহতদের বাড়ি।

ঢাকা: ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাবার মোটরসাইকেল আরোহী ষষ্ঠ ও তৃতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের বাবা ডালিম হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মাওয়া হাইওয়ের রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, স্কুল থেকে বাবার মোটরসাইকেলে চড়ে বাসায় ফেরার পথে কেরাণীগঞ্জ থানার অন্তর্গত রাজেন্দ্রপুর হাটখোলায় এলাকায় একটি ট্রাক তাদের পিষে দিয়ে চলে যায়। এতে ডালিম হোসেনের দুই মেয়ে নিহত হন। তাদের বাবার অবস্থা আশংকাজনক। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া সড়কের পোস্তগোলা অংশে সড়ক অবরোধ করে রাখে।

ঢাকা: রাজধানীর খিলক্ষেত তিন’শ ফুট রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় বুলবুল হোসেন (২২) নামে ১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন, সাগর (২০) ও কামরুল (২২) নামে দুই যাত্রী।  
রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ২টার দিকে এ র্দুঘটনা ঘটে।
খিলক্ষেত থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহজাহান কবির  ঘটনার সথ্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় বাসের ধাক্কায় আজিজুর রহমান ভেগল (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত আজিজুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মণ্ডলের ছেলে। সোমবার ভোর ৬টার দিকে লালপুর-ঈশ্বরদী সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লালপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মাসুদ ঘটনার সথ্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর এলাকায় ট্রাকচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- সদরের ধুঞ্চি গ্রামের রজব আলীর ছেলে শান্ত (২৫) ও পৌরসভার গোদার বাজার এলাকার মো. সিদ্দিকের ছেলে হৃদয় (২৫)। রোববার রাতে শ্রীপুরের পলাশ ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। রাজবাড়ী সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুনির দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। 

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় বাস ও ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে একটি ট্রাকের চালক ও হেলপার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ জন। সোমবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার আমিরবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন- ট্রাক চালক আলামিন (২২) ও হেলপার হাফিজুর রহমান (২০)। আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মাদারীপুর: মাদারীপুরের শিবচরে চাল ভর্তি ট্রাক উল্টে পথচারী এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিলন শিবচর পৌরসভার নলগোড়া গ্রামের মালাই হাওলাদারের ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, আজ ভোরে জেলার শিবচর-পাঁচ্চর সড়ক হয়ে একটি চালভর্তি ট্রাক একই উপজেলার চান্দেরচর যাচ্ছিল। ট্রাকটি পৌরসভার দাদাভাই তোরন সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এ সময় পথচারী বাঁশ ব্যবসায়ী মিলন হাওলাদার ট্রাকটির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
  • শীর্ষকাগজ/ jan 28, 2019 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অপরাধমূলক’ কর্মকাণ্ডে আতঙ্কে জনগণ — রুহুল কবির রিজভী


দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জনমনে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী বলেন, যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত, বর্তমানে তারাই মানুষের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটক করা হয়েছে। ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী যেভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে তাতে দেশবাসীর মধ্যে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

সোমবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলেন তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল-

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

জনগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোটারবিহীন ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়েছে। সুতরাং নির্বাচনোত্তর সরকার নিজেকে যে নামেই অভিহিত করুক, সেটি অবৈধ সরকার। এই সরকার রাতের আঁধারের ভোটের সরকার। অথচ আওয়ামী লীগ বলছে-তাদের প্রার্থীরা নাকি লাখ লাখ ভোটে বিজয়ী হয়েছে। প্রকৃত ভোটার’রা এই কথায় নিজেদের অধিকার হারিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে।

রাষ্ট্র এমন এক ভয়াবহ একদলীয় রুপ ধারণ করেছে যেখানে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার কোন জায়গা নেই। এত বড় মহাভোট ডাকাতি ও মহাভোট জালিয়াতির নির্বাচন গোটা জাতির সামনে সংঘটিত হলো, অথচ নির্বাচন কমিশন জানালো যে, ‘নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়নি’। 

প্রধান নির্বাচন কমিশানারসহ অন্যান্য কমিশনারদের মনে কোন অনুশোচণা নেই। তাহলে অধিকারহারা ভোটার’রা প্রতিকার কার কাছ থেকে চাইবে। সরকার ও তাদের একনিষ্ঠ অনুগ্রহভাজন নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যে ভূমিকা রেখেছে তাতে গোটা জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রভূত সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী হলেও সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে শুধু মনিবের কথা রাখতে গিয়ে গোটা নির্বাচনকেই ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে বিক্রি করে দিয়েছে। ন্যুনতম বিবেক-বুদ্ধি এবং মর্যাদার কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র কমিশনের উচ্চ পদের চেয়ার ধরে রাখতে এক মহা প্রশ্নবিদ্ধ ও নজীরবিহীন জালিয়াতি ও সহিংস ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে তারা দ্বিধা করলো না। 

আসলে ৩০ ডিসেম্বরের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের ছদ্দনাম নুরুল হুদা কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের জন্যই গণতন্ত্রের সংকট আরও গুরুতর রুপ ধারণ করলো। কারণ নির্বাচন হচ্ছে-গণতন্ত্রের প্রধান অনুশীলণ। সরকার সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই চূড়ান্তভাবে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে, আর এই ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের তকমা দিয়েছে এই নির্বাচন কমিশন। ভোটার’রা স্বাধীন ইচ্ছায় তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার দিন শেষ হয়ে গেল। এই দেশে একটি উন্নতর গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দিলো এই নির্বাচন কমিশন। 

মানুষ আশা-ভরসা-উৎসাহ ও এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্ধকার শ^াসরোধী পরিবেশে মানুষকে নির্বাক করে দেশ এখন একদলীয় দু:শাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্বে এসে উপনীত হয়েছে। এখানে এখন টু শব্দ করা যাবে না। ভিন্নমত প্রকাশিত হলে সাথে সাথেই পুলিশী আক্রমণের মুখে পড়তে হবে। মানুষকে রুদ্ধশ^াসে একদল ও এক ব্যক্তির বন্দনা করতে হবে, নইলে কারাবাস বা ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকারও আর থাকবে না সাধারণ মানুষের। কেউ যদি স্বাধীনভাবে চিন্তা করে তাহলে মনে হয় তাকে ‘থট পুলিশ’ এসে হানা দিবে। গণমাধ্যমকে অন্ধকার ছায়া থেকে প্রতিনিয়ত নজরদারী করা হচ্ছে। 
    
সাংবাদিক বন্ধুরা, 
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে মহাভোট ডাকাতিতে নিয়োজিত থাকায় তারা সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের বদলে এখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়াতে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতিশীল হয়েছে। সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ সমাজে শাািন্ত-শৃঙ্খলা বিধানে প্রশাসন ও পুলিশ অপরাধীদের যদি দমন করতে না পারে তাহলে সমাজে দূর্বৃত্তদের উৎপাত বিভৎস রুপ ধারণ করবে। অপরাধীরা যদি রাজনৈতিক কারণে রেহাই পেতে থাকে তাহলে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা ভয়াবহ সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। 

বর্তমান পরিস্থিতি যেন কেউ দেখার নেই, শোনার নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে খুন, গুম, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো লোমহর্ষক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুরা অপহৃত হচ্ছে, কয়েকদিন পর তাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে রাস্তা-ডোবা-নালায়। ‘আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পুলিশকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে’ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এধরণের বক্তব্য এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের কাজে নিয়োজিত, বর্তমানে তারাই মানুষের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকালও সারাদেশে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটক করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক দেশব্যাপী যেভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলছে তাতে দেশবাসীর মধ্যে সর্বদা ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না, আইন ক্ষমতাসীনদের হাতের মুঠোয়। এই কারণে আইনের প্রয়োগের বদলে ক্ষমতাসীনদের বেআইনী বলপ্রয়োগের প্রতাপে জনজীবনে অরাজকতার গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে। বন্ধুরা, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাঁড়া কাটবে না। অপশাসনের কলুষ থেকে মানুষের মুক্তি হবে না।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
এখনও বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা চলছে। ২৯ ডিসেম্বরের রাতের ভোটের সরকার সকল সরকারী শক্তি দিয়ে বেগম জিয়াকে কারাগারে আটকিয়ে রাখছে। তাঁর জামিন পেতে আইনী কোন বাধা নেই। তাঁকে আটকিয়ে রাখতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেআইনী রাস্তায় নানা চক্রান্ত চলছে। দেশজুড়ে ব্যর্থতা ঢাকতেই বিশেষভাবে ২৯ ডিসেম্বর নিশীথে মহাভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতেই বেগম জিয়াকে এখনও মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি চাই। 

পাশাপাশি নির্বাচনকে একতরফা করার জন্য অন্যায়ভাবে আটক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে-

  • গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান-বিএনপি 
  • খায়রুল  কবির খোকন, যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
  • এ্যাড: শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস
  • হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি
  • লায়ন আসলাম চৌধুরী-যুগ্ম মহাসচিব-বিএনপি 
  • ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক-বিএনপি 
  • আনিসুজ্জামান খান বাবু, গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক-বিএনপি
  • সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক-যুবদল
  • শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • মাহবুবুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক-বিএনপি
  • ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, সভাপতি-চট্রগ্রাম মহানগরী বিএনপি
  • এ্যাডঃ রফিক শিকদার, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
  • মামুনুর রশিদ মামুন, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি ও ছাত্রদল সিনিয়র সহ-সভাপতি 
  • নিপুন রায় চৌধুরী, সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
  • শেখ মোহাম্মাদ শামীম-সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি-বিএনপি
  • হযরত আলী, সাধারণ সম্পাদক-শেরপুর জেলা বিএনপি 
  • মোঃ আবুল হাশেম বকর, সাধারণ সম্পাদক, চট্রগ্রাম মহানগরী বিএনপি
  • মিয়া নুর উদ্দিন অপু, ধানের শীষের প্রার্থীন-শরিয়তপুর
  • মনোয়ার হোসেন, ধানের শীষের প্রার্থী-মাগুরা

সহ দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি চাই।  
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ

  • ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ
  • ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা
  • ২০১৮ সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা
  • এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন
  • হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, নুরজাহানসহ অনিয়মের ঘটনায় জড়িত অনেক গ্রুপ
  • প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপি ঋণ


ব্যাংকগুলোতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণ কমাতে কার্যকর আছে ঋণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা প্রক্রিয়া। অনেক সময় নিয়মের মধ্যে এসব সুবিধা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ ভালো দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও যেসব ঋণ দীর্ঘদিন ধরে আদায় করা যাচ্ছে না, তা অবলোপন করছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। মন্দ বা ক্ষতিকর মানের খেলাপি ঋণকে স্থিতিপত্র (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন বলে।

২০০৩ থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। তবে এসব অবলোপন ঋণ থেকে ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা আদায়ও হয়েছে। এতে অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাব গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে আলোচিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ, নুরজাহানসহ অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেক গ্রুপের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।

আর ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ।

যেসব ব্যাংক অবলোপন ঋণ থেকে বেশি টাকা আদায় করতে পেরেছে, সেগুলোর মুনাফাও তত বেশি হয়েছে। কারণ, অবলোপন ঋণ থেকে আদায় করা অর্থ সরাসরি ব্যাংকের আয়ে যোগ হয়। শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরই ঋণ অবলোপন করা যায়। যেসব ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার মতো অবস্থায় নেই, তারা ঋণ অবলোপন করতে পারে না। মুনাফা থেকেই সেসব ব্যাংকের সঞ্চিতি রাখতে হয়।

এ নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী সেই পর্যায়ে পরিপক্ব হয়নি। এ কারণে অনেকে ব্যবসায় খারাপ করেছে। আবার অনেকে অসৎভাবেও টাকা সরিয়েছে। যেসব ঋণ কোনোভাবে আদায় হয় না, জামানতও সেভাবে থাকে না, অবলোপন করা হয় সেগুলোই।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, হিসাব থেকে মুছে ফেলার কারণে এসব ঋণ আদায় হলে তা আয়ে যুক্ত হয় ফি আকারে। যেসব ব্যাংক যত বেশি অবলোপন ঋণ আদায় করতে পারে, তারা তত বেশি লাভবান হয়। এটা ভালো যে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়ে গেছে। বিশ্বের সব দেশেই এ প্রথা চালু আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে তা অবলোপন করা হয়।

তবে মন্দ মানে খেলাপি হলেই অবলোপন করার সুযোগ আছে। ঋণ অবলোপন করতে মামলা থাকতে হয় এবং শতভাগ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তবে মামলার ব্যয়ের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপন করা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক এযাবৎ অবলোপন করেছে ৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, তবে এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংক অবলোপন করেছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। জনতার অবলোপন ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ও আদায় ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অবলোপন ২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ও আদায় ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবলোপন সবচেয়ে বেশি। এই ব্যাংকের অবলোপন ২ হাজার ১৫৪ কোটি ও আদায় ৪০৭ কোটি টাকা। অবলোপন ও আদায় যথাক্রমে দি সিটি ব্যাংকের ১ হাজার ৯০৩ কোটি ও ২৫২ কোটি টাকা এবং আইএফআইসির ১ হাজার ৮১৪ কোটি ও ৫৪৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের অবলোপন ১ হাজার ৬১৯ কোটি, এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৫৩৩ কোটি, পূবালীর ১ হাজার ৫২৯ কোটি, উত্তরার ১ হাজার ৩২৫ কোটি, ইস্টার্ণের ১ হাজার ১৪৯ কোটি, ইউসিবির ১ হাজার ১৪১ কোটি, রূপালীর ১ হাজার ১৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৯০৪ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৯৮৯ কোটি এবং ব্যাংক এশিয়ার ৮২৭ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অবলোপনের পর ঋণ আদায়ে জোরদার ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ব্যাংকগুলোর দিক থেকে তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। বরং অনিয়মের ঋণগুলো অবলোপন করে দোষী ব্যক্তিদের আড়ালই করে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণেই ঋণ অবলোপন করতে হয়, আর এর মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিরাও আড়াল হয়। ব্যাংকগুলোর উচিত এসব ঋণ আদায়ে তদারকি অব্যাহত রাখা ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৮, ২০১৯ 

তিন বছর ধরে ৩৩ মামলায় জেল খাটছে ‘ভুল’ আসামি!

  • ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’
  • সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ৩৩ মামলা
  • সালেকের বদলে জেল খাটছেন পেশায় পাটকলশ্রমিক জাহালম
  • জাহালমের কারাবাসের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি
  • দুদক এখন বলছে, জাহালম নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন
  • তদন্ত করে একই মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও
  • এক মামলায় জামিন, আরও ৩২টি মামলায় জামিনের অপেক্ষায়


জাহালমের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধুবড়িয়া গ্রামের এই বাড়ি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই তাঁর।  প্রথম আলো 

‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না…আমি নির্দোষ।’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাঁকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকলশ্রমিক।
ছেলে জাহালমের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন মা মনোয়ারা বেগম। প্রথম আলো ছেলে জাহালমের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন মা মনোয়ারা বেগম। প্রথম আলো

জাহালমের কারাবাসের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। দুদক এখন বলছে, জাহালম নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন। তদন্ত করে একই মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। ফলে একটি মামলায় তাঁর জামিন হয়েছে। আরও ৩২টি মামলায় জামিন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

দুদকের একটি ‘সর্বনাশা’ চিঠি

পাঁচ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি চিঠির মাধ্যমে জাহালমের ঝামেলা শুরু। জাহালমের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঠিকানায় দুদকের একটি চিঠি যায়। সেই চিঠিতে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে নয়টায় জাহালমকে হাজির হতে বলে দুদক। জাহালম তখন দূরে, নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করছেন।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আবু সালেক নামের এক লোক, যাঁর সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব রয়েছে। আবু সালেকের ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুয়া ঠিকানাগুলোর একটিতেও জাহালমের গ্রামের বাড়ির কথা নেই। রয়েছে পাশের আরেকটি গ্রামের একটি ভুয়া ঠিকানা। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল জাহালমের জীবনে।

নির্ধারিত দিনে দুই ভাই হাজির হন দুদকের ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জাহালম বুকে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’ তাঁর ভাই শাহানূর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুদক কর্মকর্তারা জাহালমের কাছে জানতে চান, আবু সালেক নাম দিয়ে তিনি সোনালী ব্যাংকে হিসাব খুলেছিলেন কি না। জাহালম দুদক কর্মকর্তাদের স্পষ্ট করে জানান, সোনালী ব্যাংকে তাঁর কোনো হিসাব বা লেনদেন নেই। তিনি সামান্য বাংলা জানেন। ইংরেজিতে স্বাক্ষরও করতে পারেন না। আবু সালেক নামে ব্যাংকের হিসাবটিও তাঁর না। হিসাব খোলার ফরমে আবু সালেকের যে ছবি, তা-ও তাঁর নয়। অথচ সেদিন দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সবাই জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ বলে শনাক্ত করেন। কারণ, দুজনই দেখতে প্রায় একই রকম।

দুদকে হাজিরা দিয়ে জাহালম সোজা চলে যান নরসিংদীর জুট মিলের কর্মস্থলে। এর দুই বছর পর টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জাহালমের খোঁজ করতে থাকে পুলিশ। সেখান না পেয়ে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের মিল থেকে জাহালমকে আটক করা হয়। জাহালম তখন জানতে পারেন, তাঁর নামে দুদক ৩৩টি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ, তিনি বড়মাপের অপরাধী। পুলিশের কাছেও জাহালম একই কথা বলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম। আবু সালেক না। আমি নির্দোষ।’ কেউ শুনল না এই আকুতি। তাঁর ঠাঁই হয় কারাগারে।

কারাগারে কেটে যায় আরও দুটি বছর। জাহালমকে যতবার আদালতে হাজির করা হয়, ততবারই তিনি বলেন, ‘আমি জাহালম। আমার বাবার নাম ইউসুফ আলী। মা মনোয়ারা বেগম। বাড়ি ধুবড়িয়া গ্রাম, সাকিন নাগরপুর ইউনিয়ন, জেলা টাঙ্গাইল। আমি আবু সালেক না।’ তাঁর ভাই শাহানূর দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকেন। হাজতখানার পুলিশ থেকে শুরু করে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাঁকে পান, তাঁকেই বলতে থাকেন, ‘আমার ভাই নির্দোষ।’

প্রকৃত আসামি আবু সালেক। ছবি: সংগৃহীত

অথচ ব্যাংক, দুদক, পুলিশ ও আদালত—সবার কাছেই জাহালম হলেন ‘আবু সালেক’ নামের ধুরন্ধর ব্যাংক জালিয়াত। এই চারটি পক্ষের ভুলেই হারিয়ে গেল তাঁর জীবনের তিনটি বছর। জাহালমের স্ত্রী থাকেন নরসিংদীতে। তিনিও সেখানকার একটি কারখানার শ্রমিক। বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ধুবড়িয়া গ্রামে। ছেলে আর টাকা পাঠাতে পারেন না। তাই মনোয়ারা বেগম প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। ১৯ জানুয়ারি ধুবড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১০ শতাংশ জমির ওপর দুটি টিনের ঘর জাহালমদের। মা মনোয়ারা বেগম জানালেন, এই ভিটেটুকু ছাড়া তাঁদের আর কিছুই নেই। প্রতিবেশীরাও বললেন, জেলে যাওয়ার পর চরম বিপাকে পড়েছে জাহালমের পরিবার। 

‘এখন আর কানতেও পারি না’

জাহালমের মা মনোয়ারা বলেন, ‘মানষেরে কী ক্ষতি করছিলাম, মানষে আমার এত বড় সর্বনাশটা করল। ৩৫ বছর ধরে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যাচ্ছি। মামলা চালাতে গিয়ে ফকির হয়ে গেছি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিনা দোষে বিনা অন্যায়তে ব্যাটা আমার জেল খাটছে। ব্যাটার জন্য আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। কানতে কানতে এখন আর আমি কানতেও পারি না।’ বড় ভাই শাহানূর মিয়া বলেন, ‘কে শোনে কার কথা। দুদকের ভুলে আজ আমার ভাই তিন বছর ধরে জেলের ঘানি টানছে। কে ফিরিয়ে দেবে আমার ভাইয়ের তিনটি বছর?’

অভাবে প্রাইমারি স্কুলের চৌকাঠ পেরোতে পারেননি জাহালম। কোনোমতে বাংলায় নিজের নামটা লিখতে পারেন। জন্মের কয়েক বছর পর তাঁর বাবা বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পাতেন। তখন থেকে মা মনোয়ারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে বড় করে তোলেন।

ভুলটা ধরা পড়ল যেভাবে 

আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে চরম হতাশ হয়ে পড়েন শাহানূর মিয়া। গত বছরের শুরুর দিকে কারও পরামর্শে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে হাজির হন। ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে অনুসন্ধানে নামে মানবাধিকার কমিশন। গত বছরের ২২ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম একই ব্যক্তি নন। এ কথা ঢাকার আদালতকেও জানায় কমিশন। কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলার অন্যতম আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে সাগরের সঙ্গেও কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনকালে কমিশনের কথা হয়। তিনি ২০১০ সাল থেকে আবু সালেকের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। আবু সালেক মিরপুর-১২তে অবস্থিত শ্যামল বাংলা আবাসন প্রকল্পের মালিক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে আবু সালেকের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা। আবু সালেকের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল কুদ্দুস। আদালতকে মানবাধিকার কমিশন বলেছে, আবু সালেক উচ্চমাধ্যমিক পাস। একসময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটা এন্ট্রির কাজ করতেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি ব্যাংক জালিয়াতি করেছেন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক বছর আগে সালেক ঠাকুরগাঁও শহরে ৫ শতক জমি কেনেন। জমি এবং দোকান আছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলাতেও।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মাঠপর্যায়ের তদন্তে উঠে আসে জাহালম নিরপরাধ ব্যক্তি। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে তিনি দুদকের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। রিয়াজুল হক বলেন, বিনা অপরাধে জাহালম এত দিন ধরে জেল খাটছেন। তিনি সামাজিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, অপদস্ত হয়েছেন। তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। মানবাধিকার কমিশন তাঁর পক্ষ হয়ে লড়ছে, লড়বে।

কে এই আবু সালেক? 

আবু সালেকের পরিবারের খোঁজে কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলামের সঙ্গে। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবু সালেককে আমি ভালোভাবে চিনি। তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুসকেও চিনি। কুদ্দুস পেশায় কৃষক। শুনেছি, ঢাকায় থাকার সময় সোনালী ব্যাংকের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সালেক।’ একই কথা বলেন ওই ইউপির চেয়ারম্যান নূর এ আলম ছিদ্দিকী। সালেক গত বছর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।

আবু সালেকের বাবা আবদুল কুদ্দুস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের খবর তিনিও শুনেছেন। তবে অনেক দিন ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ছেলে কোথায় তিনি জানেন না। সালেক ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন বলে জানতেন বাবা। 

বহুরূপী সালেক ও জালিয়াতির সঙ্গীরা

সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখার চেক ব্যবহার করে জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও উঠে আসে আবু সালেকের নাম। বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে তাঁর নাম কখনো গোলাম মর্তুজা, কখনো আবু সালেক। কখনো বাড়ির ঠিকানা নড়াইল, কখনো টাঙ্গাইল। এমনকি বাবা-মার নামও একেক জায়গায় একেক রকম।

সালেক সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব খোলেন ২০১০ সালে। সেখানে বাবার নাম লিখেন আবদুস সালাম, মা সালেহা খাতুন। ঠিকানা দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার সলিমাবাদ ইউনিয়নের গুনিপাড়া গ্রাম। একই নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি ব্যবহার করে ওই বছর বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকে হিসাব খোলেন তিনি।

একই ছবি ব্যবহার করেন ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবেও। তবে ব্র্যাক ব্যাংকে হিসাব খোলেন গোলাম মর্তুজা নামে। এখানে ঠিকানা দেন নড়াইলের লোহাগড়া। ব্যবহার করেন আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র। আবু সালেক এই ঠিকানা ব্যবহার করে আরও আটটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খোলেন।

তিন বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন নিরীহ জাহালম

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালের এপ্রিলে ৩৩টি মামলা করে দুদক। দুদক তদন্ত করে বলে, জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় আবু সালেকসহ তিনজনের হিসাব থেকে ১০৬টি চেক ইস্যু করে। চেকগুলো ১৮টি ব্যাংকের ১৩টি হিসাবে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জমা করে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী মাইনুল হক জালিয়াতির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যাপারে সালেককে সহায়তাও করেন মাইনুল। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখার কর্মচারী মাইনুল সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিস (মতিঝিল) থেকে ভাউচার, চেক, কম্পিউটার প্রিন্ট আনা-নেওয়া করতেন। আনা-নেওয়ার পথে আবু সালেক স্বাক্ষরিত চেকগুলো সরিয়ে আলাদা রাখতেন। ওই চেকগুলো ছাড়া বাকি চেকের জন্য আলাদা ভুয়া ভাউচার তৈরি করে তা ক্যান্টনমেন্ট শাখায় দাখিল করতেন। লোকাল অফিসের কর্মকর্তা শাখা অফিসের কর্মকর্তার স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই না করে পুরো অর্থ ক্লিয়ারিং হাউসে পাঠাতেন। এভাবে ক্লিয়ারিং হাউসের সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ভুয়া ভাউচার তৈরির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। দুদক মনে করে, মাইনুল একা নন, সোনালী ব্যাংকের আরও কর্মকর্তা এতে জড়িত।

অধিকতর তদন্ত

গত বছরের এপ্রিলে দুদক অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্তের কথা আদালতকে জানায়। বলা হয়, তদন্ত চলাকালে মামলার বিচারকাজ স্থগিত রাখা প্রয়োজন। দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া কয়েকটি মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে।

দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মঈদুল ইসলাম গতকাল জানান, জাহালম যে নির্দোষ, তা দুদকের অধিকতর তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আদালতকে তা জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) জুলফিকার আলীও আদালতকে চিঠি দিয়ে একই কথা জানিয়েছেন।

দুদকের পরিচালক ও মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহালম নিরীহ, মূল আসামি আবু সালেক। জাহালমকে মুক্ত করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রসিকিউশন প্রত্যাহার করা হচ্ছে।’ তাহলে কেন জাহালমকে শাস্তি পেতে হচ্ছে? জবাবে জাহিদ বলেন, ‘আমি তো আবু সালেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তদন্তকারীরা ভুল করে আবু সালেকের বদলে জাহালমের নামে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।’

জাহালম এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছেন, যাঁদের কারণে নিরীহ জাহালম কারাগারে, তাঁদের চিহ্নিত করা জরুরি। দুদক ইচ্ছা করলে এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। যা হয়েছে, তা চরম অন্যায়। জাহালমের পরিবার আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারে।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৮, ২০১৯ 

মইনুল হোসেন জামিনে মুক্ত


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোববার রাতে মুক্তি পান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে মইনুল হোসেনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ বিকেলে জামিনের আদেশ-সংক্রান্ত আদালতের কাগজপত্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সম্পন্ন শেষে রাত নয়টার দিকে মইনুল হোসেনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর আগে মানহানির অভিযোগে বিভিন্ন আদালতে করা মামলায় মইনুল হোসেনকে জামিন দেন হাইকোর্ট।

গত ১৬ অক্টোবর রাতে একটি বেসরকারি টিভিতে এক নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মইনুলের করা মন্তব্য নিয়ে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলা করেন ওই সাংবাদিক। এ ছাড়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। এরপর রংপুর, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানি ও ডিজিটাল আইনে আরও কয়েকটি মামলা হয়।

রংপুরে করা মানহানির এক মামলায় ২২ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতের আদেশে তাঁকে বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি করা হয়।

  • Courtesy: Prothom Alo/Jan 2019

দুর্ঘটনায় আর কত মৃত্যু!

সম্পাদকীয়

যেদিন যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০১৮ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছিল, সেদিনই কুমিল্লায় ট্রাক চাপা পড়ে ১৩ জন ইটভাটা শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁদের বেশির ভাগ ছিল স্কুলের ছাত্র, দারিদ্র্যের কারণে ইটভাটায় কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাত। এই যে কিশোর-তরুণদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেল, তার জবাব কী।  

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে দৈনিক গড়ে ১৮ জন। আর পুরো বছর, অর্থাৎ বাকি আট মাস যোগ করলে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০-এ। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭ হাজার ২২১ জন, যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি।

তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই হিসাবকে পূর্ণাঙ্গ ভাবার কারণ নেই। সংগঠনটি বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইত্যাদিতে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আবার এসব গণমাধ্যম খবর পেয়ে থাকে প্রত্যক্ষদর্শী ও থানায় দায়ের করা এফআইআর বা মামলা থেকে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক দুর্ঘটনার খবর অজানাই থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশকালে যেসব সুপারিশ করেছে কিংবা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, তা–ও নতুন নয়। সমিতি একাধিকবার সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল পায়নি। বরং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্বীকারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দেওয়ার কারণে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসের নিচে দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তারা ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে সড়ক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শিক্ষার্থীরা নীতিনির্ধারকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে কীভাবে সড়ক নিরাপদ রাখতে হয়। কিন্তু সেটি ছিল প্রতীকী। সড়ক নিরাপদ রাখা কিংবা দুর্ঘটনা রোধ করা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এটি করতে হবে সরকারকেই।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে চালকদের শাস্তির মাত্রা বাড়ালেও সেটি কতটা কার্যকর হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা আইনটি সংসদে পাস করার পরই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট পালন করেন। অথচ সড়ক পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, চালকদের ওপর বাড়তি চাপ ও পদচারীদের অসচেতনতার কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ও সেতু, সময়মতো মেরামত না হওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন এবং চালকদের অদক্ষতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

দুর্ঘটনা রোধে যেসব আইন আছে, তার কোনোটাই প্রতিপালিত হচ্ছে না। আইন যারা ভাঙছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী যে দূরপাল্লার চালকদের জন্য কর্মঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটিও মেনে চলা হচ্ছে না। কথা অনেক হয়েছে। আশ্বাসবাণীও কম শোনা যায়নি। কিন্তু শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, এমনকি কমিয়ে আনতে হলে পরিবহন খাতে যে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি চলছে, তা বন্ধ করতেই হবে।
  • Courtesy: Ptoyhom Alo /Jan 28, 2019

হিমাগারের অভাবে সবজি নষ্ট

সম্পাদকীয়

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জরুরি


সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার না থাকায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কারও কোনো মাথাব্যথা নেই!

গতকাল রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শিম, বরবটি, ফুলকপি, শসা, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার চাষি। আলু সংরক্ষণের জন্য এখানে ১২টি হিমাগার থাকলেও দ্রুত পচনশীল সবজির জন্য কোনো বহুমুখী হিমাগার নেই। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত সবজি একসঙ্গে বাজারে তুলতে হচ্ছে এবং সস্তায় বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ কারণে সবজি চাষে যে খরচ হয়েছে, তা অনেকেই তুলতে পারছেন না।

শিবগঞ্জ উপজেলা আয়তনের দিক দিয়ে বগুড়া জেলার বৃহত্তম উপজেলা। এ উপজেলা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবজি উৎপাদনে প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রচুর ধান ও আলু চাষ হয়। অন্যান্য ফসলের মধ্য রয়েছে ভুট্টা, গম, কলা, পাটসহ নানান দেশি-বিদেশি শাকসবজি। প্রায় প্রতিবছর আলুর বাম্পার ফলন হয় বলে এখানে আলু সংরক্ষণের জন্য একে একে মোট ১২টি আলু রাখার হিমাগার তৈরি হয়েছে। অথচ অন্যান্য দ্রুত পচনশীল সবজি সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। যে অঞ্চলে এত সবজি উৎপাদিত হয়, তার যথাযথ বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের দিকে যে মনোযোগ দিতে হবে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যদি এদিকে নজর থাকত, তবে এত দিনে এর একটা বিহিত হতো। এখানে নিশ্চিতভাবেই পচনশীল সবজি সংরক্ষণের একটি হিমাগার গড়ে উঠত।

শিবগঞ্জে জরুরি ভিত্তিতে সবজির হিমাগার স্থাপনের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া সারা দেশেই হিমাগারের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে সরকারি হিমাগারের সংখ্যা ২১। বেসরকারি হিমাগার আছে ৪০৭টি, এর মধ্যে প্রায় ৩৮৫টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়। স্থানিক প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য সবজি রাখার জন্য হিমাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশে সবজিবিপ্লব ঘটে গেছে। এখন দেশে ৬০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এসব সবজি সংরক্ষণ করতে না পারলে কোনো লাভ নেই। কৃষকের পাশাপাশি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উচিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনা, গুদামজাত করা এবং প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানি করার মতো উদ্যোগ নেওয়া। দেশের সার্বিক উন্নতির জন্যই এগুলো প্রয়োজন।  
  • Courtesy: Prothom Alo/ Jan 28, 2019

মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ — সাতদিনের নির্দেশনা দুই সপ্তাহেও বাস্তবায়ন হয়নি


দেশের ২২টি মহাসড়ক থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা সাতদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ১১ জানুয়ারি এ নির্দেশনা দেয়ার পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মহাসড়কের দুই পাশে বহাল আছে সিংহভাগ অবৈধ স্থায়ী স্থাপনা।

গতকাল একাধিক মহাসড়ক সরেজমিন ঘুরে বেশির ভাগ স্থাপনা অপরিবর্তিতই দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘুরে কোথাও এ নির্দেশনার প্রতিফলন চোখে পড়েনি। মহাসড়কের পাশে হাটবাজার রয়েছে, এমন এলাকাগুলোয় সড়কের ১০ মিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা আগের মতোই আছে। বিশেষ করে আমিনবাজার থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকার বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনাই অপসারণ করা হয়নি।

এ মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটারে ৪৩টি স্থায়ী হাটবাজার রয়েছে, যেগুলোর একাংশ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী অবৈধ। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে মহাসড়কটির অন্তত ১২টি স্থানে প্রতিদিন তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে।

একই অবস্থা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের। মহাসড়কটির বরিশাল নগরী অংশে গড়িয়ারপাড় মোড় থেকে সিঅ্যান্ডবি রোড, সাগরদী বাজার, রূপাতলী এলাকায় আগের মতো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত সড়কাংশে ২২ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান চালায় বরিশাল মহানগর পুলিশ। অভিযানের পর সড়কটির এ অংশে মোটামুটি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে এ ধরনের অভিযানকে যথেষ্ট হিসেবে মনে করছে না স্থানীয়রা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এর বাইরে মহাসড়কটির কয়েকটি পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। তবে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জ অংশের বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে আগের মতোই।

দেশের অন্যান্য মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পুলিশ অভিযান চালালেও স্থায়ী স্থাপনাগুলো অপসারণ হয়নি। এগুলোর বদলে মহাসড়কের পাশে রাখা নির্মাণসামগ্রী, যানবাহন, অস্থায়ী দোকান অপসারণেই বেশি নজর ছিল পুলিশের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ আমাদের রুটিন কাজগুলোর অন্যতম। মন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে মানুষ এর সুফলও পেতে শুরু করেছে।

আইন অনুযায়ী, মহাসড়কের মালিকানাধীন জায়গায় বা ক্ষেত্রমতে মহাসড়কের ঢাল থেকে উভয় পাশে ১০ মিটারের মধ্যে অবৈধভাবে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা যেমন হাটবাজার, দোকান ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে না। মহাসড়কে নিরাপদে মোটরযান চলাচল নিশ্চিত করতে সওজ অধিদপ্তরকে অবৈধভাবে নির্মিত কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা তাত্ক্ষণিক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন আইনে। এ ক্ষমতাবলে ২২টি মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সাতদিনের ‘নোটিস’ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর একাধিক সড়ক বিশেষজ্ঞ সেটিকে গতানুগতিক দিকনির্দেশনা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। সাতদিনে এসব স্থাপনা অপসারণ কঠিন বলেও মত দেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এর আগেও অবৈধ স্থাপনা অপসারণে একাধিকবার ঘোষণা এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাময়িকভাবে হয়তো অস্থায়ী স্থাপনাগুলো সরেছে, যেগুলো কিছুদিনের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সাম্প্রতিক উচ্ছেদ কার্যক্রমেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বার বার নির্দেশ দেয়ার পরও মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • Courtesy: Banikbarta /Jan 28, 2019

জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প!

নাভানা, তেপান্তরসহ ২২ কোম্পানির ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা


গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাধার ও নিচু শ্রেণীর জমি ভরাট ও দখল করে প্লট বিক্রি করছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি। নাভানা রিয়েল এস্টেট, তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডসহ এ ধরনের ২২ কোম্পানির জলাধার দখল ও ভরাট কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গতকাল একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে দুই মাসের মধ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার ২২টি আবাসন কোম্পানির জলাশয়, পুকুর, নিচু ভূমি ভরাট ও দখল বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে ২৪ জানুয়ারি রিট আবেদনটি করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ আবাসন কোম্পানির ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা জারির এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড ও তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড এ ২৪ কোম্পানির অন্যতম। অন্য কোম্পানিগুলো হলো ইউনাইটেড পূর্বাচল ল্যান্ডস লিমিটেড, এজি প্রপার্টিজ লিমিটেড, নীলাচল হাউজিং লিমিটেড, বাগান বিলাস, রূপায়ণ ল্যান্ডস লিমিটেড, আদর্শ আইডিয়াল লিমিটেড, মেট্রোপলিটন ক্রিশ্চিয়ান কো-অপারেটিভ হাউজিং, মঞ্জিল হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, শিকদার রয়েল সিটি, কপোতাক্ষ গ্রীন সিটি, ডিভাইন হোল্ডিং লিমিটেড, শতাব্দী হাউজিং, স্বর্ণছায়া রিয়েল এস্টেট, ভিশন ২১ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, ওশান হ্যাভেন লিমিটেড, এসএফএল চন্দ্রিমা লিমিটেড, গ্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল, নর্থসাউথ হাউজিং ও ফেয়ার ডিল শিপিং লিমিটেড।

রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী সাহা। আদেশের বিষয়টি জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে কোনো এলাকার জলাভূমি, জলাশয়, পুকুর দখল ও ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। তার পরও কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে জলাশয়, জলাভূমি, নিচু ভূমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি সাইনবোর্ড টানিয়ে মানুষকে প্রতারিত করছে। এ ধরনের ২২ আবাসন কোম্পানি এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় মাটি ভরাট অব্যাহত রেখেছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, এসব যুক্তিতে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। আদালত ২২ আবাসন কোম্পানির দখল ও ভরাট কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বছরের ২ নভেম্বর ‘ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিল দখল করে আবাসন প্রকল্প’ শিরোনামে বণিক বার্তায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বেলাই বিলে বালি ভরাট করে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের প্লট বিক্রির তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। তাতে উল্লেখ করা হয় পরিবেশগত ক্ষতি ও বিলের আশপাশের মানুষের জীবিকা সংকটের চিত্রও।

প্রতিবেদনটি তৈরির আগে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিলের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের অংশে বালি ফেলে এরই মধ্যে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে টানানো হয়েছে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের নামে সাইনবোর্ডও। বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বাগাদুনা খাল। এ খাল থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালি তুলে ফেলা হচ্ছে বেলাই বিলে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে বেলাই বিলের কিছু জমি কেনে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড। এরপর ২০০৮ সালের শুরুর দিকে বিলে বালি ভরাটের কাজ শুরু করে। বালি ফেলার জন্য তারা মূলত বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়। কারণ বর্ষা মৌসুমে বালি ফেললে তা নির্ধারিত জমির পাশে আরো কিছু জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পর বিলের যতদূর পর্যন্ত বালি দেখা যায়, ততদূর পর্যন্ত নিজেদের জমি হিসেবে পুনরায় ভরাট শুরু করে আবাসন প্রতিষ্ঠানটি।

গাজীপুর ভূমি অফিস থেকে বেলাই বিলের আরএস ও এসএ খতিয়ান তুলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দাগে ৯ দশমিক ৭১ একর জমি তেপান্তর হাউজিং লিমিটেডের নামে জারি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই বোরো ও আমন শ্রেণীর। কিছু রয়েছে নালা শ্রেণীর। এসব জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করেই বালি ভরাট করে প্লট বিক্রি শুরু করেছে তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ১৬টি হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক জলাশয় ও নিচু জমি ভরাটের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পূর্বাচল সিটি, সিটি ক্লাউড, কানাডা সিটি, জমিদার সিটি, ড্রিমল্যান্ড, হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি, হোমটাউন পূর্বাচল সিটি, প্রিটি রিয়েল এস্টেট, মাসকট গ্রীন সিটি, পুষ্পিতা এমপায়ার হাউজিং, নন্দন সিটি, বেস্টওয়ে সিটি, মালুম সিটি, মেরিন সিটি ও সোপান সিটি।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 28, 2019

এতিম শিশুকে খুঁটিতে বেঁধে পেটালেন আ.লীগ নেতা


লক্ষ্মীপুরে বলাৎকারের অভিযোগ এনে এক এতিম শিশুকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে। তিনি সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

রোববার বিকেলে একই এলাকার বাবলাতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ নূর (১২) ওই এলাকার মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে। তার মা মালেকা বেগম ভিক্ষা করে সংসার চালান বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকার এক প্রতিবন্ধী শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ এনে নূরকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নালসহ কয়েকজন নূরকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে তার মা মালেকা বেগম থানা থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে জয়নালের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এতে শিশুটিকে নিয়ে তার মা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

মালেকা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি সকালে ভিক্ষা করার জন্য বের হয়ে যাই। বিকেলে বাড়িতে ফিরে শুনি জয়নালসহ কয়েকজন নূরকে পিটিয়ে আহত করেছে। পরে পুলিশ এসে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আমি থানায় গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসি। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। জয়নালসহ তার লোকজন বাধা দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে মান্দারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুজ্জামান বেগ বাবলু জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাটি জানার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াসীম বলেন, শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তার মায়ের দায়িত্বে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
  • জাগোনিউজ / জানু ২৮, ২০১৯